দীর্ঘশ্বাস.....১

মূর্তালা রামাত এর ছবি
লিখেছেন মূর্তালা রামাত (তারিখ: বুধ, ১৭/০৩/২০১০ - ৬:৪৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১
স্থান: সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের বাসা।
সময়: মাঝরাত।
সেলিনা পারভীন টেবিলের সামনে বসে একমনে কিছু লিখছেন। এমন সময় ঘুম ঘুম চোখে তার আট বছর বয়সী ছেলে তার পেছনে এসে দাঁড়ায়।
সুমন: মা?
সেলিনা পারভীন:(চমকে পিছনে ফিরে) ও তুই, ঘুম থেকে উঠেছিস কেন?
সুমন:(ঘুম চোখ কচলাতে কচলাতে) আমার ভয় করছে, মা।
সেলিনা: (সুমনের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে) বোকা ছেলে, ভয়ের কী আছে? মা তো পাশেই আছে!
এমন সময় সিঁড়িতে জোরে বুটের আওয়াজ পাওয়া যায়। দরজায় প্রচণ্ড জোরে লাথির শব্দ হয়। সুমন ভয় পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে। দরজা ভেঙ্গে ওরা ঘরে প্রবেশ করে। ওদের একজন সেলিনার চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে সিঁড়ির দিকে নিয়ে যায়। ভয়ার্ত সুমন মা মা করে চিৎকার সেলিনাকে জড়িয়ে ধরতেই ওদের পেছনে দাঁড়ানো ভদ্রবেশী একজন এগিয়ে এসে সুমনকে ওর মার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সস্নেহে কোলে তুলে নেয়।
ভদ্রবেশী: (সুমনকে কোলে নিয়ে এক হাত দিয়ে ওর মুখ চাপা দিয়ে) ভয় নেই বাবা, আল্লাহ তোমার মাকে হেফাযত করবেন।

১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১
স্থান: অন্ধকার কক্ষ
সময়: ফজরের নামাজের ওয়াক্ত

ঘরের ভেতর এক নদী রক্তের ভেতর সেলিনা পারভীন শুয়ে আছেন। প্রায় বিবস্ত্র। দুই হাত পিছমোড়া করে বাধা। চোখে কালো কাপড়। বাইরে আজানের ধ্বনি শোনা যায়।
বারন্দায় চেয়ারে বসা ক্লান্ত মেজর সাহেবের দিকে ভদ্রবেশী লোকটি এক বদনা পানি এগিয়ে দেয়।
ভদ্রবেশী লোক: হুজুর সালাতকো টাইম হো গিয়া।

১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১
স্থান: রায়ের বাজার বদ্ধভূমি।
সময়: এশার নামাজের ওয়াক্ত

আরো অনেক লাশের সাথে বদ্ধভূমির পানিতে সেলিনা পারভীনের লাশ ভাসছে। ভদ্রবেশী লোকটি সেদিকে তাকিয়ে বলে- আমিন।

১৪ মার্চ। ২০১০।
স্থান:আল ফালাহ মিলনায়তন, বড় মগবাজার ঢাকা।
সময়: মাগরিবের খানিক আগে

নারী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছে ভদ্রবেশী লোকটি। http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-03-15/news/49015
ভদ্রবেশী লোক: ...কোরআনের আইন থেকে দূরে চলে যাওয়াতেই নারী নির্যাতনের পরিমাণ বাড়ছে।বর্তমান সরকারের আমলে নারী নির্যাতন কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নারীরা এখন ঘর থেকে বের হতে ভয় পায়।নারী নির্যাতন বন্ধে শরিয়া আইন চালু করতে হবে।ইসলামি আইন বাস্তবায়ন ছাড়া ও নৈতিক চরিত্র গঠন ছাড়া নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না....

চুপ..চুপ শয়তান-মিলনায়তনের পেছনের সারিতে বসা সেলিনা পারভীন দুইহাতে কান চাপা দেয়ে চিৎকার করে ওঠেন। ও ভণ্ড, প্রতারক, খুনি,মিথ্যুক...মিলনায়তনে উপস্থিত অজস্র মানুষ কেউই সেলিনার কথায় কান দেয় না। তুমুল করতালির শব্দে মুখরিত হয় বাংলার আকাশ, বাতাস....

বাকহীন শহীদ বুদ্ধিজীবী সেলিনা পারভীন বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পথে নামেন, অবনত মস্তকে আমাদের মাঝ দিয়েই পুনরায় হেঁটে যান রায়েরবাজার বধ্যভূমির দিকে...

বি:দ্র:
১৭ মার্চ ২০১০
স্থান: আল ফালাহ মিলনায়তন, বড় মগবাজার । ঢাকা।
সময়:কোন এক নামাজের ওয়াক্তের কাছাকাছি।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-03-17/news/49563।

১৭/০৩/২০১০
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।


মন্তব্য

মুস্তাফিজ এর ছবি

সেলিনা পারভিনের রায়ের বাজারের ছবি এখানে পাবেনhttp://www.facebook.com/photo.php?pid=4442519&l=a824eff540&id=721506348auto

দেশ এখন যে পর্যায়ে আছে তাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সরকারী উদ্যোগে শুরু না হলে জনতা নিজেই আইন হাতে তুলে নেবে তাতে সন্দেহ নেই।

মুর্তলার লিঙ্ক থেকে একটা উদৃতি "‘ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার সময় মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, ষড়যন্ত্র হয়েছে। তেমনি আজ বাংলাদেশে নিজামীর বিরুদ্ধেও মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’ "

কই মহারানী আর কই চুতমা***

...........................
Every Picture Tells a Story

মূর্তালা রামাত এর ছবি

মনের কথাটা বলছেন মুস্তাফিজ ভাই। স্যালুট আপনাকে।

মূর্তালা রামাত

ধুসর গোধূলি এর ছবি

ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার সময় মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, ষড়যন্ত্র হয়েছে। তেমনি আজ বাংলাদেশে নিজামীর বিরুদ্ধেও মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
বেড়ালের আগে মুহাম্মদ লাগালে আরিফের হয় জেল। আর প্রকাশ্যে দৈনিক পত্রিকার রিপোটার্দের সামনে সরাসরি এক খাটাশ নিজামীকে মহানবী (সাঃ) এর সাথে তুলনা করলেও এদেরকে কিছু বলা হয় না! এক লক্ষ লোককে হত্যা করার সরাসরি হুমকি দিলেও এদেরকে বখশ দেয়া হয়! কেনো?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

বোহেমিয়ান এর ছবি

এক লক্ষ লোককে হত্যা করার সরাসরি হুমকি দিলেও এদেরকে বখশ দেয়া হয়! কেনো?
কি বলব?!

মন খারাপ :(

_________________________________________
বোহেমিয়ান কথকতা

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

মূর্তালা রামাত এর ছবি

সেটাইতো সবার প্রশ্ন। কেনো?

মূর্তালা রামাত

অম্লান অভি এর ছবি

ধুসর গোধূলি লিখেছেন:
বেড়ালের আগে মুহাম্মদ লাগালে আরিফের হয় জেল। আর প্রকাশ্যে দৈনিক পত্রিকার রিপোটার্দের সামনে সরাসরি এক খাটাশ নিজামীকে মহানবী (সাঃ) এর সাথে তুলনা করলেও এদেরকে কিছু বলা হয় না! এক লক্ষ লোককে হত্যা করার সরাসরি হুমকি দিলেও এদেরকে বখশ দেয়া হয়! কেনো?

আরিফ কি জামায়েতের সদস্য ছিলেন? মনে হয় ছিল না। তাই জুলুম আর ত্রাস তার জন্য প্রয়োজ্য। মহানবী (সাঃ)'কে যিনি তুলনা করেছেন তিনি তো তার করার সামর্থন বহন করেই! কারণ সেই খাটাশ তো জামায়েত ইসলামীর কেন্দ্রিয় কমিটি সদস্য। হায়! ধর্ম আর শ্রদ্ধাবোধ চলে যায় ব্যবসার খাতিরে লেবাসি চাটুকার ফতোয়াবাজের ঘরে। আপনি আমি এতে আলোড়িত হয়ে কিছু করতে পারব না। আমাদের শ্রদ্ধা বোধ দেখানো মঞ্চায়নের আশায় নয় বরং শ্রদ্ধা রক্ষার্থে রক্ষিত, তাই আসুন অনুতাপ পোষণ করি। তারা পারে আর আমরা সেই পারা নিদর্শন দেখি বিমান বন্দর গোল চত্বর বেদিতে...বৃষ্টি ভিজে প্রতিবাদ শেষে।
আমার ক্যাম্পাসের পাশে একজন হত দরিদ্র কৃষক নামাজ শেষে বলতে শুনেছি আমি জামায়েত করি আমার জীবনের নামাজ কবুলের আশায়, ওরা তো ইসলামের কথা বলে। আজ তাকে দেখা হলো বলা যেত রাসুল'কে তারা তাদের নেতার সমতুল করে তুলেছেন। হয়তো ঘৃণার প্রকৃত থুতু ছুড়ে দিতেন সেই বৃদ্ধও।

মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....

মূর্তালা রামাত এর ছবি

ঠিকই বলেছেন।

মূর্তালা রামাত

দ্রোহী এর ছবি

সবকিছুই নষ্টদের অধিকারে চলে যাবে।

মূর্তালা রামাত এর ছবি

এটা কখনোই বাস্তব না হোক....

মূর্তালা রামাত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।