আজ সকাল সকাল মাহমুদ ভাইয়ের সাথে দেখা। মাহমুদ ভাই আর আমি সিডনিতে একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতাম। এখন একই এলাকায় থাকি।মাহমুদ ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছা্ত্র ছিলেন।ছাত্রজীবনের শেষের দিকে তিনি তাবলীগে শরিক হন।ফলাফল হলো এককালের জিন্স টি শার্টের স্টাইলিশ মাহমুদ ভাই এখন একহাত লম্বা দাড়ির অধিকারী, পাঞ্জাবী পায়জামা পরা মানুষ।সদালাপী সর্বদা হাসিখুশি দিলখোলা এই লোকটির সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা হতে বেশি সময় লাগেনি।
আজকে দেখা হতেই তিনি বরাবরের মতো লম্বা সালাম দেয়ার আগেই আমি বললাম, আসসালামুআলাইকুম, মাহমুদ ভাই কেমন আছেন?
ওলাইকুমসসালাম।ভালো।
মাহমুদ ভাই সবসময় হাসখুশি থাকেন। কিন্তু আজকে তাকে বিষণ্ন লাগায় জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি অসুস্থ?
না।
তাহলে কি মন খারাপ? দেশের সবাই ভালো আছেতো?
দেশের সবাই ভালোই আছে।খালি আমি আছি সমস্যায়।
কি হয়েছে?
আর বইলেন না, বাসায় নতুন এক ছেলে উঠছে।তার জ্বালায় জীবন শেষ।
কেন?
সে আইসাই দল পাকানো শুরু করছে।বিদেশ বিভূঁইয়ে ব্যাচেলর বাসা করে কয়জন মিলেমিশে থাকি।সেখানেও যদি গ্রুপিং লবিং করতে হয় তাহলে কি আর শান্তি থাকে।সারাদিন কাজ শেষে এসে এসব আর ভালো লাগেনা।তার ওপর সেই ছেলে আবার করে শিবির। আমার দাড়ি দেখে সে ভাবছে আমিও বুঝি তার দলের।আমাকে বলে কি জানেন?
কি বলে?
বলে,ভাই আমি কিন্তু আসলে শিবির, করতাম ছাত্রলীগ!
বলেন কী?
হ্যা ভাই তার দলের আরো অনেকেই এখন জাহাঙ্গীর নগর ছাত্রলীগের বড় বড় নেতা।
মাহমুদ ভাইয়ের সাথে কথোপকথনের বাকি অংশে আমি আর না যাই। তার কথায় আমি খানিকটা চমকালেও হতভম্ব হইনি।এ প্রসংঙ্গে নিজের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে।আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। হলগুলো সব ছাত্রলীগের দখলে।একবছর পরেই চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। হলগুলোতে ছাত্রদলের দখলদারিত্ব কায়েম হয়, শিবির প্রকাশ্যে আসে। তখন দেখি ছাত্রলীগের অনেক নেতা,কর্মী, ক্যাডার আসলে ছদ্মবেশী শিবির।এরা্ ছাত্রলীগের হয়ে নানাধরনের সুবিধা নিয়েছে, দলের বদনাম কুড়াতে সাহায্য করেছে, তারপর সময় বুঝে সরে এসেছে।
শুধু ছাত্রলীগ নয় খোদ আওয়ামী লীগারদের ভেতরই খুঁজলে এমন অনেক ছদ্মবেশী জামাত শিবির বের হবে।অনেককাল আগে আমি যখন চট্রগাম কলেজে পড়ি তখন শিবিরের এক কেন্দ্রীয় নেতা কথাসূত্রে আমাকে বলেছিলেন, “যেহেতু আমরা এদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংখ্যালঘুর পর্যায়ে পড়ি সেহেতু টিকে থাকার প্রয়োজনে কিছু কৌশল আমাদের অবলম্বন করতেই হয়।এক্ষেত্রে ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাথে আমাদের তুলনা করা যেতে পরে।“ বিশ্বের গোয়েন্দাসংস্থাগুলোর মধ্যে মোসাদ যে কূটকৌশলে এবং দক্ষতায় কতোটা শক্তিশালী বলে দেয়ার অপেক্ষা রাখেনা। এখন প্রশ্ন হলো জামাত শিবিরের এই মোসাদীয় এজেন্ডার বিপরীতে আওয়ামী লীগ বা দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতি কী?
যতদূর দেখা যায় তারা এ ব্যাপারে উদাসীন। বিএনপিতেতো জামাত সরাসরি আছর করেছে, আর আওয়ামী লীগের নেতারা 'দলে মনে হয় ছদ্মবেশী জামাত শিবির আছে” এটুকু বলেই দায়িত্ব সারছেন।ফলে জামাত শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কোন সমস্যাই হচ্ছে না।চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তারা সরাসরি ক্ষমতায় থাকছে, মহাজোট সরকারের সময় তারা ছদ্মবেশে ক্ষমতার স্বাদ নিচ্ছে পাশপাশি সরকারের বারোটা বাজানোর কাজ নিখুঁতভাবে করে যাচ্ছে।
আমার মনে হয় সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত তদন্ত কমিশনের প্রধানের জামাতি পরিচয় ফাঁস হবার পর সরকারের উচিত হবে দল এবং প্রশাসনের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা ছ্দ্মবেশী জামাত শিবিরকে খুজেঁ বের করার মিশন হাতে নেয়া।যদিও এটি দূরহ এবং সময়সাপেক্ষ কাজ তবুও এটি করা এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য ফরয কাজ হয়ে দাড়িয়েঁছে।এটি করতে যতো দেরি হবে দলটির বিপদ ততো বাড়বে এমনকী ভবিষ্যতেও দলটিকে এর জন্য মারত্মক খেসারত দিতে হতে পারে।
৯/০৬/১০
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।
মন্তব্য
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ধন্যবাদ।
১. প্রথম অংশ পড়ে প্রথমে চমকে গেলেও পরে মনে হলো চমকানোর কিছু নেই। এটা তাদের পুরনো কৌশল। বিষয়টা অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা স্বাভাবিক সময়ে ভুলে গেলেও জামাত-শিবির প্রতিনিয়ত তাদের কাজ করে যায়।
২. ...তাহলে তো কোনো অপকর্ম করার পর রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা অন্য দলের কর্মীদের কাণ্ড বলে দোষ দেয়, সেটাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না! আর এ ব্যাপারে কোনো রাজনৈতিক দল তাদের দলে শুদ্ধি-অভিযান চালায় কিনা, বা নিদেনপক্ষে উদ্যোগ নেয় কিনা, সেই তথ্য কি কারো জানা আছে?
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
'৭১ এর আগে অনেক বামপন্থি দলের কর্মপন্থাও এমন ছিল। অন্য দলের সদস্যপদ নেয়া।
ছাত্রাবস্থায় অনেকেই নানান কারনে বিভিন্ন দলের হয়ে স্লোগান দেয় যাতে কোন রাজনীতি থাকেনা। কিন্তু জামাতের এই ধরণের তৎপরতার কিছুটা সত্যতা থাকলে সেটা কারো জন্য মঙ্গল বয়ে আনবেনা।
...........................
Every Picture Tells a Story
জামাতের এ ধরনের তৎপরতা কিছুটা নয় পুরোপুরিই সত্য মুস্তাফিজ ভাই এবং অন্যান্য দলগুলো এ ব্যাপারে উদাসীন।
মূর্তালা রামাত
আমি কর্মক্ষেত্রে দেখেছি, অনেক ছদ্মবেশী শিবির আছে যারা বলে, "ছাত্রজীবনে আমি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল করতাম, তবে এখন দেখছি জামায়াতের লোকেরা বেশ ভদ্রলোক, তাদের বিরূদ্ধে আপনি কোন দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারবেননা"। এই লোকগুলি মূলতঃ জামায়াতের ছদ্মবেশী প্রতিষ্ঠানগুলোতেই কাজ করে এবং সাধারণ মানুষকে এভাবে বিভ্রান্ত করে। শিবিরব্যতীত অন্য ছাত্র সংগঠনের প্রাক্তন কর্মীদের বর্তমান অবস্থার খোঁজ নিলে অনেক থলের বেড়াল বের হয়ে আসবে। এই ব্যাপারে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কোন উৎকণ্ঠাও নেই, কর্মপরিকল্পনাও নেই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ঠিক বলেছেন।
মূর্তালা রামাত
হুমম।
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
রাজনৈতিক বাক্যালাপটুকু সত্য, কেননা আমি নিজেও গত সরকারের আমলে এলাকার কিছু ছাত্রদল নেতাকে এখন একনিষ্ঠভাবে লীগের হয়ে কাজ করতে দেখেছি (যদিও তারা প্রকৃত অর্থে লীগের পোষ্য)!
সুতরাং এক্ষেত্রে লীগেও শিবির/ছাত্রদল নেতাদের উপস্থিতি থাকবে বৈকি।
---------------------------------
তাহসিন গালিব
শিবির হলো পরগাছা, যখন যেটায় সুবিধা, সেটাকে আঁকড়ে ধরেই বেড়ে ওঠার চেষ্টা করবে, এটা ছাত্রদল হতে পারে, লীগ হতে পারে, তাবলীগ হতে পারে, ধার্মিকতা হতে পারে, সন্ত্রাস হতে পারে, গালিবাজি হতে পারে, সুশীলতা হতে পারে। তবে লেঞ্জা লুকানো কঠিন। পাঁচজন রাজাকারের নাম, যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে হলে সব অপরাধের বিচার চাই কিনা, মানবতাবোধের ব্যপ্তি ইত্যাদি সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে লেঞ্জা বেরিয়ে পড়ে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
মারত্মক বলেছেন।
মূর্তালা রামাত
এই ছদ্মবেশিরাই হচ্ছে মূল সমস্যা। এরা ছাত্রদল, ছাত্রলীগ করে এবং বড় বড় নেতা হয়ে যায় খুব দ্রুত, নিজ চোখে জাবিতে দেখেছি এটা। এবং কোন এক অদ্ভুত কারনে কেন্দ্রীয় নেতারাও এদেরকেই প্রশ্রয় দেন, কেন্দ্রিয় পর্যায়েও এই ছদ্মবেশিদের ভীড়। জাবিতে দুই দুইবার শিবির আক্রমন কাছ থেকে দেখেছি, সবচাইতে প্রগতিশীল ছেলেমেয়ের মধ্য থেকে যখন শিবির বেরিয়ে আসতো তখন খুব অসহায় লাগতো। এদের চিনতে কিন্তুখুব বেশি কষ্ট করতেও হয়না।
ছায়ার সাথে যুদ্ধ! প্রতিকার কি?
নতুন মন্তব্য করুন