প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত পরশু জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের দেয়া ইফতার পার্টিতে বক্তব্য দিতে যেয়ে বলেছেন “অন্যায় হলে সমালোচনা করুন, অপপ্রচার গ্রহণযোগ্য নয়”। তার কথার সাথে আমরা একমত যে অপপ্রচার চালিয়ে গনতান্ত্রিক সরকারকে বিব্রত নাজেহাল করাটা একেবারেই অনুচিত। এতে দেশ শাসন করতে গিয়ে সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হয় যা প্রকারন্তরে গনতন্ত্রকেই দূর্বল করে দেয়।
তাই অপপ্রচার নয়, সমালোচনার মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে তাদের কিছু কর্মকাণ্ডের প্রতি নজর দেয়ানোটাই এ লেখার মূল লক্ষ্য। যদিও অতীত অনুসন্ধান করলে দেখা যায় এ দেশে সরকারের সমালোচনা করলেই সেটা ক্ষমতাসীন লোকজনের কাছে অপপ্রচার হয়ে দাঁড়ায়। মাঠে ময়দানে, সভা সেমিনারে তার গলা ফাটিয়ে নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইতে থাকেন আর তাদের ভাষায় মিথ্যা যে অপবাদ তাদের বিরুদ্ধে দেয়া হচ্ছে তার বিপক্ষে আমজনতাকে রুখে দাঁড়াতে বলেন।
বর্তমান সরকারের নেতৃত্বস্থানীয় লোকজনও এর ব্যতিক্রম নন। পানি, বিদ্যুত, গ্যাস-এর অভাবে যখন দেশবাসী নাকাল তখন তারা বলছেন এগুলো স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচারকে বানচাল করতে সুপরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। এ সমস্যাগুলো নিয়ে সরকারের সমালোচনা উঠলেই তারা বলছেন এগুলো অপপ্রচার! অথচ গত দুই বছরে এই সমস্যাগুলো নিরসনে কী কী করেছেন তার কোন বাস্তব উদাহরণই তারা জনগনের সামনে দিতে পারছেন না। এমনকি আগামী তিন বছরে এ সমস্যাগুলো নিরসনে তাদের পরিকল্পিত রূপরেখাও তারা জনগনকে দেখাতে পারছেন না। তাহলে এই সমস্যাকেন্দ্রিক সমালোচনাগুলোকে অপপ্রচার বলে পাশ কাটানোর সুযোগ কি তাদের রয়েছে?
এরপর আসা যাক ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে। তাদের দাপুটে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে বহু আলোচনা সমালোচনা হলেও তাদের বিরুদ্ধ তেমন কোন অ্যাকশন চোখে পড়েনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জামাত শিবিরের হাতে একজন ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হবার জেরে শিবিরের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মত। কিন্তু কিছুদিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্রলীগের এক গ্রুপের হাতে অপর গ্রুপের একজন কর্মী নিহত হলেও প্রশাসন নিশ্চুপ! পত্রিকা মারফত ছাত্রলীগের প্রতি প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত রুষ্ট হবার খবর জানা গেলেও ছাত্রলীগকে থামাতে তার সরাসরি কোন তৎপরতার খবর আমার পাইনি। তাই ধরে নেয়া যায় ছাত্রলীগের রাশ টেনে ধরাটা ক্ষমতাসীনদের মুখের কথা আর দুই একজনকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অথচ এক ছাত্রলীগই সরকারের ইমেজের যে কয়টা বাজাচ্ছে অন্য কোন কিছুই তার ধারে কাছে যায় না। রাস্তাঘাটে মানুষজন এই ইস্যুতে সরকারের ওপর বিরক্ত, সরকার নিশ্চুপ!
প্রায় একই ধরনের নীরবতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে ভোলার-৩ আসনের নবনির্বাচিত সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বেলায়ও। তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আসার পরও পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী তাকে বাঁচাতে সক্রিয় রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একটি অংশ। নিহত ইব্রাহীমের পরিবারকে নিয়মিত হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। নিহতের স্ত্রী, যিনি নিজে ক্ষমতাসীন দলের একজন তৃণমূল নেত্রী, দল ক্ষমতায় থাকা স্বত্ত্বেও তিনি স্বয়ং ঘটনার সুষ্ঠ তদ্ন্ত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন। সরকারের উচিৎ ছিল তড়িৎ এ খুনের রহস্য উন্মোচন করা, প্রয়োজন হলে এমপি সাহেবকে রিমান্ডে নেয়া। তা না করার ব্যর্থতায় বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলতে পেরেছেন “সরকারদলীয় সাংসদ খুন করে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সরকার কিছুই করছে না”। কালক্ষেপনের এই টালবাহানার জন্য জনগণ সরকারকেই দুষছে। এর মধ্যে আবার এমপি শাওনকে পূর্বের একটি মামলা থেকে তড়িঘড়ি করে অব্যহতি দেয়াটাকেও জনগণের কাছে ডাল মে কুচ কালা হ্যায় হিসেবে ধরা দিয়েছে।
আরেকটি কারণে সরকারের সমালোচনা করতেই হয় সেটি হল গুপ্তহত্যা। বিভিন্ন সরকারি বাহিনীর নাম করে যাকে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং কদিন বাদে তার লাশ পাওয়াটা বাংলাদেশে এখন খুবই স্বাভাবিক একট ঘটনা। এ ধরনের ঘটনায় কথিত সন্ত্রাসীরা যেমন মারা পড়ছে তেমন বাদ যাচ্ছেনা নিরীহ কেউ কেউ। জনগণ এতে ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সরকার যতোই এসব গুপ্তহত্যার দায়দায়িত্ব অস্বীকার করুক না কেন জনগণ তা মানতে নারাজ। সরকারের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী মহলের অগোচরে যদি এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকে তবে হত্যাকারীদের খুজেঁ বের করে শাস্তি দেবার দায়িত্ব সরকারের উপরই পড়ে। আর সরকার যদি তা করতে ব্যর্থ হয় এবং গুপ্তহত্যার মত অপরাধ বাড়তেই থাকে তবে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে। কারণ দেশের জনগণের জানমালের হেফাজতের দায়িত্ব তাদেরই। চৌধুরী জানে আলমের মত বিরোধী দলের লোকজন ক্রমাগত হাওয়া হতে থাকবে আর সরকার বলবে আমরা কিছু জানি না, এটা সকলের জন্য উদ্বেগজনকই বটে।
তেমনই উদ্বেগজনক অবস্থা বিরাজ করছে চাঁদাবাজিকে ঘিরে।ব্যবসায়ীদের অন্দরে খবর নিলে জানা যায় যে তার ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ। এমনকী মহসড়কে মালামাল পরিবহন করতে হলেও তাদেরকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। এই কালচারটি বন্ধ করতে না পারলে সরকারের দিনবদল বুলি শুধু মুখের কথাই থেকে যাবে। একই কথা খাটে যানযটের ক্ষেত্রেও। দিনদিন এটি অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। পথে ঘাটে নামলেই জনগনকে সরকারের উদ্দেশ্যে গালি ছাড়তে দেখা যায়। নগরবাসী বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার নাগরিকদের এই সমাস্যাটি সমাধানের অঙ্গীকার করেই সরকারী দল গত নির্বাচনে ঢাকার প্রায় সবকটি আসনে জিতেছিল। কিন্তু যে লাউ সেই কদু- যানযট বাড়ছেতো বাড়ছেই আর সরকার প্রতিশ্রুতি ভাঙ্গার দায়ে নিয়ত অভিযুক্ত হচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের কথা বলেছেন। সরকার সংবিধান সংশোধন করছে, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় দোষীদের খুঁজে বের করছে, গ্রেনেড হামলার সুষ্ঠ তদন্ত করার চেষ্টা করছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে, নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে, রমজানেও দ্রব্যমূল্যের দাম তেমন একটা বাড়তে দেয়নি, ঢাকা এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে, গার্মেন্টস মালিকদের আপত্তির মুখেও শ্রমিকদের বেতন কিছুটা হলেও বাড়াতে পেরেছে, বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ বাড়িয়েছে- সরকারের প্রভৃতি সাফল্যকে অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু যে বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের সমালোচনা হচ্ছে তার কাছে সাফল্যগুলো ম্লান হয়ে যাচ্ছে। যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে যে এই সমস্যাগুলোতে নাকাল দেশের জনগণ সরকারের কাছ থেকে এসব ব্যাপারে আশু পদক্ষেপ আশা করে।
সরকারে থাকা মানুষগুলো যদি জনগণের এ চাওয়াগুলোকে প্রথাগতবাবেই অপপ্রচার বলে নাকচ করে দিতে চান বা বরাবরের মত সমালোচনাকারীদের অন্য উদ্দেশ্য খোঁজেন তবে তা পূর্বের সরকারগুলোর মত নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার শামিলই হবে। আশা করি বর্তমান সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এটি বুঝবেন, জনবিচ্ছিন্ন বিরোধী দলের হাতে আন্দোলনের ইস্যু তুলে দেবেন না।
ছবিসূত্র: গুগল ইমেজ।
৩০/০৮/১০
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।
মন্তব্য
সমালোচনা ঠিক আছে। তবে ছবির কপিরাইটের বিষয়টা আপনি বারবার ভুলে যাচ্ছেন
এটাতো নেট থেকে নেয়া ছবি....যতদূর মনে পড়ে দেশের সব পত্রিকাতেই এই ছবি কম বেশি ছাপা হয়েছে...তাই কপিরাইটের বিষয়টি মাথায় ঢুকলো না...বুঝিয়ে বললে ভাল হত...
মূর্তালা রামাত
লেখা ভালো হয়েছে। পোস্টের কোথাও ছবির সূত্র লিখে দিন। পিপিদা খুব ভালো বার্তা সম্পাদক। উনি অযথা কোন পরামর্শ আমাকে কখনো দেননি। প্লিজ আলোচনা অন টপিক থাকুক। ইংরেজীতে কিছু লিখলে আমাকে পাঠান। প্লিজ।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।
মাসকাওয়াথ বাই- আপনার কাছে ভালো পাওয়াটা বেশ ভাল লাগার বিষয়। আপনার পরামর্শ অনুযায়ী ছবিসূত্র পোস্টে দিয়ে দিলাম। আর ইংরেজিতে লিখতে আলসেমী লাগে। কখনো কিছু লিখলে আপনাকে পাঠাবো অবশ্যই। ভাল তাকবেন।
মূর্তালা রামাত
বাহঃ আপনি তো বেশ ভাগ্যবান !
মাসকাওয়াথ ভাই আপনাকে খুব পছন্দ করেছেন!
অনটপিক- সমালোচনাটা ভালো লাগছে।
_________________________
সর্বাঙ্গ কন্টকিত-বিধায় চলন বিচিত্র
_________________________
সর্বাঙ্গ কন্টকিত-বিধায় চলন বিচিত্র
পেঁচা একটা বট গাছের কাঠব্যাল্কনিতে ল্যাপি নিয়ে বসে মাইকেল হবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে নীচে পাতা ফাঁদের দিকে চোখ রাখছিল,হাসজারু এই পথে এলেই ঝোপ দিয়ে ঢাকা গর্তের ফাঁদে পড়ে যাবে।পেঁচা ল্যাপটপের বোতামে বসে অপেক্ষায়।আজ হাসজারু বুঝবে কত ধানে কত চাল।
হাসজারু আবার অস্ট্রেলিয়ার সাদা কাকটাকে টিকলাচ্ছে দেখা যায়। পেঁচা সিসিটিভি জুম ইন করে। ইয়েস হাসজারু পেঁচাকে একটু জানান দিচ্ছে। কিন্তু পেঁচা আজ ব্যস্ত। একটা জন্মদিনের ভয়্যার রিপোর্টিং। কাল ওই ১৫ আগস্টের জন্মদিনের গল্পে হাসজারুটাতো আসবেই,উত্তেজিত খরগোশটাকেও নিয়ে আসবে। তখন একটু চুলকে দেয়া যাবে ওদুটোকে। পেঁচা কালকের জন্য নতুন কোন ফাঁদ তৈরীর চিন্তায় মন দেয়।
অফটপিক,ফার্মভিল এনিমেশন স্ক্রিপ্ট।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।
বিষয়টা এতটা সহজ নয়, আবার খুব কঠিনও নয়। নেটে পাওয়া গেলেই সেটা কিন্তু ফ্রি হবে এমন নয়। আমি যেটা বুঝি সেটা এরকম:
১। সচলায়তনে যদি ছবি আপলোড করেন তাহলে সেই ছবির মালিকানা আপনার হতে হবে। অথবা সচলায়তনে সংরক্ষণ করতে পারবেন এরকম অনুমতি নেয়া থাকতে হবে।
২। যেসব ছবি পাবলিক ডোমেইনে (যেমন উইকিমিডিয়া কমন্স) সেগুলো আপনি সচলায়তনে আপলোড করতে পারবেন কোন অনুমতি নেয়া ব্যতিরেকেই। তবে অবশ্যই ছবির সূত্র এবং ফটোগ্রাফারের নাম উল্লেখ করতে হবে।
৩। ১) এব ২) এর কোনটিই যদি না হয় তাহলে "ছবি" বাটনে ক্লিক করে শুধু ইউআরএল পেস্ট করেও ছবি যোগ করা যায়। এভাবে দিলে ×সম্ভবত× সূত্র উল্লেখ না করলেও চলে কারণ ছবির ইউআরএলই সূত্র হিসেবে কাজ করে।
বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে ভয় ছিল অফটপিক হয়ে যায় কি না। আশা করি হবে না।
এগুলো জানা ছিল না। জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমারও তাই মনে হয়-অফ টপিক হবেনা।
মূর্তালা রামাত
তেনারা যদি দয়া করে সমালোচনা এবং অপপ্রচারের ডিষ্টিঙ্কশনটা বোঝেন, এবং সেইমতো এডাপ্ট বা রিয়্যাক্ট করেন, তবে সবার মঙ্গল।
রাতঃস্মরণীয়
"চৈত্রী"
নতুন মন্তব্য করুন