খবর বেরিয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পদত্যাগ করেছেন! নিউজওয়ার্ল্ড- নিউইয়র্ক ভিত্তিক একটি সংবাদ সংস্খা এ খবরটি প্রথম পরিবেশন করে। আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যেই খবরটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তবে সৈয়দ আশরাফ নিশ্চুপ।
বাংলাদেশের মানবজমিন এবং বিডি নিউজ এর বরাত থেকে জানা যাচ্ছে যে ঘটনা সত্যি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র থেকে তারা ঘটনা সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়েছে। মূলত দল এবং সরকারি কর্মকাণ্ডে শেখ হাসিনার সাথে মতপার্থক্যের কারণেই সৈয়দ আশরাফের এই পদত্যাগ। মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের আগেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী এখনও তার পদত্যাগ পত্র অনুমোদন করেননি।
এর আগে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের ছেলে সোহেল তাজ ও দলের সাথে নানা বিষয়ে একমত হতে না পেরে পদত্যাগ করেন। সে সময়ে দলের পক্ষ থেকে প্রথমে এটিকে গুজব হিসেবে বলা হলেও পরে তা সত্যি বলে মেনে নেয়া হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী অনেক দিন পর্যন্ত তার পদত্যাগ পত্র গ্রহণ না করে বিষয়টিকে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। সৈয়দ আশরাফের বেলায় সে রকমই হতে যাচ্ছে বলে অভিজ্ঞ মহলের অনুমান।
বর্তমান আওয়ামী লীগের যে কয়জন হাতেগোনা লোককে মানুষ পছন্দ করে, সৎ রাজনৈতিক হিসেবে জানে সৈয়দ আশরাফ তাদের মধ্যে একজন। বর্তমান মন্ত্রীসভা নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও সৈয়দ আশরাফের মন্ত্রনালয় (এলজিআরডি) নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন কথা ওঠেনি। বরঞ্চ সৈয়দ আশরাফ দলের ভেতর দিন বদলের কাণ্ডারী ছিলেন বলে শোনা যায়।
১/১১ এর সময়ই তিনি মূলত সবার নজর কাড়েন। শেখ হাসিনার অবর্তমানে সেসময় যারা দলকে শক্তভাবে পরিচালিত করেন, দলের সংহতি বজায় রাখেন সৈয়দ আশরাফ তাদের একজন। সেসময় তার কথাবার্তার ধরণে এবং তার ব্যবহারে রাজনীতির নতুন ধারার পরিচয় পওয়ায় তরুণ প্রজন্ম সহজেই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। ফলশ্রুতিতে প্রায় এলাম দেখলাম জয় করলাম ভাবেই তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হন।
এমন একজন লোকের বিদায় মানে আওয়ামী লীগের ক্ষতি, নতুন প্রজন্মের ক্ষতি, দিনবদলের রাজনীতি তথা নতুন সুস্থ ধারার রাজনীতির ক্ষতি। আবুলের মত ব্যর্থ অকর্মা লোকেরা যখন বুক ফুলিয়ে নির্লজ্জের মত বলে বেড়ায় "আমার পদত্যাগ আমার হাতে নেই" তখন সৈয়দ আশরাফের মত লোকের পদত্যাগ(যদি পদত্যাগের খবরটি সত্য হয়)চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে আমাদের দেশের রাজনীতিতে ভালো লোকের অবস্থান কতটা অসহায় পর্যায়ে।
নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে আইভীর বিজয় যদি বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের সূচনা করে তবে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এর এ পদত্যাগ আমাদের দেশের সৎ রাজনৈতিক ধারার একটি পরাজয়। তার মত মানুষেরা হতাশ হয়ে চলে গেলে আমরা সামনে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাই না। তাই ব্যক্তিগতভাবে আমি মনেপ্রাণে চাই সৈয়দ আশরাফের পদত্যাগের বিষয়টি একটি গুজব হিসেবেই থাক। এভাবে ভালো মানুষগুলো রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো!
তথ্যসূত্র:
http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&view=article&id=25216:2011-11-14-07-59-57&catid=57:1st-story&Itemid=129
http://www.bdnews24.com/bangla/details.php?cid=3&id=177051&hb=top
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-11-14/news/200854
১৪/১১/২০১১
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
মন্তব্য
দারুণভাবে সহমত । সৈয়দ আশরাফ দল ছেড়ে গিয়ে নিষ্ক্রিয় না হয়ে গিয়ে বরং দলের ভেতর থেকেই লড়াই করে দলকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবেন । আর শেখ হাসিনা আপনাকে বলি -- বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দীন আহমদের সাথে দূরত্ব তৈরি করে যে ভুল করেছিলেন , আশা করি আপনিও সেই একই ভুল করবেন না । আর জয়নাল হাজারী, শামীম ওসমানের মত গডফাদারদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে ২০০০ সালের নির্বাচনে আপনি নিজে যে ভুল করেছিলেন সেটারও পুনরাবৃত্তি করবেন না!
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
শেখ হাসিনা মনে হচ্ছেআবারও ভুল করতে চলেছেন, এমনভাবে নিজেনিজেই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যা আগামীতে দলকে ডোবানোর জন্য যথেষ্ঠ।
মূর্তালা রামাত
শুরুতে এনাকে ভালোই লাগতো। কিন্তু ইদানীং ইনিও পুরানো ধারায় কথা বলা শুরু করেছিলেন। পদত্যাগ না হোক, বরং একটা ঝাঁকুনি যদি উনি দিতে পারেন সেটাই ভালো। পদত্যাগ করলে দুষ্টচক্র খুশী হবে।
হ্যা আমারও একই অনুভূতি হয়েছিল। তবে তারপরও কিন্তু সৈয়দ আশরাফের কথাবার্তা অনেক পরিপক্ক মনে হয়। একটি বড় দল এবং সরকারের একজন জাদরেল স্পওকম্যান হতে যা যা গুণ থাকা প্রয়োজন তার সবই তার আছে.....তার পদত্যাগ করা উচিত নয়,আপনি ঠিকই বলেছেন, পদত্যাগ করলে দুষ্টচক্র খুশি হবে...
মূর্তালা রামাত
কবে যে শেখ হাসিনা এই সব চাটুকারের হাত থেকে রেহাই পাবেন। চাটুকাররাই আওয়ামীলীগটাকে নষ্ট করলো।
সব দোষ চাটুকারদেরই বস, চাটুকারদের যে প্রশ্রয় দেয় তার কোনো দোষ নেই ? মাঝে মাঝে শেখ হাসিনা নিজেও আওয়ামী লীগের জন্য কম ক্ষতিকর নন !
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
সহমত....
মূর্তালা রামাত
শেখ হাসিনা চাটুকারদের হাত থেকে রেহাই পেতে চান কীনা সেটাও একটা প্রশ্ন-
মূর্তালা রামাত
সাধারন সম্পাদক হিসেবে সে কি দ্বায়িত্ব পালন করেছে? তার ইমেজ ভাল হতে পারে, কিন্তু তিনি মোটেই দ্বায়িত্ব পালন করেননি। গত ৩ বছরে কতগুলো জেলা আ.লী. কমিটি তিনি করেছেন? কেন্দ্রীয় কমিটিগুলোর কি অবস্থা? দলের সাংগঠনিক কাজ না করে, নিজের ইমেজ দিয়ে তো দল চলবে না।
বাংলা্দেশের কোন রাজনৈতিক দলেই কিন্তু গণতন্ত্রের চর্চা হয় না...এখানে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম হয়, নেত্রীর ইচ্ছায় কমিটি ও কাউন্সিল হয়। সৈয়দ অশরাফের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ আছে যেমন, তিনি ঘুম থেকে দেরি করে ওঠেন, নেতা কর্মীদের সময় কম দেন, নেতা কর্মীদের সুপারিশে কান দেন না- তার মানে কিন্তু এই না যে তিনি ব্যর্থ। বরঞ্চ তার চেয়ে হাজার গুণে নিষ্ক্রিয় মানুষ আওয়ামী লীগের মগডালে বসে আছে। দল ক্ষমতায় থাকলে এরা সারা দুনিয়া ওলটপালট করে ফেলে আর বিপদের দিনে এদের খুঁজেও পাওয়া যা না।এসব লোকের চেয়ে বরং সৈয়দ আশরাফ, সোহেল তাজ এরা হাজার গুণে ভাল। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এই কবছরে কতটুকু সাংগঠনিক কাজ করেছেন? কয়টা জেলায় তিনি সংগঠনের কাজে গিয়েছেন? বিরোধী দলে থাকতে তিনি সভানেত্রী হিসেবে যতটা অ্যাকটিভ ছিলেন, এখন তার ১০ ভাগও নন। হয়ত নির্বাচন এলে হবেন। ইমেজ দিয়ে যদি দল না চলে তবে সে দায় প্রথমে সভানেত্রীর তার পরে অন্যদের।আমাদের মনে রাখতে হবে যে মাছের পচন কিন্তু মাথা থেকেই শুরু হয়।আপনাকে ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
এবং সেটাও একটা সমস্যা। দলেই যদি গণতন্ত্র চর্চা না হয় তাহলে দল কিভাবে দেশে গণতন্ত্র চর্চা চালু করবে???
সরে গেলে তো আর সিস্টেম পাল্টাবে না, এটা উনাকে বুঝতে হবে। আবার উনার জায়গা আরেকজন নিলে সে কেমন করবে তাও একটা বিষয়। তাই সিস্টেমের ভেতরে থেকেই লড়াই করলে বরং সবার লাভ।
_________________
[খোমাখাতা]
সহমত। তবে কোন কোন সময় সিস্টেম এমন করে ফেলা হয় যে সেখানে দমবন্ধ হবার উপক্রম হয়। সেক্ষেত্রে সময় থাকতে মানসম্মান নিয়ে কেটে পড়াকেই অনেকে বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেন।
মূর্তালা রামাত
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
আবুলেম মত গাধা যদি মন্ত্রীসভায় থাকে আর দীর্ঘদিন যাবৎ একের একের পর খারাপ কাজ করার পরও প্রধানমন্ত্রী এদের বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত না নেন, তাহলে সামনে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে।
নতুন মন্তব্য করুন