ক।
চিঠিগুলোতে আরেকবার চোখ বুলান আলতাফ আলী। মোট বিশটি চিঠি। প্রতিটিই অসম্ভব আবেগ দিয়ে লেখা। যেন চাঁদ চুইয়ে চুইয়ে জোছনা পড়ছে রুক্ষ চরাচরে। কেউ যেন জাল ফেলে বাক্যে বাক্যে, শব্দে শব্দে, অক্ষরে অক্ষরে ছেঁকে উঠিয়েছে সমাজের নানা ক্ষত, সময়ের রক্তচক্ষু, প্রজাপতির ডানা মেলে দেয়া স্বপ্ন আর হাত ফসকে পড়ে যাওয়া ডিমের ঝুড়ির চূর্ণ বিচূর্ণতা নিয়ে স্বপ্ন ভঙ্গের রূঢ় বেদনা, যুদ্ধ করতে করতে ক্ষয় হয়ে যাওয়া তলোয়ারের মত হেরে যাওয়া মানুষের হাহাকার আর শুকিয়ে যাওয়া নদীর কণ্ঠ নিয়ে খানিকটা জলপানে বেঁচে থাকার প্রবল আকুতি। একজন কৃষক লিখেছে, “নদীত পানি নাই। ফসলগুলান মইরা যাইতাছে। পোকায় খাইতাছে। সার কিনবার গ্যালে ডিলারগো বেশি ট্যাহা দেওন লাগে। ট্যাহা কনে পামু! বাপের ভিটা বন্ধক থুইয়া ট্যাহা পাইলামতো ডিজেলের দাম কুলাইতে পারি না। মেশিন বন রাহন লাগে। চেয়ারম্যান সাব কয় ধৈর্য ধর, আমরার দল খমতায়- আমি ধৈয্য করি ক্যামা- উগার বাড়িত নতুন দালান উটপার লাগছে, উরা সার পায়, ত্যাল গম ভিজিএফ কার্ড ব্যাবাক পায়, খালি আমাগো যা আছিলো তাই- দিন কই বদলাইলো!” রিক্সায়ালারও একই কথা “এতো স্বপন লইয়া ভোট দিলাম, অহন আগুনের বাজারে ঢুকবারই পারি না। সারাদিন প্যাডাল মাইরাও দুইমুঠ পেট পুইরা খাইতো খাই না! কী চাইলাম আর আল্লায় কী দিলো! আল্লার দোহাই বুবুজান এই গরিবগো লাইগা কিছু একটা করেন।” একজন মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক খুব সুন্দর করে লিখেছেন, “স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলাম। দেশ স্বাধীন করেছিলাম। এখনো বুকের বাগানে স্বপ্নের তাজা গোলাপ স্বযতেœ লালন করি। কিন্তু প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই সেই গোলাপ রক্তাক্ত হয়। চারিদিকে বিষের নিঃশ্বাস যা ছিল, তাই আছে। কোন পরিবর্তন নেই। সব আশা মিথ্যে, কেউ কথা রাখে না।” তৃণমূলের একজন কর্মীর কথায়ও উঠে এসেছে একই হাতাশা, “প্রিয় নেত্রী, যা বলেছিলেন, যে কথা দিয়েছিলেন আর যা ভেবেছিলাম তার কিছুই হল না। চারিদিকে সেই পুরোনো তোষামোদকারীদেরই জয়গান। আগের মতই তারা দূর্দ- প্রতাপে দলের রক্ত চুষে চুষে যেভাবে পারছে আখের গোছাচ্ছে। আমরা হতাশ, মানুষ হতাশ। মেয়াদ প্রায় শেষ, না বিচার, না সেতু- কোন ওয়াদাই মনে হয় পূরণ মনে হয় পূরণ করা যাবে না। বড় মুখ নিয়ে ভোট এনেছিলাম, এবার ভোটের সময় মুখ দেখাবো কীভাবে?” ভুল বানানে আঁকাবাঁকা অক্ষরে ছোট্ট একটা বাচ্চা লিখেছে, “আমার আব্বু-আম্মুতো হাসপাতাল থেকে ফিরলো না। তুমি কিচ্ছু পারো না আন্টি, তুমি পচা।” শেয়ার মার্কেটে নিঃস্ব বিনিয়োগকারীর চিঠিও আছে, “পারলাম না। পথের ফকির হয়ে গেলাম। যতো খুশি গালি দিনÑআমরা ফটকা করাবারী, জুয়াড়ী, লোভী। আমার কিচ্ছু যায় আসে না। ভ- দরবেশদের এই দেশে আমার মত তুচ্ছ মানুষের বেঁচে থাকা না থাকা সমান কথা। আপনি প্রধানমন্ত্রী, পুরো দেশের দায়িত্ব আপনার। আমার মেয়েটাকে আপনার দায়িত্বে রেখে গেলাম।” প্রতিটি চিঠির প্রায় সব লাইনই আলতাফ আলীর মূখস্থ হয়ে গেছে। এই চিঠিগুলো শুধু চিঠি নয়, এগুলো মাটি ও মানুষের প্রামাণ্য দলিল, তাদের জীবনের হালহকিকত, দেশের বাস্তবতা। এগুলো অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়া উচিত। এতোদিনে প্রধানমন্ত্রী একটা বড় ধরনের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিলেন। “চিঠি প্রকল্প” টি চালু করায় মনে মনে আলতাফ আলী প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে ফেলেন। এমনিতে সরকারের সবকিছু লেজেগোবর অবস্থা। জুতা সেলাই থেকে চ-ীপাঠ সবকিছুই প্রধানমন্ত্রীকে একা সামলাতে হয়। তার উপর রয়েছে নেতা, মন্ত্রীদের সামলানো। এর মধ্যে জনগণের সাথে ভাব আদান প্রদানের সময় কই। অথচ বিরোধী দলই হোক আর সরকারই হোক সাধারণ জনগন তো সাফল্য ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় মাপকাঠি। হয়ত এটি ভেবেই ডাক বিভাগের চল্লিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হয়ে “প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখুন” প্রকল্পটির ঘোষণা দিয়েছেন। এক মাস ব্যাপী এ প্রকল্পের সেরা দশটি চিঠির লেখক লেখিকাকে প্রধানমন্ত্রী বিশাল আয়োজনের ভেতর দিয়ে নিজ হাতে পুরস্কৃত করবেন। এ দেশের ইতিহাসে আগের কোন সরকারপ্রধানই জনগনের কথা সরাসরি তাদের মুখ থেকে শোনার জন্য এধরনের কোন কিছুর আয়োজন করেননি। সেদিক থেকে বিচার করলে প্রধানমন্ত্রী বুদ্ধিমত্তার সাথে অত্যন্ত সাহসী একটা পদক্ষেপ নিয়ে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন, আলতাফ আলী আবারও মনে মনে তার মুগ্ধতা প্রকাশ করে চিঠির ফাইলটাকে বগলদাবা করে উঠে দাঁড়ান।
খ।
রিং হতে না হতেই করিমুদ্দীন খান ঈগলের ক্ষ্রিপ্ততায় ছো মেরে ফোন ধরেন। ওপাশে আজগর আলী স্বয়ং।
স্যালুট স্যার, সেনাবাহিনীর পুরোনো অভ্যাসবশত তিনি বলেন।
আজগর আলী হেসে দেন। বরাবরের মত বলেন, কী খান স্যালুট দেয়ার পুরোনো অভ্যেসটা এখনো ছাড়তে পারলেন না!
কী করে ছাড়ি বলুন! আপনি বলে কথা, খান সাহেব প্রশ্রয় পেয়ে হাসেন।
তারপর সব খবর কী?
সব ঠিকঠাক আজগর ভাই।
চিঠি প্রকল্পের কী অবস্থা?
প্রায় শেষ পর্যায়ে। হাজার হাজার মানে লাখ লাখ চিঠি এসেছে। আবুল কালাম সাহেব পুরো প্রজেক্টটা দেখভাল করছেন। ওনাকেতো আপনি চেনেন। কাজের লোক, কড়া মানুষ। কোন কিছু এদিক সেদিক হবার উপায় নেই।
হা হা, ভালোই বলেছ খান! সেজন্যইতো ভেড়াটাকে প্রাইমিনিস্টারের প্রেস সেক্রেটারি বানালাম। অবশ্য পরামর্শটা তোমার। তোমার চিঠি প্রকল্পের আইডিয়াটাও দারুণ, আপা খুব এক্সাইটেড !
তাই নাকী! সবই আপনার কেরামতি আজগর ভাই, প্রশংসা শুনে খান সাহেব মোমের মত গলে গলে পড়েন....আপনিইতো প্রধানমন্ত্রীকে বলে আমাকে তার উপদেষ্টা বানিয়ে দিলেন। না হলে কী আর এত কাজ করার সুযোগ পাই......
বাই দা বাই, চিঠি প্রকল্পের ফাইনাল অনুষ্ঠানের কতদূর কী করলে, আজগর আলী করিমুদ্দন খানকে কথা শেষ করতে দেয় না?
সবকিছু রেডি । মোবাইল কোম্পানীগুলো স্পন্সর দিতে এক পায়ে খাঁড়া, কেবল..
কেবল কী?
ওই যে আপনাকে বলেছিলাম না আজগর ভাই, ওইযে ওদের ওই ইলিগ্যাল ভিওআইপি ইস্যু নিয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের ঝামেলাটা...
ও ওটাতো প্রায় ন্যাশনাল ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জ্বী ভাই। প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে কোন ছাড় দিতে নারাজ...সামনে নির্বাচন আসছে ভাই, পার্টির ফান্ড...এখন আপনিই ভরসা। আপনি তার আত্মীয় মানুষ, দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড...আপনি চেষ্টা করলে....
হুম, ব্যাপারটা একটু টাফ...কোম্পানীগুলোর সাথে ঠিকমত কথাবার্তা বলেছ?
আজগর আলীর ইঙ্গিত সাপের ফনার চেয়েও দ্রুত ছোবলে বুঝে যান করিমুদ্দীন খান। মুচকি হেসে মনে মনে মনে বলেন, সাধে কী আপনাকে সবাই অজগর আলী ডাকে....তার ঠোট দ্রত নড়ে, জ্বী ভাই কথা ফাইনাল।
ফ্লাইওভারের চাইনিজ কোম্পানী গুলো কিন্তু গেলোবার....
নো টেনশন ভাই। এইবার তো আমি প্রজেক্টের সাথে আছি...জ্বী ভাই.... কোন অসুবিধা নেই...ঠিক আছে ভাই...বুঝতে পেরেছি ভাই...ফোনটা রেখেই খান সাহেব চেয়ারে গা এলিয়ে দেন। খুশিতে তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত নতুন ফসলের আনন্দে নেচে ওঠে। আরামে চোখ বুজে মনে মনে তিনি বাঘের থাবায় তার গাড়ির ড্রাইভারের পিঠ চাপড়ে দেন। ব্যাটার জন্যইতো আইডিয়াটা পাওয়া গেল। ব্যাটা কোন এক দোকানে বসে চা খেতে খেতে শোনে এক ছোঁড়া বলছে, আচ্ছা পিরাইমিস্টিাররে ফোন করা গেলি কেমুন হইতো কও দি?
দোকানদার বলে, “ ওরে বরকইত্যা তোর কি মাথা খারাপ হইলো নি?”
ক্যান?
পিরাইমিনিস্টারের কাম কাজ নাই! আমাগোর ফোন ধইরা বইয়া থাকুক আর দেশ যাইয়া খাদে পড়–ক, না!
খাদে পড়তে কী বাকি আছে নাহি, আরেকজনে ফোড়ন কাটে। চাউলের দাম যেম্বায় আকাশ ছুইতাছে মনে হয় কইলজা ফুটা কইরা ফালাইবো।
আরে রাহেন আপনার চাউল। ওইদিন বিড়ি কিনবার যাইয়া দেহি বিড়ি আর ব্যানসনের দাম পিরায় সুমান। বাপ দাদার কুনুকালে কেউ এইডা ভাবছে?
হাছা কতা কইছেন মিয়া ভাই। হগ্গলে মেইলা দ্যাশের হোগাডা ফাটাইয়া ফালাইতাছে। একবার এইদল আরেকবার ওই দল, মাঝখানে চান্স পাইয়া আবার ফকরুদ্দীন- মইনুদ্দীন শাউয়া ভইরা দিয়া গ্যাছে।
হ, বেবাকেই মজা লইতাছে, মাঝ দিয়া পাবলিকের বাঁশ। চান্দাবাজি, সন্ত্রাস, খুন খারাপি কিছু কি কমছে?
মাগার রাজাকারগুলোর বিচার হইতাছে। এইডা একটা ভালো কাম।
হু, আমাগো এইসব কথা যদি ফিতা বানইয়া পিরাইমিনিস্টাররে শুনাইবার পারতাম, বরকত্যা নামের ছেলেটি অনুযোগের সুরে বলে। আচ্ছা হেরে চিটিমিটি লেখা যায় না?
সকলের মধ্যে হাসির হুল্লোড় পড়ে যায়। হালার পুতের শখ দেহো, পিরাইমিনিস্টারের লগে রঙ তামাসা করবার চায়। ওই ছেমড়া বেডির বয়স জানোস?
কথায় কথায় একদিন খান সাহেবের ড্রাইভার তার কাছে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখার প্রসঙ্গটি তোলে। তিনি ড্রাইভারকে এসব ফালতু চিন্তা বাদ দিয়ে মন দিয়ে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দিলেও মনে মনে বিষয়টি তার পছন্দ হয়। লাভ ক্ষতি হিসেব করে সময় সুযোগ বুঝে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আইডিয়াটা পাড়তেই তিনি প্রস্তাবটা লুফে নিলেন। বলেন, ভালোইতো চিন্তা করেছেন। জ্বী, ম্যাডাম এর মাধ্যমে পুরো দেশের মানুষের সাথে আপনার একটা সরাসরি ইন্টারঅ্যাকশন হবে। জনগনের কাছে আপনার ইমেজ বাড়বে। যারা বলে দেশের বাস্তব অবস্থার কোন খোঁজখবরই আপনার জানা নেই, সেইসব নিন্দুকের মুখে ছাই পড়বে। আর পুরো প্রজেক্টির স্পন্সর যোগাড় করে আমরা আগামী ইলেকশনের জন্য একটা ফান্ডও গুছিয়ে ফেলব।
প্রধানমন্ত্রীর গ্রিন সিগন্যাল পেয়েই তিনি মাঠে নেমে পড়েন। ইতোমধ্যেই প্রজেক্টি নিয়ে মিডিয়ায় শোরগোল পড়ে গেছে। বিদেশী পত্রিকাতেও ফলাও করে এই প্রজেক্টটি নিয়ে লেখা হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য এই প্রজেক্টটি কতোটা সহায়ক টক শো গুলোতে তা নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে। চিঠিও আসছে দেদার। প্রতিদিনই সরকারি টেলিভিশনে চিঠির বস্তা উপুড় করে দেখানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ফুললি স্যাটিসফাইড। প্রজেক্টটি এখন পর্যন্ত সাকসেসফুল। প্রজেক্টটি ভালোভাবে শেষ করতে পারলে তার ক্যারিয়ার একটা বিরাট জাম্প দেবে সন্দেহ নেই। ভাবতেই খান সাহেবের চোখের সামনে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদটি ভেসে ওঠে। ঠকাস করে শব্দ হয়, চৌকস এক রেজিমেন্ট তাকে স্যালুট জানায়। খান সাহেব স্মিত হাসেন। এগিয়ে গিয়ে একজনের কাধে কমিশন ব্যাজ পরিয়ে দেন। কমিশন শব্দটা মনে আসতেই খান সাহেব মোবাইল বের করে বোতম টেপেন।
ইয়েস স্যার, ওপাশ থেকে রোবটের মত যান্ত্রিক কর্পোরেট একটা গলা শোনা যায়।
ম্যাডামের সাথে কথা হয়েছে। হোপফুলি শি সিমস মোর কনভিনসড দিস টাইম, গলা একটুও না কাঁপিয়ে চাপা মারেন খান সাহেব। মেরে নিজেই নিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন- বুঝলে খান, নিঁখুত মিথ্যা বলাটা একটা আর্ট, আর্ট অব এ গ্রেট পলিটিশিয়ান অ্যান্ড ইউ আর ইন দ্যাট এলিট সোসাইটি।
দ্যাটস আ ভেরি পজিটিভ নিউজ।
অবকোর্স, ইট ইজ। খান সাহেবের কণ্ঠে আশি দিনে বিশ্ব ভ্রমণের গৌরব ঝরে পড়ে। হোপফুললি এভরিথিঙ উড বি ফাইনালাইজড ভেরি সুন।
কনগ্রাটস স্যার।
এনি ওয়ে, টেল মি অ্যাবাউট আওয়ার কমিশন?
নো টেনশন স্যার। উই আর কমিটেড টু অনার ইউ।
শালা, নব্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দল! ওদিকে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে রক্ত চুষে চুষে দেশটাকে কবরে পাঠিয়ে দিচ্ছিস আর এদিকে বিনয়ের অবতার সেজে বলছিস অনার ইউ। মাদার ফাকারের দল, মনে মনে খান সাহেব ওপাশের লোকটার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়েন। মুখে বলেন, ওকে দ্যান। থ্যাঙ্কস ফর অল ইউর ফেইথ অন আস।
মাই প্লেজার স্যার। থ্যাঙ্ক ইউ।
ফোন রেখে খান সাহেব মুখ ভ্যাঙচান, মাই প্লেজার স্যার। ঢঙে আর বাঁচি না। শালাদের ধরে তিন বেলা চাবকানো দরকার। অহেতুক উত্তেজিত হয়েই নিজেকে সামলে নেন তিনি। সারাদিনে অনেক কাজ পড়ে রয়েছে। লাঞ্চের পরপরই তেল গ্যাসের দেনদরবার নিয়ে বিদেশি ডেলিগেটদের সাথে মিটিং। এই শালাগুলোও ত্যাদড়ের ত্যাদড়, তালগাছটা কিছুতেই ছাড়তে রাজি না। ওদিকে আবার তেল-গ্যাস বিদেশিদের ইজারা দেয়া নিয়ে আন্দোলন করছে কতগুলো গোয়ার গোবিন্দ বুড়ো হাবড়া। আরে আমরা কি আমেরিকা নাকী যে সব কিছু নিজেদের মত করে করতে পারবো! এরা কেন বোঝে না যে গরিবের বৌ সকলের ভাবি। যে জিনিস রাখাটাই ঝামেলা সে জিনিস যা দাম পাওয়া যায় তাতেই বেচে দেয়া ভাল। দেশের লাভ, দশের লাভ। দশের লাভে আবার এদের চোখ টাটায়, দেশের জিনিস লুটপাট মনে হয়। তোদেরকে এই মাতবরি করার মহান দায়িত্বটা দিয়েছে কে? দুনিয়ায় কী খেয়ে দেয়ে আর কোন কাজ নেই! রাস্তাঘাটে মিছিল মিটিং বাদ দিয়ে একটা গরুর খামার করলেও তো কিছু লোকের কর্মসংস্থান হয়। এই নিরেট মাথার সিভিলিয়ানগুলোকে এটা কে বোঝাবে? খান সাহেব আবার উত্তেজিত হয়ে পড়েন। উত্তেজনা কমাতে তিনি দিনের পত্রিকাটা এক নজর চোখ বোলানোর জন্য টেনে নেন। হেডিং দেখেই তার মেজাজ আবার চড়ে যায়। “গ্রীষ্ম শুরু হতে না হতেই লোডশেডিং শুরু”, পাশের ছবিতে দেখা যাচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা মোমবাতির আলোয় পড়ছে। জার্নালিস্টগুলারে ধরে আচ্ছামত প্যাদানো দরকার। নেগেটিভ ছাড়া পজেটিভ কোন নিউজই এদের চোখে পড়ে না। পরের নিউজটা আরো নেগেটিভ, “সীমান্তে গুলিতে আরো এক বাংলাদেশি নিহত”। এটাতো সাধারণ ঘটনা। গরু চোরাচালানীর মৃত্যুকে এত গুরুত্ব দেয়ার কী আছে তিনি বুঝতে পারেন না। পরের নিউজটাও একই রকম “নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছেই”। বাড়ছে কারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আগের থেকে বেড়েছে। এই ছোট্ট জিনিসটা কেন সাংবাদিকদের মাথায় ঢোকে না তিনি বুঝতে পারেন না। এভাবে তিনি পড়তে থাকেন, “পীরের দরগা থেকে পুলিশের দুই কোটি টাকা লুট”, “জ্বালানী তেলের দাম আবারো বাড়বে”, ”পানির দাবীতে ওয়াসা অবরোধ”, “সাংবাদিক খুনের বিচার চেয়ে অবস্থান ধর্মঘট”, “সরকার দলীয় ছাত্রনেতার টেন্ডার ছিনতাই”, “শেয়ারবাজার আবার নি¤œমুখী”, “চাদা না পাওয়ায় ব্যবসায়ী খুন”, “ডাক্তারদের ধর্মঘটে হাসপাতাল অচল”, “শিক্ষককে পেটাল ক্ষমতাসীন মেয়র”, “নদী ভরাট করে গোডাউন বানাচ্ছে সরকারি সাংসদ”, “মূল্যস্ফীতির চাপে অর্থনীতি”, “ঢিমেতালে চলছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার”,“ এ সরকারের আয়ু শেষ- বিরোধী দল”Ñ পড়তে পড়তে খান সাহেবের মেজাজ চরমে উঠে যায়। দেশে ভাল কোন কিছুই হচ্ছে না! তাহলে দেশ চলছে কেমনে? এতো খারাপ অবস্থা হলে মানুষ রিঅ্যাক্ট করতো না? যত্তোসব গবেট জার্নালিস্টের দল। এরা নির্ঘাত টাকা খেয়েছে। তিনি গোয়ান্দা প্রধানকে ফোন করেন-
ইয়েস স্যার।
এই “বাংলা কণ্ঠ” পত্রিকার সম্পাদক কে?
মনিরুল হক, স্যার।
মালিক?
আবুল হাশেম দস্তিদার, দস্তিদার গ্রুপের চেয়ারম্যান।
দুজনকেই চা খাওয়ার দাওয়াত দেন।
ইয়েস স্যার।
আর পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপন কমানোর ব্যবস্থা করুন।
ইয়েস স্যার।
আর....না থাক এখন না....
ইয়েস স্যার।
গোয়েন্দা প্রধানের সাথে কথা বলে খান সাহেবের মেজাজ ঠাণ্ডা হয়। তিনি জানালা দিয়ে বাইরে তাকান। রাস্তায় গাড়ির দীর্ঘ সারি বিরাট এক অজগরের মত আস্তে আস্তে আড়ামোড়া ভাঙে। সারির ভেতর বৃদ্ধ চোয়ালের মত তোবড়ানো লোকাল বাস, ভাঙাচোরা সিএনজি, রংচটা প্রাইভেট কারের পাশে লেক্সাস, হ্যামার, বিএমডব্লিউ, প্রাডো গাড়িগুলো তেল মাখানো চামড়ার মত চকচক করে। দেখে খান সাহেবের তার দাদার কথা মনে পড়ে। তার দাদা খান বাহাদুর এখলাসউদ্দীন শীতের সকালে রোদ তাপাতেন। দুইজন তাগড়া গাই মার্কা চাকর আচ্ছা করে ডলে ডলে তাকে তেল মালিশ করতো। রোদ এসে পড়তেই তার তেল মাখা ফর্সা দেহটা এক টুকরো খাঁটি সোনার মত জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠতো। কেবলমাত্র বিশুদ্ধ খানদানের মানুষেরাই এত রূপের অধিকারী হতে পারে। রাস্তার জ্যামে ঝিমানো দামী দামী গাড়িগুলো খানসাহেবকে কিছুক্ষণের জন্য একটা আত্মতুষ্টির খোরাক দেয়। কে বলেছে দেশের মানুষ ভাল নেই, দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ গরিব হলে ওই দামী গাড়িগুলো থাকতো? ছাগল জার্নালিস্টগুলোকে কান ধরে এনে দেখানো দরকার, দেখ ছোট লোকের বাচ্চারা দেশ কেমন এগিয়ে যাচ্ছে।
গ।
ঘন্টাখানেক হল আলতাফ আলী চিঠির ফাইলটা প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারির টেবিলে দিয়ে এসেছেন। আবুল কালাম সাহেব কাজের ফাঁকে ফাঁকে চিঠিগুলো পড়ছেন। বিশটা থেকে দশটা বাছাই করতে হবে। কিন্তু সবগুলোই বেশ চমৎকার। সবগুলোই প্রধানমন্ত্রীর পড়া উচিত। বোঝাই যাচ্ছে আলতাফ আলী প্রচুর খেটেখুটে চিঠিগুলো বাছাই করেছেন। পড়তে পড়তে কালাম সাহেব বারবার আবেগ্লাপুত হয়ে পড়েন। দেশের খেটে খাওয়া মানুষেরা কী আবেগ, কী ভালোবাসা, কী আকুতি, অভাব অভিযোগ অনুযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য শব্দের পর শব্দের মালা গেথেছে। পাওয়া না পাওয়া বেদনা, সমস্ত কষ্টের অনুভূতি প্রিয় আপনজনের কাছে বলার মত করে কেমন অবলীলায় তারা তাদের অনুভূতি মুখ ফুটে জানিয়েছে! তিনি কি প্রধানমন্ত্রীকে এমন করে আপন করে নিতে পারতেন? তিনি কি চিঠির লেখক ওই লোকটির মত করে সমস্ত হৃদয় খুলে তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলতে পারতেন, “আমরা আর পারছি না। সত্যিই পারছি না। বুড়িগঙ্গার মত দখল হয়ে যাচ্ছে আমাদের মনুষ্যত্ব। সামান্য খেয়ে পরে বাঁচার তাগিদে মানুষ থেকে ক্রমশ পশু হয়ে যাচ্ছি। ঘেয়ো কুকুরের মত অসহনীয় এ জীবন নিয়ে কি বেঁচে থাকা যায়? বলুন? দিন বদলে দেয়ার কথা দিয়েছিলেন। কবে? কবে ভোর হবে? প্রিয় নেত্রী, প্রধানমন্ত্রী- চারিদিকে কেবলই সেই পুরাতন অন্ধকার। আপনি কি দেখতে পান?” অথবা সরকারি লোকজনের দ্বারা পতিতালয় থেকে উচ্ছেদ হবার পর ছিন্নমূল হয়ে পড়া সেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যৌনকর্মীটির মত তিনি কি বলতে পারতেন, “ আপা, কষ্টের কথা কী কমু, খাড়া বিষ্টির ভিতর রমনায় খাড়ায় থাকি। ঘর নাই, চুলা নাই। পুলিশে মারে, রাস্তার পোলাপানে মারে, ছাত্রেরা ইটা দেয়, কুত্তায়ও দাবড়ায়। কই যামু কন? কাম না দ্যান আপা, আমাগো থাকার যায়গটা ফিরাইয়া দিতে কন না আপা, গতর বেইচাই না হয় বাঁচমু। বেবাগে আমাগোরে খারাপ কয়। কিন্তু আমরাওতো মানুষ আপা, আপনার ছোট বোইনের লাহান.....”। ভাবতে গিয়ে কালাম সাহেবের ভারি চশমা মেঘের অন্ধকারে ঢেকে যায়। তিনি চশমা খুলে কাঁচ মুছে দৃষ্টির ঘোলাটে ভাব দূর করতে চান। এমন সময় ফোন বাজে।
হ্যালো আবুল কালাম স্পিকিং।
কালাম সাহেব, আমি করিমুদ্দীন খান।
আসসালামু আলাইকুম স্যার।
ওলাইকুম।
ভাল সময়ে ফোন করেছেন স্যার। আমি এইমাত্র বাছাই করা চিঠিগুলো পড়ছিলাম।
কী অবস্থা?
ভাল স্যার। এক্সিলেন্ট। দারুণ সব চিঠি।
ম্যাডামের পছন্দ হবে?
তিনি যে ধরনের মানুষ, পছন্দ হবার কথা স্যার। দেশের আমজনতা অভিযোগ, আবদার, আবেগ মিশিয়ে তাঁকে লিখেছে...
বলেন কী! এমনিতেই অভিযোগ, আবদার, নানা মুনীর নানা মতে ম্যাডামের জান ভাজা ভাজা। পত্রিকা, টেলিভিশন, ইন্টারনেট খুললেই সমালোচনা আর সমালোচনা। কোনটাতেই জনগণের মতের প্রতিফলন নেই। এখন চিঠিতেও যদি সেই একই ঢোল বাজে তবে প্রধানমন্ত্রী আমাকে আস্ত রাখবেন?
তাহলে স্যার?
আপনি এক্সপেরিয়েন্সড অফিসার কালাম সাহেব। পলিটিক্সও ভালো বোঝেন। জনগনের আলাভোলা চিঠিকে পুঁজি করে বিরোধী দল সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামুক- এটা কি হতে দেয়া যায়?
না, স্যার।
গুড। চিঠিগুলো রিশাফল করান। এমন কিছু যোগাড় করুন যেটাতে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। প্রধানমন্ত্রী এনার্জি পান, তার আস্থা বাড়ে।
জ্বী আচ্ছা, স্যার।
আর দৈনিক বাংলা কণ্ঠের সাংবাদিকদের প্রাইমিনিস্টার পাস ক্যানসেল করুন। ম্যাডাম এদের উপর খুবই ক্ষাপা। যত্তোসব ইয়েলো নিউজ পেপার। প্রাইমিনিস্টারের কার্যালয়ে ওই পত্রিকার কাউকে যেন দেখা না যায়।
ইয়েস স্যার।
রাখি তাহলে, ওপাশ থেকে লাইন কেটে যায়। আবুল কালাম ফোনের রিসিভার কানে লাগিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকেন। নিজেকে তার পড়ে থাকতে থাকতে শিকড় গজিয়ে যাওয়া একটা লাল ফিতার ফাইল মনে হয়। মস্ত একটা টেবিলওয়েট এর ভারে তিনি হাঁসফাঁস করেন। তার সামনে থাকা চিঠির অক্ষরগুলো হঠাৎ করেই জীবন্ত হয়ে ওঠে। ছোট্ট ছোট্ট লাফে এক এক করে তারা গড়িয়ে পড়ে টেবিলের সবুজ জমিনে। কালাম সাহেব হাত বাড়িয়ে তাদের আটকাতে চান। কিন্তু অদৃশ্য কোন সুতোয় তিনি যেন একটা বড়শি গাথা মাছ হয়ে শূন্যে ঝুলে আছেন। নিচে শাপলা-শালুকের মুকুট পরে ঢেউয়ের পর ঢেউ নদীকে নিয়ে যায় অজানা গন্তব্যে। তার চোখের সামনেই অচিন কোন হ্যামিলনের বংশীবাদকের টানে অক্ষরগুলো সার বেধে ঢেউয়ের পর ঢেউ পার হয়ে যায় হারিয়ে যায় গোপন খোড়লের ভেতর। যেখান থেকে আর কোনদিন মুক্তি নেই। আশ্বিনের আকাশের মত বেদনা এস ভর করে কালাম সাহেবের চোখে, প্রকাশ্যেই তার চোখের সামনে পিরিচের ওপর রাখা একটুকরো বিস্কিটকে টানতে টানতে নিয়ে যায় একদল কাল কাল বিষপিঁপড়া।
ঘ।
ঘরে ঢুকেই আলতাফ আলী টের পেলেন কিছু একটা গড়বড় হয়েছে। কালাম সাহেবের চোখেমুখে পাথুরে খাদের পিছলা ছায়া। কালাম সাহেবকে তিনি অনেক আগে থেকে চেনেন। তার চেহারা এমন হওয়া মানে, কাছে পিঠেই ওত পেতে আছে মারাত্মক ঝড়, কেবল লন্ডভন্ড করে দেবার অপেক্ষা। তিনি তৈরি হতে থাকেন। চিঠির ফাইলটা এগিয়ে দেন কালাম সাহেব বলেন, গ্রেট জব আলতাফ সাহেব। দারুণ বাছাই করেছেন। প্রতিটি চিঠিই অসম্ভব সুন্দর । প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে যাওয়ার যোগ্য।
থ্যাঙ্ক ইউ, স্যার। আলতাফ আলী মনে মনে সতর্ক হন।
কিন্তু সমস্যা হল...., কালাম সাহেব থেমে এমনভাবে নিঃশ্বাস নেন যেন তিনি চান বাকি কথাটুকু আলতাফ আলীই বললেই ভাল হয়।
আলতাফ আলী বুঝতে পারেন তিনি ক্রমশ ঝড়ের কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছেন।
কালাম সাহেব কিছুক্ষণ নিরব থাকেন। কলম দিয়ে সামনের কাগজে আঁকিবুকি কাটেন। তারপর বমির মত করে বাক্যটা উগড়ে দেন, “কিন্তু সমস্যা হল, উপদেষ্টা সাহেব একটু অন্য ধরনের চিঠি আশা করছেন।”
যেমন স্যার? আলতাফ আলী বুঝেও না বোঝার ভান করেন।
যেমন ধরুন যেগুলো পড়ে প্রধানমন্ত্রী আনন্দ পাবেন, খিলখিল করে হাসবেন, গাইবেন। চিন্তামুক্ত হয়ে আস্থার সাথে দেশ শাসন করতে পারবেন। বমির দূর্গন্ধে কালাম সাহেবের নাক কুঁচকে আসে।
বুঝতে পেরেছি স্যার, আলতাফ আলীর নাকেও বাসি খাবারের দূর্গন্ধের ঝাপটা এসে লাগে।
ওকে, তাহলে কাজ শুরু করুন, বমির পর কালাম সাহেবকে কেমন শ্রান্ত মনে হয়।
ইয়েস স্যার বলে আলতাফ আলী তড়িঘড়ি দরজার দিকে পা বাড়ান। তাজা বাতাসের জন্য তার বুক ভেউ ভেউ করে কাঁদে। দু’পা এগোতেই থেকে “হঠাৎ কিছু মনে পড়েছে এমন ভঙ্গির” ডাক শুনে তাকে থেমে যেতে হয়। “ওহ আলতাফ সাহেব, এই চিঠিটা নিয়ে যান। এটা অন্যগুলোর সাথে ইনক্লুড করে দিয়েন।”
নো প্রবলেম স্যার। কালাম সাহেবের দেয়া চিঠিটা ফাইলে গুঁজে আলতাফ সাহেব দ্রুত মুক্ত বাতাসে বেরিয়ে আসেন।
ঙ।
ঘরের সবগুলো জানালা খুলে নিজের টেবিলে বসার পর আলতাফ আলীর ভাল লাগে। কালাম সাহেবের বমি মাখা চেহারা মন থেকে মুছে ফেলতে তিন কাজে মন দেন। পুরোনো ফাইলটাকে একপাশে সরিয়ে রেখে তিনি নতুন একটা ফাইল টেনে নেন। তার উপরে লাল কালিতে বড় বড় করে লেখেন “নতুন চিঠি”। কালাম সাহেবের দেয়া চিঠিটা দিয়েই এই ফাইলের বউনি হবে। তিনি চিঠিটার ভাঁজ খুলে চোখের সামনে মেলে ধরতেই ঘরের ভেতর পাকস্থলী ওগড়ানো পচা গন্ধ পাক খেয়ে নেচে ওঠে। পরিচিত হাতের লেখা চিনতে তার একটুও বেগ পেতে হয় না। নিঃশ্বাস বন্ধ করে তিনি পড়তে থাকেন-
“মানানীয় প্রধানমন্ত্রী,
দেশ খুব ভাল চলিতেছে.........
মন্তব্য
দারুন গল্প।
ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
চমৎকার গল্প। মাথায় হ্যাট নাই, নতুবা খুলিয়া ধরিতাম।
মজার মন্তব্ব।
মন্তব্বের জন্য
হ্যাট থাকিল আমিও খুলিয়া ধরিতাম।
ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
মাথায় হ্যাট নাই শুনিয়া কষ্ট পাইলাম গো।।।
মূর্তালা রামাত
খুব চেনা কিছু, কেউ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যেন!
গল্প !!!!!!!!!!!
যেই গল্পের মাঝে বসত, সেকি আর গল্প থাকে ????????????
আসলেই খুব ভাল আছি ।
অসাধারন, কান্নাজাগানিয়া লেখা ।
ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
মূর্তালা রামাত
দেশ এইভাবেই চলিতে চলিতে বঙ্গোপসাগরে গিয়া পড়িবে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
বঙ্গোপসাগর যেন কোথায় ভাই ?
মূর্তালা রামাত
ঠিকই তো!!!
নইলে প্রধান মন্ত্রি যদি আবার বলে বসেন ইচ্ছে করে যা উন্নয়ন হয়েছে সব বন্ধ করে দেই। তবেই বুঝবে উন্নয়ন বলে কি জিনিস এতোদিন বিনা কথায় পেয়ে এসেছে জনগন।
তাহাদের মতোন দেশ প্রেমিক আর কেউ আছে? রজনিকান্ত যেমন যেই স্থানে দাঁড়ায় সেখান থেকেই লাইনের শুরু। তাহারাও যাই করেন তাহারেই দেশ প্রেম ও ডিজিটাল উন্নয়ন বলে।
মজা পাইলাম
মূর্তালা রামাত
সঞ্জীবদা'র সেই গানটা মনে পড়লো
"রেডিও তে খবর দিছে দ্যাশে কোন অভাব নাই,
আইল্যার ঘরে, কাইল্যার ঘরে আনন্দের তাই সীমা নাই..."
এই গানটা কোন অ্যালবামের জানাবেন?
মূর্তালা রামাত
সেই, দেশ খুব ভালো চলিতেছে।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
মূর্তালা রামাত
অসাধারন লিখেছেন।
আসলেই, দেশ খুব ভালো চলিতেছে !
নতুন মন্তব্য করুন