ঘরে ঢুকে আলো জ্বালাতেই থতমত খেয়ে যায় অনিক। ড্রইংরুমের সোফায় আয়েস করে লোকটা বসে আছে, সামনে ধোয়া ওঠা চা। অনিককে দেখে সে এমনভাবে হাসে যেন ও তার অতিপরিচিত জন। অথচ অনিক নিশ্চিত, এই লোকের সাথে তার পূর্বপরিচয় নেই! অনিককে ভড়কে যেতে দেখে লোকটা বেশ মজা পায়। হাসতে হাসতেই সে বলে, অনিক সাহেব আসস্লামালাইকুম। তারপর বসা অবস্থাতেই হ্যান্ডশেকের ভঙ্গিতে হাতটা বাড়িয়ে ধরে, আমি কাশেম। মোহাম্মদ আবুল কাশেম।
অনিক খানিকটা ইতস্তত করে লোকটার বাড়ানো হাতে হাত মেলায়, পরিচিত হয়ে খুশি হলাম।
লোকটা এমনভাবে ওর হাত ঝাঁকি দেয় যে অনিকের সারা শরীর শিরশির করে ওঠে। ইতিমধ্যেই প্রাথমিকর অসাড়তা কাটিয়ে ওর সিক্সথ সেন্স কাজ করতে শুরু করেছে। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ অথচ লোকটা ভেতরে। মানে খুব সহজ, সাধাসিধে চেহারারর হাসিখুশি লোকটা কিছু একটা ঘটাতে এসেছে!
ওর মনের কথা বুঝতে পেরেই যেন লোকটা সম্মতিসূচক মাথা নাড়ে, ঠিকই ধরেছেন।
লোকটার অনুমানক্ষমতায় অনিক আরেকবার শকড্ না হয়ে পারে না। ওর চেহারায় সেটার ছাপও পড়ে। তাই দেখে লোকটার মজা যেন আরো বেড়ে যায়। মুখে মিটিমিটি হাসি নিয়ে সে বলে, দাঁড়িয়ে কেন অনিক সাহেব, বসুন। দু’চারটে কথাবার্তা বলি।
লোকটির কণ্ঠে কোন জড়তা নেই। অনিক ভাল করে তাকে দেখে। নীল জিন্সের প্যান্ট, পলো টি শার্টের উপর লেদার জ্যাকেট, মাথায় ব্যাগি ক্যাপ, হাতে রুপালী ঘড়ি- মানতেই হবে লোকটার ফ্যাশন সচেতনতা আছে। নিয়মিত ব্যায়াম করা শরীরের কারণে লোকটার বয়স আন্দাজ করা কঠিন। ক্লিনশেভড মুখে তারুণ্যের ছাপ কিন্তু লোকটার চোখদুটোতে কোন সরলতা নেই। সতর্ক, ঠাণ্ডা এবং নিস্পৃহ। কেবল চোখ দিকে তাকালেই বোঝা যায় এ লোক পোড় খাওয়া, অনেকদিনের অভিজ্ঞ।
নিজের ক্রাইম রিপোর্টারের জীবনে অনিক এ ধরনের চোখধারী লোক অনেক দেখেছে। অস্বস্তিকর একটা অনুভতি হতেই অনিক মনে মনে সতর্ক হয়ে ওঠে। চট করে ওর দৃষ্টি কম্পিউটার টেবিলের দিকে চলে যায়।
লাভ নেই, লোকটা ওর চোখ অনুসরণ করে বলে। তারপর নিজের পাশ থেকে আলগোছে অনিকের পিস্তলটা বের করে টেবিলের ওপর ফুলের মতো আলতো করে রাখে। আপনাকে রক্ষা করতে পারে এমন সবকিছুই আমি সরিয়ে ফেলেছি, অনিক সাহেব। পিস্তল বলেন, লুকানো ক্যামেরা বলেন আর অ্যালার্ম বেলই বলেন- সব ইনফ্যাক্ট ডিঅ্যাকটিভেটেড। অতএব তাড়াহুড়োর কিছু নেই, শান্ত হয়ে বসুন। খানিক্ষণ গল্পগুজব করি, ইঙ্গিতে সে বেতের চেয়ারটা দেখায়।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও অনিক লোকটার মুখোমুখি বসে। দেখুন, আপনার যা খুশি তাই করতে পারেন বাট আমার কলম রুখতে পারবেন না!
সেটা জানি, লোকটা খুব শান্তভাবে বললো। আপনার এই সততাকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে খুব শ্রদ্ধা করি। সেজন্যই আমি নিজে যেচে এসেছি।
ধন্যবাদ।
আপনি খুব সাহসী মানুষ, অনিক সাহেব। মৃত্যুকে এতো কাছে দেখেও আপনার তেমন কোন ভাবান্তর দেখছি না! স্বীকার করছি, আই অ্যাম রিয়েলি ইমপ্রেসড।
দেখুন, সবাইকে একদিন না একদিন মরতেই হবে। আর তাই মৃত্যু নিয়ে আমি ভাবাভাবি করি না।
এখানেই অন্যদের সাথে আপনার পার্থক্য। মরণেরে তুহু মম শ্যামের সমান! আই অনার ইউ। কিন্তু কিছু করার নেই বুঝলেন। লোকটা চায়ের কাপে চুমুক দেয়, উপরের নির্দেশ। আপনি বড্ড বেশি জেনে গিয়েছেন
ওকে যা করার তাড়াতাড়ি করুন, অনিক স্বভাবিকভাবে কাধ ঝাঁকায়।
ওর চেহারায় কোন মৃত্যুভয় না দেখে লোকটি অবাক হয়। অনিক সাহেব, আই অ্যাম সরি। আপনার মত ব্রেভ মানুষকে মারতে আমার হাত কাঁপবে। বাট আমি নিরুপায়। লোকটি করুণার দৃষ্টিতে ওকে দেখে, বলুন কীভাবে আপনি মরতে চান? বাথটবের পানিতে, গলায় ফাঁস রাগিয়ে, বালিশ চাপা দিয়ে নাকী নিজের পিস্তলের গুলিতে?
আপনার যেটা সুবিধা, অনিক নিস্পৃহ ভঙ্গিতে বলে।
কাপের সবুজ চা টুকু এক চুমুকে শেষ করে লোকটা উঠে দাঁড়ায়। একান্ত বন্ধুর মতো অনিকের কাঁধে হাত রেখে বলে, ওকে চলুন আমরা শোবার ঘরে যাই..অ্যান্ড আই অ্যাম ডিপলি সরি....
ইটস ওকে। আই অ্যাম সরি টু, অনিক হাসে।
কেন? এক ঝটকায় লোকটার হাতে পিস্তল বেরিয়ে আসে। এক হাত দিয়ে অনিকের গলা পেচিয়ে সে এদিক ওদিক তাকায়।
ভয় নেই। আপনার জন্য কোন অ্যামবুশ পেতে রাখা হয়নি। তবে গ্রিন টি মনে করে আপনি যা খেয়েছেন আসলে তা এক ধরনের পয়জনাস জাপানী হার্ব। ক্রাইম রিপোর্টারতো তাই অনেক কিছুই সংগ্রহে রাখতে হয়। বুঝলেন কাশেম সাহেব, এতোক্ষণে ওটা আপানার ব্রেনে পৌঁছে গেছে, অতএব...
অসম্ভব, আপনি মিথ্যা বলছেন! অবিশ্বাসের চোখে লোকটা ওর দিকে তাকায়!
অনিক হাসে। সম্মোহন করার ভঙ্গিতে ও গোনে এক, দুই..... কাধে লোকটার ভার ক্রমশ বাড়তে থাকে ।
২/১১/২০১২
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।
মন্তব্য
ভালোই লেগেছে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
থ্যাঙ্কস।
মূর্তালা রামাত
হু বুঝলাম,তই খুব একটা জমলো না,
তবে যাই হোক ভালোই হইছে
খানিকটাতো জমছে তাইলে! ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
বেশ লাগলো তো। আচ্ছা, চা কি ঐ লোকটা নিজে বানালো? নাকি বানানোই ছিল? আর একটা খটকা। সব সময় নায়কদের নাম সাকিব, ইমন, অনীকের মতো সুন্দর আর ভিলেনদের নাম কাবিলা, কাশেম, ডিপজল এর মতো কিম্ভুত কেন হয়? (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)
চা লোকটা নিজেই বানিয়েছে।এই জিনিসটা সংযোজন করবো হয়তো। আর ভিলেনের নাম মোহাম্মদ আবুল কাশেম কি খারাপ কন? আচ্ছা সামনে কোন একটার নাম সাকিব বা ইমন বা অনিক রাখবো।
মূর্তালা রামাত
মূর্তালা রামাত
বেশ ছোট পরিসরে গল্পটা নামিয়ে ফেলেছেন, সাবাস! কিছু জায়গায় আরেকটু বিশ্লেষণ করলে আরও ভালো লাগত। চা-টা কি করে রাখা থাকে? নাকি ভিলেন করে খেল? বাড়িতে কি শুধুই বিষাক্ত গ্রীন টী থাকে? জাপানী পয়জনাস হার্ব বলে ছেড়ে না দিয়ে হার্বটার সায়েন্টিফিক নাম দিলে বেশী জমত। হোক না নামটা পুরটাই কাল্পনিক!
লেখা চলতে থাকুক।
- ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
এই বিষয়দুটো নিয়ে আমিও ভাবছি। আর হার্বটার নামের কথা যা বলেছেন সেটাও ভাবা যেতে পারে। মনোযোগ দিয়ে গল্পটা পড়ার জন্য অপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
ধরে নিলাম, অনিকের কথাটা মিথ্যা ছিল, ওই চায়ে কোন প্রব্লেম ছিলনা, কিন্তু অনিকের দেওয়া সাইকোলজিক্যাল সাজেশনের কারনেই আততায়ী ধরাশায়ী হয়েছে। লোকটা এমনিতেও নার্ভাস ছিল। ধরে নিতে তো সমস্যা নেই!
দেন হ্যাটস অফ টু অনিক।।। ভাল লেগেছে।।
সাইকোলজির দিকটাও ভাবার মত- ভাল পয়েন্ট বলেছেন। ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
নতুন মন্তব্য করুন