শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ গোটাতে হবে- সরকার তথা আওয়ামী নেতৃবৃন্দের এমন মনোভাবেরই খবর পাওয়া গেছে। মঞ্চ যেন তাদের বাপ দাদার তালুক- ব্যাপারটা এমনই। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ কি আওয়ামী লীগের কথায় হয়েছে? নাকী আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরাই “ ক তে কাদের মোল্লা তুই রাজাকার” বলে মঞ্চের খুটিখানা গেড়ে দিয়েছিলো? আওয়ামী লীগ-বিএনপির ডাকে আজকাল কেউ কি আসে? আসলেতো কবেই পদ্মা সেতু, হলমার্ক কেলেঙ্কারী, শেয়ার বাজার, ছাত্রলীগ, গুম খুন এমন নানা ইস্যুতে লীগ শাসনের দফারফা হয়ে যেতো আর রাজাকারদের পক্ষ নেয়ায়, সঙ্গ দেয়ায় বিএনপি থাকতো দৌঁড়ের উপর।
শাহবাগ আন্দোলনের শুরুর ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। যে সব গুটিতক তরুণ তরুণীরা স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে শাহবাগ মোড়ে বসে এই আন্দোলনের সূচনা করেছিলো তাদের কারোই কোন দলীয় পরিচয় ছিলো না। পরবর্তীতে, যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে গড়ে ওঠা এই আন্দোলনে যারা মন থেকে সমর্থন জানিয়েছেন তারাও কোন দলের ছিলেন না। শাহবাগে জয় বাংলা বা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান কোন দলের জন্য দেয়া হয়নি। এই শ্লোগান আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে। এই শ্লোগান আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের, আওয়ামী লীগের পেটেন্ট করা কোন সম্পত্তি নয়। শাহবাগে এই শ্লোগান শুনে যদি আওয়ামী কর্তাব্যক্তিরা মনে করেন যে শাহবাগের গণজাগরণ আওয়ামী লীগের আন্দোলন, তাহলে সেটা মস্ত বড় ভুল।
শাহবাগ আন্দোলন গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের মানুষের চেতনা থেকে, তরুন প্রজন্মের মুক্ত চিন্তা থেকে। এই চেতনা এবং মুক্তচিন্তা যারা ধারণ করতে পারে না তাদের কাছেই এই অন্দোলন দু’চোখের বিষ। আর তাই তারা হাজার হাজার উপায়ে এই আন্দোলনকে বানচালের চেষ্টা করে যাচ্ছে। দলীয় কোন আন্দোলন হলে অনেক আগেই প্রতিপক্ষের আক্রমণের তীব্রতার কারণে এর অপমৃত্যু ঘটতো। কিন্তু যেহেতু এই আন্দোলনের মূল উৎস হলো আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ যার কোন দলীয় পরিচয় নেই, যা মানুষের হৃদয়ে আগুনের মতো জ্বলছে সেহেতু ফু দিয়ে এই আন্দোলনের আগুন নেভানো এখনো সম্ভব হয়নি, হবেও না।
শাসকেরা বরাবরই মানুষের হৃদয়ের আগুনকে ভয় পায়, তারুণ্যের জ্বলে ওঠো শক্তিকে সন্দেহের চোখে দেখে। বিরোধী দলে থাকা আওয়ামী লীগ ব্যতিক্রম হতে পারে কিন্তু ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ব্যতিক্রম হবে কেন? আওয়ামী লীগ চালায় পুরোনো প্রজন্মের মানুষেরা- যাদের প্রযুক্তি সম্বন্ধে কোন জ্ঞান নেই, যারা ব্লগ কি জিনিস জানে না, যারা ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলতে ভয় পায়, যারা ভাবে ইউটিউব বন্ধ রাখলেই সব সমস্যা শেষ, ব্লগ বন্ধ করে দিলেই মুক্ত চিন্তার সমালোচনা থেকে রেহাই মিলবে, ব্লগারদের রিমান্ডে নিলেই ধর্মীয় উগ্রবাদীদের আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে! এইসব চিন্তা যারা করতে পারে তারা ছাত্রলীগের আন্দোলনের বাইরে আর কোন আন্দোলন চিন্তা করতে পারবে না এটাইতো স্বাভাবিক।
ছাত্রলীগকে দিয়ে শাহবাগ আন্দোলনকে পকেটে পোরার চেষ্টা বৃথা যাওয়াতেই কি আওয়ামী নেতৃবৃন্দের এই গাত্রদাহ! আরে এই ছাত্রলীগ কি ষাটের দশকের আদর্শধারী ছাত্রলীগ যে শাহবাগ আন্দোলনকে ৬৯ এর গণআন্দোলনের বারুদ বানিয়ে ফেলবে? এসিতে বসে চান্দা খাওয়া, চাপাতি ধার দেয়া ছাত্রনেতাদের জন্য শাহবাগের মতো চেতনাকেন্দ্রিক আন্দোলনকে হজম করা খুবই কঠিন ব্যাপার। আর তাই হেফাযতে ইসলামীরা যখন শাহবাগীদের ফাসির দাবীতে লংমার্চের ডাক দিয়েছে তখনই তারা হাওয়া বুঝে সরে পড়েছে। এইসব সুবিধাবাদীদের হাত ধরে শাহবাগ আন্দোলন সৃষ্টি হয়নি।এবং সে কারণেই ক্ষমতায় যাবার ধান্ধায় উগ্র মৌলবাদীদের দাবী দাওয়া মেনে সুবিধাবাদীদের কথায়, চোখ রাঙানীতে, শাসনে শাহবাগের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। এগুলো বরং এই আন্দোলনকে গতিশীল করবে, জিইয়ে রাখবে।
শাহবাগ আন্দোলন শুরু হয়েছিলো সাধারণ জনতার দ্বারা এই আন্দোলন কখন শেষ হবে, কখন মঞ্চ গোটানো হবে সেটাও তারাই ঠিক করবে, এবং এতে হস্তক্ষেপ না করাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আওয়ামী লীগের মনে রাখতে হবে যে নতুন প্রজন্ম এবং মুক্তযুদ্ধমনস্ক মুক্তমনের সেক্যুলার মানুষের উপর ভর করেই তারা ক্ষমতায় এসেছে। ধর্মীয় উগ্রবাদীরা বরাবরই আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ছিল, আছে এবং থাকবে।তাদের মন গলানোর চেষ্টার চেয়ে তরুণদের পালস বোঝাটা বেশি জরুরী। শাহবাগ আন্দোলনের সঠিক পরিসমাপ্তি আগামী নির্বাচনের জয় পরাজয়ের নির্ণায়ক। তাই মঞ্চ গোটানোর মামার বাড়ি টাইপের আবদার বাদ দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা বিশ্বস্তভাবে শেষ করা এবং জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করার কাজে মনযোগ দিন, ল্যাপটপের কি বোর্ড্ এ ঝড় তোলা অহিংস ছেলেপেলেদের জেলে পোরার আগে পতাকা পোড়ানো, শহীদ মিনার ভাঙ্গা, বাস- ট্রেন-মন্দির প্যাগোডায় আগুন দেয়া সহিংস দেশদ্রোহীদের শাস্তির ব্যবস্থা করুন নইলে শাহবাগ আন্দোলনের কারণে আপনাদের আম ছালা দুটোই যাবার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
৩/০৪/১৩
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।
মন্তব্য
যাক না, আওয়ামী লীগ যখন গোল্লায় যেতে চাইছে এত করে, যাক না! ঐসব পচে যাওয়া নেতাদের থেকে আমাদের কি কিছু পাবার আর বাকি আছে বঞ্চনা ছাড়া। বিএনপি তো কবেই গেছে, জামাত তো কখনৈ ছিল না।
এইবার যদি বস্তাপচা রাজনীতির হাত থেকে মুক্তি মিলে। মাঠ পর্যায় থেকে নতুন নেতাদেরকে মানুষ চিনে নিক। না থাকুক কোন বিশেষ দল, কেবল গণপ্রতিনিধিরা মিলে গঠণ করুক পরবর্তী সরকার।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, গণপ্রতিনিধিরা মিলে সরকার গঠন করবে এমন পর্যায়ে আমাদের দেশে এখনও পৌঁছায়নি। তবে কোন এক ভাবিষ্যতে তাই হবে বলে আশা রাখি। ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
সেই পর্যায়ে কবে পৌঁছবে সে প্রশ্ন না করে বোধহয় প্রশ্নটা হওয়া দরকার "কি করলে পৌঁছবে?"
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
একটা সংশোধন: শাহবাগে 'জয় বাংলা' শ্লোগান দেওয়া হয়েছে, কিন্তু 'জয় বঙ্গবন্ধু' স্লোগান শুনিনি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজু ভাই, আমি সশরীরে শাহবাগে ছিলাম না। আপনারা ছিলেন। তাই আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। আমি ফেসবুকে কারো কারো বক্তব্যে দেখিছে যে জয় বঙ্গবন্ধু বলা হয়েছে। আপনি কি আমাকে একটু কনফার্ম করতে পারবেন?
মূর্তালা রামাত
জাবির ভিসি প্রথম দিকে যখন বক্তব্য দিতে উঠতেন তখন কয়েকবার জয় বঙ্গবন্ধু বলেছেন। অবশ্য উপস্থিত জনতা তার সাথে বলেনি। এর পরপরই ব্লগাররা মাইকে ঘোষনা দিয়েছিলেন কোন দলীয় স্লোগান এবং দলীয় বক্তব্য না দেয়ার জন্য। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতারা যখন সংহতি জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেছেন তখন জয় বঙ্গবন্ধু বলেছেন। সাধারন আন্দোলনকারী বা ব্লগাররা কখনো জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দেন নি।
ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
মঞ্চ গোটানোর মামার বাড়ি টাইপের আবদার বাদ দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা বিশ্বস্তভাবে শেষ করা এবং জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করার কাজে মনযোগ দিন, ল্যাপটপের কি বোর্ড্ এ ঝড় তোলা অহিংস ছেলেপেলেদের জেলে পোরার আগে পতাকা পোড়ানো, শহীদ মিনার ভাঙ্গা, বাস- ট্রেন-মন্দির প্যাগোডায় আগুন দেয়া সহিংস দেশদ্রোহীদের শাস্তির ব্যবস্থা করুন নইলে শাহবাগ আন্দোলনের কারণে আপনাদের আম ছালা দুটোই যাবার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
আইজকা ফল কিনতে গিয়া ফলওয়ালা মামুরে জিগাইলাম, মামু কি সব সময় আঙ্গুর বেচো নি? মামু উত্তর দিলো, জি মামা সারা বছরই আঙ্গুর বেচি তয় এক মাস বেচি লিচু। তখন অইডার খুব চাহিদা থাকে, লাভও বেশী অয়।
বাসায় আসার পথে চিন্তা কইরা দেখলাম, আওয়ামীলীগ হইল ঐ ফলওয়ালা মামুর মতো। সারা বছর বেচে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ভোট আইলে বেচে ধর্ম, হিজাব আর তসবি। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মপ্রাণ ও সহজ সরল মুসলমানের দেশে এগুলার চাহিদাও বেশী, লাভও বেশী।
দারুণ।
মূর্তালা রামাত
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
অসাধারন বিশ্লেষণ!
আওয়ামী লীগের এই এক মাস লিচু বেচায় লাভ বেশি বলে মনে হয়না, যদিও তারা তেমনটাই বিশ্বাস করে। প্রগতিশীলরা যাই বলুক দলটার বেঞ্চমার্ক বিএনপিই থেকে যায়।
__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে
__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে
তা যা বলেছেন ভাই...
না, বাপের বাড়ির অর্ডার।
منجز বললে হয়ে যাবে ভাবছে, আফটার অল তাহারা এখন বাংলাদেশ হেফাজতে জামায়াত লীগ।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
বাহ
যারা মঞ্চ গোটানোর কথা চিন্তা করেছেন তারা কি ভুলে গেছেন - আমাদের ধমণীতে শহীদের রক্ত, আওমিলীগের না। সাবধান কারো ঘারে যেন পাকিস্তানি প্রেতাত্তা ভর না করে। লাঠি বৈঠার চেয়ে কী বোর্ডের শক্তি বর্তমানে বেশি এটা উপলব্দি করে শিবির নিষিদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধির সর্বনিম্ন শাস্তি মৃত্যু দন্ড নিশ্চিত করুন। শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। জয় বাংলা-জয় জনতা।
-মম রাজ্যের রাজা।
নতুন মন্তব্য করুন