সাভারে ধ্বসে পড়া ভবনের মালিক ছিলেন সোহেল রানা। ধ্বসে পড়া ভবনে যেদিন ফাটল দেখা দেয় সেদিনও তিনি টিভিতে দেয়া এক স্বাক্ষাতকারে বলেছেন ভবন ঠিকই আছে। ঘটনার দিনও ভাবনে থাকা গার্মেন্টসগুলোতে শ্রমিকদের আসতে তিনি ভয়ভীতি দেখিয়ে বাধ্য করেছেন বলে জানা যায়। ঘটনার পর আমরা জানতে পারি যে সোহেল রানা এই ভবনটি একজনের যায়গা দখল করে গড়ে তুলেছেন। এই কাজে তিনি ব্যবহার করেছেন তার রাজনৈতিক পরিচয়।পত্রিকা মারফত জানা যাচ্ছে তিনি ছিলেন সাভার যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক। এই ঘটনার পর যুবলীগের পক্ষ থেকে তাকে বহিষ্কারের কথা বলা হচ্ছে। আমার প্রশ্ন হলো যুবলীগ কেন তাকে বহিষ্কার করবে!
আমাদের দেশে কোন দল ক্ষমতায় যাওয়ার সাথে সাথেই এরকম হাজার হাজার সোহেল তৈরি হয়ে যায়। যাদের ধান্ধা হলো যে কোন উপায়ে দাও মারা। এ কাজে তারা উদার হস্তে রাজনৈতিক দলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে।এটা সোহেল রানাদের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হবার একটা কৌশল। এ জন্য তাদের কে দোষ দিয়ে কোন লাভ নেই। এটা আমাদের রাজনীতির দোষ, রাজনৈতিক দলগুলোর দোষ, রাজনৈতিক দলের মাথাদের দোষ। তাদের কারণেই সোহেল রানারা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে খেতে পারে।
সাভারের ধ্বসে পড়া ভাবনের মালিক সোহেল যুবলীগের একজন হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। তার বানানো ভবনটি এভাবে ধ্বসে না পড়লে পত্রিকায় তার নামটাই কখনো আসতো না। তার মতো এমন লাখ লাখ সোহেল রানা যুবলীগ, ছাত্র লীগ সহ নানা রকমের লীগে রয়েছেন। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে এসব সোহলে রানারাই আবার ছাত্রদল, যুবদলসহ নানারকম দলে যেয়ে জুটবেন।
সুতরাং যুবলীগ থেকে একজন সোহেল রানাকে বহিষ্কারের কোন কারণ আমি দেখি না। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো যে সিস্টেম তৈরি করেছে তাতে সাধারণ মানুষেরা হরতালের ককটেলে মরবে, গার্মেন্টেসে আগুন লেগে মরবে, ভবনের ইটের নিচে চাপা পড়ে মরবে, মৌলবাদীদের ছুরির নিচে জবাই হয়ে যাবে, র্যাবের হাতে হাত পা হারাবে, পুলিশের বুটের নিচে থেতলে যাবে আর সোহেল রানারা অন্যের জমি দখল করতে থাকেবন, প্রভাব খাটিয়ে অনুমোদন বের করে দুই নম্বর ভবন বানাতে থাকবেন, তানভিরেরা হলমার্ক বানিয়ে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করতেই থাকবেন, তাজরিন গার্মেন্টসএর মালিকেরা কয়েকশ লোককে আগুনে পুড়িয়ে মেরে দিব্যি ইউরোপ আমেরিকা করবেন, পদ্মা সেতুর একটি ইট না গেঁথেও আবুল হোসেনেরা নিজেদের সফল এবং সাচ্চা দেশপ্রেমিক দাবী করবেন, মানুষ মেরে কোরআন শরীফে আগুন দিয়ে ইসলামের হেফাযতকারীরা আল কোরানের আলো ঘরে ঘরে জ্বালাতেই থাকবেন, তারেক রহমানের মতো হাওয়া ভাবন খ্যাত মানুষেরা দেশনায়ক উপাধি পেয়ে আবার সিংসহাসন ফিরে পাবার স্বপ্ন দেখতেই থাকবেন!
জ্ঞানবুদ্ধি হবার পর থেকেই দেখছি এই চক্রের যেন কোন শেষ নেই । আর তাই একের পর এক ঘটনা ঘটছে। কারণ খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে আসছে একের পর এক সোহেল রানারা। যেহেতু এসব সোহেল রানার সাথে দলীয় পরিচয় জড়িত সেহেতু তাদেরকে বাঁচাতে বরাবরই সক্রিয় হয়ে ওঠে একটি দলীয় মহল। ফলাফল হলো- ঘটনা ঘটে, নিরীহ মানুষ মরে, এই নিয়ে থানিকটা হইচই হয় তারপর সোহেল রানারা যা ছিলো তাই থাকে- নতুন ভবন ওঠানোর ফন্দিফিকির খোঁজে।
তাই সোহেল রানাকে বহিষ্কার নয় বরং রাজনীতির এই নষ্ট ধারাটাকেই আগে পরিষ্কার করতে হবে। এবং এই পরিষ্কার করাটা খুব কঠিন কিছু না। আমাদের দেশে যারা রাজনীতি করেন তারা খানকিটা চাইলেই এই পরিবর্তন আনা সম্ভব। সোহেল রানারা তো আর একদিনে উঠে আসেনি, ধীরে ধীরে তারা লালিত পালিত হয়েছে। লালন পালনের আগেই এদেরকে ছেঁটে ফেলে দেয়াটা অসম্ভব কিছু নয়। তারপরেও দু’ একজন সোহেল রানা যদি ফাকফোকর দিয়ে উঠেও আসে তবে তাদের অপরাধ প্রমাণিত হলে কঠোর সাজা দিলেইতো হয়।
তা না করে এক সোহেল রানাকে দল থেকে বহিষ্কার করে হাজার সোহেল রানাকে দলে পুষে রাখলে দলের ভবিষ্যতের কোন হেরফের হবে না। যুবলীগ ইমেজ এখনও যা তখনও তাই থাকবে। তার চে’ বরং যুবলীগ যদি সোহেল রানার মতো লোকজনকে দলে পোষার জন্য সত্যিকারভাবে দুঃখিত হয়ে সংগঠনকে ঢেলে সাজাবার চেষ্টা করে, সোহেল রানার মতো দলীয় সাইনবোর্ডধারী অপরাধীদের বিরুদ্ধে পথে নেমে এসে সাধারণ মানুষের সাথে একাত্ম হয় তবেই তা সম্ভাবনাময় হবে, সাধুবাদের যোগ্য হবে।
পরিতাপের বিষয় হলো, সব রাজনৈতিক দলই যেন সাধারণ মানুষের মন বুঝতে ভুলে গেছে। সাধারণ মানুষকে উপক্ষো করাই যেন এখনকার রাজনীতি। আওয়ামী লীগ বলুন, বিএনপি বলুন আর জামাতই বলুন সবাই যেন সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেয়ার প্রতিযোগীতায় নেমেছে। এর ফল দেখতে খুব বেশিদিন হয়তো আমাদের অপেক্ষা করতে হবে না। এখন যেমন পোকামাকড়ের মতো সাধারণ মানুষেরা ধূলোয় মিশে যাচ্ছে, সভ্যতার ইতিহাস স্বাক্ষী দেয়, সেই দিন খুব বেশি দূরে নয় যখন সোহলে রানাদের ভারে আমাদের রাজনীতি ভেঙ্গে রাজনীতিবিদেরা সাধারণ মানুষের ধূলোয় হাবুডুবু খাবেন। সোহেল রানাদের প্রতিপালকেরা কি সেই ধ্বসের আওয়াজ শুনতে পান?
২৬/০৪/১৩
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।
মন্তব্য
"সেই দিন খুব বেশি দূরে নয় যখন সোহলে রানাদের ভারে আমাদের রাজনীতি ভেঙ্গে রাজনীতিবিদেরা সাধারণ মানুষের ধূলোয় হাবুডুবু খাবেন।"
সহমত...
সুবোধ অবোধ
চমৎকার লিখছেন। আমরাও চাই একজন নয়, সমস্ত সোহেল রানাদের অবসান।
লেখাটা সুন্দর হয়েছে। কিন্তু এই সোহেল রানাদের মতো পিচাশ লোকদের ছাড়া আমাদের রাজনৈতিকদল গুলো পঙ্গু। তাদেরকে আগলিয়ে রাখাটাই যে এই ফালতু রাজনৈতিক দলগুলোর অদুর ভবিষ্যতের কব্জির জোর।
দেশে দেশে রাজনীতির এ অবস্থা দেখে কিছু দিন যাবৎ আমার মনে হচ্ছে গণতন্ত্র আমাদের দেশের মত দেশের জন্য সঠিক ব্যবস্থা নয়। যে ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তির বিনিময়ে সোহেল রানাদের মত দলীয় সন্ডা তৈরী করে ভোটের বাজারে ফায়দা নেয়া হয়। আমাদের মত দেশগুলোর জন্য কোন যুৎসই ব্যবস্থা খোঁজে বের করার জন্য দরকার আর একজন আব্রাহাম লিংকন। জন স্টুয়ার্ড মিল অবশ্য এসব দেখে অনেক আগেই অশিক্ষিত দেশে গণতন্ত্রের সজ্ঞা দিয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অশিক্ষিত দেশে গণতন্ত্রের সজ্ঞা হ‘ল;
দি গভার্ণমেন্ট অব দ্যা কেটল, বাই দ্যা কেটল, ফর দ্যা কেটল
এসব বলে অবশ্য আমরা আমাদের দায় এড়াতে পারি না। আমাদের উচিৎ বিদ্যামান কলুশিত রাজনীতির সমালোচনা করার পাশাপাশি সুস্থ রাজনীতি ধীরে ধীরে শুরু করা। আশাবাদী মানুস হিসেবে আমি ব্লগারদের সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলোকে সুস্থ রাজনীতির দিকে ধাবিত হবার আলামত হিসেবেই দেখতে চাই।
আবার তারাই তাকে নির্বাচনে নমিনেশন দেবে
যথা স্থানে যথাজন থাকলে রাজনীতি কলুষিত হয় না। যেমন ছাত্রলীগে/দলে ছাত্র, যুবলীগে/দলে যুব থাকা দরকার। তেমন বেশি কিছু দরকার নেই রাজনীতির শুদ্ধ চর্চার সদিচ্ছা থাকলেই হয়।
টাইম থাকতে পিওর হতে হবে-----------
নতুন মন্তব্য করুন