কিছুদিন আগে নাগরকোট ঘুরে এলাম, নেপালী ভাষায় কোট মানে গ্রাম। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য ভ্রমণ পিপাসুদের অন্যতম গন্তব্য এটা, যদিও বখতপুর জেলার এ গ্রাম এখন আর গ্রাম নেই, উন্নত জীবনের অনেক কিছুই মিলবে এখানে, দুটো চারতারা হোটেল, এছাড়া তিনতারা মানের হোটেলের অভাব নেই। এখানকার বাসিন্দাদের অন্যতম আয়ের উৎস দুধের ব্যবসা, পুরো নেপাল তো বটেই এমনকি ভারতেও দুধ আর দুধের উপজাত যায় এখান থেকে।
বছরের কোন সময়েই নাগরকোট তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য থেকে বিমূখ করবেনা কাউকে। বছরের বিভিন্ন সময়ে আমি ওখানে থেকেছি এবং প্রতিবারই নতুন সাজে দেখেছি নাগরকোটকে। এবার ছিল আগষ্ট মাস। কাঠমান্ডু এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি এসেছি নাগরকোটে বাসে, মাঝে বখ্তপুরে খাবার সময়টা বাদ দিলে সময় লেগেছে নব্বই মিনিটের মত। আরো একবার দাঁড়িয়েছিলাম নাগরকোটে ঢোকার মিনিট দশেক আগে, সেখান থেকে পুরো কাঠমুন্ডু উপত্যকার দৃশ্য চমৎকার দেখা যায়, আকাশ পরিষ্কার থাকলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এখানেই কাটানো কোনো ব্যাপার না। কাঠমুন্ডু থেকে সময় কাটানোর জন্য ছেলে মেয়েরা মটরসাইকেলে করে চলে আসে, ছোট ছোট কিছু চা নাস্তার দোকান আছে টয়লেট সুবিধা সহ, সুতরাং সমস্যা হয় না।
এবারে ছিলাম ওদের ভাষায় সবচাইতে ভালো রিসোর্টটিতে, চমৎকার, প্লেনে আসার সময় এটা উপর থেকে দেখেছি, ভালো লাগার শুরুটা তখন থেকে। আমরা যখন পৌঁছাই সন্ধ্যা নেমেছে, লবিতে দুজনকে দেখলাম সারেঙ্গী বাজিয়ে গান গাচ্ছে, খুব জনপ্রিয় নেপালী গান। “রেশম ফিরিরি, রেশম ফিরিরি, উদায়রা জাউকি দাদামা ভাঞ্জাং রেশম ফিরিরি, এক নালে বান্দুক দোনালে বান্দুক মিরগালে তাকায়ো, মিরগালে মিলায়ে তাকায়ো হয়না মেলাই তাকায়ো, রেশম ফিরিরি......”, খুব চমৎকার গান, একটা জনপ্রিয় হিন্দি গান আছে “হাওয়া মে উড়তা যায়ে মের লাল দোপাট্টা......” অর্থটা অনেকটা ওরকম। মনটা ভালো হয়ে যায়। রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম, আগামীকাল খুব ভোরে উঠবো, কেউ কেউ ঢুকল পানশালায়।
সারারাত বৃষ্টি হয়েছে, সকালে যখন ঘুম ভাংলো সূর্য উঠতে দেরি আছে অনেক, ক্যামেরা নিয়ে তৈরি হয়ে বারান্দার পর্দা সরাতেই অবাক্, আমাকে ঠেলে মেঘ ঢোকা শুরু করলো ঘরে, বারান্দা পেরুলে খাড়া পাহাড়, নীচে যতদূর দেখা যায় মেঘ আর মেঘ, মনে পড়লো সাত হাজার ফিট এর উপর আছি। দৌড়ে নিচে নামলাম, আমি ছাড়া সঙ্গী কেউ নেই, আকাশ অন্ধকার দেখে কেউ নামেনি, অগত্যা একাই বেড়িয়ে এলাম, দৃষ্টি সীমা কয়েক হাতের বেশী নয়, আমাকে চমকে দিয়ে কেউ বললো “গুড মর্নিং স্যার”, অনেক পর খুঁজে পেলাম তাকে, বাংকার এর মত একটা ঘরে বসে ছোট্ট একটা জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে দারোয়ান, মর্নিং বলে হাঁটা দিলাম, কিছুদূর যেতেই ছন্দবদ্দ ধপ্ ধপ্ শব্দ, কিছুই দেখা যায়না সামনে, মাঝে মাঝে কুয়াশা আর মেঘ সরলে একটু একটু এগুই, বেশ কিছু পর শব্দের উৎসের কাছাকাছি চলে এলাম, নেপালী কমান্ডো, দৌঁড়াচ্ছে গেঞ্জি গায়ে, একদল তার পেছনে আর একদল, তারপর আরো, ছন্দ বদ্ধ ভাবে দৌড়ুচ্ছে, এক সময় দৌড়তে দৌড়তে গান শুরু করলো এরা, গতকালের শোনা সেই গান “রেশম ফিরিরি, রেশম ফিরিরি, উদায়রা জাউকি দাদামা ভাঞ্জাং রেশম ফিরিরি...”, গানের রেশ মিলিয়ে যেতেই আবারো একা হয়ে গেলাম, চারদিক নিস্তব্ধ, গাছের পাতা থেকে ঝরে পড়া শিশিরের গান ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছেনা এখন, নেশাতুরের মতো হাঁটছি আমি, গন্তব্য জানা নেই, সময় কতক্ষণ পেরিয়েছে জানিনা, আধ্যাত্মিকতা এসে ভর করেছে আমার উপর। হঠাৎ করেই সামনে থেকে ভোজবাজির মত কুয়াশা সরে গেলো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমার সামনে দশ হাত দূরে একটা গেট, একটা বন্ধ গেট, যেন নিষেধ হে পথিক আর যেয়োনা, তুমি সাধারণ একজন মানুষ, বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছ, এটা অতিক্রমের ক্ষমতা তোমার নেই, তোমার সীমানা এটুকুই...
মন্তব্য
সচলায়তনে স্বাগতম !
সৃষ্টিশীল মানুষগুলোর প্রতি আমার আজীবন মুগ্ধতা । আপনার অংশগ্রহণে সচলায়তন সমৃদ্ধ হোক.. সমৃদ্ধ হই আমরাও
শুভ কামনা
স্বাগতম। ধন্যবাদ চমৎকার লেখা আর অসাধারণ ছবিটার জন্য
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
বাহ্!
মুস্তাফিজ ভাইকে সচলায়তনে স্বাগতম।
আমি ফ্লিকারের হলুদিয়া পাখি, বাস্তবিক জীবনে যাকে একজন রাতজাগা পাখি বলা যায়। ভোর দেখা প্রায় ভুলেই গেছি। আপনার এই ভীষণ জীবন্ত লেখাটা পড়তে পড়তে অনেক দিন পরে যেন ভোর 'দেখলাম'......মনে হল যেন আমার সামনে দিয়েই নেপালী কমান্ডো 'রেশম ফিরিরি...' গান গাইতে গাইতে চলে গেল।
আপনাকে আবারো স্বাগতম।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
জীবনের যে কয়টা ছুটি কখনো ভোলার না তারমধ্যে নেপাল অন্যতম
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
ছবিটা দেখেই মনটা ভরে গেলো...
স্বাগতম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপনার ছবিগুলো দেখলাম। কথা বলে যেন...
লেখা পড়ে মুগ্ধ হলাম আরও। সচলায়তনে স্বাগতম। আরও লিখতে থাকুন।
চমৎকার লাগলো। লেখা আর ছবি দুটোই।
মুস্তাফিজ ভাই, আরো চাই।
হাঁটুপানির জলদস্যু
চমৎকার! লেখা, ছবি - দুটাই!
এরকম দামী মানুষদের বেশি বেশি করে সচলীকরণ হউক।
রেশম ফিরিরি গানটা শুনেছি ... চমৎকার একটা গান ... আমরা শুনেছিলাম ইউনিভার্সিটির এক কালচারাল অনুষ্ঠানে নেপালী ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবেশনায় ... সাথে একটা চমৎকার পাহাড়ী নাচ ছিলো
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
আপনার ছবি দেখে বাকরুদ্ধ।
সচলায়তনে স্বাগতম......
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
অসাধারণ ছবিগুলো ... সচলে স্বাগতম। তবে পোস্টে দেওয়া ছবিটাই সবথেকে ভাল লেগেছে
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ধন্যবাদ সবাইকে। আশার চাইতে প্রাপ্যতা অনেক বেশী। এই বেশীটুকুর লোভে নিয়মিত থাকার চেষ্টা করবো।
বিশেষ ধন্যবাদ অরূপ দা কে।
...........................
Every Picture Tells a Story
স্বাগতম মুস্তাফিজ ভাই, সচলায়তন নিশ্চিতভাবেই আগের চেয়ে আরো সমৃদ্ধ হলো। লেখা আর ছবি দুটোই খুব দারুন লাগলো। আরো লিখুন, ছবি দিন- নিয়মিত।
ধন্যবাদ অতন্দ্র প্রহরী
চেষ্টা থাকবে নিয়মিত হবার।
...........................
Every Picture Tells a Story
স্বাগতম আপনাকে। ছবিটা অদ্ভুত সুন্দর।
নিয়মিত দেখতে চাই এখানে।
-----------------------------------
তুমি যা জিনিস গুরু আমি জানি, আর কেউ জানে না
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
ছবির পটভূমিতে যে-রং দেখতে পাচ্ছি তা কি সত্যি?
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য
ছবিটা তুলেছিলাম এখানে 27° 42' 57.28"N, 85° 31' 14.559"E। গুগল আর্থ থাকলে যায়গাটা ঘুরে আসতে পারেন।
...........................
Every Picture Tells a Story
পলাশদা, ব্যাপারটা এর চাইতেও ভয়াবহ সুন্দর ছিলো
এটা দেখুন, ফিরে আসার সময় তোলা
ট্রাইপড ছিলোনা সাথে, থাকলে আরো ভালো রঙ পেতাম।
...........................
Every Picture Tells a Story
ভয়ংকর। গুগল আর্থ-এ যাবো। কোঅর্ডিনেটস দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
ভয়ের কিছু নাই, গুগল আর্থ পয়সা নিবেনা।
...........................
Every Picture Tells a Story
খুব সুন্দর, মুস্তাফিজ ভাই।
ধন্যবাদ
...........................
Every Picture Tells a Story
নতুন মন্তব্য করুন