২০০৭এর জুন মাস, কোথা থেকে শুনলাম এমাসে দুটো পূর্নিমা হবে, প্রথমে আমল না দিলেও একটু পর চিন্তা করে দেখলাম শেষ কবে এক মাসে দুটো পূর্নিমা দেখেছি, হিসাব করে দেখলাম এটা একটা অসাধারণ ঘটনা, প্রতি ১০০বছরে মাত্র ৪১টা মাসে এমন দেখা যায়। এটাকে বলে নীল চাঁদ (ব্লু মুন), পরিচিতদের মাঝে কথা বলে জানলাম কারো কোনো পরিকল্পনা নেই এ নিয়ে।
কয়েক দিন নাড়াচাড়া করার পর নিজেই উদ্যোগ নিলাম এর সৌন্দর্য দেখার ব্যবস্থা করার। একটা কাঠের নৌকা, নাম আন্ধারমানিক (আধাঁরমানিক), পটুয়াখালীর সুন্দর এক নদীর নামে নাম, দেখতে চমৎকার, ৮টা কেবিনে ২জন করে ১৬ আর ৮ জনের ১টা মোট ২৪জন রাত কাটাতে পারে, শীত কালে ওরা সুন্দরবনে পর্যটক নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, ভ্রমণ পাগল ২জন এটার মালিক, কথা বল্লাম ওদের সাথে, ওরা রাজী হলে পরিচিত দের মাঝে জানালাম, সাড়াও পেলাম, ভীন দেশী ক’জন সহ আমরা, কেউ কেউ রাতেই ফিরে আসবে ঢাকায়, থাকবো ১৬জনের মত। ত্রিশ তারিখ দুপুরের পর ডেমরা ঘাট থেকে নৌকায় উঠবো, বিকেলে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ী দেখে রাতে মুড়াপাড়ার শীতলক্ষ্যায় কাটিয়ে ভোরে জামদানী পল্লী হয়ে আবারো ঢাকায়।
আমি পরিবার নিয়ে যখন ডেমরা ঘাটে পৌঁছাই অন্যরা ততক্ষণে নৌকায়, ঝালমুড়ী খাচ্ছে ছাদে বসে, চমৎকার শামিয়ানা টানানো, নীচে কার্পেট, মোটা মোটা কোলবালিশ, পরিচিত হলাম সবার সাথে। সংরক্ষিত আসনের প্রাক্তন এক সংসদ সদস্য, উনার বর ব্যবসায়ী ৭০এর উপর বয়স, ভালো লোক, পুরো পরিবার নিয়ে এসেছেন। এক এয়ারলাইনস্ এর কান্ট্রি ম্যানেজার, উনিও এসেছেন পরিবার নিয়ে, উনার স্ত্রী কলকাতার বাঙ্গালী, কোনো এক সূত্রে মুড়াপাড়ার জমিদারদের বংশের, নীল চাঁদ দেখার চাইতে উত্তেজনায় টগবগ করছেন পূর্বপুরুষের ভিটে দেখবেন বলে, আমি নিরব শ্রোতা শুনে যাচ্ছি মূড়াপাড়া’র অতীত ইতিহাস, “আমার ঠাকুমা বলেছে-এট দেট পিরিয়ড...”। সব কিছুতেই নাক সিটকানো দুজনও ছিলেন আমাদের সাথে। মুড়ির পর কাঁঠাল দেয়া হলে তাতে কোনো ময়লা আছে কিনা তা খুঁজতে ব্যস্ত। ভাগ্যিস ওরা রাত কাটায়নি আমাদের সাথে, থাকলে কি যে হতো... আমার ভেতরে অজানা উত্তেজনা, কখন সন্ধ্যা নামবে তার অপেক্ষায়, উত্তেজনা কিছুটা কাটছে সবার প্রশ্ন আর উত্তর দিতে দিতে যেমন কারো প্রশ্ন এটার নাম নীল চাঁদ কেন, কিংবা আসলেই কি চাঁদ নীল দেখাবে?
নীল চাঁদ নাম বলেই যে চাঁদ নীল হবে তা নয়, ইংরেজীতে ‘ব্লু মুন’ কথাটা ব্যবহার হয় কোন অসাধারণ ঘটনাকে বোঝানোর জন্য। তবে একটা কথা সবার জানা থাকা ভালো ১৮৮৩ সালে ইন্দোনেশিয়ার ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরির উদগীরণের পর প্রায় দুবছর যাবৎ ওখান থেকে দেখা চাঁদের রঙ নীল ছিলো। জমিদার বাড়ী থেকে যখন ফিরছি মাগরিবের আজ্বান হচ্ছে, শীতলক্ষ্যার পাড়ে ছোট্ট নৌকা আমাদের অপেক্ষায় বড় নৌকায় তোলার জন্য, নৌকাতে উঠবার আগে পশ্চিমে আকাশ দেখে অবাক, প্রকৃতি তার সবটুকু রঙ যেনো ঢেলে দিয়েছে সেখানে।
এটাতে চড়ে আন্ধারমানিকের কাছাকাছি আসতেই পেছনে বিস্ময়, চমৎকার পূর্ণ চাঁদ আকাশে। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছি সোনালী থালার রূপ, আন্ধারমানিকে উঠবার সাথে সাথেই আকাশ কালো করে বৃষ্টি এলো, সেই সাথে উথাল পাথাল ঢেউ, চাঁদ হারিয়ে গেছে বৃষ্টি আর মেঘের মাঝে। মূষল ধারে বৃষ্টি আর ঢেউএর মাঝে আমরা কজন ঘোরে পাওয়া স্বপ্নাতূর মানুষ বসে আছি আকাশের পানে চেয়ে, আবার কখন বৃষ্টি থামে, আবার কখন মেঘ সরিয়ে চাঁদ হাসে।
চাঁদ আমাদের নিরাশ করেনি সে রাতে, রাত প্রায় ৩টা পর্যন্ত মাঝে মাঝেই দেখা দিয়েছে আমাদের, সারাক্ষণ ছবি তুলে গেছি আমি, একেতো রাতের ছবি তারপর ঢেউ, নৌকায় কি আর ট্রায়পড কাজ করে? শ’খানিক ছবি ঘেঁটে মাত্র একটা পেলাম দেখানোর মত। তবুতো নীল চাঁদ বলে কথা, আবার দেখতে পাবো কিনা কে জানে।
পুনশ্চঃ আন্ধারমানিক অনেকদিন বসে ছিলো বলে এর ছাঁদ চুইয়ে সব গুলো কেবিনে পানি পড়েছে সারারাত, আমরাও ভিজেছি, ওরা পরে তা ঠিক করেছে শুনেছি।
মূড়াপাড়া জমিদার বাড়ী আর এর রংমহল
এম, এল, আন্ধারমানিকের বাহির আর ভেতর
জামদানী তৈরী
মন্তব্য
প্রথমে ভেবেছিলাম বুঝি তেলরঙে আঁকা কোনো চিত্র।
এখন ভুল ভাঙলো...
ধন্যবাদ... আপনার ছবি শুধু না... লেখাও অনেক সুন্দর... পড়তে ভালো লাগে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ছবি আঁকায় উৎসাহ বরাবর, কিন্তু স্কুলে নাম্বার পেতাম কম, এ কষ্ট ভূলতে ছেলের নাম রেখেছিলাম 'মাতিস', নামের গুনে যদি ছবি আঁকা শিখে। কিন্তু ও বেটা আমার চাইতে সরস। একদিন আম একে রঙ করতে দিলে সুন্দর রঙ করে মাঝে একটা কালো ফোটা দিলো, জিজ্ঞেস করাতে বললো, বাবা এ আমে পোকা আছে তাই। দুঃখ ভুলতে তাই ক্যামেরা।
ধন্যবাদ।
...........................
Every Picture Tells a Story
ছেলে বড় হয়ে ভাল কার্টুনিস্ট হবে
-----------------------------------------
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
হুম...... ছবি গুলো অসাধারণ ।
নিবিড়
হা হা হা
নিয়মিত পারবো কিনা জানিনা, আমার লেখার দৌড় কতটুকু তা তো আপনাকে বলেছি
...........................
Every Picture Tells a Story
লেখা ছবি দুটাতেই আপনাকে জাঝা
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ধন্যবাদ
...........................
Every Picture Tells a Story
পড়ছিলাম লগইন ছাড়াই মোহনীয় ছবি আর রমনীয় লেখায় মুগ্ধ হয়ে...............
আপনার ঝুলি বাকি রহস্যময় অভিজ্ঞতা গুলো দিন না হয়- মাতিস এর দুষ্টুমির গল্প........... ধন্যবাদ আপনাকে সন্ধ্যায় মধু দুধের কাপে নীল চাঁদকে দেখানোর জন্য।
মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....
শুনেছি একান্তই চাঁদ দেখতে গিয়ে মান্না দে'র সেই গানের কলি গুনগুন না করলে নাকি চাঁদ দেখা সম্পন্ন হয় না, 'চাঁদ দেখতে গিয়ে আমি তোমায় দেখে ফেলেছি.. কোন জোছনায় বেশি আলো সেই দোটানায় পড়েছি..।'
কথাটা কি ঠিক ?
আপনার চমৎকার ছবিটা কিন্তু এটাই সাক্ষ্য দিচ্ছে !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ধন্যবাদ অম্লান অভি, মাতিস্ কে নিয়ে লিখব কোন দিন
রণদীপ দা, সেদিন রাতে আমাদের মাঝে গানও ছিলো, মিলিত গলায়, চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙ্গেছে...
যাকে কোন দিন এক লাইন গান গাইতে শুনিনি রঙ্গিন পানি আর নীল জোছনায় তাকেও গাইতে শুনেছি "এই মন জোছনায় অংগ ভিজিয়ে এসোনা গল্প করি........."
...........................
Every Picture Tells a Story
গানটা আরতির না?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
হু। লাগলে ইমেইলে আওয়াজ দিয়েন।
চন্দ্রগ্রস্থ করে দিলেন মুস্তাফিজ ভাই !
সিম্পলি অসাধারণ ...অদ্ভুত সুন্দর.. অদ্ভুত !
চিন্তার কোন কারন নাই, আগামী বৃহস্পতিবার পূর্নিমা আছে, তৈরী হয়ে যান, এখন কিন্তু বৃষ্টির ঝামেলাও নাই।
...........................
Every Picture Tells a Story
.. আপনার লেখাটা বাজছে ... মানে musical ও
ধন্যবাদ, আমি কিন্তু আপনার ঐ লেখা আরেকবার পড়ছি, আবারো মাথার উপর দিয়া গেল
...........................
Every Picture Tells a Story
"এভরি পিকচার টেলস আ স্টোরি"- কথাটার আক্ষরিক প্রমাণ আপনার এই পোস্ট। কিছুই বলার ভাষা নেই। সিম্পলি অসাধারণ- ছবি আর লেখা। মুগ্ধ হলাম, আবারও!
অনুপ্রানিত হইলাম, পাহারা দিতে থাকেন লেখার চেষ্টা করতাছি
...........................
Every Picture Tells a Story
ছবি এবং লেখা -- দুটোই খুব ভাল লাগলো, মুস্তাফিজ ভাই।
জীবনে দুই বার ১০০% ফতুর হয়েছি। ২ বারই ক্যামেরা কিনে। প্রথমবার বায়তুল মোকাররম থেকে একটা SLR কিনেছিলাম। পকেট খালি করে সব টাকা দেওয়ার পর দোকানদারের কাছ থেকে ২০ টাকা চেয়ে নিয়েছিলাম বাস ভাড়ার জন্য। ফ্লোরিডায় একবার ট্রাইপডে দিয়েছিলাম ক্যামেরা। বাতাসের ঝাপটায় পড়ে ভেঙে গেল।
এরপর আরেকটা কিনলাম। সেবারেও ব্যাংকের সবটুকু টাকা উপচে দিয়ে কিনলাম। ফিল্ম কেনার টাকা নেই, হাতে ক্যামেরা নিয়ে বসে আছি। এই ছিল অবস্থা। শেষবার কবে ক্যামেরাটা ব্যবহার করেছি, মনেও নেই। অর্থকষ্টের কারণে কমিয়ে দেওয়া কাজগুলোর মধ্যে ২ টি ব্যাপার কষ্ট দিয়েছে সবচেয়ে বেশি -- ১) ন্যাট-জিও বন্ধ করে দেওয়া, ২) ফিল্ম SLR ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া।
আপনার এই পোস্টগুলো পুরনো অনুভূতি (এবং আকুতি) জাগিয়ে তোলে আবার। সচল ঋদ্ধ হোক আপনার লেখা ও ছবিতে।
ধন্যবাদ
আশাকরি ক্যামেরায় হাত সচল হবে আবারো
...........................
Every Picture Tells a Story
আসলেই দুর্দান্ত। লেখাও, ছবিও।
জাঝা, (বিপ্লব) তো পেয়েছেন। এবার নিন
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
গুল্লি কেনো বুঝলামনা, মারা গেলে খবর আছে ভাই
...........................
Every Picture Tells a Story
আমি একটু কনফিউজড - আপনি কি সত্যিই বোঝেননি?
আসলে "গুল্লি" দেয়া হয় অতীব প্রশংসাসূচক ইমোটিকন হিসেবে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
...........................
Every Picture Tells a Story
একেই তবে বলে phenomenon!
আজকে এখানেও একটা বিশাল বড় চাঁদ উঠে চারিদিক ভাসিয়ে দিচ্ছে।
লেখা ও ছবি দুটোই অসাধারণ। চালিয়ে যান মুস্তাফিজ ভাই।
আপনার টা কই?
...........................
Every Picture Tells a Story
আমিও প্রথমে দেখে বুঝতে পারিনি যে এটা তুলি দিয়ে কোন আঁকা ছবি না!
অদ্ভূত সুন্দর!
ধন্যবাদ
...........................
Every Picture Tells a Story
নতুন মন্তব্য করুন