হাতির সাথে গোসল, ভাগ্যবানের গন্ডার দর্শন আর আপুকলির জন্য কান্না (১) এখানে
ওয়ান্ডারফুল কলের মেশিন এই দেহ সবার
মনোরে...........................
ওয়ান্ডারফুল কলের মেশিন এই দেহ সবার
টেকনিক্যালের হেড মেস্তরী
টেকনিক্যালের হেড মেস্তরী নিজেই খোদা তার ফিটার
ওয়ান্ডারফুল কলের মেশিন এই দেহ সবার
মনোরে...........................
ওয়ান্ডারফুল কলের মেশিন এই দেহ সবার
গান চলছে এক এর পর এক, অনভ্যস্থ গলায় তাল মিলাচ্ছি, এরই মাঝে নেপালী গার্ড ঢোলক এনে দিলো, এল্যুমিনিয়াম এর জগ আর চামিচ ও যোগাড় হলো। চমত্কার পরিবেশ আর গান বাজনা। আমাদের দেখে কারো বোঝার উপায় নেই ঢাকায় একেকজন কী গাম্ভীর্য নিয়ে অফিস করেন, কার সাথে কথা বলতে গেলে আগে থেকে অনুমতি নিয়ে রাখতে হয়। কিছুই বোঝার উপায় নেই, খোলা প্রকৃতির নেশা ধরানো পরিবেশের মাঝে বয়স যেনো হঠাত্ করে কমে গেছে। ফিরে গেছি সবাই আজ থেকে বিশ বছর আগে। কয়েক সেকেন্ড এর জন্য গান থামলে ধুয়া তুলতে ভুল করছেনা কেউ
‘ঢুংগ লালা হুংগ লালা ঢুংগ লালা, ঢুংগ লালা হুংগ লালা ঢুংগ লালা।
রাত বাড়ছে তার নিজস্ব গতিতে, সাথে সাথে বাড়ছে আমাদের দল, বড় হতে হতে চাঁদ আকশের আরেকদিকে হেলে যেতে শুরু করেছে। একসময় মনে হলো শুধুমাত্র বাচ্চা আর তাদের মায়েরা ছাড়া বাকি সবাই এখানে। ঢাকা’র কথা বাদ, নেপাল কাস্টমসের কুকুর দিয়ে শুঁকানোর পরও কে যেন শুকনো পাতা নিয়ে এসেছে, বেশ কয়েকজনের হাতে তার সুঘ্রাণ। এদেঁর মাঝে দুজন আবার আলাদা হয়ে গেলো, দূর থেকে তাদের ঝগড়ার আওয়াজ পাচ্ছি, কাছে এগিয়ে যেয়ে শুনলাম বিষয়টা গুরুতর
দুজনের একজন আমার জেলার, এজেলায় ‘লোহা’ উচ্চারিত হয় ‘লুয়া’ বলে, এটাতেই আপত্তি অন্যজনের, প্রথম জন কোনভাবেই তাকে বোঝাতে পারছেনা যে লোহা’র ল আর লুয়া’র ল, লুয়া’র ল আর লোহা’র ল, ল এর ল আর লোহের ল.........। আমি বুঝতে পেরে কিছু না বলে আস্তে চলে এলাম, আবার যদি আমাকে বুঝিয়ে দিতে বলে
‘ঢুংগ লালা হুংগ লালা ঢুংগ লালা, ঢুংগ লালা হুংগ লালা ঢুংগ লালা।
ঘড়িতে সময় রাত ৪টা, ভোর হতে শুরু করেছে। বনে ভোর হয় আগে, পাখিদের ঘুম ভাংগে সবার আগে, কিচির মিচির শব্দ আর শীষ, আমাদের গানের তীব্রতা কমিয়ে দিতে লাগলো, হঠাত্ একটা কাঠবেড়ালী দৌঁড়ে গেলো আমার সামনে দিয়ে। দারোয়ান সবগুলো কেরোসিন বাতি নিভিয়ে একজায়গায় নিয়ে রাখছে। ঘুম ঘুম চোখে বাচ্চারা উঠে এসে বসছে আমাদের সাথে, ওম নিচ্ছে শরীরের। একটু ঠান্ডা মত লাগছে এখন। অন্যরকম নির্ঘুম একটা রাত কাটিয়ে আস্তে আস্তে ঘরে ফিরছে সবাই।
হাত মুখ ধুয়ে ফিরে এলেই দেখলাম চা/কফি তৈরী, সাথে বিস্কুট। খোলা জায়গায় টেবিলের উপর, এক এক করে সবার চা পান শেষ। আমাদের দলটাকে ৩ ভাগ করে পোগ্রাম সাজানো হয়েছে, প্রথম ভাগে আমরা যাবো এখন হাতির পিঠে চড়ে, আরেক দল জাংগল ড্রাইভ এবং শেষ দল যাবে পাখির খোঁজে। দুঘন্টা পর ঘুরে এলে আমরা যাবো পাখির খোঁজে আর যারা পাখি খোঁজ নিয়ে ফিরবে ওরা যাবে হাতির পিঠে... এভাবেই।
এ রিসোর্টের নিজস্ব বড় হাতি ছয়টি আর একটি বাচ্চা, ‘গরীবের হাতি পোষা’ কথাটার মানে যে কোনো হাতি শালে গেলেই বোঝা যায়, নিঃসন্দেহে এতে প্রচুর খরচ, শুধুমাত্র পর্যটকের পয়সায় পোষানোর কথা না, জিজ্ঞেস করে জানলাম অবসরে এরা গাছ টানে, বনে গাছ কাটা নিষেধ, শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রিত কর্তন। দুমানুষ উঁচু ৬টা হাতি আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আমাদের জন্য, পিঠের উপর কাঠের হাওদা, গদি বিছানো, হাওদার কাঠের পায়ার দুপাশে পা ঝুলিয়ে বসতে হবে, পা রাখার জন্য দড়ির ফাঁস বানানো আছে। প্রতিটাতে ৪জন করে, আমাদেরটায় আমি, রিতা (আমার বউ) আর মাতিস (আমার ছেলে), আরেকজন যার উঠার কথা তাকে দেখলাম তখনও ঘোলা ঘোলা, বললো মামা আপনারা যান্ আমি একটু ঘুমাই, বউ মুচকি হাসি দিলো, অর্থটা বুঝলামনা। রওয়ানা দিলো হাতি। আক্ষরিক অর্থেই দুলকি চাল, মনে পড়ে গেলো গত রাতে গানের সাথে ধুয়া তোলার কথা, গেয়ে উঠলাম ‘ঢুংগ লালা হুংগ লালা ঢুংগ লালা, ঢুংগ লালা হুংগ লালা ঢুংগ লালা। বউ মাথা ঘুরিয়ে আমার সামনে ৫ আঙ্গুল তুলে বললো বলতো কয়টা আঙ্গুল? বললাম পাঁচটা, কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে ২টার মাঝে ১টা ক্যামেরা ওর হাতে নিলো আর গম্ভীর ভাবে বললো বাকিটা গলায় ঝোলাও, নামাবানা। কিছুই বুঝলাম না, ফটাফট কয়েকটা ছবি তুললাম ঠিকমত ফোকাস পেলামনা। রোদ তো উঠে এসেছে গাছের ফাঁক দিয়ে ৬০ডিগ্রী কোনে তার আলো দেখা যাচ্ছে কিন্তু ছবি তুলতে গেলে ফোকাস পাচ্ছিনা কেনো। অন্যরা ফটাফট্ ছবি তুলছে, ছোটো ক্যামেরাটা রিতার থেকে নিয়ে চেষ্টা করবো ভাবছি এ সময় মাতিস বললো বাবা তুমি ক্যামেরা অন্ করছনা কেন?
জঙ্গলের অনেকটা ভেতরে চলে এসেছি, এদিকে বন ঘন, বড় গাছের নীচে আগাছা বেশী, প্রায়ই ডালপালা এসে পায়ে বাড়ী খাচ্ছে। পোষ মানানো হাতি, আমরা কেনো এসেছি জানে, হঠাত্ হুস্ শব্দ করে দাঁড়িয়ে গেলো, মাহুত একদিকে আঙ্গুল তুলে দেখালো হরিন দাঁড়িয়ে আছে, মাতিস বললো বার্কিং ডিয়ার, চারটা, আকারে বেশ ছোট, আমাদের দেশের ছাগলের মত, দেখে মন ভরে না। হাতি চলছে, ঘুত্ ঘুত্ করতে করতে বন্য শুয়োর দৌঁড়ে গেলো কয়েকটা, মাহুত কি যেনো বললো, গালি দিলো মনে হয়, না, ইশারায় দেখালো সাম্বার, হুঁম, আকারে বেশ বড়, ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকিয়ে আছে, নড়ছেনা, বুঝলাম পর্যটক দেখে অভ্যস্থ। ধারালো ঙ্কো-ও-ক শব্দ করে উড়ে গেলো ময়ূর। আজীবন শুনেছি ময়ূরের ডাক কেকা, এবারে শুনলাম ঙ্কো-ও-ক, ডাকটা মুখস্থ করে ছাড়লাম, একই রকম, মাহুত ঘুরে শব্দ করতে মানা করলো, জঙ্গলের ভেতর থেকে খোলা মাঠে সেখান থেকে আবার জঙ্গলে, মাঝে মাঝে বড় নালা পেরুচ্ছি, চড়াই, উত্রাই, পাখি দেখছি নাম না জানা অনেক, প্রচুর ময়ূর এদিকে, হরিন, শুয়োর, আমাদের সঙ্গের হাতি গুলোর সাথেও মাঝে মাঝে দেখা হচ্ছে। হাতির দুলনি এখন অসহ্য লাগছে, বুঝতে পারছি গন্ডার না দেখতে পেয়ে ধৈর্য্য হারা হচ্ছি আমি।
মাঝে মাঝে হাতির বায়ু নির্গমনের জোড়ালো শব্দ, পায়ের থপ থপ আর গাছের ডাল সরিয়ে নেবার সময় পাতার শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নাই চারদিকে, এখন একটা ঘাস বনে আমরা, আমাদের আগে একটা হাতি ঘাস বন পেরিয়ে বনে ঢুকেছে কিছুক্ষণ আগে। হঠাত্ সেদিক থেকে মানুষের একটা ডাক্, অ-অ-অ-অ-হো-ই-ই-ই, অনেক জোরে, পরিস্থিতি বদলে গেলো মূহুর্তে। হুট হুট করে উঠলো মাহুত, ঘুস ঘুস শব্দ করে বিশাল এক দুলনি দিয়ে বাম দিকে ঘুরে গেলো হাতি, একটু জোর কদমে হাঁটা দিলো, এরই মাঝে বাকি হাতি গুলোকেও দেখতে পেলাম, বিশাল এক বৃত্ত রচনা করে পাঁচটি হাতি ছুটে চলছে শব্দের উত্সের দিকে। ডানা ঝাপটিয়ে বন থেকে বেরিয়ে এলো এক ঝাঁক ময়ূর। মাহুতরা নিজেদের মাঝে কথা বলে আস্তে আস্তে ছোট করে আনছে বৃত্তটা, তাকে দেখতে পেলাম হঠাত্ করেই, বাচ্চা একটা গন্ডার, তিন ফুটের মত উঁচু, মাহুত দেখালো আর একটা, এটার মা, বড়, দুটোই হাতির বৃত্তের বাইরে যেতে না পেরে ঘুরছে, দড়ির প্যাঁচ থেকে পা খুলছি নামব বলে, বুঝতে পেরে মাহুত মানা করলো, অগত্যা হাতির পিঠে চড়েই আমাদের গন্ডার দর্শন।
ফিরে এলাম ঠিক দুঘন্টা পর। খুশী হয়ে হাতির সামনে একটা ১০০রুপীর নোট ধরা মাত্রই আমাকে অবাক করে শুড় বাড়িয়ে নোটটা নিয়ে মাহুতের হাতে ধরিয়ে দিলো, বুদ্বিমান, টিপস্ নিতে জানে। হাতিটার নাম আপুকলি, মাদী হাতি।
মন্তব্য
জটিল।
কোনটা? রাত না দিন?
...........................
Every Picture Tells a Story
লেখা আর ছবি।
তার মানে আমি এখনও ঘোলা
...........................
Every Picture Tells a Story
ধন্যবাদ শিরোনাম ঠিক করার জন্য
...........................
Every Picture Tells a Story
আপনার খুবই এক্সাইটিং লাইফ ভাই, হিংসে হচ্ছে। গন্ডারের ছবি দুর্দান্ত, লেখা তার চেয়েও বেশি।
ফাহিম
ধন্যবাদ
...........................
Every Picture Tells a Story
সিরিজটা দুর্দান্ত ।
লেখা ও ছবি দুটোই দৌড়াচ্ছে।
আরো চাই মুস্তাফিজ ভাই।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
চেষ্টা থাকবে
...........................
Every Picture Tells a Story
ঙ্কো-ও-ক ! মানে আমি বলতে চাইছিলাম জটিল ! চলুক চলুক !
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
ঙ্কো-ও-ক
আসলে উচ্চারন টা হবে
"ঙ্কো-ওঁ-ক" (মনে হয় এটাও একটা প্রশংসাবাণী হয়ে গেলো)
...........................
Every Picture Tells a Story
পৃথিবীর দু একটা সুন্দর জায়গার মধ্যে চিতোর অন্যতম যদিও আমি চিতোর ছাড়া অন্য কোন জংগল দেখি নাই কিন্তু তবুও এটা আমার বিশ্বাস। এখনও আমার সেই মুগ্ধতা কাটে নাই।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
আপনি কোন চিতোরের কথা বলছেন?
আমি দুইটার নাম জানি, একটা পাকিস্তানে, অন্যটা ভারতে।
ভাল কথা, আমরা গিয়েছিলাম চিতওয়ান, এটা নেপালে।
...........................
Every Picture Tells a Story
আমী শুধু নেপালের সাফারীতেই গেছি। ট্যাক্সী ড্রাইভার আমাদেরকে চিতোরই বলল সেটার নাম যতোদূর মনে পড়ে। ওদের একটা ট্যুর প্যাকেট আছে ধূলিখেল – নগরকোট - পোখরা – চিতোর।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
ধূলিখাল (Dhulikhel) চিনি, কাঠমুন্ডুর কাছেই, কাঠমুন্ডু থেকে তিব্বতের দিকে যেতে পরবে, ৩০ কিমি. মনে হয়। এখান থেকে পূবে এভারেষ্ট আর পশ্চিমে লাটাং শৃংগ দেখা যায়, অসম্ভব সুন্দর জায়গা। নাগরকোটের কথা আগে এক লেখায় লিখেছি, ধুলিখাল এর কাছেই। পোখারা সম্পূর্ন উলটো দিকে, ৭ ঘন্টার মত লাগে কাঠমুন্ডু থেকে, কাঠমুন্ডু থেকে একই রাস্তায় ৪/৫ ঘন্টা যেয়ে ডানের রাস্তায় পোখারা আর বামে গেলে চিতোয়ান, লুম্বিনি ইত্যাদি। শ্রদ্দ্বা রেখেই বলছি আপনি সম্ভবত চিতোয়ানেই গিয়েছেন।
...........................
Every Picture Tells a Story
আমারো মনে হচ্ছে আমি চিতোয়ানই গেছি কিন্তু এতোদিন চিতোর ভেবেছি তাহলে। পাহাড়ী মানুষগুলো কি সাধারন। দোকান খোলা কেউ নেই, ঘরের মধ্যে থেকে ওদেরকে ডেকে আনতে হয়। মানুষের প্রতি কি অকৃত্রিম বিশ্বাস তাদের।
শ্রদ্ধা রাখার দরকার নাই মুস্তাফিজ ভাই, আমি খুবই সাধারন একজন মানুষ।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
সবগুলোই দারুণ !
ছবি লেখা এবং আপনি। সাথে আপনার 'ঙ্কো-ওঁ-ক' !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ঙ্কো-ওঁ-ক
...........................
Every Picture Tells a Story
দিন-রাত-লেখা-ছবি সবকিছুই অসম্ভব দারুন! আপনার হাতে আসলেই জাদু আছে
ভাই, জাদু বরঞ্চ আরো সোজা, অরূপ দা যে কি ধরাইয়া দিলো তখন টের পাই নাই
...........................
Every Picture Tells a Story
‘ঢুংগ লালা হুংগ লালা ঢুংগ লালা, ঢুংগ লালা হুংগ লালা ঢুংগ লালা।
দারুণ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কপিরাইট নাই, সূরটা নিয়া কোথাও লাগাইয়া দিয়েন
ঢুংগ লালা হুংগ লালা ঢুংগ লালা, ঢুংগ লালা হুংগ লালা ঢুংগ লালা।
...........................
Every Picture Tells a Story
নতুন মন্তব্য করুন