শুক্রবার যখন বিছানা ছাড়লাম ঘড়িতে সময় ভোর ছয়টা। গোসল সেরে নাস্তা খেয়ে গাড়ীতে উঠতে উঠতে সাড়ে সাতটা বেজে গেল। টংগী’র পরে গার্মেন্টস মূখী শ্রমিকদের জন্য অবধারিত জ্যামের কথা মাথায় রেখে ময়মনসিংহের উদ্দেশে যাত্রা করলাম।
১৬০কিমি রাস্তা আড়াইঘন্টায় খুব কম দিনই যেতে পেরেছি। গড়ে সময় লাগে সাড়েতিন ঘন্টা, হাইওয়ে হলেও আশেপাশের গ্রামাঞ্চলে যাতায়াতের জন্য এ রাস্তা মূল ভুমিকা রাখে, সুতরাং রাস্তায় রিক্সা আর হলারের সঙ্খ্যা বেশী।
তিন ঘন্টার মাথায় ময়মনসিংহ থেকে আরো ৩২কিমি দূরে বাড়ীতে যখন পৌঁছালাম সেখানকার কুয়াশা তখনও কাটেনি। মধুপুরের এ অঞ্চলটায় ঠান্ডা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশী, ছোট্ট গ্রাম রসুলপুরে খেটে খাওয়া মানুষেরা শীতে কষ্ট করে। আমাদের গ্রামে লোক কম, পয়সা ওয়ালা লোক নাই বললেই চলে, যা ও বা দুএকজন আছে নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকে। গত বুধবার আমাদের এক ক্লায়েন্টের জন্য কম্বল কিনেছিলাম, প্রথম আলোর মাধ্যমে সেসব বিতরন হবে। সেসময় ব্যক্তিগত ভাবে আমিও কিছু কিনেছিলাম গ্রামে দিব বলে, বাড়ীতে আসার উদ্দেশ্য এটাই।
বাড়ীতে ঢোকার মুখেই আজিজ ভায়ের ঘর, গাড়ীর শব্দ শুনে উনার ছেলে জামাল দৌড়ে বের হয়ে এলো-
কাকা বাগানে যাবেন?
যাবো, দাড়া, জিনিষ্পত্র নামিয়ে আসি। এই বলে আম্মার কাছে কম্বল গুলো বুঝিয়ে দিয়ে বের হলাম।
আমি একটা বাগান করেছি, বড়ই এর। সরকারী জমি লিজ নিয়ে পাঁচ একরের বিশাল বাগান। প্রায় সাতশ’র মত বড়ই গাছ সেখানে, এবারই ফল এসেছে। গাছ ভর্তি সবুজ রঙের বড়ই। এগুলো বাউ কুল বলে। পাকা অবস্থায় অসম্ভব মিষ্টি। বেশ বড়হয়। কয়েকটা দেখলাম দুইশ গ্রামের মতন ওজন। গতবছর ঢাকায় একশ্টাকা কেজি দরে কিনেছিলাম, তা আবার কাঁচা। বাগানে যা দেখলাম সাত থেকে আটহাজার কেজি বড়ই হবে সব বাদ দিয়ে।
পুরোটা বাগান ঘেরাও দেয়া, গাছের ফাঁকে ফাঁকে জাল, ২/৩টা কাকতাড়ুয়া, ছয় সাত জন মানুষ সারাদিন থাকে তারপরও দিনে পাখি আর রাতে বাদুর প্রতিদিন চল্লিশ পঞ্চাশ কেজি নষ্ট করে ফেলে। ওদের দোষ কী, যেভাবে ওদের খাবার ভূমি দখল করে নিজেদের করে নিচ্ছি এছাড়া আর কিইবা করার আছে ওদের। এখন আবার রাতে বাগান পাহাড়া দেবার জন্য ঘর তোলা হচ্ছে দেখলাম। মাচাং ঘর, একদিন এ ঘরে রাত কাটাবো ভেবে রেখেছি।
গাছে পাকা বড়ই নষ্ট হচ্ছে, খাবার লোক নাই। বিক্রির জায়গা নাই। দালাল যাও দুএকজন আসে ত্রিশটাকা কেজি দরে বিক্রি করতেও সাধ্যসাধনা করতে হয় অনেক। সুতরাং ধারনা করছি প্রায় অর্ধেকই নষ্ট হবে এবার।
আমি যখন বাগানে সেসময় ফোন এলো, নাম্বারটা চিনলামনা। হ্যালো বলতেই ওপারে গলা শোনা গেলো
কি খবর? কবে আসছো?
আজ সকালেই।
আছো আজকে না চলে যাবা?
না, দুপুরের পর যাবো।
শুনছো তো ইলেকশনে দাঁড়াইছি, দোয়া কইরো।
হুঁ, শুন্ছি, আর তুমি না বললেও আমি আশেপাশের সবাইকে বলে দিছি তোমাকে ভোট দিবার জন্য।
আমি জানি বলবা।
তোমার শরীর এখন ক্যামন?
আগের মতই, একটু সাবধানে চলতে হয়।
এটা বদরের ফোন, এড্ভোকেট, একসময় রাজপথের সাথী, এখন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী। বেশ আগে একবার ওর হাত পায়ের রগ কেটে দিয়েছিলো সন্ত্রাসীরা, ভাগ্য ভালো বেঁচে আছে।
দুপুরে খাবার পর হঠাৎ হৈ হুল্লোড়, কি হয়েছে জানতে চাইলে একজন বললো, পাখি, বিশাল এক পাখি আমাদের বাড়ীর পেছনের জমিতে, সবাই দৌড়ে যাচ্ছে, দেখতে, এমন পাখি এ অঞ্চলে আগে কেউ দেখেনি। কৌতুহল মেটাতে আমিও ছুটলাম। কাছে যেয়ে দেখি প্রায় তিন ফুট উঁচু ফ্যালকন (আমি সিওর না তবে তেমনি মনে হয়েছে), চাষ দেয়া জমিতে ঝিমুচ্ছে, উড়ার শক্তি নাই, কেউ ডানা ধরে নাড়া দিলে ঝাঁকি দিয়ে দু এক পা এগিয়ে থেমে যায়, একবার পাখা মেললো, অনুমান করলাম মেলানো অবস্থায় প্রায় আড়াই মিটার হবে। আমি নিজেও এমন পাখি দেখিনি আগে। ফিরে আসছি এমন সময় বাঁশঝাড়ের নিচে দুটো ঘুঘুর বাচ্চা পড়ে থাকতে দেখলাম, সাপের হামলায় বাসা ভেংগে নীচে পড়ে গেছে হয়ত। এর পাশের পুকুরে ধ্যানে বসেছে মাছরাংগা, কিযে সুন্দর লাগে।
বিকেল সাড়ে তিনে ফিরতি যাত্রা, এবারে জ্যামে পড়েছিলাম। চৌরাস্তা থেকে নিকেতন পর্যন্ত আসতে লেগেছে দু ঘন্টার উপর, সবমিলিয়ে সেই ১৬০কিমি সাড়ে পাঁচ ঘন্টায়। অনেক বেশী সময়।
মন্তব্য
ছবিগুলো অসাধারণ হয়েছে।
ধন্যবাদ
...........................
Every Picture Tells a Story
গল্পের শুরুতেই শুক্কুরবার দেখে ভাবলাম বায়তুল মোকাররমের জুতাজুতি নিয়ে লেখা
তাই কিছু জুতার ছবির জন্য পোস্টে ঢুকে দেখি এতো অন্য কিছুর ছবি
আপনি আশাহত হয়েছেন বলে মনে ব্যথা পাইলাম
...........................
Every Picture Tells a Story
ছবি দেখে আর গল্প শুনে সিদ্ধান্ত পাকা করলাম, মুস্তাফিজ ভাইয়ের এই বড়ই বাগানে হানা দিতে যাবো। যাবোই যাবো, আমন্ত্রন নিমন্ত্রন ছাড়াই যাবো প্রয়োজনে। আছেন কুনো মুমিন ভাই? বড়ই খায়া দুপরানের অশেষ শান্তি হাছিল করিবেন?
থাকলে জায়গায় বইসা আওয়াজ দেন...
বিশেষ বিবেচনায় মুস্তাফিজ ভাইকেও সপরিবারে দাওয়াত করা যাইতে পারে অবশ্য...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কবুল
...........................
Every Picture Tells a Story
ফ্যালকন পাখিটার কি হল শেষ পর্যন্ত, মানুষের আদরে মরেনিতো ?
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
এটা ফরেস্ট অফিসে পাঠানো হয়েছিলো, সেখানে একবেলায় ৩কেজি মাংশ খায় বলে ওরা ছেড়ে দিয়েছিলো, এরপরই আমাদের বাড়ীর পেছনে ওর আসা।
গ্রামের মানুষ কিছু করেনি, রাতে কি হয়েছে জানিনা, হয়ত শেয়াল কিংবা খাটাসের ডিনার হয়েছে
...........................
Every Picture Tells a Story
মুস্তাফিজ ভাই বড়ই নষ্ট না হইতে দিয়া সকল সচলের বাড়ি ২ কেজি কইরা গিফট করিয়া দেন... আইডিয়া ভালা না?
পাখির ছবিগুলা যে কি ফ্যান্টাবুলাস। চ্রম ভালু লাগল।
-----------------------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।
দৃশা
ভালা আইডিয়া
তবে বিতরনের আর আনানোর কাজে আমি নাই।
আমার লেবু বাগানও ছিলো, এক হাজার লেবু গাছ থেকে তুলতে লেবার খরচ ৬০/৭০ টাকা আর দালালরা লেবু কিনতো ১৫/২০টাকা শ'
রাগে ঐ বাগানের সব গাছ কেটে ফেলেছি
...........................
Every Picture Tells a Story
আপনার বড়ই বাগানের গল্প তো সেদিনই শুনলাম। আজ দর্শন হইল। বড়ই খাইতে মঞ্চায়
আর, আপনার ছবির আর কী প্রশংসা করব! বরাবরের মতোই সুন্দর।
চলে আসেন
...........................
Every Picture Tells a Story
সচলে কেউ ট্রাক-মালিক বা ড্রাইভার নাই ! আহারে, এরুম বাউকুল নষ্ট হইয়া যাইবো..!!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ট্রাক-মালিকরা কি নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়?
...........................
Every Picture Tells a Story
বস! আপনার প্রতি আহ্বান!! ছবিগুলি ফ্লিকারে দিলে ঐখানে এমবেড করার সুব্যবস্থা আছে তো। কোডটা এনে পেস্ট করে দিলেই হবে। ইমেজশ্যাক একটা হাঙ্গামা।
আমরা একবার টেকনাফ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত হেঁটে গিয়েছিলাম। আড়াই দিন লেগেছিলো। তার মধ্যে এক রাত ছিলাম একটা হ্যাচারীর আউট হাউসে। সেইটা একটা গোল মাচানঘর। ভোরবেলা উঠে দেখি কমলা রঙের চাঁদ সাগরের উপরে। আপসোস, ভালো ক্যামেরা ছিলো না সাথে, ক্যামেরাম্যানও তেমন ছিলো না। আপনি ঐ দিনগুলিতে দলে থাকলে জোস হইতো।
হাঁটুপানির জলদস্যু
আমি সাধারনর ফ্লিকার থেকেই ছবি আনি। যেগুলো ফ্লিকারে দেয়া হয়নাই সেসব ক্ষেত্রে ইমেজশেক ব্যবহার করি। ফ্লিকারে আমার বেশীরভাগ ছবি জিও ট্যাগ করা খেয়াল করবেন। গতকালের ছবিগুলো এখনো ফ্লিকারে যায় নাই এই জিওট্যাগ না করার কারনে।
হেঁটে আসার ঘটনা দারুন, আমাদের দেশে হাইকিং এর প্রচলন তো নাই বললেই চলে।
...........................
Every Picture Tells a Story
মাছরাঙ্গার ছবিটা দারুন হইছে ।
*********************************************************
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ধন্যবাদ
...........................
Every Picture Tells a Story
এবার মধুপুর গেলে রসুলপুর যেতেই হবে বড়ই খাওয়ার লাইগ্যা।
ভাই জমিটা কী ফরেস্ট ডিপারমেন থেইক্যা লিজ নিছেন নাকি!
রসুলপুর, বিজয়পুর, সাতারিয়া, চাঁনপুর বেশ কয়েকবার গেছি; কষ্ট লেগেছে অনেক-আমাগো ফরেস্ট ডিপারমেন ওয়ালাগো কাণ্ডকারখানা দেইখ্যা। প্রাকৃতিক বন ধ্বংস কইরা কী সব লেবু বাগান, বাউকুল বাগান,উডলট...হাবিজাবি পরিবেশবিনাশী যজ্ঞের জইন্য জমি লিজ দেওয়া চালু করছে।
যাবার আগে জানিয়ে জাবেন।
আমি সরাসরি ফরেস্ট থেকে লীজ নেইনি। ওরা যে ক্রাইটেরিয়া থেকে লীজ দেয় আমি সেটায় পড়িনা।
এ জমি গুলো ফরেস্টের, কিন্ত অনেক আগে থেকেই চাষাবাদ হতো। কৃষি জমি হিসাবে লীজ দেয়া হয়েছে।
আমার ধারনামতে লেবু, আনারস বা ইত্যাদির বাগানের জন্য নয়, মধুপুর বন ধ্বংসের অন্যতম কারন অতিরিক্ত লোভী কিছু ফরেস্ট কর্মকর্তা যারা স্থানীয়দের পয়সার বিনিময়ে গাছ চুরিতে সহায়তা করতো। ত্রিশ বছর আগেও যে বন দেখেছিলাম তার দশমাংশও এখন আর অবশিষ্ট নেই।
...........................
Every Picture Tells a Story
সারছে! সরকারি জমিখোর হিসেবে কি শেষে আপনের বিরুদ্ধেও আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে নাকি!
..................................................................................
দেশ সমস্যা অনুসারে
ভিন্ন বিধান হতে পারে
লালন বলে তাই জানিলে
পাপ পুণ্যের নাই বালাই।
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
কোন সম্ভাবনাই নেই
...........................
Every Picture Tells a Story
বড়োই বরই খাইতে মঞ্চায়
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
...........................
Every Picture Tells a Story
বস্,
ছবিগুলো দা-রু-ন হইসে....
বড়ই খাবার আশায় কি থাকবো?
******************************************
Everyone thinks of changing the world,
but no one thinks of changing himself.
******************************************
*****************************************************
Everyone thinks of changing the world,
but no one thinks of changing thyself.
*****************************************************
চুপি চুপি চলে আসেন
...........................
Every Picture Tells a Story
শুইনা ফালাইছি।
ওগুলো ঘুঘুর ছানা? দেখে কবুতরের বাচ্চা মনে হচ্ছে।
পাখপাখালির ছবিগুলো বেশি সুন্দর।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
শোনা কথায় কান দিতে নাই
...........................
Every Picture Tells a Story
আর, বাচ্চা দু'টোর খবর কী?
ঘুঘুর বাচ্চা?
ভালো আছে।
...........................
Every Picture Tells a Story
ছবিগুলা খুবই সুন্দর, কিন্তু বড়ই খাবার জন্য মনটা একদম 'ফুকারিয়া উঠিল'
বাসায় আছে
...........................
Every Picture Tells a Story
আহারে!!!
"বড়ই গুলান নষ্ট হইতাছে, আর এই দিকে খাওনের লোকেরা কষ্টে আছে"
আমি ও ওই দলের একজন
ছবিগুলো খুবই সুন্দর
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ধন্যবাদ
...........................
Every Picture Tells a Story
Mustafiz bhai... Shokun tar proti vagger nirmom porihas deke kub karap laglo ... mon ta karap hoe gelo...
নতুন মন্তব্য করুন