“আজ তোমার মেঘে মেঘে রঙ...” আমার মালয়েশিয়া ঘুরে আসার প্রথম দিন।
কোনকিছুর অপেক্ষায় চুপচাপ বসে থাকা বিরক্তিকর। কিন্তু তাই করতে হচ্ছে। এয়ারপোর্টে এসেছি সাড়ে এগারোয়। এসেই ড্রাইভার ছেড়ে দিয়েছি মাতিসকে স্কুল থেকে তোলার জন্য, ওর স্কুল ছুটি একটা দশে, আমার ফ্লাইট পৌনে তিনে, মাতিসকে স্কুলথেকে বাসায় নামিয়ে ফ্লাইট ধরা যেতোনা, তাই আগে ভাগেই আসা।
ঢাকা এয়ারপোর্ট এখন আগের চাইতে সুন্দর। বাইরের চাইতে ভেতরের অংশ অনেক পরিষ্কার। কিছুদিন আগেও দেখেছি ভেতরে কাজ ছাড়া মানুষজনের আনাগোনা বেশী থাকতো, আজ ছিমছাম। আইডি কার্ড ঝোলানো মানুষজন ছাড়া অপেক্ষমান যাত্রীও দেখা যায় না, এসময় ফ্লাইট উঠানামা কম থাকে বলেই হয়তো এমন। সারি সারি খালি চেয়ারের একদম শেষ মাথায় বসে আছি।
ঘন্টাখানিক পর ইমিগ্রেশন পেরিয়ে ডিউটি ফ্রী এরিয়াতে চলে এলাম। সাজানো গোছানো দোকানগুলোতে বাইরের জিনিষের ছড়াছড়ি, সিগারেট, লীকার আর পারফিউম বাইরে থেকে এসে আবার বাইরেই চলে যায়। এক কার্টুন সিগারেটের দাম চোদ্দ ডলার। এ এরিয়াতে ইন্টারনেট কানেকশন আছে, ফ্রী, ভাবলাম ভালো জিনিষ, গুঁতাতে যেয়ে দেখলাম বাংলা অক্ষরের বদলে চারকোনা সব বাক্স। আহারে।
হাঁটছি আর ঘুরছি, ভেতরটা দুবার চক্কর দিতেই বোর্ডিং এর সময় হয়ে এলো। যাত্রী বেশী নয়, আমাকে নিয়ে সাতাত্তুর জন, বেশীর ভাগই ছুটি কাটিয়ে ফেরা শ্রমিক, দুটো পরিবারকে দেখলাম বেড়াতে যাচ্ছে, এদের মাঝে একটা তিন বছরের মেয়ে, বোর্ডিং গেট পেরিয়ে বিমানে উঠার অপেক্ষায় থাকাকালীন একটু পর পর পেছন থেকে এসে আমার চুল নাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। নাম জারা।
খুব ভোরে নাস্তা করেছিলাম, বিমানে উঠার আগেই ক্ষুধা পেয়েছিলো, পনর মিনিট দেরীতে বিকেল তিনটা পাঁচে উড়াল দেবার পর থেকেই খাবারের অপেক্ষায় ছিলাম। সিট নাম্বার এক, সবার সামনে, খাবারটা নিশ্চয়ই আমার ভাগ্যেই আগে জুটবে। বাসমতি চালের ভাত, মুরগীর মাংস, এক কোনে একটু ডাল, অমৃতের স্বাদ পেলাম, সবশেষে দুটো কালোজাম। আহ্ ঘুম পাচ্ছে।
প্লেনের দুলুনীতে তন্দ্রা কেটে গেল। একঘন্টার উপর উড়ছি, সবঠিক থাকলে কুয়ালালামপুর পৌঁছতে সময় লাগে তিন ঘন্টা পয়তাল্লিশ মিনিট। স্পীকারে ক্যাপ্টেন শামসুলের গলা শোনা গেল, সিট বেল্ট বেঁধে রাখার নির্দেশ দিলেন। জানালা দিয়ে নীচে তাকালাম, উঁচু নিচু সারি সারি পাহাড়, এর মাঝে নদী দেখা যায়। সম্ভবত মিয়ানমারের উপর দিয়ে উড়ছি। একটু পর পর মেঘ এসে ঢেকে দিয়ে যাচ্ছে সব। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে গান “আজ তোমার মেঘে মেঘে রঙ...”
আটটা পয়তাল্লিশে কুয়ালালামপুরে পৌঁছালাম। ঢাকার তুলনায় অনেক বড় এয়ারপোর্ট। কাস্টমস্ আর ইমিগ্রেশন বেশ দূরে অন্য বিল্ডিং এ, ট্রেনে যেতে হয়। কোনরকম দেরী ছাড়াই সেগুলো পেরিয়ে টেক্সী কাউন্টার ছাড়িয়ে খেয়াল করলাম লাল গেঞ্জী পড়ে অরূপ ঘাড় উঁচিয়ে আমাকে খুঁজছেন, অথচ উনার সামনে দিয়ে বের হয়ে পেছনে এসে ধাক্কা দেবার আগ পর্যন্ত আমাকে টেরই পাননি। সেখান থেকে গাড়িতে উনার বাসায়। টিয়া রঙের ১২০০সিসির প্রোটন। ভালোই ড্রাইভ করেন। ত্রিশ মিনিটের মত লেগেছে। বাসার নীচে উনার সেই কুকুর, কোন এক লেখায় পড়েছিলাম, ছবি তোলার আগেই পালিয়ে গেল। পরে আরো কয়েকবার দেখেছি, কিন্ত ছবি তোলার চেষ্টা করিনি।
দশতলার উপর দু’বেডের চমৎকার বাসা, মাশীদ এসে দরোজা খুলে দিল। ড্রইং রুমের দেয়াল জুড়ে বাঙ্গালী ছোঁয়া, অরূপের ব্যবহৃত জিনিষ্পত্র সব ইতিউতি ছড়ানো, বোঝা গেল গোছানোর কাজ মাশীদের উপর দিয়েই যায়। তাড়া দিল মাশীদ, চলেন টুইন টাওয়ার দেখে আসি, সেই সাথে ডিনারটাও সেরে আসা যাবে। কুয়ালালামপুরে এসে টুইন টাওয়ার দেখবেনা এমন কেউনেই, রাতের আলোতে ভালোই লাগে। মাঝরাতের আগেই এগারোটায় সেখানকার বাতি নিবিয়ে দেয়া হয়, তখন যেয়ে লাভ নেই। আমরা যখন গেলাম ইতিউতি লোকজন ঘোরাঘুরি করছে তখনও। সেখান থেকে বুকিত বিন্তাং। এত রাতেও প্রচুর লোক। পা টেপার দোকানগুলো তখনও গমগম করছে। আমরা যেয়ে বসেছি এক চাইনীজ রেষ্ট্রুরেন্টে, ফুটপাথের উপর টেবিল পেতে। ওরা বলে রেস্তোরান, ইংরাজীকে মালয়তে রুপান্তরের এমন অনেক কিছুই দেখেছি সেখানে। যেমন কফি হলো কপি, ড্রিঙ্কিং ওয়াটার হলো ড্রিঙ্কিন ওয়াটার। সামুদ্রিক শামুক/ঝিনুক, চিংড়ি মাছ আরো নানা কিছু দিয়ে তৈরী স্যূপ, বারবিকিউ করা সামুদ্রিক মাছ দিয়ে ডিনারটা মন্দ হয়েছে বলা যাবেনা। সামুদ্রিক খাবারের স্বাদ নিতে নিতে মনে পরলো আর একটু পরে রাতেই সমুদ্রে রওনা দিচ্ছি আমরা।
চলবে
মন্তব্য
আহা মাছের ছবিটা দেখে কিবোর্ড লালে-ঝোলে ভিজে গেলো!
মজা পাইলাম
...........................
Every Picture Tells a Story
আপনি ফিরবেন কবে, মুস্তাফিজ? এখনো লেখা পড়িনি, শুধু ছবি দেখেই মুগ্ধ। মহামুগ্ধ। কেমনে তোলেন এইসব?
.......................................................................................
Simply joking around...
.......................................................................................
Simply joking around...
ভাই, লজ্জা দ্যান কেন?
আমি গতকাল ফিরেছি।
...........................
Every Picture Tells a Story
উদ্ধৃতি:
গুঁতাতে যেয়ে দেখলাম বাংলা অক্ষরের বদলে চারকোনা সব বাক্স।
অভ্র ইনস্টল করে দিয়ে এলেই পারতেন কিন্তু।
লেখাও চমৎকার! বাকি অংশের অপেক্ষায় রইলাম।
.......................................................................................
Simply joking around...
.......................................................................................
Simply joking around...
ভালো বলেছেন, চেষ্টা করেছিলাম, ওদের পিসি গুলো বাক্সের ভেতর আটকানো, শুধু মনিটর বাইরে তাই সাথে থাকা সত্ত্বেও পারিনি। আর নেট থেকে ডাউনলোড করে করতে গেলে সময় অনেক লাগবে বলে করিনি।
...........................
Every Picture Tells a Story
- এক্ষেত্রে কেবল ফন্টটা নামিয়ে কন্ট্রোল প্যানেল থেকে ফন্ট ফোল্ডারে কপি করলেই হয়ে যাওয়ার কথা। আমি ফ্রাঙ্কফুর্ট এয়ারপোর্টে বক্স সমস্যার সমাধান করেছি এভাবেই। আশাকরি ঢাকাতেও এর ব্যত্যয় ঘটার কথা না।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নানানজনকে পাঠানোর কারণে আমার জিমেইলের সেন্টবক্সে ২টা বাংলা ফন্ট আছে। বক্স দেখলেই ওখান থেকে নামায়ে সি /উইন্ডোজ/ ফন্ট । কপি পেস্ট।
লেখার ছবি সব
ভালো বুদ্দ্বি
...........................
Every Picture Tells a Story
গিয়ে অরূপের সাথে যখন দেখা হয়েছে তখন আগেই অনুমান করে নিয়েছি খাবারের বর্ণনা থাকবে অন্তত ৪০%
কারণ কারো এপিটাফ লিখলেও যেহেতু অরূপ কায়দা করে সেখানে খাবারের বর্ণনা ঢুকিয়ে দিতে পারে সেহেতু আপনার মালেশিয়া ভ্রমণ খাবারসমৃদ্ধ হবে তাতে কেনো সন্দেহ নাই
কিন্তু এই ৭৯% খাবারসমৃদ্ধ মালেশিয়া ভ্রমণ দেখে সন্দেহ হচ্ছে এই কাহিনীর ড্রাফটা কি অরূপের করা?
আপনার মত আমারও তাই সন্দেহ। আমার সাথে ডায়রী ছিলো কিছু নোট, জায়গা আর রাস্তার নাম, জিও ট্যাগের জন্য লোকেশন ইনফরমেশন নেয়া ইত্যাদির জন্য। একসময় খেয়াল করলাম আমার হাতের লেখা আমিই চিনছিনা, মনে হয় অন্য কারোলেখা, সেটা অরুপেরও হতে পারে।
...........................
Every Picture Tells a Story
রাত অনেক হয়ে গেছে। লেখাটা পড়লাম না। কাল এক সময় পড়ব। আপাতত ছবি দেখে মুগ্ধতা জানিয়ে গেলাম শুধু। অসাধারণ বললেও কম হয়ে যাবে...
চকলেট আনসেন তো?
...........................
Every Picture Tells a Story
একজন মেঘবিলাসী হিসেবে আপনার মেঘের ছবিগুলোর প্রশংসা করছি কেবল...
দারূণ !!!
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
ধন্যবাদ
...........................
Every Picture Tells a Story
আহারে খানা...!!!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রণদা, ইশশ্
...........................
Every Picture Tells a Story
ছবিগুলো বড়ই ভালো
পরের পর্ব জলদি রেঁধে নিন
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
উনুনে আছে।
...........................
Every Picture Tells a Story
খাওয়া না মেঘ - কিসের ছবি যে বেশি ভালো হইসে, বলা মুশকিল
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
সবজান্তা যদি এই বলে তাহলে কৈ যাই
...........................
Every Picture Tells a Story
- ঈশ, কবে যে বড় হমু, আর কবে যে মালশিয়া যামু।
মু্স্তাফিজ ভাই, অরূপ (একটা বেগানা-বেপর্দা নারীর ফটুক দেখায়া) কইলো আপনার কাছে নাকি মাশাল্লাহ্ বেশ কিছু বেহেশতি ফটুক আছে। তো সেইসব কি সিন্দাবাদের সিন্দুকে পুরে রাখবেন? এই গরীব, নাদানদের জন্য কি আপনের দিলে দয়া হয় না?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
অরূপের কাজ অরূপ করেছে ... ... ...
...........................
Every Picture Tells a Story
চারপাশে অনেক রঙ, রঙে রঙে রঙিন।
ধন্যবাদ
...........................
Every Picture Tells a Story
আপনার, আপনার তোলা নয়, আপনার, ছবিগুলো মন দিয়ে দেখলাম। আপনি কি অনেক খেতে পছন্দ করেন, বিশেষত: সী ফুড?
আদৌ কি পরিপাটি হয় কোনো ক্লেদ?ঋণ শুধু শরীরেরই, মন ঋণহীন??
যে ছবিগুলোতে আমি আছি সেগুলো মাশীদের তোলা।
আমি খেতে পছন্দ করি, তবে খাবার নিয়ে কোন বাছবিচার নেই, মানুষ যা খায় সবই আমি খেতে পারবো।
কিছু পছন্দের ব্যাপার অবশ্য আছে যেমন চা এবং কফি'র অপশন থাকলে কফি (দুধ ছাড়া)। এরকম আরকি (কেন খাবার আমন্ত্রণ আসবে নাকি?)
...........................
Every Picture Tells a Story
আমার চকলেট কই মুস্তাফিজ ভাই!
Lina Fardows
আমিও ৩০ তারিখে মালায়শিয়া যাচ্ছি। আমাকে কিছু টিপস দেন না প্লিজ
Lina Fardows
আমাকে ফোন দ্যান ০১৭১১৫৩০০১৬
...........................
Every Picture Tells a Story
মেঘের স্টিমার......মেঘের ছবির গুলোর একটা নাম দিলাম।
অপরুপ রুপ এই মেঘের।
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
ধন্যবাদ টুটুল ভাই
...........................
Every Picture Tells a Story
স্যার,
মালয়েশিয়া কবে গেলেন? আবার দেখি চলেও আসলেন! কাজে নাকি ঘুরতে?
টুইন টাওয়ারের ছবিটা জোশ্ হইসে! সামনাসামনি ও কখনো কখনো এত্ত সুন্দর দেখা যায়না উহাকে.... সত্যি কইলাম কিন্তু!!!
******************************************
Everyone thinks of changing the world,
but no one thinks of changing himself.
******************************************
*****************************************************
Everyone thinks of changing the world,
but no one thinks of changing thyself.
*****************************************************
ঘুরতে গেছিলাম
...........................
Every Picture Tells a Story
ঘুড়ে ঘুড়ে জীবন পাড় করার একটা ইচ্ছা আছে...
আপনার লেখাটা পড়ে স্বাদটা টের পাওয়া যায়...
(জয়িতা)
সেভাবে ঘুরতে পারলে তো ভালোই হতো
...........................
Every Picture Tells a Story
আহা ছবিগুলো এত সুন্দর যে মনে একটা হাহাকার জাগে......
কিসের হাহাকার?
...........................
Every Picture Tells a Story
ঠিক জানিনা।
পড়ছি আর আগে যা বহুবার বলেছি তাই বলছি......
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
কি জানি বলছিলেন ভুইলা গেছি
...........................
Every Picture Tells a Story
এইটা মিস হয়ে গেছিলো।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
...........................
Every Picture Tells a Story
আমার ইয়েকিন যাইতাম মন চায় না যে, মানুষের হাত দিয়া এইরকম ফটু তোলা সম্ভব
দৃশা
নতুন মন্তব্য করুন