হোয়াট ইস ইউর নেম?
মাতিস।
মে-টি-জ?
নো মাতিস।
ওকে মে-টি-জ, কাম ব্যাক নেক্সট টিউইসডে।
থাঙ্কিউ।
ইউ আর ওয়েল কাম।
বাই দ্যা ওয়ে, ইউ নো আ্যা ফেমাস আর্টিস ফ্রম ফ্রান্স নেম মে-টি-জ?
ইয়েস আই নো এবাউট অঁরে মাতিস।
সেপ্টেম্বরের নয় তারিখ সকালে ফ্রান্স এম্বেসিতে এভাবেই আমার ছেলের ইন্টারভিউ হয়েছে ভিসা অফিসারের সাথে।
স্পেন যাবার পোকা আবারো মাথা চাড়া দিয়েছিলো গত মার্চে প্রবাসী বড়ভাই যখন দেশে। ৩দিন ছিলেন, এর মাঝে একদিন উনাকে নিয়ে ড্রাইভে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ গিয়েছিলাম, যাত্রা পথে এবং ফেরার সময় আমাদের আলাপের বেশীর ভাগ জুড়েই ছিলো স্পেনের আর সেখানকার মানুষের গল্প। বড়ভাই গল্প করতে পারেন, একসময় গল্প কবিতাও লিখতেন, ছবিও আঁকতে দেখেছি উনাকে। চাকরীর সুবাদে পরিবার নিয়ে মাদ্রিদে আছেন প্রায় দুবছর। এর আগে দেশের বাইরে উনার পোস্টিং ছিলো মিয়ানমার আর কুয়েতে। দুজায়গাতেই বেড়াতে যাবার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেও যাওয়া হয়নি তাই এবারে স্পেনের লোভ জাগানিয়া গল্প শুনেও অনিশ্চয়তার কারনে বলতে পারিনি যাবো।
আমি, আমার পরিবার ঘুরতে পছন্দ করি, তারপরও বছর না ঘুরতেই পরিবার সহ ইউরোপ বেড়াতে যাওয়া আমার জন্য বিলাসিতার চাইতেও অনেকবেশী কিছু। একজনের ইউরোপ যাওয়া আসার খরচ দিয়েই কুয়ালালামপুরের ৩টা রিটার্ন এয়ারটিকেট কিংবা যাওয়া আসার খরচ সহ দার্জিলিং এ পরিবার সহ ৭ দিন বা নেপালে ৫তারা হোটেলে ৪ রাত কাটানো কোন ব্যাপারইনা। সুতরাং সুযোগ খোঁজা।
আমি কুয়ালালামপুরে রিটার্ণ ভিজিট দিতে চেয়েছিলাম পরিবার সহ। সেখানে মাতিসের যাওয়া হয়নি, আর ওর মা বেশ কবার ঘুরে এলেও আমার সেবারই প্রথম যাওয়া। অরূপের আতিথিয়তা বলেন আর সমুদ্রের টান বলেন ঠিক করেছিলাম ছেলের স্কুল ছুটিতে আবারো ঘুরে আসবো। সামারে দুই মাসের উপর ছেলেটা ঘরে বসে কাটালেও দুজনের একসাথে সময় হয়ে উঠেনি, এমনকি গ্রামের বাড়ীতেও একদিনের জন্য যেতে পারিনি। পুরো সময়টা মাতিস সাঁতার, সাইক্লিং আর টেনিসের ক্লাস করেই কাটিয়েছে। একসময়ের ডাকসাইটে অভিনেতা বুলবুল আহমেদ আমাদের প্রতিবেশী, সে সূত্রে উনার স্ত্রীকে মাতিস নানু বলে ডাকে। নানুর গলা ভালো, ছোট বাচ্চাদের বেলাতে যা হয় উনিও কয়েকদিন চেষ্টা করেছেন মাতিসকে গানে তালিম দেবার জন্য। এত সব কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও ছেলে কিন্তু বেড়াতে যাবার কথা একবারের জন্যও ভুলেনি।
এরই মাঝে হঠাৎ করে একটা গ্রুপের সাথে টরেন্টো যাবার সূযোগ সৃষ্টি হয়েছিলো, আমার স্ত্রীর বড়ভাই ভ্যাঙ্কুউভার থাকেন, কানাডা যাবো কিন্তু ওদের সাথে দেখা হবেনা ব্যাপারটা কেমন দেখায়, তাই সে পোগ্রামও বাদ।
টার্গেট এবারের ঈদ, আগে পিছে শুক্র শনি মিলিয়ে বেশ লম্বা ছুটি। বড়ভাইকে জানানোর সাথে সাথেই ইমেইলে ইনভাইটেশন। ঢাকায় স্পেনের এম্বেসী থাকলেও ওরা ভিসা সার্ভিস শুরু করেনি এখনও। এডওয়ার্ডো রোমারিও স্পেন এম্বেসীর ডেপুটি হেড, সাধাসিধা ভদ্রলোক, বললেন ফ্রান্স এম্বেসী থেকে ভিসা নিতে। দরখাস্ত করার আগেই প্ল্যান করা শুরু করে দিলাম কোথায় কোথায় যাবো, প্যারিস, মিউনিখ, ফ্রাঙ্কফ্রুট আর ক্যাসেল কোনটাই বাদ দিইনি, প্রায় প্রতিদিনই নুতন নুতন আইটেনারী পাঠাই বড়ভাইকে। উনি শুনে বলে এতসব প্লান করে লাভ নেই, স্পেনেই যেসব জায়গা আছে সেসবই দেখা শেষ হবেনা এ কয়দিনে। অগত্যা সব পরিকল্পনা তুলে রাখলাম ভবিষ্যতের জন্য আর দরখাস্ত করলাম ভিসার।
ঢাকার ফ্রান্স এম্বেসীতে ভীর কম, প্রতিদিন গড়ে জনা পঁচিশেক লোক দাঁড়ায় ভিসার জন্য, কিংবা তারও কম। আমরা যেদিন গেলাম এক সপ্তা পরে পাস্পোর্ট ফেরত নিতে বলে দিলো। সেদিন সেপ্টেম্বরের পনেরো, আর ষোল তারিখ যাবো ঠিক করলাম, ফিরবো আটাশে।
পনেরো তারিখ এম্বেসী থেকে হতাশ হয়ে ফিরতে হলো, আমাদের ভিসা হয়নি, কি কারন সেটাও সঠিক জানা গেলোনা, ষোল তারিখ সকালে শুনলাম এম্বেসীতে রাখা আমাদের আঙ্গুলের ছাপ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা, সেই ছাপ দিয়ে ভিসা সংগ্রহ করলাম। সতেরোতে এয়ারপোর্টে গেলাম টিকিট কনফার্মেশন ছাড়াই, আহ্ জ্বালা, কাতার এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট দোহা থেকে মাদ্রিদ অভারবুকড্, কাতারের ভিসা নাই বলে সেদিন আর যাওয়া হলোনা। মন খারাপ করে বাসায় ফিরে ঘুম দিলাম। আমাদের দুজনের চাইতে মাতিসের মন বেশী খারাপ, বলে বাবা চলো বিজনেস ক্লাসে যাই। মাতিসকে কিভাবে বোঝাই যে আমাদের তিন জনের টিকিটের পয়সায় মাত্র একটা বিজনেস ক্লাসের টিকিট পাওয়া যাবে?
ঢাকা থেকে কাতার এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ছাড়ে সকালে, শুধুমাত্র শনিবার রাতে ফ্লাইট, ঊনিশ তারিখ শনিবার আবারো এয়ারপোর্ট, বোর্ডিং কার্ডের জন্য টিকিট দিতেই জানা গেলো আমারটা ছাড়া বাকি দুটোর কনফার্মেশন নাই। হতাশ হবার আগেই এয়ারলাইন্সের কর্মচারী জানালো দোহা থেকে মাদ্রিদের ফ্লাইটে সীট বেশ খালি আছে এবং এ স্বল্প সময়ে যেহেতু অত বুকিং পাবার সম্ভাবনা নাই তাই আমাদের সবারই হয়তো যাওয়া হচ্ছে আজ কিন্তু শর্ত হলো দুজনের বোর্ডিং কার্ড দোহা এয়ারপোর্ট থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
তাই সই। উঠে গেলাম ফ্লাইটে। সব ঠিক থাকলে বিশ তারিখ সকালে মাদ্রিদ পৌঁছাবো। মাদ্রিদে সেদিন ঈদ। বিশ তারিখ আবার আমার ছেলে আর বউ দুজনেরই জন্মদিন। মাদ্রিদের সময় আমাদের চাইতে কয়েকঘন্টা পেছনে, সে হিসেবে এ প্রথমবারের মত সবচাইতে লম্বা জন্মদিন পালন করতে যাচ্ছে ওরা।
বাম থেকে মাদ্রিদ বক্স টাওয়ার (টাওয়ার রেপসল নামেও পরিচিত), লর্ড ফস্টারের ডিজাইনে ৪৫তলা আর ৮২০ফিট উঁচু এটা স্পেনের সর্বোচ্চ। ভেলীহারমোসো টাওয়ার, ৫২তলা আর ৭৭৪ফিট উঁচু এ বিল্ডিং এর ডিজাইনাররা হলেন কার্লোস ব্লন্ড কার্ভাজাল এবং এনরিখ আল্ভারেজ রোম। ৫২তলা আর ৮১৭ফিট উঁচু তৃতীয় বিল্ডিংটার নাম ক্রিস্টাল টাওয়ার (স্পেনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ), ডিজাইন করেছেন আর্জেন্টাইন সিজার ফিলি। আর ডানের শেষ বিল্ডিংটার নাম স্পেস টাওয়ার, ৫৭তলা ৭৭৪ফিট উঁচু বিল্ডিংটার ডিজাইনার আমেরিকান কোম্পানী পেই কব ফ্রেড।
বামে বড়ভায়ের ছেলে প্রাজ্ঞ আর ডানে মাতিস।
স্পেনস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বাসায় ঈদের দিন, বাম থেকে আমি, ভাষা সৈনিক মাহ্বুবুল আলম চাকলাদার, এম্বেসির কমার্শিয়াল মিনিষ্টার, রাষ্ট্রদূত সাইফুল আমিন খান, এম্বেসির পলিটিক্যাল মিনিষ্টার।
মন্তব্য
বড় হলে আমরাও একদিন যাব.. স্কাইলাইনের ছবিটায় ডাইনামিক রেঞ্জ ভালো আসছে..
অরূপের ব্লগ @ http://etongbtong.blogspot.com
অরূপের ফ্লিকার @ http://www.flickr.com/photos/harvie-krumpet
অরূপের ব্লগ @ http://etongbtong.blogspot.com
অরূপের ফ্লিকার @ http://www.flickr.com/photos/harvie-krumpet
ধন্যবাদ, আমরাও তখন আবার যাবো।
স্কাইলাইনের ছবিটা বড়ভায়ের বাসার বারান্দা থেকে তোলা।
...........................
Every Picture Tells a Story
বিশে সেপ্টেম্বর ভাবীর জন্মদিন? চিমটী মুস্তাফিজ ভাই, দিশার জন্মদিনও বিশে সেপ্টেম্বর।
আপনার ছবি নিয়ে কথা বলা বাতুলতা। গল্পতো সবে শুরু, স্পেনের প্রথম দিন এখনো শুরু হয় নাই তাতেও মজা বেশ বোঝা যাচ্ছে। কমপক্ষে আরো দশ পর্বে লেখা শেষ করবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
চিমটি একটা দিলে পাঁচটা খেতে তৈরী থাকুন, আমাদের পরিবারে পাঁচ জন আছে ২০শে সেপ্টেম্বরে জন্ম আর আমার বাসায় দুইজন।
...........................
Every Picture Tells a Story
হয় নাই , এইসব ভ্রমন কাহিনী কমপক্ষে ১২ আর বেশপক্ষে ৪২ কিস্তিতে না দিলে ঠিক জমে না।
আপনার কুয়ালালামপুর ভ্রমণের মতন
...........................
Every Picture Tells a Story
আপনার পোষ্টে আমি খালি ছবি দেখি। ছবি কই আর?
ট্যানেরিফ যান নাই? মেইনল্যান্ড যেমন তেমন, স্পেনিশ আইল্যান্ডগুলো অমানবিক সৌন্দর্য্য
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
স্পেনিশ আইল্যান্ডগুলোর কথা শুনেছি। ইচ্ছা থাকলেও সময় সূযোগ আর টাকা বেড়ানোর ক্ষেত্রে একটা বড় ফ্যাক্টর। তবে দশদিনে যেটুকু দেখেছি সেসব শুধুমাত্র কিছু সদয় লোকের সহায়তা পেয়েছি বলে সম্ভব হয়েছে।
ছবি তুলেছি, দেবো। ভিডিয়োও আছে কিছু গানের, সেসবও আসবে।
...........................
Every Picture Tells a Story
---মনের কথাটা বলে দিলেন হাসান ভাই। গ্রান্ড ক্যানেরিয়ার লাস পালামাস দ্বীপে বেশ কিছুদিন ছিলাম যাযাবর জীবনে। পৃথিবীতে এর চেয়ে সুন্দর জায়গা আর কোথাও আছে কিনা এখনও নিশ্চিত না। মটরদানার সাইজের দ্বীপ, এর মধ্যে ১১৬টা সৈকত। পাহাড় আর জঙ্গলের কথা এখন আর নাই বললাম।
আবার যাব কোন একদিন।
আমিও
...........................
Every Picture Tells a Story
তুই কই যাস নাই এই দুনিয়ার, সেইটা ক তো? উফ... শুনলেই মেজাজ খারাপ হয়...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
দশদিনের কথা যেহেতু বলেন নাই- তারমানে ধরে নিতে পারি যে সিরিজ দিবেন। এই গাঁট হয়ে বসলুম... দ্যান...।
---------------------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
চেষ্টা থাকবে
...........................
Every Picture Tells a Story
এত ছোট পোস্ট আর এত কম ছবিতে মন ভরে না। আরো বড় পোস্ট চাই।
আসো র ফরমেটের ছবিগুলা প্রসেস করে দিয়ে যাও
...........................
Every Picture Tells a Story
দশদিন বলে তিনটা ছবি?
আরিফ ঠিক বলছে অন্তত: ৩০টা পর্ব দেন।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
ত্রিশ পর্ব লেখার ক্ষমতানাই (ছবি আছে হাজার দেড়েক), তবে ডিটেলস্ দেবার চেষ্টা করবো
...........................
Every Picture Tells a Story
সুপ্রিয় মুস্তাফিজ ভাই
অঁরে মাতিস আর তার ভাইয়ের ছবিটা তো একেবারে হিন্দী ছবির পোস্টার হয়ে গ্যালো!
আপনি এদিকে কখন আসবেন? এখানে প্রকৃতি এখন বড় মনোরম।
ঐ ছবিটা তোলার পেছনে কাহিনী আছে। ওরা দুজন ঐ দেয়ালে বসে গল্প করছিলো, আমাকে আসতে দেখেই একসাথে দেয়ালের ওপারে লুকাতে পা ঘুরাতে যেয়েই ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
...........................
Every Picture Tells a Story
গল্প তো ফোনেই শুনে নিছি... এখন ছবি দেখার অপেক্ষায় আছি... চলুক...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হে হে, সব গল্প বলিনাই
আড়াইশ পোলার বাপ হান্নান মুন্সির কথা এখনও বাকি আছে। স্পিডিং এর জন্য চার বার ড্রাইভিং লাইসেন্স ক্যান্সেল হবার পর এবারে আমদের সাথে আরো আট পয়েন্ট গেছে। বলছি কী? বলি নাই।
আরো বলিনাই নিচের এঁদের কথা। ধৈর্য ধরেন
...........................
Every Picture Tells a Story
হান্নান মুন্সির কথা কইছেন... বাকিগুলা কন্নাই... এইবার তো তাইলে শুনতেও হইবো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
চলেন আমরা একটা আড্ডায়াতন বানাই
...........................
Every Picture Tells a Story
স্কাইলাইনের ছবিটা ফাটাফাটি হইছে।
জমজমাট সিরিজের গন্ধ পাইতেসি মনে হয়।
বন্যরানা
আশাকরি পাবেন
...........................
Every Picture Tells a Story
আমার ছবি কই?
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
আছে
...........................
Every Picture Tells a Story
- জার্মানী না হয়েই চলে গেলেন?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
দেখি আগামীবার
...........................
Every Picture Tells a Story
ছবি কম হয়ে গেসে।
...........................
Every Picture Tells a Story
ডাবল-হিরো ছবিটা খুব পছন্দ হইছে।
ধন্যবাদ
...........................
Every Picture Tells a Story
নতুন মন্তব্য করুন