চারদিক নিশ্চুপ, অন্ধকার, বাগানের ভেতরকার সবচাইতে উঁচু পাহাড়ের উপর বিশালকায় বাংলোর আশেপাশে ঝিঁ ঝিঁ পোকার একটানা বিরামহীন শীষ ছাড়া শোনা যায় রাত জাগা কাঠ ঠোকরার ঠক ঠক। হিম হিম ঠাণ্ডায় স্লিপিং ব্যাগের ভেতর শুয়ে শুয়ে নিদ্রাদেবীকে আকর্ষণের চেষ্টা সবেমাত্র সফল হতে যাচ্ছে তেমন সময় আদিবাসী গার্ডের ভাঙা গলা বেজে উঠে। নিশিপাওয়া মানুষের মতো বিছানা ছেড়ে উঠে আসি এক এক করে। হেঁটে হেঁটে বাংলোর পেছনে এসে আবিষ্কার করি চারজন আদিবাসী আগুন ঘিরে গোল হয়ে বসে গান গাইছে
...তেরা সিথা নয়নে কাজল ক্যান ছোড়ি বুঝায়া বোল আধা দিনে হবি ডামাডোল
ওরে তোর নয়নে পানি ঝিলিমিলি, ছাড়িয়া নামি হাঁটু পানি
আমি বসি সিনান করি ক্যামনে শুকাই গতর খানি...
রাত আস্তে আস্তে বাড়ে, কিন্তু সময় থেমে থাকে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো বসে বসে গান শুনি, স্থানীয় ভাষার গানের কলি আবার বাংলায় ভাষান্তরিত হয়। গানের রসের সাথে লবণ দেয়া সোনালী রংয়ের চায়ে হাফহাতা গেঞ্জী পেরিয়ে শীত কামড়ে ধরে না।
.........
পাত্রখোলা চা বাগান, নাম যেমন সুন্দর তেমন সুন্দর এর পরিবেশ আর মানুষ। ঠিক সন্ধায় যখন আরো অগুনতি বাগান পেরিয়ে পাত্রখোলায় গাড়ি ঢুকলো এর ব্যবস্থাপক সাকলাইন আমাদের চা খাইয়েই মাধবপুর লেক দেখাতে নিয়ে গেলেন আর আফসোস করতে লাগলেন আজ কেন আকাশে চাঁদ নেই। আমরা আফসোস করি না। অন্ধকার নেমে এলেও আকাশের শেষ লাল আভা লেকের পানিতে ভেসে থাকা গোলাপী পদ্মের সাথে লুকোচুরি খেলতে খেলতে একসময় মিলিয়ে যায়, এ সৌন্দর্যের সাথে আফসোস থাকে না। আমরা ফিরে আসি। বাংলোর বিশাল বারান্দায় নিচু একটা টেবিলের চারপাশে গোল করে সাজানো চেয়ারে আলো না জ্বালিয়ে চোখ বন্ধ করে সারাদিনের ক্লান্তি সরিয়ে দেবার চেষ্টা করি। চোখে ভেসে থাকে বাতাসে দুলতে থাকা পদ্মের নাচন, পদ্মের রঙ হয় একবার সাদা একবার সোনালি, পদ্ম উঠে আসে আমাদের হাতে, সোনালি তরল হয়ে ভিজিয়ে দিয়ে যায়। চুপ হয়ে থাকি আমরা, ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে যায় বাদুড়, একটা লক্ষ্মীপেঁচা ডেকে উঠে, অনুভবে অনুভবে সবার হৃদয়ের শূন্যতায় উজানগাঁ’র গলা হাহাকার নামিয়ে আনে, আমরা সবাই হয়ে যাই উকিল মুন্সি “...তুমি আমি জনমভরা ছিলাম মাখামাখি/আজ কেনো হইলে নিরল মেলো দুটি আখি রে পাখি... শোয়া চান পাখি, আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছো নাকী....।
আমরা কেউই কথা বলি না, এমনকি বেশি কথা বলার সোহেল ভাইও না। তারপরও উঠতে হয়, রাতের খাবারের আয়োজন নিজের বাংলোতে করেছে সাকলাইন। এক গাড়িতে ঠাসাঠাসি করে রওনা দিই। পাহাড়ি রাস্তায় উঁচু থেকে গাড়ি ঝাঁপ দিলে বাস্তবে ফিরে আসি সবাই। কেউ কোমর আর কেউ কেউ মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে ঝাল ঝাল মুরগির মাংস দিয়ে পেট পুরে ভাত খাই। আমাদের ঘুম পায়।
.........
ভোরে ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে। পুরোনো বিশাল দরজা খুলে বাইরে বেরোলেই ভেজা বাতাসের ছোঁয়া পাই। বারান্দা থেকে দৌড়ে পালায় চারটা কাঠবেড়ালী। খাবারের খোঁজে পাখিগুলো কিচির মিচির করতে থাকে। আমি একা একা হাঁটি, পাহাড় বেয়ে নিচে নামতে থাকি, বৃষ্টিহীন প্রকৃতিতে চা বাগান ধুসর বর্ণের, পূবদিকে দূরে একসারি ছায়া গাছ নিচে আসমানী রংয়ের কুয়াশা ধরে রাখে, সূর্যের আলো তেছরা ভাবে এসে সে রং ফালি ফালি করে কেটে দিয়ে যায়, আমি দেখতে থাকি। এক এক করে সবাই এসে যোগ দেয় আমার সাথে। মাতিস তার ক্যামেরা নিয়ে এখানে ওখানে ছুটে বেড়ায়, কোন সৌন্দর্য রেখে কোনটা ধরবে বুঝতে পারে না।
ধলুয়া কামালপুর সীমান্তের এই বাগানের ভারতীয় অংশে এতদিন শুয়ে ছিলেন আমাদের এক বীরশ্রেষ্ঠ। বাগানের কাছাকাছি সীমানা দেয়া বধ্যভূমি। নানা অজানা শহীদদের সন্মান জানাতেই হয়ত প্রকৃতি নিজের হাতে গড়ে তুলেছে এই বাগান। এরই মাঝে নাস্তার ডাক আসে। নাস্তা করেই আবার ছুটব।
.........
পাত্রখোলাকে বিদায় না জানিয়েই গাড়ি নিয়ে ছুটলাম ফুলবাড়ি, প্রাক্তন বিচারক প্রকৃতির প্রেমে সরকারি চাকুরী থেকে ইস্তফা নিয়ে এখন ফুলবাড়ি চা বাগানের দায়িত্বে। আমাদের আসার কথা শুনেই চা খেয়ে যাবার নেমন্তন্ন দিলেন। মাগুড়ছড়ায় বিস্ফোরণে যেখানে গর্ত তৈরি হয়েছিল ফুলবাড়ি বাগানের সে অংশে এখন পদ্ম ফুটে আছে। ভদ্রলোকের ফুলের সখ। চমৎকার সাজিয়েছেন ফুলের বাগান, তাতে প্রজাপতি আর মৌমাছিরা ঘুরে বেড়ায়। আমিও ঘুরতে থাকলাম ক্যামেরা নিয়ে। নানান রঙের আর বর্ণের ফুল, সব নাম জানি না। একদিন পূর্ণিমা রাতে উনার বাংলোতে থাকার কথা বললেন, বাউলের আসর বসাবেন। আমরা মানা করি না। হেঁটে হেঁটে গেলাম বাংলোর কাছে।
এখান থেকে লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে গাড়ি ছোটালাম। লাউয়াছড়ার মুল অংশে ভেতরে খাসিয়া রাজার বাড়ি, পিকনিক করতে আসা হাজার মানুষের ভীড় আর লাউডস্পিকারের শব্দ সহ্য করে বনে ঢোকা আর তার চাইতে লোভনীয় খাসিয়া রাজার বাড়িতে চা খাবার আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে লাউয়াছড়া পেরিয়ে শ্রীমঙ্গল ছাড়িয়ে সাতছড়ির দিকে যেতে থাকলাম।
আজকের রাত কাটাব সাতছড়িতে। স্থানীয় মন্ত্রীর অনির্ধারিত যাত্রা বিরতির কারণে সাতছড়ির বনবিভাগের বাংলোতে বেশ ভীড়। অবশ্য আমরা চলে আসাতে মিনিট পাঁচেকের ভেতর উনি চলে গেলেন।
বিকেলে ঢুকে গেলাম বনের ভেতর। ছবির মতন সুন্দর বন, নাম না জানা গাছ, তাতে পাখির বাসা। সূর্য ডোবার আগে আগেই ঘরে ফিরতে থাকল। কিচির মিচির করে খোঁজ নিলো আর কেউ বাকি রয়ে গেলো কি না। একটা বনমোরগ একটানা অনেকক্ষণ ডেকে গেলো। আমরা হাঁটলাম, হাঁটতে হাঁটতে ত্রিপুরা পল্লীতে চলে এলাম। হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নিলো ওরা। পাশের বাড়ির ছোট্ট বালক পর্দা সরিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে গেলো আমাদের। দুই বাড়ি পর ঘরের দাওয়ায় পড়তে বসে গেছে স্কুল বালিকা, সাথে সাথেই মনে পড়ল এ এলাকায় বিদ্যূৎ নেই।
অনেক রাত পর্যন্ত অন্ধকারে বাংলোর সামনে খোলা জায়গায় বসে আড্ডা দিলাম। বাংলোর বাবুর্চি “সাথীর মা” একটু পর পর চা’য়ের যোগান দিতে থাকল। একসময় ঠাণ্ডায় যখন কাঁপতে থাকলাম তখন উঠে ঘুমাতে গেলাম।
পরদিন আবারো খুব ভোরে ঘুম ভাঙল। ক্ষুধার্ত বানরের দল খাবারের দখল নিতে ঝগড়া বাঁধিয়েছে। আস্তে আস্তে বাংলো থেকে নেমে সামনের রাস্তা পেরিয়ে বনের ভেতর ঢুকলাম। ছোট্ট পায়ে চলা পথ, এলোমেলো, উঁচু নিচু, দুপাশ থেকে জংলী গাছ এসে ছুঁয়ে দিয়ে যায়, ধরে রাখতে চায়, আমরা হাত দিয়ে সরিয়ে সামনের দিকে হাঁটি, মাথার উপর বড়ো গাছের ছাউনি, তার থেকে টিপ টিপ করে বৃষ্টির মতন শিশির ঝরে পড়ে। আমরা সারি বেঁধে সে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হাঁটি, সে পথ একসময় শুকনো পাহাড়ি নালা পেরোয়, আমরা নালাতে নেমে যাই। নিচে সাদা বালি, শুকনো, বৃষ্টি এলেই স্রোতের কারণে এপথে হেঁটে যাওয়া যাবে না। মাকড়সার জাল হাত দিয়ে সরিয়ে আমরা বালিতে হাঁটতে থাকি, দুপাশে খাড়া দেয়াল, কিনারে বাঁশ গাছ, পেছনে বন। এরই ফাঁক গলে সূর্য উঁকি দেয়া শুরু করেছে। আমরাও বুঝতে পারলাম ফেরার সময় হয়েছে।
মন্তব্য
ভাল লাগল লেখাটা। আরেকটু বেশি বিবরণ থাকলে আরো বেশি ভাল লাগত, আর আরো কয়েকটা ছবি।
কৌস্তুভ
ধন্যবাদ কৌস্তুভ। আমার বিবরণ দেবার ক্ষমতা এপর্যন্তই।
...........................
Every Picture Tells a Story
মুস্তাফিজ ভাই, ছবি কই?
লেখায় যে বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে ছবি কতটূকু মারাত্মক হবে তা আঁচ করতে পারছি।
---- মনজুর এলাহী ----
লেখা দিলে ছবি নাই, ছবি দিলে লেখা নাই।
উজান গাঁ ছবি তুলেছে, আমার চাইতে ভালো তুলে সে। হয়তো ছবি ব্লগ দিবে।
...........................
Every Picture Tells a Story
এতক্ষণে ফেসবুক স্ট্যাটাসের মর্ম বুঝলাম...
বর্ণনা খুব ভাল্লাগলো, কিন্তু মাত্র দুটো ছবি!
কেনু কেনু কেনু??
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
গান গুলো রেকর্ড করে রাখলে ভালো হতো, এরপর থেকে একটা রেকর্ডার রাখবো সাথে। ছবি তোলা হয়েছে কিন্তু কনভার্ট করা হয়নি।
...........................
Every Picture Tells a Story
ইর্ষান্বিত!
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
আমি তাতেই খুশি, আরো বেশী ইর্ষান্বিত হবার কারন ঘটাচ্ছি। অপেক্ষা করো।
...........................
Every Picture Tells a Story
'ঈর্ষা' বানান ভুল হয়েছে।
---- মনজুর এলাহী ----
হু, কপি পেস্ট মারাও ঝামেলার
...........................
Every Picture Tells a Story
'কারণ' বানানও ভুল।
লেখা ভাল লেগেছে।
---------------
আলোর ছটা
---------------
আর হবেনা
...........................
Every Picture Tells a Story
প্রথম ছবিটা যে কি কাব্যিক, মায়াময়, তা বলে বোঝাতে পারব না। ছোটোবেলায় ঢাকার বাইরে গেলে তাই ভোরে উঁঠে হেঁটে বেড়াতে ভালো লাগত, যেন অদ্ভূত মায়ার জগতে ভেসে বেড়াচ্ছি। সেই সাথে দেশে গেলে আবারও চাবাগানে ঘুরতে যেতে হবে, তাও মনে করিয়ে দিলেন। আমার বাংলা লেখার অভ্যেস কম বলে লেখার সাহস আর সময়, দু'টোই হয়ে ওঠে না কিন্তু জেনে রাখবেন, আপনার তোলা ছবি আমি খুবই পছন্দ করি।
ভাল থাকবেন।
- শরতশিশির -
ধন্যবাদ শরতশিশির
...........................
Every Picture Tells a Story
বর্ণনা স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝামাঝি নিয়ে গেছে আমাকে। ক্যামেরার ল্যান্স অনেক কিছু ধারণ করে যা আমাদের চোখ একসাথে ধরতে পারেনা, তাই, নিজের চোখে দেখা জায়গাও ছবিতে আরো অনন্য হয়ে উঠে। আরো ছবি আর বর্ণনার দাবী জানালাম।
চেষ্টা থাকবে
...........................
Every Picture Tells a Story
এইখানে আপনার লেখাটা অন্য লেখাগুলোর চেয়ে অনেকটাই আলাদা মনে হলো, মুস্তাফিজ ভাই। ভীষণ কাব্যিক ঢঙে লেখা। ভালো লাগলো অনেক অনেক বেশি। কয়েকদিন পর কবিতা লিখতে শুরু করলে অবাক হবো না আর।
প্রথম ছবিতে- প্রকৃতির মাঝে দুজনে দুজনার...
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
অইতে পারে, তবে আমি কিছু খাইনাই কইলাম
...........................
Every Picture Tells a Story
লেখাটা চরম ভালু লেগেছে। বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে -এখনই ছুটে যাই। মাধবপুর লেকে পূর্ণিমা রাতে যাবার শখ বহু আগে থেকেই, আশা করছি এইবার অবশ্যই যাবো।
এইটা তো পুরনো ষড়যন্ত্র যে শাওন বদটা এই ট্যুরের ফটোব্লগ দেবে। আমি বোমা নিয়ে বসে আছি, ব্লগ দেয়া মাত্র ফাটিয়ে ওর লেখা-ছবি সব উড়িয়ে দেবো।
প্রথম ছবিটা জটিলস্য জটিল রোম্যান্টিক হয়েছে।
===============================================
রাজাকার ইস্যুতে
'মানবতা' মুছে ফেলো
টয়লেট টিস্যুতে
(আকতার আহমেদ)
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
শাওন তুলছে ৭০-২০০
...........................
Every Picture Tells a Story
আরো অনেক ছবি চেয়েছিলাম বটে কিন্তু লেখাটা পড়তে পড়তে এতো ভালো লাগলো যে এখন আর তীব্র অভিযোগ জানাতে ইচ্ছে করছেনা
প্রথম ছবিটা দারুণ,
আর লেখাটাও বেশ ভালো লাগলো ভাইয়া
---------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
ধন্যবাদ মউ, ছবি দেখার আরো জায়গা আছে, জানাবো সময়মত
...........................
Every Picture Tells a Story
আপনেরে একটা বগডুলের কিচ্ছা শুনাই। এইটা আমার লেখা না। ১ নম্বর অরিজিনাল বগডুলের দেশে কিচ্ছা
এক ছিল এক বগডুলের দেশ। তাদের সবাই বগডুল। একদিন সেই দেশের এক বগডুল ঘর বানাবার জন্য বাঁশঝাড় থেকে একটা বাঁশ কাটল। কেটে ঝাড় থেকে বাঁশ বের করার জন্য শুরু করল বাঁশের আগায় ধরে টানা। কিন্তু সে কোনোভাবেই ঝাড় থেকে বাঁশ বের করতে পারে না বলে তার ভাইয়েরাও এসে হাত লাগালো। কিন্তু বাঁশের আগায় ধরে টেনে যখন সাত ভাইও বাঁশটা বের করতে পারলো না তখন পুরো গ্রামের লোক এসে শুরু করল বাঁশের আগায় ধরে টানা। কিন্তু তারাও পারল না
এমন সময় সেই বাঁশঝাড়ের পাশের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল এক বুদ্ধিমান লোক। সে দেখল ঝাড়ের মধ্যে একটা বাঁশের আগায় ধরে পুরো গ্রামের লোক টানছে। সে কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল- তোমরা কী করো?
তারা উল্টা তারে ধমক লাগায়- হালার বগডুল। দেখো না ঝাড় থেকে কাটা বাঁশ বের করার চেষ্টা করি?
বুদ্ধিমান লোকটা কতক্ষণ তাদের কাজ দেখে কাছে গিয়ে বলল- তোমরা সরো। আমি বের করে দিচ্ছি
বলে বাঁশের গোড়ায় ধরে এক টান দিতেই ঝাড় থেকে বাঁশ বের হয়ে এলো
তার এই কাণ্ড দেখে পুরো গ্রামের লোক অবাক। সারা গ্রামের লোক যে কাজ পারল না; সেই কাজ এই লোক এক হাতে করের ফেলল?
তার মানে এর তো অনেক অনেক গুণ?
তাইলে এখন কী করা?
এমন গুণী লোককে হাতছাড়া করা ঠিক না
তারগুণটাকে গ্রামের মধ্যে রাখতেই হবে
কীভাবে রাখবে?
গুণী লোকটার গুণ ধরে রাখার জন্য সব বগডুল বসে মিটিং করে একটা বুদ্ধি বের করল। বুদ্ধিটা হলো এই লোকটারে ঢেঁকিতে ছেঁচে রস খাবে পুরো গ্রামের লোক
তাহলে এর বুদ্ধি আর গুণ সমানভাবে সবার মধ্যে যাবে
যেই ভাবা সেই কাজ
বগডুলরা লোকটারে ধরে। ঢেঁকিতে ছেচে রস বের করে খেয়ে ফেলল...
০২
মুস্তাফিজ ভাই যখন একেকটা কাজের নমুনা দেখা তখন মনে হয় নিজে বগডুল হয়ে যাই। ইনারে ছেচে রস খাওয়া ছাড়া এইসব গুণ নিজের মধ্যে আনার আর কোনো উপায় নাই
০৩
জয়তু
লেখা আর ছবিকে আলাদা করার সিন্ধান্ত স্বাগতম
০৪
আপনার কাছেই শুনলাম। এই সোহেল ভাই হলেন জাকির হোসেন সোহেল
যাকে নিয়ে কয়েক ডজন গল্প লিখে ফেলা যায় নিমিষেই
যে কোনোদিন দেখবেন তাকে নিয়ে আমি ঢাউস কিছু একট নামিয়ে ফেলব
মন্তব্য করতে যেয়ে পুরো একটা পোস্ট নামিয়ে দিলেন, ধন্যবাদ দাদা।
সোহেল ভাই, ঠিক ধরেছেন উনিই জাকির হোসেন। গতবার যখন জাফ্লং গিয়েছিলাম সেসময় পরিচয়। উনি আপনার সম্পর্কে বলেছেন "লীলেন এমন এক লোক যে আমার প্রতি জন্মদিনে একমাত্র শুভেচ্ছাটি পাঠায়"।
...........................
Every Picture Tells a Story
মুস্তাফিজ ভাই ,লেখা নিয়ে কিছু না বলি?
কিভাবে পারেন?
পূর্নিমার সময়ের কোন ছবি আছে?
দেবেন?
যখন গিয়েছিলাম চাঁদের বয়স সেসময় দিন তিন/চার। আমার প্রথম দিককার লেখায় (সম্ভবত প্রথম) জোৎস্না নিয়ে (ব্লু মুন) লেখা আছে, সেখানে পূর্নিমার ছবি আছে।
...........................
Every Picture Tells a Story
হিংসা হচ্ছে। এত কার্পণ্য কেন, আরো ছবি দ্যান।
ধন্যবাদ। শুধু ছবি নিয়ে একটা পোস্ট হয়ে যাবে।
...........................
Every Picture Tells a Story
দিয়ে দিন, মুস্তাফিজ ভাই। অধীর অপেক্ষায় রইলাম। আপনার করা সুন্দরবন - ৩ ফটোব্লগটি আমি আমার লন্ডনী (ও আধা-বাংগালী) কাজিনকে পাঠিয়েছিলাম, এখন ও সুন্দরবন যেতে চায়। এবার না হোক চাবাগানে যাবার আবদার করবে, সাথে আমিও! ঃ)
- শরতশিশির -
ধন্যবাদ, হয়ে যাবে।
...........................
Every Picture Tells a Story
দারুণ! তবে ঐ, ছবির আশায় রইলাম।
ধন্যবাদ দেবনাথ দা। ছবি একটু সময় নেবে।
...........................
Every Picture Tells a Story
এই লেখায় ছবির প্রয়োজন ছিলনা, আপনার ছবি বরং আলাদাই দিতেন, যা বর্ননা দিয়েছেন তাতে পুরো পরিবেশের আমেজটাই পেলাম,
আর ছবির কথা নতুন করে বলার কিছু নেই, কেমন একটা স্বপ্ন স্বপ্ন শান্তির নীল আলো ছবিটাতে, দেখে কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হয়, তা প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
ধন্যবাদ তাহসিন।
"স্বপ্ন স্বপ্ন শান্তির নীল আলো" ছবিটা উজান গাঁ এর তোলা
...........................
Every Picture Tells a Story
লেখা আপনার তো? রসিকতা করি, আবার মাইন্ড খাইয়েন না!
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
না, ঐটাও বেড়াতে যেয়ে কুড়িয়ে পাওয়া
...........................
Every Picture Tells a Story
সবমিলিয়ে সুন্দর। আপনার অন্য লেখাগুলো থেকে একটু অন্যরকম।
ব্রিজের উপর থেকে গাড়ি নিয়ে লাফ দেয়ার ঘটনাটা এখনো মনে পড়লে বুক কাঁপে। আপ্নে আসলেই একটা পাগল।
তুমি আমাকে পাগল বললা? মনে থাকবে, আরেকবার গাড়িতে উঠলে টের পাবা।
...........................
Every Picture Tells a Story
মাত্র দুইটা ছবি ? এতো কিপটেমি করলে ক্যামনে কি মুস্তাফিজ ভাই ?
--------------------------------------------------------
--------------------------------------------------------
...........................
Every Picture Tells a Story
এই পুস্প নগরে আমিও গিয়েছিলাম। মনে আছে।
দল বেঁধে অনেক কিছুই করা হয় না। তবে মাধবপুরে একবার দল বেঁধেই গিয়েছি। পরে আরো বার দুই, একা। দুভাবেই উপভোগ করেছি। তবে নির্জনতাটাই মনে আছে বেশি।
ছবি দেখলে মুগ্ধ হই। আর সে ছবি যদি হয় শিল্পীর তোলা, তাহলেতো কথাই নেই। আপনার ছবি দেখে আমি শিল্পের সুষমা পাই।
এর আগেও অনেকবার বলেছি আপনাকে, লেখা নিয়ে যে দোটানায় আপনি ভোগেন সেটা একেবারেই অদরকারি। আপনি লিখেন চমৎকার। আপনার ছবির মতোই ঝরঝরে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনার লেখাগুলোতে বলেছি, ভ্রমণ নিয়ে লেখাতেও বলেছি। আজকে আবার বলি।
মোটাদাগে যখন সাহিত্য নিয়ে আলোচনা হয়, বলা হয় দৃশ্যকল্পের কথা। একটা লেখা পড়ে পাঠক কি দেখতে পারছে তার মনের চোখে। কি ভাসছে তার চোখের সামনে? এই দেখাতে পারার ক্ষমতাটাই আসল। পাঠকের সাথে লেখকের যোগাযোগটা নির্ভর করে এই ক্ষমতার উপর।
আপনার লেখা খুলি ছবি দেখবো বলে। আজও খোলেছি। আপনি ছবি দেননি আজ। তবু আমি সাতছড়ি, পাত্রখোলাকে দেখলাম আমার চোখের সামনে। দেখলাম এক যুগ আগে বিকেলের আলো ম্লান হয়ে গেলে পেছনে ফেলে আসা মাধবপুরের জলাশয়, তার টলটলে জলে পড়া আমার দীর্ঘ ছায়া...
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ধন্যবাদ আলবাব।
এমন জায়গায় বারবার যাওয়া যায়। সৌন্দ্রর্য ঋতু ভেদে বদলাতে থাকে তাই মন্দ লাগেনা। আর নির্জনতা? আমরা যারা ঢাকায় থাকি তাদের কাছে টঙ্গী, কাঁচপুর, সাভার বা বুড়িগঙ্গা পেরুলেই নির্জনতা ধরা দেয়। পাত্রখোলা সে তুলনায় স্বর্গ।
...........................
Every Picture Tells a Story
দূর্দান্ত বর্ণনা। না যেতে পারার দুঃখ ঘুঁচলো কিছুটা। তবে আফসোস হলো তারচেয়ে বেশি।
আপনার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার চেয়ে আনন্দের কিছু কমই আছে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
শুনে খুশি হইলাম।
আমি যাবার আগে আপনাকে কিন্তু জানিয়েছি।
আরেকবার ভাবেন, গাড়ি না মার্চে নেপাল?
...........................
Every Picture Tells a Story
Lina Fardows
ছোট্ট পায়ে চলা পথ, এলোমেলো, উঁচু নিচু, দুপাশ থেকে জংলী গাছ এসে ছুঁয়ে দিয়ে যায়, ধরে রাখতে চায়, আমরা হাত দিয়ে সরিয়ে সামনের দিকে হাঁটি, মাথার উপর বড়ো গাছের ছাউনি, তার থেকে টিপ টিপ করে বৃষ্টির মতন শিশির ঝরে পড়ে।
এত সুন্দ র বর্ণনা। যে মনে হল আমিও সাথে গিয়েছিলাম। খুব যেতে ইচ্ছে ক রছে -------------- কি ভাবে যাওয়া যায়?
Lina Fardows
যেতে চাইলে ইচ্ছাই যথেষ্ঠ। বাংলাদেশে এমন সুন্দর জায়গার অভাব নাই।
...........................
Every Picture Tells a Story
অসাধারণ লাগলো লেখাটা। একেবারেই অন্যরকম, আপনার বাকি লেখাগুলা থেকে। আর প্রথম ছবিটা মারাত্মক সুন্দর লাগলো!
ধন্যবাদ প্রহরী।
...........................
Every Picture Tells a Story
এসব লেখা'র সাথে ছবি'র আসলে প্রয়োজন নেই। বর্ণনা
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
এতক্ষণে কাজের কথা বললা একটা, ছবি তোলাই ছেড়ে দেবো
...........................
Every Picture Tells a Story
তাইলে এরাম লেখা ২দিন পর পর দিতে হইবে। নাইলে কইলাম ফটগফুরিতে ছাড়ন নাই
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
পেটের চিন্তা না থাকলে প্রতিদিনই দেয়া যেত
...........................
Every Picture Tells a Story
মারাত্মক হয়েছে!
আপনার লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়ে রইলাম কিছুক্ষণ
ধন্যবাদ।
...........................
Every Picture Tells a Story
প্রথম ছবি খানা এমন যে, এমন জায়গায় সব মানুষই একবার যায়(কল্পনায়)
-মজনু
ধন্যবাদ মজনু ভাই
...........................
Every Picture Tells a Story
- চমৎকার মুস্তাফিজ ভাই। খালি ছবিতে না, লেখায়ও মাত করে দিতে পারেন আপনি।
কতো জায়গা যে অদেখা রয়ে গেলো দেশের ভেতরেই! এক এক করে শেষ করতে হবে সবগুলো, সময় ফুরোবার আগেই।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
জলদি দেশে আসেন, সময় ফুরোবার আগেই
...........................
Every Picture Tells a Story
চমৎকার জীবন্ত বর্ণনা। এরকম লেখা পেলে মাঝে মাঝে ছবি না পাওয়ার দুঃখ ভোলা যায়।
ছবির প্রশংসা আর আলাদা করে কী করবো!
আপনার ছবি সবসময়ই কিছু কিছু শব্দ আর পারিপার্শ্বিকতা-আলো-বাতাস ধরে রাখে, তারপরও এরকম ভ্রমনে একটা রেকর্ডার সঙ্গে রাখা আসলে খুব জরুরী। আজকালকার পয়েণ্ট-অ্যাণ্ড-শুট ক্যামেরাগুলো সঙ্গে থাকলে ওগুলো দিয়েও ভিডিও ক্লিপ তুলে রাখা যায়।
ধন্যবাদ, আসলে ভিডিওর প্রতি আমার আগ্রহ কম, রেকর্ডার থাকলে সুবিধা। সেদিন রাতের গান ছাড়াও চমৎকার কিছু পাখির ডাক তুলে রাখা যেত।
...........................
Every Picture Tells a Story
আমি গিয়েছি ওখানে। কিন্তু আপনার সাথে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অন্যরকম। সশরীরে না হোক, ঈর্ষণীয় একটা মানসভ্রমণের জন্য ধন্যবাদ।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
ধন্যবাদ বুনোহাঁস, বেটার নেক্সট টাইম
...........................
Every Picture Tells a Story
দুই দিন থাকলাম আশায় আশায়, মুস্তাফিজ ভাই হয়তো আরও কয়েক্টা ছবি দেখতে দিবেন। খালি লেখা পড়ে ক্যান জানি পেট ভরেনা বুড়া ভাই, দুই খান ছবি দেখে আরও ছবির খিদা বাড়লো।
মামুন ভাই, আজকেই ছবি পাবেন আশাকরি
...........................
Every Picture Tells a Story
লেখা বড় সুন্দর হইসেগো ভাইজান!
প্রথম ছবিটা দেখে পেম পেম ভাব হচ্ছে!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
ধন্যবাদ বালিকা
আমারও
...........................
Every Picture Tells a Story
মুস্তাফিজ ভাই,
আমি যতদূর জানি (আমার জানায় ভুলও থাকতে পারে, আগেই বলে নিচ্ছি) পাত্রখোলার কাছে যে জায়গায় বীর শ্রেষ্ঠ হামীদুর রহমান শুয়ে ছিলেন সেটা ত্রিপুরার আম্বাসা নামক একটা স্থানে। জায়গাটা আমাদের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় ধলই (ধলুয়া কামালপুর না) সীমান্ত ফাঁড়ীর ওপারে। আর ধনুয়া কামালপুর নামে একটা জায়গা আছে জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলায়। সেটাও একটি সীমান্ত জনপদ। আর সেখানেও মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি অন্যতম সমর অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
নতুন মন্তব্য করুন