ভোর পাঁচটায় ঘুম ভেঙে গেলে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলাম, বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি। শুনেছি জুনের এসময়টাতে ভূটানে বৃষ্টি হয় প্রচুর। ঠাণ্ডাও থাকে। ভূটান এমনিতেই ঠাণ্ডা, পারো আর থিম্পুতে যে হোটেলে ছিলাম কোনোটাতেই এসি তো দূরের কথা ফ্যানও ছিলো না। গরম ঠিক না লাগলেও ভেতরে কেমন যেন একটা গুমোট মতো ভাব। টিপ টিপ বৃষ্টি আর ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা বাতাস মন্দ লাগছিলো না আমার।
কতক্ষণ বসেছিলাম মনে নেই। পেছনে পায়ের শব্দে ফিরে দেখি হোটেলের ম্যানেজার এসে দাঁড়িয়েছে। ভারত থেকে হোটেল ম্যানেজমেন্টের উপর পড়াশুনা তার। আঙুল তুলে সামনে একটা বাড়ি দেখিয়ে জানালো ওদের। হাঁটতে যাবো শুনে আমার সঙ্গী হতে চাইলো। গড়পড়তা ভূটানিরা ভালোই, নম্র, ভদ্র। হোটেল থেকে নেমে রাস্তায় আসার আগেই বৃষ্টি উধাও, মেঘ তখনও ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিলো, সামনের রাস্তা একটু পর পর দেখা দেয় আবার মেঘে মিলিয়ে যায়। আমরা হাঁটতে থাকি। এরই মাঝে দূর থেকে টকটক শব্দ তুলে একপাল ঘোড়া যেনো মেঘ ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো। আমাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ম্যানেজার হেসে বললো তুমি এখানেই বসে থাকো, সামনে ঐ ওখানে তাকিয়ে, উপরে যেখানে মেঘ গুলো কুন্ডলী পাকিয়ে আছে ঠিক সেখানে। ঐটা তাকসাং মনেস্ট্রি, তোমরা যাকে বলো টাইগারনেস্ট। গুরু পদ্মসম্ভবা তিব্বত থেকে বাঘিনীর পিঠে চড়ে এখানে এসে ঐখানে এক গুহাতেই একাধারে তিন মাস ধ্যানে ছিলেন।
কথা মাঝখানে আটকে দিয়ে বলেছিলাম পদ্মসম্ভবাতো বেঁচে ছিলেন ৮ম শতাব্দীতে, যতদূর শুনেছি টাইগারনেস্ট হয়েছে তারও প্রায় ৯শ বছর পর! তাহলে? আমার কথায় মজা পেয়েছিলো সে। ওর থেকে শুনেছি এক বিশাল গল্প। পদ্মসম্ভবার জন্ম হয়েছিলো পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার কোনো এক গ্রামে, সেখান থেকে তিব্বতে চলে যান পদ্মসম্ভবা, দেহত্যাগ করেন ভারতের হিমাচলে, ভূটানসহ এ অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক তিনি, অনেকে তাই পদ্মসম্ভবাকে ২য় বুদ্ধ বলে থাকেন। ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে পদ্মসম্ভবা একেক সময় একেক জনের দেহ ধারণ করে মর্তে বিচরণ করতেন। উনি পারোতে ধ্যানে বসেছিলেন ৮ম শতাব্দীতেই কিন্তু এই মনেস্ট্রি তৈরি হয়েছে ১৬৯২ সালে। চতুর্থ দেবরাজা তেনজিং নিজের উদ্যোগে তৈরি করিয়েছেন এই মনেস্ট্রি। স্থানীয়দের বিশ্বাস পদ্মসম্ভবা সেসময় দেবরাজা তেনজিং-এর দেহ ধারণ করে ছিলেন! পদ্মসম্ভবা ছিলেন বলেই অদ্ভুত অদ্ভুত কাণ্ড ঘটত সেসময়। পাহাড়ের উপরের সেই গুহার আশে পাশে উড়ে বেড়াত ফুলেরা, গুহা থেকে বের হয়ে ঘুরতে ঘুরতে বাতাসে মিলিয়ে যেত। কিংবা আশে পাশে ঘুরে বেড়ানো মেঘেরা পুরাণের বিভিন্ন চরিত্রের রূপ ধরে ভেসে থাকত।
মেঘের কথা আসতেই আমি ধোঁয়া ধোঁয়া আবছা নীলচে সাদা মেঘের দিকে তাকিয়ে থেকেই দেখতে পাচ্ছিলাম তাকসাং-এর উপর থেকে এর সরে যাওয়া। একটু পরই যেন জাদুকরের রুমালের আঁচল ঘুরিয়ে আনার মতন মেঘ সরে যেয়ে তাকসাং চোখের সামনে ফুটে উঠতে থাকলো। কী অদ্ভুত সেই দৃশ্য। আর তখনই বুঝতে পেরেছিলাম আর কিছুক্ষণ পর আমি নিজেই হাঁটা দিবো সেদিকে।
ছোট বড় মিলিয়ে দলে আমরা ১৮ জন। জুনের ২৪ তারিখ পারোতে নেমে ১ ঘণ্টার ড্রাইভে সোজা চলে গিয়েছিলাম থিম্পুতে। থিম্পু বর্তমান ভূটানের রাজধানী, এর আগে ছিলো পারো, তারও আগে রাজধানী ছিলো পুনাখা। থিম্পুর সবচাইতে বেশি যে জিনিস আমাকে আকর্ষণ করেছিলো তা হলো এখানে কোন ট্রাফিক লাইট নেই! ভূটানের মোট জনসংখ্যার এক দশমাংশ প্রায় ৮০ হাজার লোকের আবাস হলেও আমার কাছে থিম্পুকে রাজধানী হিসাবে খুব কম লোকের আবাস বলেই মনে হয়েছে। পরদিন ভোরে ওদের একটা কাঁচা বাজারে গিয়েছিলাম, বাজার করতে এসে সেখানে কারো বেজার মুখ দেখিনি, এজন্যই হয়তো ভূটানীরা পৃথিবীর অষ্টম সুখী দেশ হিসাবে চিহ্নিত। থিম্পুতে একরাত কাটিয়ে পারোতে ফিরেছি গতকাল। থিম্পু থেকে পারো ড্রাইভ খুবই আনন্দদায়ক। রাস্তার দুপাশে কখনও খাড়া পাহাড় কখনও ঢালু হতে হতে নিচে নদীতে গিয়ে মিশেছে। রাস্তাটায় এমন ঘোরপ্যাঁচ যে নদী একবার ডানে আর পরমুহূর্তেই বামে চলে আসে। রাস্তায় লোকজন ছিলো খুবই কম, মাঝে মাঝে দু এক জনকে আপেল, পীচ কিংবা মরিচ নিয়ে বসে থাকতে দেখেছি। ওদের মরিচগুলা চমৎকার, ইঞ্চি ছয়েক লম্বা আর ঝাল খুবই কম। থিম্পু আর পারো দু জায়গাতেই সেই মরিচ সবজি হিসাবে রান্না করে দেয়া হয়েছিলো আমাদের।
পারোতে আমাদের মূল আকর্ষণ ছিলো তাকসাং মনেস্ট্রি বা টাইগারনেস্টে হেঁটে উঠা। আমাদের ট্যুর অপারেটর আগেই জানিয়েছিলো যে পারোতে আমরা যে হোটেলে উঠব সেখান থেকে টাইগারনেস্ট পরিষ্কার দেখা যায় (কাকতালীয় ভাবে আমাদের হোটেলের নামও টাইগারনেস্ট), এটা যে এত পরিষ্কার দেখা যাবে তখন বুঝতে পারিনি। আসলে ভূটানের মোট ২০টি জেলা শহরই পাহাড়ের উপত্যকায়। দুপাশে খাঁড়া আকাশছোঁয়া পাহাড়ের মাঝে এক চিলতে সমতল, তাতেই সব বাড়িঘর দোকানপাট। সে হিসাবে পারোর উপত্যকা বেশ বড়, এর এক পাশে ওদের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। পাহাড়ের ভাঁজ থেকে কাত হয়ে যখন বিমান নেমে এসে টারমাক ছোঁয় দেখতে বড়ই আনন্দ লাগে। এই উপত্যকার একপাশের পাহাড়ের প্রায় সমতল ঘেঁষে আমাদের হোটেল আর ঠিক অন্যপাশের একদম উঁচুতে টাইগারনেস্ট।
আমাদের ড্রাইভার ছেলেটার নাম কীনলে। কাজ চালানোর মতন ইংরেজি বলতে পারে। কীনলে গতকাল জানিয়েছিলো যে টাইগারনেস্ট যদিও বত্রিশ/তেত্রিশশ মিটার উপরে কিন্তু উপত্যকার সমতল থেকে এটা মাত্র নয়শ মিটারের মতন। অর্থাৎ আমরা এখন মোটামুটি তেইশ/চব্বিশশ মিটার উপরে আছি, পাহাড়ের গোড়া থেকে এই নয়শ মিটার উঠতে আমাদের পাড়ি দিতে হবে ছয় কিলোমিটার রাস্তা। মোটামুটি অর্ধেক রাস্তায় একটা ক্যাফেটেরিয়া আছে, আর ক্যাফেটেরিয়া পর্যন্ত ঘোড়ায় চড়ে যাওয়া যায়। ঘোড়া ভাড়া পাঁচশ গুল্ট্রাম। গুল্ট্রাম ভূটানি মুদ্রা, ভারতীয় মুদ্রার সাথে পেগিং করা, এক গুল্ট্রাম=এক রুপি, এক ডলার=তেতাল্লিশ গুল্ট্রাম। আমরা তখনই ১৩টা ঘোড়া বুক করে রাখতে বললাম। ঠিক হলো হালকা জ্বরে পড়া অমিত ওর মায়ের সাথে হোটেলে থেকে যাবে, বাচ্চা আর মেয়েরা ঘোড়ায় চড়ে উঠবে আর বাকি ৩জন হেঁটেই উঠব।
সকাল সাড়ে সাতটার মাঝেই আমাদের সবাই এক এক করে নিচে নেমে এলো। নাস্তার টেবিলে পাহাড়ে উঠার সতর্কতা নিয়ে হালকা কথাবার্তা সেরে রওনা দিলাম আমরা। হোটেল থেকে তিন কিলোমিটার আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু পথ কীনলে আমাদের গাড়িতে নিয়ে গেলো, ভোরে স্রোতের শব্দ শোনা সেই নদীটাও পেরিয়ে এসে তাকসাং পাহাড়ের নিচে সমতলে এসে দাঁড়ালাম। সার বেঁধে আমাদের ঘোড়া গুলো দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। এক পাশে পাহাড়ি নালা আটকে পানি সরবরাহের কল বসিয়ে রাখা হয়েছে। কীনলের হাতে ওদের ঘোড়ায় তোলার দায়িত্ব দিয়ে নালাটাকে পাশ কাটিয়ে হাঁটা শুরু করলাম আমি। আমি জানি আমার অর্ধেক সময়েই ওরা উপরে উঠে যাবে।
পানির কল পেরুনোর সময় ভেতর থেকে ঢং করে ঘণ্টা বেজে উঠলো। ঘুরে এসে ভালো করে দেখলাম ভেতরটা। নালার মাথায় চৌকোনা ঘর, আমি এটাকে প্রথমে পানি সংরক্ষণাগার ভেবেছিলাম। আসলে এর ভেতর একটা বড় সাইজের প্রেয়ার হুইল বসানো, প্রেয়ার হুইলের নিচে পাখা আছে, পানির স্রোত পাখা ঘোরায় আর সাথে ঘুরে প্রেয়ার হুইল, হুইলের উপরে একটা কাঁটা সামনে বাড়ানো আর হুইলের সামনে একটা ঘণ্টা ঝোলানো, প্রেয়ার হুইলটা প্রতিবার ঘোরার সময় তাই একবার করে ঘণ্টা বাজিয়ে যায়। স্রোত বেশি থাকলে ঘণ্টা দ্রুত বাজে তাতে আশেপাশের লোক বুঝতে পারে ঢল নামছে।
সকালে বৃষ্টিতে পাহাড়ি ট্রেইল ভেজা ভেজা। এখনও চড়াই শুরু হয়নি। আশেপাশে হাঁটছে বেশ কয়েকজন, বেশির ভাগই স্থানীয়। ওরা জানালো প্রত্যেক ভূটানিই জীবনে কমপক্ষে একবারের জন্য হলেও এই তীর্থে আসার চেষ্টা করে। আমি ওদের সাথে হাঁটার তাল মেলাতে পারি না, ওরা পেরিয়ে গেলে আবার নূতন কারো দেখা পাই। পাহাড়ে উঠার মুখেই বিশাল এক পাথরখণ্ড, তাতে রঙ দিয়ে মন্ত্র লেখা, পাশের অপেক্ষাকৃত ছোট পাথরে খোদাই করা মন্ত্র, অতি পরিচিত “ওঁম মানি পদ্মে হুম” মনে হলো না। একজন জানালো এটা “ওঁম আ হুম বজ্র গুরু পদ্মে সিদ্ধি হুম”।
পাথর পেরুলেই আসল চড়াই শুরু। ঘাম বেড়িয়ে ফুল হাতা গেঞ্জি চুপচুপ করছে। অনভ্যাসের কারণে এক পা এক পা করে উঠছি, মনে মনে ভাবছি বয়েস হয়েছে ঢের। কয়েকপা উঠি, মিনিট খানিক জিরিয়ে নিই, আবার উঠি। এভাবে শ’খানিক মিটার উঠার পর টপাটপ ঘোড়ার দল আমাকে পেছনে ফেলে গেল। ওদের সবার মুখ হাসি হাসি। চট করে একজনের হাতে আমার ষোল কেজি ওজনের ক্যামেরা ব্যাগ ধরিয়ে দিলাম। আহ কী শান্তি, যদিও এখনও হাতে থাকা ক্যামেরা আর লেন্সের ওজন ছয় কেজির উপর। ঘোড়ার দলের পিছু পিছু আমাদের দলের একজন হেঁটে এসে যোগ দিয়েছে, বাকি জন রণে ভঙ্গ দিয়ে ফিরে গেছে হোটেলে।
গায়ের গেঞ্জি খুলে কোমরে পেঁচিয়ে নিই। এখানকার ট্রেইল খুব সরু, হাত দুয়েক চওড়া, আমার ডানপাশে খাড়া পাহাড় আর বামে ক্রমশ ঢালু হয়ে নিচে নেমে গেছে। ঢালু অংশে কয়েকহাত নিচে নূতন এক ধরনের প্রেয়ার ফ্ল্যাগ দেখলাম। অনেকগুলা ১৫/২০ ফুট লম্বা কাঠের দণ্ডে সেই পরিমাণ লম্বা আর ৭/৮ ইঞ্চি চওড়া মন্ত্র লেখা কাপড় খাড়াভাবে বাঁধা, বাতাসের তোড়ে কাপড় উড়ছে, অনেকদিন যাবৎই উড়ছে বলে ছিঁড়তে ছিঁড়তে কিছু কিছু পতাকায় শুধু ১৫/২০ ফুট লম্বা আর কয়েক ইঞ্চি চওড়া সুতা অবশিষ্ট আছে। তীর্থে আসা একজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম এগুলো মৃতদের স্মরণে লাগানো হয়েছে। কেউ মারা যাবার পর এখানে মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলাই নিয়ম, দেহ পুড়িয়ে ফেলার পর ওরা এসব তীর্থে এসে কিংবা বাড়ির কাছে কোন উঁচু পাহাড়ে এমন পতাকা লাগিয়ে থাকে। পতাকার গায়ে সাত লাইনের ধর্মীয় স্তোত্র, যার মানে অনেকটা গুরু পদ্মসম্ভবার স্তুতির পাশাপাশি আশীর্বাদ প্রার্থনা।
আমরাও আত্মার শুভ কামনা জানিয়ে উঠে পড়লাম। দুপাশে অজানা হাজারো পাহাড়ি ফুল, প্রজাপতি। আমরা উঠছি। জিরিয়ে নিচ্ছি, আবার উঠছি। আরো কয়টা ঘোড়া পেরিয়ে গেলো আমাদের। সহযাত্রীদের ক্যাফেতে নামিয়ে আমাদের ঘোড়া গুলোকেও নিচে নেমে যেতে দেখলাম। তবুও আমাদের উঠা শেষ হয় না। সাথী হিসাবে এবার পেলাম এক ভূটানি পরিবার। কর্তা সরকারি চাকরির সুবাদে পারোতে থাকেন। বাড়ি ভূটানের পূবে বুমতাং, গুরু পদ্মসম্ভবা এই বুমতাঙ্গেও ধ্যানে বসেছিলেন। নিজের রিটায়ার করার সময় হয়েছে তাই পরে সময় হবে কি না তাই ভেবে মা, বোন, আর ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসেছেন তীর্থে। বৃদ্ধা মার খুব কষ্ট হচ্ছে উঠতে। এক পা উঠেন একটু জিরিয়ে নেন, আবার উঠেন, আমাদের মতনই গতি। ছেলেমেয়েগুলা তরতর করে কিছুটা উঠে বৃদ্ধার জন্য বসে থাকে, উৎসাহ দেয়। বেশি নেকির আশায় বৃদ্ধা হেঁটে উঠারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উনাকে দেখে উৎসাহ পাই, আমাকে গাছের ডাল ভাঙতে দেখে বৃদ্ধার ছেলে কোমর থেকে ভোজালি বের করে চমৎকার এক লাঠি বানিয়ে দেন, সেই লাঠিতে ভর দিয়ে উঠতে থাকি আমি।
শুরুর ঘণ্টা দুয়েক পর একটা সমতল মতন জায়গায় এসে পৌঁছালাম। ঘোড়ার দৌড় এপর্যন্তই। বিশাল এক প্রেয়ার হুইল এখানে। দু’একটা ঘোড়া নিচে নামার অপেক্ষায়। মাটিতে কাপড় বিছিয়ে কেউ কেউ স্যুভেনিওর বিক্রির আশায় বসে আছে। এখানেও চীনা জিনিসপত্রের ছড়াছড়ি। পাহাড়ি এলাকায় যত উপরে উঠা যায় জিনিসপত্রের দামও একইভাবে বাড়তে থাকে। ওদের পাশ কাটিয়ে একটু সামনেই ক্যাফেতে পৌঁছে গেলাম। পাহাড়ের খাঁজে ছোট্ট একটা চাতাল, তারই মাঝে ট্যুরিজম বোর্ডের ক্যাফে, একটা স্যুভেনিওর শপ, চমৎকার কয়েকটা টয়লেট, ছোট্ট একটা উঠোন, উঠোনে কাঠের টুল বেঞ্চ। আমাদের পুরো দল আর দু’এক জন পর্যটক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে তাতে। আমরাও বসে গেলাম।
আমরা যেই পাহাড়ে তার পাশের পাহাড়ে টাইগারনেস্ট। ক্যাফের বেঞ্চে বসে সামনে পাশ থেকে টাইগারনেস্ট চমৎকার দেখা যায়। ক্যাফে থেকে কিছুটা উপরে উঠে আবার ঠিক ততটা নিচে নেমে মাঝখানের একটা পাহাড়ি ঝর্না পেরিয়ে পাশের পাহাড়ে যেতে হয়। দুপাশের পাহাড়ের মাঝখানে এই ঝর্ণা পেরুতে ছোট্ট একটা পুল আছে। ক্যাফে থেকে ঝর্ণাটা দেখা না গেলেও এর শব্দ ঠিকই এখান থেকে শোনা যাচ্ছে। এখানে এক কাপ চা অথবা কফি আর সাথে বিস্কুটের দাম ৭০ গুল্ট্রাম। দুপুরের ভেজিটেরিয়ান বুফে ৩৬০ গুল্ট্রাম। দুপুরের খাবারের জন্য উপরে উঠার আগেই অর্ডার দিয়ে যেতে হয়। টাইগারনেস্ট ঘুরে এসে নিচে নামতে নামতে আমাদের বিকেল হয়ে যাবে দেখে খাবারের অর্ডার দিয়ে দিলাম।
এরপর আবার চড়াই উৎরাই। ক্যাফের পরের ট্রেইল অসম্ভব সুন্দর। দুধারে একটু পর পর একটার উপর একটা ছোট বড় পাথর সাজিয়ে রাখা। অগুনতি প্রেয়ার ফ্ল্যাগ দুধারে সাজানো। দুপাশের গাছ গুলো নিচু হয়ে চমৎকার ছায়া দিচ্ছে। ট্রেইলের উপর ঝরে পড়া পাতার স্তূপ। পাথরের ফাঁক দিয়ে নামা অগুনতি পানির ধারা। হাঁটার কষ্ট ভুলিয়ে দিতে যার কোনো জুড়ি নেই। একটু পর পর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে সামনে আগাতে থাকি। মিনিট চল্লিশেক এভাবে যাবার পর হঠাত একটা বাঁক ঘুরেই বড় একটা পাথরের পেছনে দেখা মেলে ‘সিম্বল অব ভূটান’ টাইগারনেস্টের। আমি থমকে দাঁড়াই, আমার সামনে দুই পাহাড়ের মাঝখানে শ’খানিক মিটার ফাঁকা, সেখানে নিচে আমাদের শুরুর জায়গাটা আবছা দেখা যাচ্ছে, আরো দূরে ডানে পারো উপত্যকা, উপত্যকা পেরিয়ে পরের পাহাড়ের ঢালে আমাদের হোটেল লেগো দিয়ে বানানো ঘরের মতন দেখা যায়, আর আমার সামনে সেই অদ্ভুত সুন্দর স্থাপনা খাড়া কালো পাথরের মাঝখানে দৃপ্ত ভঙ্গিতে অজানা এক সম্মোহিত শক্তিতে বিরাজমান। উপরে প্রখর রোদ নিয়ে আমি তাকিয়ে থাকি সেদিকে। এখান থেকে হাজারে হাজার প্রেয়ার ফ্ল্যাগ দড়িতে ঝুলিয়ে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ছবি তুলি। দূরে একটা মেঘ আস্তে আস্তে ওদিকে সরে আসতে দেখে অপেক্ষায় মাটিতে বসে থাকি। মিনিট পনের মতন পর সেই মেঘ একটু একটু করে ঢেকে দিতে থাকে পুরো মনেস্ট্রি। কী অদ্ভুত সেই দৃশ্য!
আমার অপেক্ষার সময়টুকুতে সহযাত্রীরা সামনে চলে গিয়েছিলো, নিচে ওদের দলটাকে ছোট্ট পুতুলের মতন দেখাচ্ছে। ট্রেইল এখান থেকে আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে। এটুকু রাস্তা পাহাড়ে খাঁজ কেটে পাথরের সিঁড়ি বিছানো, বামের বিশাল ঝরণার পানিতে ভেজা, পাশে রেলিংও দেয়া। ঝরণার পানির শব্দ শুনতে শুনতে সাবধানে নিচে নামতে থাকি আমি। কয়েকশ সিড়ি নিচে ঝরণার উপর ১০হাতি ছোট্ট একটা পুল পেরুলেই মনেস্ট্রির বহিরাঙ্গন। বাহুল্য নেই, ভিড়ভাট্টা নেই, ছিমছাম, সুন্দর। বাইরের দরোজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে চেক পোস্ট, এখানে ক্যামেরা, মোবাইল ইত্যাদি জমা দিয়ে অনুমতিপত্র দেখিয়ে ভেতরে ঢুকতে হয়। আমাদের সাথে কোনো অনুমতিপত্র না থাকলেও ওরা মানা করেনি, আমাদের একজনের জাতীয় পরিচয়পত্র আর আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখেই ভেতরে ঢোকার অনুমতি মিললো।
কয়েকবছর আগে আগুনে পুড়ে এখানে থাকা মূল্যবান পুঁথি, পেইন্টিং, ট্যাপেস্ট্রি গুলার অপূরণীয় ক্ষতি হলেও বর্তমানে যা অবশিষ্ট আছে সেসবও চোখ ধাঁধিয়ে দেবার মতন। আমরা আধ ঘণ্টার মতন ছিলাম এখানে। এরপর ফিরতি ট্রেইলে ক্যাফেতে ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে আস্তেধীরে বিকেল পাঁচটার দিকে নিচে নেমে এসেছিলাম।
মন্তব্য
ইয়েএএ.. আমি ফাস্ট!!!
কবিতা জিন্দাবাদ!
এবার পোস্ট এ চউখ বুলাই...
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আমি সেকেন্ড
...........................
Every Picture Tells a Story
ঠুকে গেলাম।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ধন্যবাদ
...........................
Every Picture Tells a Story
ছবি আর লেখা দুটোতেই
পুনশ্চ: কবিতাটা মারাত্মক হইছে মুস্তাফিজ ভাই
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ধন্যবাদ অনার্য।
...........................
Every Picture Tells a Story
হু কবিতা লেখার জন্য "দলছুট ট্রেনিং" নিচ্ছি, হয়ে যাবে।
...........................
Every Picture Tells a Story
উল্স্!
এইরকম কবিতা দিনে ৫-১০টা পড়তেও আমাদের ক্লান্তি নেই!
বস, আপ্নে আসলেই বস মানুষ!
ছবি তো ছবি, লেখাটাও এত জাদুবাস্তবতাময়---একেবারে ঘোরের মাঝে নিয়ে ফেলে।
কুর্ণিশ জানিয়ে গেলাম---
ধন্যবাদ অনিকেত। ভালো থাকবেন।
...........................
Every Picture Tells a Story
ভীষণ ভীষণ নিখুঁত বর্ণনা কিন্তু বাহুল্য বর্জিত। অতিরঞ্জন যেমন নেই, তেমনি কোন কিছু বাদ যাবারও ভয় নেই।
আর মুস্তাফিজীয় ছবিতো আছেই।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ধন্যবাদ পুতুল। পোস্ট দেবার পর মনে হচ্ছে আরো কিছু তথ্য যোগ করা যেতো।
...........................
Every Picture Tells a Story
বুদ্ধমূর্তির সাথে ফটুক কো? যেখানেই যান, বুদ্ধমূর্তির সাথে ফটুক না দিলে সেইখানে গেছেন তা বিশ্বাস করাকরি নাই।
আমার এক বন্ধু আছিলো (মানে আছে তো এখনো, কিন্তু যোগাযোগ নাইতো)। তার বিদেশ যাওয়ার খুব শখ, কিন্তু তার বাপে কিছুতেই দেয় না। তো একবার সে ক্ষেপে গিয়ে বলছিলো, "আপনে আমারে বিদেশ যাইতে দেন বা না দেন, আমি বিদেশ যামুই। ভূটান হইলেও যামু!"
আমার ওর মতো সেরকম কোনো ঝামেলা নাই। কিন্তু ভূটান যাওয়ার ইচ্ছাটা আছে সেই পোলাপানকাল থেকেই। এবং এই ইচ্ছাটা প্রায়ই চাগাড় দিয়ে ওঠে। আপনার অতিসাম্প্রতিক ভূটান সফর সেই ইচ্ছার চাগাড়ে আরও খানিকটা অকটেন ঢেলে দিলো আরকি!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বুদ্ধমূর্তির সাথে ফটুক নাই। জীবন্ত বুদ্ধার সাথে যে দেখা করেছে তার কাছে মূর্তির সাথে ছবি তোলা অর্থহীন। ভূটানে মাস ছয়েক ঘুমিয়ে কাটানো যাবে, কোন সমস্যা ছাড়াই।
ভূটানে সবই ভালো, তবে বিড়ি খোরদের জন্য নয়, সেখানে তামাক নিষিদ্ধ।
...........................
Every Picture Tells a Story
পড়লাম, ভালো লাগলো। টাইগারনেস্টের প্রথম ছবিটা বেশি ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ। ফ্লিকারে টাইগারনেস্টের আরো কিছু ছবি আছে, দেখে নিতে পারেন। আমার কম্পিউটারেও আছে, প্রসেস করা হয়নি।
...........................
Every Picture Tells a Story
দারুণ কবিতা আর ছবিতা
ধন্যবাদ আনন্দী কল্যাণ।
...........................
Every Picture Tells a Story
ছবি আর লেখা>ওয়াও!
love the life you live. live the life you love.
ধন্যবাদ তারাপ কোয়াস
...........................
Every Picture Tells a Story
হু, আমার এখনও হাত ব্যথা করে।
...........................
Every Picture Tells a Story
চমৎকার সব ছবি! ষোল কেজি ওজনের ক্যামেরা ব্যাগ বহন সার্থক
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
প্রতিটা শব্দে মুগ্ধতা, প্রতিটা ছবিতে মুগ্ধতা। আমার গত কয়েক বছরের ভূটান যাবার পরিকল্পনাটা এবার হন্যে হয়ে বাস্তবায়ন করবো।
ভুটান যাবার আদর্শ সময় কোনটা মুস্তাফিজ ভাই? ট্যুর অপারেটর, খরচ, ইত্যাদি জানতে চাই। আগামী ঈদের ছুটিতেই যেতে চাই। ইন্ডিয়ান এম্বেসির ডাবল এন্ট্রি ভিসা নেবার হ্যাপা কতটুকু তাও জানতে চাই। তর সইছে না আপনার পোষ্ট পড়ে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
শুধুমাত্র জীবনে একবার যেতে চাইলে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি কিংবা ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সেরা সময়। আমরা গেলাম জুনে, জুন জুলাই ওদের বর্ষা, আমাদের চাইতে বেশী বৃষ্টিপাত সেখানে। আমার খারাপ লাগেনি। প্রত্যেক সীজনের আলাদা আলাদা রূপ আছে।
ভারতীয় ভিসা এখন অনলাইনে আবেদন নেয়, সুতরাং সমস্যা হবার কথা না। বাই রোডে ভুটান যাবার অভিজ্ঞতা আমার নেই। তবে কষ্ট সইতে পারলে মন্দ লাগার কথা না। বেশ কয়টা ট্যূর অপারেটর ভূটানের উপর প্যাকেজ দেয়, এগুলোতো সস্তাই মনে হয় আমার কাছে।
তবে আমার পরামর্শ হলো যেভাবেই যাওয়া হউক না কেনো কোথায় যাচ্ছি আর কি দেখতে যাচ্ছি তার উপর পরিষ্কার একটা ধারণা নিয়ে গেলে কোন সমস্যা হবার কথা না।
এয়ারফেয়ার আর খাওয়া ছাড়া হোটেল আর ঘোরাঘুরিতে আমাদের খরচ হয়েছে বড়দের ১৬০ ডলার জনপ্রতি। আমরা যে দুটো হোটেলে ছিলাম দুটোই ভালো মানের।
...........................
Every Picture Tells a Story
ধন্যবাদ
...........................
Every Picture Tells a Story
এজন্যই আপনার লেখা পড়তে ভালো লাগে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বুঝি নাই, বুঝাইয়া বলেন।
...........................
Every Picture Tells a Story
বললাম যে আপনার ভ্রমণে শুধু ঘুরফিরি না... জানার আছে অনেক কিছু...
এজন্য পড়তে ভালো লাগে...
আর ছবির কথা আর কী বলবো?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ
...........................
Every Picture Tells a Story
চমৎকার লাগলো, মুস্তাফিজ ভাই। ফ্লিকারের ছবিগুলোও দেখছি। মায়াবি জায়গা, আর তার উপর আপনার তোলা ছবি! দারুণ! লেখা আর ছবিতে ওই জায়গার নিয়ে আপনার গভীর অনুভূতি টের পাওয়া যায়।
ধন্যবাদ যুধিষ্ঠির। দুনিয়ার সব জায়গাই আসলে সুন্দর।
...........................
Every Picture Tells a Story
দুর্দান্ত সিদ্ধান্ত।
...........................
Every Picture Tells a Story
ইশ কি সুন্দর। নাহ ভুটানে যেতেই হবে।
সারসংক্ষেপে ভূটানের ভ্রমণকাহিনী দেখে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে গোটা ব্লগটা পড়বো না, পড়বো না, পড়বো না। কিন্তু তার পরও পড়া হলো। আর সাথে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ ছাড়া আর কি! দেখি, কোনওদিন বিড়ি ছাড়তে পারি কি না!
আমাদের পাড়ার এক মামা এবং আমাদের আরেক বন্ধু একসময় নিয়মিত ভূটানে যেতো, ফলের ব্যবসা করতে। ওরা ভূটান থেকে ফল আমদানী করতো। দুজনেই মদ্যপ্রেমী এবং নারীলিপ্সু মানুষ। একবার কি হলো জানেন ....................? থাক এখানে বলা যাবে না।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
বিড়ি না ছেড়েও যেতে পারেন, সেক্ষেত্রে ট্যাক্স দিয়ে নিয়ে যেতে হবে আর টানতে হবে এমন ভাবে যাতে অন্যরা গন্ধ টের না পায়। প্রতি শলাকার ট্যাক্স পড়বে বাংলাদেশী টাকায় ২৬ টাকার মতন। ব্যাপারনা।
আপনার ঐ নারীলিপ্সু বন্ধুর কথা মনে হয় অনুমান করতে পারি। নেপালে একবার দেখেছিলাম সেরকম একজনকে ভাড়া নেবার পর হোটেলে নিয়ে দেখে হিজড়া।
...........................
Every Picture Tells a Story
ট্যাক্স দিয়ে বিড়ি টানতে হলেও যাবো। একশো বার যাবো। এমন সুন্দর জায়গা না দেখলে ঘোরাঘুরি বৃথা। ওখানকার বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত ভাই আমার এক বৃদ্ধ সিনিয়র ফ্রেন্ডের জুনিয়র ফ্রেন্ড, আত্মীয় এবং হেভী ক্লোজ। কিছু খাতির যত্ন জুটতে পারে।
ঘটনা যার, সে ছিলো পাড়ার মামা। অবশ্য সেই একই হোটেলে বন্ধু এবং খুলনার আরও কয়েকজন ফল আমদানীকারক ছিলো। আর সে হিজড়া ছিলো না, মেয়েই ছিলো। কিন্তু মামা তাক নিয়ে দরজা বন্ধ করার কয়েক মিনিটের মধ্যে মেয়েটা মামাকে এক ধাক্কায় ফেলে দিয়ে দরজা প্রায় ভেঙে দৌঁড়ে পালিয়েছিলো। ওই হোটেলে পরবর্তীতে মামা যে কয়দিন ছিলো, আর কোনও মেয়েই তার সাথে আসেনি। পরে মামা হোটেল বদলায়।
আমার একজন ভূটানিজ বান্ধবী ছিলো, কিন্তু হারিয়ে গেছে। বেশ কয়েকবছর হলো আর কোনও যোগাযোগ নেই। ওর নাম Tsareng Choden.
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
খাতির যত্ন যদি গাড়ী হয় তাহলে ভালোই।
...........................
Every Picture Tells a Story
মারাত্মক।
ধন্যবাদ নৈষাদ। আপনার সাথে কোথাও আর বেড়ানো হলোনা।
...........................
Every Picture Tells a Story
ছবি এবং বর্ণনা দুটাই অসাধারন লাগলো ভাইয়া.
ধন্যবাদ ভাইয়া।
...........................
Every Picture Tells a Story
চমৎকার একটা ভ্রমন ধারা বর্ননা পড়লাম। ভূটান যাবার লোভ চেপে গেল। বছর ২ আগে ভূটানের কজন শিক্ষক আর সরকারী কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল, প্রচুর পান খেতে দেখছি। তাই ভেবেছিলাম ওরা প্রচুর সিগারেটও খায়। কিন্তু এখন তো হতাশ হলাম।
পান খায়, তবে জর্দা ছাড়া। জর্দাও সম্ভবত নিষিদ্ধ। হতাশ হবার কারণ নেই, ভূটানে গেলে সিগারেটের কথা মনে নাও পড়তে পারে।
...........................
Every Picture Tells a Story
দারুন! সবকিছু দারুন এখানে!
ধন্যবাদ তানিম এহসান
...........................
Every Picture Tells a Story
ধন্যবাদ অণু, ঘুরে এলেই হয়।
...........................
Every Picture Tells a Story
ভালো লাগল, যেতে চাই সেখানে--- অণু
আপনার তোলা ছবির চেয়ে লেখা সুন্দর। ছবিব্লগে মানুষ সাধারণত লিখতে চায় না, লিখলেও দায়সারাভাবে কাজ চালায়। আপনি ব্যতিক্রম।
গুল্ট্রাম দেখা যায় টাকার চেয়ে স্ট্রং, ভুটানিদের গড় আয় কি আমাদের চেয়ে বেশি? খাবারের দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। অবশ্য পর্যটন এলাকা হিসেবে চলে।
মাতিসের লেখাটায় ক্লিক করলাম। পড়ি নাই। কিন্তু স্টাইল একইরকম। গর্বের সাথে আবার জানাচ্ছে, একটা বাদে ছবিগুলো তার তোলা। অবশ্য পোস্টে নতুন ছবি যোগ করেছে বুঝা যায়। যেমন, প্রথম ২টা ছবিতে সে নিজেই আছে। টাইমার ব্যবহার ছাড়া নিজে তোলা সম্ভব না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ধন্যবাদ বলাই দা। গুল্ট্রাম স্ট্রং সম্ভবত রুপীর সাথে পেগিং করা বলে।
ওদের জিডিপি গ্রোথ অনেক বেশী, ২০% এর মতন। গড় আয় প্রায় ৬০হাজার গুল্ট্রাম। খাবারের দাম বেশী।
মাতিসের ব্লগে মনে হয় চারটা ছবি আমার তোলা, ওর ক্যামেরায় তোলা বলে হয়তো কনফিউসড্।
...........................
Every Picture Tells a Story
আমরা প্রচুর বেড়াই, পুরো পরিবার। কিন্তু ভূটান আর যাওয়া হয় না কিছুতেই... গত প্রায় পনের বছর ধরে শুনছি আমরা নাকি ভূটান বেড়াতে যাচ্ছি... এইবার আমি দেখতেছি, যাচ্ছি কিনা!
ছবিগুলো আগেই ঘুরে ফিরে দেখে ফেলেছিলাম বেশ কিছু। মারাত্মক সব ব্যাপার স্যাপার... ভ্রমণের এমন গল্প-কবিতা পড়তে ভালো লাগে... কিন্তু এবার যেন ছবিগুলো একটু বেশি এলোমেলো মুস্তাফিজ ভাই, যেখানে যেটা এক্সপেক্ট করছিলাম সেটা সেখানে নেই, খুঁজে নিতে হলো একটু...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
নেট স্পিড কম বলে ছবিগুলা যথাস্থানে বসাতে পারিনাই। এছাড়া লেআউটেও সমস্যা আছে। ঠিক করা যায়না।
ভূটান ঘুরে এলে ভালো না লাগার কোন কারণ নাই।
...........................
Every Picture Tells a Story
শুধু হাত নিয়ে কী করবেন, ক্যামেরাটাও নিয়ে যান।
...........................
Every Picture Tells a Story
আপনার তোলা ছবি দেখলে কেবল একটা কথাই মুখ দিয়ে বের হয়:
ইয়ে হাত মুঝে দে দে ঠাকুর!
দশ বার পড়েন, এরপর ভূটান ঘুরে আসেন। সহায়তা লাগলে জানাইয়েন।
...........................
Every Picture Tells a Story
অসাধারণ, মুস্তাফিজ ভাই!
লেখার প্রথম অংশটুকু খুবই রোম্যান্টিক হইসে।
১৪ আর ১৫ নং ছবি দেখে বাকহীন!
লেখাটা আবার পড়তে ইচ্ছা করতেসে।
মাতিসের লেখাটাও সময় নিয়ে পড়বো।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
কইছিলাম না!!!!!!
বুচ্ছেন বস, আজ থেকে কয়েক যুগ পরেও মানুষজনরে কইতে পারুম, আমরা দুইজনেই ভুটান গেছিলাম
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
একটু কারেকশন আছে, সেটা হবে আমরা দুইজনেই টাইগারনেস্ট উঠেছি (যদি না আবার প্রণব বাগড়া দেয়)।
...........................
Every Picture Tells a Story
ভূটান এ একবার আমার যাওয়া হইছিল এবং দিন ১৫ ছিলাম। টাইগারনেষ্ট গেসিলাম এবং আমাদের আপনার মতই হেটে উঠতে হইছিল। এই কষ্ট এবং উঠার পরের আনন্দ ভোলার নাহ। আমাদের সাথে ভূটান টেলিকম এর এডমিন অফিসার ছিল এবং অনুমতি নেওয়া ছিল তাই আমাদেরকে ভিক্ষু দের প্রধান সব ঘর খুলে খুলে দেখালেন এবং শেষে বিরাট লেকচার দিলেন।
বিস্তারিত লিখা আমার দাড়া সম্ভব নাহ। তাই একটা ছবি ব্লগ দিবনে।
অপেক্ষায় থাকলাম
...........................
Every Picture Tells a Story
বররের মতোই দারুন।
ভুটান যাওয়ার বাসনা তীব্র হইলো।
ঘুরে আসেন ভালো লাগবে।
...........................
Every Picture Tells a Story
নতুন মন্তব্য করুন