আমি বিষয়টা না জানলেও উত্তর দেই
- সম্ভবত পারবে।
কথার পেছনে কথা লাগায় মাতিস
- অবশ্য আমি শিওর টু-ডোর জিপ র্যাংলার রুবিকন এখানে চালানো যাবে।
আমি কনফার্ম করি
- হ্যাঁ, যাবে। ৪৫ ডিগ্রী খাঁড়া রাস্তায় এটা সহজেই চলতে পারে।
আমার গাড়ি সংক্রান্ত জ্ঞান ওর থেকেই পাওয়া। মাতিস কথা চালিয়ে যায়
- আচ্ছা বাবা, ধরো আমরা যখন গাড়ি কিনবো সেসময় তুমি কোনটা পছন্দ করবা
‘টয়োটা ফোর রানার’ না ‘নিশান এক্সটেরা’?
আমি উত্তর দিই
-মাতিস, নো মোর গাড়ি আলাপ।
ছেলেটা মনমরা হয়ে যায়। সম্ভবত রিয়ার ভিউ মিররে সেটা দেখেই স্টিয়ারিং হাতে ওর মামা সামনে একটা গাড়ি দেখিয়ে বলে
- বলতো ঐটা কী গাড়ি?
- মিতশুবিশি আউটল্যান্ডার।
- এইটা?
- ভক্সওয়াগন তিগুয়ান ক্রসওভার।
- আর এইটা?
- ব্যাকটা দেখে ঠিক বুঝা যাচ্ছে না, তবে সম্ভবত ফোর্ড ওয়ানফিফটি।
এভাবে চলতে চলতে হঠাৎ করেই মাতিস আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে
-বাবা দেখো কার লেনে এখানে বাইক চালাচ্ছে, তার মানে এখানে কী কার লেনে বাইক চালানো যায়?
আমি উত্তর দিই, ঠিক করে নাই, দেখো পাশে বাইক লেন আছে।
-ও, হ্যাঁ। আচ্ছা বাবা, এই বাইক লেন কি হুইসলার পর্যন্ত আছে?
-হ্যাঁ বাবা, এইটা ট্রান্স কানাডা হাইওয়ে, কানাডার এমাথা থেকে ওমাথা, ৭৮০০কিমি, আর পুরাটা রাস্তার দুপাশেই বাইক লেন।
-আচ্ছা বাবা, ভ্যাঙ্কুভার থেকে হুইসলার বাইকে কতক্ষণ লাগবে যেতে? মানে ধরো তুমি আর আমি যদি একদিন আসি তাহলে?
-উমম মনে করো যদি একটানা চালাও তাহলে মোটামুটি ১০/১২ ঘণ্টা আর যদি সবকিছু দেখে ঘুরে ঘুরে আসি তাহলে যাওয়া আসায় পাঁচদিনের পোগ্রাম করতে হবে।
-ও
কিছুক্ষণ থেমে থেকে আবার ওর প্রশ্ন, “আমরা কি একদিন বাইক চালিয়ে আসতে পারি?” সাথে যোগ করে দেয় “তোমার অবশ্য ভালো করে প্র্যাকটিস করতে হবে কারণ তুমি তো অনেকদিন চালাও না।”
আমি একটু ভাবি, কিছুদিন আগেই ‘দ্য লংগেস্ট রোড’ নামে একটা ডকুমেন্টারির কথা পড়েছিলাম, ডকু’টা এ রাস্তা নিয়েই, একজন হেঁটে হেঁটে, মানুষের সাথে গল্প করতে করতে পুরো রাস্তাই পারি দিয়েছিলো। ঠিক করলাম ভ্যাঙ্কুভারে ফিরেই এ ডকুমেন্টারিটা মাতিসকে দেখাবো। আরেকজন টেরি ফক্স, ওর কথাতো সবাই জানে। ক্যান্সার শরীরে এক পা নিয়ে প্রতিদিন ২৬ মাইল করে ১৪৩ দিনে রাস্তায় দৌঁড়িয়ে অমর হয়ে গেলো। আমি উত্তর দেই
-নিশ্চয়ই বাবা, থেমে থেমে ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে একদিন আমি আর তুমি বাইকে চেপে ভ্যাঙ্কুভার থেকে হুইসলার ঠিকই যাবো।
এই হাইওয়ের চমৎকার একটা নাম আছে, “সী টু স্কাই”। রাস্তার দু’পাশ অসম্ভব সুন্দর বললেও কম বলা হবে। স্কোখোমেশ পর্যন্ত রাস্তার বাম পাশে একটু পর পরই সমুদ্রের দেখা মিলে। আর ডানে পাহাড়। কখনও পাথর, কখনও গাছগাছালিতে ভরা। সারাক্ষণই মনে হতে থাকে একটু থামি, একটু ঘুরে দেখি।
একটু আগেই শ্যানন ফলস ঘুরে এসেছি আমরা। ভ্যাঙ্কুভার থেকে ষাট কিলোমিটার দূরে এলাকাটার একটা গালভরা নাম আছে “শ্যানন ফলস্ প্রভিনশিয়াল পার্ক”। শ্যানন ফলস ঘিরে প্রায় ৮৭ একরের এই পার্ক বিসি পার্কের আওতায় আসে এই সেদিন ১৯৮২ সালে। অথচ এই পার্কের ইতিহাস অনেক পুরোনো। ১৭৯২ সালে ক্যাপ্টেন ভ্যাঙ্কুভার ফলসের কাছাকাছি তার ক্যাম্প ফেলেছিলেন। সে সময় এটা স্কোখোমেশ আদিবাসীদের অধীনে ছিলো। শ্যানন নামটা আসে এর আরো পরে যখন উইলিয়াম শ্যানন নামে এক আইরিশ ১৮৯০ সালে এই এলাকাটার মালিক হন। উনি এখানকার মাটি দিয়ে ইট বানাতেন বলে শোনা যায়। শ্যানন এই এলাকা এক মাইন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে চলে যান ১৯০০ সালে, কিন্তু তার নামটা থেকে যায়, এই নাম থেকে যাওয়ার কারণ সম্ভবত আদিবাসীদের দেয়া নাম উচ্চারণে জটিলতা (শ্যানন ফলসের আদি নাম Kwékwetxwm)।
একসময় ঘন বন ছিলো এখানে, দুই মাথাওয়ালা দানব পাশের সাগরে বাস করতো (they told of a two headed sea serpent, Say-noth-ka) আর মাঝে মাঝে উঠে আসতো এই বনে, বন ছাড়িয়ে পাহাড়ের মাথায়, দেখতে সাপের মতন সেই দানব সেই পাহাড়ের উপর থেকে পিছলে পিছলে নেমে আসতো আবার বনে, বন থেকে সাগরে। সেই দানবের পাহাড়ে উঠা নামার পথটাই একসময় ঝর্ণার রূপ নেয়।
ইচ্ছে করলে সারাদিন কাটিয়ে দেয়া যায় এখানে। আজো হাজার হাজার মানুষ সেই দানবের পথ বেয়ে উপরে ওঠে। পাশের স্কোখোমেশ চিফ ( Sḵwxwú7mesh in the Squamish language) বিশাল এক গ্রানাইটের পাথর। সর্বোচ্চ চূড়া প্রায় ৭০০মিটার উপরে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রক ক্লাইম্বাররা এখানে ভিড় জমায় এই স্কোখোমেশ চিফে উঠার জন্য।
আমাদের আজকের তিনটা ছবি এই শ্যানন ফলস, স্কোখোমেশ চিফ আর রক ক্লাইম্বিংয়ের।
মন্তব্য
মাতিস ও জহুরের জন্য শুভকামনা রইল।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ধন্যবাদ
...........................
Every Picture Tells a Story
প্রথম ছবিতে রাস্তাটা একদম সরাসরি ঝর্ণা’তে যেয়ে মিশেছে নাকি! দারুণ তো! আপনার লেখা এবং ছবি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই। শুভকামনা।
অনেকটা সেইরকমই। ঝর্ণার ঠিক সামনে এসেই দুপাশ দিয়ে চলে গিয়েছে।
শুভকামনা।
...........................
Every Picture Tells a Story
মাতিস এর গাড়ি আলাপ খুব মজা লাগল। ছবিগুলো অসাধারন, বিশেষ করে প্রথম এবং শেষ দুটি।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
ধন্যবাদ শাব্দিক
...........................
Every Picture Tells a Story
তিন নম্বর ছবির দৈতাকার পাথর দেখে বেহুঁশ হয়ে গেলাম!! ওটা পাহাড়টা আস্ত একখানা পাথর নাকি?
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
এটা পুরোটাই গ্রানাইট খণ্ড। বলা হয়ে থাকে ১০মিলিয়ন বছর আগে ভুপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার নীচে এটার জন্ম। জলবায়ু পরিবর্তিত জনিত কারণে আস্তে আস্তে উপরে উঠে আসছে।
...........................
Every Picture Tells a Story
খাইসে!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
...........................
Every Picture Tells a Story
গ্রানাইট খণ্ডটাকে কেমন জীবন্তু লাগতেসে। মনে হচ্ছে কখন যেন নড়েচড়ে উঠবে।
প্রথম ছবিটা দুর্দান্ত!
ম্যালাদিন পরে লিখলেন...
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
এইটা জীবন্ত বটে। প্রতিদিনই একটুকু করে হলেও উচ্চতা তো বাড়ছে। আর এদের এই পাহাড়টাকে নিয়ে একটা মিথ চালু আছে, নড়েচড়ে উঠতেই পারে যেকোন সময়। একদিন ইচ্ছা আছে সারাদিন সেখানে কাটিয়ে দেবার, সেদিন এই মিথ গুলা শোনা যাবে।
হুম ম্যালাদিন পর লিখলাম।
...........................
Every Picture Tells a Story
তারপর আমাদেরও মিথগুলো জানা হবে।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
...........................
Every Picture Tells a Story
জীবনে কতজনরেই যে মডেল বানাইলাম। একাধিক মডেল হওয়ার জন্যই বোধহয় আর কারও মতো হওয়া হল না। মাঝখান থেকে নিজের মতোও হলাম না।
আপনার লেখা এবং ছবি।
যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...
ধন্যবাদ জুন। অতৃপ্ত থাকাটা ভালো নয়।
...........................
Every Picture Tells a Story
একটা বিষয় নিশ্চিত হলাম যে, মোটামোটি সব ছেলে বাচ্চাদের মানসিক বিকাশে প্রধান ও অত্যন্ত আবশ্যকীয় খোরাক হলো, গাড়ি!
লেখা পড়ে মুগ্ধ হলাম ভাইয়া, ছবিগুলো আগেই দেখেছি অসাধারণ!
ধন্যবাদ। গাড়ি ছাড়াও আরো ব্যাপার আছে। আমাদের সুজন'দার ছেলের বিষয় হলো ডাইনোসর! মাতিসের অর্ধেক বয়সের এই ছেলের কাছে বয়স্করা ডাইনোসরের ছবি দেখিয়ে জানতে চায় ঐটার নাম কী!
...........................
Every Picture Tells a Story
আর আমি মাতিসের কাছ থেকে গাড়ি চিনি! সব গাড়ির হাড়ির খবরই রাখে মাতিস!
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
...........................
Every Picture Tells a Story
দারুন মুস্তাফিজ ভাই। মাতিস-জহুরের জন্যেও স্নেহ রইলো।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ধন্যবাদ ভাই
...........................
Every Picture Tells a Story
দারুণ
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ধন্যবাদ
...........................
Every Picture Tells a Story
দারুণ লাগছিল, হুট করে শেষ হয়ে গেল। আপনাদের বাপ-বেটার আলাপ বেশ মজার। সময় করে কিছু লম্বাচওড়া দিনপঞ্জি লিখেন।
ফাঁকিবাজ থেকে নাম কাটাইলাম।
...........................
Every Picture Tells a Story
খুব সুন্দর, মুস্তাফিজ ভাই! ওদের কথাবার্তায় আনন্দ পেলাম। আমার মেয়েকেও দেখি ডাইনোসারদের পুরো বংশ-গোত্র, পিতামহ-প্রপিতামহ সকলেরই নাম ধাম সব মুখস্থ!
----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand
বাচ্চাদের এই ব্যাপারগুলা বুঝিনা, কতকিছু যে মনে রাখে ওরা!
...........................
Every Picture Tells a Story
চমৎকার লাগলো মুস্তাফিজ ভাই।
দুনিয়ার অধিকাংশ জায়গাতেই যাইনি। কিন্তু অনেকটা প্ল্যান বহির্ভূতভাবেই হুইসলারে গিয়েছিলাম। নিজেকে এখনো ধন্যবাদ দেই সেই কারণে। অসম্ভব সুন্দর বললে আসলেই কম বলা হবে।
অটঃ ‘দ্য লংগেস্ট রোড’ ডকুমেন্টারি কোথায় পাই? নেটফ্লিক্সে পেলাম না। ইউটিউবেও না
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ তাসনীম ভাই। দ্য লংগেস্ট রোড আমি আমাদের লাইব্রেরী থেকে আনিয়েছিলাম। যদি অনলাইনে কোথাও পাই জানাবোনে।
...........................
Every Picture Tells a Story
ঝরঝরা লেখা!
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
ধন্যবাদ সুজন'দা
...........................
Every Picture Tells a Story
একটা পাথর এত বড় হয়!!
দেবা ভাই
-----------------------------------------
'দেবা ভাই' এর ব্লগ
এর চাইতে বড় পাথরও আছে। তবে এটা গ্রানাইটের পাথর হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে আছে।
...........................
Every Picture Tells a Story
রাস্তার ছবি দু একটা দিলেন না....
লেখা বরাবরের মতোই ভালো লাগলো।
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
সেই গল্প আরেকদিন।
...........................
Every Picture Tells a Story
ছেলের কথা শুনে খুব মজা পেলাম । আমার অভিজ্ঞতা বলে বাচ্চারা আসলেই অনেক কিছু মনে রাখে, বিশেষ করে যে বিষয়ে তাদের আগ্রহ সে বিষয় হলে তো কথাই নেই
ধন্যবাদ ঠিক বলেছেন।
...........................
Every Picture Tells a Story
গাড়ি নিয়ে কিসুই জানিনা , মাতিসরে বলেন একটা পোস্ট দিতে। কারস ফর ডামিস টাইপ কিছু।
..................................................................
#Banshibir.
পাগলাকে নৌকা না নাড়াইতে বলি। এমনিতেই ঝামেলায় আছি, এখানে এসে গাড়ি কেনা দূরের কথা লাইসেন্সও করিনাই।
...........................
Every Picture Tells a Story
জার্মানি আসবেন কবে? সবার জন্যে শুভকামনা রইল।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ধন্যবাদ ভাই। যখন গিয়েছিলাম সেসময় পরিচিত কেউ ছিলোনা। এখন বলতে পারিনা কবে যাওয়া হবে।
...........................
Every Picture Tells a Story
মাতিস তো দেখি বড় হয়ে গেছে অনেক!
দারুণ লাগলো পোস্ট
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ নজরুল ভাই।
...........................
Every Picture Tells a Story
ছবি ও বর্ণন, ভাল লাগলো।
ধন্যবাদ প্রৌঢ় ভাবনা।
...........................
Every Picture Tells a Story
...........................
Every Picture Tells a Story
নতুন মন্তব্য করুন