তুমি কী এখানে প্রায়ই আসো? আমি জিজ্ঞেস করি। চেহারা দেখে ইউরোপীয়ান মনে হলোনা, এশিয়ান বা আফ্রিকানও না।আমার দিকে ঘুরে বসে সীওয়াশ পাথরের দিকে আঙুল তুলে তিনি উত্তর দেন
- তুমি কী এর সম্পর্কে কিছু জানো?
আমি সীওয়াশ পাথরের দিকে তাকাই, সমুদ্রের উপরে ভেসে থাকা ষোল সতের মিটার উঁচু ছাই রঙা। সমুদ্র ফুঁড়ে একা, আশে পাশে সংগী বিহীন উদ্বত ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক কোটি বছর বয়সী পাথর খণ্ডের দিকে।
- ভ্যাঙ্কুউভারে এসেছি আমি একবছরও ঘুরেনি। এর সম্পর্কে জানা তো দূরের কথা আজই প্রথম দেখলাম।
- সে স্লাকেয়াওশ্। স্কোখোমেশ যোদ্ধা। তোমারা যখন এখানে ছিলেনা, যখন এই এলাকা তোমাদের অজানা ছিলো সেসময় আমরা মানে আমাদের পূর্ব পুরুষদের শিকারের জায়গা ছিলো এটা। সমুদ্র এখান থেকে নদীর মতন প্রায় ষাট কিলোমিটার ভেতরে স্কোখোমেশ পর্যন্ত ঢুকে গেছে। এর দুপাশের পুরো অঞ্চলটাই ছিলো আমাদের রাজত্ব। আমাদের পুরুষরা ছিলো যোদ্ধা, ছোট ছোট নৌকায় ভেসে মাছ ধরা আর দুপাড়ের জঙ্গল দাপিয়ে ভালুক এবং হরিণ শিকার ছিলো তাদের পেশা।
- আচ্ছা। কিন্তু এরসাথে পাথরের সম্পর্ক কী?
উনি যেনো আমার কথা শুনতেই পাননি, উনি বলতে থাকেন
- আমাদের ভেতর প্রথা ছিলো সন্তান জন্ম নেবার পর বাবা সন্তানের মুখ দেখতে গেলে যতদূর সম্ভব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে দেখতে যায়। স্লাকেয়াওশ্ ছিলো যোদ্ধা, স্কোখোমেশ গোত্রপতি। ওর স্ত্রী যখন সন্তান সম্ভবা তখন সে বউকে নৌকায় তুলে এখানে অসীম সাগরের পাড়ে চলে আসে। এসে অপেক্ষায় থাকে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। একদিন সন্ধ্যায় তার স্ত্রী তার প্রসব বেদনার কথা জানালে স্লাকেয়াওশ্ সমুদ্রে ঝাঁপ দেয়, উথাল পাথাল ঢেউ এর বিরুদ্ধে সাঁতার কেটে কেটে নিজের শরিরের সমস্ত কালীমা ধুয়ে ফেলতে ফেলতে অপেক্ষায় থাকে একটি কান্নার শব্দের জন্য।
সারারাত ধরে স্লাকেয়াওশ্ সাঁতার কাটে, কাটতেই থাকে। ভোর হবার ঠিক আগে আগে সেই কাংখিত কান্নার শব্দ কানে আসতেই পাড়ের দিকে আসতে থাকে, যেখানে তার স্ত্রী আর সদ্যোজাত সন্তান।
পরিষ্কার-পবিত্র শরীর নিয়ে তীরের কাছাকাছি আসার সময় দেবতাদের নিয়ে আসা একটা নৌকার মুখোমুখি হয় সে-দেবতারা হুশিয়ার করে স্লাকেয়াওশ্কে, “সরে যাও, সরে যাও আমাদের পথ থেকে”। তোমরা সরে যাও, দূর্বিনীত স্লাকেয়াওশ্ উত্তর দেয়। আমি যাচ্ছি আমার সদ্যোজাত সন্তান আর স্ত্রীর কাছে। দেরী করার মতন সময় আমার হাতে নেই। আবারো হুশিয়ারী দেয় দেবতারা, যদি সরে না যাও, যদি নৌকায় তোমার ছোয়া লাগে তাহলে পাথর হয়ে যাবে তুমি। বলতে না বলতেই স্লাকেয়াওশের হাত সরিয়ে দিতে থাকে নৌকার গতিপথ।
সেই থেকে দূর্বিনীত স্লাকেয়াওশ্ এখানে পাথর হয়ে আছে।
এটুকু একটানে বলার পর উনি দম নেন, একটা দীর্ঘশ্বাস নেন। আমরা দুজনই কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকি। নিরবতা ভেঙে প্রশ্ন করি আমি
- স্লাকেয়াওশের বউ আর বাচ্চার কী হলো?
- এইযে আমরা যেখানে বসে আছি, আমাদের সামনের এইযে রাস্তাটা ওর বউ বাচ্চাছিলো এখানেই। স্বামীকে চোখের সামনে পাথর হয়ে যেতে দেখে চীৎকার দিয়ে উঠে সে, পাশাপাশি সদ্যোজাত গোত্রপতিও তীক্ষ্ণকণ্ঠে ডেকে উঠে বাবাকে। তাদের এই ডাকে সম্বিত ফিরে পায় দেবতারা, কিন্তু তাদের শাপ ফিরিয়ে নেবার আর উপায় ছিলোনা তখন। দেবতাদের ভেতর যে সবচাইতে লম্বা দয়াপরবশ হয়ে সে তার হাত বাড়িয়ে দুজনকেই একবার ছুঁয়ে দেয়।
সেই থেকে এই সেদিন পর্যন্তও দুজনই পাথর হয়ে স্লাকেয়াওশের সাথেই ছিলো। এই রাস্তাটা সেই পাথর কেটেই বানানো হয়েছে। আমাদের মেয়েরা যারা তার গোত্রভুক্ত তারা সন্তান সম্ভবা হলেই একবার আসি এখানে, প্রার্থনা করে যাই এই গুহায় যেখানে সন্তানের জন্ম হয়েছিলো।
এটুকু বলেই উনি উঠে পড়েন, আমার সাথে হাত মিলিয়ে বাইকে চাপেন তিনি, আস্তে আস্তে একজন আদিবাসী মা পথের বাঁকে মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত আমি বসে থাকি।
সমুদ্রের বাতাসে ঠান্ডা লাগে। ঘড়িতে রাত আটটা। এখানে সূর্্য ডোবে রাত ন’টায়। শেষ বিকেলের ছোঁয়া স্লাকেয়ালশ্ এর উপর এক অদ্ভুত মায়াময় আবহ নিয়ে আসে। আমি তাকিয়ে দেখি।
একসময় আমাকে উঠতে হয়, খুব কাছের বাস স্টপেজ এখান থেকে আরো পাঁচ কিলোমিটারের পথ।
The Siwash Rock at Stanley Park by Spiritual touch, on Flickr
The Siwash Rock at Stanley Park by Spiritual touch, on Flickr
The Siwash Rock at Stanley Park by Spiritual touch, on Flickr
The Siwash Rock at Stanley Park by Spiritual touch, on Flickr
মন্তব্য
স্কোখোমেশদের বিলুপ্ত করে দিয়ে তাদের মীথিক্যাল পাথর সংরক্ষণ গরু মেরে জুতা দানের মতো হয়ে গেলো না? আর পাথর সংরক্ষণের ব্যাপারে সেটেলারদের কোন ব্যবসায়িক বুদ্ধি কি কাজ করেনি!
ছবি আর গল্প নিয়ে নতুন করে মন্তব্য করার কিছু নেই। ওসব লোকে বলতে বলতে বা লিখতে লিখতে হয়রান হয়ে গেছে।
১০১-টা ছবির গল্প শেষ করতে আপনি যে সময় লাগাচ্ছেন তাতে ১০১-তম পর্বটি তো আমার নাতি পড়তে পাবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এটা সংরক্ষণে কোন ব্যবসায়ীক বুদ্ধি কাজ করেছে বলে জানা নেই। তবে এখানকার আদিবাসীদের উপর যে অত্যাচার এই ১৯৫০ সাল পর্যন্তও চলেছে শুনেছি সেটা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কেউ শুনলে নিজেকে মানুষ ভাবতেই ঘেন্না হবে, কারণ মানুষেরাই এসব করেছে।
আপনার নাতি কেন তার নাতিরাও পড়তে পারবে, অন্তর্জাল এমনই একটা জিনিষ
...........................
Every Picture Tells a Story
আপনার গদ্য দিন-দিন ঈর্ষণীয় হয়ে উঠছে!
সিরিজটা আরেকটু গতি পাক।
গতি পাক তা আমিও চাই। অনেক গল্প জমে আছে।
...........................
Every Picture Tells a Story
পর্বগুলো আরেকটু গতি পাক। বাইক ছেড়ে মোটর বাইক ধরেন। পড়ছি।
ধন্যবাদ প্রৌঢ় ভাবনা।
...........................
Every Picture Tells a Story
আরো গল্প শুনতে চাই, অপেক্ষায় রইলাম!
আপাতত, ভাললাগা জানিয়ে গেলাম
সাফিনাজ আরজু
ধন্যবাদ সাফিনাজ আরজু।
...........................
Every Picture Tells a Story
পান্ডব দার কথা আমারও- ছবি আর গল্প নিয়ে নতুন করে মন্তব্য করার কিছু নেই। ওসব লোকে বলতে বলতে বা লিখতে লিখতে হয়রান হয়ে গেছে।
...........................
Every Picture Tells a Story
ট্র্যাজিক গল্প পড়লে মনটা কেমন যেন হয়ে যায়!
ঘটনা ট্র্যাজিক, কিন্তু ওরা এটা নিয়ে গর্ব করে।
...........................
Every Picture Tells a Story
আপনি যে ফটুগফুরের সাথে সাথে লেখাগফুর হওয়ার পথে আছেন এইটা বুঝতে পারতেছেন?
...........................
Every Picture Tells a Story
ইমা
ধন্যবাদ ইমা
...........................
Every Picture Tells a Story
পান্ডব'দা আর স্যাম এর কথা আমারও - ছবি আর গল্প নিয়ে নতুন করে মন্তব্য করার কিছু নেই। ওসব লোকে বলতে বলতে বা লিখতে লিখতে হয়রান হয়ে গেছে।
গালে হাত দিয়ে তন্ময় হয়ে এইসব গল্প শুনতে ইচ্ছে করে।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
থাক, কেউ কেউ হয়রান না হলেই ভালো। আপাতত গল্পই শুনেন।
...........................
Every Picture Tells a Story
কিছুই বলার নাই। ছবির গল্প তো দুরন্ত
ছবি নিয়ে কি বলব। ছবিও মিষ্টির মতো মিঠে হতে পারে আর শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে এটা আপনার ছবি দেখে অনুভূত হয়
০২
অন্যকথাঃ
সুন্দরবন নিয়ে পুরোনো সব লেখাই পড়ি কেবল। আচ্ছা দাদা নতুন কিছু লেখেন না প্লীজ সুন্দরবন নিয়ে
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ তাপস শর্মা। লেখার ইচ্ছা আছে।
...........................
Every Picture Tells a Story
অসাধারণ ভাইয়া! কোনটা বেশী সুন্দর বলবো ছবি না গল্প বুঝে পাচ্ছিনা, তবে আমার কাছে গল্প বলার স্টাইলটা অনন্য সুন্দর লেগেছে! পরের গুলো শুনার অপেক্ষায় থাকলাম...
ধন্যবাদ রংতুলি।
...........................
Every Picture Tells a Story
দারুণ!
হ
...........................
Every Picture Tells a Story
একসময় আপনার ব্লগ মুগ্ধ হয়ে দেখতাম
এখন আপনার ব্লগ মুগ্ধ হয়ে পড়ি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজরুল ভাই, শুনে খুশী হইলাম।
...........................
Every Picture Tells a Story
ধন্যবাদ ক্লোন৯৯
...........................
Every Picture Tells a Story
facebook
ধন্যবাদ।
...........................
Every Picture Tells a Story
আরও গল্প চাই। ভালো থাকবেন।
অমি_বন্যা
হবে আশা করি।
...........................
Every Picture Tells a Story
ভ্যাঙ্কুভার এসেই গেছিলাম স্ট্যানলি পার্কে। কিন্তু আপনার ছবির মত এত ভাল্লাগে নাই আসলেই। ছবি আর লেখা দুইটাই অচাম।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আমি এই পার্কের বাইরের দিকে তিন বার চক্কর দিয়েছি, আর ভেতরে ঘুরেছি অনেকবার।
...........................
Every Picture Tells a Story
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ধন্যবাদ
...........................
Every Picture Tells a Story
ঝরঝরে- ঝকঝকে...
ধন্যবাদ
...........................
Every Picture Tells a Story
চমৎকার। পরবর্তী গল্পের অপেক্ষায় রইলাম।
>>
ইন্দ্রজিৎ সরকার
ধন্যবাদ ইন্দ্রজিৎ সরকার।
...........................
Every Picture Tells a Story
মুস্তাফিজ ভাই, অনেক আগে একবার আপনার ব্লগে মনে হয় বলছিলাম যে, ছবিব্লগে লেখা দিয়েন না, মনোযোগ থাকে না। আজকে কথা উইথড্র করলাম- আপনার লেখা আজকাল এতো দুর্দান্ত হচ্ছে যে, মাঝে মধ্যে মনে হয় ছবি না থাকলেও বোধহয় সমস্যা নাই !
অলমিতি বিস্তারেণ
হ কইছে তোমারে
...........................
Every Picture Tells a Story
মুস্তাফিজ ভাই, দ্যাশে আসেন। চলেন সুন্দরবন যাই।
নাইলে দার্জিলিং, আবারো।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
আচ্ছা যামুনে
...........................
Every Picture Tells a Story
নতুন মন্তব্য করুন