এ শহরের প্রথম আগন্তুক জন ডেটন (গ্যাসিজ্যাক) সবেমাত্র জঙ্গল কেটে জনমানবহীন এ এলাকায় বসতি গেড়েছেন। সবচেয়ে কাছের শহর তৎকালীন প্রশাসনিক কেন্দ্র নিউ ওয়েস্টমিনস্টার নৌকায় একদিনের রাস্তা। একবেলা নৌকা বাওয়ার রাস্তায় সমুদ্রের পাড়ে (Burrard Inlet) তখন কাঠের মিল, মাছের নৌকা, লোক সমাগম প্রচুর। দূরদর্শী গ্যাসিজ্যাক বিনামূল্যে একবসায় যতোটুকু মদ গিলতে পারবে সেই শর্তে সেই শ্রমিকদের দিয়েই তাদেরই জন্য ১৮৬৭ সালে এখানে গড়ে তুললেন একটা পাব। নাম ‘গ্লোব সেলুন’। এক, দুই করে আরো দু‘জন ব্যবসায়ী এসে জুটলো সেখানে। নাম হলো গ্যাসটাউন। ব্রিটিশ কলোনিগুলো এভাবেই শুরু হতো। অবধারিতভাবে এরপরই চলে আসতো রাজার প্রতিনিধি, এখানেও এসেছে। ১৮৭০ সালে মাপজোখ শেষে ততকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশ সেক্রেটারি লর্ড গ্র্যানভিলের নামানুসারে পুরো জঙ্গলের নাম হলো গ্র্যানভিল, আর তার ভেতর ছয় একর জায়গা গ্যাসটাউনের জন্য বরাদ্দ হলো। চলত শুরু হলো শহর। কাঠের মিল, মাছের ব্যবসাও ওপাশে জমজমাট তখন। ‘রয়্যাল স্টেজ কোচ’ ব্যবসায়ী লুইস সে-বছরই নিউ ওয়েস্টমিনস্টার থেকে গ্র্যানভিলের বুরার্ড পর্যন্ত ঘোড়ার গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করলেন। গাড়ি রাখা, ঘোড়ার বিশ্রাম আর খাওয়ার জন্য জায়গা খুঁজতে থাকলে দূরদর্শী গ্যাসিজ্যাকের পরামর্শে তার সেলুনের পেছনদিক পরিষ্কার করে জায়গা করে নেন লুইস। সেখানকার আসবাবপত্র ব্যবসায়ী আর মৃতদেহ সৎকারকারী হার্ট এর নাম দেন ‘ট্রন্স অ্যালি’ (Trounce Alley), দ্বীপদেশ ভিক্টোরিয়ার জনপ্রিয় ‘ট্রন্স অ্যালি’র অনুসরণে।
‘রক্তের গলি’র জন্মটা হলো এভাবেই। শহরের প্রথম গলি। চোখ বন্ধ করে একবার কোনো একটা ওয়েস্টার্ন কাউবয় ছবির কথা চিন্তা করুন। এক গলির একটা শহর, ধুলিমাখা। গলির দু’পাশে দোকানপাট, বাড়িঘর, সেলুন, ব্যাংক, ঘোড়ার গাড়ি। গড়ে ওঠার সময় আমাদের আজকের ভ্যাংকুউভার এমনই দেখতে ছিলো। ‘ট্রন্স অ্যালি’তে অবশ্য একটা আস্তাবল, ঘোড়া বেচাকেনার জায়গা, ঝাড়ুর দোকানও ছিলো। আর ছিলো গ্যাসিজ্যাকের বউ আর ছোট বাচ্চার জন্য একটা কেবিন। এ এলাকায় ছুটে বেড়ানো একমাত্র ছোট বাচ্চা, যাকে সবাই ডাকতো ‘আর্ল অব গ্র্যানভিল’। শহর যখন বাড়তে থাকে, এ গলির বয়সও বাড়ে, বাড়ে মানুষের চাহিদা। ছোট্ট জায়গা সে চাহিদার যোগান দিতে না পেরে বুড়িয়ে যেতে যেতে বিছানায় পড়ে যায়। তখনও কিন্তু এর নাম রক্তের গলি বা Blood Alley হয়ে ওঠেনি। জন্মের শত বছরের মাথায়, ১৯৭০ সালে মৃতপ্রায় এ গলি ভাগাড়ে পরিণত হবার আগেই আশপাশের বাসিন্দা/ব্যবসায়ীদের টনক নড়ে। ওরা চেষ্টা করে এই ইতিহাসটাকে বাঁচিয়ে রেখে ব্যবসার প্রসার ঘটাতে। জায়গাটা পরিষ্কার করে মাঝের মুল চত্তরে কবলস্টোন বিছানো হয়। বাড়িঘরের যা কিছু অবশিষ্ট ছিলো, তা সেভাবেই সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। আর অতিউৎসাহী কারো দ্বারা এর নামকরণ হয় Blood Alley বা রক্তের গলি। পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করা ছাড়া হঠাৎ করে ‘ট্রন্স অ্যালি’ থেকে ‘ব্লাড অ্যালি’তে নাম পরিবর্তন কেন হলো, তার আর কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এখানে কখনও কোনো কসাইখানা ছিলো না (নিউইয়র্কের ‘ব্লাড অ্যালি’র মতো) বা ধরে এনে এখানে কাউকে কখনও ঝোলানোও হয়নি। তারপরও আস্তে আস্তে ‘ট্রন্স অ্যালি’ নাম মুছে যেয়ে এটা ‘ব্লাড অ্যালি’ই হয়ে উঠলো।
মন্তব্য
অদ্ভুত ভালো লাগে আপনি যেভাবে শহরের অলিতে গলিতে ঘুরতে ঘুরতে শহরটা টুকরো ইতিহাস তুলে ধরেন। আমাদের পুরনো শহর গুলো নিয়ে এরকম ছবি আর স্থানীয় গাল-গল্প, টুকরো ইতিহাস নিয়ে কয়েকজন লিখতে শুরু করলে বেশ হয়। কত অমূল্য তথ্যই না ভেসে উঠতো।
আপনার গ্রফিতি প্রেমের দিব্যি, গ্রাফিতি নিয়ে একটা ছবি সমৃদ্ধ লেখােআপনার হাত থেকে পেলে দারুন হতো।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
আপনার সেই রিকশা চিত্রের সিরিজ দেখে আমরা কিন্তু ভরসা পাই, আপনি পারবেন। শুরু করে দিন।
ঢাকা নিয়ে আমার বড়ভায়ের লেখা সাড়ে তিনশ পৃষ্ঠার একটা বই আছে। যোগাড় করতে পারলে দেখতে পারেন
Title: City of an Architect
Author: Mahbubur Rahman
Publisher: Delvistaa Foundation, 2011
েেআমাদের এদিককার গ্রাফিতি নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে। একদিন হয়ে যাবে।
...........................
Every Picture Tells a Story
একদিন মুস্তাফিজ ভাই লিখব আশায় মানুষ কত খাটনি দিয়া একখান শহর বানায়া থুইছিল এক কালে
গুতা দিলেন মনে হয়?
...........................
Every Picture Tells a Story
বলা নাই কওয়া নাই -হঠাৎ নাম বদল করে ফেলল!
ছবিগুলো ভালো লেগেছে।
শুভেচ্ছা
এখন গুগোল ম্যাপেও নাম ব্লাড অ্যালি।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
...........................
Every Picture Tells a Story
যদি কোনদিন এদিকটায় আসি, আমারে নিয়ে আরেকবার ঘুরতে যাইয়েন।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন