সঞ্জীব চৌধুরীর একটি কবিতা ও একটি গল্প

মুজিব মেহদী এর ছবি
লিখেছেন মুজিব মেহদী (তারিখ: সোম, ১৯/১১/২০০৭ - ৯:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বোধকরি আমার সৃজনক্ষমতা ফ্রিজড হয়ে গেছে। যেন পাথর হয়ে গেছি শরীরসমেত। সিডরের পর থেকে গত চারদিনে কিছুই লিখতে পারিনি। ফাঁকে ফাঁকে পুরানো লিটল ম্যাগাজিনগুলোর কিয়দংশ ঘেঁটেছি। একেবারে বিমুখ হইনি। কিছু মমিনুল মউজদীন, কিছু সঞ্জীব চৌধুরী খুঁজে বের করা গেছে।

মমিনুল মউজদীনের একটি কবিতার শ্রেষ্ঠাংশ তাঁর মৃত্যুদিনে হাসান মোরশেদ ভাইয়ের পোস্টে উঠিয়ে দিয়েছিলাম। আজ দিচ্ছি সঞ্জীব চৌধুরীর একটি কবিতা ও একটি গল্প। সবার সঙ্গে তাঁর লেখা শেয়ার করার ভিতর দিয়ে অনুজ হয়ে অগ্রজের প্রতি দায়শোধের প্রয়াস করছি কি? স্নেহের দায় কি শোধের বিষয় কোনো?

জ্বর

একটাই কাক
হুবহু দুপুর
আর কোনো প্রাণপণ শব্দ নেই-- শব্দ নেই
জ্বর।

সানগ্লাস

ঘরের এক কোণে রাজা দাঁড়িয়ে থাকেন। এবং তিনি দাঁড়িয়েই থাকেন। তার হাত নড়ে না, পা নড়ে না। অসাড়, ঠাণ্ডা পাথর। পাথরের চোখে সানগ্লাস।

সে দাঁড়িয়ে রয়েছিলো সানগ্লাসের উল্টোদিকে। দিবালোক তখন প্রকাশ্যে। পকেটটা খুব ভারী। আর ঝাড়া দিতেই উড়ে গেল কয়েকটি পেঁচা। এবার শুরু হবে যুদ্ধ-- রাজায় রাজায়। সে ভাবলো, মন্দ নয় মোটে, শুরু তো হোক একটা কিছু।

রাস্তাটা যে কত স্থিতিস্থাপক। সে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে তখন অনেকটা পথ পেছনে। রোদ নামলো মাথার ওপর। তখন দু'একটা ঝোপ-ঝাড় নড়ে উঠলো। গলা বাড়ালো একটি দুটি হেলমেট-- কে বাবা? কোথাকার নবাব? সে যেতে যেতে বলল, আমি। ধূলো উড়লো হাইওয়েতে। আর সম্মিলিত হ্যান্ডস আপ। চাকা উল্টে গড়িয়ে পড়লো একটা পিকআপ ভ্যান। তারপর সোজা হয়েই দ্রুত-- অতিদ্রুত। পেছনে নদী, বন, একটা প্রজাপতি। চোখ কচলে ঝিম ঝিম পুলিশ বললো, 'জানো, তুমি কোথায়?' সে জানতো না। বললো, 'এই যে আমার পকেটে একটা আধুলি-- রুপালি।' পুলিশ হাই তুললো। তারপর ঘুমের ভেতর তলিয়ে যেতে যেতে স্বগতোক্তি করলো, 'আমার বুটজোড়া... মোজায় ঘাম হয়েছে।'

তিনদিন পর তাকে ছেড়ে দেয়া হলো তিন মাথার মোড়ে। শার্ট ছেঁড়া-- ময়লা। খড়খড়ে দাড়ি। চোখে-মুখে পানি পড়ে নি। কড়কড় করছে। কেউ একজন কর্তৃপক্ষ জিজ্ঞেস করলো, 'কোথায় যাবে?' খুব ঘুম পেয়েছিলো। বললো, 'বাড়ি যাবো।' কাছেপিঠে জনা পাঁচেক হেসে উঠলো আকাশ কাঁপিয়ে। ক্ষীণ গলায় সে আবার বললো, 'বাড়ি যাবো।' একটি হেঁড়ে গলা বললো, 'ওহে, ওকে বাড়ি নিয়ে যাও।'

সে বাড়িই যায়-- যেতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ পেছনে। রোদ নামলো মাথার ওপর। তখন দু'একটা ঝোপ নড়ে উঠলো। গলা বাড়ালো একটি দুটি হেলমেট। তারপর সোজা হয়েই দ্রুত-- অতিদ্রুত...

ঘরের এক কোণে রাজা দাঁড়িয়ে থাকেন। এবং তিনি দাঁড়িয়েই থাকেন। ঠাণ্ডা পাথর।

মঈন চৌধুরী সম্পাদিত প্রান্ত ৫, আগস্ট ১৯৯৩ থেকে


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ও রাজা,শেষে তুমি বাড়িই গেলে বুঝি?
কৃতজ্ঞতা মুজিব মেহেদী ।
-----------------------------------------
ভালো নেই,ভালো থাকার কিছু নেই

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শেখ জলিল এর ছবি

সঞ্জীব চৌধুরীর মৃত্যুতে আমরাও শোকে পাথর।
...স্মৃতি জাগানিয়া পোস্ট।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

??? এর ছবি

বাহ! কবিতা গল্প সবই পাওয়া গেল। আজকের সমকালে কামু-র লেখাটাও ভাল।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।