'নির্মমতার ছকে বাঁধা সৌন্দর্য-- বেজির বালের মতো হাসে'

মুজিব মেহদী এর ছবি
লিখেছেন মুজিব মেহদী (তারিখ: সোম, ১৪/০১/২০০৮ - ১২:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই পোস্টটি বদরুজ্জামান আলমগীর রচিত অহরকণ্ডল নামধেয় একটি অসাধারণ টেক্সটকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা। পরবর্তীসময়ে টেক্সটটি কামালউদ্দিন কবিরের নির্দেশনায় জন্মসূত্র-এর প্রথম প্রযোজনা হিসেবে মঞ্চসফল হয়। তবে মঞ্চায়ন বিষয়ে এই রচনায় কোনো মূল্যায়ন করা হয় নি।

প্রথমেই বলে নেয়া ভালো যে, এই টেক্সট, অহরকণ্ডল, আলোচনার জন্য খুব উপাদেয় বস্তু নয়। এর মধ্যে সেই ধরনের বেপরোয়াপনা লক্ষণীয়, যা সৃজনশীল রচনার অ্যাকাডেমিক সীমারেখাকে থোরাই কেয়ার করে, যা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখাপল্লির প্রচলিত ডাকনাম-- কবিতা, নাটক, গল্প ইত্যাদি কোনোটি শুনেই ঘাড় কাত করে পুরোপুরি সায় দেয় না বরং নাখোশ হয়েছে এরকম আচরণ করে। না থাকলেও চলত, কিন্তু তবু এর ওপরেও একটি গোত্রনাম-- 'দৃশ্যকাব্য', অর্থাৎ দৃশ্যং তত্রাভিনেয়ম, চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। কারণ বস্তুপৃথিবীর সকল কিছুরই একটা না একটা গোত্রপরিচয় থাকতে হয়। থাকতে হয় এই অর্থে যে যারা এই গোত্রভেদগুলো করে, অর্থাৎ মানুষ, তারা সুনির্দিষ্ট অশনাক্তকৃত কোনোকিছুকেই খুব একটা সহ্য করতে পারে বলে মনে হয় না। তাই পূর্বতন নারী-পুরুষ কর্তৃক কোনোকিছুর ভেদ-অভেদ স্থির না করা হলে নিজেরাই স্থির করে নেয়। শ্রেণীকরণ করে। কখনো তা যথাযথ হয়, কখনো হয় না। এসব কথা এজন্য বলা যে, 'দৃশ্যকাব্য' শব্দবন্ধটি নতুন নয়, অথচ টেক্সটি নতুন। তাইজন্য এই শ্রেণীকরণ আমাকে নিমরাজি হয়ে মেনে নিতে হয়, অথবা না-মানা রোখটা দাঁতে দাঁত ঠুকে চেপে রাখতে হয়। এখন প্রশ্ন হলো, আমি নিজেও যেখানে মানুষগোত্রীয় অর্থাৎ শ্রেণীকরণপ্রিয়, সেখানে একটা গোত্রনাম পেয়ে বর্তে না গিয়ে এত রোখারোখি কেন ? সেটা হয়ত নিজে এর একটি গোত্রচিহ্ন আঁকবার স্বাধীনতা না পাওয়ার কারণে। সুযোগ থাকলে আমি হয়ত একে চিহ্নিত করতাম 'না-জাতকল্প রচনা', 'মিথোবাস্তব আখ্যান' বা 'ঘোরকলা' বলে। নাম যদি একান্ত দরকারই হয়, তবে নতুন কিছুর জন্য চাই নতুন নতুন নাম। হায়, নামকরণেচ্ছাটি আমার, ধু-ধু করা বুরুঙ্গিবিলে যেন চামড়াখোলা বিপন্ন গরুর মতো অক্ষমতার সাকুল্য ক্রোধে হট্টিটি পাখি হয়ে ঘুমিয়ে যায়!

সৃজনপীড়নে উজ্জ্বল কিন্তু বিপুল বৈভবের ভারে কাবু অহরকণ্ডল জুড়ে দানিউল, আকমল, বাহার ও উপেন্দ্র চামার (একটিমাত্র দৃশ্যে যার সকরুণ উপস্থিতি) যে ঘোরের ভিতরে তাদের কর্মক্রম সম্পাদন করে চলে সে ঘোরটির আবিষ্কর্তা (ডিসকভারিস্ট) বদরুজ্জামান আলমগীর হলেও এর মৌল উপাদানসমূহ তথা স্মৃতিশ্রুতির উদ্ভাবক (ইনভেন্টর) সুদীর্ঘ ইতিহাস পরম্পরায় টিকে থাকা জনসমাজ। এই স্মৃতিশ্রুতি বা পুরাণকথা (ধর্মপুরাণ, লৌকিক পুরাণ, লোকাচার প্রভৃতি) অহরকণ্ডলে সতত জীবন পেয়েছে। কখনো কখনো মনে হয়, পুনরোন্মোচিত পুরাণকথাই অহরকণ্ডলের প্রধান কাণ্ডারি আর বাস্তবিক রক্তমাংসের মানুষ ও তাদের ক্রাইসিসসমূহ এর অনিবার্য অলঙ্কার মাত্র। অনিবার্য, কেননা তা না হলে এ টেক্সটের দিকে বিষজর্জর ও বিদিশাগ্রস্ত এ সময়ে মনোযোগ দিয়ে তাকাবার কোনো দরকারই হতো না। কেননা এই অলঙ্কারটুকু পরাবার জন্যেই জনসমাজ কর্তৃক সৃজিত বিচিত্রব্যাপ্ত আখ্যান ও ক্রীড়াসমূহের আহরণপ্রয়াস ও তার মালা গাঁথা।

'মনে হওয়া' বিষয়টা আসলে খুব স্বাধীনচারী, কিছুতে ঠেকে না। সেজন্যে বিপরীতভাবে এই 'মনে হওয়া'রও দেখা মেলে যে, পূর্বোক্ত 'মনে হওয়া'টি আসলে অনভ্যস্ততাজনিত। শিল্পপল্লিতে এরকমটি আমরা বরাবর দেখে-শুনে আসি নি। নতুন কিছুর আবির্ভাবেই বেশি পুলকানুভব করলেও মানবেন্দ্রিয়সমূহ মুদ্রাদোষবশত প্রথমেই খোঁজে সাদৃশ্য-- না পেলে থমকে যায় এবং অক্ষম, অসমর্থ ও অগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তাকে গ্রাহ্য করে। প্রবণতা অনুযায়ী গরিষ্ঠভাগ শিল্পভোক্তাই এখানে স্থির থাকে, তবে ভোক্তাদের মধ্যকার লঘিষ্ঠভাগ, যারা প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব ও সংজ্ঞার প্রতি অন্ধবিশ্বাসী নয়, তারা অপেক্ষাকৃত নমনীয়ভাবে এর দিকে তাকায় এবং ক্রমশ মুগ্ধতার পানে চমকপ্রদ এক ভ্রমণ মনে করে হাঁটতে লাগে ; এবং শেষাবধি যে স্থানটিতে গিয়ে পৌঁছায়, সেটি পরিশ্রমলব্ধ বলে অতিশয় আনন্দদায়ক লাগে। ধারণা হয়, বাস্তব ঘটনা, স্মৃতিশ্রুতি ও কবিকল্পনার মিশ্রণানুপাতে অপ্রচলিত এক সমীকরণ স্থাপনের জন্যেই অহরকণ্ডল নামধেয় এই টেক্সটি নতুন-- যেজন্যে একটি শিল্পকর্ম হিসেবে এটি বিশেষ শ্রবণ-দর্শন ও বোধন যোগ্যতা দাবি করে বসে।

অহরকণ্ডলের মুখ্যপাত্রত্রয় দানিউল, আকমল ও বাহার রীতিমত আটপৌরে জন, কিন্তু মেথর সুনয়নীর চোলাই মদের ব্যারিস্টারিতে ও অন্যান্য কারণে এ কাব্যে তাদের গতিবিধি ও ক্রিয়াকর্মাদি পুরোমাত্রায় আটপৌরে নয়। দানিউল, বিয়ের রাতে চাইত্যান (ছাইতান) গাছে ঝুলে যার চাচা আত্মহত্যা করে, যার বোন স্বামীর মৃত্যুজনিত কারণে বিয়ের মাত্র দুমাস পরেই পেটে ডিম নিয়ে প্রত্যাবর্তিত, যথেষ্ট বাস্তব হলেও প্রচণ্ড রকম ঘোরগ্রস্ত। সে অগ্নিশিখার ভিতরে হাত-পাহীন, মাথাভর্তি লম্বা চুলওয়ালা মানুষের অবয়ব দেখে, কেলেন্ডারে ঝোলানো ছবিতে বুরাক উড়ে যেতে দেখে, পানিতে বমি করলে নিজের মুখ দেখা যায় বলে পরিকল্পিতভাবে তা বাস্তবায়ন করে। কিংবা দলের মধ্যে থেকেও একা, ৫ বছর বয়সে পিতাহারা আকমলের কথাই ধরা যাক, বিধবা মাকে একবার নগ্ন দেখবার স্মৃতিকে যে কোনোভাবেই ভুলতে পারে না, যার শাড়ির পাড় থেকে উদ্ভুত বাসুকি নাগের ফণা তাকে বড়ো ব্যতিব্যস্ত রাখে, যে দিগন্তলীন মাঠের পিঠের ওপর দাঁড়িয়ে সৃষ্টিরহস্যে বিভোর হয়ে যায়, বিভ্রমে-বিভ্রমেই দার্শনিকোচিত সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে 'কোনো কিছুরই স্থায়ী কোনো অর্থ নেই, সব মিথ্যা কুহক মাত্র।' জাত-ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু হয়ে যাবার জন্যে প্রস্তুতি নিয়ে সতীর প্রেমে প্রচণ্ডভাবে ব্যর্থ বাহার যদিও অন্য দুজনের চেয়ে বেশি সপ্রতিভ, সবকিছুতেই যে উৎসাহী, উদবিড়াল দেখে যে বলে ওঠে 'ধর শালাকো', কূয়ার ভিতরে মুখ নামিয়ে যে শিশুর মতো ধ্বনি-প্রতিধ্বনি উৎপাদন করে, তার কাছে মনে হয় সে হয়ত দেবতা হয়ে গেছে। এরা সবাই এ কাব্যে সবিশেষ 'মনে হওয়া' দ্বারাই চালিত। অবশ্য সর্বদা নয়। অসুস্থ মেয়ের রক্তবমি বন্ধ করতে জ্বিনের বৈঠক বসাবার খরচ যোগাতে সবান্ধব যে উপেন্দ্র চামার বুরুঙ্গির চরে জীবিত গরুর চামড়া ছিলিয়ে ধরা পড়ে ও আত্মদংশনে ভুগে নিজেরই চামড়া খুলে বদলা নিতে বলে, তার কথন এতটাই মর্মভেদী এক আর্তরব হয়ে ওঠে যে ওরা তাকে ক্ষমা করে দেয়। কারণ উপেন্দ্র'র সাথে ওদের পার্থক্য বস্তুতপক্ষে নেই-ই। ঘোরগ্রস্ত হয়েও কখনো কখনো এরা বাস্তব মাটির ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা রক্তমাংসের মানুষেরই আচরণ করে। দানিউল ছেলা গরুর মাংস কেটে নিতে চায়, আকমল হঠাৎ রণে ভঙ্গ দিয়ে গৃহে ফিরতে চায়, বাহারের বিনা আক্রোশে হত্যাকাণ্ড ঘটানোকে অনৈতিক কাজ বলে মনে হয়।

এ টেক্সটের চিন্তাপ্রক্রিয়া ও তার বর্ণনার যে গতি, চরিত্রসমূহও সেরূপ দ্রুতগতিতে চলে, কোথাও থামে না, থামে না যেমন ঘড়ির কাঁটা, সময়। এই দ্রুতযাত্রাপথের স্মৃতিশ্রুতি ও পুরাণকথার পশ্চাদমুখী টানকে (এটি অন্য আরেক বিতর্কের বিষয়) বিবেচনার বাইরে রাখলে এবং ভাষা ও শৈলীর চমৎকারিত্বকে উপেক্ষা করলে অতিপরিচিত তিনজন মানুষের বিশেষ উদ্দেশ্যে পরিচালিত নৈশাভিযানের যে গল্পটি এখানে পাওয়া যায়, তা খুবই সরল, যা সর্বাংশে ব্যর্থ এবং পাত্রত্রয়ের 'মনে হওয়া' দ্বারা প্রশান্ত ও উপসংহৃত। কিন্ত কাহিনীপ্রধান টেক্সট নয় বলে সেভাবে এটি বিবেচনাযোগ্য নয়। স্রেফ ঘটনার জন্য নিরাভরণ ঘটনার বয়ান অহরকণ্ডলে নেই। এর শক্তি এর ঈর্ষণীয় কাব্যভাষা, চরিত্রত্রয়ের মনস্তাত্ত্বিক ভাঙচুর এবং আরো অজস্র দিন ও রাত্রির নস্টালজিক অভিজ্ঞতার নিপুণ বুননশৈলী। অর্থাৎ এর সঙ্গত বিবেচনা সংশ্লিষ্ট সমস্ত কিছু-- ভাষার কাব্যিকতা, শৈলীনিরীক্ষাসৃজিত ঘোর, বিবিধ পুরাণ আখ্যানের সংমিশ্রণ এবং প্রবাহমানতাকে নিয়েই, যা অহরকণ্ডলকে প্রামাণ্য করে তুলেছে বর্ণিল এক পলিফোনি হিসেবে। এই পলিফোনিক ঘোর সৃষ্টি করতে গিয়ে রচয়িতার নিজেকেও ঘোরের সমীপবর্তী হতে হয়েছে, তাতে কখনো সখনো ভাষার সংলগ্নতার দাবিও হয়ে পড়েছে গৌণ, যার ফলে ভাষা সহসাই উন্নীত বা অবনত হয়েছে স্কিজোভাষায়-- 'বেগুনি, নীল, হলুদ, সবুজ, কমলা, লাল ও আকাশি রঙের প্রবাহে খণ্ডিত ও মুহূর্তকালীন সাপের মাথা, চাঁদের আলো, গজাল মাছ, মৌলভি, ঘোড়ার পা, নৌকার গলুই, টিকটিকির লেজ, মড়াখোলা, কিরিচ, টুপি পরা মুণ্ডু, মাছের দাঁত, মহিষের শিং, সড়ক, তালগাছ, বাঁশঝাড়, ইলেকট্রিকের খাম্বা, চামো পাড়া, ঝগড়ি, জোড়মল্লিকা, সিংহের মাথা, ভেড়ার দৌড়, বেতবুনিয়া, পুকুর ঘাট, ভাঙা দালান, ঘণ্টাধ্বনি, ঢং ঢং ঢং ! ঢং ঢং ঢং!'। অবশ্য ঘটনা ও উপঘটনার যে প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এ ক্যাটালগিংটি তৈরি, মনে করবার যথেষ্ট কারণ আছে যে, ভাষাগত এ অসংলগ্নতাটিই সে পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি সংলগ্ন।

স্বাভাবিক হয়েও অস্বাভাবিক এই চরিত্রসমূহ যে সমাজব্যবস্থা দ্বারা সৃজিত, সে সমাজেরই উচ্চকোটিভুক্ত একজন শিল্পপতি হামিদের তিনটি চাকরি ও একলাখ টাকার প্রলোভনে সম্মত হয়ে একজন নিরপরাধ মানুষকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার যে নৈশকালীন অভিযানে এরা শামিল এবং যে অভিযানটি একটি 'মনে হওয়া' ধরনের প্রতীকী সাফল্য ও সমবেত ক্রন্দনের ভিতর দিয়ে শেষ হয়, তা এই সমাজের গোপন হিংসাবিষের প্রবণতাসূচক একটি চিহ্নকেই রঙে-রেখায় এঁকে রাখে। এই হামিদদের আমরা চিনি জানি, আবার চিনিও না জানিও না। এরা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। প্রতিদিন, প্রতিঘণ্টায় যে দেশে খুন হচ্ছে মানুষ, এমনকি হচ্ছে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায়ও, সে দেশে এর নেতিমহিমা কীভাবে প্রতিনিয়ত জনঅসহায়ত্ব সৃষ্টি করে চলেছে তা কার না জানা! আমরা এ-ও জানি, এতজ্জাত খুব কম ঘটনারই সুষ্ঠু প্রতিবিধান হয়। হলেও হামিদকুল, যারা এসব দুর্ঘটের ঘটক, তারা অদৃশ্য ও অশনাক্তকৃতই থেকে যায়। শনাক্ত ও শেষে দৃশ্যমান হয় কেবল দানিউল, আকমল, বাহাররাই, যারা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এসব ঘটিয়ে থাকে বা ঘটাতে যায়, নিয়ামুলদের বিরুদ্ধে যারা শরীরে বা শরীরাধিক চৈতন্যের কোথাও ক্রোধের ক্ষুদ্র জীবাণু পর্যন্ত খুঁজে পায় না।

তো, এই টেক্সটের একজন পাঠক হিসেবে বা অভিনেয় এই কাব্যের একজন দর্শক হিসেবে আমি বা আমরা কী মর্মবস্তু আহরণ করব ? যেকোনো শিল্পকর্মে তার ভোক্তাদের জন্য মোটাদাগে কোনো লার্নিং বা শিক্ষা ইনজেক্ট করা থাকা জরুরি-- এটা তর্কাতীত কোনো বিবৃতি নয়। তবু, সামগ্রিকভাবে ভাষাসৌকর্য, বাক্যস্থাপত্য, অভিনয়নৈপুণ্য, ভেতরস্থ খণ্ড উপলব্ধিমালা প্রভৃতির অধিক এক বা একাধিক মর্মকথা কি একটি বড়ো কাজের থেকে আমরা আশা করতে পারি না ? অহরকণ্ডলের সেই সামগ্রিক মর্মকথাটি কী, এর মঞ্চরূপায়ণ হয়ত সে দিকে স্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত রাখতে সক্ষম হবে। কেননা অভিনয়ার্থে রচিত হলেও চমৎকার পরিবেশ রচনা ব্যতিরেকে এ কাব্যে অভিনয়ের জন্য অন্য কোনোরূপ সীমাশৃঙ্খল রচয়িতা কর্তৃক আঁকা হয় নি, এর মঞ্চ রূপায়ণের ক্ষেত্রে যা নির্দেশককে দেবে সৃজনব্যাখ্যান এবং পুনঃসৃজনের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা।


মন্তব্য

আরিফ জেবতিক এর ছবি

দ্বিতীয় পর্বে মঞ্চায়ন বিষয়ে বিশ্লেষন এলে ভালো লাগবে ।

মুজিব মেহদী এর ছবি

বয়স যখন বিশ থেকে পঁচিশের মধ্যে ছিল তখন যেকোনো ভালো বই পড়লে প্রায়ই তার রিভিউ লিখে ফেলতাম, যেকোনো নাটক দেখলেই তার উপর আলোচনা ফেঁদে বসতাম। অবলীলায় প্রায় শেষকথা বলে দিতাম তখন। কিন্তু যতই বয়স বেড়েছে, ততই যেন এসব ক্ষেত্রে সাহস কমেছে আমার। এখন পারতপক্ষে বই পড়ে বা নাটক দেখে কিছু লিখি না। লিখতে সাহস পাই না বলে।
এই টেক্সটি পড়ে আমার মধ্যে একটা তোলপাড় ঘটে গিয়েছিল। তাই দুঃসাহস দেখিয়েছিলাম। পরে দু'বার টেক্সটির মঞ্চায়ন দেখেছি। ওতেও বিশেষত্ব ছিল। সাহস করে লেখা শুরু করলে হয়ত হয়েই যেত, কিন্তু শুরু করতে পারি নি। আবার দেখা হলে যদি ভেতর থেকে তাড়া বোধ করি তো লেখা হয়েও যেতে পারে, কিন্তু কথা দিচ্ছি না।
অবশ্য অহরকণ্ডলের মঞ্চায়ন নিয়ে সুধীজনেরা অনেক লেখা লিখেছেন। ওগুলোর কোনোটার সফট কপি সংগ্রহ করতে পারলে হয়ত আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করাও যেতে পারে।
..................................................................................
শোনো, বীণা আমি বাজাইনি প্রতিবারই নিজে, এমনও হয়েছে
বীণায় রেখেছি হাত, নিজেই উঠেছে বীণা বেজে!

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

শেখ জলিল এর ছবি

'নির্মমতার ছকে বাঁধা সৌন্দর্য-- বেজির বালের মতো হাসে'...
স্টোরিটা বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হলো। দ্বিতয় পর্বে আরও কিছু জানতে চাই...

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

মুজিব মেহদী এর ছবি

দুঃখিত, এর আপাতত কোনো দ্বিতীয় পর্ব নেই।
..................................................................................
শোনো, বীণা আমি বাজাইনি প্রতিবারই নিজে, এমনও হয়েছে
বীণায় রেখেছি হাত, নিজেই উঠেছে বীণা বেজে!

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

স্নিগ্ধা এর ছবি

একটা naive প্রশ্ন - 'অহরকন্ডল' মানে কি?

সৃজনপীড়নে উজ্জ্বল কিন্তু বিপুল বৈভবের ভারে কাবু অহরকণ্ডল

এটা কেন বলা হলো? এই দৃশ্যকাব্যটি তো আখ্যাননির্ভর নয়, শ্রুতাস্মৃতির পুনোরোম্মচন ই এটির কান্ডারী ধরা হয়েছে। তাহলে কি পুরোটা দেখার পর বাস্তবতা, 'মনে হওয়া', আর পূরাণাখ্যানের যথাযথ সমন্বয় করা যায় নি বলে মনে হয়?

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এধরনের অপ্রচলিত বা (অন্তত আমার জন্য) অচেনা /অপঠিত ফর্মের লেখা সামনে নিয়ে আসার জন্য। আরো কি পর্ব আছে ?

মুজিব মেহদী এর ছবি

মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা র পক্ষী সংখ্যায় ওয়াহিদুল হকের লেখা যে ধ্বনি আর ফিরবে না তে অহরকণ্ডল সম্পর্কে একটা অনুচ্ছেদ আছে। মিথপাখি অহরকণ্ডল সম্পর্কে ধারণা দিতে ওই অনুচ্ছেদটির পুরোটাই বরং তুলে দেই।
দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার সারা জীবনে যা লিখেছেন তার সবই তাঁর গ্রামের স্মৃতি,-- মানিকগঞ্জের। একই জেলায় ভিন্ন মহকুমায় আমরা মানুষ। আমাদের গ্রাম্য কিসসা-কাহিনীতে পাখি ছিল ঠাকুরমার ঝুলি ঠাকুরদার ঝোলা থেকে বেশি। বাড়ির ছোট ছেলেটি খেলে না, বাইরে যাবার জন্য বায়না ধরে না, ভ্রাতৃবধূদের আশেপাশে ঘোরে, রান্নাঘরই জগৎ ছিল তার। তাই বিদ্রূপের নামকরণ হলো তার 'চুলাহাইল'। কিন্তু এক রাতে তার গোপন সাধনার ফল ধরল-- বৎসরের পর বৎসর জেগে সে ধরল তার স্বপ্নের পাখিকে-- অহরকণ্ডল পাখি। এই পাখিই তাকে পিঠে করে নিয়ে যায় ভিনদেশী রাজার প্রাসাদে। সাতফুল রাজকন্যার স্বাস্থ্য পরিচর্যায় রাজা লক্ষ করেন মেয়ে তাঁর ক্রমেই এক ফুল, দু'ফুল করে ওজনে বাড়ছে। সন্দেহ হলো তাঁর, ধরে ফেললেন আমাদের নায়ককে। অহরকণ্ডল পাখি এসে রাগে ক্ষোভে দুঃখে পাখা ঝাপটায় আর এক এক করে প্রাসাদের মর্মর খিলান ধসে পড়তে থাকে। কিসসার আরম্ভ থেকেই যদি দুই নিমেষের কথা তবে পাঁচ নিমেষের গান। পাখি ডানা ঝাপটায়, আর গান গায়। দুঃখের গান জগতের সমস্ত কান্না দিয়ে গড়া। মাস গড়িয়ে গেলে গল্প কথকতা পরিণতি পায় নায়কের মুক্তিতে, নায়িকার সঙ্গে পরিণয়ে এবং অবশ্যম্ভাবী রাজ্যলাভে।

টেক্সটি সৃজনের উচ্চমাত্রা ছুঁয়েছে বলে এটি উজ্জ্বল। তবে পাঠস্ফূর্তি এতে যতই থাকুক, লেখনটা এর অত স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না বলে মনে হয়েছে আমার। এজন্য দরকার হয়েছে পীড়ন, এ পীড়ন টেক্সটকে এবং রচয়িতার নিজেকে।
বাক্যের দ্বিতীয়াংশকে বোধে আনতে একটি ছবির সাহায্য নেই। ধরুন লিচুগাছের একটি চিকন ডাল, তাতে এত বেশি সুপক্ক লিচু ঝুলে আছে যে ডালটি যেন এ বৈভবের ভার আর সইতেই পারছে না অবস্থা।

না, কোনো ব্যর্থতা আমি এ বাক্যে মূর্ত করতে চাই নি বস্তুত।
..................................................................................
শোনো, বীণা আমি বাজাইনি প্রতিবারই নিজে, এমনও হয়েছে
বীণায় রেখেছি হাত, নিজেই উঠেছে বীণা বেজে!

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।