বৃষ্টিভেজা গদ্যকলাপ ২ : স্ফীতিহীন স্ফীতকার্য

মুজিব মেহদী এর ছবি
লিখেছেন মুজিব মেহদী (তারিখ: শুক্র, ৩০/০৫/২০০৮ - ১২:২০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথমে মেঘমালা সঞ্চালিত হয় ও যেমন ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে পড়ে, পরে তা চূর্ণবিচূর্ণ হয়, তারপর তা একত্রিত ও পুঞ্জীভূত হলে আমরা দেখি বিজলিপ্রভা, শুনি বজ্রধ্বনি, যা ভয় ও ভরসা সঞ্চার করে। পরে প্রকৃতির অনুগ্রহে পরাগ ও বারিবহনকারী বায়ুরাশি প্রেরিত হয়। সুসংবাদবাহী বাতাস ছাড়া পেয়ে পর্বতশৃঙ্গে বিশ্রামরত পুষ্কর মেঘকে চুলের মুঠি ধরে বয়ে নিয়ে আসে নিষ্প্রাণ ভূখণ্ডের দিকে এবং তারপর আকাশ থেকে পরিমিতভাবে বিশুদ্ধ ও উপকারী বারিবর্ষিত হয়। এতে মৃত জমি পুনরায় জীবিত হয় এবং অসংখ্য জীবজন্তু ও মানুষের তৃষ্ণা নিবৃত্ত হয়। তাতে সবরকম গাছের চারা ওঠে। ওতে উদ্গত হয় ঘনসন্নিবিষ্ট উদ্যান ও সবুজ পাতা। সৃষ্টি হয় শস্যদানা, আঙুর, শাকসবজি, জয়তুন, খেজুর, অন্য সবরকম ফল ও গবাদিপশুর খাদ্য। প্রাণী ও ভূমি জীবনের রোমাঞ্চ অনুভব করে ও স্ফীত হয়। আর তাতে জোড়া জোড়া সবরকম সুন্দর জিনিস উৎপাদিত হয়। এই বাণীরূপ যাকে কেবলই স্ফীতিকার্য বলে, কখনো কখনো তা অস্ফীতিঘটনও। যেমন বৃষ্টির দিকে আমার ওই বিকেলগমনটি ছিল বস্তুত স্ফীতিলোপের জন্য। সেদিনের অপরাহ্ণিক সৈকতে সুন্দরী বিজলি ছিল, বজ্রের হুঙ্কার ছিল, তবু একদম টলি নি। আমাদের ঝোঁক ছিল পুরোটাই মেঘমল্লাররূপী শান্তিপূর্ণ বৃষ্টিপাতে, আগুনরূপী দীপক রাগে নয়। তবু বাজিয়ে দেখতে বজ্রসম্ভাবী বাচাল মেঘকে আদর করে কাছে ডাকি, গল্পগুজব করি, বলি যে এ যাত্রা যাহোক একজন অলরাউন্ডার চাই, যদি অন্তত সেরকমটি হও, তাহলে আগুন হলেও চল আমরা খেলি। সে জানায় যে, আক্ষরিকভাবে যাকে অলরাউন্ডার বলে তা সে নয় বস্তুত। প্রথম রাউন্ডে সে বরাবরই খুব নীরব ও চিৎপাত, আকাশ জুড়ে তার শুধু শুয়ে থাকা ও চটুল যত হাকডাক এবং অতি অবশ্যই তা বৃষ্টিপাতহীন। যদি বাতাস এরপরও প্রবাহিত হয় দ্বিতীয় রাউন্ডে এবং তাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে সমর্থ হয়, তাহলেই সে কেবল হ্যারিকেনরূপিণী হয়ে ওঠে। তখন সে ক্ষুধার্ত ঝড়, শুষে নিতে পারে আমূল সাগর এবং সুনামি হয়ে ভাসিয়ে দিতে পারে রাশি রাশি জনপদ। ভয় যদিচ আমার ধাতে নেই, তবু ভয়-ভয় একটা অনুভূতি সহসাই কাঁটা দিয়ে ওঠে মনে। ওরে ব্বাপ! সংলাপ পর্বে ক্ষান্ত দিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘোরাতেই দেখি বৃষ্টিসম্ভাবী নরম কোমল বিচূর্ণ মেঘ। শ্বেতসর্পিণীর মতো তার অবয়ব। বলি, ওগো নুন তুমি বর্ষিত হও! ওগো ধুন তুমি গীত হও! সে শুরু করে খুব নিচে থেকে, ফাল্গুনি বাতাস বয়ে যাবার ঢঙে। কিন্তু তা ছিল ভেজা খুব। মন্ত্রপাঠের মতো নিচুস্বরে বিড়বিড় করতে করতে সে ক্রমে ভিজিয়ে দিতে থাকে, যে অংশ কখনোই কোনো বৃষ্টিতে ভিজে না সে অংশসহ। ক্রমশ সে ঊর্ধ্বমুখী হলে তাকে ত্রাণকর্ত্রীর মতো লাগে। উলটেপালটে তৃপ্তি না মেটা পর্যন্ত ভিজি। মনে হয় বৃষ্টি নয়, শান্তিবর্ষিত হচ্ছে। হঠাৎ লোভ হয় উৎসমূলে তাকাবার। কিন্তু ও বৃষ্টি এমনই গোলবৃষ্টি যে কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না তার মূল কিংবা চূঁড়া। এই যা, সবখানেই তার আদি, সবখানে অন্ত। শেষ নেই প্রভু তার শেষ নেই, এই নামতা জপতে জপতে গর্ভে শান্তির বীজ নিয়ে এরপর হেলেদুলে কেবলামুখী হই, যে কেবলা খুঁজে পেতে প্রতিবারই আমাকে প্রাণান্ত হতে হয়।

বৃষ্টিভেজা গদ্যকলাপ ১ : এ হমিজ টু দ্য রেইন গডস


মন্তব্য

তীরন্দাজ এর ছবি

বৃষ্টিভেজা গদ্যকলাপ ১: মেঘমাল্লার না জয়জয়ন্তী? লেখার বর্ণনায় সুরের কারুকাজের ছায়া দেখা যাচ্ছে। ভাল লাগছে বেশ পড়তে।

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

রণদীপম বসু এর ছবি

ভালো কইরা ভিজেন নাই। ভিজলে এই শক্ত বজ্রকঠিন শব্দভাষা কিঞ্চিৎ গলিবার সুযোগ পাইতো।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

শাহীন হাসান এর ছবি

অঙ্গসঙ্গ শিখেছে বৃষ্টি
ভিজেছে বাগ্বিদগ্ধশব্দসমষ্টি!
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

অনেক কঠিন যে !
বৃষ্টি দেখে ভিজতে এলাম, কিন্তু ভেজা গেলো না তো।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মুজিব মেহদী এর ছবি

হ্যাঁ ঠিকই হয়ত যে,শব্দ-বাক্য-চিন্তাগুলো এখানকার, বিশেষভাবে গলে নি, আমিই ঠিকমতো ভিজে উঠি নি বলে। ক্রমশ আরেকটু গললেও গলতে পারে, খানিকক্ষণ তো ঝরুক।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

হা হা হা দারুণ বলেছেন। আমার কিন্তু মজাই লেগেছে, আস্তে আস্তে পড়েছি, আর দেখেছি মানস চোখে, ঝরে পড়া দৃশ্যগুলো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।