বৃষ্টিভেজা গদ্যকলাপ ৮ : কথোপকথনকে ছাড়িয়ে

মুজিব মেহদী এর ছবি
লিখেছেন মুজিব মেহদী (তারিখ: সোম, ০৯/০৬/২০০৮ - ১০:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

'আপনি কি লেখক-শিল্পী গোছের কেউ ?' ড্রিজলের মমের প্রশ্নে যাহোক একটা কুল খুঁজে পাওয়া যায় ভাবনাসমুদ্রে, নইলে কোথায় যে তলাতাম গিয়ে। বললাম, হ্যাঁ একাধটু লিখতে চেষ্টা করি। গোটাকয় বই আছে আমার। সব শেষেরটি বিনীথ দ্য রেইনট্রি, সদ্যপ্রসূত। ব্যাগ হাতড়ে দেখি, আছে একটি কপি। লিখে দেই ড্রিজলের নামে। মম উচ্ছ্বসিত হয়ে ডেডের দিকে ফিরে বলেন, 'জানো, লোকটা-না একজন কবি!' ড্যাড কার্ড বাড়িয়ে দেন। আমারটাও দিই তাঁকে। 'আসবেন আমাদের বাসায়, ভালো লাগবে।' জি আচ্ছা। মম গলা বাড়িয়ে বলতে লাগেন, 'আমাদের ফ্যামিলি খুবই সংস্কৃতিমনা। জানেন, ছোটবেলায় আমি খুব অভিনয় পাগল ছিলাম। বাবা যদিও কখনো অভিনয় করতে দেন নি। কিশোরগঞ্জের মতো মফঃস্বলে ভদ্রলোকের মেয়ে নাটক করবে, লোকজন বলবেটা কী! এসব বলেকয়ে বাবা আমাকে নিরস্ত করতেন। এখন দিন অনেক বদলে গেছে। তাছাড়া মফঃস্বল ছেড়ে আমরা এখন স্থায়ী হয়েছি রাজধানীতেই। আমাদের মেয়ে লিখতে, গান গাইতে বা অভিনয় করতে চাইলে আমরা মোটেই বাধ সাধব না।' বাধ সাধাটা উচিত নয় ওকে, এই বয়সে। কেন তা করতে যাবেন। ওর যা ইচ্ছে হবে তাই করবে। 'আপনি অভিনয়ও করেন বুঝি ?' মাঝে মাঝে। 'আপনাদের কোনো নাটক হলে আমাদের জানাবেন, আসবো।' আমি তো কোনো দলে কাজ করি না। বন্ধুদের নাট্যদল আছে, নিজেকে ওদের দলের একজন ভাবি, ওরাও ভাবে আমাকে। এই দল মাঝে মাঝে প্রোডাকশনে যায়। তখন খবর দিতে পারি। 'হ্যাঁ দেবেন, আমরা দেখতে যাব।' জি আচ্ছা।

বিমান যখনই মেঘের ভিতরে সেধে গেল ঘোষিকা জানান দিল যে, 'ক্যাপ্টেন ইজ ফেসিং সাম প্রব্লেম ফর রাফ ওয়েদার, প্লিজ টাইট ইউর সিট বেল্ট।' চোখ ছিল তখন দূরে হিমালয়ের দিকে। শুনে গা হিম হয়ে গেল। ভুলে গেলাম ড্রিজল এবং তার মম-ডেডকে। ভুলে থাকতে থাকতেই ল্যান্ড করি জিয়ায়। নেমে ড্রিজলের মুখের স্থায়ী হাসিটা না-দেখে খুব দমে যাই। ভাবতে থাকি, এটা বুঝি ওই ভুলে থাকারই খেসারত। লাগেজের জন্যে অপেক্ষার সময় পাশে এসে দাঁড়ায় সে। একা। 'বাসায় এলে খুব খুশি হব।' আগে তো ফোন করি, পরে না-হয় কখনো যাওয়া যাবে। 'আমার মোবাইল নাম্বারটা রাখবেন না!' ও হ্যাঁ, রাখা হয় নি তো। আমি আগ্রহী, কিন্তু আমার মোবাইলে চার্জ নেই যে, সেভ করি কীভাবে। 'কাগজেই লিখে নিন না।' হ্যাঁ বল। '০১৭১৭......'। থ্যাঙ্কস। 'মাই প্লিজার!'

এরপর আমরা অজস্রবার ড্রিজলিং ও প্রেসিপিটেশন মাথায় নিয়ে হাতে হাত ধরে হেঁটেছি, স্বর্গ থেকে নরক অবধি। পিচের রাস্তা থেকে মাটির রাস্তা, ঘাসের রাস্তা সব দিয়ে চিত্রকূট পর্বত অবধি। বাস্তবে ও স্বপ্নে। কিন্তু ত্রিভুবন বিমান বন্দর ঘিরে থাকা গাছময় পাহাড়গুলোর ভেজা হাতছানি এখনো মনের মধ্যে রয়েই গেছে। আমরা কি আবার ল্যান্ড করব কখনো, ওই বন্দরে, মাত্র দু'জন! এরই মধ্যে একদিন রাত সোয়া এগারোটা থেকে চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল ড্রিজলের সঙ্গপ্রণোদনা, ছিঁড়ে গেল ভিতরগত যোগসূত্র। আমরা চিরকাল যেরকম একা ছিলাম, আবারো হয়ে গেলাম তেমনি নিঃসঙ্গ বেদনাবৃক্ষ।

বৃষ্টিভেজা গদ্যকলাপ ৭ : ড্রিজলিং অ্যান্ড প্রেসিপিটেশন


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- শেষের দিকে এসে খটকা লাগলো। "ঠিকমতো বুঝি নাই হয়তো!" ড্রিজল কি না ফেরার দেশে চলে গেছে?

(বোকা প্রশ্ন হয়ে থাকলে দুঃখিত)
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মুজিব মেহদী এর ছবি

না ধূগোদা, জীবনের সুতো ছিঁড়ে নি কারোরই, ছিঁড়েছে সম্পর্কের সুতো। ওই দেশ থেকে ফেরা যায়, ফিরে নি ; ফেরানোও হয়ত যায়, আমি পারি নি।

বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি বলে দুঃখিত।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

অতিথি লেখক এর ছবি

গুরু বরাবরের মতো অসাধারন।

কীর্তিনাশা

মুজিব মেহদী এর ছবি

সাধারণ জিনিসকে অসাধারণ বললে পরে কিন্তু সত্যি কোনো অসাধারণ জিনিসের ক্ষেত্রে শব্দ খুঁজে পেতেই মুশকিলে পড়তে হতে পারে বলে রাখলাম।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

'আপনি কি লেখক-শিল্পী গোছের কেউ ?'

এই প্রশ্ন এ অধমকে মাঝে মাঝে শুনতে হয়
আমি জবাব দেই "না"
মানে আমি লেখক-শিল্পী গোছের কেউ নই

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

মুজিব মেহদী এর ছবি

এরকম প্রশ্নের জবাবে আমিও প্রায়ই 'না' বলি, কিন্তু সেবার মোটেই 'না' বলতে চাই নি। ওই পরিচয়টা সেবার বেশ কাজে দিয়েছিল।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

বলতে ভুলে গেছি এই সিরিজ আমার ভাল লাগছে খুব
শেষ হলে প্রিয় পোস্টে রাখব

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

মুজিব মেহদী এর ছবি

আর কথা নেই আপাতত। কয়েকলাইনের 'অ্যাপেন্ডিক্স' পোস্টিয়ে দিয়েছি ইতোমধ্যে।

প্রিয়-অপ্রিয় ব্যাপারে তো কথা নেইই।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি তাইলে কোন দলের লোক?
কোন্দলের না হইলেই বাঁচি!
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

মুজিব মেহদী এর ছবি

কোন্দলের না হইলেই বাঁচি!

আপনার এরকম মনে হলো কেন হঠাৎ?
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

অতিথি লেখক এর ছবি

@মুজিব মেহদী
কথাটা মনে হলো এ জন্য যে, লেখকদের বৃহত্তর অংশটিই নিরীহ আর নির্দলীয়। কখনো কখনো অন্য দলের চাপে চ্যাপ্টা।

-জুলিয়ান সিদ্দিকী

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

ভালো লাগলো। কিন্তু এটাকে অসাহিত্যিক গদ্য বলছেন কেন?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।