আজ (১৬ অক্টোবর) নদীয়ার ভাবুক, সর্বাগ্রগণ্য বাউলকবি লালন [১৭৭৪ (সম্ভবত)-১৮৯০]সাঁইজির ১১৮তম প্রয়াণদিবস। সারাদিন আজ জিয়ার সামনের বাউল-ভাস্কর্য ভাঙার বেদনায় আমরা এতই কাতর ও ক্ষুব্ধ ছিলাম যে, তাঁর মহাপ্রয়াণ দিবসটির কথাও মনে রাখতে পারি নি। অথচ তিনিই হতে পারতেন আজকের সবচে' বড়ো প্রতিবাদ। আর মাত্র কয়েক মিনিট পরেই তারিখটি বদলে যাবে। শেষ মুহূর্তে হলেও একজন সাধারণ সচল হিসেবে সচলায়তনের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।
শেষে তাঁরই একটি কবিতা (গান)
এমন মানব-জনম আর কী হবে
মন যা কর ত্বরায় কর এই ভবে।
অনন্ত রূপ সৃষ্টি করলেন সাঁই
শুনি মানবের উত্তম কিছু নাই
দেব-দেবতাগণ করে আরাধন জন্ম নিতে মানবে।
কত ভাগ্যের ফলে না জানি
মন রে পেয়েছ এই মানব-তরণী
বেয়ে যাও ত্বরায় তরী
সুধারায় যেন ভারা না ডোবে।
এই মানুষে হবে মাধুর্য ভজন
তাইতে মানুষ-রূপ গঠল নিরঞ্জন
এবার ঠকলে আর না দেখি কিনার
অধীন লালন তাই ভাবে।
(সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত জনপদাবলী থেকে)
পাদটীকা : লালন ফকিরের জন্মসন নিয়ে যেমন বিতর্ক আছে, তেমনি আছে প্রয়াণদিবস নিয়েও। বাংলাদেশের প্রথম সারির মিডিয়াগুলোর অধিকাংশের মতে ১৬ অক্টোবরই লালনের মৃত্যুদিবস। আবার আমি শুরুতে বাংলা উইকিপিডিয়ার যে লিংকটি ব্যবহার করেছি, সেখানে বলা হয়েছে ১৭ অক্টোবর। অনেকে এই সংকট কাটাতে কোনো তারিখ চিহ্নিত না করে বলেন মধ্য অক্টোবর। এই সব সম্ভাব্যতাকে ঘিরেই ছেঁউড়িয়ায় মেলার আয়োজন করা হয় ১৬-১৮ অক্টোবর সময়ে।
আমরা জানি না প্রকৃতই কোন তারিখে তাঁর প্রয়াণ ঘটেছে, তাই ১৬, ১৭ দুটো দিনকেই না হয় প্রয়াণদিবস হিসেবে পালন করি।
মন্তব্য
সাই জী কে শ্রদ্ধাঞ্জলী।
কথাটা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
বিবিদের নাই মুসলমানি
পৈতা যার নাই সেওতো বামনি।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
এও তো স্মরণ করা যায় :
'যদি ছুন্নত দিলে হয় মুসলমান
নারীলোকের কী হয় বিধান
বামন চিনি পইতেয় প্রমাণ
বামনী চিনি কীসে রে।'
................................................................
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার পকেটে আমি আছি যতটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই আমার করুণ ছায়া
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
লালনেই হোক প্রতিরোধ!
আজ সকালে উঠে ভেবেছিলাম এ একটা দিন বটে... লালন দিবস, রুদ্র দিবস আর নজরুল দিবস (বিয়ে নামক কাণ্ডটা এই তারিখেই ঘটিয়েছিলাম কি না!!) এই নিয়ে একটা ব্লগাবো...
সময় পেলাম না সারাদিনে একটুও...
আপনাকে ধন্যবাদ।
আমিও সকালে তাই ভাবছিলাম... লালন আর রুদ্রই তো আসলে আমাদের প্রতিবাদের অন্যতম ভাষা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
লালনের আরো কয়েকটি গান
১.
সহজ মানুষ
ভজে দেখ না রে মন দিব্যজ্ঞানে
পাবি রে অমূল্য নিধি বর্তমানে।।
ভজ মানুষের চরণ দু'টি
নিত্যবস্তু হবে খাঁটি
মরিলে সব হবে মাটি
ত্বরায় এই ভেদ লও জেনে।।
ম'লে পাব বেহেশতখানা
আসলে তো মন মানে না
বাকির লোভে নগদ পাওনা
কে ছাড়ে এ ভুবনে।।
সালাতুল মেরাজুল মোমেনীনা
জানতে হয় নামাজের বেনা
বিশ্বাসীদের দেখাশোনা
লালন কয় এই জীবনে।।
২.
অমৃত মেঘের বারি
মুখের কথায় কি মেলে
চাতক স্বভাব না হলে।।
চাতক জাতির এমনি ধারা
তৃষ্ণায় জীবন যায় গো মারা
অন্য বারি খায় না তারা
শুধু মেঘের জল নইলে।।
মেঘে কত দেয় গো ফাঁকি
তবু চাতক মেঘের ভুখী
তেমনি নিরিখ রাখলে আঁখি
তারে সাধক সাধক বলে।।
মন হয়েছে পবন গতি
উড়ে বেড়ায় দিবারাতি
লালন বলে গুরুর প্রতি
মন রয় না সুহালে।।
৩.
সব লোকে কয়
লালন কী জাত সংসারে
লালন বলে জাতির কীরূপ
দেখলাম না এ নজরে।।
সুন্নত দিলে হয় মুসলমান
নারী লোকের কী হয় বিধান
বামন চিনি পৈতেয় প্রমাণ
বামনি চিনি কিসে রে।।
কেউ মালা কেউ তসবি গলে
তাইতে কি জাত ভিন্ন বলে
আসা কিংবা যাওয়ার কালে
জাতির চিহ্ন রয় কি রে।।
জগৎ বেড়ে জাতির কথা
গৌরব করি যথাতথা
লালন বলে জাতির ফাৎনা
বিকাইছি সাধ-বাজারে।।
৪.
আপন ঘরের খবর নে না
অনা'সে দেখতে পাবি
কোনখানে তার বারামখানা।।
কোমল কোঠা কারে বলি
কোন মোকাম তার কোথা গলি
সেখানে পড়ে ফুলই
মধু খায় সে অলিজনা।।
সূক্ষ্ম জ্ঞান যার ঐক্য মুখ্য
সাধকেরই উপলক্ষ
অপরূপ তারও বৃক্ষ
দেখলে চোখের পাপ থাকে না।।
শুকনো নদীর সুখ সরোবর
তিলে তিলে হয় গো সাঁতার
লালন কয় কীর্তিকর্মার
কীর্তিকর্মার কী কারখানা।।
৫.
গুণে প'ড়ে সারলি দফা
করলি রফা গোলেমালে।
ভাবলিনে মন কোথা সে ধন
ভাজলি বেগুন পরের তেলে।।
করলি বহু পড়াশোনা
কাজে তো সে ঝলসে কানা
কথায় তো চিড়ে ভেজে না
জল কিংবা দুধ না দিলে।।
আর কি হবে এমন জনম
লুটবি মজা মনের মতন
বাবার হোটেল ভাঙবে যখন
খাবি তখন কার বা শালে।।
হায় রে মজার তিলের খাজা
খেয়ে দেখলিনে মন কেমন মজা
লালন কয় বিজাতির রাজা
হয়ে রইলাম এই অকূলে।।
৬.
আশা পূর্ণ হইল না
আমার মনের বাসনা
বিধাতা সংসারের রাজা
আমায় করে রাখলেন প্রজা
কর না দিলে দেয় গো সাজা
কারো দোহাই মানে না।।
বাঞ্ছা করি যুগল পদে
সাধ মিটাব শ্রীপদ সেবে
বিধি বৈমুখ হইল
দিল সংসার যাতনা।।
পড়ে গেলাম বিধির বাণে
ভুল হইল মোর মূল সাধনে
লালন বলে এই নিদানে
মুর্শিদ ছেড়ে যেয়ো না।।
৭.
আমার ঘরের চাবি পরের হাতে
কেমনে খুলিয়ে সে ধন দেখব চক্ষেতে
আপন ঘরে বোঝাই সোনা
পরে করে লেনা-দেনা
আমি হ'লেম জন্মকানা
না পাই দেখিতে।।
রাজী হ'লে দারওয়ানী
দ্বার ছাড়িয়ে দেবেন তিনি
তারে বা কই চিনি-শুনি
বেড়াই কুপথে।।
এই মানুষে আছে রে মন
যারে বলে মানুষ রতন
লালন বলে পেয়ে সে ধন
পারলাম না চিনিতে।।
৮.
সামান্যে কি তার মর্ম জানা যায়?
হৃদকমলে ভাব দাঁড়ালে অজান খবর আপনি হয়।
দুগ্ধে জলে মিশাইলে
বেছে খায় রাজহংস হলে
কারও সাধ যদি যায় সাধন বলে
হয় সে হংস রাজের ন্যায়।।
মানুষে মানুষের বিহার
মানুষ হইলে সিদ্ধ হয় তার
সে কি বেড়ায় দেশ দেশান্তর
যেজন পিড়েয় পেরুর খবর পায়।।
পাথরেতে অগ্নি থাকে
বের করতে হয় ঠুকনি ঠুকে
দরবেশ সিরাজ সাঁই দেয় এমনি শিক্ষে
বোকা লালন সঙ নাচায়।।
(এসএম লুৎফর রহমানের লালন-গীতি চয়ন থেকে)
................................................................
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার পকেটে আমি আছি যতটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই আমার করুণ ছায়া
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
প্রণাম সাঁইজী ।
শ্রদ্ধাঞ্জলী।
_______________
বোকা মানুষ
নতুন মন্তব্য করুন