মাত্র মঙ্গলবার রাতে আমাদের সাড়ে এগারো বছর বয়সী একমাত্র ছেলে মুহম্মদ জাফর ইকবালের 'মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস' পড়তে পড়তে জিজ্ঞেস করেছিল, 'শরণার্থী কী?' যথাসম্ভব জবাব দিয়েছিলাম, সে বুঝেও নিয়েছিল বলে ধারণা করি। নইলে বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনজনে পায়ে হেঁটে ধানমণ্ডি ছেড়ে পালাবার সময় সে হয়ত আমাদের পরিণতির সাথে শরণার্থী হওয়া ব্যাপারটাকে মিলিয়ে নিতে পারত না।
বুধবার থেকেই খুব উদ্বিগ্নতার মধ্যে ছিলাম, যখন অফিস থেকে ফেরার পথে কেয়ারি প্লাজা ও আলমাস সুপার শপের মাঝখানটায় চারটা ১৪.৫ এডি-এমজি কামান পিলখানার দিকে তাক করা ও কাকলী বিদ্যালয়ের সামনে দুটো একইরকম কামানকে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করতে দেখে আসি। আমার বাসা এখান থেকে পায়ে হেঁটে দুই মিনিটের দূরত্বে, স্টাফ কোয়ার্টারের লাগোয়া। বাসার সামনে এসেও দেখলাম আর্মির জিপ যাচ্ছে একের পর এক।
বুধবার থেকেই শংকরে অবস্থিত স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু করে পুরো সাত মসজিদ রোড আর্মির নিয়ন্ত্রণে আছে। শংকরের ছায়ানট ভবনে ছেলের স্কুল হওয়ায় রাতে এসএমএসে জানানো হয় 'কাল স্কুল বন্ধ থাকবে'। আমরা আশ্বস্ত হই। অনিবার্য কারণে অনিচ্ছায়ও আজ অফিসে যেতে হয়। ওখানেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনি। কিয়ৎপর ধানমণ্ডি ও হাজারিবাগ এলাকার মানুষের নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার নির্দেশ শুনে দ্রুত রিকশায় শংকর পৌঁছি। ঠিক এসময়ই ২৭ নম্বর রোড ধরে সার সার ট্যাংক ঢুকছিল সাত মসজিদ রোডে। এক ধরনের উত্তেজনার মধ্যেই সাত মসজিদ রোড ধরে হাঁটতে হাঁটতে স্টার কাবাব পর্যন্ত আসি। আর দক্ষিণে না এগিয়ে কোনাকুনি বাসায় যাবার জন্য স্টার কাবাবের পেছনের রাস্তায় পৌঁছে আমার মাথা খারাপ হবার জোগাড়। ঠিক যেন একাত্তরের শরণার্থীদের দেশ ছাড়ার রঙিন ফুটেজ দেখছি। সাত মসজিদ রোড নিরাপদ নয় দেখে হাজারিবাগ, পশ্চিম ধানমণ্ডির হাজার হাজার মানুষ ওই পথে রিকশায় ও পায়ে হেঁটে উত্তর দিকে ছুটছে তো ছুটছে।
এ দৃশ্য আমাদেরও পালানোর ইন্ধন দেয়। বউ-ছেলে বাসার ছাদ থেকে পলায়নোদ্যত মানুষের সারি দেখে সিদ্ধান্ত নেয় বাসা ছাড়ার। কিন্তু কোথায় যাব তার ঠিক নেই তখনো। মিনিট পনেরোর মধ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই সিদ্ধান্ত হয় ময়মনসিংহে চলে যাবার। আগামী শুক্র-শনি ছেলের স্কুলের সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় আমিও সায় দেই। প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে বাইলেন ধরে হেঁটে ধানমণ্ডি ২৮ নম্বর রাস্তার মুখে এসে সিএনজি পাওয়া যায় একটা। সোজা মহাখালী। ওদের বাসে উঠিয়ে দিয়ে খবর পাই অস্ত্র সমর্পণ চলছে। তাই সাহস করে আবার চলে আসি ধানমণ্ডিতে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার আঁচ পেয়ে ততক্ষণে হাজার হাজার কৌতূহলী নারী-পুরুষ-শিশু বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে ভিড় করেছে বড়ো রাস্তায়, যেন রাস্তার উপরে চলছে সামরিক প্রদর্শনী। হাঁটতে হাঁটতে পনেরো নম্বর পর্যন্ত আসি, আবার পেছনে যাই। সুযোগ পেলে ছবি তুলি।
রাস্তায় দর্শনার্থী অনেক পরিচিতজনের সঙ্গে দেখা-কথা হয়। কথা হয় কয়েকজন সৈনিকের সঙ্গেও। ফুটপাতে একটা বক্সের উপরে বসে থাকা একজন ননকমিশন্ড আর্মি অফিসার অনেকক্ষণ ধরে কথা বললেন আমার সঙ্গে। কেন এমন ঘটল জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, 'অত্যাচার। অত্যাচার-নির্যাতনের এইটা ফল। আর শুধু বিডিআরদের না, আমাদেরও অফিসাররা রেগুলার নির্যাতন করে। এরা মানুষ না, জানোয়ার। এদের মুখে কোনো ভালা কথা নাই। ১৭ বছর ধইরা দাঁত কামড়াইয়া পইড়া আছি। বকা খাইতে খাইতে কান পইচ্চা গেছে। এখন ভালা কথা অচেনা লাগে।
বললাম, 'তাই বলে এমনভাবে গুলি করে মারাটা তো ঠিক হয় নি, কী বলেন?' বললেন, 'ঠিকই আছে। গুলি না কেবল, এগোরে তামাক-কোপানি দেওয়া দরকার।' তিনি জিজ্ঞেস করলেন আমার বাড়ি কোথায়। 'ময়মনসিংহ' জানালে বললেন, 'তাইলে তো আপনে জানেনই তামাক-কোপানি কারে কয়।'
বললেন, 'এদের এমন অত্যাচার-নির্যাতন সইতে সইতেই আমাদের বয়স হয়, চাকরি শেষ হয়। কিছু বললেই শাস্তি।' শাস্তির ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি একটা উদাহরণ দিলেন। 'ধরেন আপনি ঢাকায় তিন বছর ধইরা একা থাইক্যা বউ লইয়া আইলেন। অফিসার নাখোশ হইলে এক মাস পরেই আপনার পোস্টিং খাগড়াছড়ি।'
'নির্যাতন কাদের ওপরে বেশি হয়, আপনাদের না বিডিআরদের?' বললেন, 'বিডিআরদেরই অফিসাররা বেশি নির্যাতন করে। অফিসাররা তো সব আর্মি থেইক্যা আসে।'
বিডিআর হেডকোয়ার্টারে ঘটে যাওয়া এই শ্রেণিসংগ্রামের নেপথ্যে এখন নানা সম্ভাব্য সূত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, খোঁজা হচ্ছে প্রকৃত কারণ। এখন মনে হচ্ছে কোনো গোপন অপশক্তির ইন্ধনেই এমনটি ঘটে থাকবে। তবে আমার ধারণা, আর্মি অফিসার আর বিডিআরের মধ্যে দীর্ঘদিনের যে অত্যাচার-নির্যাতনের সম্পর্ক, যে বৈষম্যের সংস্কৃতি তা হয়ত এ ঘটনার সূত্রপাতকে অনেকটাই সহজ করে দিয়ে থাকবে।
এহেন অত্যাচার-নির্যাতন ও বৈষম্যের অমানবিক সংস্কৃতির আশু পরিবর্তন আবশ্যক।
মন্তব্য
ভালো বিবরণ দিয়েছেন।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
ভালো লিখেছেন। এই সময়ে এই লেখাটার গুরুত্ব অনেক। অনেকদিনের ক্ষোভকে পূঁজি করছে হয়তো কোনো সুযোগ-সন্ধানী।
এইটা কোনভাবেই শ্রেণীসংগ্রাম হতে পারেনা। দাবী আদায়ের জন্য এতোগুলো প্রাণ কোনভাবেই বিনষ্ট হতে পারেনা!
কেতাবি সংজ্ঞায় মিলবার কি খুব দরকার আছে? নিধন ঘটনার বৈশিষ্ট্যগুলো কি তেমন মনে করায় না?
..................................................................................
মানুষই যেন হয় প্রকৃত আরাধ্য জন আগুনে ফাগুনে পুড়ে
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
রাজনৈতিক ইন্ধন থাকতে পারে। তবে শোষিত শ্রেণির পক্ষে বিদ্রোহ হলে তাদের কাছে এরচেয়ে শ্রেয়তর কোন উপায় মনে হয় আর থাকে না যখন শোষক অ্যাবসল্যুট ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং শোষিতের হাতে মারণাস্ত্র থাকে; তাছাড়া নিচের শ্রেণিটি শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীর সদস্য হলেও শিক্ষিত, পরিশীলিত নয় ততটা। উল্লেখিত ঘটনায় তারা সুসংগঠিতও ছিল না। একটা ঘটনা ঘটিয়ে নিজেরাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় ছিল, যা অস্ত্র সমর্পনে তাদের মতবিভক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে।
ঘটনা ঘটার জন্য সার্বিকভাবে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে দায়ি করা চলে অবলীলায়। দাবী আদায়ের যেন একটাই পথ, জ্বালাও, পোড়াও, বাসে আগুন দাও, মানুষ মার। পুরাতন সংস্কৃতি!!
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
দাবি আদায়ের এই 'পুরাতন সংস্কৃতি'রও বদল হোক।
..................................................................................
ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকালে আমার কেবলই মরে যাচ্ছি বলে মনে হয়
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
ভাই,
কিছু মনে করবেন না...এই সৈনিক ভদ্রলোকের ছবিটা সরায়ে দিলে হইতো না?...উনার পেশাগত নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে...
আমি জানিনা উনিই আপনার সাক্ষাতকার নেওয়া সৈনিক কি না...যদি তা-ই হয়, তাহলে উনাকে সাইডফেস দেখে সনাক্ত করার একটা রিস্ক থেকে যায়...
--- --- --- --- --- --- --- --- --- --- --- ---
মন, সহজে কি সই হবা?
চিরদিন ইচ্ছা মনে আল ডাঙ্গায়ে ঘাস খাবা।
--- --- --- --- --- --- --- --- --- --- --- ---
মন, সহজে কি সই হবা?
চিরদিন ইচ্ছা মনে আল ডাঙ্গায়ে ঘাস খাবা।
"উনাকে সাইডফেস দেখে সনাক্ত করার একটা রিস্ক থেকে যায়"
a very sensible comment. Appreciable.
ভাইয়া দয়া করে ওনার বাড়ির ঠিকানাও আপনি সরিয়ে দিলে ভাল হয়। ওই সময় ওখানে এই পদবীর কে ডিউটিতে ছিল আর বাড়ির ঠিকানা থেকে সহজেই বের করা যাবে লোকটি কে?
অনেক ধন্যবাদ, চমতকার লেখাটার জন্য
মুছে দিলাম, কিন্তু ছবিটা এখনো সরছে না দেখে টেনশন হচ্ছে।
..................................................................................
যেন ধ্যানের চেয়ে কখনো বেশি মূল্য না-পায় কোনো দৃশ্যগান, আর মানুষই যেন হয় প্রকৃত আরাধ্য জন আগুনে-ফাগুনে পুড়ে
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
আমি সরাতে পারলাম না। মডারেটরদের একজনকে ব্যক্তিগত মেসেজে ছবিটা সরিয়ে দিতে অনুরোধ করেছি।
..................................................................................
মানুষই যেন হয় প্রকৃত আরাধ্যজন আগুনে ফাগুনে পুড়ে
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
প্রয়োজনীয় ও বিচক্ষণ পর্যবেক্ষণ।
প্রিয় মুজিব মেহেদী
আপনার লেখাটা ভালো লাগলো না।
১৫০ জন আর্মি অফিসারের নৃশংস মৃত্যু পর
'তামাক কোপানি'শুনতে ভালো লাগেনা।
সে যার কন্ঠেই হোক
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
আবারো সেই সংখ্যা, কোত্থেকে যে সংখ্যাটা পাওয়া গেল সে কথা কেউ বলেনা। জানা মতে কোথাও নিখোঁজ লিস্টও দেয়া হয়নি। সবাই বলে নির্ভর যোগ্য সূত্র। এই নির্ভর যোগ্য সূত্র কি গুজব?
আরেকটা কথা, সরকারের কোন পক্ষ কিন্তু তিন কিলোমিটার খালি করার কথা বলেনি। প্রথম একথা শোনা যায় স্থানীয় এম পির টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে, উনি অনুরোধ রাখেন আশপাশ থেকে স্থানীয়দের সরে যেতে। এটাই পরে গুজবাকারে চ্যানেল গুলোতে বিস্তার লাভ করে। চ্যানেল্গুলোর অদুরদর্শীতার এটা আরেকটা উদাহারন। কিছু অতি উৎসাহী লোকজন মাইকিং ও শুরু করে এর ভিত্তিতে।
...........................
Every Picture Tells a Story
তিন কিলোমিটার জায়গা খালি করবার গুজবটি সাধারণ মানুষকে দারুণ ভোগান্তিতে ফেলেছিল। হতে পারে এটাও করা হয়েছিল বিদ্রোহীদের ভয় পাইয়ে দেয়ার জন্য, যাতে অস্ত্রসমর্পণের কাজটি ত্বরান্বিত হয়।
একজন নির্বাচিত এমপি তাঁর আসনে সংঘটিত একটি অস্বাভাবিক জরুরি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জনসাধারণের উদ্দেশে এমন অনুরোধ জানালে ঘোষণাটি সরকারি না বেসরকারি তা ভেবে দেখবার অবকাশ কমই থাকে। অবশ্য এসব ব্যাপারে মিডিয়ার একটা দায়িত্ব থাকে জনগণকে কী ভাষায়, কীভাবে জানাবে। এরা প্রায়শ অতিরঞ্জিত করে।
..................................................................................
মানুষই যেন হয় প্রকৃত আরাধ্যজন আগুনে ফাগুনে পুড়ে
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
এটা নিপীড়িত শ্রেণির মনের কথা। আমার কথা তো নয়। লোকনিধন আমিও মোটেই পছন্দ করি না। আমি একটি মতকে তুলে ধরতে চেয়েছি মাত্র।
..................................................................................
মানুষই যেন হয় প্রকৃত আরাধ্যজন আগুনে ফাগুনে পুড়ে
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
নিরপেক্ষ এবং বাস্তব অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ পোস্টটি ভালো লাগলো। এই শতাধিক আর্মি অফিসারের মৃত্যুকে সমর্থন করি না, দেশের জন্যও এটা বিরাট ক্ষতি; কিন্তু এদের জন্য ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোনো শোক অনুভব করছি না। রক্ত দেখলেই পেছনের ইতিহাস ভুলে যাওয়ার মাশুল আমরা অনেকবার দিয়েছি। এদের হাতেই বঙ্গবন্ধুর রক্ত লেগে আছে, এদের হাতেই সহস্রাধিক মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারের ফাসি হয়েছে। স্বাধীনতার পরে সিংহভাগ সময়ই এরা আমাদের ওপর অন্যায় শাসন চাপিয়ে দিয়েছে। ১৬৮ টি লাশের হিসাব তার তুলনায় অনেক তুচ্ছ মনে হয়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
সকল অফিসারকে এক কাতারে দাঁড় করানো যুক্তিযুক্ত মনে হয় না। এই পাল্টানো সময়ে অনেক পাল্টানো মানুষও তৈরি হয়েছে, যার খবর হয়ত আমরা রাখিনা। অন্ধবিশ্বাস যেমন মন্দ তেমনি সবাইকে অবিশ্বাসও কাজে লাগেনা।
নদী
@নদী, আমি যেটা বলেছি তা ব্যক্তিক না, সামষ্টিক। হতে পারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা, দেশে সামরিক শাসন জারি করার বিষয়টি মাত্র গুটি কয় সেনাকর্মকর্তার আকাম। কিন্তু তার জন্য আমাদেরকেই ভুগতে হচ্ছে এবং হয়েছে। সুতরাং সেনাবাহিনীতে কয়জন ভালো অফিসার আছে, সেই হাইপথেটিক্যাল সংখ্যা গুণে এইসব আকাম ওভারলুক করাটা টাফ। আমার ফোকাসটা কর্মের, যা সমষ্টির চেহারা নির্দেশ করে, ইনডিভিজুয়ালের নয়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
অস্বাভাবিক প্রত্যেকটা মৃত্যুই অমানবিক এবং অতি অবশ্যই তীব্র বেদনার। এ ধরনের মৃত্যু সমর্থন করি না। তবে আর্মির খারাপির তুলনায় গুণগান করবার বিষয় কমই আছে বলে মনে করি।
'১৬৮ টি লাশের হিসাব'টা কোন সূত্রের?
..................................................................................
যেন ধ্যানের চেয়ে কখনো বেশি মূল্য না-পায় কোনো দৃশ্যগান, আর মানুষই যেন হয় প্রকৃত আরাধ্য জন আগুনে-ফাগুনে পুড়ে
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
এখন পর্যন্ত কয়েকটি সংখ্যা দেখেছি, কেউ বলছে শাতাধিক, কেউ ১৫০, কেউ ১৬৮। সর্বোচ্চ সংখ্যাটি বিশ্বাস করার পরেও অনুভূতির কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
যথার্থ বলেছেন।
আজকে যদি আমার পরিচিত একজন নিখোঁজ না হতো, যিনি সারাজীবনে কোন অন্যায় কাজ করেছেন কিনা সন্দেহ, মিথ্যা বলেছেন কিনা সন্দেহ- তাহলে হয়তো আমিও আপনার মতোই বলতাম। তখন আমার কাছে ১৬৮ কী, ১০৬৮ ও বড় কোন সংখ্যা মনে হতো না।
তখন আমিও বলতাম রক্ত দেখে পেছনে ইতিহাস আমি ভুলে যেতে পারি না।
কিন্তু এখন বলতে পারছি না। কারণ আমি শুধু "রক্ত" দেখছিনা। আমি দেখছি আমার ভাইয়ের রক্ত। আমার বাবার মতো একজনের রক্ত।
=============================
রায়হান আবীর, আপনার প্রতি সমবেদনা জানাই।
..................................................................................
যেন ধ্যানের চেয়ে কখনো বেশি মূল্য না-পায় কোনো দৃশ্যগান, আর মানুষই যেন হয় প্রকৃত আরাধ্য জন আগুনে-ফাগুনে পুড়ে
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে আসলেই আর্মির জন্য অশ্রু বর্ষণের সুযোগটা একদম শূন্য হয়ে যায়।
তবে টিভিতে বন্দীদশা থেকে মুক্তি পাওয়া এক আর্মি অফিসারের ছেলের, "আব্বু..." বলে কান্নাটা দেখে খারাপ লেগেছে।
তবে সে'সাথে এ'টাও মাথায় এসে পড়ে, এ'রকম অনেক ছেলেই তাদের বাবাকে হারিয়েছে সেনাবাহিনীর অন্যায় আচরণের কারণে, যাদের কান্নাটা পর্যন্ত আমাদের কানে এসে পৌছায়নি।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
এ'রকম অনেক ছেলেই তাদের বাবাকে হারিয়েছে সেনাবাহিনীর অন্যায় আচরণের কারণে, যাদের কান্নাটা পর্যন্ত আমাদের কানে এসে পৌছায়নি।
..................................................................................
যেন ধ্যানের চেয়ে কখনো বেশি মূল্য না-পায় কোনো দৃশ্যগান, আর মানুষই যেন হয় প্রকৃত আরাধ্য জন আগুনে-ফাগুনে পুড়ে
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
শিরোনাম মডারেট করা হল
_________________________________
সচলায়তন.COM কর্তৃপক্ষ
_________________________________
সচলায়তন.COM কর্তৃপক্ষ
ঠিক করেছেন।
..................................................................................
যেন ধ্যানের চেয়ে কখনো বেশি মূল্য না-পায় কোনো দৃশ্যগান, আর মানুষই যেন হয় প্রকৃত আরাধ্য জন আগুনে-ফাগুনে পুড়ে
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
দরকারী লেখা। সাহসী লেখা।
সবই ঠিক আছে।
কিন্তু আজকে গণকবরগুলো আবিষ্কৃত হবার পর থেকে মনে হচ্ছে এ লেখাটি এসময়ে না পোস্টালেই ভালো হতো। এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড যারা ঘটাতে পারে তাদের সাথে পাকবাহিনী ও রাজাকার-আলবদরবাহিনীর পার্থক্য কী?
..................................................................................
যেন ধ্যানের চেয়ে কখনো বেশি মূল্য না-পায় কোনো দৃশ্যগান, আর মানুষই যেন হয় প্রকৃত আরাধ্য জন আগুনে-ফাগুনে পুড়ে
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
জ্বি মুজিব ভাই।
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
পার্থক্য সুস্পষ্ট। কুকুর আর খরগোশের দৌড়ের মতো। একজন জীবন বাঁচাইতে দৌড়ায় আরেক জন মারতে।
মানবিকতার কোন্ দিক আপনাকে কোন্ভাবে স্পর্শ করেছে, তা বুঝতে পেরেছি। তবে, উইথ ডিউ রেসপেক্ট টু ইওর অপিনিয়ন অর ইন্টারপ্রিটেশন, স্যরি টু ডিজঅ্যাগ্রি অন আ পয়েন্ট। - "শ্রেণীসংগ্রাম"-এর সম্মান বোধ করি কোনোভাবেই দিতে পারি না এই নৃশংসতাকে। কোনো অত্যাচার-নির্যাতন-বৈষম্যই এই পর্যায়ের পাশবিকতাকে জাস্টিফাই করতে পারে ব'লে মনে করি না। ক্রিমিনালিটি'র সবগুলো উপাদান ওদের কাজে ছিল- শতাধিক খুন তো খুন! নির্বিচারে সেনাপরিবার-নিপীড়ন, ধর্ষণ, আগুনে-পোড়ানো, লাশ থ্যাতলানো, ,,, এমনকি অলঙ্কার বা আসবাব লুণ্ঠন পর্যন্ত বাদ পড়েনি। এটাকে 'শ্রেণীসংগ্রাম' বললে শ্রেণী খুশি হ'তে পারে বৈকি, তবে সংগ্রাম লজ্জা পাবে।
- এটাও বলেছেন আপনি অন্য একজনের কমেন্টের পরিপ্রেক্ষিতে। আপনার এই তবে-টাতেও অনেক আহত হয়েছি মুজিব ভাই। এইরকম একটি লজ্জাজনক অমানবিক ঘটনার কোনো পাদটীকাতেই আর্মি'র খারাপি আর গুণের মাপে দাঁড়িপাল্লা ধরার যুক্তি দেখি না। আপনার এই মন্তব্যে কিন্তু ফাইনালি মনে হ'লো- বিডিআর জওয়ান-রা কাজটা অমানবিক করলেও ভালোই করেছে। আপনিও এটিকে 'নেসেসারি এভিল' হিসেবে দেখলেন!
আমার বাসা ধানমণ্ডি না, আমার কোনো রক্তীয় আত্নীয়ও এখানে জানমালের ক্ষতির মুখে পড়েননি, তবু আমি মানবতার এমন পরাজয়ে অনেক ব্যথিত হয়েছি।
রায়হান আবীরের প্রতিধ্বনি ক'রে এখন তবে বলতে হচ্ছে- আপনার একজন আত্নীয় যদি নির্দোষ শিকার হ'তো এই কলঙ্কজনক অধ্যায়ের, তাহলে হয়তো এভাবে বলতে পারতেন না।
আমার জিজ্ঞাসা, বিস্ময়-
পাকিস্তানের হানাদাররা যা করেছিল ব'লে আমরা তাদের ক্ষমা করিনি এখনও, সেই সবগুলো অনাচার যখন আমার স্বাধীন দেশের সামরিক জওয়ানরা ঘটালো - ভেঞ্জিয়েন্স হয়েও যদি থাকে, তবু অবশ্যই অবশ্যই আনপ্রপোর্শনেট - তখন এদের ক্ষমা কীভাবে করি!
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
ঘটনাটিকে 'শ্রেণিসংগ্রাম' বলবার খায়েশ আমার অচিরেই মিটে গেছে। গণকবরের সন্ধান পাবার পরে আমার এহেন বিবেচনার জন্য লজ্জা এমনই তীব্র হয়ে উঠেছিল যে, একবার ভেবেছিলাম পোস্টটাকে ডিলিট মারি। কিন্তু পরে ভেবেছি, এতগুলো মন্তব্য জমা হবার পরে পোস্টটার মালিকানা তো কেবল আমার একার না, আমি কী করে অন্যের মত ধ্বংস করব? তাছাড়া হিসেবে যে আমার/আমাদের ভুলও হয়, তার একটা স্মারক এখানেও মুদ্রিত হয়ে থাক।
এই হত্যাঘটনার কার্যকর তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই এখন আমার অনুশোচনা দূর করতে পারে। অপরাধীদের শাস্তি দেখবার জন্য আমি অধীর হয়ে আছি।
..................................................................................
যেন ধ্যানের চেয়ে কখনো বেশি মূল্য না-পায় কোনো দৃশ্যগান, আর মানুষই যেন হয় প্রকৃত আরাধ্য জন আগুনে-ফাগুনে পুড়ে
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
ধন্যবাদ, মুজিব ভাই।
sorry, if i had been harsh with my words. বেয়াদবী নেন নাই আশা করি। আমিও আহত হয়ে যদি বেশি বাজে টোন-এ ব'লে থাকি, সেটা ক্ষমা ক'রে দিয়েন।
সশ্রদ্ধ সাধুবাদ রইলো।
হ্যাঁ, আমি জানি- এখনও যদি প্রতিবিধানের জন্য আরো অনেক অনেক বেশি প্রাণহানিও হয় ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়ায় (প্রভাইডেড, সত্যি সত্যি ন্যায়বিচার হয়), সেটাও যে খুব দাঁত-কেলানো সুখকর হবে, তা-ও নিশ্চয়ই নয়, তবে উচিত।
ভালো থাকেন মুজিব ভাই।
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
নতুন মন্তব্য করুন