বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রুবাইয়াত হোসেন তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি মেহেরজান নির্মাণ করেছেন। ইতিহাসকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্র নির্মিত হলে সেই চলচ্চিত্রে শুদ্ধত্ব আর নির্ভুলতা নিশ্চিত করার জন্য সতর্ক থাকার প্রয়োজন বেড়ে যায় অনেকগূণ। এ কারণে ইতিহাস-ভিত্তিক এই ছবির বিভিন্ন বর্ণনায় সত্যতা ও যথার্থতা যেন টিকে থাকে সেই ব্যাপারে পরিচালকের খুব বেশি মনোযোগী থাকার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ১৯৭১-এ বাঙালী নারীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর নির্মমতা ও নির্যাতনের দুঃখবোধ থেকে এবং এই অপরাধের বিচার দাবি করা প্রসঙ্গে মেহেরজান তৈরি করার প্রয়াসের কথা বলা হলেও, পরিচালক তার বহুল প্রচার পাওয়া এই ছবিতে ১৯৭১ সালে বাঙালী নারীদের ওপর পাকিস্তানী সেনাদের ভয়াবহ অত্যাচার আর নির্যাতনের কোন মর্মস্পর্শী বিবরণ তুলে ধরতে যেমন ব্যর্থ হয়েছেন, তেমনি তার কাজকে আরো প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছেন এই ছবির মূল বিষয় হিসেবে একজন বাঙালী তরুণী মেহেরজানের সাথে একজন পলাতক পাকিস্তানী সেনা ওয়াসিমের প্রেমকাহিনী দেখাবার মধ্য দিয়ে। পরিচালক বলছেন মেহেরজান ছবিতে তিনি “একটি সর্বজনীন মানবতাবোধ ও দেশ-কাল-পাত্রের উর্দ্ধে চিরন্তন প্রেমের জয়গান” দেখাতে চেয়েছেন। একদিকে পরিচালক বীরাঙ্গনাদের প্রতি তার গভীর দুঃখবোধের কথা প্রচার করছেন, আবার অন্যদিকে এই নারীদের তীব্র যন্ত্রণা দেখিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে চেয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে এসে তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন প্রেমকাহিনী, আর যেই প্রেমের এবং তার ছবিরও মূল নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন একজন পাকিস্তানী সেনা। পরিচালক বার বার বলছেন তার ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভিন্ন ভাবনাগুলিকে পরীক্ষা করে দেখার কথা। এই ছবিতে একজন বীরাঙ্গনা আর মুক্তিযোদ্ধাদের যেভাবে দেখানো হয়েছে, যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে একজন পাকিস্তানী সেনাকে আর মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ছবির প্রবীণ এবং কমবয়সী চরিত্রগুলির যে ধরনের আচরণ প্রকাশ পেয়েছে তার ভিত্তিতেই ১৯৭১ সম্পর্কে রুবাইয়াত হোসেনের ভাবনাগুলিকে আমাদের বিচার করে দেখতে হবে।
পরিচালকের কথা অনুযায়ী “যুদ্ধংদেহী পৃথিবীতে ‘অপর’কে ভালোবাসার গল্প শোনাতেই মেহেরজান ছবির জন্ম”। বিভিন্ন সাক্ষাতকারে পরিচালক উল্লেথ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধের কথা। কিন্তু গণহত্যা, ধ্বংস আর নির্মমতার অশুভত্বের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যে গভীর শক্তি নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিল নিজের ছবিতে সেই ইতিহাসকে পরিচালক উপেক্ষা করেছেন সম্পূর্ণভাবে। অতীতের যেকোন গুরুত্বপূর্ণ সময়ের অনেক অনালোচিত দিক নিয়ে একজন চলচ্চিত্রকার তার ছবি তৈরি করতে পারেন। কিন্তু নিজের মত বা কল্পনা প্রয়োগ করতে গিয়ে নিজ ছবিতে কোনভাবেই একটি দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়টির বিভিন্ন অসঙ্গতিপূর্ণ বর্ণনা প্রদানের কোন সুযোগ একজন চলচ্চিত্রকারের নেই। অথচ মেহেরজান ছবিটিতে বার বার তা করা হয়েছে, এবং এই ছবি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা নেই এমন দর্শকদের ১৯৭১-এ বাংলাদেশে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহচরদের নিষ্ঠুরতার ভয়ংকরত্ব সম্পর্কে কোন ধারণা দিতে পারে না। রুবাইয়াত হোসেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তার পূর্ণ শ্রদ্ধার কথা বললেও নিজের ছবিতে মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও সাহসের প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরার কোন চেষ্টাই করেননি।
১৯৭১ সালে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠিন যুদ্ধের সময় দেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদসহ অসংখ্য বাঙালী সেনাসদস্য এবং গণযোদ্ধারা নিজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে এবং ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে কতোটা বিসর্জন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছেন তার অজস্র প্রমাণ আমরা খুঁজে পাই যুদ্ধকালীন সময়ে নির্মিত বিভিন্ন কাহিনীচিত্রে এবং প্রত্যক্ষদর্শী ও যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের লেখা গ্রন্থসমূহে। এই সত্যকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। পরিচালক মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়-পর্যায়ে তার গবেষণার কথা বলেছেন, কাজেই ১৯৭১-এ যাঁরা দেশকে মুক্ত করার জন্য এক সুবৃহৎ সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধাদের চারিত্রিক দৃঢ়তা ও মানসিকতা সম্পর্কে তার যথেষ্ট ধারণা থাকারই কথা। কিন্তু সত্যিই আশ্চর্য হতে হয় যখন দেখি মেহেরজান ছবিতে উপস্থাপিত একজন মুক্তিযোদ্ধা ছবির অন্যতম চরিত্র সামন্তপ্রভু খাজা সাহেবকে বলছে যুদ্ধ করতে করতে সে ক্লান্ত, আর সেই একই দৃশ্যে সে খাজা সাহেবের কন্যা সালমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব উত্থাপন করে। খাজা সাহেব সম্মতি দেয়ার কিছু পরের একটি দৃশ্যে আমরা দেখি সেই মুক্তিযোদ্ধা আর সালমা বিয়ের বাদ্যের তালে তালে একটি দারুণ জমকালো ভাবে সাজানো ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। একটি ভয়াবহ যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত বাস্তবধর্মী এই চলচ্চিত্রে এমন একটি স্থূল দৃশ্যের ব্যবহার অসম্ভব রকমের দৃষ্টিকটু দেখায় আর পরিচালকের চলচ্চিত্র বোধের প্রচন্ড দীনতাকেই কেবল তা স্পষ্ট করে তোলে। এই মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রটিকে কখনোই যুদ্ধের ময়দানে দেখা যায় না। অবশ্য মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ করার দৃশ্য মেহেরজান-এ দেখানো হয় না কখনোই। সুযোগ থাকার পরও পরিচালক তার ছবিতে ১৯৭১-এ ধারণ করা পাকিস্তানী বাহিনীর বীভৎস হত্যাযজ্ঞের এবং যুদ্ধক্ষেত্রের কোন ছবি বা দৃশ্য তার ছবিতে কাজে লাগাননি। অথচ অতীতের কোন বিশেষ সময়কে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রে, বিশেষ করে রাজনৈতিক চলচ্চিত্রে অতীতের ঘটনাবলীর সাথে দর্শককে গভীরভাবে সংযুক্ত করার জন্য সত্যিকারের দৃশ্য ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র-কৌশল হিসেবে প্রায়ই ব্যবহার করা হয়।
মেহেরজান-এ আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা প্রথমে খুব আগ্রহ করে যুদ্ধে গেলেও যুদ্ধ শেষ না হতেই ফিরে আসে এই বলে যে সে মরতে চায় না। এবং তারপরই যুদ্ধক্ষেত্র-থেকে-পালিয়ে আসা সেই যুবক তার খালাতো বোন মেহেরজানকে বিয়ে করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা খাজা সাহেবের কাছে গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম চালানোর অনুমতি চায়, কিন্তু সামন্ত খাজা সাহেব তার গ্রামে রক্তপাত চান না বলে সেই মুক্তিযোদ্ধাকে অনুমতি দেন না। সেই মুক্তিযোদ্ধা চলে যাবার সময় খাজা সাহেবকে বলে যে বাঙালী এবার জেগেছে, কিন্তু খাজা সাহেবের নিষেধকে অগ্রাহ্য করে সেই মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী সেনা এবং রাজাকার অধ্যুষিত গ্রামে কোন অভিযান চালায় না। মেহেরজান-এ মুক্তিযোদ্ধারা এভাবেই ভীরু, দায়িত্বহীন, দেশপ্রেমহীন, দুর্বলচিত্তের, বিয়েপাগল এবং স্থূলতাসর্বস্ব মানুষ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। পরিচালক রুবাইয়াত বলছেন, ‘প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে দেখলে দর্শকরা দেখবেন, এ ছবিতে যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির কথা থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথাকে হেয় করার সামান্যতম কোন উপাদান নেই’। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা আর অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্য দিয়ে নয় মাস যুদ্ধ করে যাঁরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের এমন নেতিবাচকভাবে এই ছবিতে উপস্থাপনের পরও পরিচালক মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথাকে হেয় করা হয়নি এই দাবী করছেন। নিজের ছবির ভিত্তিহীন আর অন্তঃসারশূণ্য বর্ণনার মতো তার এই দাবীও কেবল অসত্যতাই বহন করে। আর এক্ষেত্রে পরিচালকের পরামর্শমতো প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে ছবিটি দেখে এই ছবির উপস্থাপনকে সত্য বলে মেনে নিতে উদ্যত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা আর ত্যাগস্বীকার সম্পর্কে যে অজস্র সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে সেই সব প্রমাণ বাতিল করে দিতে হয়। দুঃখের বিষয় এই ছবিতে একজন মুক্তিযোদ্ধাকেও পরিচালক যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করেননি। একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা জবাকে দেখানো হয় মাত্র একটি দৃশ্যে অতি দায়সারাভাবে, আর বীরাঙ্গনা নীলা যুদ্ধে যোগ দেয়ার পরই তাকে আর একবারও ছবিতে দেখানো হয় না।
খাজা সাহেবের সাথে মাত্র একবার ধমক দিয়ে কথা বলা দেখানোর মাঝেই ১৯৭১ সালে বাঙালীদের প্রতি পাকিস্তানী সেনাদের নিষ্ঠুরতা দেখানো সীমিত রাখেন পরিচালক। ছবির শেষে খাজা সাহেবকে পাকিস্তানী সেনা, নাকী রাজাকার নাকী বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী সুমন হত্যা করলো তাও স্পষ্ট করা হয় না। এমনকী যেই বীরাঙ্গনাদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে রুবাইয়াত মেহেরজান নির্মাণের প্রেরণা পেয়েছেন, ছবিতে দেখানো একমাত্র বীরাঙ্গনা চরিত্র নীলা জানায় পাকিস্তানীদের কাছে ধর্ষিতা হবার আগেও তার সম্ভ্রম হারাবার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। পাকিস্তানী সেনাদের প্রতি নীলার ক্ষোভ দেখানো হলেও এই সেনারা আসার আগেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটতো নীলার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মেহেরজান ১৯৭১-এ পাকিস্তানী সেনাদের জঘন্য অপরাধকে আর যথেষ্ট তীব্রতা ও ঘৃণার সাথে তুলে ধরে না। মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্বল ও হাস্যকর রূপে দেখানোর অসঙ্গতির পাশাপাশি পাকিস্তানী সেনাদের নির্মমতার খুব যথাযথ বর্ণনাও খুঁজে পাওয়া যায় না এই ছবিতে। ওয়াসিমকে দেখানো হয় সাহসী, নীতিবান, মানবদরদী এবং মুক্তবুদ্ধির একজন মানুষ হিসেবে যে বাঙালীদের উপর অত্যাচার চালানোর সামরিক নির্দেশ মেনে নেয় না। যুদ্ধকালীন সময়ে একজন শত্রুসেনার ভাল আচরণ বা জোরদখলে রাখা দেশের কোন নারীর সাথে কোন শত্রুসেনার প্রেমের কাহিনী রোমান পোলানস্কি’র দ্য পিয়ানিস্ট বা অ্যালা রেঁনে’র হিরোশিমা মন আমু সহ আরো বিভিন্ন ছবিতে দেখানো হলেও সেসব ছবিতে কোন দেশের মুক্তিসংগ্রামীদের দুর্বল চারিত্রিক গুণাবলীসর্বস্ব করে তুলে ধরা হয়নি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত মেহেরজান ছবিতে পাকিস্তানী সেনা ওয়াসিম ছবিতে দেখানো মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে অনেক প্রশংসনীয় চরিত্রের মানুষ হিসেবে উপস্থাপিত হয়।
১৯৭১-এ দেশের ভয়াল পরিস্থিতি আর সাধারণ মানুষের সীমাহীন যন্ত্রণার আর দুর্ভাবনার কোন আবহ কখনোই এই ছবিতে অনুভব করা যায় না। কেবল ছবির শেষ দিকে দায়সারাভাবে একটি আগুন জ্বলতে থাকার দৃশ্য ব্যবহার করা হয়। দেশে যুদ্ধ চলতে থাকার সময়ও আমরা দেখি একটি নিবিড় শান্তির গ্রাম, আর প্রেমসর্বস্ব বাণিজ্যিক ছবির গতানুগতিক দৃশ্যের আদলে বার বার দেখানো হয় ওয়াসিম আর মেহেরজানের সেই গ্রামের প্রান্তরে ঘনিষ্ঠভাবে ঘুরে বেড়াবার দৃশ্য। সেই গ্রামে পাকিস্তানী সৈনিক ও রাজাকারদের আনাগোণা, কিন্তু গ্রামের তরুণ ছেলেরা চায়ের দোকানে বসে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলে, কারোরই কোন বিপদ হয় না। খাজা সাহেব অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলেন, পাকিস্তানীদের সাথে বাঙালীদের প্রভেদ বোঝেন, কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন সমর্থন না করলেও দেশের মানুষের নিজ অধিকারের জন্য জেগে ওঠা সমর্থন করেন। কিন্তু সারাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছে তখন অন্য স্থানে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করলেও নিজ গ্রামে তিনি রক্তপাত দেখতে চান না, তাই নিজ গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের আসতে দিতে তিনি নারাজ। একদিকে জোর গলায় মানুষের নিজ অধিকারের জন্য জেগে ওঠা সমর্থন করে নীতিনিষ্ঠ খাজা সাহেব তার গ্রামের মুক্তিপিয়াসী যুবকদের পাকিস্তানী বাহিনীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার ইচ্ছাকে বাধা দেন। এই পরস্পরবিরোধী অবস্থান খাজা সাহেবের চরিত্রটিকে করে তোলে দুর্বল, দর্শকমনে খাজা সাহেব কোন দাগ কাটতে পারেন না। আর খাজা সাহেবের নির্দেশের কারণে মুক্তিযোদ্ধাদেরও সেই গ্রামে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকা একেবারেই বাস্তবভিত্তিক মনে হয় না।
চলচ্চিত্রে নারীচরিত্রকে দুর্বল আর পণ্যায়িতভাবে উপস্থাপনের গন্ডী পরিচালক অতিক্রম করতে পারেননি কোনভাবেই। নীলা আর মেহেরজান উভয়ই বার বার যেভাবে বিভিন্ন দৃশ্যে উপস্থাপিত হয় তা বাঁধাধরা বিজ্ঞাপনচিত্রের মতো কেবলই পুরুষদর্শকের দৃষ্টির তৃপ্তি নিশ্চিত করে। একটি দুঃসহ সময়ের পটভুমিকায় ছবি নির্মাণ করলেও পরিচালক তার ছবি থেকে চাকচিক্য আর জৌলুস বাদ দেয়ার যৌক্তিক চিন্তা করতে পারেননি। মেহেরজান সব সময়ই উপস্থিত হয় বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙের অত্যন্ত ফ্যাশনসচেতন পোষাকে, আর সেই সব আধুনিক ফ্যাশনের পোষাক ৪০ বছর আগের সময়ের পোষাক হিসেবে খুবই বেমানান দেখায়। অবশ্য পরিচালক তার চলচ্চিত্রে বিভিন্ন খুঁটিনাটির দিকে নজড় দিতে সবসময়ই ব্যর্থ হয়েছেন। শবেবরাতের রাতেও নীলাকে দেখা যায় তার নানাজানের সাথে অন্যান্য দিনের মতো খোলামেলা পোষাক পরেই কথা বলতে। পরিচালক নীলাকে একজন আত্মগ্লানিতে না ভোগা সাহসী নারী হিসেবে উপস্থাপনের কথা বললেও নীলা সুমনের সাথে তার বিয়ে না হলে কী হবে তাই নিয়ে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে; আর মেহেরজানকে চারু মজুমদার-এর বই পড়া একজন নারী হিসেবে দেখানো হলেও তার মাঝে আমরা কোন রাজনৈতিক সচেতনতা দেখি না, যুদ্ধ নিয়েও মেহেরজানের কোন ভাবনা ছবিতে তুলে ধরা হয় না। বরং মেহেরজানকে ‘যুদ্ধের মাঝেও একজন পাকিস্তানী সেনার চোখ মায়া মায়া লাগছে’ এমন কথাই বলতে শোনা যায়। ছবির অপর নারীচরিত্র সালমা ছবির শুরু থেকেই কেবল তারল্যেভরা কথাবার্তা বলতে থাকে এবং নিজের বিয়ের চিন্তাতেই তাকে মগ্ন থাকতে দেখা যায়। ইউনিফর্ম পরিহিত সেনা বিষয়টি শুরু থেকেই এই ছবিতে দু’জন কমবয়সী নারীর আকর্ষণের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যখন সালমা যত্নের সাথে নিজের কাছে রাখা একজন নারীর সাথে ইউনিফর্ম পড়া এক সেনার ছবি মেহেরজানকে দেখায়। আর ছবিতে ওয়াসিম ইউনিফর্ম পরা অবস্থায়ই একদিন গ্রামের জঙ্গলে মেহেরজানের সামনে উপস্থিত হয়।
মেহেরজান ছবিতে ক্যামেরার কাজ কখনো্ই চিত্তাকর্ষক নয়। বিভিন্ন দৃশ্য কখনো অপ্রয়োজনীয় রকমের দীর্ঘ এবং দৃশ্যের মাধ্যমে অর্থ নির্মাণের চেষ্টা ছবিতে খুব কম আর গতানুগতিকভাবেই করা হয়েছে। ছবিটির ধীর গতি আর বিভিন্ন হালকা, অনাকর্ষণীয় সংলাপ প্রায়ই বিরক্তি সৃষ্টি করে। ছবিটির ধারাবাহিকতাতেও সুবিন্যস্ততার কোন ছাপ নেই। মেহেরজানকে পরবর্তী জীবনে একজন সফল ভাস্কর হিসেবে দেখানো হয়, কিন্তু মু্ক্তিযুদ্ধের সময় তাকে আঠারো বছর বয়সী হিসেবে দেখানো হলেও কোন দৃশ্যে তার মাঝে ভাস্কর্য নির্মাণের প্রতি কোন আগ্রহ দেখানো হয় না। আর ১৯৭১-এ যুদ্ধের দুঃসহ বছরে পাকিস্তানী ওয়াসিম এর সাথে খোলামেলা পোষাকে বাঙালী মেহেরজানের জলকেলি করার দৃশ্যটি অসম্ভব পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে দৃশ্যটির তারল্য আর সেই সময়ের বাস্তবতার সাথে এমন একটি দৃশ্যের বিস্তর দূরত্বের জন্য। আর এই দৃশ্যটি ছবিতে দেখানো হয় একাধিকবার।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ের পটভূমিতে নির্মিত মেহেরজান সেই সময়ের সঠিক ইতিহাসকে কোনভাবেই তুলে ধরেনি। পরিচালক মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভিন্ন ভাবনা অনুসন্ধানের কথা বলে কেন তার চলচ্চিত্রে সেই সময় বাংলাদেশে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর নৃশংসতা, গণহত্যার ভয়াবহতা, মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ ও চারিত্রিক দৃঢ়তা, সেই সময়ের নারীদের সংগ্রাম ও রাজনৈতিক সচেতনতা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কখনো খুব মামুলিভাবে আর কখনো অত্যন্ত হালকা ও ইতিহাসের সাথে সম্পূর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা জরুরি। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের অগণিত মানুষের দুঃখের কাহিনী, সংগ্রামের কাহিনী বিভিন্ন কারণেই বিশ্বে যথেষ্ট প্রচার পায়নি। আর আন্তর্জাতিক পরিসরে মেহেরজান-এর মতো ‘প্রেমের জয়গান’ দেখানো ছবি প্রদর্শিত হলে তা কেবল বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে, সেই সময়ের মানুষের চেতনাকে সম্পূর্ণ ভুলভাবে দর্শকদের কাছে তুলে ধরবে।
*লেখাটিতে ব্যবহার করা পরিচালক রুবাইয়াত হোসেনের বক্তব্যগুলি তার একটি লেখা থেকে উদ্ধৃত করা যা ২৬ জানুয়ারি ২০১১ তারিখের প্রথম আলো দৈনিকের ১৩ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে।
মন্তব্য
টোনটা সেইরকম প্রো।
কার টোন, কিসের প্রো?
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
সেনেকা ভাইয়ার। প্রফেশনাল টোন। তাই বলা। কোন আন্ডারকারেন্ট নাই।
ফুল ডিসক্লোজার: উনি আমার আপন চাচাতো ভাই। ওঁর লেখাপড়া এ বিষয়েই। এ কারণে বলা।
যাক, ক্লিয়ার হলো। প্রো-তে প্রফেশনাল হয়, প্রো-পাকিস্তান হয়, প্রো-বাংলাদেশও হয়। অনেক সুশীল আবার অতি-জাতীয়তাবাদী বুঝাতেও প্রো ব্যবহার করে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
লেখার জন্য ধন্যবাদ।
আদার ইজ হোয়াট দ্য সেলফ ল্যাকস।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
অনেক ধন্যবাদ।
খুবই অ্যানালিটিক রিভিউ হইসে। সিরাআআম!
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
অনেক ধন্যবাদ। লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
রিভিউ খুবই ভালো লাগলো। সচলায়তনে স্বাগতম।
উদীয়ময়ান কনফিউজড প্রজন্মের এক প্রতীক হয়ে থাকবেন রুবাইয়াত। বলিউড দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে একটা বাংলাদেশি Veer-Zaara বানাতে গিয়ে ধরা খেলেন আর কি। থিসিস রুবাইয়াত ভুলে গেছেন যে পাকিস্তান লাখ লাখ ভারতীয় নারীকে ধর্ষণ করেনি, ৯ মাস ধরে গণহত্যা করেনি, ২৪ বছর উপনিবেশের মতো শাসন করেনি। যদি তা হতো, তাহলে Veer-Zaara কোনোদিন আলোর মুখ দেখতো না।
Veer-Zaara কি যুদ্ধের সময়ে নির্মিত ভালোবাসার গল্প?
Veer-Zaara- তে কি ভারতীয় ইতিহাসকে 'অন্যভাবে' (পড়ুন বিকৃত করে) দেখানো হয়েছে?
Veer-Zaara- তে কোনোভাবে কি নারীকে পণ্য হিসেবে কিংবা কোনোভাবে হেয় করে দেখানো হয়েছে?
— তাহলে Veer-Zaara'র সাথে কেনো তুলনা হবে রুবাইয়াতের মেহেরজানের? আরও কয়েক জায়গায় দেখলাম অনেকেই রুবাইয়াতের মেহেরজানকে ভারতীয় Veer-Zaara'র সাথে তুলনা করছেন।
মেহেরজানের শুধু Veer-Zaara কেনো, কোনো Zaara'র সাথেই মিল নেই। এটা সিম্পলি রুবাইয়াত হোসেনের ব্যক্তিগত ফ্যান্টাসির গল্প। বড়সড় একটা অসৎ উদ্দেশ্যকে কেন্দ্রে রেখে এই গল্পের পরিধির চলচ্চিত্রায়নের নাম হলো "মেহেরজান"।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
Veer-Zaara'র বাংলাদেশি ভার্সন হিসাবে মেহেরজানের নাম রাখা যেতে পারে "ধুর বাড়া"।
কিন্তু ধূগোদা না বললেন: "মেহেরজানের শুধু Veer-Zaara কেনো, কোনো Zaara'র সাথেই মিল নেই।"
উহুঁ, শিল্পমান বা কাহিনী বিচারে বলছি না। বলছি ছবির ট্যাগ লাইন বিচারে -- "Loving the other." প্রতিপক্ষদেশীয় কারও সাথে ভালোবাসার ভাসা-ভাসা চিন্তা থেকেই এই ছবি বানানো। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের সাথে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কে আকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে। ঐ দুটো দেশ পরষ্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী, আমরা ছিলাম শোষণের স্বীকার। সম্পর্কের বুননটুকু না বুঝেই (কিংবা বুঝে ধোঁয়াশা করতে) রুবাইয়াত লেগেছিলেন Veer-Zaara ফ্লেভার দিয়ে মেহেরজান তৈরিতে।
দারুন লাগলো উত্তরটা!
অনেক ধন্যবাদ। রিভিউটি আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
চমৎকার রিভিউ।
অনেক ধন্যবাদ।
একটা অনুরোধ করি, আপাত দৃষ্টিতে অনুরোধটা ছোট হলেও এর পরিধি বিস্তর বলে আমি বিশ্বাস করি।
আপনার এই লেখাটা ইংরেজিতে রূপান্তর করে আইএমডিবি'তে রেখে দিন সম্ভব হলে।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধুসর গোধূলি,
আইএমডিবি-তে খুব দ্রুতই মেহেরজান বিষয়ে লেখা রাখবো। ধন্যবাদ।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অনেক ধন্যবাদ।
সুন্দর বিশ্লেষণ, ঝরঝরে লেখা। তবে বড্ড আলুনী। কিছুটা ঝাঁজ থাকার দরকার ছিল। যেখানে দরকার চপেটাঘাত, সেখানে কেবল চটিকা প্রদর্শনে কাজ হয় না। এ লেখা পড়ে রুবাইয়াত ভাবতে পারে, যাক বাবা, জুতো দেখিয়েছে, অপমান তো করতে পারেনি। অবশ্য সকলের লেখা যে একরকম হতে হবে, তা বলছি না। তবে এটা এমন এক প্রসঙ্গ, যেখানে মিনমিন করে কিছু বলার অবকাশ নেই। এ প্রসঙ্গে স্বর চড়াতে হবে, শব্দে ঝাঁজ থাকতে হবে, যেন পড়ামাত্র কানে ঝমঝম করে বাজে। নইলে আমাদের ডিজুস প্রজন্ম, যারা আগামীর কথা ভাবতে শেখেনি, কোনওকিছু গভীর করে ভাবতে শেখেনি, তারা এটা পড়ে চট করে ঘুমিয়ে পড়তে পারে। তাদের জাগিয়ে রাখার জন্যই আমাদের স্বর চড়িয়ে কথা বলাটা জরুরী। আগামী প্রজন্ম যে রুবাইয়াতদের মত মতলবী গবেষক আর চলচ্চিত্রকারদের ধরিবাজি ধরতে পারবে, সে ভরসা হয় না, তাই সেজন্যও আমাদের ভাবতে হবে বৈকী।
লেখা চালিয়ে যান। আপনাকে স্বাগতম।
নিতান্তই গেরস্ত মানুষ, চারপাশে কেবল
শস্যের ঘ্রাণ পাই।
লেখাটি অত্যন্ত গোছানো এবং চমৎকার হয়েছে। আলুনী মনে হয়নি। বরং লেখাটা পড়ে পাঠককের চিন্তার সুযোগ রাখা হয়েছে।
লেখকের কাছে মাঝে মাঝে এরকম লেখার আহবান জানাই।
প্রকৃতিপ্রেমিক,
আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
আপনার বক্তব্যটির গুরুত্ব বুঝতে পারছি। আর যারা কোনকিছু গভীরতা নিয়ে ভাবতে শেখেনি, তাদের সচেতন করার জন্য বিভিন্ন সময় স্বর চড়ানোর প্রয়োজনটাও স্বীকার করি। কিন্তু আমি ছবিটির একটি রিভিউ লিখেছি, আর সেখানে ছবিটির বক্তব্যের বিভিন্ন অসঙ্গতি, আর নির্মাণপদ্ধতির বিভিন্ন দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা করেছি। ফর্মাল রিভিউ বলেই অনেক ইচ্ছে করলেও লেখাটিতে ঝাঁজ বেশি বাড়াইনি। রিভিউ না লিখে এই ছবির ওপর কোন কলাম লিখলে আমার সমালোচনা আমি আরো অনেক তীব্র করতাম। আর গভীরতাবিহীন লোকজনদের ক্ষেত্রেও যুক্তির জোর অনেক সময়ই কাজ করে। সেক্ষেত্রে স্বর বেশি না চড়ালেও উপস্থাপিত যুক্তির প্রভাবকে তারা উপেক্ষা করতে বা মন থেকে মুছে ফেলতে পারে না বলেই আমি মনে করি।
আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আপনিই মনে হয় একবার ফারুকীর একটা সিনেমা নিয়ে লিখেছিলেন। আপনার লেখা ভালো লাগে। এ লেখাটাও মুগ্ধতা জাগানিয়া। সচলে আপনার আরো লেখা চাই।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার' নিয়ে।
লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম। গত বছরের শুরুর দিকে ফারুকীর 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার' ছবিটির রিভিউ লিখেছিলাম। সচলে আরো লেখা দিতে সবসময়ই চেষ্টা করবো। অনেক ধন্যবাদ।
অসাধারণ হয়েছে রিভিউটা।
অনন্ত
অনেক ধন্যবাদ।
প্রচন্ড সুন্দরভাবে গুছিয়ে লেখা একটা রিভিউ। সচলে স্বাগতম।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিহাস বিকৃতি আর মুক্তিযুদ্ধকে বিভিন্নস্থানে শুধুমাত্র গন্ডগোল বা ভারতের উস্কানিতে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী যুদ্ধ বলে গলা ফাটানো সুশিলদের কর্মকান্ড নিয়েও আপনি লিখুন - এই দাবী রেখে গেলাম।
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
অনেক ধন্যবাদ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিহাস বিকৃতি আর কিছু 'সুশিল'দের কর্মকান্ড নিয়েও অবশ্যই লেখার চেষ্টা করবো।
দুর্দান্ত
আলিম আল রাজি
চমৎকার রিভিউ হয়েছে ।
---------------------------------------------
সবুজ পাহাড়ের রাজা
আমার চারপাশ ডট কম
.
বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রণালয়ের সেন্সর কোড অনুসারে এই ছবি বাইরে আসার আগেই আটকে দেয়া উচিত ছিলো।
II. International Relations:
(a) Contains propaganda in favor of a foreign state having a bearing on any point of dispute between it and Bangladesh or against a friendly foreign state which is likely to impair good relations between it and Bangladesh.
(b) Violates the third country principle, that is which adversely affects friendly relations with the other country or countries or wounds the susceptibilities of foreign nations.
(c) Portrays maliciously incidents or sequences which are prejudicial to the prestige or history of any people, race or nation.
(d) Distorts historical facts particularly maligning Bangladesh and its ideals and heroes.
কৃতজ্ঞতা: মুরুব্বি
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে লেখার জন্য। "ইউনিফর্ম প্রীতি" ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। সচলায়তনে আপনার আরো লেখা পড়ার প্রত্যাশা রাখছি।
চমৎকার রিভিউ।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
love the life you live. live the life you love.
চমতকার লেখনির জন্ন ধন্নবাদ। Movie র পখ্খে-বিপখ্খে অনেক লিখা পরছি, দেখার ইচ্ছা ছিল, but screening suddenly বন্ধ করাতে এক ধরনের অসহিষ্নুতা প্রকাশ পেল which is totally unacceptable. (Sorry seneka for the bad bangla spellings, i am using bangla for the first time...)
স্ক্রিনিং তো কোনো কর্তৃপক্ষ বন্ধ করেনি। করেছে সিনেমার ডিস্ট্রিবিউটর। এটা তাদের ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজি। এটাকে "অসহিষ্ণুতা" বলে প্রচার করা থেকে বিরত থাকুন।
[তথ্যসূত্র]
অসহিষ্ণুতার প্রকাশ কোথায় দেখলেন, ভাই? ছবি তো ব্যান হয়নি, ছবি বর্জন করার আহবান জানানো হয়েছে, যুক্তিসঙ্গত কারণেই। অনেকে মুক্তচিন্তার ওসিলা দিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখার কথা বলছেন, নিরপেক্ষভাবে দেখার কথা বলছেন। ইতিহাস নতুন অ্যাঙ্গেলে দেখা যায়। কিন্তু তাই বলে জাতের খোঁজ আছে এমন কেউ নিজের জাতি ছোট করে সেটা করবে না।
আপাতত ছবির ডিস্ট্রিবিউটর এইধরণের ছবির দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না বলে প্রদর্শনী বন্ধ, সেটা ঐ ডিস্ট্রিবিউটরের ব্যাপার। এইটাকে "কর্তৃপক্ষ নিষিদ্ধ করসে" বানায়ে না দিলে কৃতার্থ হই।
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
মাসুম, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভিন্ন ভাবনা পরীক্ষার নামে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে যখন ইতিহাসের বিভিন্ন দিককে সম্পূর্ণ ভুলভাবে ও মিথ্যার সাথে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয় তখন কী আর সেই মিথ্যা মতকে সহিষ্ণুতার সাথে মেনে নেয়া উচিৎ? সেই ভ্রান্ত বর্ণনার প্রবল সমালোচনা করাটাই সঠিক, কারণ মুক্তচিন্তা আর মিথ্যাচার তো এক জিনিস নয়, আর মিথ্যাচার চলতে দেয়াও যায় না।
মাসুমঃ আপনার তো দেখার কোন দরকার নেই, চোখ কান নাক বন্ধ করে কতিপয় মুরুব্বিদের স্লোগানে গলা মিলাবেন।
নাদির জুনাইদঃ লেখাটির সাধুবাদ জানাই। পর্যবেক্ষনে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন, যা বিরল।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতারও একটি পরিধি আছে। যা ইচ্ছে খাওয়ার স্বাধীনতা মানে যেমন গু খাওয়া নয়, তেমনই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে অন্যায়ভাবে নিজের মায়ের ধর্ষিতাকে কাছা খুলে সমর্থন করাও নয়। এই ছবিটি একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থেকে তৈরি করা। এর সবচে' বড় প্রমাণ পরিচালিকার তথাকথিত গবেষণার বিষয় ও উপসংহার। রুবাইয়াতের কথিত গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করা, একাত্তরের খুনী-ধর্ষক-লুণ্ঠক পাকিস্তানীদের নির্দোষ প্রমাণ করে প্রকারান্তরে বাঙালিদের অপরাধী হিশেবে বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করা, ধর্ষিতা বাঙালি নারীদের কামুক ও পাকিসেনাসঙ্গমতৃষ্ণ হিশেবে চিত্রিত করা, ধর্ষিতা নারী ও নিহত বাঙালির বহুস্বীকৃত ও ইতিহাসসিদ্ধ সংখ্যাকে বিতর্কিত করে প্রকারান্তরে ইতিহাসকে বিকৃত করা; সর্বোপরি বাঙালির দীর্ঘদিনের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগকে লঘু ও ব্যঙ্গ করা। 'মেহেরজান' চলচ্চিত্রটি এই গবেষণার পরিবর্ধন মাত্র। গবেষণা তো হাতেগোণা কয়েকজন পড়বে, কিন্তু চলচ্চিত্র ব্যাপক গণমানসে ছাপ ফেলতে পারবে, সেই চিন্তাকে সামনে রেখে তৈরি করা। তার বাপ আওয়ামী লীগ করে বা মন্ত্রী, সেটা কোনও ব্যাপারই নয়, সে নিজে আপাদমস্তক একজন বাংলাদেশ- ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের মানস-সহযোগী। এর কোনও কাজকেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সংজ্ঞায় ফেলে সিদ্ধ করা যাবে না। এটি নির্জলা মিথ্যাচার, অরুচিকর মানসবিকৃতি।
আমি যা ইচ্ছে খাওয়ার অধিকার রাখি, কিন্তু তাই বলে গু খেতে রাজি নই। রুবাইয়াত থালায় সাজিয়ে একদলা গু নিয়ে এসেছে, আমি তা সবরকম উপায়ে প্রত্যাখ্যান ও নিবারণ করার অধিকার রাখি। এমনকী সেই থালায় থুতু দেওয়ারও। 'মেহেরজান' বর্জন করা সেই অনেকগুলো উপায়ের একটি।
রুবাইয়াত তার গু ফাহমিদুল-ফারুক-দ্দীণূদের গিয়ে খাওয়াক। তারা এরই মধ্যে একে সুস্বাদু বলা শুরু করেছে। আমি, বাঙালি পিতার সন্তান, কোনওদিনও বলব না। ওয়াক থুঃ!
নিতান্তই গেরস্ত মানুষ, চারপাশে কেবল
শস্যের ঘ্রাণ পাই।
আপনার ভাষা যাই হোক না কেন, যা বোলেছেন, সবই ঠিক। ভদ্র ভাষা না ব্যবহারের জন্য কোন ক্ষোভ কোনও দাবি নাই আমার (কতিপয় মুরুব্বি ছাড়া সচলায়তনের সবার)।
-সচলের অন্ধ পাঠিকা
প্রথম আলোতে রুবাইয়াত,
২৩শে জানুায়ারী কইলেন ছবিতে কোন বিতরকিত বিষয় নাই।
২৬শে জানুয়ারি কইলেন তিনি বিতরক হউক তা তিনি চান।
বুঝলামনা।
নতুন মন্তব্য করুন