একটি ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়েছিল। এই যড়যন্ত্র কতোদূর বিস্তৃত ছিল তা নিয়ে অনেক তথ্য এখনো অজানা। আরো গভীর অনুসন্ধানের মাধ্যমে হয়তো আগামীতে এই বিষয়ে বিভিন্ন নতুন তথ্য জানা সম্ভব হবে। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে এমন কথা ১৯৭৫-এর আগস্টের আগেই বিভিন্নভাবে শোনা যেতে থাকলেও, সেই ষড়যন্ত্র সম্পর্কিত তথ্য কখনো গোপন রাখা হয়েছিল, কখনো সেইসব তথ্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। যারা ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত ১৯৭৫-এর আগস্টের আগেই তাদের কারো কারো পরিচয় প্রকাশিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে নিষ্ক্রিয়তা ছিল। বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্যদের নৃশংস হত্যাকান্ডের পর এই হত্যাকান্ড পরিচালনাকারী চাকুরীরত এবং প্রাক্তন সেনা অফিসারদের বিরুদ্ধে দ্রুত সক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা গিয়েছিল একই নিষ্ক্রিয়তা। আগস্ট হত্যাকান্ড পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে যে লেখালেখি এবং আলোচনা হয়েছে তার আলোকে সেই ষড়যন্ত্র এবং নিষ্ক্রিয়তা সম্পর্কে এই লেখায় কিছু তথ্য উপস্থাপন করবো।
ঢাকায় ১৯৭৪ সালের শেষভাগ থেকেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের এবং সম্ভাব্য একটি সামরিক অভ্যুত্থানের গুজব শোনা যাচ্ছিলো (মাহমুদ আলী: ২০১০, পৃ-১১০।) সাংবাদিক লরেন্স লিফসুলৎজ ১৯৭৯ সালে বৃটিশ সংবাদপত্র “গার্ডিয়ান”-এ তার একটি লেখায় উল্লেখ করেন যে, ১৯৭৪ সালের নভেম্বরে কিছু বাংলাদেশী ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কূটনীতিক ও কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করে বঙ্গবন্ধুর সরকারকে উৎখাতের ব্যাপারে কথা বলেন। লিফসুলৎজ এই বাংলাদেশীদের পরিচয় প্রকাশ করেননি। তবে বঙ্গবন্ধুকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে খন্দকার মোশতাক-এর জড়িত থাকার প্রসঙ্গে লিফসুলৎজ এই বৈঠকসমূহের কথা উল্লেখ করেন। তার লেখায় তিনি ইঙ্গিত দেন যে, এই বাংলাদেশীরা কোন সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আক্রমণের প্রধান দুই পরিকল্পনাকারী মেজর ফারুক এবং মেজর রশিদ সাংবাদিক অ্যান্টনি ম্যাসকারেনহাস-এর সাথে সাক্ষাতকারে কোন বিদেশী মিশনের সাথে তাদের যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেছিলেন (ম্যাসকারেনহাস: ১৯৮৬, পৃ-৬৫।) মার্কিন দূতাবাসের সাথে যোগাযোকারী বেসামরিক ব্যক্তিরা বেশ ক’বার অনানুষ্ঠানিকভাবে মার্কিনী কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। ১৯৭৫-এর জানুয়ারিতে মার্কিনীরা এই বাংলাদেশীদের সাথে আর আলোচনা না করার সিদ্ধান্ত নেয়। ধারণা করা হয়, এই বাংলাদেশীরা বঙ্গবন্ধুর সরকারকে উৎখাত করার ব্যাপারে মার্কিন মনোভাব বোঝার ব্যাপারেই মার্কিনী কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেন। মার্কিনীরা এই বাংলাদেশীদের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু প্রশাসনকে সুনির্দিষ্টভাবে অবহিত করেছিল কী না তা জানা যায় না। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এই গোপন বৈঠক সম্পর্কে কতোটুকু তথ্য পেয়েছিল তাও জানা যায় না।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রধান পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর সৈয়দ ফারুক রহমান ১৯৭৫ সালে ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেইসময়ের একমাত্র আর্মার্ড রেজিমেন্ট বেঙ্গল ল্যান্সারস্-এর সহ-অধিনায়ক। মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মাত্র অল্প কিছুদিন পূর্বে ফারুক মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশ থেকে কলকাতায় আসেন। যশোর মুক্ত হওয়ার পর ফারুক যশোরে মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগ দেন (হুদা: ২০১১, পৃ-১০৬।) যুদ্ধের পর তাকে নবগঠিত একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন ১২ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসবে দায়িত্ব দেয়া হয়। ট্যাংক কোরের অফিসার ফারুক কিছুদিন পর ঢাকায় অবস্থিত সেনাবাহিনীর একমাত্র ট্যাংক ইউনিট বেঙ্গল ল্যান্সারস্-এ অধিনায়ক হিসেবে বদলী হয়ে আসেন। অচিরেই তিনি সেনাবাহিনীতে রুশ-ভারত বলয়ের সমালোচনাকারী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তার আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী মনোভাবটিও স্পষ্ট হতে থাকে (নাসির উদ্দিন: ১৯৯৭, পৃ- ৫০।) ১৯৭৫ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় ফারুক সরকার উৎখাতের ব্যাপারে তার এবং সেনাবাহিনীর অন্যান্য কিছু জুনিয়র অফিসারের চিন্তার কথা সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপ-প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান-এর কাছে প্রকাশ করেন। লক্ষণীয়, ফারুক সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ’র সাথে এই ব্যাপারে আলোচনা না করে জিয়াকে আস্থায় নিয়ে তাদের পরিকল্পনার কথা জানান। সরকার পরিবর্তনের এই পরিকল্পনায় ফারুক জিয়ার সমর্থন এবং নেতৃত্ব চান। অ্যান্টনি ম্যাসকারেনহাস-এর কাছে পরবর্তীতে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ফারুক জানান, জিয়া সরাসরি এই পরিকল্পনায় যুক্ত হতে অস্বীকার করেন, কিন্তু তিনি ফারুককে বলেন জুনিয়র অফিসাররা এমন কিছু করতে চাইলে তারা অগ্রসর হতে পারে। ১৯৭৬ সালে লন্ডনে মুজিব হত্যাকান্ড নিয়ে একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান করার সময় ম্যাসকারেনহাস জিয়াকে ফারুক-এর এই বক্তব্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে জিয়া ম্যাসকারেনহাস-এর প্রশ্নের উত্তর দেয়া থেকে বিরত থাকেন। ফারুকের সাথে তার এমন কথোপকথনের বিষয়টিও জিয়া তখন অস্বীকার করেননি (ম্যাসকারেনহাস: ১৯৮৬, পৃ-৫৪।) লক্ষণীয়, ১৯৭৫-এর মার্চে তার অধীনস্ত সেনা কর্মকর্তা ফারুকের কাছ থেকে এমন একটি পরিকল্পনার কথা শোনার পরও সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান জিয়া ফারুককে নিবৃত্ত বা গ্রেফতার করার চেষ্টা করেননি (মাহমুদ আলী: ২০১০, পৃ-১১১)।
১৯৭৫ সালে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিজিএস। মুজিব হত্যাকান্ডের প্রায় তিন মাস পর তার নেতৃত্বেই ফারুক-রশিদ চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। কিন্তু সেনাবাহিনীর ট্যাংক কোরের অপর একজন অফিসার মেজর নাসির উদ্দিন-এর একটি বর্ণনা থেকে জানা যায় ১৯৭৫ সালের শুরুর দিকেই খালেদ মোশাররফ ফারুকের সরকার বিরোধী অভিযান পরিচালনা করার পরিকল্পনার ব্যাপারে অবহিত হয়েছিলেন। মেজর নাসির উদ্দিন একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে তিনি ৩ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর ট্যাংক কোরের অফিসার হিসেবে তিনিও বেঙ্গল ল্যান্সারস্-এ কিছুদিন কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। মু্ক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনীর ফেলে যাওয়া তিনটি পুরনো এবং হালকা ধরনের মার্কিন এম-২৪ শেফী ট্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ট্যাংক ইউনিট বেঙ্গল ল্যান্সারস্ যাত্রা শুরু করে। ১৯৭৪ সালে মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত বাংলাদেশকে সোভিয়েত ইউনিয়নে নির্মিত ৩০টি টি-৫৪ মিডিয়াম ট্যাংক উপহার দেন। ট্যাংকগুলির সাথে শ’চারেক গোলাও বাংলাদেশ পাঠানো হয়। ১৯৭৫-এর মার্চ মাসের মাঝামাঝি কোন এক রাতে গোলাসহ ৬টি ট্যাংক বিশেষ ট্রেনযোগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে জীবন্ত গোলা বর্ষণ মহড়ার জন্য পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়। মেজর ফারুকের ওপর দায়িত্ব ছিল কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্যাংকগুলো বিশেষ ট্রেনে তুলে দেয়ার কাজটি তদারক করা। ফারুক গভীর রাতে মেজর নাসিরের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তাকে জানান যে তিনি ট্যাংক ট্রেনে না তুলে সেই রাতেই একটি অভ্যুত্থান ঘটাতে চান। নাসিরকে তার প্রয়োজন কারণ বেঙ্গল ল্যান্সারস্-এ চারশোর মতো মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক আছে যারা নাসিরের নির্দেশ মেনে নেবে। নাসির ফারুকের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ-কে ফারুকের উপস্থিতিতেই টেলিফোন করেন। খালেদ ফারুকের সাথে ফোনে কথা বলে তাকে নিবৃত্ত করেন এবং নাসিরকে নির্দেশ দেন ফারুকের সাথে কমলাপুর রেলস্টেশনে যেয়ে ট্যাংক ট্রেনে তোলা তদারক করার জন্য। খালেদ এও জানান ফারুক অন্যরকম কিছু করলে তিনি ফারুককে গ্রেফতারের জন্য মিলিটারী পুলিশ পাঠাবেন (নাসির উদ্দিন: ১৯৯৭, পৃ- ৫৮-৫৯)।
সেই রাতে ফারুকের এমন আচরণ দেখার পরও ফারুকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, এবং ব্রিগেডিয়ার খালেদ বা মেজর নাসির কেউই সরকার, সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ বা দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে ফারুকের এমন পরিকল্পনার কথা আদৌ জানিয়েছিলেন কী না তা জানা যায় না। এছাড়া ঢাকা সেনানিবাসে আগে থেকেই একথা জানা ছিল যে, ফারুক ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে সেনাবাহিনীর তখনকার তিনটি ট্যাংক নিয়ে একবার অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছিলেন। তার সমর্থনে কুমিল্লা থেকে একটি সৈন্যদল ঢাকায় আসার কথা ছিল। কিন্তু সেই দলটি ঢাকায় এসে না পৌঁছায় ফারুকের পরিকল্পনা ভেস্তে যায় (জামিল: ১৯৯৮, পৃ-১১৭।) ট্যাংক ব্যবহার করে একটি অভ্যুত্থান করার ব্যাপারে ফারুকের এমন আগ্রহ এবং তৎপরতা সম্পর্কে সেনাবাহিনীর সব উর্দ্ধতন অফিসাররা অবহিত থাকার পরও ফারুকের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী থেকে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং ফারুক সেনাবাহিনীর ট্যাংক ইউনিট বেঙ্গল ল্যান্সারস্-এই সহ-অধিনায়ক হিসেবে কাজ করতে থাকেন এবং পরবর্তীতে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট এই রেজিমেন্টের ট্যাংকগুলির সাহায্যেই তার ভয়াল এবং নির্মম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন যার ফলে প্রাণ হারান শেখ মুজিবসহ আরো অনেকে।
শেখ মুজিব-এর ওপর হামলা হতে পারে এমন আভাস অবশ্য ১৯৭৫ সালের বিভিন্ন সময় পাওয়া যেতে থাকে। ১৯৭৫ সালের এপ্রিল মাসের এক রাতে সরকারী গোয়েন্দা সংস্থা স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিআইজি ই এ চৌধুরী রক্ষীবাহিনীর প্রধান কার্যালয়ে এসে জানান যে সেই রাতেই বঙ্গবন্ধুর ওপর হামলা হতে পারে এমন সংবাদ তিনি পেয়েছেন। সেই রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি এবং শেখ মণি’র বাড়ির ওপর সতর্ক নজড় রাখা হয়। এর মাস দেড়েক পর একদিন রক্ষীবাহিনীর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার নূরুজ্জামান প্রাপ্ত গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করেন যে রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা হতে পারে। আবারও রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা রাতে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখেন (আলম: ২০১৩, ১২৮-২৯।) সেই সময় রাষ্ট্রপতির স্পেশাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন মাহবুব তালুকদার। ১৯৭৫-এর আগস্টের অল্পসময় আগে সরকারী গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত তার একজন পরিচিত ব্যক্তি উদ্বেগের সাথে তাকে জানান যে বঙ্গবন্ধুকে সরানোর গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে এবং কয়েকদিনের মধ্যেই খারাপ কিছু একটা ঘটবে। তিনি মাহবুব তালুকদারকে অনুরোধ করেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধুকে দ্রুত এই কথা জানানোর জন্য। সেই কর্মকর্তা অবশ্য তার এই দাবীর পক্ষে তৎক্ষণাৎ কোন প্রমাণ দেখাতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুকে না জানালেও, মাহবুব তালুকদার তার বন্ধু শেখ মণিকে এই কথা জানান। কিন্তু শেখ মণি গোয়েন্দা সংস্থার সেই কর্মকর্তার দেয়া তথ্যকে “আজগুবী খবর” বলে উড়িয়ে দেন (তালুকদার: ১৯৯২, পৃ-১৪২-৪৪।) বোঝা যায়, সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে এমন খবর কোনভাবে আঁচ করা গেলেও কারা এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত সেই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য সরকারের ঘনিষ্ঠ মহলের কাছে তখন ছিল না। ষড়যন্ত্রকারীরা দক্ষতার সাথে তাদের পরিচয় গোপন রাখতে পেরেছিলো।
সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও এই ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সরকারকে কোন আগাম তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়। ১৯৭৫ সালে ডিজিএফআই-এর মহাপরিচালক ছিলেন ব্রিগেডিয়ার আবদুর রউফ। তিনি ছিলেন একজন পাকিস্তান-প্রত্যাগত অফিসার। ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞে ব্যবহার করা হয় সেনাবাহিনীর দুটি ইউনিট --- বেঙ্গল ল্যান্সারস্ আর মেজর খন্দকার আবদুর রশিদের নেতৃত্বাধীন টু ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্ট-এর সৈনিকদের। এই দুটি ইউনিটই ঢাকা’র ৪৬ ব্রিগেডের অধীনে ছিল। তখন এই ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন কর্ণেল শাফায়াত জামিল। আগস্ট হত্যাকান্ডের মাস দুয়েক আগেই অজ্ঞাত কারণে ৪৬ ব্রিগেডের একমাত্র গোয়েন্দা ইউনিটটিকে প্রত্যাহার করে সেনা হেডকোয়ার্টারের অধীনে ন্যস্ত করা হয় (জামিল, পৃ-১১৯।) ফলে ৪৬ ব্রিগেড কমান্ডারের তার নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট থেকে কোন তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ ছিল না। ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ড পরিচালনায় ফারুক-রশিদের অন্যতম সহযোগী তৎকালীন মেজর বজলুল হুদা নিজেই সেনাসদরে সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তরে কর্মরত ছিলেন। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর বাসভবন প্রহরায় নিয়োজিত ছিল কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে আগত ১ম আর্টিলারী রেজিমেন্টের সৈনিকরা। সেনাসদরের নির্দেশেই কুমিল্লা থেকে এই রেজিমেন্টের সৈন্যদের ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে প্রহরার জন্য আনা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আক্রমণ পরিকল্পনার সাথে জড়িত মেজর হুদা আর মেজর ডালিম দু’জনই ছিলেন ১ম আর্টিলারী রেজিমেন্টের পুরনো অফিসার। ফলে, এই রেজিমেন্টের অনেক সৈন্যই ডালিম আর হুদার অনুগত ছিল। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে হামলায় হুদা অংশ নেয়। ধারণা করা হয়, আক্রমণকারীদের মধ্যে হুদার উপস্থিতি বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে প্রহরারত আর্টিলারীর সৈনিকদের আক্রমণকারীদের প্রতিরোধ করার ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় করে তোলে (হোসেন: ২০০৭, পৃ-২৫।) ধানমন্ডিতে আক্রমণে ব্যবহার করা হয় বেঙ্গল ল্যান্সারস্-এর কিছু বাছাই করা সৈনিক যারা ছিল বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত এবং ফারুকের প্রতি বিশ্বস্ত। ফারুক ট্যাংক নিয়ে রক্ষীবাহিনীর প্রধান কার্যালয় ঘিরে ফেলে। যদিও এই ট্যাংকগুলিতে কোন গোলা ছিল না। কিন্তু ট্যাংক দেখে রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা প্রতিরোধে অগ্রসর হয়নি।
ট্যাংকগুলোতে গোলা না থাকলেও রশিদের টু ফিল্ড আটিলারি ইউনিট থেকে প্রচুর গোলাবারুদসহ ৬টি ১০৫ মি.মি. হাউইটযার আক্রমণে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে যখন গোলাগুলি চলছিলো তখন একটি হাউইটযার দিয়ে বেশ কয়েক রাউন্ড গোলা বর্ষণও করা হয়, যার কিছু গোলা মোহাম্মদপুর অঞ্চলে যেয়েও ক্ষতিসাধন করে। মেজর রশিদ এই হামলার আগে ভারত থেকে গানারী স্টাফ কোর্স শেষ করে দেশে ফেরেন। এই কোর্স শেষ করার কারণে স্বাভাবিকভাবে আর্টিলারী ইন্সট্রাকটর হিসেবে তার পোস্টিং হয় যশোরে কম্বাইন্ড আর্মস স্কুলে। কিন্তু হঠাৎ করে তার পোস্টিং পাল্টে তাকে ঢাকায় বদলী করে নিয়ে আসা হয়। এই বদলীর পেছনে কার ভূমিকা ছিল তাও নিশ্চিতভাবে জানা যায় না। ৪৬ ব্রিগেডের অধীনস্ত সেনাবাহিনীর পদাতিক ইউনিটগুলিকে ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ড সংঘটিত হবার পর সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়। কিন্তু সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ ৪৬ ব্রিগেডের অধিনায়ক শাফায়াত জামিলকে অভ্যুত্থানকারী ল্যান্সারস্ ও টু ফিল্ড আর্টিলারি’র সৈনিকদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার আদেশ দেননি। মুজিব হত্যাকারীদের প্রতিরোধ না করায় তৎকালীন রংপুর ব্রিগেডের কমান্ডার কর্ণেল খন্দকার নাজমুল হুদা (যাকে পরবর্তীতে খালেদ মোশাররফ-এর সাথে ১৯৭৫-এর ৭ নভেম্বর হত্যা করা হয়) সফিউল্লাহ এবং সেনা সদরের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। নাজমুল হুদা তখন বলেছিলেন রক্ষীবাহিনীর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার নূরুজ্জামান দেশে থাকলে হয়তো তিনি এই হত্যাকান্ড প্রতিরোধের চেষ্টা করতেন (হুদা, পৃ-১১০।) উল্লেখ্য, ব্রিগেডিয়ার নূরুজ্জামান এবং কর্ণেল নাজমুল হুদা দু’জনই বঙ্গবন্ধুর সাথে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী ছিলেন। ব্রিগেডিয়ার নূরুজ্জামান ১২ আগস্ট বিদেশ গিয়েছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা তাদের করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণেও অসুবিধার সম্মুখীন হয়। সেসময় ঢাকায় রক্ষীবাহিনীর অস্ত্র-গোলাবারুদ থাকতো পিলখানায় বিডিআর প্রধান কার্যালয়ে। কিন্তু ১৫ আগস্টের পর রক্ষীবাহিনী পিলখানা থেকে তাদের অস্ত্র আনতে গেলে, তাদেরকে সেই অস্ত্র-গোলাবারুদ দেয়া হয়নি (আলম, পৃ-১৪৬।) রক্ষীবাহিনীকে তাদের অস্ত্র নিতে না দেয়া হলেও হত্যাকান্ডের পর ফারুকের গোলাবিহীন ট্যাংকগুলোর জন্য রাজেন্দ্রপুর অর্ডন্যান্স ডিপো থেকে গোলা আনার অনুমতি দেয়া হয়। জানা যায়, সেনাপ্রধানের নির্দেশে সিজিএস খালেদ মোশাররফ এই অনুমতি দেন (জামিল, পৃ-১০৭)।
সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুত্থান করার ব্যাপারে ফারুকের ইচ্ছা এবং পরিকল্পনার কথা জানার থাকার পরও ফারুকের বিরুদ্ধে তৎকালীন উর্দ্ধতন সেনা কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা না নেয়া, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার এই আসন্ন আক্রমণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে না পারা, বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা হওয়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতা, বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা প্রদানের ব্যাপারে খুবই বিশ্বস্ত সৈন্যদল নিয়োগ না করা প্রভৃতি কারণেই ১৯৭৫-এর আগস্ট হত্যাকান্ড সংঘটিত হতে পেরেছিলো। হত্যাকান্ডের পর সেনাবাহিনীর যে দুটি ইউনিট এই অভ্যুত্থানে অংশ নেয়, তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্রবাহিনী থেকে দ্রুত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ-শাফায়াত জামিল-এর নেতৃত্বে মুজিব হত্যাকারী মেজরদের ট্যাংক ও কামানের বিরুদ্ধে পদাতিক বাহিনী ও বোমারু বিমান দিয়ে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়। সেই অভিযানের প্রস্তুতি দেখেই ফারুক-রশিদ-ডালিম-নূর চক্র সংঘাত-এর সাহস হারিয়ে ফেলে। ফারুকের ল্যান্সারস্ বাহিনীর সদস্যরা সেদিন পদাতিক বাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণের ভয়ে বঙ্গভবনে তাদের অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যেতে থাকে (তালুকদার, পৃ-১৬৪।) দু’দিনের মধ্যেই ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া সেনা অফিসাররা দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়। প্রতিরোধের মুখে তাদের টিকে থাকার ক্ষমতা কতোটা কম ছিল, এ থেকেই তা ধারণা করা যায়। তাই ট্যাংক বা কামানের কারণে ফারুক-রশিদের বাহিনীর অল্প কিছু সৈন্যের বিরুদ্ধে ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের পরপরই শক্ত প্রতিরোধ গড়ে না তোলার যুক্তি গ্রহণযোগ্য হয় না। কেন বঙ্গবন্ধুর ফোন পাওয়ার পরও সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ তার অধীনস্ত সেনা ইউনিটসমূহকে দ্রুত আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশ দিতে পারলেন না, সেই ব্যাপারটি প্রশ্ন তৈরি করে। সেনাবাহিনীতে সফিউল্লাহর প্রভাবও কম ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার নেতৃত্বাধীন ২য় বেঙ্গল রেজিমেন্ট তখন ঢাকাতেই ছিল। হত্যাকান্ডের পর আক্রমণকারীদের দমন করার জন্য যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করার বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়নি। ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ-শাফায়াত জামিল নতুন সেনাপ্রধান জিয়াকে বন্দী করে ফারুক-রশিদ চক্রের বিরুদ্ধে যেভাবে অবস্থান নিয়েছিলেন, একই রকম শক্ত অবস্থান ১৫ আগস্টের পরপরই তারা গ্রহণ করেননি। কেন এই দু’জন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ এবং তাদের প্রতি অনুগত অন্যান্য অফিসার ও ইউনিটগুলোকে নিয়ে ধানমন্ডিতে হত্যাকান্ড ঘটার পরই ফারুক-রশিদ চক্রকে প্রতিরোধ করলেন না, তাও প্রশ্ন তৈরি করে। এই কথাই স্পষ্ট হয়, বৃহৎ এক ষড়যন্ত্রের জন্য এবং দায়িত্ব পালনে অনেকের নিষ্কিয়তার কারণেই ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট-এর হত্যাকান্ডসমূহ দেশকে প্রত্যক্ষ করতে হয়েছিল।
সহায়ক গ্রন্থসমূহ:
S. Mahmud Ali. Understanding Bangladesh (New York: Columbia University Press, 2010)
Anthony Mascarenhas. Bangladesh: A Legacy of Blood (London: Hodder and Stoughton, 1986)
মেজর নাসির উদ্দিন, গণতন্ত্রের বিপন্নধারায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী (ঢাকা: আগামী প্রকাশনী, ১৯৯৭)
কর্ণেল শাফায়াত জামিল, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর (ঢাকা: সাহিত্য প্রকাশ, ১৯৯৮)
মাহবুব তালুকদার, বঙ্গভবনে পাঁচ বছর (ঢাকা: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ২০০৫)
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ: রক্তাক্ত অধ্যায় ১৯৭৫-৮১ (ঢাকা: পালক পাবলিশার্স, ২০০৭)
আনোয়ার উল আলম, রক্ষীবাহিনীর সত্য-মিথ্যা (ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন, ২০১৩)
নীলুফার হুদা, কর্ণেল হুদা ও আমার যুদ্ধ (ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন, ২০১১)
মন্তব্য
মেজর নাসির উদ্দিনের বইটা পড়ার আগ্রহ হচ্ছে, আচ্ছা উনি কি ৩রা নভেম্বরের অভ্যুথানেও জড়িত ছিলেন?
......জিপসি
হ্যাঁ, মেজর নাসির উদ্দিন ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানে খালেদ মোশাররফ-শাফায়াত জামিল-এর পক্ষে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
ডিসক্লেইমারঃ
আমার পুরো কমেন্টটাই হাইপোথেটিকাল; এই পোস্টে আগসট হত্যাকাণ্ডের সময় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অফিসারের তৎপরতার (অথবা তার অভাব) বিবরণ পরে মাথায় যে চিন্তা এসেছিলো, সেটাই লিখলাম। কিন্তু কোন রেফারেন্স দিতে পারব না।
আসলে সফিউল্লাহ-জিয়া-খালেদ মোশাররফ-ফারুক-রশিদ সবাইতো ছিলেন পাকিস্তানি-ট্রেইনড; সুতরাং তাদের পাকি গুরুদের মত স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের ইচ্ছা কমবেশি তাদের সবার মধ্যেই হয়ত ছিল। এর মধ্যে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল শেখ মুজিবের মত এক "ব্লাডি সিভিলিয়ান পলিটিশিয়ান", যে কিনা ঠিকমত ইংরেজিও বলতে পারত না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় প্রথম তিনজন এই কারণেই ছিলেন নিষ্ক্রিয়; হয়ত তাদের মনোভাব ছিল যে ফারুক-রশিদের ষড়যন্ত্র যদি সফল হয়, তাহলে মুজিব সরে যাবে; কিন্তু তাদের হাত থাকবে "পরিষ্কার"। আর সিনিয়র অফিসার হিসেবে ক্যু-র পরেও আর্মির নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই থাকবে; তখন দরকার পরলে ফারুক-রশিদকেও সরিয়ে দেয়া যাবে। আর ফারুক-রশিদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলে শাস্তি পাবে কর্নেল-মেজর-ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার কয়েকজন অফিসার; অথচ তারা থাকবে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অর্থাৎ ষড়যন্ত্র সফল হলে লাভবান হওয়ার ব্যাপক আছে; কিন্তু সফল না হলে ক্ষতির সম্ভাবনা কম - হয়ত এরকম কোন ধারণা থেকেই সফিউল্লাহ-জিয়া-খালেদ মোশাররফ ছিলেন নিষ্ক্রিয়।
এ ব্যাপারে কী করে নিঃসন্দেহ হলেন??
আমার ধারণা আপনি আমার ডিসক্লেইমারটা পড়েননি; পড়লে হয়ত এই প্রশ্ন করতেন না। যাইহোক, আমি নিঃসন্দেহ নই। তবে আপনি যদি পশ্চিমা সাংবাদিকদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাতকারগুলি দেখেন (যেসব সাক্ষাতকারে কোন দোভাষী উপস্থিত ছিল না), তাহলে লক্ষ্য করবেন যে তাঁর ইংরেজি বাচনভঙ্গি খুব সাবলীল ছিল না। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরেও বাংলাদেশের সামরিক কালচারে সাবলীল ইংরেজি বলতে পারাটা একটা গুণ; আর ১৯৭০র দশকে এটা মহাগুণ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। আমি এই অর্থেই কথাটা বলেছিলাম। আর এটাকে খারাপ অর্থে নেয়ার কোন কারণ নেই। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন; এই মানুষগুলির মধ্যে কয়জন সাবলীল ইংরেজি বলতে পারত? যে ভাষা ব্যবহার করলে এই মানুষগুলি তাঁর সঙ্গে নিজেদেরকে identify করতে পারবে, তাদের সঙ্গে তিনি সেই ভাষাই ব্যবহার করেছেন। এই কারনে স্বাধীনতার আগে বঙ্গবন্ধুর জন্য ইংরেজি বলার খুব দরকার ছিল না, তিনি কথায় ইংরেজি শব্দ ব্যবহারও করতেন কম (আপনি ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্লেষণ করে দেখতে পারেন)। স্বাধীনতার পরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যখন তিনি বক্তব্য দেয়া শুরু করলেন, তখন ইংরেজি বলার ক্ষেত্রে তাঁর এই চর্চার অভাব বেশ পরিষ্কারভাবেই ধরা পড়ে।
এই ইন্টারভিউটা দেখুন তো... খুব কি খারাপ বলতেন?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজরুল ভাই, আমি ইন্টার্ভিউটা দেখেছি। আমি কিন্তু কোথাও বলিনি যে তিনি খারাপ/ভুল ইংরেজি বলতেন। অসাবলিল আর খারাপ/ভুল - এই দুটো কিন্তু এক জিনিশ না। যারা বিদেশী ভাষার ব্যাকরণ জানেন, কিন্তু বিদেশী ভাষা বলার ক্ষেত্রে নিয়মিত চর্চার অভাব আছে, তারা যখন বিদেশী ভাষায় কথা বলেন, তখন তারা ছোট, সহজ শব্দ এবং বাক্য ব্যবহার করেন; এবং তারা ধীরে, সময় নিয়ে কথা বলেন। ফলে কথা বলার সময় তারা যে একটা conscious, deliberate effort দিচ্ছেন, সেটা বোঝা যায়। বঙ্গবন্ধুর এই সাক্ষাৎকার দেখে আমার কিন্তু সেটাই মনে হয়েছে। আসলে আমার যেটা লেখা উচিৎ ছিল, সেটা হল effortlessly ইংরেজি বলার ক্ষেত্রে তাঁর কিছুটা জড়তা ছিল। আর আমার মন্তব্যের মূল পয়েন্ট ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতি বাংলাদেশের সামরিক এলিটদের একটা সম্ভাব্য মনোভাব তুলে ধরা; তাঁর ইংরেজি বলাকে খাটো করা না। বিদেশী ভাষা বলার ক্ষেত্রে fluency-র অভাব যে কোন লোকের থাকতে পারে। আর এটাকে যে কেন একটা দুর্বলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে, সেটাও আমার কাছে ঠিক পরিষ্কার না। বঙ্গবন্ধু যদি সাবলীল ইংরেজি বলাকে এত গুরুত্ব দিতেন, তাহলে তিনি হয়ত হতেন একজন সুশীল বুদ্ধিজীবী; বঙ্গবন্ধু না। আর আমরাও বাংলাদেশ পেতাম না।
এবং এই ইন্টারভিউটিও। এই সাক্ষাতকার দেখার পরও কী ভাবা যায় যে তাঁর ইংরেজি বাচনভঙ্গি সাবলীল ছিল না??
"হাইপোথেটিকাল" ডিসক্লেইমার দিয়ে খুব শক্ত বক্তব্য দেয়া ঠিক না।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আমি একটা ব্যপার ঠিক বুঝলাম না, ইংরাজী বাচনভঙ্গী "সাবলীল" হওয়া কি খুব জরুরী কিছু? আমার কাছে রাষ্ট্রনায়কদের দোভাষী দিয়ে কথা বলানোই বরং বেশী গর্বের ব্যপার বলে মনে হয় -- এবং আমার ধারণা সেইরকমই হওয়া উচিৎ।
-- রামগরুড়
সে সময় কোন একটি গোয়েন্দা বিভাগে (সামরিক বা এনএসআই) কর্মরত মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াউদ্দিন সম্ভবত সাম্প্রতিককালে টিভির টক-শোতে অনেকবার দাবী করেছেন যে তিনি/তারা ক্যুর খবর পেয়েছিলেন এবং তা সরকারের উচ্চ মহলে জানিওছিলেন। কিন্তু সেটা গণভবনের ভিতর থেকেই কোন বিশেষ ব্যক্তি বা মহল ধামাচাপা দেয়।
****************************************
মেজর জিয়াউদ্দিন তখন ডিজিএফআই-এ কর্মরত ছিলেন।
ক্যু করার ব্যাপারে ফারুকের আগ্রহ এবং তৎপরতার কথা সেনাবাহিনীর ভেতর অনেকের জানা থাকার পরও তাকে কেন সেনাবাহিনী থেকেই গ্রেফতার করা হলো না, এই প্রশ্নটিই প্রথমে করতে হয়।
বোকার মতো একটা প্রশ্ন করি। বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনী কি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান নয়? এই ঘটনায় বিমানবাহিনী বা নৌবাহিনীর ভূমিকা কেন আলোচিত হয় না? রাষ্ট্রপতি সপরিবারে খুন হয়, রাষ্ট্রক্ষমতা দুরাচাররা দখল করে, বঙ্গভবন-রেডিও স্টেশন-টিভি স্টেশন দখল হয়; আর বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো চুপচাপ হ্যাঙ্গারে ঘুমিয়ে থাকে। নৌবাহিনীর গানবোটগুলো ঢাকার চারপাশের চার নদী - বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু আর শীতলক্ষ্যা ঘিরে ফেলে গোলাবর্ষণ করার চেষ্টা করে না, চট্টগ্রাম, চালনা, চাঁদপুর, গোয়ালন্দ, ভৈরব, নারায়ণগঞ্জ, সদরঘাট বন্দরগুলো অবরোধ করে চাপ তৈরি করে না। ঢাকার বাইরের ক্যান্টনমেন্টগুলো থেকে সৈন্যরা এসে রাজধানীকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে না। এই ঘটনা নিয়ে নানা বিশ্লেষণেও (এই পোস্টটিসহ) বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর ভূমিকা অনালোচিত থাকে।
এতো বড় একটা ঘটনা যার রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম সেটার বিচার হবার সময় কয়েকজন নিম্নপদস্থ সামরিক কর্তা ছাড়া আর কারো বিচার হয় না। রাজনীতির ব্যাপারটিই সেখানে অনুপস্থিত থাকে। সেই বিচারের ফলাফলে কেউ কেউ প্রবল উল্লাস করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। ভাবি, এমন খণ্ডিত বিচারে কারা কারা বেঁচে গেল? উল্লাসকারীদের মধ্যে তারাও নেই তো!
এতোদিন পরে এই মাপের একটা ঘটনার আসল নাটের গুরু কারা সেটা বোঝার একটা সোজা উপায় আছে। কী সেটা? শুধু দেখুন এই ঘটনার সময় কারা কারা নিষ্ক্রিয় ছিল, এই ঘটনার ফলে কারা কারা ক্ষমতার ভাগ পেয়েছে - যাদের ক্ষমতা পাবার কথা ছিল না, কারা কারা সম্পদের পাহাড় পেয়েছে, কারা কারা সব আমলেই ভালো ছিল। এই দেখাটার সময় শুধু দলীয় চশমাটা খুলে রাখুন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তখন বাংলাদেশের বিমান আর নৌবাহিনী কি অতটা শক্তিশালী ছিলো? সেনাবাহিনীর কোনো কাজে প্রতিরোধ গড়ার মতো শক্ত অবস্থানে বোধহয় ছিলো না।
জিয়ার আমলে বিমান বাহিনী একবার অভ্যূত্থান করার চেষ্টা করেছিলো। সেটার পরিণতি ভালো হয়নি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর ঘটনায় বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনী'র কোন ভূমিকা ছিল না। ফারুক-রশিদদের ট্যাংক এবং হাউইটযার মোকাবেলায় বোমারু বিমান ব্যবহারের সুযোগ ছিল। কিন্তু এই লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে যে তা করা হয়নি। বিমানবাহিনী নিজে থেকে কিছু করেনি। আর সেনাবাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বিমানবাহিনীর সাহায্যও চাননি।
বিমানবাহিনী'র কিছু অফিসার খালেদ-শাফায়াতের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ শুরু হওয়া ফারুক-রশিদ-মোশতাক বিরোধী সেনা অভ্যুত্থানে। সেই বিষয়টি নিয়ে মেজর নাসির, কর্ণেল শাফায়াত তাদের লেখায় আলোচনা করেছেন। এই লেখায় সেই প্রসঙ্গ আলোচনা করা হয়নি যেহেতু ১৫ আগস্ট-এর ঘটনা এই লেখার মূল বিষয়বস্তু। তবে ৩ নভেম্বর যুদ্ধ বিমান ব্যবহারের কথা এই লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে সংঘটিত সামরিক ক্যুসমূহ মূলত নিয়ন্ত্রণ করেছে সেনাবাহিনী। বিমানবাহিনী বা নৌবাহিনী কখনো সেনাবাহিনী ক্যু করার পর তাদের প্রতিরোধ করতে যায়নি। বিমানবাহিনীর কিছু সদস্য দু'বার সশস্ত্র বিদ্রোহ করার চেষ্টা করে। প্রথমবার ১৯৭২ সালে। সেবার বিমানবাহিনীর সৈনিকরা অস্ত্রাগার ভেঙ্গে অস্ত্র নিয়ে বিমানবাহিনী প্রধান এ কে খন্দকারকে তার অফিসে আটকে রাখে। দ্বিতীয়বার ১৯৭৭ সালে বিমানবাহিনীর বিদ্রোহে বিদ্রোহী বিমান সেনারা বিমানবাহিনীর ১১ জন অফিসারকে হত্যা করে। এই ব্যাপারে তথ্য আছে তৎকালীন বিমানবাহিনী প্রধান এ জি মাহমুদ-এর লেখা "মাই ডেসটিনি" বইয়ে। ১৯৭২ এবং ১৯৭৭ -- দু'বারই সেনাবাহিনীর পদাতিক ব্যাটালিয়ন বিমানবাহিনী সদস্যদের সশস্ত্র বিদ্রোহ দমন করে। ১৯৭৭ সালের ঘটনায় বিমানবাহিনীর বহু সদস্যকে ফাঁসি দেয়া হয়। এই ব্যাপারে বিস্তারিত লিখেছেন সাংবাদিক জায়েদুল আহসান। বইয়ের নাম "রহস্যময় অভ্যুত্থান ও গণফাঁসি।"
বিমানবাহিনী থেকে বেশ সরব প্রতিবাদ উঠেছিল বলে শুনেছি, যার প্রতিশোধ জিয়া দিয়েছিল, কিন্তু ৭৭ সালে প্রেসিডেন্ট হবার পরে।
১৫ আগষ্ট হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ফারুক রশীদ গং হলেও তার সম্ভাব্য বেনেফিশিয়ারীর সংখ্যা একাধিক। যাদের অনেকেই এখনো জীবিত। এই একাধিক গ্রুপের মধ্যে সেনাবাহিনীতে বঙ্গবন্ধুর বিপক্ষ দলের লোকেরা যেমন ছিল, তেমনি কাছের লোক বলে পরিচিতরাও ছিল। আর ছিল নিষ্ক্রিয় দল। বাইরের ইন্ধনের কথা বাদ দিলেও ভেতর থেকে কেন প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়নি তার জবাব দিতে পারবেন এই সব বেনেফিশিয়ারী। হত্যাকাণ্ডের পর বেনেফিশিয়ারীদের মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগি দিয়ে আবারো দলাদলি হয়। ফলে নভেম্বরের ঘটনাগুলো ঘটে। এখানে একের পর এক ট্রাম ওভারট্রাম ঘটিয়ে সবার শেষে হাতের টেক্কা ঝাড়ে জেনারেল জিয়া। শেষ হাসিটা জিয়াকে উপহার দিয়েছিলেন কর্নেল তাহের। বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর সময় হলো পচাত্তরের পনেরোই আগষ্ট থেকে সাত নভেম্বর। এটা নিয়ে আরো শতবর্ষ ধরে গবেষণা চলতে পারে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ভালো লেখা!
এখন বাজার যে পরিমান গুজব ও মিথ্যাচারে সয়লাব, তখন তার পরিমান বেশী ছাড়া কম ছিল না। এখন যেমন প্রচারনা আছে এবং মনেও হয় যে দেশে সরকারের বাইরে আওয়ামী লীগ বা তার সমর্থক বলতে কিছুই নাই, তখন সেরকম ধারনা বেশী ছাড়া কম ছিল না। সেনাবাহিনীর মধ্যে বোধ হয় তেমন ভাবনা আরও বেশী ছিল, তাই কারো কারো নিস্ক্রিয়তার সেটাও একটা কারন হতে পারে। টিভি আলাপচারীতায় মেজর জিয়াউদ্দিনকে বলতে শুনেছি সেনাবহিনীতে ব্যাপক প্রানহানী এবং দেশে চরম অরাজকতার আশংকায় সার্বিক প্রতিরোধ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
আব্দুল্লাহ এ এম
মেসেজ বাক্সে একটা বার্তা দিলাম ভাইয়া এখানে। সম্ভব হলে জবাব দেবেন প্লীজ
I always have a question why there was no resistance either from Army or civilian side after the killing of Bangabondu. Shafiullah claimed that he did not have any force under his direct command, as he was the Army Chief ( Which appears to be true). So had to rely on 46th Brigade commander Shafayat Jamil. He ordered Jamil to move the troops but Jamil did not carry out his orders. He made his claims in many interviews and perhaps couple of his own writing. But Jamil categorically said that there was no order. There was some write ups on this during late 80's (??) in Bichitra or similar kind of magazines. If anybody has more information on this, please share. Both Shaffiullah and Jamil are Alive (?). I guess far more more serious study was needed to come to an educated hypothesis that these majors could have been stopped if Army top brasses acted according to their oath and Army Policy. Or the majority of the Armed forces was happy and cheerful that 'Sheikh Mujib' was killed. Another unauthenticated information that leading Rakhi Bahini leaders went to Tofayel Ahmed for decisions. Tofayel Ahmed cried out loud in front of them and said Bongobondu was no more what should we do.....we should not do anything head-strong....
Masud Rahman
Frisco, TX
অজ্ঞাতবাস
সিভিলিয়ান আর সেনাবাহিনীর বিষয় দুটি ভিন্ন। সিভিলিয়ান দের পক্ষ থেকে জোরালো প্রতিবাদ আসেনি কারণ ১) কারফিউ জারি ও দেখামাত্র গুলির আদেশ, ২) আওয়ামী নেতাদের, যাদের অনেকেই সর্বজনশ্রদ্ধেয় ছিলেন, বঙ্গবন্ধু পরবর্তী সরকারে যোগদান,৩) বাকি নেতাদের গণগ্রেফতার। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে ৭১ এর ২৫শে মার্চের গণহত্যার পরও ঢাকায় কিন্তু জুনের আগে প্রকাশ্য প্রতিরোধ গড়ে উঠেনি। ২৬শে মার্চের কারফিউ ভঙ্গ করার চেষ্টাও কেউ করেনি। কারফিউ ভঙ্গের পরও গণহত্যার নিন্দা নয়, বরং নিরাপত্তার জন্য ঢাকা ছাড়াই ছিল মুখ্য। কিন্তু মানুষের মনের নিরব প্রতিবাদের বহি:প্রকাশ ছিল দলে দলে তরুনদের মুক্তিযুদ্ধে যোগদান এবং পরবর্তিতে সর্বস্তরের মানুষের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা দান। তবে তাজউদ্দিন সহ আওয়ামী লীগ নেতারা ভারতে পালিয়ে যেয়ে সরকার গঠন করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধ প্রাথমিক প্রতিরোধ পর্বের পরই মুখ থুবরে পড়ত বলে আমার বিশ্বাস, হয়ত প্যালেস্টাইনের মত দীর্ঘস্থায়ী, কিন্তু ফলহীন একটি আন্দোলন হয়ে থাকত বহুদিন।
৭১ এ ২৫শে মার্চে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে, এমন ইঙ্গিত ছিল। কিন্তু ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট এর ঘটনার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলেন না। অত্যন্ত দ্রুততার সাথে নতুন সরকার সশস্ত্র বাহিনীর উপর নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে, প্রশাসনকেও অনুগত করে ফেলে। তাছাড়া মুজিবের মৃত্যুর সাথে সাথে দেশের বড় একটা অংশের মনোবলও ভেঙ্গে যায়। এ সকল কারণে তাত্ক্ষণিক প্রতিবাদ হয়নি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন ১৬ই আগস্ট প্রতিবাদ মিছিল করে, মোশতাক সরকারের পতনের সাথে সাথেই ঢাকায় বিশাল মিছিল হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে।
পরবর্তিতে আবার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের হত্যা ও গ্রেফতারের কারণে এই বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদগুলো সংগঠিত হবার সুযোগ পায়নি। কিন্তু বহু মানুষ নিরবে শেখ মুজিবের জন্য চোখের জল ফেলেছিলেন। আমাদের পরিবার তখন আওয়ামী বিরোধী বাম মতাদর্শের সমর্থক, আমার পিতামহ তত্কালীন ন্যাপ ভাসানীর ব্যানারে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। মুজিবের মৃত্যুর পর শুনেছি তিনি প্রায়ই মুজিবের জন্য নিভৃতে কাঁদতেন। ৮৩ তে উনার স্মৃতিভংশ হয়। কাউকেই চিনতে পারেন না। ৮৬র দিকে হঠাত একদিন ঘুম থেকে উঠে স্বাভাবিক আচরণ করেন। সবাইকে চিনতে পারেন, কিন্তু কোনো এক কারণে মুজিব যে মারা গেছেন, সে স্মৃতি তার ছিলনা। যখনই আবার জানলেন মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে, ১১ বছর পর তিনি পুনরায় কেঁদে উঠেন । আমি নিশ্চিত এ ধরনের অনেক কাহিনীই বাড়িতে বাড়িতে খোঁজ করলে জানা যেত। তবে ৭১ এ মুসলিম পাকিস্তানের বিভাজন বাংলাদেশের যে বিশাল জনগোষ্ঠী মন থেকে মেনে নিতে পারেনি, তারা যে মুজিবের মৃত্যুতে খুশিই হয়েছিল, তাও নিশ্চিত।
আর সেনাবাহিনীর বিষয়ে আপনার বিশ্লেষণ সঠিক, তত্কালীন সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে দোদুল্যমানতা এবং সর্বস্তরের সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্যু- কারীদের প্রতি সমর্থন এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিল বলে আমি মনে করি। শাফায়েত জামিল সম্প্রতি মৃত্যুবরণ করেছেন। শফিউল্লাহ ১৫ই আগস্ট সকালে শাফায়েতের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে অসমর্থ হন। পরবর্তিতে ডালিম কর্তৃক অনেকটা অপহৃত হয়েই তিনি বঙ্গভবনে যেয়ে আনুগত্য প্রকাশ করেন। জিয়া, খালেদ, শাফায়েতরা সে সময় অভ্যুত্থান্কারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেননি বিভিন্ন কারণে, যার মধ্যে ব্যক্তিগত লাভালাভ আর পরস্থিতি পর্যবেক্ষণ ছিল মুখ্য। আর ওসমানী তো মোশতাকের পক্ষ নিয়ে সক্রিয় ছিলেন। মূলত প্রভাবশালী মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের নিষ্ক্রিয়তা নতুন সরকারকে গদিতে বসার সুযোগ করে দেয়।
ভাই, এই লাস্টের "টি.এক্স." চীজডা কি ভাই?
-- রামগরুড়
আলুপট্টি (AP)
রাজশাহী।
"হাইপোথেটিকাল" ডিসক্লেইমার এই বিষয়টার উপর না দিলেই মনে হয় ভাল হতো। সাবলিল লেখা, ভাল লাগলো। সচল এ আমার প্রথম জবাবটা আপনাকেই দিলাম।
ধন্যবাদ।
দেরীতে লেখাটা পড়া হলো। আসলে এই ধরনের লেখা দেখলে পড়তে খুব কষ্ট লাগে। নিস্ফল আক্রোশে হাত কামড়াতে থাকি। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর খবর বা ষড়যন্ত্রের খবর পড়লে মনে হয়- এই মানুষটা কেনো বাংলার মানুষকে এতোটা ভালোবেসেছিলো? কী দরকার ছিলো এই অকৃতজ্ঞ জাতিকে স্বাধীনতা এনে দেবার? খুব কষ্ট লাগে, খু-উ-ব।
-নিয়াজ
উপকারি গাছের ছাল থাকে না
নতুন মন্তব্য করুন