"সুরঞ্জনা ,অইখানে যেয়োনাকো তুমি...."

রাফি এর ছবি
লিখেছেন রাফি (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৭/০৭/২০০৮ - ৩:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অবশেষে ফিরে পেলাম সচলায়তনকে। তবে বহুক্ষন পর দেখা প্রেয়সীর মুখে কেমন যেন অস্বাভাবিক, অচেনা ভাঁজ। অর্বাচীন এই নিষেধের বেড়াজাল সচলায়তনের শুদ্ধতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে, আগুনে পুড়েই তো সোনা খাঁটি হয়। তাই সেদিকে কথা না বাড়িয়ে আজ বরং কবিতার কথা বলি; বলি “শুদ্ধতম কবি”র কবিতার কথা।

বেশিরভাগ বাঙ্গালীই এ কবিতার অন্তত দুটি লাইন শুনেছেন। “সুরঞ্জনা অইখানে যেওনাকো তুমি, বলোনাক কথা অই যুবকের সাথে” আমার মতে বাংলা কবিতার সর্বাধিক পঠিত,সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত এবং দূর্ভাগ্যবশত সবচেয়ে কম বিশ্লেষিত পংক্তি। বহুব্যবহারে আবেদন হারিয়ে ফেলা, আবেগের উচ্ছাসে বিবেচনাবোধ কাড়তে ব্যর্থ হওয়া এই “আকাশলীনা” কবিতাটি নিয়েই আজ কিছু কথা।যারা কবিতাটিকে হৃদয় এবং বুদ্ধি দিয়ে নিজের ভেতর ধারণ করেছেন তারা তাদের ভাবনাটুকু আমাকে জানালে এবং যারা কবিতাটিকে নিতান্তই ত্রিভূজ প্রেমের কবিতা হিসেবে মনে করেছেন অথবা করছেন তারা একটু নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে কবিতাটিকে দেখলে বাধিত হব। কবিতাটি গত একমাস ধরেই আমাকে বেশ ভোগাচ্ছে।

-----
সুরঞ্জনা ,অইখানে যেয়োনাকো তুমি,
বোলোনাকো কথা অই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনাঃ
নক্ষত্রের রূপালি আগুন ভরা রাতে;

ফিরে এসো এই মাঠে , ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
দূর থেকে দূর - আরো দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর।

কী কথা তাহার সাথে? -তার সাথে!
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মত তুমি আজ:
তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।

সুরঞ্জনা,
তোমার হৃদয় আজ ঘাস:
বাতাসের ওপারে বাতাস-
আকাশের ওপারে আকাশ।
(আকাশলীনা – জীবনানন্দ দাশ)
-------

আপাতদৃষ্টিতে কবিতাটি বিস্ময়কররকম সরল। জীবনানন্দীয় দূর্বোধ্যতা, অদ্ভুত উপমার আরো ততধিক অদ্ভুত প্রয়োগ, “মতো” শব্দটির যথেচ্ছ ব্যবহার, ইতিহাসঘনিষ্ঠ দুঃসাহসী চিত্রকল্প, মৃত্যু আর অন্ধকারের ব্যতিক্রমী বন্দনা এককথায় সকল জীবনানন্দীয় অনন্যতা থেকে এটি প্রথমদর্শনে মুক্ত বলেই মনে হয়।স্পষ্টতই শাশ্বত প্রেমের চিরায়ত সংগী বিরহ অথবা বিরহবিষয়ক কবিতা এটি।কবিতার পাত্র-পাত্রী তিনজন- কবি নিজে , সুরঞ্জনা এবং জনৈক যুবক; অর্থাৎ সেই আমি, তুমি ও সে। আমাকে ছেড়ে অন্য কারো সাথে সুরঞ্জনা অনেকদূরে হারিয়ে গেছে আর নক্ষত্রের রুপালী আগুনভরা রাতে আমি তাকে আবার ফিরে আসতে আহবান করছি -কবিতাটির কবি কে এটা না বলে দিলে যে কেউ এই ব্যখ্যাটিই দাঁড় করাবেন; আসলে সাধারণভাবে এর বাইরে বেশি কিছু মনে হয়ও না।

কিন্তু এই সরলীকৃত ব্যাখ্যায় বাদ সাধে কবির নাম, তার অপরাপর কবিতা(ভুলে গেলে চলবে না এই কাব্যগ্রন্থটি কবির পরিণত বয়সের রচনা এবং এতেই রয়েছে জীবনানন্দের দূর্বোধ্যতম কবিতা “গোধূলিসন্ধির নৃত্য”) । আরেকটু তলিয়ে দেখলে আলোচ্য কবিতার কয়েকটি পংক্তি এবং শব্দও কিছু জবাব না জানা প্রশ্নের জন্ম দেয়ঃ

১) সুরঞ্জনা কি কারো নাম নাকি নামবিশেষণ?
২) কবি ঐখানে এবং ঐ যুবকের কথা না বলে “অইখানে” ও “অই যুবকের” কথা কেন বললেন?
৩) জীবনানন্দ একই লাইনে “তাহার সাথে” এবং “তার সাথে” দুই ধরণের সর্বনাম কেন ব্যবহার করলেন?
৪)মৃত্তিকার মতো প্রিয়া আর ঘাস হয়ে যাওয়া প্রেম(শেষ স্তবকে হৃদয়) চিত্রকল্পটির মাধ্যমে তিনি আসলে কী বুঝাতে চাইছেন?
৫) কবিতাটির শিরোনামটির মাজেজাই বা কী? (জীবনানন্দের প্রায় সব কবিতার শিরোনামই কবিতায় ব্যবহৃত কোন শব্দ থেকে নেয়া, কিন্তু লক্ষ্যনীয় “আকাশলীনা” শব্দটি মূল কবিতায় একবারও ব্যবহার হয় নি)

প্রথমেই বলে রাখি আমি বোদ্ধা নই, সমালোচকতো নই- ই। আমি জীবনানন্দের একজন সচেতন পাঠকমাত্র। জীবনানন্দ গবেষক ও সমালোচকদের বক্তব্য পাঠ করে আমার কাছে মনে হয়েছে কবিতাটি ততটা সরল নয়- যতটা প্রথম পাঠে মনে হয়। সুরঞ্জনা শব্দটির অর্থ আমি কোথাও খুঁজে পাই নি- এক জায়গার এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে বন্দিনী রাজকন্যা(প্রসঙ্গত বলে রাখি “কবিতা”পত্রিকায় প্রকাশের সময় কবিতাটিতে সুরঞ্জনা শব্দটির বদলে “হৈমন্তিকী” শব্দটি ছিল; কবিতার শিরোনাম ছিল“ ও হৈমন্তিকী”) এদিক থেকে বলতে হয় সুরঞ্জনা শব্দটি এ কবিতায় নায়িকার রুপকমাত্র, নায়িকার নাম নয় কোনভাবেই। ঐখানের পরিবর্তে অইখানে ব্যবহার হয়েছে শুধুমাত্র দূরত্বটুকু অনির্দিষ্ট করে দেবার স্বার্থেই, স্পষ্টতই অই শব্দটি ঐ এর চেয়ে অনেক বেশি অনিশ্চয়তা নির্দেশ করে। অনুরুপভাবে যুবকের নির্দেশক হিসেবে “অই” এর ব্যবহার যুবকটিকে অনির্দিষ্ট এবং একইসাথে যুবকটির সাথে কবির অপরিচিতি নির্দেশ করে।

এখন কথা হচ্ছে যেহেতু যুবকটি অপরিচিত তাই “তাহার” ব্যবহার যুক্তিযুক্ত কিন্তু কোন যাদুবলে ঠিক পরমুহূর্তেই যুবকটি কবির এত কাছের হয়ে যায় যে তিনি তাকে “তার” বলে সম্বোধন করেন? অন্যদিকে মৃত্তিকার সাথে ঘাসের অন্তরংগতা সুরঞ্জনার সাথে যুবকের অভিসার বর্ণনা করে এটা ধরে নিতে কোন বাধা নেই কিন্তু সর্বশেষ স্তবকে কেন সুরঞ্জনার হৃদয় ঘাস হয়ে গেল আর শেষ দুলাইনে কেনই বা বেজে উঠল হাহাকার?

এই দুটি প্রশ্নের ব্যাখ্যায় যুবক শব্দটিকে মৃত্যুর বিকল্প হিসেবে ধরে নিলে জটিলতার কিছুটা নিরসন হয়। কীভাবে? বলছি-
আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, একেবারে কাছের কোন মানুষের মৃত্যুর শোক গ্রাস না করলে মৃত্যুকে বেশ দূরেরই মনে হয়; অত্যন্ত আপন কাউকে বিদায় দেয়ার পরই উপলব্ধ হয় মৃত্যুই আমাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু; প্রেমিকের কাছে আজীবন যুবতী প্রিয়া যার আলিঙ্গনে ধরা দিয়েছে সেই মৃত্যুকে যুবক মনে করলেই “তার” এবং “তাহার” বিষয়ক ধাঁধাঁর অবসান হয়। সুরঞ্জনার হৃদয়কে ঘাস আর অনন্ত হাহাকারের যৌক্তিকতাও আশা করি এখন পাঠকের বুঝতে সমস্যা হচ্ছে না?

তবে অনেক “যদি”র এই পাঠ কিন্তু নতুন করে আরেকটি প্রশ্নের জন্ম দেয়। দ্বিতীয় স্তবকের শেষ লাইনে “যেয়োনাক আর” এই “আর” শব্দটির আবির্ভাবেই সমস্ত ব্যাখ্যাটি তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়তে উদ্যত হয়। তবে সুরঞ্জনার ইতিমধ্যে একবার মৃত্যু হয়েছে? তবে কি সুরঞ্জনার পূনর্জন্ম হয়েছে?

তাহলে কি দিনের পর দিন অসংখ্য লঘু মুহুর্তে প্রেমিকের কন্ঠে উচ্চারিত এ কবিতায় বিরহকে ছাপিয়ে যথারীতি মাথা উচিঁয়ে দাড়িঁইয়েছে জীবনানন্দীয় মৃত্যুময়তা?

কবিতার শিরোনাম (“আকাশলীনা”) সেই সম্ভাবনার দিকেই কি অঙ্গুলী নির্দেশ করে না?


মন্তব্য

নিঘাত তিথি এর ছবি

পড়লাম। ইন্টারেস্টিং।
পুরনো শিল্প এবং সাহিত্যের এরকম ব্যবচ্ছেদ খুবই রোমাঞ্চকর একটা ব্যপার। কত আগে লিখে যাওয়া একটা কবিতা, তার এরকম একটা ব্যাখ্যা...। এটাই ঠিক কিনা জানি না, জানার উপায় নেই; কিন্তু দারুণ সব যুক্তি ঠিক দাঁড় করানো হয়েছে।
ড্যান ব্রাউনের "দি দ্য ভিঞ্চি কোড" বইটাতে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির কিছু ছবির ব্যাখ্যা পড়ে যেরকম রোমাঞ্চ হয়েছিলো, অনেকটা সেরকম লাগলো।
এরকম মাঝে সাঝে আরও লিখেন তো!
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

রাফি এর ছবি

জীবনানন্দের কবিতার বিশ্লেষণ করে আমি বেশ কয়েকটা লেখা লিখেছি. যদি সময় মেলে তাহলে টাইপ করে ফেলব। তবে আমার টাইপিং স্পীড খারাপ।
তবে আপনার মন্তব্যে উতসাহ পেলাম।
ধন্যবাদ।

-------------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

শামীম এর ছবি

চমৎকার ব্যাখ্যা .... সব ফকফকা। চলুক
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

রাফি এর ছবি

কবিতার ব্যাখ্যাটা নিয়ে আমার নিজের কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল।
সহমতের একজনকে পেয়ে মনে জোর পাচ্ছি।
কষ্ট করে পোস্টটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

--------------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

মাঝ রাতের বর্ষণ এর ছবি

লেখা তো নয়, যেন আতশকাচের ভিতর দিয়ে দেখা এক মহাবিশ্ব ।

"এখন কথা হচ্ছে যেহেতু যুবকটি অপরিচিত তাই “তাহার” ব্যবহার যুক্তিযুক্ত কিন্তু কোন যাদুবলে ঠিক পরমুহূর্তেই যুবকটি কবির এত কাছের হয়ে যায় যে তিনি তাকে “তার” বলে সম্বোধন করেন?"

এ ব্যাপারে একটু ভিন্নমত পোষন করছি । "তাহার" শব্দটি হয়তো স্বয়ং কবির অপিরচয়ের প্রকাশকে শক্তিশালী করছে, "তার" শব্দটি সুরঞ্জনার যুবকের সাথে সুপরিচয়কে তুলে আনছে । একই লাইনে কবির আত্মা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে সুরঞ্জনা দ্বারা ! হয়তো যাদুবল নেই ।

আমাদের পুরো কবিতায় গোল্কধাধায় আটকে দিয়েছেন ।

হয়তো কবিতাটি দ্যার্থক ! দুদিকেও চালানো যায় - মৃত্যুময় কবিতা অথবা প্রিয়াহারানোর শংকা !

এখানেই তো জীবনানন্দ একটি এনিগমা ।

আপনার পোষ্টটি ভাবনা উদ্রেক কর । আমি মুগ্ধ হলাম আপনার বিশ্লেষনী দক্ষতায় ।

সৌন্দর্য্যে কাতর হয়ে পরার পরপরই হতাশ হয়ে পরি, তাঁর নশ্বরতায় ...

রাফি এর ছবি

"তাহার" শব্দটি হয়তো স্বয়ং কবির অপিরচয়ের প্রকাশকে শক্তিশালী করছে, "তার" শব্দটি সুরঞ্জনার যুবকের সাথে সুপরিচয়কে তুলে আনছে । একই লাইনে কবির আত্মা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে সুরঞ্জনা দ্বারা !

আমার মাথায় এই ব্যাখ্যাটা এসেছে। জায়গার স্বল্পতার কারনে এই লাইনে বিশদ ব্যাখ্যা দেই নি। একটু ভাবুন যদি যুবককে কোন প্রতীক হিসেবে ধরে নেয়া না হয় তাহলে হৃদয় ঘাস হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা ধোয়াচ্ছন্ন হয়ে যায়। অন্যদিকে আকাশের আড়ালে আকাশে সুরঞ্জনার হারিয়ে যাওয়াটাও অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্যতা হারায় না কি?
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
-----------------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ইন্টারেস্টিং পোস্ট। মজা পেলাম।

একটা অপব্যাখ্যা দেই:
এই কবিতার কবি হলেন সুরঞ্জনার বাপ। তিনি কৃষিকাজ করেন, আবার মাঝে মাঝে নদীতে মাছও ধরেন। গরীব মানুষ। তার ছেলে নেই। তেরো বছর বয়সী সুরঞ্জনাই তিন মেয়ের মধ্যে সবার বড়। সে বাবাকে এটাসেটা কাজে সাহায্য করে।

ইদানিং এক টোটো কোম্পানির ম্যানেজার রাখাল যুবকের প্রতি তার মুগ্ধতা এসেছে। বাপের কাজে ফাঁকি দিচ্ছে। জোছনাভরা রাতেও সে বাড়ির বাইরে। বাবা তাকে ডেকে ডেকে খুঁজছেন।

মাঠ, ঢেউ - এগুলো হলো কবির কর্মক্ষেত্র। হৃদয়ে ফিরে আসা বলতে কবি তার হৃদয়ের টুকরা জ্যেষ্ঠ কন্যার টো টো করে না ঘুরে বাড়ি ফেরাকে বুঝিয়েছেন।

ঘাসের উপমাটা মারাত্মক। ঘাস হলো মুগ্ধতার প্রতীক। মুগ্ধতার জন্ম যে মুগ্ধ হয়, তার মনে। মন হলো মাটি। সুরঞ্জনার মাটির মত মনে যুবকের জন্য মুগ্ধতার ঘাস জন্মানোয় যুবকের যে কোনো কৃতিত্ব নেই, কবি এখানে তাই বুঝিয়েছেন।

কবি শেষমেশ রেগে গিয়ে বলেছেন, সুরঞ্জনার হৃদয়ও ঘাস। তার জন্য কবির যে মায়া, তাও এই মুগ্ধতাই, কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। এই যে কবি এতক্ষণ ধরে ডেকে চলেছেন, তবুও সে ফিরছে না, এতে কবির ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। তিনি শেষপর্যন্ত আকাশ-বাতাস নিয়ে প্রলাপ বকে কবিতা শেষ করে দিয়েছেন। সুরঞ্জনা আজ বাড়ি ফিরলে তার খবরই আছে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

রাফি এর ছবি

হা..হা.......হা............
সচলায়তনে বসে দুইদিন পর আপনার কল্যাণে হাসতে পারলাম।
নিদারুন ব্যাখ্যা, আমিও প্রায় বিশ্বাস করে ফেলেছি।
শুধু একটা খটকা আছে.. সুরঞ্জনার বাপ কি সুরঞ্জনাকে তুমি বলে সম্বোধন করবে?
বিশেষত যেখানে বাপ কৃষিকাজ করেন.
-----------------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এইটা আদরের সম্বোধন। সুরঞ্জনা, মামণি, অইখানে তুমি আর যেও না। নরমাল অবস্থায় তো 'তুই' ই বলে; কিন্তু এখন মাইয়া তুই বললে আরো বিগড়ায় যাইতে পারে, এই ভয়েই...

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

রাফি(লগইন করতে পারছি না) এর ছবি

হ.. যান আপনেই ঠিক।
তবে আরো কিছু কবিতার অপব্যাখ্যা চাই।
দিতে হবে কিন্তু.

----------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;

তিথীডোর এর ছবি

অপব্যাখ্যা পড়ে হাহাপগে.... গড়াগড়ি দিয়া হাসি

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌আপনার এই জাতীয় ব্যাখ্যাগুলোর একটা সংগ্রহশালা খুলতে চাই আমি।
ভীষন মজারু হাসি
আপনার একটা জটিল অনুবাদও পাইছিলাম একবার কোথায় জানি হাসি
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

শেখ জলিল এর ছবি

জীবননান্দ দাশ পরাবাস্তবতার কবি। নিঃসঙ্গতা, মৃত্যুচিন্তা তাঁর অনেক কবিতায় আছে। যেমন আছে এই আকাশনীলা কবিতাটি।
রাফি, আপনি যে ব্যাখ্য দিয়েছেন খুবই চমৎকার লাগলো। বিশেষ করে আপাতদৃষ্টিতে এই কবিতার ত্রিভুজ প্রেমের চরিত্রকে যেভাবে শ্বাশ্বত প্রেম, মৃত্য ও পূনর্জন্ম দিয়ে বেঁধেছেন সেই দিকটা।

জীবনন্দ দাশ অক্ষরবৃত্ত ছন্দে বেশি লিখেছেন। এ কবিতাটিতে অইখানে, অই, তাহার, তার এসেছে শুধুমাত্র মাত্রাবিন্যাস ঠিক রাখার জন্য। আমার দৃষ্টিতে অন্য কোনো কারণে নয়!

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

রাফি এর ছবি

জলিল ভাই কবিতার মূলভাব প্রসঙ্গে আমার বক্তব্য আপনার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে জেনে খুশি হলাম।
ছন্দের ব্যাপারে একটা কথা.. আপনি বলেছেন ঐ এর পরিবর্তে অই ব্যবহার হয়েছে অক্ষরবৃত্তে মাত্রা ঠিক রাখার জন্য। কিন্তু আমি যতদূর জানি অক্ষরবৃত্তে শব্দের প্রথমে অথবা মাঝামাঝি ছাড়া সকল বদ্ধ স্বরই দুই মাত্রা।
তাহলে ঐ আর অই কি একই(দুই মাত্রা)মাত্রা নির্দেশ করে না।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

----------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

শেখ জলিল(অফলাইন) এর ছবি

অক্ষরবৃত্তে যুক্ত বা বদ্ধ স্বর শব্দের প্রথমে বা মাঝে থাকলে সবসময়ই একমাত্রা আর শেষে থাকলে দুই মাত্রা কথাটি ঠিকই আছে।
কিন্তু ‌‌ ঐ- স্বরবর্ণটিকে স্বাভাবিক রীতিতে লিখলে সবসময় একমাত্রা হিসেবে গণ্য করা করা হয়। আর ভেঙে অই বা ওই লিখলে অক্ষরবৃত্তে দুই মাত্রা গণ্য হয়। কবি জীবনানন্দ দাশ এখানে অই-কে দুই মাত্রা হিসেবে ব্যবহার করে কবিতায় মাত্রাবিন্যাস ঠিক রেখেছেন।
সুন্দর এই পোস্টের জন্য আবারও ধন্যবাদ, রাফি।

রাফি এর ছবি

আমার জন্য নতুন এই তথ্য দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।
আগামী পর্বগুলোতে ছন্দের দিকে নজর দিতে হবে।
আপনার সহযোগিতা কামনা করছি.
------------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

স্নিগ্ধা এর ছবি

আপনার ব্যাখ্যা ভালো লাগলো, কিন্তু তার চাইতেও বেশী ভালো লাগলো বহুদিন পরে কারো লেখায় 'কবিতা'র
উল্লেখ হাসি

বু ব কে নিয়ে কি আপনার কোন লেখা আছে?

রায়হান আবীর এর ছবি

দারুন লাগলো লেখাটা...
---------------------------------
জানিনা জানবোনা... কোন স্কেলে গাইছে কোকিল
গুনিনা আমি গুনিনা...কার গালে কটা আছে তিল

রাফি এর ছবি

@স্নিগ্ধা,
বুদ্ধদেব বসু আমার খুব পছন্দের একজন মানুষ। প্রচন্ড মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে জীবনানন্দকে তিনিই সমর্থন করে গেছেন আজীবন। তবে উনাকে নিয়ে আমার কোন লেখা নেই। লিখলে পোস্ট করব। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
@রায়হান আবীর,
কবিতা ভাল লাগেনা তারপরেও এই লম্বা পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

-------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

তাসনীম এর ছবি

তাহলে কি দিনের পর দিন অসংখ্য লঘু মুহুর্তে প্রেমিকের কন্ঠে উচ্চারিত এ কবিতায় বিরহকে ছাপিয়ে যথারীতি মাথা উচিঁয়ে দাড়িঁইয়েছে জীবনানন্দীয় মৃত্যুময়তা?

আমারো তাই মনে হয়েছে, জীবনানন্দ সাদামাটা প্রেমের কথা বেশি বলেন না, সব কবিতায় এক ধরনের আশ্রয়হীনতা আর নস্টালজিয়া থাকে আর কিছুটা থাকে মৃত্যুভাবনা, আকাশলীনাও ব্যতিক্রম নয়।

ধন্যবাদ আপনাকে, ভালো লেগেছে আলোচনা, আমারো দারুন প্রিয় কবিতা এটা।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রাফি এর ছবি

ধন্যবাদ তাসনীম ভাই, আমার ব্লগে আপনাকে পেয়ে ভাল লাগল।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

জীবনানন্দ ছাড়া বেঁচে থাকা রপ্ত করতে অনেক কষ্ট হয়েছে, তবে ফেল করেছি বোঝা যাচ্ছে। আপনি জীবনানন্দের কবিতা নিয়ে আরো লেখেন। দরকার হলে লিস্ট ধরায়ে দিতে পারি।

----------------------------------
~জীবন অনেকটা জড়ই, কিন্তু অনন্য!~

রাফি এর ছবি

যিনি জীবনানন্দে একবার মেতেছেন। তাকে এই ঘোর থেকে বের করে আনা সত্যিই অসম্ভব।

চেষ্টায় আছি ভাই; লিখতে পারি না তো।। মন খারাপ

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

নীল রোদ্দুর এর ছবি

রাফি, দারুন!

আমি তোমার শেষ কথার সাথে সহমত পোষন করি,
তাহলে কি দিনের পর দিন অসংখ্য লঘু মুহুর্তে প্রেমিকের কন্ঠে উচ্চারিত এ কবিতায় বিরহকে ছাপিয়ে যথারীতি মাথা উচিঁয়ে দাড়িঁইয়েছে জীবনানন্দীয় মৃত্যুময়তা?

আরো চাই ব্যবচ্ছেদ!
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌জীবনানন্দে ঢুকেছিলাম ১৯৮৬ সালে ........রূপসী বাংলা দিয়ে। আর বেরুতে পারিনি।

এই লোকটা আসলেই এক বিপুল বিস্ময়। নির্বাসনে গেলে যদি একটা বই নিতে দেয়া হয়, আমি জীবনানন্দ সমগ্রটাই বগলদাবা করবো। আপনার ব্যবচ্ছেদ প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ।

পুরোটার ব্যাপারে কোন কথা নাই। তবে একটা অংশে আমার মতামত দেই-

"মৃত্তিকার মত তুমি আজ:
তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।"

পুরোপুরি অসঙ্গতি লেগেছে এই দুটো লাইন। হাজার ব্যবচ্ছেদ করেও কিছু পাওয়া যাবে না। কারন "মৃত্তিকার মত তুমি আজ:" এই পর্যন্ত লেখার পর জীবনানন্দের বউ রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠেছিল - ঘরে বাজার নাই, ব্যাটা বসে বসে কবিতা লেখে।

জীবনানন্দ তড়িঘড়ি বাজারে যায়। এবং বাজার থেকে ফিরে মলিন মুখে লেখে
"তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।"

পরের চার লাইনেও বউয়ের ঝাড়ি পরবর্তী উদাসীনতা রয়ে গেছে। আকাশের ওপারে আকাশ.......

[অনুমিত চাপাবাজি হাসি ]

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

বিজয়ানন্দ অধিকারী এর ছবি

অসাধারণ এপ্রোচ, কিন্তু আমি আপনার সাথে একমত না। মৃত্যুর রূপক হিসেবে বনলতা সেন সুরঞ্জনার চেয়ে ভাল ক্যান্ডিডেট। যাই হোক মূল কবিতায় ফিরে আসা যাক। আসলে "অই" নয় "ওই" ব্যাবহার করা হয়েছে। মান্নান সৈয়দের সম্পাদিত সংকলন অনুসারে বলছি। কবিতাটা প্রেমের কবিতা হলেও মোটেই নিতান্ত নয় এর বিষয়বস্তু বা বাবু যে প্রেমের কথা বলছেন তা নিতান্ত নয়। আর এই কবিতাটা আমার মতে কোনদৃষ্টিতেই সরল না। "আর" এর উপস্হিতির ফলে আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা কবিতাটির অর্থটাকে এই শব্দ "তাসের ঘরের" মত ভেংগে ফেলে বলে যে মন্তব্য করেছেন তার সাথে আমি একমত।

ঘাস বলতে জীবন, তারুণ্য বুঝায়। মৃত্যুর পরে বা মৃত্যুর সাথে কথোপকথনে রত থাকা অবস্হায় প্রেমিকার হৃদয় ঘাস কিভাবে হতে পারে! আমার মতে শেষ পর্যন্ত প্রেম জাতীয় বিষয়ের একধরণের পরিণামের কথা বলা হয়েছে। "তাহার" থেকে "তার"- যুবকের কাছে সুরঞ্জনার আস্তে আস্তে প্রেমিকারুপে পরিস্ফুট হওয়ার এক বিবরণ। কারণ "তার" বলা অবস্হায় কবি নিজের সাথে যুবকের এবং যুবকের সাথে নিজের তুলনা করেছেন। "তাহার" হয়ত অতীতের কবির (বা কবির মনের) সুরঞ্জনার সাথে মিশ্রিত অস্তিত্তের সাথে যুবকের ওই একই সুরঞ্জনার সাথে প্রথম দিককার মিশ্রিত অস্তিত্তের তুলনার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর আসছে "মৃত্তিকা"। প্রেম যখন ঘাস হয়ে আসে, কাকে অবলম্বন করে সে আসে? সুরঞ্জনার মত মাটিকে অবলম্বন করেই। আর অই যুবকের প্রেম, সুরঞ্জনা নিজে যার জন্ম দিতে সাহায্য করেছে, শেষ পর্যন্ত সুরঞ্জনার হৃদয় এ প্রেম এর সূচনা করেছে। কিন্তু ঘাস যখন পরিপূর্ণ তার বৃদ্ধির হিসেবে, মাটির গর্ভ থেকে বের হয়েই ত অসীমের সাথে তার পরিচয়। শেষ দুই লাইন এ হাহাকার কিভাবে প্রকাশিত হল! এই দুইলাইন কি "যার আর পর নাই" জাতীয় বিষয়ের বিবরণ নয়? শেষ পর্যন্ত প্রেম একটা "হয়ে আসার" বিষয়, একধরণের বিবর্তনের নাম, বিবর্তনের ফলে কোন একটা ধাপে আসার নাম কিন্তু স্বয়ং সেই ধাপের নাম নয়। কিন্তু যখন প্রেমের পরিণতি (ঘাস) উপস্হিত হয় তখন প্রেমিক বা প্রেমিকা কেউই আর প্রাসংগিক থাকেনা। হয়ত তারা তখন নিজেদের থেকে বের হয়ে নিজেদেরকেই দর্শক হিসেবে দেখতে পারে এবং বুঝতে পারে যে এইভাবে কত প্রেমিক প্রেমিকাই প্রেমের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত অসীমের সামনে এসে নিজেদের কে বহু প্রেমিক প্রেমিকার মাঝে শুধু আরেক জোড়া প্রেমিক প্রেমিকা হিসেবে দেখতে পেরেছে। এই শেষ ধাপে পৌছাঁতে না পারার জন্য কবির প্রথম দিককার ব্যকুলতাও একধরণের অপ্রাসংগিকতার সান্নিধ্যে এসেছে কবিতার শেষে। কিন্তু বুঝতে হবে যে কবি বর্তমানে অবস্হান করে শেষ ধাপে কি হতে পারে তা নিয়ে লিখছেন। তা হয়ত বর্তমানের ব্যকুলতাকে শেষ পর্যন্ত অসীম আর প্রেমিক প্রেমিকার বাইরের একটা দৃষ্টিকোণের সাহায্যে দমন বা সহনীয় করতে।

আকাশলীনা নামটাও ত প্রেমিক এবং প্রেমের গন্ডির বাইরে প্রেমিকার অবস্থানের কথা। কিন্তু আকাশের ওপারেও যে আকাশ আছে তা গন্ডির বাইরে আসা প্রেমিকাকেও একধরণের বিশাল গন্ডির মধ্যে বদ্ধ করেছে। কিছু ইংরেজী শব্দ ব্যাবহার করবার জন্য দুঃখিত এবং আপনাকে ধন্যবাদ।

তিথীডোর এর ছবি

'অনন্য জীবনানন্দ' বইটা পড়তে গিয়ে আজকে আপনার সবগুলো পুরোনো লেখা আবার পড়ে ফেলেছি। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

আসাদুজ্জামান রিপন এর ছবি

আকাশলীনা শব্দটির অর্থ সহ সঠিক একটি ব্যাখ্যা জানতে পারলে কবিতাটিকে আর একটু হলেও সহজ ভাবে নিজের ভিতর ধারন করতে পারতাম ।

মেঘা এর ছবি

আমি এই কবিতা কত অসংখ্যবার পড়েছি তার কোন হিসেব নেই। আমি কতবার মন খারাপের রাতে এই কবিতা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি তারও আসলে কোন হিসেব নেই। কিন্তু এই কবিতাটা যে আসলে এমন কোন অর্থ হতে পারে আমার একেবারেই মাথায় আসে নি! অনেক কবিতা পড়ি আমি। জীবনানন্দ আমার প্রিয় কবি। কিন্তু সত্যি আজ মনে হচ্ছে কবিতা আমি একেবারেই বুঝি না মন খারাপ

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

আসাদুজ্জামান রিপন এর ছবি

" আকাশলীনা " অর্থ কি ?

পারভেজ এম রবিন এর ছবি

ভাল লাগল লেখাটি। তবে বেশ কিছুক্ষেত্রেই একমত নই।

‌ছন্দবদ্ধতা নিয়ে সাধারণ কিছু আলোচনা জীবনানন্দের বেশ কিছু কবিতা বুঝতে বেশ সাহায্য করে। জীবনবাবু তার জীবনের বেশিরভাগ কবিতা লিখেছেন আট মাত্রার অক্ষরবৃত্ত ছন্দে। যদিও "আবার আসিব ফিরে" কিংবা "বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি" এর মত বেশ কিছু কবিতায় অক্ষরবৃত্ত এবং মাত্রাবৃত্তের দ্ব্যার্থ ব্যবহার দেখা যায়। সে যাই হোক, এই কবিতাটিও আট মাত্রার অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লেখা যেখানে প্রতি চরণের প্রথম পর্ব আট মাত্রার এবং শেষের অপূর্ণ পর্ব দুই-চার বা ছয় মাত্রার।

এই সরলীকৃত প্রকল্প এই কবিতায় বেশ কিছু শব্দের ব্যবহার সাফল্যের সাথে ব্যাখ্যা করতে পারে। প্রথমেই থাকে "ঐ" এর বদলে "অই" কিংবা "ওই" এর ব্যবহার। এটা নিয়ে ওপরেও আলোচনা করা হয়েছে। "ঐ" লেখা হলে প্রথম দুই চরণের প্রথম পর্ব সাত মাত্রার হয়ে যেত যা কবিতার অন্যান্য চরণের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হত না। আবার একই চরণের "তাহার" এবং "তার" শব্দদ্বয়ের ব্যবহারও আমার চোখে একই কারণোদ্ভূত। একই কথা (তাহার সাথে? - তার সাথে) দুইবার বলে কবি এখানে তার বক্তব্যের প্রতি যেমন জোর দিয়েছেন আবার সাধু ও চলিতের পাশাপাশি ব্যবহারে মাত্রাসঙ্গতি রক্ষা করেছেন।

মাত্রাসঙ্গতি রক্ষায় জীবননান্দের এমন কাজ নতুন কিছু নয়। যারা জীবনানন্দের কবিতা পড়েন, তাদের সবারই "পউষ" শব্দটির সাথে পরিচয় থাকার কথা। জীবনবাবুর "মৃত্যুর আগে" কবিতা থেকে উদ্ধৃত করছি - "আমরা হেঁটেছি যারা নির্জন খড়ের মাঠে পউষ সন্ধ্যায়" এখানে যদি শেষ অংশে "পৌষ সন্ধ্যায়" লেখা হত, তবে সেটা ছয় মাত্রার না হয়ে হত পাঁচ মাত্রার যা ছন্দসঙ্গতি রক্ষা করত না।

আর সবশেষে বলতে হয়, কবিতার অনুভব সকলের কাছেই ব্যক্তিগত। আর কবির নাম যখন জীবনানন্দ দাশ, তখন এক বিষয়টা আরও বেশি সত্য। একজনের সাথে আরেকজনের বোধ মিলে যাওয়াটাই বরং অস্বাভাবিক। আপনি এটাকে একভাবে অনুভব করেছেন, আমি অন্যভাবে। অন্য কেউ হয়তো অন্যভাবে করবে। সুরঞ্জনাকে যদি কেউ গরু মনে করে, যেই গরু ঘাসের লোভে দড়ি ছিঁড়ে চলে গেছে, কবি সেই গরুকে নিয়ে বিলাপ করে বলছেন - তোমার হৃদয় আজ ঘাস, সেক্ষেত্রেও আসলে বলার কিছু থাকে না। বোধটা সবার ক্ষেত্রেই স্বাতন্ত্র। আর এখানেই সম্ভবত কবিতার আভিজাত্য।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।