আজ ২৩ জুলাই, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের জন্মদিন। বাংলাদেশের এক গৌরবময় সময়কে যে মহান নেতৃবর্গ নিজেদের জীবনের অংশ করে রেখেছেন তাজউদ্দিন আহমেদ তাদের একজন।১৯২৫ সালের ২৩জুলাই গাজীপুর জেলার অন্তর্গত কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলভী মোঃ ইয়াসিন খান এবং মাতা মেহেরুননেসা খান। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতিতে যোগ দান করেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ এবং পরবর্তীতে আওয়ামী মুসলিম লীগ উভয়েরই অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।
তাজউদ্দিন ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, দুই দশকেরও অধিক কাল ধরে শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী, ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হবার পর থেকে সকল দলীয় নীতি ও কর্মসূচীর অন্যতম মুখ্য প্রণেতা, দলের সকল মূল কর্মকাণ্ডের নেপথ্য ও আত্মপ্রচার-বিমুখ সংগঠক। ’৭১-এর মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের সামগ্রিক পরিকল্পনা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে মুজিবের পরেই ছিল সম্ভবত তাঁর স্হান।২৫শে মার্চের সন্ধ্যায় যখন পাকিস্তানী আক্রমণ অত্যাসন্ন, তখন শেখ মুজিব তাজউদ্দিনকে ঢাকারই শহরতলিতে আত্মগোপন করার নির্দেশ দেন যাতে ‘শীঘ্রই তাঁরা পুনরায় একত্রিত হতে পারেন’।তারপর এক নাগাড়ে প্রায় তেত্রিশ ঘণ্টা গোলাগুলির বিরামহীন শব্দে তাজউদ্দিনের বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি-যে অনুমানের ভিত্তিতেই তাঁকে শহরতলিতে অপেক্ষা করতে বলা হয়ে থাকুক, তার কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। তরুণ সহকর্মী আমিরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ২৭শে মার্চ ঢাকা ত্যাগের আগে দলের কোন নেতৃস্হানীয় সদস্যের সাথে আলাপ-পরামর্শের কোন সুযোগ তাজউদ্দিনের ছিল না।তা সত্ত্বেও পরবর্তী লক্ষ্য ও পন্হা সম্পর্কে দুটি সিদ্ধান্ত নিতে তাঁদের কোন বিলম্ব ঘটেনি: (১) পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর সর্বাত্মক আঘাতের মাধ্যমে যে নতুন পরিস্হিতির সৃষ্টি হয় তার হাত থেকে বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচাবার একমাত্র উপায় হলো সশস্ত্র প্রতিরোধ তথা মুক্তির লড়াই; (২) এই সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামকে সংগঠিত করার প্রাথমিক ও অত্যাবশ্যক পদক্ষেপ হিসাবে ভারত ও অন্যান্য সহানুভূতিশীল মহলের সাহায্য-সহযোগিতা লাভের জন্য অবিলম্বে সচেষ্ট হওয়া।
প্রথমে আত্মরক্ষা, তারপর প্রস্তুতি এবং সব শেষে পাল্টা-আঘাতের পর্যায়ক্রমিক লক্ষ্য স্হির করে সসঙ্গী তাজউদ্দিন ফরিদপুর ও কুষ্টিয়ার পথে পশ্চিম বাংলার সীমান্তে গিয়ে হাজির হন ৩০শে মার্চের সন্ধ্যায়। মুজিবনগর সরকার গঠন করে পুরো মুক্তিযুদ্ধে অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হোন তাজউদ্দিন আহমেদ। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ইন্দিরা গান্ধী ও তাজউদ্দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত দুই দফা বৈঠকে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য আশ্রয় এবং বাংলাদেশ সরকারের জন্য অবাধ রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালাবার অধিকার প্রদান করা ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস সাধারণভাবে জ্ঞাপিত হয়. নয়মাসের যুদ্ধে তাজউদ্দিন আহমেদের বুদ্ধিমত্তা এবং রণকৌশল বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করে।
২২ ডিসেম্বর,১৯৭১ তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ বাংলাদেশ সরকারের নেতৃবৃন্দ ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন।১০ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে আসলে তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তিনি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।একটা সময়ে বঙ্গবন্ধু ৩০ বছরের বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সহকর্মীকে ভুল বুঝেন। ১৯৭৪ সালের ২৬শে অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তাজউদ্দীন মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
১৫ই আগস্ট,১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবকে নৃশংসভাবে হত্যার পর ২৩ শে আগস্ট তাজউদ্দিন আহমদসহ ২০ জনকে সামরিক আইনের অধীনে গ্রেফতার করা হয়। ৩রা নভেম্বর সৈয়দ নজরুল ইসলাম,কামরুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন (অবঃ) মনসুর আলী এর সাথে কারাগারের অভ্যন্তরে তিনি শহীদ হন।
আজ এই মহান নেতার ৮৩ তম জন্মদিনে তাকে গভীরভাবে স্মরন করি.
তথ্যসূত্রঃ
১) MULDHARA,1971
2) উইকিপিডিয়া
মন্তব্য
@ মডারেটর
ছবির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সচলায়তন আমাকে ইন্টারনেটে বসে পড়তে শিখিয়েছে, কিন্তু অন্তর্জালের আর সব কারিগরী এখনো শিখতে পারিনি।
কিছুক্ষন চেষ্টা করে ছবির ভারটা আপনাদের কাছেই মনে মনে ছেড়ে দিয়েছিলাম।
--------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
ধন্যবাদ রাফি।
জেলখানায় তাজউদ্দীন (সহ জাতীয় চার নেতা) হত্যাকান্ডের ঘটনাটা আরেকটু বিস্তারিত হলে ভালো হতো।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
ঐ ব্যাপারটা আমাকে এতটা কষ্ট দেয় যে এই একটি লাইন লিখতেই খুব কষ্ট হয়েছে। কিছু কিছু জিনিসে ক্ষোভ ছাপিয়ে শোকটা প্রধান হয়ে উঠে বোধহয়।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
----------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
কিছু মনে না করলে বলি-সারথি বানানটি সংশোধন করুন রাফি।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
রিটন ভাই,
লেখা সম্পাদনা করার ক্ষমতা এই আধা সচলের নাই।
ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ভবিষ্যতে মনে থাকবে।
-------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
বড়োই মনোবেদনার কথা, মুক্তিযুদ্ধের এই মহানায়ক তাঁর কীর্তি ও যোগ্যতার যথাযথ স্বীকৃতি পাননি।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
তাঁর অবদানের কথাই সঠিক ভাবে কয়টা জায়গায় লেখা আছে বলুন?
কী ব্লগার? ডরাইলা?
তাজউদ্দিন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রধান সংগঠক। এই কথাটা বোধহয় কেউ মনেও রাখে না।
রাষ্ট্রীয়ভাবে তো দূরের কথা, তাঁর দল আওয়ামী লীগও তাঁকে স্মরণ করে ভীষণ দায়সারাভাবে। অনেকটা যেন চিঠির শেষে পুনশ্চ লেখার মতো!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
আপডেটঃ
তানভীর মোকাম্মেলের "তাজউদ্দিন আহমদঃ নিঃসঙ্গ সারথি"
প্রামান্যচিত্রটি অষ্ট্রেলিয়া টেলিভিশনের শ্রেষ্ঠ অন্যভাষার প্রামাণ্যচিত্র পুরস্কার পেয়েছে।
আজ বেলা ২.৪০ মিনিটে প্রামাণ্যচিত্রটি এটিএন বাংলায় দেখানো হবে।
দেখার আমন্ত্রন রইল.
------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;
ধন্যবাদ রাফি আপনাকে এ লেখার জন্য। আমি মডুদের কাছে রাফিকে সচল করার দাবি জানাচ্ছি।
তাজউদ্দিন বেচেঁ থাকুন বাঙালীর হৃদয়ে, মননে।
----------------------------------
সচল আছি, থাকবো সচল!!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ধন্যবাদ রাফি।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
জুলিয়ান ভাইকেও সচল করা হউক।
----------------------------
সচল আছি, থাকবো সচল!!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
| সংসারে এক সন্ন্যাসী | দ্রোহী | মুহম্মদ জুবায়ের | কীর্তিনাশা | জুলিয়ান সিদ্দিকী, ধুসর গোধূলি, পুতুল
আপনাদের সবাইকে মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
-------------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
নতুন মন্তব্য করুন