একটা একটা বিকেলে “অসম্ভব বিষণ্নতা” ভর করে আমাদের; এই মায়াবী পৃথিবীর যাবতীয় উল্লাসকে মনে হয় অসীম অশ্লীলতা। যোজন যোজন মুহুর্তের অইপারে দাঁড়িয়ে মুখ ভেংচি দেয় সে; আস্তাকুড়ে ফেলে দিতে বলে আমার সকল অর্জন, আমার সকল প্রাপ্তিকে। বহুকাল বহুদিন আগে দেখা কোন এক শনপাপড়িওয়ালার পেছনে মাইলের পর মাইল হাঁটতে থাকি আমরা। আদিগন্ত ধানক্ষেত আর অগুণতি খানাখন্দ পেরিয়ে আইলের পর আইল হেঁটে যাই ;চোখের অতলে অনুভূতির অর্ণব নিয়ে তার সাথে গলা মিলিয়ে হাঁক দেই চাই শনপাপড়ি-ই-ই-ই, চাই কটকটি- চাই মিহিদানা- চাই শনপাপড়ি-ই-ই-ই।
ওর পিছু নিয়ে মাঝেমাঝে আমার হারিয়ে যাবার ভয় হয়; জামার আস্তিনে চেপে ধরে তাকে থামতে বলি, ফিরিয়ে আনতে চাই বাড়ির পথে- সে ছুট দেয়; লুকিয়ে পড়ে সবুজের বুকে ,সারিসারি শস্যের ভেতর সে আমার সাথে লুকোচুরি খেলে; আচমকা ঝাপিয়ে পড়ে বর্ষার জল থই থই পুকুরে। অলস মধ্যাহ্নে সে মধ্যপুকুরের সাদা শাপলাটার জন্য বায়না ধরে, কেঁদে অস্থির হয় কদমফুলের এক একটা পাপড়িতে হাত রাখার জন্য; রক্তচন্দনের বীচি কুড়িয়ে নতুন কেনা জামাটার পকেট ভর্তি করে ফেলে সে, ঝোপের ভিতর সন্ধ্যামণির হাতছানিতে দিকবিদিক জ্ঞানশুণ্য হয়ে ঢুকে পড়ে শত শত কাঁটাকে বিন্দুমাত্র পরোয়া না করে; তখন নিজেকে আমার ভীতুর ডিম বলে মনে হয়।
লেপের ওম ছেড়ে পৌষের শেষরাতে প্রায়ই ও খড়-তূষের আগুনে হাত মেলে দেয়; ‘আনকালচার্ড’ বলে আমি তখন তাকে গালমন্দ করি; মুখে কিছুই না বলে হাটুতে থুতনি রেখে সে অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।সেসময় আমার কেমন জানি বিব্রতবোধ হয়।
ইদানীং ওর সাথে খুব ঝগড়া হয়; যুক্তিতে না পেরে ও যখন ঠোট ফুলিয়ে কাঁদতে শুরু করে তখন কেন জানি বুকের ভেতর খুব কষ্ট হয়। আমি ওর মত করে ভাবার চেষ্টা করি, তখন এক ধরনের অক্ষমতাজনিত ক্লান্তি আমাকে গ্রাস করে। এই অদ্ভুত বিব্রতবোধ আর অপরিসীম ক্লান্তি নিয়ে আজকাল শেষবিকেলের আলোয় আমি আর সে হলের বারান্দায় মুখোমুখি বসে থাকি; সেই নির্মোহ নির্জন সময়টুকুতে জীবন থেকে হারিয়ে ফেলা ১২ টি বছরের উপর আমার খুব অভিমান হয়।
মন্তব্য
বিষাদ মাখা।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
হুমম
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
মন খারাপ করা একটা লেখা, তবুও ভাল লাগল।
সময় তো হারিয়েই যায় রাফি ভাই আমাদের তাকে আটকাবার সাধ্য যে নেই।
--------------------------------------------------------
আজ শুধু মন খারাই হবে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
উদ্ধৃতি
সেই নির্মোহ নির্জন সময়টুকুতে জীবন থেকে হারিয়ে ফেলা ১২ টি বছরের উপর আমার খুব অভিমান হয়।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
ভীষন সুন্দর একটি লেখা।
কালই একটা সিনেমায় ছোট্ট একটি ছেলের গাল ফোলানো-ঠোঁট উল্টানো-আবার খুশিতে ঝিলিক দেয়া চোখের তারা দেখে ভাবছিলাম...কি অসম্ভব সুন্দর আর তীব্র সময় চিরতরে ফেলে এসেছি আমরা..."ও গানওলা, আরেকটা গান গাও / আমার আর কোথাও যাবার নেই / কিচ্ছু করার নেই..."।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গ বাণী
সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।
একটা ঘোর লাগা মুহুর্তে কথাগুলো লিখেছিলাম; সেই সময়ে মনে হয়েছিল কীবোর্ড়ে আঙ্গুল চালানো ছাড়া আমার আর কোন কাজ নেই; কিচ্ছু করার নেই।
মন্তব্যের জন্য সুলতানা পারভীন শিমুল || তানবীরা | ভূঁতের বাচ্চা | নজরুল ইসলাম | জুলিয়ান সিদ্দিকী | নিঘাত তিথি | আবু রেজা|
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
‘জন্মের সময় খুব কেঁদেছিলাম, কিন্তু এখন আমার সবকিছুতেই হাসি পায়।
আমি জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম, এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি।’
মন খারাপ করা লেখাগুলোই ভাল্লাগে।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
কী অসাধারণ একটা লেখা!
রাফি ভাই আমি এতোদিন পর আপনার লেখা পড়ে আপনার ভক্ত হয়ে যাচ্ছি কিন্তু আপনি জানতে পারছেন না! আপনি তো দেখছি ২০১০ এর পর আর লেখেন না!! এতো অসাধারণ ভাবে ভাবতে পারার পরও লেখা কেমন করে ছেড়ে দিলেন ভাই?!
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
নতুন মন্তব্য করুন