জীবনানন্দের শব্দপ্রয়োগের অভিনবত্ব আর উপমার সৌকর্য নিয়ে গবেষকরা পাতার পর পাতা লিখে যেতে পারেন- সেই গবেষণায় আমি যাব না। তবে একেবারে অনভিজ্ঞ হৃদয় আর স্রেফ অন্যমনস্ক পাঠক হিসেবেও জীবনানন্দের কবিতা পড়তে গেলে দু’টি শব্দ আমাদের খুব বেশি চোখে পড়ে। এক- হেমন্ত আর দুই- মৃত্যু। এ শব্দদু’টির প্রতি কবির যেন একধরণের ছেলেমানুষী পক্ষপাত ছিল। এখানে কেউ যেন ভেবে নেবেন না জীবনানন্দ শব্দচয়নে সতর্ক ছিলেন না; ‘সে’ নামক কবিতার পান্ডুলিপির কাটাকুটি দেখলে যে কারোরই চোখ কপালে উঠবে। একটির জায়গায় বিকল্প, বিকল্পের বিকল্প ,কোন কোন ক্ষেত্রে তিনচারটি বিকল্প পাঠ রয়েছে কবির অনেক অনেক কবিতার। সুতরাং মৃত্যু বা হেমন্তের পৌনঃপুনিক ব্যবহার কবি সচেতনভাবেই করেছিলেন তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
জীবনানন্দের যে সব পংক্তি বইয়ের পাতার বন্ধন ছেড়ে বাঙ্গালীর ঠোঁটের ডগায় নীড় খুঁজে পেয়েছে তার প্রায় সবকটিতেই জীবন সম্পর্কে হাহাকার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে। আর তাতেই গোল বাধে তাঁর মৃত্যুর পর। আর সব মনোহর ঋতু বাদ দিয়ে আমৃত্যু হেমন্তের ধূসরতায় এবং মৃত্যুর অনিঃশেষ বন্দনায় জীবনানন্দের বুঁদ হয়ে থাকাকেই আত্মহত্যার পেছনের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করান সমালোচকেরা। তার সাথে যোগ হয় কবির জীবদ্দশায় অপ্রকাশিত কিছু মৃত্যুবিভোর গদ্য আর দাম্পত্যকলহের গুঞ্জণ। আজকের পর্বে আমরা খেয়াল করব জীবনানন্দের কবিতা আসলে কতটা মৃত্যুময়?
জীবনানন্দের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরাপালক’। এখানে বেশ উচ্ছল এক কবিহৃদয়কেই আমরা আবিষ্কার করি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এ গ্রন্থটি জীবনানন্দীয় উচ্চারণে খুব বেশি সরব নয়। আপাতদৃষ্টিতে নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে উদাসীন জীবনানন্দ নিজেও পরবর্তীকালে ‘ঝরাপালক’ নিয়ে তাঁর অতৃপ্তির কথা জানিয়েছেন; এমনকি পত্রিকায়ও। ‘ঝরাপালকে’ আমরা এমন এক কবিকে পাই যিনি প্রাণপণে মোহিতলাল, নজরুলের শব্দসাগর আর রবীন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথের ছন্দকৌশলের মায়াজাল ছিন্ন করে নিজস্ব একটা ধাঁচ গড়ে তুলতে চাইছেন। অবশ্য সুপ্রতিষ্ঠিত এ কবিদের প্রভাববলয় ভেদ করে মাঝে মাঝেই উঁকি দিয়েছেন আমাদের চেনা জীবনানন্দ-
“চোখ দুটো ঘুমে ভরে
ঝরা ফসলের গান বুকে নিয়ে ফিরে যাই আজ ঘরে!
ফুরায়ে গিয়েছে যা ছিল গোপন- স্বপন ক’দিন রয়!
এসেছে গোধূলি গোলাপীবরণ- এ তবু গোধূলি নয়!
সারাটি রাত্রি তারাটির সাথে তারাটিরই কথা হয়,
আমাদের মুখ সারাটি রাত্রি মাটির বুকের পরে!”
এর ঠিক ন’বছর পরে প্রকাশিত ‘ধূসর পান্ডুলিপি’ কাব্যগ্রন্থে নিজস্ব ঢংয়ে কবি শোনান নিরন্তর মৃত্যুবন্দনা- হেমন্ত ছিল তারই ছায়াসংগী; অসংখ্য লাইন মনে পড়ে যায় যাদের বলা যায় জীবনানন্দের দূর্নিবার মৃত্যু আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশঃ
১) “হেমন্তের ঝড়ে আমি ঝরিব যখন
পথের পাতার মতো তুমিও তখন
আমার বুকের ’পরে শুয়ে রবে? অনেক ঘুমের ঘোরে ভরিবে কি মন
সেদিন তোমার!”
(নির্জন স্বাক্ষর)
২) “.... নক্ষত্রের সাথে কয় কথা
যখন নক্ষত্র তবু আকাশের নক্ষত্রের রাতে-
তখন হৃদয়ে জাগে নতুন যে- এক অধীরতা,
তাই লয়ে সেই উষ্ণ আকাশেরে চাই যে জড়াতে
গোধূলির মেঘে মেঘে, নক্ষত্রের মতো রব নক্ষত্রের সাথে!”
(অনেক আকাশ)
৩) “.... একদিন আমি যাব চলে
কল্পনার সব গল্প বলে;
তারপর, শীত হেমন্তের শেষে বসন্তের দিন
আবার তো এসে যাবে;”
(পরস্পর)
৪) “মৃত্যুরে বন্ধুর মতো ডেকেছি তো- প্রিয়ার মতন!
চকিত শিশুর মতো তার কোলে লুকায়েছি মুখ;
রোগীর জরের মতো পৃথিবীর পথের জীবন;
অসুস্থ চোখের ’পরে অনিদ্রার মতন অসুখ;”
(জীবন)
৫) “.....সব রাঙ্গা কামনার শিয়রে এসে জাগে
ধূসর মৃত্যুর মুখ- একদিন পৃথিবীতে স্বপ্ন ছিল- সোনা ছিল যাহা
নিরুত্তর শান্তি পায় – যেন কোন্ মায়াবীর প্রয়োজনে লাগে”।
(মৃত্যুর আগে)
এত গেলো শুধু তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থের উচ্চারণ। পরবর্তীকালের রচনায় এমন শতশত লাইন পাওয়া যাবে যা থেকে যে কোন সচেতন পাঠকই কবির মৃত্যুলিপ্সাকে দূর্দমনীয় বলে ভেবে নিতে পারেন।
বনলতা সেনঃ
১) “স্থবিরতা, কবে তুমি আসিবে বলো তো।“
(স্বপ্নের ধ্বনিরা)
২) “ধানসিড়ি নদীর কিনারে আমি শুয়ে থাকবো – ধীরে পউষের রাতে
কোনোদিন জাগব না জেনে- কোনদিন জাগবো না আমি
-কোনোদিন আর।“
(অন্ধকার)
মহাপৃথিবীঃ
১) “যেন কোন ব্যথা নাই পৃথিবীতে- আমি কেন তবে মৃত্যু খুঁজি?
কেন মৃত্যু খোঁজ়ো তুমি? চাপা ঠোঁটে বলে দূর কৌতুকী আকাশ”।
(নিরালোক)
২) “মরণের হাত ধরে স্বপ্ন ছাড়া কে বাঁচিতে পারে?”(স্থবির যৌবন)
৩) “অনেক রাত হয়েছে- অনেক গভীর রাত হয়েছে;
কলকাতার ফুটপাথ থেকে ফুটপাথে- ফুটপাথ থেকে ফুটপাথে-
কয়েকটি আদিম সহোদরার মতো এই যে- ট্রামের লাইন
ছড়িয়ে আছে
পায়ের তলে এদের বিষাক্ত বিস্বাদ স্পর্শ
অনুভব করে হাঁটছি আমি”।
(ফুটপাথ)
‘মহাপৃথিবী’ গ্রন্থটির উল্লেখে বা জীবনানন্দের আত্মহত্যা প্রসঙ্গে আমাদের অনিবার্যভাবে মনে পড়ে যায় ‘আট বছর আগের একদিন ’ কবিতাটির কথা।“কারণহীন স্বেচ্ছামৃত্যুকে তিনি প্রথমবারের মত বাংলা কবিতায় ব্যবহার করলেন আট বছর আগের একদিন কবিতায়। ‘হঠাৎ -মৃত’ নামে একটি কবিতা যোজিত হয়েছে মহাপৃথিবীতে।”
এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার এ সমস্ত উদ্ধৃতি শুধু জীবনানন্দের মৃত্যুবোধ সম্বন্ধে একটা হালকা ধারনা দেবার জন্য। কবিতাগুলি না পড়লে সে বোধের তীব্রতা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। নিবিড়ভাবে পাঠ করলে জীবনানন্দের মৃত্যুবিষয়ক বা জীবন সম্বন্ধে বিতৃষ্ণবোধের পংক্তির সারি শুধু দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই হবে। এ সমস্ত খোলামেলা ঊচ্চারণ ছাড়াও বিভিন্ন রূপক ও চিত্রকল্পের মাধ্যমে তাঁর কবিতায় এসেছে মৃত্যুঅভিপ্সা। উদাহরণ হিসেবে ‘আকাশলীনা’ কবিতাটির কথা বলা যায়। এখানে এ সম্পর্কে বলেছিলাম।
কবিপত্নী জানাচ্ছেন “...মৃত্যুর পরপার সম্বন্ধে ওর একটা অদ্ভুত আকর্ষন ছিল। মাঝে মাঝেই ওই কথা বলতেন। বলতেন, মৃত্যুর পরে অনেক প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা হয়। আর খালি বলতেন আচ্ছা বলোতো আমি মারা গেলে তুমি কী করবে?”
(আমার স্বামী জীবনানন্দ দাশঃ লাবণ্য দাশ)
জীবনানন্দ গবেষক আব্দুল মান্নান সৈয়দ লিখেছেন-
“তাঁর মৃত্যুকে স্বেচ্ছামৃত্যু বলেই মনে হয় আমাদের। এই মরণেচ্ছার বাস্তব কারণও ছিল। অন্তত একজন লেখক, জীবনানন্দ বিষয়ে অসীম উৎসাহী, জীবনানন্দেরই সমকালীন কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্যের একটি সাক্ষ্য আমাদের ধারণার সপক্ষে আমরা দাঁড় করাতে পারি। সঞ্জয় ভট্টাচার্যের একটি পত্রাংশঃ
‘আমার মনে হয় জীবনানন্দ ঠিক ট্রাম দূর্ঘটনায় মারা যাননি। যদিও এই কথাটাই সর্বত্র বলা হয়ে থাকে এবং আমরা দেখেছি; তথাপি আমার ধারণা তিনি আত্মহত্যা করেছেন।’”
(জীবনানন্দের প্রকাশিত-অপ্রকাশিত কবিতাসমগ্রঃ আব্দুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত)
সমস্যা হল লাবণ্য দাশের উক্তিকে জীবনানন্দের আত্মহত্যার সপক্ষে দাঁড় করানো খুব একটা বিবেচনাবোধের পরিচায়ক্ বলে আমার কাছে মনে হয় না। আর সঞ্জয় ভট্টাচার্যের উক্তিও সেই ধারণা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। কিন্তু এসবই আত্মহত্যার পক্ষের যুক্তি হয়ে দাঁড়ায় যখন ট্রাংকের ভিতর কয়েকশত কবিতা তীব্র মৃত্যুময়তার সাক্ষ্য দেয়। এ কবিতাগুলি জীবনানন্দ কোথাও প্রকাশ করেননি, এমনকি কাউকে দেখতে পর্যন্ত দেননি। এ সমস্ত অপ্রকাশিত কবিতায় মৃত্যুর প্রতি তাঁর টান আরও সুস্পষ্ট, সুতীব্র এবং বড় বেশি অমার্জিত-
১) “পাই নাই কিছু, ঝরা ফসলের বিদায়ের গান তাই
গেয়ে যাই আমি, মরণেরে ঘিরে এ মোর সপ্তপদী”।
(ঝরা ফসলের গান)
২) “যেই ঘুম ভাঙ্গেনাকো কোনদিন ঘুমাতে ঘুমাতে
সবচেয়ে সুখ আর সবচেয়ে শান্তি আছে তাতে”।
(আমরা)
৩) “কোথায় রয়েছে মৃত্যু? কোনদিকে? খুঁজি আমি তারে,”
(আজ)
৪) “সেই মৃত্যু কাছে এসে একে একে সকলেরে বুকে তুলে লয়;
সময় ফুরায়ে গেলে সবচেয়ে ভাল লাগে তার আস্বাদ!”
(ঘুমায়ে পড়িতে হবে একদিন)
৫) “মরণের হাতে তাই অবসন্ন হয়ে আমি হাত তুলে দিলাম আমার,
চেয়ে দেখি প্রেম তুমি পাশে এসে দাঁড়ায়েছ, মৃত্যু দ’হে হয়ে গেছে ছাই!”
(জীবনের যতদিন কেটে গেছে)
৬) “মৃত্যুরে বেসেছি ভালো সকলের আগে আমি,- মৃত্যুরে তবুও করে ভয়;”
(মৃত্যুরে বেসেছি ভালো)
জীবনানন্দের জীবদ্দশায় অপ্রকাশিত কবিতাগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাঠকপ্রিয় হয় ‘রূপসী বাংলা’র কবিতাগুলি। সে কবিতাগুলিতে মৃত্যু খুঁজতে যাওয়ার কোন অর্থ হয় না; কারণ সেগুলির প্রতিটিই মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের ধারাবিবরণী।
কবির মৃত্যু বিষয়ে এই লুকোচুরি আর নির্বিকার উচ্চারণগুলোই আজ সঞ্জয় ভট্টাচার্যের ধারনাকে বিশ্বাসে টেনে নিয়ে যায়।
(চলবে)
মন্তব্য
জীবনানন্দের মৃত্যুচিন্তাকে আমার মৃত্যুচিন্তার চেয়ে বরং এক ধরনের পুনর্জন্মনিচন্তাই মনে হয়
মৃত হয়ে প্রকৃতির সাথে মিশে গিয়ে জীবনকে মানুষের চোখ দিয়ে দেখা
তার সমস্ত পাখি গাছপাতা প্রকৃতি (যা তিনি পরের জন্মে হতে চেয়েছেন) সবই আচরণ করে তাদের নিজেদের মতো করে কিন্তু জীবনকে দেখে মানুষের (কিংবা জীবনানন্দের) চোখ দিয়ে
এইসব চিন্তার সাথে আত্মহত্যার চিন্তা যুক্ত ছিল আমার মনে হয় না কারণ যে জায়গাগুলোতে তিনি আত্মহত্যার বর্ণনা দিয়েছেন (আট বছর আগের একদিন?) সেই বর্ণনা কিন্তু অনেকটাই ভয়াবহ
অথচ তার জন্মান্তর প্রক্রিয়াগুলো ছিল বেশ স্মুথ আর সাবলীল
কষ্টবিহনী এক ধরনের উদযাপন
এক ধরনের বিষণ্ন পরিবেশে জীবন থেকে অন্য জীবনে রূপান্তর
(এই ধারণাটা কিন্তু বাংলার একেবারেই লৌকিক একটা চিন্তা)
০২
আট বছর আগের একদিন কবিতাকে মৃত্যুচিন্তার কিংবা বিষণ্নতার কবিতা বলার ক্ষেত্রে আমার ঘোরতর আপত্তি আছে
বরং আমার মনে হয় জীবনানন্দের সবচে আশাবাদী- জীবনবাদী এবং ভোগবাদী কবিতা এটা
এই কবিতায় বয়সের ভারে জর্জরিত পেঁচাটাই তার জীবনতৃষ্ণা হয়ে বারবার ফিরে এসেছে
পেঁচার এই জীবনতৃষ্ণা এবং বেঁচে থাকার আকুতি শেষ পর্যন্ত জীবনানন্দের মাঝেও ছড়িয়ে যায় কবিতটির শেষ লাইনে
এবং আমার হিসেবে শুধু জীবনানন্দ নয়
বাংলা সাহিত্যের সবচে আশাবাদী-জীবনবাদী এবং ভোগবাদী উচ্চারণ এই আট বছর আগের একদিন কবিতার শেষ লাইনগুলো
০৩
আমরা দুজনে মিলে শূণ্য করে চলে যাব
জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার
এতো ভোগবাদী এবং জীবনবাদী কথা বাংলা সাহিত্যে দ্বিতীয়টি আছে বলে আমার মনে হয় না
০৪
একেবারেই স্মৃতি থেকে লাইনগুলো তুলে আনা
উল্টাপাল্টা হতেই পারে। হয়েও গেছে বোধহয়
‘রূপসী বাংলা’র প্রতিটি কবিতা আপনার সপক্ষে কথা বলছে; সুতরাং এতে দ্বিমত করার কোন কারণ নেই। আমার নিজেরো একই মত। আমার মনে হয় জীবনানন্দ যদি আত্মহত্যা করে থাকেন তাহলে দাম্পত্য কলহ বড় কোন প্রভাবক নয়; বরং এই
পুনর্জন্মনিচন্তাই সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
আট বছর আগের একদিন কবিতাটি হাতে গোণা এমন কয়টি কবিতার মধ্যে পড়ে যার সম্বন্ধে জীবনানন্দ নিজে বিবৃতি দিয়েছেন।
এবং সেখানে এ কবিতা সম্বন্ধে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর করা 'আত্মঘাতী ক্লান্তি'
এর অভিযোগ কবি সরাসরি অস্বীকার করেন নি; তিনি উপসংহার টেনেছিলেন লা
এ কবিতাটির মূল অভিনবত্ব হচ্ছে ঐ যুবকটির আত্মহত্যার যুক্তিগ্রাহ্য কোন কারণ নেই। জীবনানন্দ ভিতর দিক থেকে ঠিকই এ কবিতার একটি চরিত্র বলে আমার মনে হয়। জীবনানন্দের উল্লেখিত বিপণ্ন বিস্ময় কিন্তু অন্য একটি কবিতা 'বোধ' য়েও ফিরে এসেছে।
একটা মানুষ সংসার, স্ত্রী ,সন্তান থাকলেও একা হয়ে যায় এবং মরণের পথ বেছে নেয় জীবনানন্দের জীবন বিশ্লেষণে এই রহস্যের সমাধাণই আত্মহত্যা বিতর্কের অবসানে প্রধাণ যুক্তি বলে আমার মনে হয়।
এ কবিতায় পেঁচাকে আমার কাছে মহাকালের রূপক বলেই মনে হয়। আর ফড়িং, ব্যাং, মশার জীবনকে মানুষের জীবনের সাথে তুলনা জীবনানন্দের নিরন্তর মৃত্যু ভাবনারই বহিঃপ্রকাশ।
উদাহরণস্বরুপ আমরা মনে করতে পারি "আমি যদি হতাম" কবিতাটি।
এটি নিঃসন্দেহে ভোগবাদী লাইন; এবং ঐ যুবকের মৃত্যুকে বিদ্রূপকারী উচ্চারণ। কিন্তু সংসার আর সমালোচকদের অবিরাম বিদ্রূপে এতটুকু মানসিক শক্তি জীবনানন্দ শেষ জীবনে ধরে রাখতে পেরেছিলেন বলে আমার বিশ্বাস হয় না; বিশেষত যখন তাঁর শেষ জীবনের লেখাগুলো পড়ি।
এই বিষয়টি নিয়ে আরো আলোচনা হতে পারে। আপাতত ক্লাসে যাই।
লীলেন ভাই, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
লীলেন ভাই
শেষ অংশটার যে আশাবাদী আর ভোগবাদী ব্যাখ্যা দিলেন একমত না হয়ে উপায় নেই
তবে "বিপন্ন বিস্ময়ের" অংশটুকুই কনফিউজড করে দেয় যে কবিতাটি কি পুরোপুরি আশাবাদী-ভোগবাদী কিনা ...ঐ অংশটুকু তো মনে হয় বাংলা সাহিত্যে আত্মহত্যার পক্ষে বলা সবচেয়ে বলিষ্ঠ যুক্তি ...সেই বিস্ময়টা আমরা সবাই অনুভব করি
যদিও এই অংশের পরপরই কবি নিজেকে "বেঁচে থাকতে চাই"দের দলেই সংজ্ঞায়িত করেছেন
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
কবিতা বিষয়ে আমার ব্যপক অনাগ্রহ, আর জীবনানন্দ কে নিয়ে আমার শূন্য অভিজ্ঞতা সত্তেও লেখাটি পড়লাম কেবল রাফির জন্য, যদিও পড়ে করোটির ফাপা কুঠুরীতে কিছু ঢুকাতে পারলাম বলে মনে হয় না...............
তবু ও রাফি তুমি চালিয়ে যাও, আমরা আছি তোমার (অনেক) পিছে।
অমি, যদি তোর মত একজনও এই সিরিজ পড়ে জীবনানন্দের কবিতার প্রতি আগ্রহী
হয় তাতেই আমি ভাবব আমি সার্থক।
পড়া শুরু কর।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
পড়ব পড়ব করেও পড়া হয়ে উঠছিল না। এখন পড়লাম এবং ভালো লাগল।
আমার একান্ত ব্যক্তিগত মত, কবি আত্মহত্যা করেননি। মৃত্যুর পর সেটার একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর জন্য হয়ত সবাই ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে বিষয়টিকে। _________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
আমি কিন্তু এখনও বিশ্বাস করিনা জীবনানন্দ আত্মহত্যাই করেছেন। যদিও কোন ব্যক্তি বিশ্বাস এখানে কৌতুককর মনে হয়। তা ছাড়া আপনার প্রথম পর্বের ঘটনাপুঞ্জি অনেক বেশি বাস্তব তথ্য ও এই ধারণার কাছাকাছি যে, তিনি মৃত্যুকে স্বেচ্ছায় বরণ করেন নি। ববং মৃত্যু তাঁর উপরে আরোপিত হয়ে গেছে বলেই মনে হয়।
চালিয়ে যান আপনার ব্যবচ্ছেদ। দেখা যাক, কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়। কৌতুহল উস্কে রইলো।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
দীর্ঘ সময় এই লেখা কেউ পড়ে নি। নতুন কিছু আবিষ্কার করছি এমন লাগছে। অসাধারণ লাগছে এই ব্যবচ্ছেদ!
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
নতুন মন্তব্য করুন