পুলসিরাত

নাসিফ এর ছবি
লিখেছেন নাসিফ [অতিথি] (তারিখ: শনি, ০৭/০৩/২০০৯ - ১২:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জীবন থেমে আছে আমার,
সময়ের পুলসিরাতে আমি আটকা পড়েছি ঠিক মাঝখানটায় ।
কতোজন চলে যায় অবলীলায় ;
কেবল আমি আর
আমার মতো অসময়ের কতিপয় মন্থর পথিক
অনেক ভয় সংশয় আর দ্বিধা নিয়ে
পড়ে থাকি রাস্তায় ।।

শূন্যে ভাসমান এই পুলসীরাতে যাত্রার শুরুটা ভালই ছিলো-
দুপাশে উঁচু রেলিং ছিলো-
আশা ছিলো, আশ্রয় ছিলো-
পথ দেখানোর দেবদূত ছিলো-
কোলে পিঠে করে যারা অনেক খানি পথ পার করে দিয়েছিলো ।

দেবদূতরা আমাকে আগলে রেখেছিলো
তাদের সুবিশাল ডানার তলায় ।
সূর্যের খরতাপে তারা পুড়েছে- আমাকে পুড়তে দেয় নি
আমি ছিলাম ডানার ছায়ায় ।
বৃষ্টিতে তারা ভিজেছে- আমাকে ভিজতে দেয় নি;
শীতে কেঁপেছে তারা- আমাকে কাঁপতে হয় নি
আমি ডুবেছিলাম তাদের পালকে- গভীর উষ্ণতায়।
আমি সিক্ত ছিলাম তাদের আদরে
তাদের আবেগে- তাদের ভালবাসায় ।।

একসময় দুপাশের রেলিং আর রইল না
আমি চললাম দেবদূতদের হাত ধরে ধরে

একসময় হাত ছেড়ে হাঁটতে লাগলাম
দেবদূতরা সঙ্গে ছিল ছায়ার মতো,
তারা আমাকে পরিণত ভাবছিলো ।

এমন সময় আমরা পৌছলাম সেই সংকটময় স্থানে
যেখানে পুলসিরাত দুভাগ হয়ে গেছে ।
একভাগ চলে গেছে স্বর্গের দোরগোড়ায়
দেবদূতরা ধরল সেই পথ ।
অন্যপথে চললাম আমি ।
বিদায়বেলায় দেবদূতরা শিখিয়ে দিল
পথচলার যতোসব অমোঘমন্ত্র,
চিনিয়ে দিলো পুলসিরাতের অলিগলি ।।

শুরু হলো আমার একাকী সর্বনাশা পথচলা-
এপথে ভীষণ গতিতে ছুটছে সবাই
আমিও চলার গতি বাড়িয়ে দিলাম,
এপথে প্রচণ্ড খরতাপে পুড়ছে সবাই- আমিও পুড়লাম
তীব্র শীতে কাঁপছে সবাই- আমিও কাঁপলাম
ভিজলাম আমিও অন্য সবার মতো, অবিশ্রান্ত বর্ষণে ।

আমি সব কষ্ট ভুলতে চাইলাম
পুলসিরাতের শেষপ্রান্তের
চিরশান্তির দেশের কথা ভেবে-
সেখানে অপেক্ষমান চিরযৌবনা হুরদের কথা ভেবে ।

কিন্তু পারলামনা
এত ঝক্কি ঝামেলা সইলোনা আমার
আমি ভুল তালে পা ফেললাম
সামনে পেছনে ডানে-বাঁয়ে ধাক্কা খেতে লাগলাম
ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন সুচতুর মানব সন্তানদের সাথে ।
আমি ছিটকে পড়লাম পথের পাশে,
শম্বুকগতির প্রতিবন্ধিদের সারিতে-
যাদের চোখে কেবলি হতাশা
যারা কোনদিনও পৌছাবেনা সেই মরূদ্যানে
কেবল জরাজীর্ণ দেহটাকে বয়ে চলেছে যারা অতি কষ্টে ।

এদের আর্ত গোঙানি সহ্য হলোনা আমার
বেহেশতি মেওয়ার আশা উবে গেল-
হাত বাড়ালাম নিষিদ্ধ গন্দমের দিকে ।
তীব্র সুখের স্বাদ পেতে চাইলাম আমি ক্ষণিকের জন্য
ঢুকে পড়লাম পথপাশের নিষিদ্ধ পানশালায়
আকণ্ঠ মাতাল আমি কামনায় বিভোর হলাম
উদ্ভিন্ন যৌবনা- স্বচ্ছ বসনা শয়তানের সঙ্গে
লিপ্ত হলাম যৌন সঙ্গমে ।
একলহমার প্রচণ্ড সুখানুভূতিতে আচ্ছন্ন হলাম
শয়তানকে আমূল বিদ্ধকরা এই আমি ।

নিমেষেই আমার বাহুবন্দী শয়তানের মোহনীয় হাসি
পরিবর্তিত হল ভয়ংকর চিৎকারে,
আমার ওষ্ঠবন্দী শয়তানের উষ্ণ ঠোঁট
পুঁজে- রক্তে মাখামাখি হয়ে গেল
তার গহবর হয়ে উঠল এক জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি
সিক্ত-মসৃণ সুড়ঙ্গ পথে উদগীর্ণ হল ফুটন্ত লাভা ।
আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আমার সমস্ত সুধা নিংড়ে নিয়ে
সেই শয়তান আমাকে ফেলে দিল
সরু পুলসিরাত থেকে অন্তহীন শূন্যে,
দেবদূতদের আশীর্বাদ সঙ্গে ছিলো হয়তো
আমি পড়লাম না । ঝুলে রইলাম পুলসিরাতের কার্নিশ ধরে ।

সেই থেকে ঝুলে আছি- পুলসিরাতের মাঝামাঝিতে
আর প্রতীক্ষা করছি,
কখন আসবে তুমি?
দেবদূতরা যে তোমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আমায় ।

তুমি আসবে,
আমার হাতে পড়বে তোমার কোমল হাত
আমাকে টেনে তুলবে তুমি
তোমার সমস্ত মানবিক শক্তি দিয়ে ।
আমার সমস্ত জরা মুছে দেবে তুমি- প্রগাঢ় আলিঙ্গনে
তোমার ওষ্ঠস্পর্শে ফিরে পাব আমি সেই ছন্দ, সেই গতি
দুজনে ছুটে চলব- চিরশান্তির দেশে
একসাথে- হাতে হাত রেখে ।

আমি প্রতীক্ষায় আছি- কখন আসবে তুমি ??


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।