স্টিফেন কিং এর গল্পগুচ্ছ - ১

অবনীল এর ছবি
লিখেছেন অবনীল (তারিখ: মঙ্গল, ০২/১২/২০০৮ - ৬:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পালাতে আমাকে হবেই

“এখানে কি করছি আমি?” হঠাৎ করেই অবাক হয় ভাবলাম। প্রচন্ড ভয় পাচ্ছিলাম। কিচ্ছু মনে করতে পারছিলাম না। একটা এটমিক ফ্যাক্টরির আসেম্বলি লাইনে কাজ করছি আমি। শুধু জানি আমার নাম ডেনি ফিলিপ্স। মনে হচ্ছিল এইমাত্র ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। জায়গাটা পাহারাদার দিয়ে ঘেরা, প্রত্যেকেই সশস্ত্র। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে কেউই ছেড়ে কথা বলবে না। আরো কারা জানি কাজ করছে, দেখে মনে হয় যেন জিন্দালাশ। মনে হচ্ছে যেন ওরা কয়েদি।

কিন্তু কিছু যায় আসে না, আগে বের করতে হবে আমি কে...আমি কী করছিলাম।

পালাতে আমাকে হবেই!

একদিকে হাঁটা শুরু করলাম। একটা গার্ড চেঁচিয়ে উঠলো, “ফিরে যাও!”

রুমের অপরদিকে দৌড়াতে লাগলাম, একটা গার্ডকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে দরজা দিয়ে বেরুলাম। বন্দুকের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। জানি আমার দিকেই গুলি ছুঁড়ছে। কিন্তু চিন্তাটা আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে চললোঃ

পালাতে আমাকে হবেই!

অন্য দরজাটার সামনে আরেকদল গার্ড রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছিল ফাঁদে আটকা পড়েছি, কিন্তু পরক্ষনেই মালবাহী ক্রেনের হাতটা নেমে আসতে দেখলাম। ওটা আঁকড়ে ধরে তিনশ ফিট দূরে গিয়ে নামলাম। কিন্তু লাভ হলো না। ওখানেও আরেকজন গার্ড। ও গুলি করল আমাকে। প্রচন্ড দূর্বল লাগছে...মাথাটা ঘুরছে..একটা অন্ধকার গহবরে পড়ে যাচ্ছি যেন...

গার্ডদের মধ্যে একজন টুপিটা খুলে মাথা চুলকালো।

“বুঝি না জো, কিছুই বুঝি না ব্যাপারটা। উন্নতি হওয়া তো ভাল...কিন্তু ওই এক্স-২৩৪এ...ডেনি ফিলিপ্স, নাম...খুবই ভাল রোবট এগুলো...কিন্তু মাঝে মাঝেই পাগলা হয়ে যায়, আর কি জানি খুঁজতে থাকে...অনেকটা মানুষের মতই। যাকগে।“

একটা ট্রাক চলে গেল, পাশে লেখাঃ “একমে রোবট রিপেয়ার”।

দুই সপ্তাহ পরে, ডেনি ফিলিপ্স ফের কাজে ব্যস্ত...চোখে শুন্য দৃষ্টি। কিন্তু হঠাৎ...

চোখ স্বচ্ছ হয়ে উঠলো...আর, একটা চিন্তা ওকে আচ্ছন্ন করে ফেললোঃ

পালাতে আমাকে হবেই!!

[স্টিফেন কিং এর ‘আইভ গট টু গেট আওয়ে’ এর অনুবাদ]

=================================================

আগন্তুক

কেলসো ব্ল্যাক হাসছিল।

হাসতে হাসতে তার পেট ফেটে যাবার উপক্রম, আঁকড়ে ধরা হুইস্কির বোতলটা হাত থেকে খসে মাটিতে পড়ে গেল।

বোকারহদ্দ পুলিশ! বাম হাতের খেল ছিল। গুনে গুনে পঞ্চাশ হাজার এখন পকেটে। গার্ডটাকে মরতে হলো – পুরো ওই ব্যাটার দোষ! সামনে পড়ে গেল।

হাসতে হাসতে বোতলটা ঠোঁটের কাছে তুললো। ঠিক তখনি সে শব্দটা শুনতে পেল। চিলেকোঠার সিঁড়িতে পায়ের শব্দ, যেখানে লুকিয়ে আছে ও।

সে পিস্তলটা বার করলো। ঠাস করে দরজাটা খুলে গেল।

লোকটার গায়ে একটা কালো কোট, চোখের সামনে হ্যাটটা নামানো।

“কেলসো।” সে বলে উঠলো,”তোমার উপর আমি লক্ষ করছিলাম। তুমি আমাকে খুবই সন্তুষ্ট করেছ।“ লোকটা হেসে উঠলো। আতঙ্কের একটা শিহরন ওর মধ্যে বয়ে গেল।

“কে তুই?”

লোকটা আবার হাসলো। “তুমি আমাকে চেন, আমি তোমাকে চিনি। এক ঘন্টা আগে আমাদের একটা চুক্তি হয়েছিল, ওই গার্ডটাকে তুমি গুলি করার সাথে সাথে।“

“বেরিয়ে যা!” কর্কশ কন্ঠে চেঁচিয়ে উঠলো ব্ল্যাক। “বেরিয়ে যা!” বেরিয়ে যা!”

“তোমার যাবার সময় হয়ে গেছে, কেলসো” লোকটা নরমস্বরে বলে উঠলো “আমাদের অনেক দূর যেতে হবে যে।“

লোকটা তার কোট আর হ্যাট খুলে ফেললো। কেলসো ব্ল্যাক ওই চেহারার দিকে তাকালো।

ও চিৎকার করে উঠলো।

কেলসো ব্ল্যাক চিৎকার করতেই থাকলো, করতেই থাকলো, করতেই থাকলো।

কিন্তু লোকটা শুধু হাসল। কিছুক্ষন বাদেই, ঘর হয়ে গেল নীরব। আর শূন্য।

শুধু গন্ধকের একটা কড়া গন্ধ রয়ে গেল।

[স্টিফেন কিং এর ‘দ্যা স্ট্রেঞ্জার’ গল্পের অনুবাদ]

=================================================

কুয়াশার ওপাশে

পিট জ্যাকব বার হবার সাথে সাথেই কুয়াশা ওর বাসাটাকে গিলে ফেললো। সাদা কুয়াশার একটা চাদর ছাড়া সে আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না। অবস্থাটা ওর মনে একটা অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি করলো, সে যেন পৃথিবীর শেষ মানব।

হঠাৎ ওর মাথা ঘুরতে লাগলো। পেট মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো। মনে হচ্ছিল যেন একটা পড়ন্ত লিফটের মধ্যে সে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর একসময় অনুভূতিটা চলে গেল। সে হাঁটতে লাগলো। কিন্তু কুয়াশা কাটতে শুরু করার সাথে সাথে পিটের চোখ আতঙ্কে আর বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেল।

সে একটা শহরের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।

কিন্তু সবচেয়ে কাছের শহর চল্লিশ মাইল দূরে!

কিন্তু কি শহর রে বাবা! পিট জীবনে এরকম দেখেনি।

সুন্দর সব দালান, চুড়াগুলো যেন আকাশ ছুঁয়ে আছে। লোকজন সব কনভেয়র বেল্টের উপর দিয়ে হাঁটছে।

একটা বিল্ডিং এর ভিত্তি প্রস্তরে লেখা আছে এপ্রিল ১৭, ২০৯৭। পিট ভবিষ্যতে চলে এসেছে, কিন্তু কিভাবে?

হঠাৎ পিট ভয়ে পেয়ে গেল। ভয়াবহ একটা আতঙ্ক ওকে গ্রাস করলো। সরতে থাকা কুয়াশার দিকে সে দৌড় দিল।

অপরিচিত ইউনিফর্ম পড়া একটা পুলিশ রাগান্বিত স্বরে ডাকল। মাটি থেকে ছয়-সাত ইঞ্চি উপরে চলমান অদ্ভুত গাড়ীগুলোতে ধাক্কা খাওয়া থেকে অল্পের বাঁচলো। দৌড়ে ও কুয়াশার মধ্যে ঢুকল, আর শিগগিরী আবার সবকিছু ফাঁকা হয়ে গেল।

আবার সেই অনুভূতিটা ফিরে আসলো। সেই পড়ে যাবার অনুভূতি...তারপর আবার কুয়াশা সরতে লাগলো।

মনে হচ্ছিলো নিজের জায়গায় ফিরে এসেছে...

হঠাৎ কর্ণবিদীর্নকারী একটা শব্দ। ঘুরে দেখলো এক প্রকান্ড প্রাগৈতিহাসিক ব্রান্টোসোরাস এগিয়ে আসছে তার দিকে। ওর ক্ষুদ্র গুটি গুটি চোখে জিঘাংসার লিপ্সা।

আতঙ্কিত হয়ে, সে আবার কুয়াশার ভেতরে দৌড়ালো...

পরের বার যখন কুয়াশা তোমাকে ঘিরে ধরবে আর শুনতে পাবে কুয়াশার ভেতরে ব্যস্ত পদশব্দ...ডাক দিও।

হতে পারে ওটা পিট জ্যাকবস, কুয়াশায় তার ঠিকানা খুজে বেড়াচ্ছে...

বেচারাকে একটু সাহায্য করো।

[স্টিফেন কিং এর ‘দ্যা আদার সাইড অফ দ্যা ফগ’ এর অনুবাদ]


মন্তব্য

খেকশিয়াল এর ছবি

অসাধারন ! অসাধারন ! শীঘ্রই গল্পগুচ্ছ দুই চাই ! দেঁতো হাসি

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

অবনীল এর ছবি

থ্যাঙ্কস দোস্ত। শীঘ্রই আসিতেছে। দেঁতো হাসি

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

খুবই দারুণ উদ্যোগ। চলুক।

অবনীল এর ছবি

ধন্যবাদ।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

অম্লান অভি এর ছবি

অনেক দিন পর কিছু ভিন্নতার গল্প পড়লাম। ভালো লাগল। চিন্তার স্ফুরন ঘটাতে সাহায্য করল। ভালো সাথে আছি পাঠক হিসেবে............

মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....

অবনীল এর ছবি

ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

স্পর্শ(অফলাইন) এর ছবি

ভাল লাগলো। প্রথমটা প্রথম।

অবনীল এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

শিক্ষানবিস এর ছবি

ভালো লাগলো। স্টিফেন কিং এর গল্প আর গল্প থেকে হওয়া সিনেমা সবই ভালো লাগে। অনুবাদও সুন্দর হয়েছে। চলুক...

অবনীল এর ছবি

ধন্যবাদ শিক্ষানবিস

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

সবজান্তা এর ছবি

নাভেদ ভাই, চমৎকার হয়েছে। আরো পড়ার প্রত্যাশা থাকলো।

আমি নিজেও শুরু করেছি একটা কিছুদিন আগেই, তবে এটার কলেবর বেশ বড়। গল্পের নাম, Autopsy Room Four


অলমিতি বিস্তারেণ

অবনীল এর ছবি

দারুন! চালিয়ে যাও, তোমার অনুবাদের জন্যও অপেক্ষায় রইলাম, বড় গল্প বা উপন্যাস বেশ ধৈয্যের ব্যাপার, তার ওপর একবারে পোষ্ট করাও মুশকিল এইজন্য আমি ধরতে তেমন উৎসাহ পাচ্ছিলাম না। এখন তোমারটা থেকে উদ্দীপ্ত হবার আশায় থাকলাম। হাসি

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অনুবাদ ভাল হয়েছে।


A question that sometimes drives me hazy: am I or are the others crazy?

অবনীল এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

রানা মেহের এর ছবি

ভালো লাগলো

আপনাদের বন্ধু গ্রুপটা
অনুবাদ নিয়ে কাজ করে।
ভালো লাগে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

nilla এর ছবি

তাসমিনা, ভাল হয়েছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।