যে জীবন আপনি বাঁচাতে পারেন
- পিটার সিঙ্গার
লেখক পরিচিতিঃ দার্শনিক পিটার সিঙ্গার প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ইরা ডিক্যাম্প প্রফেসর অফ বায়োএথিক্স। টাইম ম্যাগাজিন তাঁকে “বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ জন” এর একজন বলে অভিহিত করেছে। ত্রিশটিরও বেশী বইয়ের লেখক, সহ-লেখক, এবং সম্পাদক। এরমধ্যে ‘এনিমাল লিবারেশন’ কে সার্বজনীনভাবে পশু অধিকার আন্দোলনের ভিত্তি প্রদানকারী বক্তব্য বলে বিবেচনা করা হয়। এছাড়াও তার লেখা বই হচ্ছে, ‘প্রাকটিকাল এথিক্স’, এবং ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ডঃ এথিক্স এন্ড গ্লোবালাইজেশন’।
অনুবাদকের কথাঃ এনিমেল লিবারেশন তার সবচেয়ে নামকরা বই হলেও, আমার সাথে তার ভাবনার পরিচয় তার ‘হাউ আর উই টু লিভ, এথিকস ইন দ্য এইজ অফ সেলফ-ইনটারেস্ট’ বইটির মাধ্যমে। এই উচুমানের দার্শনিকের আরেকটি বইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য এই লেখার উপস্থাপন। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে ‘দ্য লাইফ উই ক্যান সেভ’ এর পুরোটা আমি এখনও সংগ্রহ করতে পারিনি তাই কোন রিভিউ দেওয়ার চেষ্টা করছি না, শুধু তার অনলাইন থেকে প্রাপ্ত কিছু অংশ এখানে তুলে ধরলাম। ভবিষ্যতে যদি সম্ভব হয়, পুরো বইটা জোগাড় করে পড়ে মন্তব্য জানাব, বা কেউ যদি এই লেখা পড়ে উদ্দুদ্ধ হয়ে বইটি সংগ্রহ করে রিভিউ করেন তাহলেও আমার পরিশ্রম সার্থক হবে। যদিও এই বইটি উন্নত বিশ্বের জনগোষ্ঠীর প্রতি উদ্দেশ্য করে লেখা, আপনারা স্বীকার করবেন এই বইয়ের বক্তব্যের পরিব্যপ্তি সার্বজনীন। ধন্যবাদ।
*****
মুখবন্ধ
সাবওয়ে ট্রাকের মধ্যে যখন লোকটাকে পড়ে যেতে দেখলেন, ওয়েজলি অট্রি ইতস্তত করেননি। অগ্রসরমান ট্রেনের আলো দৃশ্যমান অবস্থায়, অট্রি, একজন নির্মান শ্রমিক, ট্রাকে লাফিয়ে নেমে মানুষটাকে ঠেলে দুই রেললাইনের মাঝের নালার মধ্যে ফেলে নিজের শরীর দিয়ে ঢেকে ফেললেন। অট্রির ক্যাপে গ্রিজের রেখাচিহ্ন এঁকে দিয়ে ট্রেন তাদের উপর দিয়ে চলে গেল।পরে যখন স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন আড্রেস-এ প্রসিডেন্ট যখন তার সাহসিকতার প্রশংসা করেন, বিনয়ের সাথে অট্রি বলেনঃ “আমার কাছে মনে হয়না আমি কোন চমকপ্রদ কিছু করেছি। আমি শুধু দেখলাম একটা লোকের সাহায্য দরকার। আর আমার কাছে যা ঠিক মনে হলো তা-ই করলাম।”
আমি যদি বলি আপনিও, একটা জীবন বাচাতে পারেন, এমনকি অসংখ্য জীবন? এই লেখাটি পড়ার সময় টেবিলে কোন পানির বোতল বা সোডার ক্যান আছে ? যদি পানি পানের জন্য আপনি টাকা খরচ করছেন যখন নিরাপদ পানি আপনার ট্যাপ দিয়েই আসছে, তাহলে আপনার কাছে অপ্রোয়জনীয় জিনিসের পেছনে খরচ করার মত টাকা আছে। পৃথিবীজুড়ে কোটি কোটি মানুষ, আপনি ওই পানির বোতলের জন্য যত টাকা খরচ করেছেন, তার থেকে কম টাকায় বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে প্রত্যেকদিন। কারন পরিবারকে ন্যুনতম স্বাস্থসেবা দেবার সামর্থ্য তাদের নেই, তাদের সন্তানেরা সাধারন, সহজে নিরাময়যোগ্য রোগে, যেমন ডাইরিয়ায়, মারা যেতে পারে। আপনি তাদের সাহায্য করতে পারেন, এবং তার জন্য আপনাকে কোন চলন্ত ট্রেনের সাথে ধাক্কা খাবার ঝুঁকি নিতে হবে না।
ত্রিশ বছরের বেশী সময় ধরে ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে আমরা কিভাবে জবাব দেব তা নিয়ে আমি চিন্তাভাবনা ও লেখালিখি করছি। এই বইয়ে তুলে ধরা যুক্তি আমি আমার ইউনিভার্সিটির ক্লাসগুলোতে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর সামনে এবং বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতায়, অসংখ্য সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, এবং টিভি অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করেছি। ফলাফলস্বরূপ, আমি বিশাল পরিব্যপ্তির চিন্তাশীল সব চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে বাধ্য হয়েছি। এই বইটিতে আমরা কেন দান করি, অথবা করি না, এবং আমাদের এ ব্যাপারে কি করা উচিত - এসব সম্বন্ধে আমি কি শিখেছি তারই পরিশুদ্ধ ব্যাখ্যা দেবার প্রচেষ্টা করেছি।
অনন্য এক ক্ষনে বাস করছি আমরা। মৌলিক চাহিদা মেটাতে অক্ষম এমন জনসংখার অনুপাত ইতিহাসে কাছাকাছি যেকোন সময়ের থেকে, এবং সম্ভবত মানুষের আবির্ভাবের পর থেকে যেকোন সময়ের চেয়ে, এখন ক্ষুদ্রতর। একই সময়ে, চাহিদার অধিক অর্জনকারী মানুষের সংখ্যার অনুপাতও নজিরবিহীন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, ধনী এবং গরীব এখন এমনভাবে সম্পর্কযুক্ত যা আগে কখনও ছিল না। অস্তিত্বের শেষপ্রান্তে উপস্থিত মানুষের হৃদয় নাড়া দেওয়া দেয়া চিত্র তাৎক্ষনিকভাবে আমাদের বসার ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। আমরা এখন শুধু চরম দরিদ্রদের কথা শুধু জানিই না, উন্নততর স্বাস্থসেবা, উৎকৃষ্টতর বীজ, এবং কৃষি কৌশল, এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন প্রযুক্তির ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের তাদের আরো অনেক কিছু দেবার আছে। আরো বিস্ময়কর, তাৎক্ষনিক যোগাযোগের মাধ্যমে এবং তথ্যের বিশাল ভান্ডারে উম্মুক্ত প্রবেশের মাধ্যমে, যা ইন্টারনেটপূর্ব যেকোন শ্রেষ্ঠ লাইব্রেরীকে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম, আমরা তাদেরকে বিশ্বব্যাপী মানবগোষ্ঠীর সাথে যুক্ত হতে দিতে পারছি – এখন বাকী শুধু তাদের দারিদ্রতা থেকে এতটুকু বের করে আনতে সাহায্য করতে পারা যেন তারা সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারে।
অর্থনীতিবিদ জেফ্রি স্যাক্স বিশ্বাসযোগ্যভাবে যুক্তি প্রদর্শন করেছেন যে এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়েই আমরা চরম দারিদ্রতাকে যথার্থভাবে নির্মুল করতে পারি। আমরা ইতিমধ্যেই বেশ অগ্রসর হতে পেরেছি। ১৯৬০ সালে, ইউনিসেফ, ইউনাইটেড নেশনস চিল্ড্রেন ফান্ড, এর দেয়া তথ্যানুযায়ী, দারিদ্রতার জন্য ২০ মিলিয়ন শিশু তাদের পঞ্চম জন্মদিনের আগেই মৃত্যুবরন করত। ২০০৭ সালে, ইউনিসেফ ঘোষনা করে যে, তথ্যসংগ্রহ শুরু করার প্রারম্ভ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এই প্রথম, শিশুমৃত্যুর সংখ্যা প্রতিবছর ১০ মিলিয়নের নিচে নেমে এসেছে। গুটিবসন্ত, হাম, এবং ম্যালারিয়ার বিরূদ্ধে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচারাভিযান শিশুমৃত্যুর হার কমাতে সাহায্য করেছে, সেই সাথে সাহায্য করেছে বেশ কিছু দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি। এই নিম্নগামীতা আরও চিত্তাকর্ষক কারন ১৯৬০ এর থেকে এখন বিশ্বের জনসংখ্যা দ্বিগুনেরও অধিক। তারপরো আমারা আত্মতুষ্ট হতে পারি নাঃ ৯.৭ মিলিয়ন পাঁচ বছরের নিচের শিশু এখনও মারা যাচ্ছে; এটা একটা বিশাল ট্র্যাজেডি, বিত্তশালী এরকম একটা বিশ্বের নৈতিকতার উপর যে একটা কলঙ্কস্বরুপ সেটা না-ই উল্লেখ করলাম। এবং ২০০৮ সালে খাদ্যের মূল্যে যে চড়া উর্ধগতি ঘটেছিল সেটা এই দারিদ্র সম্পর্কিত মৃত্যুর নিম্নগামীতাকে ঘুরিয়ে দিতে পারে।
আমাদের অবস্থাকে এক অতিকায় পর্বতের শৃঙ্গে আরোহনের প্রচেষ্টার সাথে তুলনা করতে পারি। মানষের আবির্ভাবের পর অনন্তকাল ধরে আমরা ঘন কুয়াশার ভেতর দিয়ে অবরোহন করে চলেছি। আমরা জানতাম না কতদূর আমাদের যেতে হবে, কিংবা শৃঙ্গে পৌঁছানো আদৌ সম্ভব কিনা। অবশেষে এখন আমরা কুয়াশা ভেদ করে বেরিয়ে এসেছি। অবশিষ্ট খাড়া ঢালগুলো দিয়ে শৃঙ্গের দিকে চলে যাওয়া রাস্তাটা দেখতে পারছি। চুড়া এখনো আমাদের বেশ দূরে। পথের কিছু অংশ আমাদের সামর্থ্যের চরম পরিক্ষা নেবে। কিন্তু আমরা দেখতে পারছি এই আরোহন বাস্তবায়নযোগ্য।
আমরা, প্রত্যেকেই, এই ঐতিহাসিক আরোহনে অংশ নিতে পারি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অত্যন্ত ধনীগোষ্ঠীর কিছু ব্যক্তি সাহসীকতার সাথে এবং প্রকাশ্যভাবে এই চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়েছেন যা ব্যাপকভাবে প্রচার পেয়েছে। ওয়ারেন বাফেট ৩১ বিলিয়ন ডলার প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন, এবং বিল ও মেলিন্ডা গেটস ২৯ বিলিয়ন ডলার দিয়েছেন এবং আরো দেবার পরিকল্পনা করছেন। যদিও এই অংক গুলো বিশাল, এই বইয়ের শেষে আমরা দেখব যে ধনীদেশের জনগণ তাদের জীবনযাপনের মানদণ্ডের তেমন উল্লেখযোগ্য কোন হ্রাসকরন না করে সহজেই যা দিতে পারেন, তার তুলনায় এটা শুধু ছোট একটা অংশ। আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারব না যদি আরো অনেকে এই প্রচেষ্টায় অংশগ্রহন না করেন।
এইজন্য এটা আমাদের নিজেরদেরকে জিজ্ঞেস করবার জন্য সঠিক সময়ঃ সাহায্যের জন্য আমি কি করতে পারি?
দুটো সম্পর্কযুক্ত কিন্তু উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে আমি এই বইটা লিখি। প্রথমত চরম দারিদ্রতার ফাঁদে আটকা পড়া মানুষদের জন্য আপনাকে চিন্তা করতে চ্যালেঞ্জ করার জন্য। বইয়ের যে অংশ এই চ্যালেঞ্জকে স্থাপন করে তাতে ইচ্ছাকৃতভাবে খুবই কঠিন – অনেকে বলতে পারেন অসম্ভব – নৈতিক মানদণ্ডের উপস্থাপনা করা হবে। আমার প্রস্তাব এই যে আমাদের পক্ষে নৈতিকভাবে ভালো জীবন যাপন করার চিন্তা করা সম্ভব নয় যদি না আমাদের অনেকের পক্ষে যা দিতে পারাটা বাস্তব হিসেবে প্রত্যাশা করা সম্ভব নয় তার থেকেও বেশী আমরা দিতে পারি। এটা অযৌক্তিক শোনাতে পারে, এবং তারপরো এর যুক্তি লক্ষনীয়ভাবে সাধারন। এটা ফিরে যায় সেই পানির বোতলে, সেইসব অর্থতে যা আমরা ব্যয় করি সত্যিকারভাবে অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে। সত্যিকারভাবে অভাবগ্রস্থ নিরীহ মানুষদের সাহায্য করা যদি এতই সহজ হয়ে থাকে, এবং তারপরো তা করতে আমরা যদি ব্যর্থ হই, আমরা কি কিছু ভুল করছি না? কমপক্ষে, আমি আশা করছি যে এই বই আপনাকে বোঝাতে সক্ষম হবে যে উপভোগ্য জীবনযাপন করার আমাদের যে সার্বজনীন ধারনা তার মধ্যে কিছু গভীর কুটিল একটা ব্যাপার আছে।
এই বইয়ের দ্বিতীয় লক্ষ্য হলো আপনার আয় থেকে দরিদ্রগোষ্ঠীকে আরো দান করার জন্য আপনাকে দৃঢ়প্রত্যয় করা। আপনি জেনে সুখি হবেন যে দার্শনিক যুক্তির কঠিন মানদন্ড থেকে সরে আসার প্রয়োজনীয়তা আমি পুরোপুরিভাবেই উপলব্ধি করতে পারি, যাতে আমাদের কাজে কোন জিনিসটা সার্থকভাবে পরিবর্তন আনতে পারবে সেটা আমরা বিবেচনা করতে পারি। আমি বিবেচনা করব কার্যকারন, কিছু অপেক্ষাকৃত বেশি বিশ্বাসযোগ্য, কিছু ততটা নয়, যা আমাদের দান না করতে প্রস্তাব করে, সেই সাথে যেসব মনস্তাত্বিক কারন আমাদের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। আমি মানবপ্রকৃতির সীমাবদ্ধতার বাস্তবতা মেনে নেব এবং তারপরো উদাহরন দেব মানুষের যারা আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে সেই সীমাবদ্ধতাকে অন্যদের থেকে একটু বেশি ঠেলে সরাতে পেরেছেন। আর যুক্তিযুক্ত মানদন্ডের কথা বলে শেষ করবো যে, শতকরা ৯৫ ভাগ আমেরিকান, তাদের আয়ের সর্বোচ্চ ৫ ভাগ দান করার মাধ্যমে এই শর্ত পূরোন করতে পারেন।
তবে আমার আগে থেকেই বলে রাখা উচিত যে আমি বিশ্বাস করি যে আপনার শতকরা ৫ ভাগের বেশি দান করা উচিত, এবং আমি মনে করি অবশেষে আপনি ওইদিকেই ধাবিত হবেন। কিন্তু সেটা শোনা সহজ নয়, এবং করাও সহজ নয়। আমি স্বীকার করি যে বেশীরভাগ মানুষ শুধু কোন দার্শনিক যুক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের জীবনে বড়সড় পরিবর্তন আনবেন না, এবং, কারো পক্ষে এক রাতের মধ্যে এইরকম পরিবর্তন আনা সম্ভবও নয়। এই বইয়ের চুড়ান্ত লক্ষ্য হলো চরম দারিদ্রতার নিরসন, আপনাকে অপরাধী বোধ করানো নয়। তাই আমি একটা মানদন্ডকে সমর্থন করব যেটা আমার দৃঢ়বিশ্বাস অনেক ভালোকাজ করবে। তার মানে হলো আপনাকে একটা অবস্থান থেকে শুরু করার জন্য পরামর্শ দেওয়া, এবং নিজেকে চ্যালেঞ্জ করার পথ দেখিয়ে দেওয়া এবং আরো করার জন্য কাজ করতে থাকা।
এটা কঠিনতম যে আপনাকে ত্যাগ করতে বলা সেইসব মানুষদের জন্য যাদের আপনি কখনো দেখেননি, যারা সেই সব দূরদেশে বাস করে যেখানে কখনো আপনি যাননি। আরো বাজে ব্যাপার হলো, যখন এই বইটা ছাপায় যাচ্ছে, আমরা তখন সাম্প্রতিককালের ভয়াবহতম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। অর্থনীতিবদগণ মুদ্রাস্ফীতির পূর্বাভাস দিচ্ছেন, চারিদিকে চাকরী ছাটাই হচ্ছে, এবং সার্বিক অর্থনৈতিক দুরবস্থা, এবং তা শুধু দরিদ্রদের ক্ষেত্রেই নয়। অনেক মধ্যবিত্ত জনগন অর্থনৈতিক অনিশ্চিত সময়ের মুখোমুখি। কিন্তু ব্যবসাচক্রের এই ডুবন্ত অবস্থা আগেও ঘটেছে, এবং যখন এই অবস্থা সবচেয়ে মারাত্মক পর্যায়ও ছিল, কার্যত ধনীদেশের সবাই চরম দারিদ্রতায় বসবাসকারী জনগনের থেকে অনেক ভালো অবস্থায় ছিল। আমি আশা করছি আপনি সার্বিক চিত্রটা দেখবেন এবং চিন্তা করবেন বছরে ১৮ মিলিয়ন মানুষ যে বিশ্বে অপ্রয়োজনীয়ভাবে মারা যায় সে বিশ্বে নৈতিকভাব জীবনযাপন করতে কি করা দরকার। এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বাৎসরিক মৃত্যুর হারের থেকেও বেশি। শুধু গত বিশ বছরেই, এই মৃত্যুর সংখ্যা বিংশ শতাব্দীতে, যেটা হিটলার এবং স্টালিনের শতাব্দী, সকল গৃহযুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক যুদ্ধের এবং সরকারী দমননীতির কারনে ঘটা মৃত্যুর সমান। ওই ভয়াবহতাগুলো রোধ করতে আমাদের কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করতাম ? তারপরো আমরা আজকের মাশুলগুলো রোধ করতে কতটুকু করছি, এবং এর জন্য যে দূর্দশা জড়িত থাকে তা রোধ করতে ? আমি বিশ্বাস করি আপনি যদি এই বইটা শেষ পর্যন্ত পড়েন, আর সততা এবং সতর্কতার সাথে আমাদের অবস্থাকে দেখেন, বাস্তবতা এবং নৈতিক যুক্তির আলোকে যাচাই করেন, আপনি স্বীকার করবেন যে আমাদের কিছু একটা করতেই হবে।
- পিটার সিঙ্গার
যুক্তি
১। একটা শিশুকে বাঁচানো
অফিস যাবার পথে, আপনি একটা পুকুরের পাশ দিয়ে যান। গরমের দিনে, শিশুরা মাঝেমাঝে এই হাটুপানি গভীর পুকুরে খেলা করে। যদিও আজকের দিনটা ঠান্ডা ঠান্ডা, এবং সকাল সকাল, আপনি দেখে অবাক হলেন যে একটা বাচ্চা পুকুরে ঝাঁপাঝাপি করছে। কাছে এগিয়ে যেতে যেতে দেখলেন শিশুটা খুবই ছোট একটি বাচ্চা। সদ্য হাটতে শিখেছে এরকম। দাপাদাপি করছে। দাঁড়িয়ে থাকতেও পারছেনা আবার হেঁটে পুকুর থেকে বেরও হতে পারছে না। আপনি এদিক ওদিক তাকিয়ে বাবা-মা অথবা বেবি সিটারের খোঁজ করলেন, কিন্তু আশেপাশে কেউই নেই। বাচ্চাটা একবারে কয়েক সেকেন্ডের বেশিক্ষন তার মাথা পানির উপরে ধরে রাখতে পারছে না। আপনি যদি এখন পানিতে নেমে তাকে টেনে বের করে না আনেন, সে ডুবে যেতে পারে। জলঠেলে হাঁটা সহজ এবং নিরাপদ, কিন্তু আপনার কয়েকদিন আগে কেনা নতুন জুতো দুটা নষ্ট হয়ে যাবে। আপনার স্যুট ভিজে কর্দমাক্ত হয়ে যাবে। আর যে সময়ের মধ্যে বাচ্চাটাকে দায়িত্ববান কারো কাছে তুলে কাপড়চোপড় বদলাবেন, ততক্ষনে আপনার অফিসে দেরি হয়ে যাবে। আপনি কি করবেন?
আমি প্রাকটিক্যাল এথিকস নামে একটা কোর্স করাই। যখন আমরা বৈশ্বিক দারিদ্র্যতা নিয়ে কথা বলা শুরু করি, আমি ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞেস করি তারা এই অবস্থায় কি করত। স্বাভাবিকভাবেই, তারা জবাব দিত যে বাচ্চাকে বাঁচানো উচিত। “কিন্তু তোমার জুতো ? আর অফিসে দেরী হয়ে যাওয়া ?” আমি জিজ্ঞেস করি। তারা সেগুলো উপেক্ষা করে। কিভাবে কেউ একজোড়া জুতো, কিংবা অফিসে এক-দুই ঘন্টা দেরি হয়ে যাবার জন্য একটা বাচ্চাকে বাঁচাবে না ?
২০০৭ সালে, এই হাইপথেটিক্যাল অবস্থার মত একটা ঘটনা সত্যি সত্যি ঘটে ম্যানচেস্টার, ইংল্যান্ডে। জর্ডন লিওন, দশ বছরের একটা বাচ্চা, তার সৎবোন বেথনি ডুবে গেলে সে পানিতে ঝাপিয়ে পড়ে। সে আপ্রান চেষ্টা করে বোনের ভার বহন করতে কিন্তু সে নিজে ডুবে যায়। ছিপ দিয়ে মাছশিকারকারীরা বেথনিকে টেনে উঠাতে পারলেও, জর্ডনকে তখন আর কোথাও দেখা যাচ্ছিল না। তারা সোরগোল শুরু করলে কিছুক্ষনের মধ্যেই দুজন সহায়ক পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। কিন্তু তারা জর্ডনকে খুজতে পানিতে নামতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তাকে টেনে বার করা হয়, কিন্তু তার প্রাণ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। জর্ডনের মৃত্যুর ব্যাপারে সরকারি অনুসন্ধানে পুলিশদের নিষ্ক্রিয়তা এই ভিত্তিতে রক্ষা করা হয় যে তারা এইরকম অবস্থায় কি করা উচিত সে সম্পর্কে তাদের প্রশিক্ষন দেওয়া হয়নি। মা জবাব দেনঃ “আপনি যদি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যান আর দেখেন একটা বাচ্চা ডুবে যাচ্ছে আপনি স্বভাবতই পানিতে নামেন...আপনাকে ডুবন্ত শিশুকে উদ্ধারের জন্য প্রশিক্ষন নেওয়া লাগে না।”
আমার মনে হয় যা এটা অনুমান করা নিরাপদ যে বেশিরভাগ মানুষ মায়ের বক্তব্যের সাথে একমত হবেন। কিন্তু এটা বিবেচনা করে দেখেন যে ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী প্রায় ১০ মিলিয়ন পাঁচ বছরের নিচে শিশু প্রতি বছর দারিদ্রতা জনিত কারনে মারা যায়। এরকম একটা ঘটনা - এখানে উল্লেখ করা হলো, ঘানার একজন লোক ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একজন গবেষনাকর্মীর কাছে এই ঘটনা বর্ণনা করেনঃ
আজকের সকালে যে ছোট বাচ্চাটা মারা গেল, তার উদাহরনটা নেন। বাচ্চা মারা গেছে হাম হয়ে। আমরা জানি সে হাসপাতালে গেলে সুস্থ হয়ে যেত। কিন্তু তার বাবা-মার কোন টাকা ছিল না। তাই বাচ্চাটা ধীরে ধীরে এবং কষ্ট পেয়ে পেয়ে মারা গেল। হামের জন্য না - দারিদ্রতার জন্য।
এবার চিন্তা করুন এরকম একটা ঘটনা ঘটছে দিনে ২৭,০০০ বার। কোন কোন বাচ্চা মারা যায় কারন তারা যথেষ্ট পরিমানে খাবার পায় না। আরো মারা যায়, ওই ঘানার বাচ্চাটার মত, হাম, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া, এবং নিউমোনিয়ায়, যেসবের উন্নত বিশ্বে কোন অস্তিত্ব নেই, আর যদি থাকেও, তারা প্রায় কখনোই প্রাণনাশক নয়। শিশুরা এইসব রোগের কাছে অরক্ষিত কারন তাদের কাছে কোন নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নেই, বা কোন পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা নেই, এবং তারা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাদের বাবা-মারা তাদের জন্য কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন না। ইউনিসেফ, অক্সফ্যাম, এবং আরও অনেক সংস্থা দারিদ্রতা হ্রাস, বিশুদ্ধ পানির সংস্থান এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে, এবং এই প্রচেষ্টায় এই মৃতুহার কমাতে কিছুটা হলেও সহায়তা করছে। রিলিফ অর্গানাজেশনগুলোর যদি আরো টাকা থাকত, তারা আরো কিছু করতে পারত, এবং আরো জীবন বাঁচাতে পারত।
এখন আপনার অবস্থার কথা চিন্তা করুন। আপেক্ষিকভাবে সামান্য কিছু অর্থ দান করার মাধ্যমে, আপনি একটা শিশুর জীবন বাঁচাতে পারেন। হয়ত একজোড়া জুতোর দামের থেকে কিছু বেশি টাকা হতে পারে – কিন্তু আমরা সবাই আমাদের লাগে না এমন অনেক কিছুর পেছনেই টাকা খরচ করে থাকি। সেটা হতে পারে পানীয়, বাইরে খাওয়া, কাপড়চোপড়, মুভি, কনসার্ট, ভ্যাকেশন, নতুন গাড়ী, অথবা বাড়ী সংস্কারে। এটা কি হতে পারে যে কোন সাহায্যকারী সংস্থাকে না দিয়ে এসবের পেছনে টাকা খরচ করে, আপনি একটা শিশুকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, যাকে হয়ত আপনি বাঁচাতে পারতেন ?
আজকের দারিদ্রতা
কয়েক বছর আগে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক রিসার্চারদের অনুরোধ করেছিল দরিদ্ররা কি বলে তা শুনতে। তারা ৭৩ টি দেশের ৬০,০০০ নরনারীর অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করতে সক্ষম হন। বারংবার, বিভিন্ন ভাষায় এবং বিভিন্ন মহাদেশে, দরিদ্র জনগণ দারিদ্রতা বলতে এইগুলোকে বুঝিয়েছেনঃ
• সারাবছর ধরে অথবা বছরের কিছু সময় ধরে আপনার খাদ্যের অভাব, প্রায়ই দিনে শুধু একবার আহার, এবং মাঝে মাঝে সন্তানের ক্ষুধা এবং নিজের ক্ষুধা নিবারনের মধ্যে যেকোন একটি বেছে নেওয়া, এবং কখনো কখনো তার কোনটাই করতে না পারা।
• আপনি টাকা জমাতে সক্ষম নন। যদি কোন পরিবার সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং আপনার ডাক্তারের কাছে যাবার প্রয়োজন হয়, আপনাকে স্থানীয় মহাজনের কাছে থেকে টাকা ধার করতে হয় এবং সে আপনাকে এত বেশী সুদে ধার দেয় যে ঋণের বোঝা বাড়তেই থাকে এবং আপনি কখনোই তা থেকে মুক্তি পেতে পারেন না।
• আপনি আপনার ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে সমর্থ নন, কিংবা তারা যদি স্কুলে যাওয়া শুরুও করে, ফসলের অবস্থা খারাপ হলে তাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিতে হয়।
• আপনি কাদা আর শুকনো খড় দিয়ে তৈরী একটা নড়বড়ে বাসায় বসবাস করেন, যেটা বছরে দুইতিন বার কিংবা ঝড়বাদলের পর নতুন করে তৈরী করতে হয়।
• আপনার আশেপাশে কোন নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নেই। আপনাকে অনেক দূর থেকে পানি বয়ে আনতে হয়, এবং তারপরো, ফুটিয়ে পান না করলে তা আপনাকে অসুস্থ করে দিতে পারে।
কিন্তু চরম দারিদ্রতা শুধু বস্তুগত চাহিদাগুলো মেটাবার অক্ষমতাই নয়। প্রায়ই এর সাথে যোগ হয় মর্যাদাহানিকর অক্ষমতার অবস্থা। এমনকি গণতান্ত্রিক এবং অপেক্ষাকৃত সুশাসিত দেশগুলোতেও, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সার্ভেতে জবাব প্রদানকারীরা জানিয়েছেন বিভিন্ন অবস্থার কথা - যাতে তাদের বিনা প্রতিবাদে অবমাননা সহ্য করতে হয়েছে। কেউ যদি আপনার সামান্য যা আছে তা নিয়ে নেয়, এবং আপনি যদি পুলিশের কাছে নালিশ করেন, তারা না আপনার কথা শুনবে, না ধর্ষন কিংবা যৌন হয়রানির থেকে আইন আপনাকে রক্ষা করবে। আপনার মধ্যে লজ্জা ও ব্যর্থতার এক ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়া অনুভূতি কারন আপনি আপনার সন্তানদের ভরনপোষন করতে পারছেন না। আপনার দারিদ্রতা আপনাকে ফাদে আটকে ফেলেছে এবং আপনি কঠোর পরিশ্রমের জীবন থেকে কখনও মুক্তি পাবার আশা হারিয়ে ফেলেছেন, সবশেষে, কোনমতে টিকে থাকা ছাড়া আপনার জীবনে আর কিছুই দেখাবার নেই।
ওয়ার্ল্ড ব্যাংক চরম দারিদ্রতাকে সংজ্ঞায়িত করেছে যথেষ্ট পরিমান খাদ্য, পানি, আশ্রয়, বস্ত্র, পয়ঃনিস্কাশন, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরন করার মত উপার্জন না থাকাকে। এক বিলিয়ন মানুষ দৈনিক এক ডলারের নিচে বেঁচে আছে - এই পরিসংখ্যানের সাথে অনেকেই পরিচিত। এটা ছিল ২০০৮ সাল পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের দারিদ্র্যতার সীমারেখা। আন্তর্জাতিক দামের তুলনা প্রদানকারী আরও উন্নততর তথ্য যখন পাওয়া গেল, মৌলিক চাহিদা মেটাতে অক্ষম মানুষের সংখ্যা আরো নিখুঁতভাবে হিসেব করা সম্ভব হলো। এই হিসেব অনুযায়ী, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক দারিদ্র্যতার সীমারেখা সেট করেছে দৈনিক ১.২৫ ডলারে। এই সীমারেখার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ১ বিলিয়ন নয়, ১.৪ বিলিয়ন। আমরা যা ভাবতাম তার থেকেও বেশী সংখ্যক মানুষ চরম দারিদ্র্যতায় বসবাস করছে, অবশ্যই দুঃসংবাদ, কিন্তু সংবাদের সবটাই খারাপ না। একই ভিত্তিতে, ১৯৮১ সালে ১.৯ বিলিয়ন মানুষ চরম দারিদ্র্যতায় বসবাস করছিল। যেটা বিশ্বের প্রতি চারজনের একজন, এখন সেখানে চারজনের কম মানুষ চরমভাবে দরিদ্র।
দক্ষিন এশিয়া এখনও সর্বাধিক চরম দারিদ্রতায় বেচে থাকা মানুষের অঞ্চল, সর্বমোট ৬০০ মিলিয়ন, ভারতে বসবাসকারী ৪৫৫ মিলিয়ন সহ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অবশ্য দক্ষিন এশিয়ায় বসবাসকারী চরম দরিদ্রতায় বসবাসকারী মানুষের অনুপাত ১৯৮১ সালের শতকরা ৬০ ভাগ থেকে ২০০৫ সালে শতকরা ৪২ ভাগে নামিয়ে এনেছে। সাব-আফ্রিকান সাহারায় বসবাসকারী চরম দরিদ্র মানুষ আছে আরো ৩৮০ মিলিয়ন, যেখানে অর্ধেক জনগোষ্ঠীই চরম দরিদ্র – এবং এটা ১৯৮১ সালের মতই একই শতাংশে। সবচেয়ে নাটকীয় দারিদ্রতা হ্রাস হয়েছে পূর্ব এশিয়ায়, যদিও এখনও ২০০ মিলিওনেরও বেশী চীনা চরম দরিদ্র, এবং অল্পসংখ্যায় এই অঞ্চলের অন্যান্য জায়গায়। বাকী চরম দরিদ্র মানুষ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান, প্যাসিফিক, মিডল ইস্ট, উত্তর আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ায়।
“দৈনিক ১.২৫ ডলার” এই সংখ্যার প্রতিক্রিয়ায়, আপনার মাথায় এই চিন্তা আসতে পারে যে অনেক উন্নয়নশীল দেশে, শিল্পোন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক সস্তায় জীবনধারন করা যায়। হয়ত আপনি নিজেও সেভাবে কাটিয়ে এসেছেন, ব্যাকপ্যাক কাঁধে সারাবিশ্ব ঘুরেছেন, যতটুকু সম্ভব মনে করেছিলেন তার থেকেও কমে জীবনধারন করেছেন। তাই আপনার মনে হতে পারে যে দারিদ্রতার এই ধাপ এই একই পরিমান অর্থে যুক্তরাষ্ট্র বা যেকোন শিল্পোন্নত দেশে বসবাস করা থেকে কম চরমভাবাপন্ন। যদি এই ধরনের কোন চিন্তা আপনার মাথায় এসে থেকে, আপনি তা এখনি বিতাড়িত করুন, কারন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ইতিমধ্যেই ক্ষমতা ক্রয়ের হিসেব সমন্বয় করে ফেলেছেঃ তার পরিসংখ্যান দৈনিক ভোগকৃত মোট দ্রব্য এবং শ্রমের উপর জীবনধারন করা জনসংখ্যার দিকে নির্দেশ করে – হতে পারে তা আয়কৃত অথবা উৎপাদনকৃত – যা ১.২৫ ডলারে যুক্তরাষ্ট্রে দ্রব্য ও শ্রম কেনার পরিমানের সাথে তুলনা প্রদান করে।
উচ্চবিত্ত সমাজে, বেশিরভাগ দারিদ্রতাই আপেক্ষিক। মানুষ নিজেকে গরীব মনে করে কারন টিভির বিজ্ঞাপনে দেখানো ভালো ভালো অনেক জিনিসই তাদের বাজেটের বাইরে – কিন্তু তাদের সবারই টিভি আছে। যক্তরাষ্ট্রে, সেনসাস ব্যুরোর শ্রেনীকৃত ৯৭ ভাগ গরীব জনগন কালার টিভির মালিক। তাদের তিন চতুর্থাংশ একটা গাড়ীর মালিক। তিন চতুর্থাংশের এয়ার কন্ডিশনার আছে। তিন চতুর্থাংশের ভিসিয়ার অথবা ডিভিডি প্লেয়ার আছে। তাদের সবারই স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ আছে। আমি এই পরিসংখ্যানগুলো উদ্ধৃত করে এটা বলতে চাচ্ছি না যে আমেরিকার গরীব জনগোষ্ঠী প্রকৃত কোন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখিন হননা। তবু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিশ্বের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর তুলনায় তাদের পরিস্থিতির কাঠিন্য ভিন্ন শ্রেনীর। ১.৪ বিলিয়ন চরম দরিদ্রতায় বসবাসরত জনগোষ্ঠী যারা সবচেয়ে মৌলিক মানবিক চাহিদার ভিত্তিতে দরিদ্রতার পরম মানদণ্ডে দরিদ্র। প্রত্যেক বছরের কিছু অংশ তারা অভুক্ত থাকার সম্ভাবনায় থাকে। যদি তারা উদর পুর্তি করার মত যথেষ্ট খাবার জোগাড় করতেও পারে, তারা খুব সম্ভবত অপুষ্ট থাকবে কারন তাদের খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর পদার্থসমূহ নেই। শিশুদের ক্ষেত্রে, পুষ্টিহীনতা বিকাশ রুদ্ধ করে এবং মস্তিষ্কে স্থায়ীভাবে ক্ষতিসাধন করতে পারে। দরিদ্র জনগনের পক্ষে হয়ত তাদের শিশুদের স্কুলে পাঠানোর মত সামর্থ নেই। এমনকি সবচেয়ে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা তাদের নাগালের বাইরে।
এই ধরনের দারিদ্রতা মৃত্যু ঘটায়। ধনী জাতীসমূহে গড় আয়ুকাল ৭৮ বছর; দরিদ্রতম জাতীসমূহে, যারা আনুষ্ঠানিকভাবে “সবচেয়ে অনুন্নত”, গড় আয়ুকাল হচ্ছে ৫০ বছর। ধনী দেশসমূহে, একশততে এক জনেরও কম শিশু পাঁচ বছর বয়সের আগে মারা যায়; দরিদ্রতম দেশগুলোতে, প্রতি পাচ জনে এক জন মারা যায়। এবং ইউনিসেফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ১০ মিলিয়ন অল্পবয়সী শিশু মারা যায় প্রতিবছর পরিহারযোগ্য, দারিদ্রতা সম্পর্কিত কারনে, এর সাথে যোগ করতে হবে আমাদের কমপক্ষে আরো ৮ মিলিয়ন বয়স্ক শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের।
আজকের প্রাচুর্য
মোটামুটিভাবে ১.৪ বিলিয়ন চরম দরিদ্রতায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর সাথে মিল রেখে, প্রায় ১ বিলিয়ন জনগোষ্ঠী এমন স্তরের প্রাচুর্যের মাঝে বসবাস করছেন যা আগে শুধু রাজামহারাজা আর অভিজাত মানুষদের ক্ষেত্র ছাড়া দেখা যেত না। ফ্রান্সের রাজা, চতুর্দশ লুই, “সূর্যরাজ”, তার ইউরোপের দেখা সবচেয়ে জাঁক-জমক-পূর্ণ রাজপ্রাসাদ তৈরী করার সামর্থ্য ছিল, কিন্তু গরমের দিনে সেটাকে সেইভাবে ঠান্ডা রাখতে পারতেন না যেরকম শিল্পোন্নত দেশের মধ্যবিত্ত লোকজন আজকে নিজেদের বাসাকে ঠান্ডা রাখে। তার মালীরা, তাদের সব দক্ষতা নিয়েও, সেসব তাজা ফল আর শাকসব্জী উৎপাদন করতে পারেননি যা আমরা আজকে সারাবছর ধরে কিনে থাকি। তার যদি দাঁত ব্যাথা হত, কিংবা অসুস্থ হয়ে পড়তেন, সবচেয়ে সেরা দন্তচিকিৎসক আর ডাক্তার তার জন্য যা করতে পারতেন তা আজ আমাদের শুনে ভয়ে কেঁপে উঠতে হয়।
কিন্তু আমরা শুধু শতশতবছর আগের রাজার থেকেই ভালো আছি তা নয়। আমরা আমাদের নিজেদের প্রপিতামহদের থেকেও অনেক ভালো আছি। শুরুতেই, আমরা তাদের থেকে আরো ত্রিশ বছর বেশি বাচবার আশা করতে পারি। একশ বছর আগে, দশজন শিশুর মধ্যে একজন শৈশবকালেই মৃত্যুবরণ করত। এখন, বিত্তশালী দেশগুলোতে, এই সংখ্যা ২০০ তে এক জনেরো কম। আমরা কতটুকু ধনী তার আরকটি উল্লখযোগ্য নির্দেশক হলো আমাদের মৌলিক খাদ্য আহরনের জন্য আমাদের যে সামান্য কয়েক ঘন্টা আমাদের কাজ করতে হয়। আজকে আমেরিকানরা, গড়ে, তাদের আয়ের শতকরা ৬ ভাগ খাদ্য ক্রয়ের জন্য খরচ করে থাকেন। তারা যদি সপ্তাহে চল্লিশ ঘন্টা কাজ করে থাকেন, এক সপ্তাহের খাদ্য আহরনের পরিমান আয় অর্জন করার জন্য তাদের বড়জোর দুই ঘন্টা কাজ করতে হয়। যা ভোগ্যপণ্য, বিনোদন, আর অবকাশ যাপনের জন্য যথেষ্ট পরিমান অর্থ বাকী রেখে দেয়।
আর এরপর আমাদের আছে অতিধনী জনগোষ্ঠী, যারা প্রাসাদসম বসতবাড়ী, হাস্যকররকম বিশাল এবং বিলাসবহুল তরী, আর ব্যক্তিগত বিমানের পেছনে তাদের অর্থ খরচ করেন। পৃথিবীতে এখন ১,১০০ জনেরও বেশী বিলিওনিয়ার রয়েছে, যাদের সম্মিলিত ধনের পরিমান ৪.৪ ট্রিলিওন ডলার। এই ধনের পরিমান ২০০৭ সালে বৃদ্ধি পায় আরও ৯০০ বিলিয়ন ডলার। এইসব মানুষদের সরবরাহের জন্য, লুফটহ্যানসা টেকনিক ব্যক্তিগত মডেলের নতুন বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার ডিজাইনের প্ল্যান প্রকাশ করেছে। বানিজ্যিক সার্ভিসে, এই প্লেনে ৩৩০ জন প্যাসেঞ্জারের সিট সংস্থান করতে পারে। ব্যক্তিগত ভার্সনে সিট থাকবে ৩৫ টা, ১৫০ মিলিওয়ন ডলার দামে। দাম কথা বাদ দিলাম, এরকম অল্পসংখ্যক লোকবহনকারী বিশাল বিমানে কিনে নিজের আত্ম অহামিকা দিয়ে বিশ্ব উঞ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান করার মত ব্যাপারই হয় না। আপাতদৃষ্টিতে, বেশ কয়েকজন বিলিয়নিয়ার আছেন যারা ৭৪৭ থেকে শুরু করে নিচের দিকের বিভিন্ন কমার্শিয়াল সাইজের প্রাইভেট বিমানে চড়ে ঘুরে বেড়ান। ল্যারি পেইজ আর সের্গেই ব্রিন, গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, একটা বোয়িং ৭৪৭ কিনে সেটাকে প্রাইভেট কাজে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেন বলে বিবরন আছে। কিন্তু সবচেয়ে দৃষ্টিগোচরভাবে অর্থ এবং সম্পদ অপচয় করার ক্ষেত্রে আনুশেহ আনসারীকে হারানো মুশকিল, তিনি একজন ইরানিয়ান-আমেরিকান টেলিযোগাযোগ উদ্দোক্তা যিনি ১১ দিনের মহাকাশ ভ্রমনের জন্য বিবরন অনুসারে ২০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন। কমেডিয়ান লিউইস ব্ল্যাক, জন স্টুয়ার্টের ‘ডেইলি শো’ তে বলেছিলেন অনুশেহর এটা করার কারন হলো এটা “তার জীবনের লক্ষ্য অর্জনের একমাত্র উপায় - সে পৃথিবীর প্রত্যেকটা অভুক্ত মানুষের উপর দিয়ে উড়ে যেতে যেতে চিৎকার করে বলতে পারবে ‘হেই, দেখ আমার টাকা আমি কিভাবে খরচ করছি!’ ”
আমি যখন এই বইটা নিয়ে কাজ করছিলাম, আমার নিউ ইয়র্ক টাইমসের রবিবারের কাগজের ভেতর থেকে একটা বিজ্ঞাপন ক্রোড়পত্র খসে পড়েঃ একটা আটষট্টি পাতার মসৃণ, উজ্জ্বল ম্যাগাজিন। রোলেক্স, প্যাটেক ফিলিপ্প, ব্রেইটলিং, এবং আরো বিলাসবহুল সব ব্র্যান্ডের হাতঘড়ির বিজ্ঞপনে ভর্তি। বিজ্ঞাপনগুলোতে কোন দামের উল্লেখ ছিল না, কিন্তু ম্যাকানিকাল হাতঘড়ির পুনঃপ্রচলন সম্বন্ধে একটা হালকা প্রবন্ধ নিচের সারির দামের একটা ধারনা দেয়। সুলভ কোয়ার্টজ ঘড়ি খুবই নির্ভুল এবং কার্যকরভাবে সময় রক্ষা করে এই কথাটি স্বীকার করার পর, প্রবন্ধটি মত পোষন করে “যান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে একটা আকর্ষনী ব্যাপার আছে।” ঠিক, কিন্তু এই আকর্ষনীয় একটা কিছু কবজীতে ধারন করতে আপনার কত খরচ করতে হবে? “আপনার মনে হতে পারে মেকানিকাল হাতঘড়ি কেনা সুলভ প্রস্তাব, কিন্তু ৫০০ থেকে ৫০০০ ডলারের মধ্যে অনেক পছন্দ রয়েছে।” স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, “এই শুরুর দিকের দামের মডেলগুলো খুবি সাধারনঃ সাধারন গতি, সাধারন সময় দেখানো, সাধারন কারুকাজ ইত্যাদি।” এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি বিজ্ঞাপনের বেশিরভাগ হাতঘড়ির দাম ৫০০০ ডলারের উপরে, বা একটা নির্ভরযোগ্য, নির্ভুল কোয়ার্টজ ঘড়ির জন্য কাউকে যে দাম দিতে হবে তার থেকে ১০০ গুনেরও বেশী। এই সব উৎপন্ন দ্রব্যের যে বাজার আছে-এবং তা নিউ ইয়র্ক টাইমসের বিশাল পাঠকের কাছে এত খরচ করে বিজ্ঞাপন দেওয়ার উপযুক্ত-তা আমাদের সমাজের বৈভবের আরেকটি নিদর্শন।
আপনি যদি অতিধনীদের বাড়াবাড়ি দেখে মাথা নাড়তে থাকেন, তবে বেশী জোরে নাড়বেন না। গড়পড়তা আয় নিয়ে কিছু আমেরিকানরা কিভাবে তাদের টাকা খরচ করে তা নিয়ে একটু চিন্তা করে দেখুন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব জায়গায়, এক পেনির থেকে কমে আপনি আপনার নির্দেশিত দৈনিক আট গ্লাস পানি ট্যাপ থেকে পেতে পারবেন, যেখানে এক বোতল পানিতে আপনার খরচ হবে ১.৫ ডলার বা আরো বেশী। এবং এর উৎপাদন এবং পরিবহনের দরুন যে শক্তির অপচয় হচ্ছে তা নিয়ে যে পরিবেশগত উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে তা সত্ত্বেও আমেরিকানরা এখনও বোতলজাত পানি কিনছেঃ ২০০৬ সালের ৩১ বিলিয়ন লিটারের বেশী কেনার হারের সমান তালে। আমাদের কফি আসক্তি আমরা কতভাবে পূরন করি তা নিয়েও চিন্তা করুনঃ তিন ডলার বা তার থেকেও বেশী ল্যাট-এর পেছনে খরচ না করে মাত্র কয়েকপেনির বিনিময়ে আমরা ঘরেই কফি তৈরী করে নিতে পারি। অথবা আপনি কি কখনও ওয়েটারের অনুরোধে আসতর্কভাবে হ্যা বলে দ্বিতীয় সোডা বা আরেকগ্লাস ওয়াইনের অর্ডার দিয়েছেন যেটা আপনি শেষ করেননি? আর্কিওলজিস্ট ড.টিমোথি জোনস, ইউএস সরকারের অর্থায়িত খাদ্য অপচয়ের উপর একটা গবেষনা করেন, তিনি খোজ পান যে শতকরা ১৪ ভাগ গৃহবর্জ্য হচ্ছে একদম ভালো খাবার যেটা তার প্রকৃত প্যাকেজেই থাকে এবং তারিখও পার হয়ে যায়নি। এসব খাবারের অর্ধেকেরো বেশী হচ্ছে শুকনো প্যাকেটজাত অথবা ক্যানজাত দ্রব্য যেটা অনেকদিন ধরে থাকে। জোনসের মতে, প্রতি বছর যক্তরাষ্ট্রে ১০০ বিলিয়ন ডলার পরিমান খাদ্য বিনষ্ট হয়। ফ্যাশন ডিজাইনার ডেবোরাহ লিন্ডকুইস্ট দাবী করেন গড়পড়তা একজন মহিলা ৬০০ ডলারের বেশী দামী কাপড়চোপড়ের মালিক যেটা সে গত বছরে একবারো পরিধান করেননি। সঠিক পরিসংখ্যান যাই হোক না কেন, এটা বলা যুক্তিসঙ্গত হবে যে আমরা প্রায় সবাই, পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে, দরকার নেই এমন জিনিস কিনি, এবং তাদের কিছু কিছু আমরা কখনই ব্যবহার করি না।
আমরা বেশিরভাগই প্রায় নিশ্চিত যে ডুবন্ত একটা শিশুকে বাচাতে আমরা ইতঃস্তত করব না, এবং নিজেদের যথেষ্ট পরিমান ক্ষতির বিনিময়ে তা আমরা করতে রাজি আছি। তারপরো যখন প্রতিদিন হাজার হাজার শিশু মৃত্যুবরন করছে, আমরা অবধারিত মনে করে এমন কিছু জিনিসের জন্য অর্থ ব্যয় করছি যেগুলো যদি নাও পাওয়া যেত আমরা প্রায় খেয়ালই করতাম না। এটা কি অন্যায়? যদি তাই হয়, আমরা গরীব জনগনের প্রতি কত দূর পর্যন্ত দায়বদ্ধ?
মন্তব্য
খুব ভালো লাগলো পড়ে।
আপনি ভাই, বইটার অনুবাদ সিরিজ আকারে চালাতে পারেন। আমরা হয়তো কিছু বিষয় ধারণা করি, যা এখানে তথ্য উপাত্ত হয়ে চলে এসেছে। এবং নতুনভাবে চিন্তা করতে হয়তো শেখাবে আমাদের। বিষয়টা আসলেই কৌতুহলজনক এবং প্রয়োজনও।
আশা করবো আপনি পরের অংশগুলো পড়ার সুযোগ করে দেবেন। এজন্য আগাম কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাখি। এবং কষ্টকর একটা কাজ শুরুর জন্য অভিনন্দন জানাই।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ধন্যবাদ রণদা। আমারো প্রচন্ড ইচ্ছা আছে বইটা শেষ করার। হাতে পেলে অবশ্যই বাকীটুকুও ধীরে ধীরে কভার করব।
___________________________________
স্বপ্ন নয়, - শান্তি নয়, - কোন এক বোধ কাজ করে মাথার ভিতরে!
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
কান্টিয়ানিজম আর ইউটিলিট্যারিয়ানিজম নিয়ে কিছুটা ঘেঁটেছিলাম এক সময়। দ্বিতীয় পথটি আনন্দ-বেদনা দিয়ে নীতিকে সংজ্ঞায়িত করে, এবং সেই সংজ্ঞা পশুদের প্রতিও অনেক অধিকার দেওয়ার কথা বলে। সবই ভাল।
পিটার সিঙ্গার এই পথেরই পথিক। বিখ্যাত ব্যাক্তি। তাঁর লেখা ভাল লাগতো বেশ।
কিন্তু সেই ক্লাসেই শুনেছিলাম তাঁর একটি সাক্ষাৎকারের কথা। ১৯৭৪ সালের দিকের কথা সম্ভবত। বাংলাদেশে তখন দুর্ভিক্ষ চলছিল। তিনি কোন এক টক শো'তে মত দিয়েছিলেন, বাংলাদেশিদের না খেয়ে মরতে দেওয়া উচিত। কারণ, এই বিস্ফোরিত জনসংখ্যা ৩০ বছর পর দেশটাকে আরো ক্ষতির মুখোমুখি করবে।
অতএব, সংখ্যাগরিষ্ঠের সর্বোচ্চ আনন্দকে বাড়ানো এবং সংখ্যালঘিষ্ঠের সর্বোচ্চ বেদনাকে কমানোর ভড়ং-এর গণিতে মতামত দেওয়া হল অনাহারে মানুষ মরতে দেওয়ার।
সেই থেকে এই ব্যাক্তির ধার দিয়েও যাই না আমি। এই পোস্টে কিছুটা এগিয়ে মেজাজ আরো ক্ষেপে গেল। এই লোক পশু নিয়ে এত কথা বলে, অথচ আমাদের একটা সময় পশুর মর্যাদা(?)-ও দেয়নি।
এটা মনে হয় অতিশয় তাত্ত্বীক চিন্তাভাবনার প্রভাব যেটা পারিপার্শিক বাস্তবতাকে ঘোলাটে করে দেয়। আমি পজিটিভলি দেখার চেষটা করছি। নিদেনপক্ষে এখন তো তিনি তার চিন্তাভাবনার গতি এখন এইখাতে প্রবাহিত করছেন এবং এটা একটা শক্তিশালী প্রভাব ফেলবে পশিমা বিশ্বে নিঃসন্দেহে।
___________________________________
স্বপ্ন নয়, - শান্তি নয়, - কোন এক বোধ কাজ করে মাথার ভিতরে!
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
দারুণ নাভেদ, চালিয়ে ষা গুরু
--------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
থ্যাংক্স কৌশিক।
___________________________________
স্বপ্ন নয়, - শান্তি নয়, - কোন এক বোধ কাজ করে মাথার ভিতরে!
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
খুভ ভাল অনুবাদ, বিষয়টা ভাল নির্বচণ করেছেন।
অভিনন্দন!
সবাই ভেবে দেখলে গরীব জনগনের অনেক কষ্টের লাঘব হতো অনেক খানি।
পারলে পুরো বইটা অনুবাদ করে ফেলুন।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আশা করছি পুরো বইটার অনলাইন সংসকরন শিগগীরি পেয়ে যাব। অনুবাদ ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ।
___________________________________
স্বপ্ন নয়, - শান্তি নয়, - কোন এক বোধ কাজ করে মাথার ভিতরে!
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
সুদীর্ঘ এই লেখার অনুবাদ করায় একটা ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য- আশা করি অচিরেই আরো অনুবাদ আসবে।
...আর ইশতি ভাইয়ের কথায় মনে পড়লো, এই উক্তির কথা আমিও শুনেছি- কিন্তু এটি পিটার সিঙ্গারের করা এটা জানা ছিলো না; সে ক্ষেত্রে তার চিন্তার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
ধৈর্য্যধরে লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ। জ্বী, আরো অনুবাদ আসবে শীঘ্রই।
___________________________________
স্বপ্ন নয়, - শান্তি নয়, - কোন এক বোধ কাজ করে মাথার ভিতরে!
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
নৈতিকতার দর্শন আমাকে সব সময়েই ধাঁধায় ফেলে দেয়। লেখকের "এটা কি অন্যায়?" প্রশ্নটার কোন যুক্তিসঙ্গত উত্তর দেয়া সম্ভব বলে মনে হয় না। লেখকের ডুবন্ত শিশুকে বাঁচানোর উপমা নিতান্ত বিবর্তনজাত জৈবিক প্রতিক্রিয়া বলে আমার মনে হয়। যদিও মোটামুটি সব প্রজাতিতেই এই প্রতিক্রিয়া দেখা যায় কিন্তু তা কাজটাকে মহৎ করে না (যদি বাচ্চাটা হিটলারের ছোটবেলা হয়!!)।
সেই সাথে একটা ইনহেরেন্ট এসাম্পশন আছে লেখকের যে মানুষের ধনী বা গরীব হবার ব্যপারটা বিশুদ্ধ দৈবপ্রসুত। কেন ধনীরা দান করবে তার কোন ভাল যুক্তি দেখলাম না...
ভালো লাগলো, চলুক।
সুপার! পরিসংখ্যান দেয়া অংশগুলো বেশি ভাল লেগেছে! এই পৃথিবী এখন অনেক ধনী পৃথিবী, জনসংখ্যার বিশাল বৃদ্ধি সত্ত্বেও, এবং সেটাই আশার ব্যাপার। আশা করি সামনের সমস্যাগুলোও মানবজাতি সমাধান করতে পারবে।
নতুন মন্তব্য করুন