১৭ মে। মরগানটাউন।
আজ সকালে বিল-এর মেইল পেলাম। লিখেছে -
হ্যালো,
আমি আনন্দিত যে তুমি এপালাচিয়ান ওয়াইল্ডারনেস এডভেঞ্চারে সাইন আপ করেছ। আশা কারি আমাদের সময়টা বেশ মজায় কাটবে! যেহেতু হাতে এক সপ্তাহ সময় আছে আমাদের কি কি জিনিস সাথে করে নিতে হবে তা লিখে দিচ্ছি। কোন প্রশ্ন থাকলে দয়া করে জানিও। বৃষ্টি হতে পারে, তাই পঞ্চো বা রেইন কোট আনলে ভালো হবে। আর ট্রেইলে ব্যবহৃত জুতো। ইতি -
বিল সান্ডস্ট্রম
সাথে ডকুমেন্টে আরো বিভিন্ন জিনিস যেমন কি ধরনের জামা কাপড়, জুতো-মোজা, স্লিপিং ব্যাগ ইত্যাদি সম্পর্কে দীর্ঘ বর্ণনা। মনটা খুশি খুশি লাগছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে চিত্র থেকে মানুষের মুখমন্ডলী নির্ণয় করার যে নতুন পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছিলাম আজকে তা শেষ হয়েছে। দিনের পর দিন ল্যাবে প্রায় চব্বিশ ঘন্টা ব্যয় করে কাজটা দাঁড় করাতে হয়েছে। শরীর এবং মন দুটোই ক্লান্ত । এ মূহুর্তে সবকিছু ছেড়ে কোথাও বেরিয়ে আসতে পারলে ভালো হয়। আপালাচিয়ান ট্রেইল আমেরিকার অন্যতম বিখ্যাত পায়ে হাটা পথ বা হাইকিং ট্রেইল। ২,২০০ মাইল বিস্তৃত এই ট্রেইল শুরু হয়েছে জর্জিয়ার স্প্রিঙ্গার মাউন্টেইন থেকে, শেষ হয়েছে মেইন-এর মাউন্ট কাটাহডিন-এ। ১৪ টা স্টেট বা অঙ্গরাজ্যের ভেতর দিয়ে গেছে এই ট্রেইল। বেশিরভাগ সময় এই ট্রেইল চলে গেছে জঙ্গল বা বন্য-জায়গার মধ্য দিয়ে, আবার কিছু কিছু জায়গায় শহর, খামার আর রাজপথের উপর দিয়ে। আমরা যাচ্ছি এই ট্রেইলের মাঝামাঝি অংশে। যেটা পেন্সিলভেনিয়ার পাইনগ্রোভ স্টেট পার্ক আর মিশোও স্টেট ফরেস্টের ভেতর দিয়ে গেছে। এখানে থাকব আমরা পাঁচদিন। প্ল্যান হলো পোল স্টীপল আর এপালাচিয়ান ট্রেইল মিডল পয়েন্ট হাইক। সেই সাথে লরেল লেকে আর লং পাইন রান রিজারভেয়ার এ মাছ ধরা আর ক্যানোউ চালানো । সবশেষে পাইনগ্রোভ ফারনেস মিউজিয়াম আর এর আশপাশের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো ঘুরে দেখা। ইউনিভার্সিটির আউটডোর রেক সেন্টার থেকে ভাড়া করে নিয়েছি অল সিজন স্লিপিং ব্যাগ আর স্লিপিং ম্যাট । তাবু, ফিশিং পোল, ক্যানোও সাপ্লাই দিচ্ছে গাইডরা। এই ট্রিপে তিনটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র-শিক্ষক-স্কলাররা একত্রিত হবে, আমাদের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অভ উইস্কনসিন আর পেন স্টেট। গাইড হিসেবে চাক আর বিল ছাড়াও থাকছে বিলের স্ত্রী ডওন। আর পেনস্টেট থেকে আগত হাশিখুশি মজার মানুষ ক্রিস কানিঙ্গহাম, আর তার সাথে শান্ত ভদ্রগোছের মানুষ জে রিপসাম। আশা করি সময়টা ভালোই কাটবে।
২৪ শে মে। পাইন গ্রোভ স্টেটপার্ক, গ্রুপ ক্যাম্পিং এরিয়া।
বেশ লম্বা এক্টা দিন গেল। রাত নেমে গেছে। সবাই ঘুমানোর তোরজোড়ে ব্যস্ত। এই ফাঁকে ক্যাম্পের আগুনের আবছা আলোতে লিখে ফেলছি আজকের ঘটনাবলী। বেশ সকালে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম ব্যাগ কাঁধে। উঠবো চাক-এর বাসা থেকে ভাড়া করা মাইক্রোবাসে। গিয়ে দেখি চাক এর স্ত্রী জিনি-ও যাচ্ছে আমাদের সাথে। সেখান থেকে রওনা দিয়ে একে একে বাসে এ তুলে নিলাম কয়েকজন চিনা সহযাত্রীকে। এদের সবাই হয় পিএইচডি-এর ছাত্র অথবা ভিজিটিং সকলার। মরগানটাউন থেকে রওনা দিলাম পাইন গ্রোভ স্টেট পার্কের উদ্দেশ্যে। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা ড্রাইভ শেষে পৌছালাম পাইনগ্রোভ স্টেট পার্কের গ্রুপ ক্যাম্পিং এরিয়ায় । জিনিসপত্র গাড়ি থেকে নামিয়ে এক জায়গায় জড়ো করা হলো। গাড়ি পার্কিং এরিয়ার আশপাশে উচু ঘাসের কিছু পতিত জমি। সেগুলো পার হলেই লম্বা গাছের সারি। সেইখানেই আমাদের ক্যাম্পিং গ্রাউন্ড। এবার তাঁবু খাটানোর পালা। গাছের ফাকে অল্প ফাকা জায়গায় খাটানো হবে তাবু। আমাদের জন্য নির্ধারন করা এরিয়া সি -তে টাঙানো হবে ছোট বড় ছয়টা তাবু। এর মধ্যে পাচটা ঘুমোবার জন্য। ষষ্ঠ তাবুটা বেশ বড়, টাঙানো হবে কাঠের বেঞ্চগুলোর উপরে সামিয়ানার মত করে, খাবার দাবার, রান্নার জিনিসপাত্রি রাখা হবে এর নিচে। তাবুগুলো বেশ আধুনিক এবং নির্দেশনাগুলো মানলে খুব সহজেই দ্রুত টাঙিয়ে ফেলা যায়। প্রথমেই যেটা করতে হয় সেটা হলো এমন একটা জায়গা ঠিক করা যেখানে বৃষ্টির পানি জমে থাকার সম্ভাবনা কম, একটু ঢালু এবং উপরে খোলা আকাশ এইরকম জায়গা আদর্শ। প্রথমেই বড় এক্টা তেরপল বিছাতে হয় মাটিতে, এর উপর তাবুটাকে বিছিয়ে , নরম মাটি দেখে খুটি গেড়ে দিতে হয় চারপাশে, ছোট হাতুড়ি বা ম্যালেটের সাহায্যে। তারপর এক ধরনের ভাঁজ করা যায় এরকম নমনীয় দুটো রড তাবুর দুই পাশ দিয়ে আড়াআড়ি পর্দার কাপড় টাঙানোর মত করে ঢুকিয়ে দিতে হয় । এই গুলো ছাদকে ধরে রাখে। বাস হয়ে গেলো তাবু রেডি। এরপর চাইলে মাথার উপর বৃষ্টিরোধক তেরপল দেওয়া যায়, ইত্যাদি।
ছবিঃ আমাদের তাবু ।
তাবুর একপাশে গাছের সাথে বাঁধা হলো তিনটে ক্যাম্পিং হ্যামক। ক্যাম্পিং হ্যামকের রকমফের আছে। কিছু প্রশস্ত , কিছু শুধু একজনের শরীর ফিট করে এরকম। আমাদেরগুলো দিত্বীয় শ্রেণীর। এগুলোতে ধুপ করে বসে পড়লে বিপত্তি। উলটে পড়ে যেতে হতে পারে। নিয়ম হচ্ছে সাবধানে একপাশে বসে তারপর দু'পা একপাশে আর মাথে আরেকপাশে , মানে কিছুটা কোনাকোনি ভাবে শোয়া যাতে দুদিকে ভারসাম্য হয়। হাইকিং সেরে এতে শুয়ে দুলে দুলে আরাম করা মজাই আলাদা!
ছবিঃ হ্যামকে শুয়ে শুয়ে ফটোসেশান।
যাহোক, তাবু গাড়া আর হ্যামক বাধা শেষ হতে না হতেই বিল শুরু করলো আগুন জ্বালানোর আয়োজন, রান্নার জায়গার পাশেই আশপাশ থেকে কাঠের চেলা আর ভাঙা ডাল নিয়ে এসে তাতে লাইটার ফ্লুইড ঢেলে দিয়ে জ্বালানো হলো আগুন। বনের ভেতর একটু ঠান্ডা ঠান্ডা আবহ, আগুনের পাশে বসতেই আরাম। সবাই জড়ো হলাম। বিল বলা শুরু করলো আমাদের প্ল্যান, আগামীকাল হবে পোল স্টীপ্ল আউটলুক ট্রাইলে হাইকিং, তারপর চাইলে ফুলার লেকে সাতার কাটতে পারি। ক্যাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে খুব কাছে। তৃতীয় দিন আমরা যাব মিশোউ স্টেট ফরেস্ট মাউন্টেইন ক্রিক ট্রেইল হাইকিং করে আপালাচিয়ান ট্রেইল এর মিডল পয়েন্ট এ পৌছানো। চতুর্থ দিন লরেল লেক এ মাছ ধরা। আর ক্যানুতে করে মাছ শিকার। শেষ দিনে আমরা ঘুরবো এপালাচিয়ান মিউজিয়াম এবং এর আশপাশ অথবা ক্যাম্পিং গ্রাউন্ডের চারপাশের বনে ট্রেকিং করে দিনশেষে তাবুগুটিয়ে ফেরত যাত্রা। রান্নাবান্নার জন্য বের করা হলো কাস্ট আয়রন নির্মিত হাড়ি । এগুলো ওভেনের মত ব্যবহার করা যায়। গ্যাসের চুলা প্রচলিত হবার আগে এগুলো ব্যবহার হত। স্টোভের মাধ্যমে উত্তপ্ত করা কয়লার গোলা ঢাকনির উপর রেখে এই হাড়িগুলোকে গরম করা হয়। আমরা মূলত এটা ব্যবহার করলাম, প্যানকেক, মাংসের স্টু - এসব রান্নায়। দীর্ঘযাত্রায় সবাই ক্লান্ত । বনের মধ্যে ঝপ করে নেমে এলো রাত। খাওয়া শেষ করে তাবুতে গিয়ে ঢুক্লাম। ঘুমাবার ম্যাটের উপর স্লিপিং ব্যাগ বিছিয়ে তার ভেতর ঢুকে পড়লাম।
ছবিঃ ক্যাম্পফায়ারের জায়গা আর আশপাশ। পেছনে আমাদের তাবুগুলো।
২৫ শে মে। পোল স্টীপ্ল ভিস্টা।
কফি কাপ আর চামচের টুং টাং শব্দ আর লোকজনের কথাবার্তার শব্দে ঘুম ভাঙলো। তাবু থেকে বেরিয়ে দেখি , সকালের নাস্তার দায়িত্ব যারা তারা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। যাহোক আস্তে আস্তে সবাই উঠে পড়লে , নাস্তার পালা শেষ করে সবাই গাড়িতে উঠে পড়লাম। উদ্দেশ্য লেক লরেলের পেছনে, পোল স্টীপ্ল ট্রেইলের শুরুতে পৌছা। সেখান থেকে প্রায় দেড় মাইল হেটে আমরা পৌছাব পোল স্টীপ্ল ভিস্টার গোড়ায়। পোল স্টীপ্লকে বলা হয় পেন্সিল্ভেনিয়া রাজ্যে দ্য পিন্নাকল এর পরপরই সবচেয়ে নাট্যময় চূড়া। আশি ফিট উচু খাড়া চূড়ো। এর মাঝখানের অংশ ধাপে ধাপে বেরিয়ে আছে বর্শার ফলার মত যেটাকে আউটক্রপিং বলে । পাহাড়ের নাম পোল স্টীপল এই বৈশিষ্টের জন্যই। পাইন গ্রোভ ফার্নেস স্টেট পার্কের মধ্যে অনেক বিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থিত দক্ষিন পর্বত্মালার এক্টা অংশ হলো পোল স্টীপল । গেটিসবার্গের ঠিক পশ্চিমে এর অবস্থান। খুব ছোট কিন্তু খাড়া হাটাপথে দিয়ে এর চূড়ায় পৌছাতে পারলে বেশ সুন্দর দৃশ্য অবলোকন করার সুযোগ হয়। দক্ষিন পর্বতের মাঝামাঝি অংশের একটা দারুন দৃশ্য দেখা যায় এখান থেকে। দক্ষিন পশ্চিমে তাকালে দেখা যায় সানসেট রক নামে আরেকটা আউটক্রপিং । নিচে তাকালে দেখা যাবে লরেল লেক, এর বালুময় ক্ষুদ্র সৈকত আর বাধ। পোল স্টীপলের উপর উঠতে যে ট্রেইল আছে সেটা ঘুরে ঘুরে উপরে উঠে গেছে । বেশ অনেক্টুকু তাই হেটেই যাওয়া যায়। ট্রেকিং স্টিক থাকলে হাটতে সুবিধা যেহেতু রাস্তার পুরোটাই উচু থেকে উচুতে উঠে গেছে। শেষের বিশ ফিটের মত অংশ উঠতে লাগবে চার হাত পায়ের সাহায্য। খাড়া অংশে পাথরের উপর হাত রেখে পাথেরের ফাকের সংকির্ন অংশ দিয়ে উঠে যেতে হবে। বেশি কঠিন কিছু না, তবে প্রথমবার দেখতে বেশ কঠিন বলে মনে হয়। যাই হোক, শেষমেষ উঠে চারপাশের দৃশ্য দেখে আমি মুগ্ধ, সেইসাথে সবাই। চুপচাপ বসে খাদের কিনারায় এই অপরূপ দৃশ্য দেখতে থাকলাম আমরা সবাই। ঘন সবুজের সমারোহ মখমলের বিস্তৃত যতদূর চোখ যায়। আর দূরে ধূসর পাহাড়ের সারি। এর মাঝে আকাশের সবটুকু নীল নিয়ে গভীর সবুজের মাঝে চোখ মেলে আছে লরেল লেক। অপূর্ব ।
ছবিঃ পোল স্টীপ্লের খাড়া অংশে ওঠার সময়।
ছবি পোল শ্তীপলের উপরে । পিছনে লরেল লেক।
দুপুরের খাবার খাচ্ছি। স্যান্ডউইচ, চিপ্স আর আপেল। এমন সময় হঠাৎ বিল ডাক দিলো,
"যদি পাহাড়ী সাপ দেখতে চাও এদিকে আস জলদি।"
আউটক্রপিং এর আরেকটা অংশে উঠে দেখি, বিল আংগুল দিয়ে একটা ঝোপের দিকে ইশারা করছে, কাছে গিয়ে ভালো করে দেখি ঝোপের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে লাল সাদা ডোরা। বিল বলে উঠলো,
“কপারহেড স্নেক, গরম তপ্ত পাথরের উপর এরা ঘুমাতে পছন্দ করে। এর বিষ প্রাণঘাতি। তবে আমরা তাকে বিরক্ত না করলে সেও কিছু করবে না।”
নিরাপদ দূরত্ব থেকে আমরা দেখতে থাকলাম সরিসৃপ্টাকে। আস্তে আস্তে বেলা গড়িয়ে এলে ফেরত যাবার পালা। এবার ভিন্ন আরকেটা রাস্তা ধরে আমরা গাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করলাম। ফেরার পথে থামলাম ফুলার লেকে । এখানে ক্যাম্পবাসীদের জন্য স্নানেরঘর আছে। সেই সাথে ফুলার নামে ছোট্ট এক্টা লেকে সাতার আর এর বিচে রোদ পোহানোর সুবিধাও রয়েছে। কিছুক্ষন পানিতে নেমে সাতার কেটে শরীরকে চাংগা করে নিলাম। তারপর গোসল সেরে ফিরলাম ক্যাম্পগ্রাউন্ডে। হাত লাগালাম রাতের খাবার তৈরীতে। রাতের খাবার সারতে সারতে চারিদিক অন্ধকার হয়ে এল। ক্যাম্পের মাঝখানে আগুন জ্বলছে, তাকে ঘিরে চেয়ার পেতে অথবা গাছের গুড়ির উপর বস্লো সবাই। জংগলে বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। আর কদিন থেকেই বৃষ্টির হবে তার হালকা-পাতলা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আগুনের পাশে তাই বেশ আরাম। ঠিক করা হলো একজন একজন করে সবাই সংক্ষিপ্ত ভাবে তাদের জীবনের কোনো একটা অংশ-এর গল্প সবার সাথে ভাগাভাগি করে নেবে। গল্প বলা চলছে। কিছু কষ্টের, কিছু হাস্যরসের। চুপচাপ শুনছে বাকীরা। শুধু মাঝে মাঝে আগুনের মাঝে কাঠ ফাটার মৃদু শব্দ।
ছবিঃ ঝোপের ফাকে কপারহেড স্নেক।
২৬ শে মে। মিশোও স্টেট ফরেস্ট।
খুব সকালে ঘুম ভেঙে গেল। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দ্রুত তাবু থেকে বের হলাম। এসব বহুল ব্যবহৃত ক্যাম্পিং গ্রাউন্ড গুলোতে গণশৌচাগার থাকে একটু দূর পরপর। আমাদের এই ক্যাম্প গ্রাউন্ডের কাছে আছে দুটো । তার মধ্যে একটা নির্মানাধীন। আর আরেকটাতে পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন বেশ কিছু সময় ধরে। ফলে গন্ধের চোটে তার কাছে যাওয়া যায় না। নাড়ি-ভুড়ি উলটে আসতে চায়। কিন্তু চিনা পাব্লিকদের দেখলাম নির্বিকার , নিজেদের মধ্যে কিচিরমিচির করতে করতে সোজা ঢুকে যাচ্ছে। এদের নাক কি ধাতু দিয়ে তৈরী কে জানে ! দশ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে রয়েছে আরেকটা টয়লেট। বনের মধ্যে দিয়ে শর্ট কাট। হাঁটা দিলাম দ্রুত। রাতের শিশির জমে ঘাস মাটি সব ভেজা ভেজা। চিকন মাটির রাস্তা চলে গেছে বনের ভেতর দিয়ে। দুপাশে দীর্ঘাকায় গাছের সারি। একটু দূর যেতেই চোখাচোখি হয়ে গেল তিন হরিনের সাথে। ঘাড় ঘুরিয়ে স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে আচমকা একলাফে তিনটাই জঙগলের আড়ালে উধাও। আফসোস হলো ক্যামেরটা সাথে নেইনি বলে। ফিরে এসে নাস্তা সেরে দ্রুত রেডি হয়ে নিলাম। আজকের হাইকিং হবে আপালাচিয়ান ট্রেইলের হাফমার্ক পয়েন্টের উদ্দেশ্যে। এই পয়েন্টে পৌছাতে আমাদের হাটা দিতে হবে সানসেট রক্স ট্রেইল ধরে মিশোও স্টেট ফরেস্টের মধ্যে দিয়ে। প্রায় সাড়ে ছয় মাইল লম্বা এই ট্রেইল যত এগিয়েছে , তত চড়াই উতরাই হয়ে উঠেছে। বনের মধ্যে ঢোকার পর এক্টা খাড়ি কে বাম পাশে রেখে হাটতে লাগলাম সারিবদ্ধ ভাবে। সামনে চাক। শুরু হলো হাইকিং গেম খেলা। এ থেকে জেড পর্যন্ত সব বর্ণমালাকে অদ্যক্ষর ধরে কোন জিনিস দেখাতে হবে। এই ধরনের গেম খেলতে খেলতে আগালে হাইকিং এর কষ্ট খানিকটা ভুলে থাকা যায়। উচু উচু সব গাছের ফাক দিয়ে মাটির রাস্তা। পাশে কুলুকুলু শব্দে বয়ে যাচ্ছে খাড়ির পানি। অপূর্ব শান্তিময় অনুভুতি কাজ করে এসব জায়গায়। কয়েক মাইল হাটার পড় সবাই থামলাম লাঞ্চ এর জন্য। খাড়ির পাশে বশে জুতো খুলে পা ডুবিয়ে দিলাম কনকনে ঠান্ডা পানিতে। আহ আরাম। দীর্ঘ হাইকিং এর পর পায়ের উপর প্রায় থেরাপির মত কাজ করে ঠান্ডা পানি ।
ছবিঃ খাড়িতে পা ডুবিয়ে কিছুক্ষন রিল্যাক্স করা।
লাঞ্ছ শেষে বিল ছোটখাটো একটা ডেমন্সট্রেশান দিলো কম্পাস এবং ম্যাপ ব্যবহারের উপর। বিল দীর্ঘদিন ধরে স্কাউট মাস্টার হিসেবে কাজ করে এসেছে। খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিলো ব্যাপারটা। তেমন কঠিন কিছু না। প্রথমে কম্পাসের কাটাটা নর্থ চিহ্ন অঙ্কিত দাগ বরাবর নিয়ে আসতে হবে। তারপর যেদিকে যেতে চাই সেটা ডায়ালে অঙ্কিত দিক অনুযায়ী এগোতে হয়। আর ম্যাপটাকে সেই অনুযায়ী নর্থ-নর্থ মিলিয়ে বিছিয়ে নিলে বুঝে ফেলা যায় কোন ট্রেইল ধরে সবচেয়ে সহজে সেখানে পৌছা যাবে। আবার শুরু হলো পথচলা। হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখি কয়েকজন জটলা পাকিয়ে কি জানি দেখছে। বিল আর আমি এগিয়ে গেলাম। এক্টা লম্বা কালো সাপ, পড়ে থাকা এক্টা গাছের গুড়ির উপর শুয়ে আছে। বিল বললো,
"এটা র্যাট স্নেক। এরা ইদুর, গেরবিল এই জাতীয় প্রাণী খায়। বিষাক্ত নয়।"
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর সর্প মহাশয়ের মনে হয় ভালো লাগ্লো না। আস্তে আস্তে একেবেকে গাছের ফাকে অদৃশ্য হয়ে গেলো।
ছবিঃ র্যাট স্নেক এর সাথে দেখা।
এবার পথ ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠছে। ফলে হাটা বেশ কষ্টকর । বনের এই দিকটায় গাছগুলো বেশ উচু উচু। চাক এক্টা গাছের দিকে আঙ্গুল তুলে বললো,
'এটা কি গাছ কে বলতে পারবে?'
গাছের গায়ে লম্বা লম্বা লাল দাগ। বলে উঠলাম, 'এতো রেডউড মনে হচ্ছে।' চাক সম্মতির হাসি হাসলো। কিছুক্ষন অবাক হয়ে দেখলাম এই কিংবদন্তীতুল্য গাছগুলো। ক্যালিফর্নিয়ার রেডউড ফরেস্টের গাছগুলো আরো প্রাচীন । তবে এগুলোও কোনো অংশে কম নয়।
ছবিঃ রেডউড ট্রী
দীর্ঘ চড়াই হাটার পর হঠাৎ বনের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তায় এসে পড়লাম। চোখে পড়লো সেই এটি হাফওয়ে মার্কার। তার মানে পোছে গেছি গন্তব্যে।
ছবিঃ হাফওয়ে মার্কারে ফটোসেশান
২৭ শে মে। লরেল লেক। লং পাইন রান রিজারভেয়ার।
এখন বেশ রাত। তোড়েজোড়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছে অনেকক্ষন ধরে। তাবুর ভেতরে বসে ফ্যাশলাইটের আলোতে লিখে রাখছি আজকের ঘটনাপঞ্জি। মনে হচ্ছে পানি ঢুকছে তাবুতে। এরকম আবহাওয়া থাকলে ক্যাম্পিং করে থাকা মুশকিল। তবে আমরাও আমাদের ট্রীপের শেষাংশ চলে এসেছি। কালকেই ট্রীপশেষে তাবু গুটিয়ে ফেরত যাচ্ছি সবাই। তবে দিনটা শুরু হয়েছিলো রোদ ঝলমলে। সকালে উঠে নাস্তা সেরে প্রথমেই শুরু হলো দিনের কাজ । ক্যাম্পের আগুনের জন্য কাঠ কাটা দরকার। কুড়াল নিয়ে তাই যোগ দিলাম । টিভি-সিনেমায় যেভাবে হাঁই হাঁই করে এক কোপে কাঠ চিরে ফেলা হয়, বাস্তবে কিন্তু ওরকম করাটা বিপদজনক। হাত থেকে কুঠার ছুটে কারো গায়ে বিধে যেতে পারে। নিয়ম হচ্ছে প্রথমে ছোট ছোট আঘাতে অল্প এক্টু চিরে ফেলা। তারপর ওই চেরা অংশে ফলা ঢুকিয়ে জোরে চাপ দিলে দুভাগ হয়ে যায়। কাজটা মজার কিন্তু বেশ পরিশ্রমের। বেশ খানিকক্ষন এতে সাহায্য করে এবার ফিরে এলাম তাবুর কাছে। দেখি চাক ছিপ নিয়ে রেডি। ওর কাছে থেকে ছিপ নিয়ে কিছুক্ষন ছিপ ফেলা প্র্যাক্টিস করলাম। ব্যাপারটা পূরোটাই কবজির মোচড়ের উপর নির্ভর করে। কিছুক্ষন বাদে গাড়ীতে চেপে রওনা দিলাম লরেল লেক এর উদ্দেশ্যে। এখানে আমরা ট্রাউট ধরার চেষ্টা করব। আর বিকালে লং পাইন রান রিজারভেয়ারে ক্যানোতে করে সি ব্যাস ধরার প্ল্যান। লেকের পাশের রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে সবাই যার যার ছিপ নিয়ে ছড়িয়ে পড়লাম। লেকের একপাশে বাধ দেওয়া। চাক বললো বাধের ঠিক পাশে যদি ছিপ ফেলা যায় তাহলে মাছ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। কিন্তু পাথর বেয়ে নামতে হবে বেশ খানিকটা পথ। কি আর করা একহাতে ছিপ নিয়ে আস্তে আস্তে পাথর ধরে ধরে নেমে গেলাম। প্রবল স্রোতে বাধের উপর থেকে নেমে আসছে পানি। এর একপাশে ছিপ নিয়ে ছুঁড়ে দিলাম টোপ। মানুষ হিসেবে আমাকে ঠিক ধৈয্যশীল বলা যায় না। তাই এই মাছশিকার আমার জন্য তেমন মনরঞ্জক টাইম পাস না। তবে অবশেষে যখন হাল ছেড়ে দেতে যাচ্ছিলাম, তখনি ছিপে পেলাম হাল্কা টান। দ্রুত গুটিয়ে এনে দেখি ধরা পড়েছে ছোট একটা ট্রাউট। যাক, যাত্রা একেবারে বিফলে গেল না। তাই নিয়ে খুশি মনে উঠে গেলাম উপরে।
ছবিঃ লরেল লেকে ধরা ছোট্ট ট্রাউট ।
মাছ ধরার ক্ষেত্রে আমার ভাগ্য দেখলাম সবচেয়ে খারাপ। আমার চিনা সহযাত্রীর দেখালাম একেকজন চার-পাঁচটা করে ধরে ফেলেছে ইতিমধ্যে। যাহোক ক্যাম্পে গিয়ে ভাগাভাগি করে আগুনে পুড়িয়ে লবন মরিচ দিয়ে মজা করে খাওয়া যাবে। ক্যাম্পে ফিরে লাঞ্চ সেরে সবাই উঠে বসলাম গাড়িতে। বিল এর গাড়ির পেছনে ট্রেইলার। তাতে প্রায় ছয়-থেকে আটটা ক্যানোউ বাঁধা। এবার যাত্রা শুরু করলাম লং পাইন রান রিজারভেয়ারের উদ্দেশ্যে। মিশোও স্টেট ফরেস্টে অবস্থিত এই জলাধার প্রায় তিন মাইল দীর্ঘ এলাকা নিয়ে অবস্থিত। তীর ঘিরা আছে হার্ডউড আর পাইন বন। রিজারভেয়ারের পাড়ে এসে ক্যানোগুলো একে একে নামিয়ে নিলাম ট্রেলার থেকে। তারপর দুই-তিনজন করে গ্রুপে ভাগ হয়ে ক্যানোগুলোকে ঠেলে পানিতে ভাসিয়ে চড়ে বসলাম। আমরা প্রথমে চলে যাবো রিজারভেয়ারের এক কোনায়। ওখানে নাকি বড় বড় সিব্যাস ধরা পড়ে বেশী। পরিস্কার আকাশ। শান্ত নিশ্চল পানি। মনের আনন্দে বৈঠা ঠেলে চলতে লাগলাম আমরা। তীরজুড়ে গাছগাছালি, ঘন বন। একটা পাতিহাস পরিবার বাচ্চাদের নিয়ে সাতরাতে বেড়িয়েছে। তা দেখে আমাদের ক্যানুতে বসা চিনা তরুনী যারপরনাই উচ্ছসিত। 'কি সুইট! কি সুইট!' বলতে বলতে প্রায় অজ্ঞান। যাহোক ছবি তুলে নিলাম কয়েক্টা। ধীরে ধীরে অপর পাড়ে এসে পোছালাম। কিছু খাবার খেয়ে আবার বেরিয়ে পরা যাবে ছিপে টোপ লাগিয়ে। হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই ঝমঝম বৃষ্টি। অথচ এতক্ষন আকাশে তেমন মেঘ দেখিনি। সবাই পঞ্চো , রেইনকোট বের করে চুপচাপ বসে রইলাম নদীর পাড়ে পাথরের উপরে। অপেক্ষা কখন বৃষ্টি থামবে। বনের মধ্যে বৃষ্টির মনে হয় তোড় বেড়ে যায়, অল্প বৃষ্টিতেই মনে হচ্ছে অনেক জল ঝরছে। বৃষ্টি ধরে এলে বিল আর চাক মিলে টোপ গাথতে আর ছিপগুলো চেক করতে বসলো। সব ঠিকঠাক করে ক্যানো করে আবার বেরিয়ে পড়লাম। রিজারভেয়ারের মাঝামাঝি এসে নৌকা স্থির করে ছিপ ফেলাম আমি। আমার সাথে আছে এক কোরিয়ান ছেলে, নাম চেং জিন, আর সেই চীনা তরুনী, লি ঝোও পিং। চেং এসেছে পেন স্টেট থেকে , আর লি উইসকন্সিনের ছাত্রী। আগেই বলেছি মাছ ধরার ক্ষেত্রে আমার ভাগ্য সবসময়েই খারাপ। বারবার ছিপ ফেলেও কোন লাভ হলো না। ওদিকে চেং ইতিমধ্যে ইয়া বড় একটা সি ব্যাস ধরে ফেলে দাত বের করে হাসছে। কি আর করা। ফিরে চললাম তীরের পানে।
ছবিঃ ট্রেলার থেকে ক্যানো নামানো হচ্ছে
ছবিঃ লং পাইন রান রিজারভেয়ারে ক্যানোতে ।
ছবিঃ পাতিহাস পরিবার।
ছবিঃ সৌভাগ্যবানের হাতে বড় সিব্যাস।
২৮ শে মে। পাইনগ্রোভ ফারনেস। এপালাচিয়ান ট্রেইল মিউজিয়াম।
গতরাতে বৃষ্টির তোড়ে সবকিছু ভিজে গেছে। তাবুর ভেতরে পানি ঢুকে সবার কাপড়চোপড় ভিজে শেষ। বেড়ায় বেড়ায় ঝুলিয়ে এখন শুকানোরে চেষ্টা চলছে। কিন্তু আবহাওয়া ভেজা। আকাশও মেঘলা। শুকানোর কোন সুযোগ নেই। লাঞ্চ টাইম এখন। খাওয়া দাওয়া করে তাবু গুটিয়ে রওনা দেব মরগানটাউন। তার আগে সকালের ঘটনাগুলো লিখে রাখি। সকালের নাস্তা সেরে গ্রুপ মিটিং বসলো। দিনের প্ল্যান হলো দুটো গ্রুপ হবে একটা যবে মিউজিয়াম আর ফারনেস দেখতে । আরেকটা আশেপাশে ক্যাম্পঘিরে থাকা ট্রেইল ঘুরে আসবে। মিউজিয়ামটা দেখার আগ্রহ ছিলো। তাই প্রথম গ্রুপে যোগ দিলাম। ক্রিসের নেতৃতে বেরিয়ে পড়লাম আমরা ক'জন। ক্রিস বেশ মজার মানুষ। কিছুক্ষন ধরে হাটছি আর সে একটা করে আমাদের ধাধা বলছে। যেমনঃ 'মার্চ আর এপ্রিলের মধ্যে কি আছে ? ' (বলুন ত কি?) এরকম । প্রথমে গেলাম পাইনগ্রোভ ফারনেস দেখতে। ১৮শ শতকে এখানে রট আয়রন প্রস্তুত করা হতো। এখন ফারনেস স্ট্যাকটা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। পাশে অবশ্য ছবি দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে কি বিশাল কর্মযজ্ঞ হতো এখানে একসময়। রেললাইন দিয়ে কয়লা বয়ে আনা হতো, তা চুল্লির মধ্যে এক দিক দিয়ে ঢুকিয়ে উপর থেকে পিগ আয়রন ফেলে নিচের একটা অংশ থেকে পরিশোধিত লোহা আহরন করা হতো।
ছবিঃ পাইনগ্রোভ ফারন্সে।
ছবিঃ ১৮শ শতকের রট আয়রন তৈরীর কারখানা । এখন শুধুই ছবি।
এখান থেকে আমরা গেলাম আয়রন মাস্টারের ম্যানসনে। সেই ওয়েস্টার্ন মুভিতে দেখা আদ্দিকালের ডিজাইনের বাড়ি। কিন্তু সুসজ্জিত এবং খুব ভালোভাবে সংরক্ষিত। এখন হোস্টেল হিসেবে ব্যবহ্ররত হয়।
ছবিঃ আয়রন মাস্টারের ম্যান্সন
ম্যানসন ঘুরে আমরা ঢুকলাম মিউজিয়ামে। আপালাচিয়ান ট্রেইল মিউজিয়াম শুরু হয় লোহা কারখানার পরিত্যাক্ত একটা বাড়িতে। ১৯৯৮ সালে। বাড়িটাই বেশ ঐতিহাসিক । ২০০ বছর আগের এই বাড়ি এক্সময় ছিল ছাতু তৈরীর কারখানা। হাইকিং নিয়ে এটাই আমেরিকার প্রথম মিউজিয়াম। উল্লেখযোগ্য সংগ্রহের মধ্যে দেখলাম হাইকিং কিংবদন্তি আর্ল শেফারের তৈরী ট্রেইল শেল্টার যেটা বহু কষ্টে পিটার্স মাউন্টেইন থেকে খুলে মিউজিয়ামে এনে আবার জোড়া দেওয়া হয়েছে। আর্ল শেফার কে বলা হয় 'দি ওরিজিনাল ক্রেজি ওয়ান' । সোজা বাংলায় 'মূল পাগল'। তিনিই প্রথম এক ঋতুর মধ্যে পুরো এপালাচিয়ান ট্রেইল হাইক করেন । জর্জিয়ার মাউন্ট ওগলথর্প থেকে শুরু করে ১২৪ দিনে তিনি মেইনের মাউন্ট কাটাহডিনে পৌছান। তার মানে গড়ে দিনে অতিক্রম করেন ১৭ মাইল । হাইকিং এর জন্য তিনি সাথে নিয়েছিলেন শুধু পুরোনো একজোড়া বুট আর তার মিলিটারি ব্যাগ। সাথে না ছিলো রান্না জন্য কোন স্টোভ, না তাবু। যেকোন হাইকিং এর জন্য এ খুবি অপ্রতুল। পুরো পরিক্রমা শেষে যখন ট্রেইল অফিসারদের জানানো হয়েছিলো তারা মনে করেছিলো ব্যাটা ঠগবাজ। এমনি অবিশ্বাস্য এই হাইক। শেফার পেশায় ছিলেন কাঠমিস্ত্রী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাডার সৈনিক হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় কেন তিনি এত লম্বা হাইকিং করলেন, তিনি জবাব দিয়েছিলেন - "'হেটে হেটে যুদ্ধটাকে আমার কলকব্জা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছিলাম।"
ছবিঃ আর্ল শেফারের ট্রেইল শেল্টার।
এছাড়া অন্যান্য বিখ্যাত এপালাচিয়ান ট্রেইল হাইকারদের যেমন - গ্র্যানি গেইটউড, জিন এপ্সি, আর এড গারভে, এদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র সংগ্রহের রাখা হয়েছে।
ছবিঃ মিউজিয়ামের সংগ্রহের কিছু মিছু।
চাক আসছে কফির কাপ হাতে। লেখা আজকের মত এখানেই শেষ করি।
মন্তব্য
দারুণ লেখা। শঙ্কু শঙ্কু আমেজ। আমি সাপকে ভয় পাই।
--- মোখলেস হোসেন
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় নিয়ে লেখেটা পড়ার জন্য। জার্নাল লিখতে গেলেই কেন জানই আমার প্রফেসর শঙ্কুর কথাই মনে হয়। সাপ বিপদজনক প্রাণী , তবে ওদেরকে বিরক্ত না করলে ওরাও নিজেদের মত থাকে।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
লেখা, ছবি দুটোই ভালো লেগেছে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
চলুক!
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
চালাইলাম।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
নতুন মন্তব্য করুন