শাঁ শাঁ শব্দে প্রায় উড়ে চলছি উচু উচু সব গাছের ফাক দিয়ে। দু হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছি মাথার উপরের হ্যান্ডেল। শুধু একটা দড়ির সাহায্যে ঝুলে আছি মাটি থেকে প্রায় ৬০ ফিট উপরে। চলতে চলতে মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছি চারিপাশের আর নিচে দ্রুত অপসারমান সবুজের সমারোহ। দ্রুত চলে আসলো সামনের প্লাটফর্ম। বিশাল রেডউড ট্রীর উপর কাঠের মাচার মত প্লাটফর্ম তৈরী। গাইডের নির্দেশ অনুযায়ী হাত মাথার উপরে তুলে দড়ির উপর আঙ্গুল দিয়ে দিলাম আলতো চাপ গতি কমানোর জন্য। তবে হিসেবের গন্ডগোল হয়ে গেল। যতটুকু গতি কমার কথা ছিল তার থেকে বেশী বেগে ছুটে চললাম । মনে হচ্ছে যেন সশরীরে আছড়ে পড়ব গাছের গুড়ির উপর
ঘরকুনো হিসেবে বন্ধুমহলে আমার বেশ দূর্নাম আছে। এর অবশ্য কারন আছে। আন্ডারগ্রাডে থাকতে দরজা বন্ধ করে দিনরাত খুটখাট করে কম্পিটারে কোড করে যেতাম। পরিনামে এখন আমার পরিব্রাজক বন্ধুদের সাথে ভ্রমন নিয়ে কথা বলতে গেলে অবজ্ঞা ভরে বলে - যা যা তোর দৌড় কতদূর জানা আছে। আমি মনে মনে লজ্জা পাই। ঠিকই ত বলেছে। আফসোস করি মনে মনে - দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া... ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই এই লজ্জার হাত থেকে রক্ষা পেতে মাঝে মাঝে বেরিয়ে পড়ি।
মনে আছে স্কুলে থাকতে ক্লাসের ফিচেল ধরনের কিছু ছেলে হিন্দি কোন এক গানের প্যারোডি বানিয়েছিলো এরকম - "ঝুলে ঝুলে লাল মেরা মাস্তাকালান্দার।" হেড়ে গলায় মাঝে মাঝে গেয়ে নিজেদের মধ্যে ফ্যাচ ফ্যাচ করে হাসাহাসি করত। মনে হয় অশ্লীল জাতীয় কোন কথা। ঝুলে ঝুলে লাল না হলেও আমাদের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির জিপলাইন ক্যানোপি ট্যুরে ঝুলে ঝুলে পার হবেন প্রায় ২০০০ ফিট। গ্যাদাকালে কার না শখ ছিল টারজানের মত দড়ি ধরে গাছ থেকে গাছে লাফিয়ে বেড়ানোর। সেই দূঃখে ত আমাদের পৌনেপাতলুন পরিহিত উত্তরাধুনিক কবি কি জানি দূছত্র লিখে ফেলেছিল টারজান বিষয়ক। তবে একেবারের টারজানের মত না হলেও, প্রায় বিনা দক্ষতায় কাছাকাছি একটা অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এই জিপলাইন ট্যুরের উপর ভালো কিছু হয় না। তার উপর ভার্সিটির ছাত্র হিসেবে পাচ্ছি স্পেশাল হাফ প্রাইস ডিস্কাউন্ট। মাগনা পাইলে বাঙালী নাকি আলকাতরাও খায়, হাফ প্রাইস পেয়ে আমি উঠলাম গাছের আগায়। উনিশ-বিশ।
ডাব্লিউ ভি এর জিপলাইন ক্যানোপি ট্যুরে আছে ৪-টা জিপলাইন, একটা গাছ থেকে আরেক গাছে যাবার জন্য দড়ির সেতু যাকে এরিয়াল ব্রিজ বলে, মাচার একতলা থেকে দোতলায় যাবার জন্য কাঠের গুড়ির তৈরী মই যাকে বলে এরিয়াল ল্যাডার । ট্যুর পরিশেষে আছে র্যাপেল স্টেশান যেখান থেকে দড়ির সাহায্যে ঝুলে ঝুলে মাচা থেকে নেমে যাবেন ৪৫ ফিট নিচের মাটিতে। জিপলাইন চারটার প্রথমটার দৈর্ঘ্য ২০১ ফিট থেকে শুরু করে , আস্তে আস্তে দীর্ঘ হয়ে শেষটার দৈর্ঘ্য ৯৮০ ফিট। মাটিতে নামে দশ মিনিট বনের মধ্যে হেটে বেজক্যাম্পে ফেরত।
নির্ধারিত দিনে সকাল সকাল গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম কুপারস রক স্টেট ফরেস্টের উদ্দেশ্যে। গাড়িতে করে আধা ঘন্টার মত লাগে যেতে। বনের মধ্যে ভার্সিটির আউটডোর এডুকেশান সেন্টার। অফিস বাংলো ছাড়াও আছে, ক্যাম্পিং গ্রাউন্ড। দেখি আমার সাথে বেশ কজন আমেরিকান ট্যুরে অংশ নিচ্ছে। বাবা-মা আর দুই ছেলে-মেয়ে, একজন বয়োবৃদ্ধ কিন্তু মোটামোটি শক্তসমর্থ ব্যক্তি (পরে জেনেছিলাম ইনি ক্যান্সার থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন সম্প্রতি।)
ছবিঃ বনের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে রাস্তা ।
ছবিঃ আউটডোর এডুকেশন সেন্টারে ঢোকার মুখে ছোট্ট একটা কভার্ড ব্রীজ পার হতে হয়।
অফিসে ফর্ম-টর্ম সাইন করে বনের মধ্যে দিয়ে মিনিট পাচেক হেটে চলে গেলাম নির্ধারিত স্থানে। দেখি এখানে অবস্ট্যাকল কোর্স করার জন্য উচু সব কাঠের কাঠামো দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাধা। আর আউটডোর কোর্সের ছাত্রছাত্রীদের থাকার জন্য স্থায়ী চালার মত কিছু ঘর তৈরে করে রাখা আছে। ট্যুর গাইডদের সাথে পরিচিত হলাম। তারা আমাদের নিয়ে চললো একটা ঘরের বারান্দায়। দেখেই বারান্দায় শোয়ানো আছে সারি সারি হারনেস আর হেলমেট। কিভাবে পড়তে হবে দেখিয়ে দিল তারা। এই হারনেস জিপলাইনে লাগিয়ে ঝুলে পড়তে হবে দড়ি থেকে, তারপর শো শো করে যাত্রা। সবকিছু পড়ে-টড়ে চল্লাম সবাই প্রথমেই প্র্যাকটিস লাইনে। ছোট্ট একটা জিপলাইন । ১০-১৫ ফিট লম্বা হবে। এখানে কিভাবে হারনেসের সাথে জিপলাইন কারাবিনারের সাহায্যে আটকাতে হবে , হ্যান্ডল্বার কিভাবে ধরতে হবে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা দড়িতে কিভাবে চাপ দিয়ে গতি কমাতে হবে আর মাচায় পৌছানোর আগেই যদি থেমে যাও তাহলে কিভাবে পোছাতে হবে দেখানো হলো। একবার বুঝে ফেলতে পারলো পুরো ব্যাপারটা তেমন জটিল কিছু না।
ছবিঃ জিপলাইনে চড়ার জন্য প্রস্তুত।
প্রাকটিস শেষে আমাদের নিয়ে চলা হলো আসল জায়গায়। দেখি ছোট একটা কাঠের প্লাটফর্মে সিড়ি উঠে গেছে। গাইডরা বলে দিল - "এই লাইনে যে আগে থাকবে সে যাবে কিন্তু সবার শেষে কারন, উঠার পর পরি কারাবিনার চেঞ্জ করে প্লাটফর্মের সাথে হারনেস আটকে দেওয়া হবে।" আমি ছিলাম সবার শেষে । ভাবছিলাম শেষে গেলে বোধহয় পুরো ব্যাপারটা ভালোভাবে দেখে নিতে পারবো। কিন্তু অবস্থার ফেরে কারাবিনার চেঞ্জের পরিক্রম অনুসারে আমি হয়ে গেলাম সবার প্রথম জিপলাইন যাত্রী! একজন গাইড অবশ্য চলে গেল সবার আগে। ক্যাম্পগ্রাউন্ডটা আসলে কিছুটা উচু যায়গায়। জিপ্লাইনে চড়ে যেতে যেতে দেখবেন মাটি পায়ের নিচ থেকে দূর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কারন লাইন চলে গেছে নিচু যায়গায় অবস্থিত একটা গাছের মাচায় । এই মাচাটা মাটি থেকে প্রায় বিশ ফিট উপরে। খুব দ্রুত পার হয়ে গেলাম ২০০ ফিট ধাতস্থ হতে না হতেই। মাচা কাছিয়ে আসাতে দূর থেকে দেখলাম গাইড গতি কমানোর সিগন্যাল দিচ্ছে। দড়িতে আলতো চাপ দিয়ে গতি কমিয়ে নিলাম। ব্রেকারে এসে পৌছানোর পর শুন্যে ঝুলত অবস্থায় নিজেকে ঘুরিয়ে নিয়ে দড়ি ধরে ধরে চলে আসলাম মাচার উপর। অপেক্ষা করতে লাগলাম অন্যদের জন্য। সবাই মাচায় একসাথে হলে কুপারস রক স্টেট ফরেস্টের উপর সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিল গাইড। জেনে অবাক হলাম জৈববৈচিত্রের দিক দিয়ে এই অরণ্য বিশ্বের বিখ্যাত সব বনাঞ্চল যেমন এমাজন রেন ফরেস্টের সাথে র্যাঙ্কিং-এ সারির প্রথম দিকে। দূরে তাকিয়ে দেখলাম চেস্টনাট রিজ পর্বতের সারি। গাছের উচু থেকে বনের বৈচিত্রের একটা সম্পূর্ণ ভিন্নরকম ধারনা পাওয়া যায়।
ছবিঃ প্রথম জিপলাইন পার হচ্ছি। প্রায় ২০০ ফিট দৈর্ঘ এর।
ছবিঃ পেছনে পেন্সিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের চেস্টনাট রিজ পর্বতসারি দেখা যাচ্ছে। এর উচ্চতা সাগরপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০০ ফিট।
শুরু দ্বিতীয় পর্ব। এই মাচা থেকে পাশের আরেকটা গাছে চলে গেছে কাঠের গুড়ি দিয়ে তৈরী দড়িতে বাধা মই। বুঝলাম এইটাই সেই এরিয়াল ব্রিজ। গাইড নির্দেশ দিল - একজন একজন করে পার হবেন। কেউ ঝাকাবার চেষ্টা করবেন না বা একসাথে পার হবার চেষ্টা করবেন না। এতে দুলুনির চোটে তাল হারিয়ে বিপদের শংকা আছে। আবার ভাগ্যের ফেরে লাইনে সবার আগে আমি। আস্তে আস্তে কাঠের গুঁড়ির উপর এক পা দুপা করে পার হতে লাগলাম। নিচে তাকিয়ে দেখি কাঠের গুড়ির ফাক দিয়ে দেখা যাচ্ছে নিচের সবুজ। কোন দূর্ঘটনা ছাড়াই পার হয়ে গেলাম।
ছবিঃ এরিয়াল ব্রিজ পার হবার সময়।
এবার আরো দীর্ঘ লাইন। প্রায় ৭০০ ফিট লম্বা । এরেকটু বেশী চ্যালেঞ্জিং কারন এবার লাইন শেষে যে মাচা সেটা মাটি থেকে চল্লিশ ফিট উপরে। লাইন যত দীর্ঘ হয় ভরবেগ তত বাড়তে থাকে, তাই যাত্রা শেষে নিয়ন্ত্রণ করা কিছুটা কঠিন হয়ে যায়। যাহোক, এবার সবার শেষে আমি। শো শো শব্দে চলতে লাগলাম দড়ি বেয়ে। শক্ত করে ধরে আছি মাথার উপরের হ্যান্ডেল। পুরো শরীর ঝুলে আছে হারনেসের সাহায্যে। এবার কিছুটা ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক দেখার সময় পেলাম। দুধারে দীর্ঘ গাছের সারে যতদূর দৃষ্টি যায়। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি ফার্ণের মেলা বসেছে চারিদিকে। কি সুন্দর! দুবারের প্র্যাকটিস হওয়ায় এবার গতি সামলাতে সমস্যা হলোনা। মাচায় উঠে উপরের দিকে তাকিয়ে অস্ফুষ্ট সরে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো - "ওহ! শিট।" এই মাচা দোতলা। কাঠের গুড়ির মই উঠে গেছে উপরে। বুঝলাম এটাই সেই এরিয়াল ল্যাডার আর এটাতে করেই উপরে উঠতে হবে আমাদের। উপরের মাচা হলো আমাদের ট্যুরের সবচেয়ে উচু প্ল্যাটফর্ম। মাটি থেকে ৬০ ফিট উচুতে। গাইড আমাদের আস্বস্ত করলো যে এই মই থেকে ফস্কে পড়ে গেছে এমন ঘটনা আজ পর্যন্ত ঘটেনি। সাবধানে দুহাতে পায় ফর করে এক ধাপ এক ধাপ করে উঠে গেলাম উপরে। উপরের মাচা থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম। ফার্ণের ব্যাপ্তি ত বিস্তৃত এই জায়গায়।
ছবিঃ দ্বিতীয় জিপলাইন। ৭০০ ফিট।
ছবিঃ এরিয়াল ল্যাডারে করে উঠছি।
এবার শেষ লাইন। সেই সাথে সবচেয়ে দীর্ঘতম লাইন । ৯৮০ ফিট। সবার আগে যাত্রা শুরু করলাম। তারপরের ঘটনা ত শুরুতেই বলেছি। আগেই জেনে নিয়েছিলাম জিপ্লাইনে সবোচ্চ গতিবেগ ওঠে ৩৫ মাইল/ঘন্টা। গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হাত দিয়ে দড়িতে চাপ দিয়ে চলেছি। গ্লাভস ভেদ করে তপ্ত দড়ির আচ হাতের তালুতে টের পাচ্ছি। মাচার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছি এমন সময় ধুম করে থেমে গেলাম। ব্যাপার কি ? উপরে তাকিয়ে দেখি স্পিড ব্রেকার সেট করা আছে । তাতে ধাক্কা খেয়ে থেমে গেছে আমার রোলার। শুন্যে ভাসমান অবস্থায় শরীর ঘুরিয়ে দুহাত দিয়ে দড়ি ঠেলে ঠেলে রোলারটাকে এবার আরো এগিয়ে নিলাম। পায়ের নিচে মাচা চলে আসল। ঝামেলা শেষ।
ছবিঃ দীর্ঘতম এবং সর্বশেষ লাইন। ৯৮০ ফিট লম্বা।
একে একে সবাই মাচায় জড়ো হলে এবার গাইড বলল - আমরা আমাদের যাত্রার শেষ পর্যায়। এখন আমরা আছি মাটি থেকে ৪৫ ফিট উপরে। এখান থেকে র্যাপেল মানে দড়ির সাহায্যে একে একে সবাই নিচে নেমে যাবে। কিভাবে দড়ি ধরে ঝুলে পড়তে হবে দেখিয়ে দিলো । তারপর নিচ থেকে আরেক গাইড পুলি টেনে টেনে নামিয়ে নেবে। জিপলাইনের থেকে এই ব্যাপারটা বেশি অস্বস্তিকর লাগলো আমার কাছে। মাচার কিনারে শরীর ঝুলিয়ে দেবার ব্যাপার আছে ত! যাহোক একবার দড়ি ধরে পজিশন নিয়ে নিলে আর সমস্যা নাই। ধীরে ধীরে নেমে গেলাম কোনো ঝামেলা ছাড়াই। বনের ভেতর দিয়ে হাটা দিলাম সবাই ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে।
মন্তব্য
ভালই অভিজ্ঞতা নিলি! ৯৮০ ও কিন্তু অনেক। আমি তোর সিকিভাগ করেছিলাম গাজীপুর এর বেইজক্যাম্পে। ভালই মজা হয়েছিল। আরো লিখ বন্ধু।
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
থ্যাংকস দোস্ত। তোকে খ্যাকশিয়াল একাউন্ট এ লগইন করতে দেখে ভালো লাগলো। তোকেও সচলে নিয়মিত দেখতে চাই।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
- সেই দু'ছত্র পৌণেপাৎলুনের লেখা নয়, 'দ্দ্বীণূ'র লেখা।
বিনরের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে টপকে এসেছি টারজানে ভরা বন
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ওহ হ তাই নাকি। কবিতার ব্যাপারে আমি বরাবরই বিশেষ-অজ্ঞ ।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
জিপলাইনকে বাংলায় কি বলবেন ভাইয়া?
ত্বরিতগতি-দড়ি? ফুড়ুত-দড়ি ? হুশ-দড়ি ? আর কিছু মাথায় আসছে না।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
জিপলাইনিংকে ঝুলঝাঁপ বললে কেমন শোনায়?
একবারে জিপ-লাইন-এ না গিয়ে একটু ধাপে ধাপে আগালে কেমন হয়? প্রথমে জিপ, জিপার, লাইন, পুলি, সাসপেন্ডার, হার্নেস, কেব্ল এই শব্দগুলোর বাংলা করা যাক। তার পরে নাহয় জিপ আর লাইনকে সমাসবদ্ধ করে নতুন শব্দ নির্মাণ করা যাবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সেটাও করা যায়। জিপলাইনে অবশ্য জিপের সাথে জিপারের সম্পর্ক নেই। এখানে জিপ মানে "দ্রুত নড়া"। আবার দড়ি যখন এমনি বেকার পড়ে থাকে, তখন সেটা "রোপ", কিন্তু যখন তাকে কোনো একটা কাজে লাগানো হয় (ভার বহন বা কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ), তখন সেটা "লাইন" হয়ে যায়, এখানেও লাইন সে অর্থেই। জাহাজি কর্মসংস্কৃতি থেকে শব্দগুলো এসেছে। বাংলায় এর সমকক্ষ কিছু আছে কি না জানি না, নতুন করে বানানো যেতেই পারে।
যতদূর মনে পড়ে কর্মসংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে বাংলা প্রতিশব্দ নির্মাণ বা পুনরাবিষ্কার সংক্রান্ত একটা ছোট আলোচনা এর আগে আমরা একবার করেছিলাম। কিন্তু বিষয়টা আমাদের এমন ছোটখাটো আলোচনার চেয়ে বহুগুণে বড়। বিষয়টা নিয়ে, এক একটা কর্মক্ষেত্রে ধরে ধরে পেশাদার গবেষণা হওয়া দরকার। এমনকি কেউ নেই যে/যারা এমনসব গবেষণায় ফান্ড দেবে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সরকারেরই দেওয়া উচিত, হয়তো দেয়ও, হয়তো কাজও হয়, আমরা "Zানতি পারি না"?
জনগণের করের পয়সায় যে কোনো গবেষণা/হ্যানোত্যানোর চূড়ান্ত প্রতিবেদন বাংলায় জমা দেওয়ার বিধি করে সেটা অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করা নিশ্চিত করা গেলে বাড়তি টেকাটুকা এমনিতেও খরচ হয় না। আপনি সাম্প্রতিক আইন, যেগুলো বাংলায় খসড়া এবং চূড়ান্ত করা হয়, পড়লে দেখবেন কারিগরি এবং স্বল্পজনবোধ্য (esoteric) শব্দগুলো বিনা পরিভাষায় ইংরেজি থেকে বাংলায় প্রতিবর্ণীকরণ করে ব্যবহার করা হচ্ছে। "কপিরাইট আইন"-এ কপিরাইটের একটা বাংলা প্রণয়নের মোক্ষম সুযোগ কিন্তু ছিলো (প্রতিলিপিস্বত্ব বা এরকম কিছু), সেটা কেউ নেয়নি। আমলারা বাংলায় কাঁচা হলে এমনটা ঘটতে পারে। তারা হাতের কাছে অভিধানে একটা ইংরেজি শব্দের বিপরীতে বাংলা না পেলে ওটাকে বাংলা হরফে লিখে রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রসার ঘটিয়েই হয়তো খুশি।
আর সবচে বড় কথা, নতুন শব্দ সন্ধানে আমাদের শিক্ষা আর প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের প্রতিফলন ঘটানোর একটা বিরাট সুযোগ আছে, কাজেই কমবেশি ভেবেচিন্তে অবদান রাখতে পারেন বাংলাভাষী সবাই। দুই-চারজন গবেষককে টেকাটুকা দিয়ে বসিয়ে দিলে উদ্ভাবিত শব্দগুলোও একঘেয়ে বা "অতিরিক্ত পুলিশ উপমহাপরিদর্শক"-এর মতো জবরজং হয়ে যেতে পারে। আমি লেখকদের কাছ থেকে সম্ভব হলে প্রতিটি লেখাতেই অন্তত একটি নতুন বাংলা শব্দ আবদার করি।
আপনি সরকারী বেসরকারী উভয় উদ্যোগের ত্রুটি/সীমাবদ্ধতা/বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন। এটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। এটাকে বাস্তবতা বিবেচনা করে সমস্যাটি থেকে উত্তরণের উপায় ভাবতে হবে। আমি অনুভব করি ভাষা নিয়ে রাষ্ট্রের দার্শনিক অবস্থানটি স্পষ্ট নয়, একারণে এটি নিয়ে কিছু চটজলদি কাজ হলেও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হয় না। ভাষা নিয়ে রাষ্ট্রের দর্শনটি নির্মাণের কাজটি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী (পড়ুন হর্তাকর্তাবিধাতা) বা জনপ্রতিনিধিদের একচেটিয়া এমনটা নয়। রাষ্ট্রের একজন সাধারণ নাগরিকও এটি নিয়ে ভাবতে ও প্রস্তাব রাখতে পারেন। সমস্যা হচ্ছে, এটির আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা সেটা নিয়ে কেউ ভাবিত না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ঝুল-তার কেমন হয় ?
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
তারকে Wire/Cable এর জন্যে রেখে দিলে ভালো হয় না?
ওপরের মন্তব্যে রোপ আর লাইনের পার্থক্য মাথায় রেখে রোপকে বাংলায় "দড়ি" আর লাইনকে বাংলায় "ডোর" ভাবছিলাম। জিপলাইনে যেমন সুড়ুৎ করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ায় যায়, "সুড়ুৎডোর" কেমন শোনাবে ভাবছিলাম। আমরা পিচ্চিকালে যে স্লাইডে হড়কে ওপর থেকে নিচে নামতাম, ওটাকেও "সুড়ুৎ" ডাকা যায় কিন্তু (জিপলাইনকেও রোপস্লাইড ডাকে কিছু জায়গায়)।
কিন্তু এটা Calque (ঋণানুবাদ) হয়ে যাচ্ছে, যেখানে টুকরোগুলোকে বাংলা করে জোড়া লাগাচ্ছি। অন্য কোণ থেকে চিন্তা করার অবকাশ আছে।
খোটা মারা পরিব্রাজক বন্ধুরা বাঙ্গালি হলে তাদের কথায় টেনশন নেবেন না। গুঁতিয়ে দেখেন তারা নিজেরাও খুব একটা ঘুরেছে এরকম নয়। গ্রাড স্কুলের জলপানি দিয়ে খুব হিল্লিদিল্লি করা সম্ভব না।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
যাক একজন আমার কষ্টটা বুঝল। *লুঙ্গির খুট দিয়ে চোখ মোছার ইমো*
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
চমৎকার লাগল - পড়তে এবং ছবি দেখতে।
( এইরকম ঝোল্লাবাজি আমার কাজ না। কিন্তু অন্য কেউ করলে সেই বিবরণ পড়তে কি ছবি দেখতে ভালবাসি। )
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ভাই পুরা জীবনটাই এক লম্বা ঝোল্লাবাজি। সময় নিয়ে অধমের লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
নতুন মন্তব্য করুন