৩রা এপ্রিল, ১৯৩৪। লন্ডন। মর্টিমার আর মাইফানওয়ে (ভ্যান) মরিস গুডালের কোল জুড়ে আসলো জেন। ভ্যালেরি জেন মরিস-গুডাল। মর্টিমার ছিলো সাধারন একজন ব্যবসায়ী। মাইফ্যানোয়ে ঔপন্যাসিক এবং গৃহিনী। সেই সময়ের আর সব মেয়েদের কাছ থেকে যেমন, জেন-এর কাছে থেকে সেই একইরকম প্রত্যাশা ছিলো সবারঃ ভদ্র, দায়িত্ববান এক পুরুষের সাথে বিয়ে, তারপর কয়েকটা ছেলেমেয়ে। তবে জেনের মা কখনো তার পছন্দ-অপছন্দকে নিরুৎসাহিত করেননি।
ছবিঃ গুডাল পরিবার, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে। জেন, জুডি, বাবা মর্টিমার, মা ভ্যান।
জেন ছিলো চুপচাপ এক্টা মেয়ে, বইয়ের পোকা। ডক্টর ডুলিটল ছিলো তার আদরের আর টারজানের উপন্যাসগুলো বলতে গেলে একেবারে গিলে খেতো একটার পর একটা। আর বই পড়ার ফলাফল সচরাচর যা হয়ে থাকে-নিঃশব্দে, জীবনটাকে পালটে দিতে থাকে একটু একটু করে। জেন-এর ভেতর পশুপাখির প্রতি গভীর ভালোবাসা গড়ে উঠলো আর জেগে উঠলো আফ্রিকার প্রতি এক টান, বন্যপ্রাণীর সাথে থাকার ইচ্ছা। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা তখন বেজে চলেছে, তার পরিবারের সীমিত উপার্জন নিয়ে টানাটানি অবস্থা । বিশ্ববিদ্যালয়ে না গিয়ে জেন ভর্তি হলো সেক্রেটারিয়াল কলেজে। সেখানে পড়াশোনা শেষ করলো ১৯৫২ তে।
এদিকে, জেন এর এক বান্ধবী কেনিয়াতে বাসা নিলো আর ওকে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানালো। সেই সময় জেন লন্ডনে বিজ্ঞাপনেচিত্রের জন্য গান বাছার কাজ করছিলো। কেনিয়া যাবার টাকা জমানোর জন্য সে বাসা ছেড়ে দিয়ে আরেক জায়গায় গিয়ে ওয়েট্রেস হিসেবে কাজ করা শুরু করলো। যখন যথেষ্ট টাকা জমলো চাকরী ছেড়ে দিয়ে পাড়ী দিল দূরদেশের উদ্দেশ্যে। তার জীবনী "আফ্রিকা ইন মাই ব্লাড" এ পাওয়া যায় সেই ১৯৫৭ সালের মার্চ মাসে এস এস কেনিয়া ক্যাসেল থেকে লেখা তার চিঠি -
প্রিয় পরিবার,এখন বৃহস্পতিবার ভোর ৪ টা বাজে। আমি এখনো ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না আমি আফ্রিকায় যাচ্ছি। আফ্রিকা! লম্বা সমুদ্রযাত্রায় যাওয়া কল্পনা করা আমার জন্য সহজ, কিন্তু এইসব নাম যেমন মোমবাসা, নাইরোবি, দক্ষিন কিনানগপ, নাকুরু ইত্যাদি এখন আমার জন্য যে বাস্তব হয়ে দেখা দেবে তা কল্পনা করা সহজ নয়।
প্রায় একমাস লাগলো ইংল্যান্ড থেকে, কেপ অব গুড হোপ ঘুরে, মোম্বাসা হয়ে, অবশেষে নাইরোবি পৌঁছাতে। সেখানে তার পরিচয় হলো ডক্টর লুইস লিকি -এর সাথে। মহান প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং জীবাস্মনৃতত্ত্ববিদ যিনি মানুষের উৎসের সূত্র খুজে বের করেছিলেন আফ্রিকাতে। লিকি ছিলো আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, প্রভাবশালী আর সেই সময়ে, নাইরোবীর প্রাকৃতিক ইতিহাসবিষয়ক জাদুঘরের পরিচালক। তিনি জেন-কে চাকরী দিলেন সেখানে। তারপর ওল্ডুভাই গর্জের এক খননকার্যে তার সাথে যাবার আমন্ত্রণ জানালেন। তিন তিনটা মাস ধরে এক কষ্টকর এক কাজে জেন নিজেকে নিমজ্জিত করলো সেখানেঃ কনি আঙ্গুলের সমান লম্বা এক্টা দাঁতন দিয়ে জীবাস্ম পরিস্কার, অথবা শিকারের ছোরা দিয়ে যত্নসহকারে খননের কাজ। লিকি জেন-এর মধ্যে এক ধৈর্যশীল এবং যত্নবান মানুষ দেখতে পেলো - যে দীর্ঘ একাকীত্বের মাঝেও টিকে থাকতে পারে। ধৈর্য নিয়ে, পর্যবেক্ষন করে, নিজে নিজে শিখতে পারে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, তার নতুন প্রকল্প - বনের মধ্যে বনমানুষদের পর্যবেক্ষন - সেটার জন্য জেন হলো আদর্শ প্রার্থী । লিকি যখন তাকে জিজ্ঞেস করলো টাঙ্গানাইকার প্রত্যন্ত এক হ্রদের পাড়ে গোম্বি প্রবাহের কাছে তাঁবু গেড়ে থাকতে রাজী হবে কিনা, সে মুহূর্তের জন্যেও হ্যাঁ বলতে দ্বিধা করেনি।
ছবিঃ জেন এবং লিকি।
প্রায় দুই মাস, শিম্পাঞ্জীরা তার পদশব্দ শুনলেই পালিয়ে যেত। তারপর একদিন, এক বিশালাকার পুরুষ শিম্পাঞ্জী হেলতে দুলতে ক্যাম্পে ঢুকে পড়লো। একটা পাম গাছে চড়ে কিছু বাদাম খেলো। কিছুক্ষন বাদে তাবুর ভেতরে ঢুকে একটা টেবিল থেকে একটা কলা চুরি করে নিল। পরিশেষে, সে জেন-কে সুযোগ দিলে তাকে একটা কলা উপহার দেবার। জেন-তার নাম দিলো ডেভিড গ্রেবিয়ার্ড, তার খানদানী সাদা ছাগদাড়ীর জন্যই।
ডেভিড গ্রেবিয়ার্ড তার সাঙ্গোপাঙ্গোদের ইঙ্গিত দিলো যে জেন-কে যতটা ভীতিকর মনে হয়েছিলো সে আসলে সেরকম না। ফলাফলে, জেন-এর সাথে পরিচয় হলো একে একে - যাদের সে নাম দিলো - গোলিয়াথ, হামফ্রে, রুডলফ, লিকি আর মাইক। আর ছিলো মিস্টার ম্যাকগ্রেগর, খিটখিটে মেজাজের এক বুড়ো পুরুষ শিম্পাঞ্জী। আর গোত্রনেত্রী নারী শিম্পাঞ্জী ফ্লো, আর তার সন্তানেরা, ফ্যাবেন, ফিগান আর ফিফি। জেন দেখলো তারা নিজেদের মধ্যে চুম্বন প্রদান করে, একে অন্যকে বাহুডোরে আলিঙ্গন করে, পিঠ চাপড়ে দেয়, একে অন্যের দিকে মুষ্টি নেড়ে দেখায়। তার পর্যবেক্ষনে তাদের জন্তুজানোয়ারের থেকে মানুষের কাছাকাছি আচার-আচরন করছে বলেই পরিগণিত হলো।
একদিন, জঙ্গলের মধ্যে চুপিচুপি শিম্পাঞ্জের খোজে ঘুরতে ঘুরতে জেন খুজে পেল এক বিশাল উইয়ের ঢিবি। ডেভিড গ্রেবিয়ার্ড গিয়ে বসলো ঢিবিটার পাশে। জেন দেখতে লাগল, বারংবার ডেভিড একটা শক্তপোক্ত একটা ঘাসের ডগা নিয়ে ঢিবির গর্তের মধ্যে ঢুকিয়ে খোচাতে লাগলো, গর্ত থেকে বের করলো আর ডগা থেকে উইপোকা জিভ দিয়ে তুলে একটা একটা করে মুখে পুরে দিল। ডেভিডের খানা শেষ হলে, জেন ঢিবিটা আর ঘাসের ডগাটা পর্যবেক্ষন করলো। ডগাটা গর্তে ঢুকিয়ে বের করলো। ডগাটার সাথে প্রায় ডজনখানেক উইপোকা লেগে আছে। উপদেয়। কয়েক সপ্তা পরের কথা, জেন-দেখতে পেলো শিম্পঞ্জীরা পাতাসহ গাছের ছোট্ট ডাল ভেঙ্গে পাতাগুলো ফেলে দিয়ে একধরনের খাদ্য আহরনের হাতিয়ার বানাচ্ছে। উইপোকার ঢিবির গর্ত খোচানের কাজে ব্যবহার করছে সেগুলো ।
ছবিঃ জেন এবং ডেভিড গ্রেবিয়ার্ড।
ঠিক সেই সময়, ষাটের দশকে আমাদের ধারনা ছিলো মানুষ অদ্বিতীয়। এই ধরাধামে ঈশ্বর প্রদত্ত সব প্রাণীদের থেকে মানুষ ভিন্ন। কারণ সে হাতিয়ার বানাতে পারে। আমরা আমাদেরকে অভিহিত করতাম হাতিয়ার প্রস্তুতকারক মানবসম্প্রদায় হিসেবে। যে দক্ষতা আমাদের অন্যান্য প্রাণের থেকে আমাদের আলাদা করে।
জেন-এর আবিস্কার সারাবিশ্বের বৈজ্ঞানিক মহলে সাড়া ফেলে দেয়। লিকি দাবী করেন, "এখন আমাদেরকে হয় 'হাতিয়ার'-কে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে, অথবা শিম্পাঞ্জীদের মানুষ হিসেবে মেনে নিতে হবে।" বিশ্বখ্যাত বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী হার্ভার্ডের স্টিভেন জে গুল্ড, জেন-এর এই পর্যবেক্ষনকে "বিংশ-শতাব্দীর জ্ঞানসাধনার অন্যতম মহান অর্জন" বলে অভিহিত করেন।
মাত্র ২৭ বছর বয়সে কিংবদন্তীতে পরিণত হওয়া জেন, তারপরো আরো আবিস্কার উপহার দিয়েছেন। শিম্পাঞ্জীরা নিরীহ নিরামিষভোজী বলে আমাদের যে ধারনা ছিলো সেটাকে ভুল প্রমান করেছেন। তারা সর্বভোজী, আমাদের মতই। আর দূঃখজনকভাবে যুদ্ধবাজ। সেই ২২ বছর বয়সে, প্রবল উৎসাহ নিয়ে জেন যখন এস এস কেনিয়া ক্যাসেল-এ উঠেছিলো কেনিয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ী দেবার জন্য, সে জানত না তার কাজ একদিন শুধু শিম্পাঞ্জীদের সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে না, উপরোন্তু, প্রাণীর চেতনার জটিলতা সম্পর্কেও আমাদের ধারণা লাভ করতে একদিন সাহায্য করবে।
ছবিঃ ন্যাট জিও-তে অন্যান্য বিজ্ঞানীদের তুলনায় সর্বাধিকবার প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে জেন গুডালের কর্মজীবনের উপর।
তথ্যসূত্রঃ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকাল ম্যাগাজিন, উইকিপিডিয়া এবং জেন গুডাল সম্পর্কিত বিভিন্ন অন্তর্জালিক প্রবন্ধ।
জেন গুডাল-এর জীবন এবং কর্মজীবন সম্পর্কে আরো জানতে পড়ুন তারেক অনুর একটি চমৎকার ব্লগ পোস্ট প্রিয় মুখ-১ : জেন গুডাল
মন্তব্য
চমৎকার লেখা হয়েছে রে, জেন কিন্তু ঢাকা এসেছিলেন অন্তত একবার। আফ্রিকা ইন আই ব্লাড পড়া হয় নি এখনো, তাহলে আনাতে হবে! আশা করছি জেন আরও অনেক বছর এভাবে কর্মক্ষম থেকেই আলো ছড়িয়ে যাবেন এই অস্থির পৃথিবীতে।
facebook
অনেক ধন্যবাদ সময় করে পড়েছিস বলে। তাই নাকি ঢাকায় এসেছিলেন জানতাম না। হ্যাঁ, আমার একি আশাবাদ এবং শুভ কামনা ।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
কোনো একটা কাজের পিছনে পুরো জীবন বিনিয়োগ করতে কেমন মানুষ হতে হয় তা আমার কখনোই বোঝা হবে না হয়ত। জেনের মত মানুষরা তাই চির বিষ্ময়কর।
লেখা ঝরঝরে হয়েছে।
পূর্ণসচল হওয়ায় অভিনন্দন!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
অনেক ধন্যবাদ সময় করে পড়ার জন্যে। হ্যাঁ এই জন্যই এসব আলোকিত মানুষেরা আমাদের আশা জুগিয়ে চলেন। আমি অবশ্য সচল অনেকদিন থেকেই, কিন্তু গতকাল ছবি বদলে নিজের ছবি দিলাম, এইজন্য বোধহয় চিনতে পারেন নি। হাহাহা।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
চমৎকার লাগলো। আপনার লেখা ধরে রাখে। পড়ে শেষ করতে হয়।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
অসংখ্য ধন্যবাদ।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
জন্মদিন স্মরণ ভাল লাগল। আরও ভাল হল এই সুবাদে আপনার দেওয়া সূত্র ধরে প্রিয় ত্রাকাণুর লেখাটা পড়ে আসা গেল
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
জেন গুডাল সম্পর্কে এই প্রথম জানলাম। চমৎকৃত হবার মতো ব্যাপার নিয়ে তিনি কাজ করেছেন। শিম্পাঞ্জির বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে আমার একসময় ব্যাপক কৌতুহল জন্মেছিল, এই লেখাটা তাকে আবারো উস্কে দিল।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
নৃতত্ত্ব আমার খুব প্রিয় একটা বিষয় ছিলো আন্ডারগ্রাডে থাকতে। যদিও অপশনাল সাবজেক্ট হওয়ায় সেইদিকে আরো প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া হয়নি। কিন্তু এই বিষয় এখনো আমাকে খুবই উৎসাহিত করে। ধন্যবাদ সময় করে পড়ার জন্য।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
শীম্পাঞ্জীকে যে মানুষের মতো করে ভালোবাসা যায় সেটা দেখিয়েছেন তিনি। দুর্দান্ত মানবিক কাজ করেছেন বিনরদের নিয়ে। এই ধরনের গবেষণায় নিজের নামে একটা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছেন সেই ১৯৭৭ সালে। মূলতঃ তার প্রচেষ্টাতেই বানর বা শিম্পাঞ্জীর উপরে জিনগত বা উপাত্ত হিসেবে গবেষণা বন্ধ হয়েছে আমেরিকায়। সেটার ভালো হয়েছে না খারাপ সেটা নিয়ে আমি মন্তব্য করছিনা। তবে তার শিম্পাঞ্জীর প্রতি প্রেম কিরকম আছে সেটা এই ঘটনায় বেশ বোঝা যায়। আর বাংলাদেশের মানুষের মাঝে যে তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন সেটা বেশ আশার কথাই।
যাই হোক। আমি তার কয়েকটা কাজ পছন্দ করিনা, সেটা নিয়ে বলছি।
প্রথমটা বেশ কষ্টকর অভিজ্ঞতা। তিনি ১৯৭৫ সালে চারজন গবেষককে নিয়োগ দিয়ে আমেরিকা থেকে তানজানিয়া নিয়ে গিয়েছিলেন। তারমধ্যে ছিলো দুইজন স্নাতক পর্যায়ের আর একজন পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থী। মনে বেশ কম বয়সের ছেলেমেয়ে। একদিন একটা সন্ত্রাসী দল এসে সেই চারজনকে পিটিয়ে ধরে নিয়ে যায় আর টাকা দাবী করে। জেইন গুডঅল পালিয়ে যান। কিন্তু তিনি অপহরণকারীদের কোন টাকা দিতে চান নাই, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও চায় নাই। শেষমেশ সেই গবেষকদের পরিবাররা মানুষের কাছে ধর্ণা দিয়ে ৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার সংগ্রহ করেন। সেটার বিনিময়ে গবেষকদের ছাড়ানো হয়।
ধরা যাক তিনি টাকা দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। সেটা তিনি রাজি নাই হতে পারেন। কিন্তু এই অমানবিক কান্ডের জন্য নিজে একবারের জন্যও মুখ খোলেন নি। একবারের জন্যও দাবী করেন নি যে - 'এই চারজন মানব সন্তানকে ছেড়ে দাও। তোমাদের এলাকাতেই তো এরা তোমাদের প্রাণী নিয়ে গবেষানয় এসেছিলেন। কেন তোমরা এদেরকে আটকে রাখবে? মানবাধিকারের লঙ্ঘন।' ভাবুন তো, নিজের গবেষণা দলের কর্মী না হয়ে ৪ টা শিম্পাঞ্জীকে কেউ যদি এরকম অপহরণ করে কয়েক সপ্তাহ আটকে রাখতো তবে গুডঅল নিরব থাকতেন কিনা? মানুষের সেই দায়িত্ব তিনি নেন নাই। তার কিছু রাজনৈতিক কারণ হয়তো ছিলো। অনেকে বলেন তিনি তানজানিয়ার ন্যাশনাল পার্কের প্রধানের স্ত্রী ছিলেন বলে চুপ করে থাকতে হয়েছিলো। কিন্তু সেজন্য তো জেইন গুডঅলকে চুপ করে থাকার মতো হিসেবে আমরা গ্রহণ করতে পারি না।
দ্বিতীয় হলো তার আধুনিক জৈবপ্রযুক্তির প্রতি অনীহা। বিজ্ঞানের অন্যসব সুযোগসুবিধা তিনি গ্রহণ করছেন, সেগুলো ব্যবহার করে জীবের কর্মকান্ড দেখছেন কিন্তু জৈবপ্রযুক্তির প্রতি মানুষের ভয় ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। যেন এটা কোন অলৈকিক অভিশাপ। যেমন, খুবই আধুনিক জিন সম্পাদনা পদ্ধতি ক্রিস্পার ক্যাস্নাইনের প্রতি তিনি অযৌক্তিক ভীতি দেখিয়েছেন। এর দ্বারা উদ্ভিদকে পরিবর্তন করলে নাকি সর্বনাশ হবে। আমি কোন যুক্তি খুঁজে পাইনাই। বরং এই পদ্ধতি অবলম্বন করে মানুষের জিনগত রোগও সারিয়ে তোলার প্রমাণ বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন।
তবে ব্যাপারটাতে অবাক হইনা। কারন এইধরণের প্রকৃতিবিজ্ঞানীদের মধ্যে এরকম ট্রেন্ড বা ধাঁচ দেখতে পাওয়া স্বাভাবিক। তারা চান না প্রকৃতিতে কোন ধরনের পরিবর্তন মানুষ করুক। সেটা প্রকৃতির জন্য ভালো হবে বলে অন্যান্য গবেষকরা প্রমাণ করে দেখালেও গ্রহণ করতে চান না। বেশ মৌলবাদি অবস্থানেই থাকেন। আর নতুন প্রযুক্তির প্রতি ভয় মানুষের তো আছেই।
যাই হোক, শুভ-অশুভ মিলেমিশে মানুষেই থাকে, সেভাবেই গ্রহণ করা উচিত আমাদের। তবে যুক্তি আর প্রমাণের জয় হোক সেটাই আমরা চাই, বিশেষ করে সেটা যদি বিজ্ঞানের বিষয় হয়। অযৌক্তিক অবস্থানে যতই প্রেম থাকুক সেটা শেষমেশ আবেগী সমস্যার আরম্ভ করে।
ভাই সজীব, আপনাকে ধন্যবাদ। আমি এই ঘটনা সম্বন্ধে অবগত ছিলাম না। এবং কেউই সমালোচনার বাইরে থাকবে এটাও আমি মানি না। তবে আমার মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে আরো অনুসন্ধান করলে হয়ত কারণগুলো আরো ভালোভাবে জানা যাবে। যেমন -
১) সেই অঞ্চলে অপহৃতদের অর্থদাবী পূরণ করলেই অপহরণকারীরা জীবিত ছেড়ে দেয়, এরকম কতবার হয়েছে?
২) জেন গুডাল পালিয়ে না আসলে উনিও কি অপহৃত হবার সম্ভাবনা ছিলো কিনা ?
৩) সাধারণত এসব ক্ষেত্রে আমেরিকার সরকারের - "সন্ত্রাসীদের সাথে কোন আপোস নয়।" নীতি অনুসরণ করে থাকে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কি আমেরিকান ইন্টেলিজেন্সের মতামত অনুসারে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো কিনা?
জৈবপ্রযুক্তি নিয়ে অনীহার ব্যাপারটা যে অভিযোগটি করেছেন সেটার সাথে আমিও সহমত। যুক্তি এবং প্রমাণের জয় হোক সমসময়।
তবে পরিশেষে আপনার ওই কথাটাই সঠিক -
অনেক শুভকামনা।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
নতুন মন্তব্য করুন