স্মিথসোনিয়ান জাদুঘরগুলো সম্বন্ধে সবাই কমবেশী পরিচিত। জ্ঞানের প্রচার এবং প্রসার - এই লক্ষ নিয়ে ১৮৪৬ সালে আমেরিকার সরকার স্থাপিত করে একগুচ্ছ জাদুঘর। প্রতিষ্ঠাতা দাতা এবং ইংরেজ বিজ্ঞানী জেমস স্মিথসন-এর নামানুসারে এদের নামকরন করা হয় স্মিথসোনিয়ান। "জাতীর চিলেকোঠা" হিসেবে অভিহিত এইসব জাদুঘরে রয়েছে ১৫৪ মিলিয়ন দূর্লভ প্রদর্শিত বস্তু। এখন পর্যন্ত রয়েছে ১৯ টি জাদুঘর, ৯ টি গবেষণা কেন্দ্র, একটি চিড়িয়াখানা যাদের বেশীরভাগের অবস্থান ওয়াশিংটন ডিসি। বুঝতেই পারছেন একদিনের সংক্ষিপ্ত ভ্রমনে এতগুলো জাদুঘর ঘুরে দেখা দুঃসাধ্য কর্ম। সেই সাথে এদের প্রদর্শিত বস্তু নিয়ে লিখতে বসলে বইয়ের পর বই লিখতে হবে, এবং সে কাজও গবেষকরা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন! এ লেখায় আমার উদ্দেশ্য শুধু এই জাদুঘরগুলো সম্বন্ধে আগ্রহ জাগিয়ে তোলা। তাই চেষ্টা করলাম কিছু চমকপ্রদ প্রদর্শিত বস্তুর রেকর্ডকৃত ভিডিও এবং তাদের অতিসংক্ষেপিত কাহিনী এ লেখায় তুলে ধরার। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে এবং মনে এই বিশ্বখ্যাত জাদুঘরগুলো দেখার বাসনা জাগবে। চলুন তাহলে পড়ে দেখা যাক ...
ছবিঃ এরকম অসংখ্য অসামান্য চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য, প্রাকৃতিক এবং প্রযুক্তিগত ইতিহাসে সমৃদ্ধ স্মিথসোনিয়ান । যার অতি যৎসামান্য তুলে ধরার চেষ্টা করব এই সিরিজ লেখায়।
***
প্রথম উড্ডয়ন
ডিসেম্বার ১৭, বৃহস্পতিবার, ১৯০৩। সেদিন ভোরটা ছিলো শীতশীতে আর বাতাস বইছিলো খুব নর্থ ক্যারোলিনার বাইরের তীরগুলোয়। কিল ডেভিল হিলে থার্মোমিটারের পারদ হিমাঙ্কের কাছাকাছি ওঠানামা করছিলো। ঘন্টায় ২৫ মাইল বেগে উত্তর দিক থেকে বাতাস বইবার কারণে শীতের প্রকোপটা একটু বেশীই মনে হচ্ছিল।
ওরভিল আর উইলবারের মনে একটু সন্দেহ বাসা বাঁধতে লাগলো। আজকের দিনে কি উড়ুক্কুযন্ত্র বার করা উচিত হবে ? তিনদিন আগেই উড়বার সময় উইলবার যানটার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে একটা ডানা ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলেছিলো। পুরো একটা দিন খরচ হয়েছে ডানাটা সারিয়ে যানটাকে আবার চালূ অবস্থায় আনতে। কিন্তু ডিসেম্বারের ১৬ তারিখে বাতাস একদম পড়ে যায়। তাই আরো ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা করে দেখলো বাতাস আবার বওয়া শুরু করে কিনা। এখন বাতাস তো বইতে শুরু করেছে ,কিন্তু এমনই তার গতিবেগ যে যানটাকে নিয়ন্ত্রণ করাটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। এইবছরের মত পাততাড়ি গুটিয়ে ফিরে যাবে নাকি ভাবতে লাগলো তারা। সামনের বছর এসে আবার চেষ্টা করবে? কিন্তু তাদের ডিজাইনটা আসলেই কার্যকর কিনা তা অন্তত একবার পরীক্ষা না করে ওহাইও ফেরত যেতে মন চাইছিলো না দুই ভাইয়ের।
এর থেকে ভালো দিন আসবে না। একবার চেষ্টা করে দেখা যাক। সিদ্ধান্ত নেয় ভাইয়েরা।
কাঠ, মসলিন আর ধাতব কাঠামোর তৈরী উড়ুক্কুযানটাকে হ্যানগার থেকে টেনে বের করা হলো। যানটা দেখলে মনে হয় একটা বাক্স-ঘুড়ির সাথে প্রপেলার লাগানো। ক্যাম্পের সামনে লাল পতাকা টাঙিয়ে কাছের ইউএস লাইফসেভিং স্টেশনকে সংকেত দিলো। যানটাকে জায়গা মতো আনতে কিছু লোকবল প্রয়োজন।
উনিশ শতকের গোড়ায়, শিল্পোন্নত বিশ্ব চলছিলো বাস্পিয় ইঞ্জিনের গতিতে। প্রায় সবাই ভাবতো এই গতিই যথেষ্ট। রাইট ভাতৃদ্বয় এবং আরো কয়েকজন হবু-বৈমানিকদের প্রাণান্ত চেষ্টাকে পায়ে ঠেলে কয়েকমাস আগেই এক আমেরিকান বিজ্ঞানী দম্ভভরে দাবী করে বসলো - ইঞ্জিন চালিত বিমান কখনোই উড়তে পারবে না। বিজ্ঞানীর দাবী মনে হচ্ছিলো নিশ্চিত যখন অল্পকিছুদিন পরেই সামুয়েল ল্যাঙলির ডিজাইকৃত উড়ুক্কুযান ঊড্ডয়নে ব্যর্থ হয়ে ওয়াশিংটন ডিসির পোটোম্যাক নদীতে ঝাঁপ দিলো। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় আসলো -
"...আমরা আশা করবো প্রফেসর ল্যাংগলি উড়ুক্কুযানের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে সময় ও অর্থ নষ্ট করে তাঁর বিজ্ঞানী হিসেবে তার যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ যশ রয়েছে সেটাকে আর বিপদের মধ্যে ফেলবেন না। জীবন সংক্ষিপ্ত এবং উড্ডয়নের প্রচেষ্টা থেকে তাঁর পক্ষে মানব্জাতীর প্রতি অতুলনীয় পরিমান বেশী অবদান রাখা সম্ভব..." (ডিসেম্বর ১০, ১৯০৩, সম্পাদকের পাতা)
দুইভাই আর পাচঁজন সাহায্যকারী মিলে উড়ুক্কুযানটাকে হ্যাঙ্গার থেকে বের করে একটা বিশেষভাবে ডিজাইন করা কাঠের তৈরী সমতলে টেনে উঠালো। এই ট্র্যাকটা তৈরী করা হয়েছে যানটাকে ঊড্ডয়নে সাহায্য করার জন্য। ৪-সিলিন্ডারের জ্বালানী ইঞ্জিনটাকে হাতল ঘুরিয়ে চালু করা হলো । এই ইঞ্জিনটাও বিশেষভাবে ডিজাইন করা এবং প্রস্তুত করা হয়েছে এই উড়ুক্কুযানের জন্য। ৩২ বছর বয়সী ছোট ভাই অরভিল, সে নিয়ন্ত্রণের ভার নিল। এর আগেরবার উইলবার টসে জিতেছিলো। ১৪-ই ডিসেম্বরে। কিন্তু উড়ুক্কুযান ভূমিত্যাগ করার আগেই সেই প্রাথমিক প্রচেষ্টা বার্থ হয়।
সকাল সাড়ে দশটা বাজার কয়েক মিনিট বাদে উড়ুক্কুযানের নিচের ডানায় চড়ে বসলো অরভিল। উপুড় হয়ে শুয়ে দুহাতে হাতল চেপে ধরলো। গায়ে কালো সুট, উচু কলারের সাদা সার্ট, নেকটাই, আর টুপি। ডানদিকের নিচের ডানার অগ্রভাগ ধরে দাড়িয়ে উইলবার। ভাইয়ের মত প্রায় একই পোশাক গায়ে। কাঠের সমতল ধরে যানটা এগোনোর সময় সেটার ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য সে প্রস্তুত। পাঁচ স্থানীয় সাহায্যকারীর দিকে ঘুরে তাকেলো সে। তাদের বিষন্ন ভাবলেশহীন মুখের দিকে তাকিয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো একটু। ইঞ্জিনের ফটফট শব্দ ছাপিয়ে লোকগুলোর উদ্দেশ্যে হাঁক দিলো ও - "এত দূঃখী-দূঃখী ভাব করে থাকবেন না। হাসেন, হুল্লোড় করেন, হাততালি দেন। যানের চলা শুরু হলে অরভিলকে উদ্দুদ্ধ করেন।"
ঠিক সকাল ১০ঃ৩৫-এ উড়ুক্কুযানটাকে ট্র্যাকের সাথে আটকে রাখা দড়িটা খুলে দিল অরভিল। ভটভট শব্দ করতে করতে ধীরে ধীরে ঝড়ো বাতাসের দিকে আগাতে লাগলো কিম্ভুতদর্শন যানটা। পাশে দ্রুতপায়ে আগাচ্ছে উইলবার। ডানাটা ধরে আছে যাতে মাটির সাথে সমান্তরালে থাকে যানটা। ট্র্যাক ছেড়ে ভাসতে শুরু করলো যানটা। ডানাটা ছেড়ে দিল ও। ভূমি ছেড়ে উপরে ওঠা শুরু করলো এবার যানটা। মৃদু উল্লাসধবনি শোনা গেল পাশে দাড়িয়ে থাকা দর্শকদের গলা দিয়ে। ঠিক এই সময়ে ভীড়ের মধ্যে দাড়িয়ে থাকা জন ড্যানিয়েলস তার প্রাগৈতিহাসক ক্যামেরায় এক সাদা-কালো ছবি ধারণ করলো যেটা মানজাতীর ইতিহাসে চিরদিনের জন্য খোদাই করা থাকবে।
ছবিঃ জন ড্যানিয়েলস-এর তোলা সেই ঐতিহাসিক প্রথম উড্ডয়নের ছবি।
অরভিলের প্রথম উড্ডয়ন ছিলো সংক্ষিপ্ত আর টলমলে । যানটা উপর নিচ করতে করতে আগাচ্ছিলো আর অরভিল কিভাবে যানটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো। নিজের ভাগ্যের জোর পরীক্ষা করার ইচ্ছে ছিলো না তার। ১২ সেকেন্ড বাতাসে ভাসার পর, সে উড্ডয়ন স্থান থেকে ১২০ ফুট দূরে যানটাকে মাটিতে অবতরন করালো।
এই মুহুর্তের গুরুত্ব বাড়িয়ে বলাটা কঠিন কারণ, যে মুহুর্তে উইলবার রাইট তার ভাইকে দেখছিলো তাদের উড়ুক্কুযানটাকে বাতাসে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহুর্তে অতীত আর ভবিষ্যত আলাদা হয়ে গেলো। আর ক্রমশ পৃথিবীটা ছোট হতে শুরু করলো। পেছনে পড়ে থাকলো সপ্তাহ-ব্যাপি আমেরিকার একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভ্রমণ আর মাসব্যাপী আটলান্টিক সমুদ্র পাড়ি। সামনে হাতছানি দিতে লাগলো এক দিনেরও কম সময়ে আন্ত-মহাদেশ ভ্রমন , আর পরিশেষে কয়েক ঘন্টার মধ্যে মহাসাগর পরিভ্রমণ । আর তারপর। মাত্র ৬৬ বছর পর। গ্রীষ্মের এক দিনে মানুষ পাড়ি দিলো চাঁদের উদ্দেশ্যে। পা রাখলো তার পাথুরে বুকে।
স্মিথসোনিয়ান এয়ার এন্ড স্পেন্স যাদুঘরে সযত্নে সংরক্ষিত আছে রাইট ভাতৃদ্বয়ের এই উড়ুক্কুযান। মানুষের অদম্য ইচ্ছের কাছে প্রকৃতির পরাজয় এবং তার ক্ষমতার অপার সম্ভাবনার প্রমাণ হয়ে।
ভিডিওঃ রাইট ভাতৃদ্বয়ের চালিত বিশ্বের প্রথম উড়ুক্কুযান।
ছবিঃ প্রদর্শিত উড়ুক্কুযানের পাশে দেওয়া রয়েছে খুটিনাটি বিবরণ প্রথম উড্ডয়নের কথাটি লাল কালি দিয়ে দাগাঙ্কিত।
***
অভিশপ্ত হোপ হিরা
১৭৯২ সালের, ১১ ই সেপ্টেম্বার। রাজমুকুটের রত্নভান্ডার থেকে চুরি হয়ে গেলো হোপ হিরা। প্রায় ৪৬ ক্যারটের, পায়রার ডিমের সমান এক হিরকখন্ড। লোভনীয় কিন্তু, যার হাতেই গেছে তার কপালে জুড়ে বসেছে দূর্ভাগ্য। একি অভিশাপ, নাকি নিছক কাকতাল, নাকি শুধুই ফেনিয়ে বলা গালগল্প? সে বিচার ছেড়ে দিলাম আপনার উপর।
শোনা যায়, অভিশাপের শুরু ট্যাভেরনিয়ার ব্লু থেকে। হোপ হিরাসহ বেশ কয়েকটা বড়সড় হিরকখন্ডের জন্ম এর থেকে। লোকমুখে শোনা যায়, ফরাসী মণিমুক্তা ব্যবসায়ী জিন -ব্যাপটিস্ট ট্যাভারনিয়ের নাকি ১১৫ ক্যারটের এই হিরা চুরি করেছিলো এক হিন্দু দেবীর মূর্তি থেকে, দেবীর এক চোখে বসানো ছিলো ওটা। চুরি যাওয়ার ঘটনায় রাগান্বিত হয়ে মন্দিরের পুরোহিতগণ অভিশাপ বর্ষন করেন যে-ই এই পাথর হস্তগত করবে তার উপর। শোনা যায়, চুরি করার কিছুদিন পরেই প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ট্যাভারনিয়ের, হিংস্র নেকড়ের পাল ছিড়ে খায় তার মরদেহ।
রাজা চতুর্দশ লুই ট্যাভারনিয়ের কাছ থেকে কেনেন হিরেটা। মনিকারকে দিয়ে কাটিয়ে মুকুটে বসান সেটা। ১৬৭৩ সালের ঘটনা। সেই সময় হিরেটার নামকরন করা হয়েছিলো "মুকুটের নীল হিরা" বা "ফরাসী নীল" । গ্যাঙ্গগ্রীনে আক্রান্ত হয়ে মারা যান রাজা। একজন বাদে তার সব বৈধ সন্তান মৃত্যুবরণ করে।
নিকোলাস ফকুয়ে, চতুর্দশ লুই-য়ের রাজকর্মচারী। বিশেষ কোন অনুষ্ঠানে একবার হিরেটা পরিহিত অবস্থায় আবির্ভূত হয়েছিলেন। ঠিক তার কিছু পড়েই রাজার রোশানলে পড়েন, ফ্রান্স থেকে নির্বাসিত হন। পরে রাজা তাকে আজীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। ১৫ বছর পিগনেরলের দূর্গে জীবন অতিবাহিত করতে হয় তাকে। কারো কারো মতে সেই নাকি আসল "দ্য ম্যান ইন দ্য আয়রন মাস্ক"।
মেরি এনটয়নেত, ফ্রান্সের শেষ রাণী, সবাই জানি তার পরিণতি কি হয়েছিলো । গিলোটিন সাক্ষী। হোপ হিরা পড়ে থাকতেন নিয়মিত।
ম্যারি-লুইস, ল্যামবালের রাজকুমারী, মেরি এনটয়নেত-এর সখী। ভয়াবহভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে দূষ্কৃতিকারীদের হাতে, হাতুড়ীর আঘাতে, শিরোচ্ছিন্ন, নগ্ন এবং নাড়ীভূড়ী বের করে ফেলা হয়েছিলো তার। বল্লমের আগায় মাথা গেথে প্রদর্শন করা হয়েছিল বন্দী রাণীকে।
ডাচ মণিকার উইলহেল্ম ফালস, হোপ হিরা কেটেছিলো আবার, নিজের ছেলের হাতে মৃত্যুবরণ করতে হয় থাকে। সেই ছেলে পরে আত্মহত্যা করে।
গ্রীক ব্যবসায়ী সায়মন মাওনকারীদেস। হীরেটা কিনেছিলেন। বউ-বাচ্চাসহ খাড়া পাহাড়ের ঢাল থকে গাড়ী নিয়ে ঝাপ দেন নিচে।
এভালিন ওয়ালস মক্লিন। হোপ হিরার আরেক মালিক। পুত্র, কন্যা, স্বামী হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব অবস্থায় মানসিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করতে হয় তাকে।
জেমস টড, পত্র পরিবহনকারী। হোপ হিরার শেষ ঠিকানা স্মিথসোনিয়ানে পৌছে দেন তিনি। তার কিছুদিন পরেই ট্রাক দূর্ঘটনায় পা হারান তিনি। তার বাড়ী আগুনে পড়ে যায়।
এতশত দূর্ভোগের সাক্ষী হবার পরো মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টরীর অন্যতম মূল আকর্ষন এটি। প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করে এর দর্শন লাভ করার জুন্য। দূর্ভেদ্য কাচের বাক্সের ভেতর ঘুর্ণায়মান এক প্ল্যাটফর্মে সগৌরবে আলো ঠিকরে ঠিকরে নিজের সৌন্দর্য জাহির করে চলে সে আজও।
ভিডিওঃ হোপ হিরা।
***
ওয়াঙ্কেল টি-রেক্স
১৯৮৮ সাল, মন্টানা। এক রৌদ্রস্নাত ঝকঝকে বিশাল নীল আকাশ সকাল। অন্যান্যসময়ের মতই ফসিল শিকারী ক্যাথি ওয়ানকেল পরিবারসহ বেরিয়েছেন ক্যাম্পিং যাত্রায়। তিনি কি কল্পনা করতে পেরেছিলেন এই ক্যাম্পিং ট্রিপ তার জন্য কি অস্বভাবিক অমূল্য এক আবিস্কার উপহার দেবে? ঘটনাটা ঘটলো ফোর্ট পেক রিজারভেয়ার এলাকায়। দূর থেকে মনে হচ্ছিল একটা হাড় মাটি ফুড়ে বেরিয়ে আছে। খানিকটা অনুসন্ধান করতেই বোঝাগেল সেটা একটা ফসিলে রূপান্তরিত টাইরানোসোরাস রেক্সের কঙ্কাল! যা এখন আবিস্কারকের নামানুসারে ওয়াঙ্কেল টি রেক্স নামে পরিচিত। আজ পর্যন্ত যত টিরেক্সের পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল আবিস্কৃত হয়েছে, এটি তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।
ওয়াঙ্কেল টি রেক্স এর মত অল্প সংখ্যক কিছু ফসিল অবশিষ্টাংশ ছাড়া বেশীরভাগ টাইরানোসোরাস এবং অন্যান্য ডাইনোসরের ফসিলের কিছু খন্ডিত ভগ্নাংশ পাওয়া গেছে মাত্র। দাত ছাড়া অন্য কিছু পাওয়াই যায় না বলতে গেলে। মাথার খুলি আর হাড়ের অবশিষ্টাংশ খুজে পাওয়া অতি দূর্লভ ব্যাপার।
কবেকার প্রাণী এই টি-রেক্স ? ক্রেটেশাস যুগে , যা প্রায় ৬৬ থেকে ৬৮ মিলিয়ন বছর আগেকার কথা, সেই সময় এরা দর্পভরে বিচরন করত এই ভূপৃষ্ঠে। ওয়াঙ্কেল টি রেক্সের কঙ্কালেই প্রথম জানা যায় এদের হাতের দৈর্ঘ্য কতটুকু ছিলো। যদিও শরীরের তুলনায় দেখতে ছোট, কিন্তু সেগুলো বেশ শক্তিশালী। হাতের হাড়ের চারপাশে পেশীর সংযোগস্থলের জায়গাগুলো পর্যবেক্ষন করলে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। আর পায়ের জোর কেমন ছিলো ? জীবাস্মবিদেরা অনুমান করেন তাদের হাটার গতি ছিলো ঘন্টায় ২৫ মাইলের মত। বিশাল বিশাল পদক্ষেপ ফেলে এরা খুব দ্রুতই শিকারের পিছু ধাওয়া করতে পারত । যেমনটা দেখা যায় কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্রে।
ওয়াণকেল টি-রেক্সের সাক্ষাত পেতে হলে চলুন স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টরীর হল অব ডাইনোসরস-এ। কঙ্কালটার সামনে দাড়িয়ে প্রাণীটা জীবদ্দশায় কি প্রচন্ড প্রতাপশালী ভয়াবহ হিংস্র ছিলো তা অনুমান করতে খুব বেশী কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়নি।
ভিডিওঃ ওয়াঙ্কেল টি-রেক্স।
****
থিসিয়াস। গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীর অন্যতম এক মহানায়ক। কাহিনীতে আছে, একবার তার শুভাকাঙ্খী লাপিথ-এর রাজার বিবাহ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় তাকে। রাজা অবশ্য তার প্রতিবেশীদেরও আমন্ত্রণ জানায়, অর্ধেক মানব, অর্ধেক ঘোড়া সেন্টারদের। বিশাল ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো সেটা। সেন্টররা অতিরিক্ত মদ্যপান করে, নেশার ঘোরে হবু-রাণীকে অপহরণের চেষ্টা করে। থিসিয়াস দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। সেন্টরদের সাথে লড়াই করে তাদেরকে পরাজিত করে হবু-রাণীকে রক্ষা করে।
রোমান কবি ওভিড-এর শ্রেষ্ঠ কীর্তি "মেটামরফেসিস"-এর দ্বাদশ পুস্তকে থিসিয়াস আর সেন্টর বিয়ানরের মধ্যেকার লড়াইটা কাব্যরূপে ধারণ করা হয়েছে এভাবে -
But Theseus, with a club of harden'd oak,
The cubit-bone of the bold centaur broke;
And left him maim'd; nor seconded the stroke.
Then leapt on tall Bianor's back (who bore
No mortal burden but his own, before);
Press'd with his knees his sides; the double man,
His speed with spurs increas'd, unwilling ran.
One hand the hero fastn'd on his locks;
His other ply'd him with repeated strokes.
The club rung round his ears, and batter'd brows;
He falls; and lashing up his heels, his rider throws.
এই বীরগাঁথাটা আকৃষ্ট করে ১৮শ শতাব্দীর রোমান্টিক ফরাসী ভাস্কর এন্টনি-লুইস বারিয়ে-কে। এন্টনি ছিলেন "এনিমালিয়ার", জন্তুজানোয়ারের ভাস্কর্যে পারদর্শী। স্মিথসোনিয়ানের ন্যাশনাল গ্যালারী অফ আর্টে বর্তমানে প্রদর্শিত হচ্ছে এই অপূর্ব ভাস্কর্য।
ভিডিওঃ মুগুর হাতে মিনাটরের সাথে যুদ্ধরত থিসিয়াস।
মন্তব্য
দারুণ সিরিজ হবে! চলতে থাকুক, আর এই জাদুঘরগুলোও যে কী দুর্দান্ত!
একটা কথা- যে বিমানটি বেশীক্ষণ ধরে দেখালি, সেটা কিন্তু উড়তে পারা প্রথম বিমান না, সেই ঘরে মোট ৩টা বিমান ছিল রাইট ভাইদের তৈরি, ৩ টিই উড়েছিল, সবার আগে উড়েছিল বামে রাখাটা!
facebook
ধন্যবাদ দোস্ত। চেষ্টা করবো চালিয়ে যাবার। আরও কিছু লেখা আছে ওগুলো একসাথে করলে আরও একটা কি দুটো পর্ব হবে।
আমার মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে । অন্যান্য বিমানগুলো নিয়ে পরে হয়ত লেখা যাবে কিন্তু জন ড্যানিয়েলস-এর তোলা প্রথম উড্ডয়নের ছবির সাথে মিলিয়ে দেখলে বোঝা যায় এটাই সেই প্রথম "বিমান"। আর প্রদর্শিত উড়ুক্কুযানের পাশে যে বিবরণ দেওয়া ছিলো, সেটার ছবিতে প্রথম উড্ডয়নের কথাটি লাল কালি দিয়ে দাগাঙ্কিত করে দিলাম।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
অসাধারণ!
স্পেস এর গুলো আসুক তারাতারি এই কামনায়।
অনেক ধন্যবাদ। পরের পর্বেই থাকবে।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
ইয়ে মানে আপনি কি ওয়াশিংটন ডিসি এরিয়াতে থাকেন? অত্র এলাকার অধিবাসী ছাড়া কেউ দুদন্ড ঘরতে এলে এতোগুলো মিউজিয়াম কুলিয়ে ঊথতে পারে না। একটু লজ্জার কথা বই কি, প্রায় প্রতিসপ্তাহে স্মিথসনিয়ান যাই আমি সেই আমিই এখনো এতোগুলো মিউজিয়াম শেষ করে উঠতে পারিনি। এক ন্যাশলাম গ্যালারী অফ আর্টেই তো প্রতি সপ্তাহ কাটিয়ে দেয়া যায়।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
একেবারে মনের কথা বলেছেন। এতকিছু দেখার আছে যে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে স্টাডি করে শেষ করতে গেলে প্রতিটা জাদুঘরেই সপ্তা পার করে দেওয়া যায় । ডিসি-তে না থাকলেও, ঘুরতে আসা হয় মাঝে সাঝেই, সেই ফাঁকে ফাঁকে দেখা। এই সিরিজে আমার মূল ফোকাস শুধু ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারী, ন্যাচারাল হিস্টরি এবং স্পেস এন্ড এয়ার মিউজিয়াম। অন্যগুলোর জন্য আরেক সিরিজ করতে হবে । ধন্যবাদ।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
ঠিক বলেছেন। জাদুঘর একটা রাস্তার মতো। টেনে নিয়ে যায়, এক প্রসারমান জানার জগতে। জাদুঘর দেখতে শিখলে সারাজীবন একটা জাদুঘরও মেষ করা যাবে না। বারেবার দেখতে দেখতে- আপনার সিরিজটি আমার জন্য খুব কাজের এবং আনন্দের হবে। অন্যদেরও- আমার বিশ্বাস।
অনেক ধন্যবাদ ভাই। অনুপ্রাণিত হলাম। পরবর্তি পর্ব আসছে শিগগিরি।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
একবার যাওয়াই হয়ে গেল মনভ্রমণে- ভারি সুন্দর লেখা। নিয়ে যায়-
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
আপ্নে তো সাঙ্ঘাতিক খ্রাপ লোক! ভয়ঙ্কর হোপ হীরা নিজে দেখলেন, দেখলেন, আবার আমাদের-ও দেখায়া ছাড়লেন!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
হেহে শাপ দিয়ে দিলুম সবাই কে
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
নতুন মন্তব্য করুন