[ সুকুমার সমগ্রতে লিখেছে - 'সন্দেশ' পত্রিকার অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল সমসাময়িক ঘটনাবলী এবং যাবতীয় সাংস্কৃতিক বৈজ্ঞানিক সংবাদকে সহজবোধ্য ভাষায় উপস্থিত করা। প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক উপেন্দ্রকিশোর এ ধরনের রচনা লিখেছেন, পরবর্তীতে সম্পাদক সুকুমার রায় তৎকালে এবং তার আগে যে-সমস্ত বৈজ্ঞানিক ও ঐতিহাসিক আবিস্কার হয়েছে, আধুনিক সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যেসব উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে - সেসব তথ্যবহুল সংবাদ 'সন্দেশ' পত্রিকায় নিয়মিতরূপে, অত্যন্ত সরসভাবে পরিবেষণ করতেন। বিজ্ঞানের তথ্য নিয়ে লেখার মুশকিল এই যে, এককালের প্রতিপাদ্য পরবর্তী কালে বদলে যায়; বিভিন্ন ইওরোপিয় গ্রন্থ বা পত্রপত্রিকা থেকেও এসব তথ্য আহুত হয়েছে। কিন্তু এই রচনার মূল্য অন্যত্রঃ সেটি হচ্ছে লেখকের বলবার ভঙ্গী এবং এই ভঙ্গী সুকুমারের সম্পূর্ন নিজস্ব। তাছাড়া, উনিশ শতাব্দের মধ্যভাগে আর বিশ শতাব্দের প্রথমাংশে পাশ্চাত্ত্য জগতে বিজ্ঞান ও সভ্যতার অগ্রগতি নিয়ে যে বিস্ময় ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল - এ দেশে শিক্ষিতজনের মধ্যেও তার আলোড়ন লেগেছিল। এই লেখাগুলিতে অন্তর্নিহিত রয়েছে সেই একই আগ্রহ ও উদ্দেপনাঃ সুকুমার কিশোর মনে তাকে সঞ্চারিত করতে চেয়েছিলেন। এই সমস্ত গদ্যরচনা কবি এবং কথাকোবিদ্ সুকুমার রায়ের অন্য পরিচয় উদঘাটন করবে।
এর মধ্যে থেকে একটি প্রিয় প্রবন্ধ বেছে নিয়ে সচল পাঠকের সামনে পরিবেশন করা হলো। ]
ছেলেবেলায় আমরা শুনিয়াছিলাম "মানুষের পূর্বপুরুষ বানর ছিল।" ইহাও শুনিয়াছিলাম যে, ডারুইন নামে কে এক পন্ডিত নাকি একথা বলিয়াছেন। বাস্তবিক ডারুইন এমন কথা কোনদিন বলেন নাই। আসল কথা এই যে, অতি প্রাচীনকালে বানর ও মানুষের পূর্বপুরুষ একই ছিল। সেই এক পূর্বপুরুষ হইতেই বানর ও মানুষ, এ-দুই আসিয়াছে - কিন্তু সে যে কত দিনের কথা তাহা কেহ জানে না।
তখন হইতেই আমার মনে একটা সন্দেহ ছিল, পন্ডিতেরা এত খবর জানেন কি করিয়া ? তাঁহারা ত সেই প্রাচীনকালের পৃথিবীটাকে চক্ষে দেখিয়া আসেন নাই, তবে তাহার সম্বন্ধে এত সব কথা তাঁহারা বলেন কিসের জোরে ? যাহা হউক, আমরা ত আর পন্ডিত নই, তাই অনেক কথাই আমাদের মানিয়া লইতে হয়। মানিতে হয় যে এই পৃথিবীটা ফুটবলের মতো গোল এবং সে লাট্টুর মতো ঘোরে, আর সূর্যের চারিদিকে পাক দিয়া বেড়ায় - যদিও এসবের কিছুই আমরা চোখে দেখি না। ছেলেবেলায় ভাবিতাম, পন্ডিতদের খুব বুদ্ধি বেশি, তা তাঁহারা অনেক কথা জানিতে পারেন। কিন্তু এখন দেখিতেছি কেবল তাহা নয়। বুদ্ধি ত বটেই, তাছাড়া আরও কয়েকটি জিনিস চাই, যাহা না থাকিলে কেহ কোনদিন যথার্থ পন্ডিত হইতে পারে না। তাহার মধ্যে একটি জিনিস, ঠিকমতো দেখিবার শক্তি। সাধারন লোকে যেমন দুই-একবার চোখ বুলাইয়া মনে করে ইহার নাম 'দেখা' - পন্ডিতের দেখা সেরকম নয়। তাঁহারা একই বিষয় লইয়া দিনের পর দিন দেখিতেছেন, তবু দেখার আর শেষ হয় না। মাথার উপর এত যে তারা মিটমিট করিয়া জ্বলে, আবার দিনের আলোয় মিলাইয়া যায়, পন্ডিতেরা কত হাজার বৎসর ধরিয়া তাহা দেখিতেছেন তবু তাঁহাদের তৃপ্তি নাই। বছরের কোন্ সময়ে কোন্ তারা ঠিক কোন্খানে থাকে, কোন্ তারাটা কতখানি স্থির বা কিরকম অস্থির, তাদের রকমসকম কোন্টার কেমন - এইসবের সূক্ষ্ম হিসাব লইতে লইতে পন্ডিতদের বড় বড় পুঁথি ভরিয়া উঠে। সেইসব হিসাব ঘাঁটিয়া তাহার ভিতর হইতে কত আশ্চর্য নূতন কথা তাঁহারা বাহির করেন, যাহা সাধারন লোকের কাছে অদ্ভুত ও আজগুবি শুনায়।
আজ এক পন্ডিতের কথা বলিব, তাঁহাকে কেহ বুদ্ধিমান বলিয়া জানিত না, মাস্টারেরা তাঁহারা উপর কোনদিনই কোন আশা রাখেন নাই - বরং সকলে দুঃখ করিত 'এ ছেলেটার আর কিছু হইবে না।' অথচ এই ছেলেই কালে একজন অসাধারণ পন্ডিত হইয়া সমস্ত পৃথিবীতে আপনার নাম রাখিয়া গিয়াছেন। ইঁহার নাম চার্লস ডারুইন। পড়ার দিকে ডারুইনের বুদ্ধি খুলিত না, কিন্তু একটা বিষয়ে তাঁহার অসাধারন আগ্রহ ছিল। সেটি কেবল নানা অদ্ভুত জিনিস সংগ্রহ করা ! শামুক ঝিনুক হইতে আরম্ভ করিয়া, পুরাতন ভাঙা জিনিস বা পাথরের কুচি পর্যন্ত নানা জিনিসে তাঁহার বাক্স ও পড়িবার টেবিল বোঝাই হইয়া থাকিত। বালকের এই আগ্রহটা অন্য লোকের কাছে অন্যায় বাতিক বা উপদ্রব বলিয়াই বোধ হইত, কিন্তু তবু কেহ তাহাতে বড় একটা বাধা দিত না। কারণ, ডারুইনের মনটা স্বভাবতই এমন কোমল এবং তাঁহার স্বভাব এমন মিষ্ট ছিল যে সকলেই তাঁহাকে ভালবাসিত।
ছেলেবেলায় পড়ার মধ্যে একটি বই ডারুইন খুব মন দিয়া পড়িয়াছিলেন - তাহাতে পৃথিবীর নানা অদ্ভুত জিনিসের কথা ছিল। সেই বই পড়িয়া অবধি তাঁহার মনে দেশ-বিদেশ ঘুরিবার শখটা জাগিয়া উঠে। কলেজে আসিয়া ডারুইন প্রথমে গেলেন ডাক্তারি শিখিতে। সে সময় ক্লোরোফর্ম ছিল না, তাই রোগীদের সজ্ঞানেই অস্ত্র-চিকিৎসার ভীষণ কষ্ট ভোগ করিতে হইত। সেই যন্ত্রনার দৃশ্য দেখিয়া করুণহৃদয় ডারুইনের মন এমন দমিয়া গেল যে, তাঁহার আর ডাক্তারি শেখা হইল না। তখন তিনি ধর্মযাজক হইবার ইচ্ছায় স্কটল্যান্ড ছাড়িয়া ইংলন্ডে ধর্মতত্ত্ব শিখিতে আসিলেন। শিক্ষার দশা এবারও প্রায় পূর্বের মতোই হইল - কারণ, বাল্যকালে তিনি গ্রীক প্রভৃতি যাহা কিছু শিখিয়াছিলেন, এ কয় বছরে তাহার সবই প্রায় ভুলিয়া বসিয়াছেন, ভুলেন নাই কেবল সেই নানা জিনিস সংগ্রহের অভ্যাসটা। কলেজে তাঁহার সহপাঠী বন্ধুরা দেখিত, ডারুইন সুযোগ পাইলেই মাঠে ঘাটে জঙ্গলে পোকামাকড় সংগ্রহ করিয়া ফিরিতেছেন। হয়ত সারাদিন কোন পোকার বাসার কাছে পড়িয়া, তাহার চালচলন স্বভাব সমস্ত যারপরনাই মনোযোগ করিয়া দেখিতেছেন। এ বিষয়ে কেবল নিজের চোখে দেখিয়া তিনি এমন সব আশ্চর্য খবর সংগ্রহ করিতেন, যাহা কোন পুঁথিতে পাওয়া যায় না। বন্ধুরা এইসব ব্যাপার লইয়া নানারকম ঠাট্টা তামাসা করিত, কেহ কেহ বলিত, "ডারুইন পন্ডিত হইবে দেখিতেছি।" ডারুইন যে পন্ডিত হইতে পারেন, এটা কাহারও কাছে বিশ্বাসযোগ্য কথা বলিয়া বোধ হইত না।
এইরূপে বাইশ বৎসর কাটিয়া এল। ১৮৩১ খ্রীষ্টাব্দে "বীগল" নামে এক জাহাজ পৃথিবী ভ্রমনে বাহির হইল - ডারুইন বিনা বেতনে প্রাণিতত্ত্ব সংগ্রহের জন্য তাহার সঙ্গে যাইবার অনুমতি পাইলেন। পাঁচ বৎসর জাহাজে করিয়া তিনি পৃথিবীর নানা স্থান ঘুরিয়া বেড়াইলেন এবং প্রাণিতত্ত্ব বিষয়ে এমন আশ্চর্য নূতন জ্ঞান লাভ করিলেন যে, তাহা তাঁহার সমস্ত চিন্তা ও জীবনকে একেবারে নূতন পথে লইয়া চলিল। ডারুইন বলেন ইহাই তাঁহার জীবনের সব চাইতে স্মরণীয় ঘটনা।
তারপর কুড়ি বৎসর ধরিয়া ডারুইন এই সমস্ত বিষয় লইয়া গভীরভাবে আলোচনা করিতে লাগিলেন। প্রাচীনকালে যে-সকম জীবজন্তু পৃথিবীতে ছিল, আজ তাহারা নাই, কেবল কতগুলি কঙ্কালচিহ্ন দেখিয়া আমরা তাহার পরিচয় পাই। আজ যে-সকম জীবজন্তু দেখিতেছি, তাহারাও ভুঁইফোঁড় হইয়া হঠাৎ দেখা দেয় নাই - ইহারাও সকলেই সে আদিমকালের কোন না কোন জন্তুর বংশধর। কেমন করিয়া এ পরিবর্তন হইল ? এরূপ পরিবর্তন হইবার কারণ কি ? যে গাছের যে ফল তাহার বীচি পুঁতিলে সেই ফলেরই গাছে হয়, তাহাতে সেইরূপই ফল ফলে, আমরা ত এইরূপই দেখি। যে জন্তুর আকার-প্রকার যেমন, তার ছানাগুলাও হয় সেরূপ। শেয়ালের বংশে শেয়ালই জন্মে। শেয়ালের ছানা, তার ছানা, তার ছানা, তার ছানা, এরূপ যতদূর দেখিতে পাই সকলেই ত শেয়াল। তবে এ আবার কোন্ সৃষ্টিছাড়া নিয়ম, যাহাতে এক জন্তুর বংশে ক্রমে এমন জন্তুর জন্ম হয়, যাহাকে আর সেই বংশের সন্তান বলিয়া চিনিবার যো থাকে না ? ডারুইন দেখিলেন তিনি যে সমস্ত নূতন তত্ত্ব জানিয়াছেন, তাহার মধ্য হইতেই নানা দৃষ্টান্ত দেখাইয়া এই সকল প্রশ্ন ও সন্দেহের অতি চমৎকার মীমাংসা করা যায়।
যাহারা ওস্তাদ মালী তাহারা ভাল ভাল গাছের 'কলম' করিবার সময়, বা বীজ পুঁতিবার সময় যে-সে গাছের বীজ বা কলম লইয়া কাজ করে না। ভাল গাছে, ভাল ফুল, ভাল ফল বাছিয়া, তাহাদের মধ্যে নানারকম মিশাল করাইয়া, খুব সাবধানে পছন্দমত গাছ ফুটাইয়া তোলে। যেগুলা তাহার পছন্দমত নয়, সেগুলাকে সে একেবারেই বাদ দেয়। তাহার ফলে অনেক সময় গাছের চেহারার আশ্চর্যরকম উন্নতি ও পরিবর্তন দেখা যায়। একটা সামান্য জংলি ফুল মানুষের চেষ্টা ও যত্নে আজ সুন্দর গোলাপ হইয়া উঠিয়াছে - নানা লোকে গোলাপের চর্চা করিয়া আপন পছন্দমত নানারূপ বাছাই করিয়া, নানারূপ মিশাল দিয়া কত যে নূতনরকমের গোলাপ গড়িয়া তুলিয়াছে, তাহার আর অন্ত নাই। যাহারা ব্যবসার জন্য বা সখের জন্য নানারূপ জন্তু পালে তাহারা জানে যে, কোন জন্তুর বংশের উন্নতি করিতে হইলে, রুগ্ন কুৎসিত বা অকর্মণ্য জন্তুগুলাকে বাদ দিতে হয়। তাহার পর যেরূপ গুন ও লক্ষণ দেখিয়া বাছিয়া বাছিয়া জোড় মিলাইবে, বংশের মধ্যে সেইসব লক্ষণ ও গুণ পাকা হইয়া উঠিবে। লম্বা শিংওয়ালা ভেড়া চাও ত বাছিবার সময় লম্বা শিং দেখিয়া বাছিবে। তাহাদের যেসব ছানা হইবে, তাহাদের মধ্যে যেগুলার শিং ছোট, তাহাদের বাদ দিবে। এইরূপে ক্রমে লম্বা শিঙের দল গড়িয়া উঠিবে।
ডারুইন দেখিলেন, মানুষের বুদ্ধিতে যেমন নানারকম বাছাবাছি চলে, প্রাণিজগতেও সর্বত্রই স্বাভাবিকভাবে সেইরূপ বাছাবাছি চলে। যারা রূগ্ন যারা দুর্বল মরিবার সময় তাহারাই আগে মরে, যাহারা বাহিরে নানা অবস্থার মধ্যে আপনাকে বাঁচাইয়া রাখিতে পারে, তাহারাই টিকিয়া যায়। কাহারও গায়ে জোর বেশি, সে লড়াই করিয়া বাঁচে; কেহ খুব ছুটিতে পারে, সে শত্রুর কাছ হইতে পলাইয়া বাঁচে; কাহারও চামড়া মোটা, সে শীতে কষ্ট সহিয়া বাঁচে; কাহারও হজম বড় মজবুত, সে নানা জিনিস খাইয়া বাঁচে; কাহারও গায়ের রং এমন যে হঠাৎ চোখে মালুম হয় না, সে লুকাইয়া বাঁচে। বাঁচিবার মতো গুন যাহার নাই সে বেচারা মারা যায়, আর সেই সব গুণ আর লক্ষণ যাহাদের আছে তাহারাই বাঁচিয়া থাকে, তাহাদেরই বংশ বিস্তার হয়, আর বংশের মধ্যে সেইসব বাছা বাছা গুনগুলিও পাকা হইয়া স্পষ্ট হইয়া উঠে। এইরূপ আপনাকে বাঁচাইবার জন্য সংগ্রাম করিতে করিতে, বাহিরের নানা অবস্থার মধ্যে প্রত্যেক জন্তুর চেহারা নানারকমভাবে গড়িয়া ওঠে।
ডারুইন দেখাইলেন, এইরূপে এবং আরও নানা কারনে, আপনা হইতেই এক একটা জন্তুর চেহারা নানারকমে বদলাইয়া যায়। সেই হুঁকার গল্প তোমরা শুনিয়াছ, যার সব ঠিক ছিল কেবল নল্চে আর মালাটি বদল হইয়াছিল ? এক একটা জানোয়ারও ঠিক সেইরূপ নল্চে মালা সবই বদল করিয়া নূতন মূর্তি ধারন করে - তখন তাহাকে সম্পূর্ন নূতন জন্তু বলিয়া ভুল হওয়া খুবই স্বাভাবিক।
ডারুইনের কথা বলিতে গেলে দুটি গুনের কথা বিশেষ করিয়া বলিতে হয় - একটি তাঁহার অক্লান্ত অধ্যবসায় আর একটি তাঁহার মিষ্ট স্বভাব। তাঁহার শরীর কোনকালেই খুব সুস্থ ছিল না - জীবনের শেষ চল্লিশ বৎসর সে শরীর একেবারে ভাঙিয়া পড়িয়াছিল। কিন্তু তাঁহার মনের শক্তি আশ্চর্যরকম সতেজ ছিল। প্রতিদিন ভোরের আগে ঘুম হইতে উঠিয়া তিনি বাগানে যাইতেন - সেখানে ফুল ফল আর মৌমাছি আর প্রজাপতির সঙ্গে পরিচয় করিতে করিতে কোন্দিক দিয়া যে তাঁহার সময় কাটিয়া যাইত কত সময়, তাঁহার সে খেয়ালই থাকিত না।
ডারুইনকে যাঁহারা জানিতেন, তাঁহারা বলেন যে, সকলে প্রাণ দিয়া এমন ভালবাসিতে আর কেহ পারে না। শুধু মানুষ নয়, পশুপক্ষী নয়, গাছের ফুলটিকে পর্যন্ত তিনি এমনভাবে স্নেহের চক্ষে দেখিতেন যে, লোকে অবাক হইয়া যাইত। ১৮৮২ খ্রীষ্টাব্দে ৭৩ বৎসর বয়সে তাঁহার মৃত্যু হইলে ইংরাজ জাতি সেই 'অল্পবুদ্ধি' ছাত্রকে পরম আদরে বিজ্ঞানবীর নিউটনের পাশে সমাধি দেন।
মন্তব্য
সচলের অনেকেরই সম্ভবত "ডারুইনে হাতেখড়ি" এই তাতাবাবুর কলমে!
কি চমৎকার নির্মেদ-ঝরঝরে অথচ তথ্যসমৃদ্ধ লেখা! সাধে কি বলে- আমাকে ভাবায় সুকুমার রায়!
অনেক, ধন্যবাদ অবনীল। দাশু, হেঁশোরাম, হিজিবিজবিজ, কুমড়োপটাশ, হাঁসজারু আর আরও অনেকের ভিড়ে, সুকুমার যে চমৎকার বিজ্ঞান লেখক ছিলেন- এ কথাটা মনেই থাকে না। অথচ, 'সামান্য ঘটনা', 'জানোয়ার ইঞ্জিনিয়ার', 'শিকারী গাছ', 'শরীরের মালমশলা' কি চমৎকার সব লেখাই না তিনি লিখে গেছেন!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সহমত। উনার এই সব নব নব প্রতিভার খবর জানতে পেরে বিস্মিত এবং আনন্দিত হচ্ছি একইসাথে। আপনাকেও ধন্যবাদ।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
আয়হায়! আগে পড়েন নি? আমি এই বইয়ের প্রায় আধখানা পড়ে ফেলেছিলুম স্কুলে যাবার আগেই। আমাকে যে পাপিষ্ঠ বুঝিয়েছিলেন- "বিজ্ঞান খুউব সোজা, ঠিক যেন লাঙ্গলের ঈষ" তিনি হলেন সুকুমার রায়। দাশু ইতাদি পড়েছি আসলে আরেকটু বড় হয়ে। স্কুলের একেক ধাপ পেরুতে পেরুতেই একসময় বুঝে গেছি, আদতে সুকুদা ঠিক বলেন নি। অন্তত পাঠ্যবইয়ের ভাষ্য তেমনই!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
না আমার কাছে ছিলো মায়ের কিনে দেওয়া আবোল তাবোল, হযবরল আর পরে বন্ধুর বাসা থেকে পেয়েছিলাম পাগলা দাশু। পাতলা পাতলা শক্ত মলাটের বই ছিলো মনে আছে। এখন সমগ্র সিরিজটা হাতে পেয়ে বুঝছি উনার লেখনী পরিধি কত বিস্তর।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
আমি (প্রায়) আক্ষরিক অর্থেই পড়তে শিখেছিলাম, সবুজ বেড়ালের ছবি আঁকা সেই লাল বইটা থেকে। বলতে গেলে, ঐ লাল মলাটেই আটকে আছে সবটুকু শৈশব।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সুকুবাবু অলরাউন্ডার ছিলেন।
সুকুমারের বাবাও কিন্ত দারুণ দারুণ বিজ্ঞানবিষয়ক লেখা লিখতেন। উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্রতে প্রথম আমি ফসিলের বিষয়ে পড়ি।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
উপেন্দ্রকিশোর সমগ্র হস্তগত করেছি তবে পড়া হয়ে ওঠেনি। উনাদের হাতে যেকোন বিষয় যে অত্যন্ত সরস হয়ে ওঠে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
এখনও ডায়নোসরের ছবি দেখলেই মনে পড়ে ল্যাগব্যার্নিস আর গোমড়াথেরিয়ামের কথা। সেই অদ্ভুত জীবগুলো মনের মধ্যে থেকেই গেছে আশৈশব আর এই অদ্ভুত জীবগুলোই মনে হয় বিস্ময়বোধের শক্তিটাকে কোনদিন ম্লান হতে দেয়নি।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
একদম মনের কথা বলেছেন। শিশু মানস গঠনে সুকুমার রায়ের গদ্য-কবিতা-ছড়ার কোন তুলনা হয়না।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
সুকুমার রায়ের লন্ডন জীবনে লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি জাদুঘরে বারবার ভ্রমণের কারণেও ওই প্রাণীগুলোর কল্পনা হয়ত কাজে এসেছে
facebook
দারুণ লেখা উদ্ধার করলি আবার এক হিসেবে, ধন্যবাদ।
facebook
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর কথা এলে মনে পড়ে যায়, সত্যজিৎ রায়ের তৈরী কল্প-বৈজ্ঞানিক চরিত্র অধ্যাপক ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু আর সত্যজিতের বাবা সুকুমারের গল্পের অভিযাত্রী বৈজ্ঞানিক হেঁশোরাম হুঁশিয়ার কিংবা গবেষক বিজ্ঞানী প্রোফেসর নিধিরাম পাটকেলের কথা। শঙ্কু কি এদের আদলেই তৈরী? হতেও পারে। না-ও হতে পারে। তবে পাঠক হিসেবে আমরা মিল খুঁজে পেতেই পারি।
আবার সুকুমার রায় যেমন পদার্থ ও রসায়নে ডবল অনার্স, ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পেও দেখা যায় সত্যজিতের শঙ্কুও তাই। তাই শেষ কথাঃ “হে অতীত, তুমি ভুবনে ভুবনে/কাজ করে যাও গোপনে গোপনে।”
স্বরূপ-সন্ধানী
---------------------------------------
অন্ধকারে সব-চেয়ে সে-শরণ ভালো
যে-প্রেম জ্ঞানের থেকে পেয়েছে গভীরভাবে আলো।
সত্যজিত যে হারে তার গল্পে সিনিমায় বাবা সুকুমার রায়ের প্রতি ট্রিবিউট দিয়েছেন তাতে আমার মনে হয় শঙ্কু এদের আদলেই তৈরী। অনেক ধনবাদ মন্তব্যের জন্য।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
সুকুমার-এর লেখা বিজ্ঞানের রচনাগুলি পড়ার মজাই আলাদা।
আমার আর একটা কথা মনে হয়। আবোলতাবোল-এর ছড়াগুলি আদৌ আবোলতাবোল নয়। উপযুক্ত গবেষণার অভাবে সেগুলির প্রকৃত পাঠোদ্ধার হয়নি।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ঐ যে সত্যজিতের একটা গল্প ছিলো । সমুদ্রতটে এক বিজ্ঞানীর সাথে দেখা হয় লেখকের, দেখতে অবিকল হিজিবিজবিজের মত । তাই নাম দেন প্রফেসর হিজিবিজবিজ। কিন্তু তার কান্ডকারখানা ছিলো ভয়াবহ, সুকুমার রায়ের কল্পনার জগতকে বাস্তবে নিয়ে আসার চেষ্টা। দারুন রোমাঞ্চকর , মনে পড়ে গেল। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
নতুন মন্তব্য করুন