এক রাজ্যের প্রধান মন্ত্রী একেবারে থুত্থুরে বুড়ো হয়ে গেছেন। চুল দাড়ি সব শাদা হয়ে গেছে, লাঠিতে ভর দিয়ে হাটেন, চোখে কম দেখেন, কানে কম শোনেন। কিন্তু রাজা তাকে অবসরে পাঠান না। মন্ত্রী দেরী করে রাজ সভায় আসেন, মাঝেমাঝে অসুস্থ থাকেন । কিন্তু রাজার তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি তার এই বৃদ্ধ প্রধান মন্ত্রীতেই সন্তুষ্ট হয়ে আছেন।
রাজসভার অন্য সভাসদরা রাজার এই আচরনে ভিষন ক্ষুব্ধ। তাদের ইচ্ছা রাজা এবার বৃদ্ধ মন্ত্রীকে অবসর দিয়ে তাদের ভেতর থেকে নতুন প্রধান মন্ত্রী নির্বাচন করুন।
এই মন বাসনা নিয়ে তারা একদিন রাজার কাছে আর্জি পেশ করলো - মহানুভব রাজা, আমাদের প্রধান মন্ত্রীর তো অনেক বয়স হলো এবার তাকে অবসর দিন। আর মহামান্য আপনার সেবায় তো আমরা রয়েছি, আমাদের মধ্য থেকে কাউকে আপনার প্রধান মন্ত্রী করুন।
সভাসদদের কথা শুনে রাজা মুচকি হাসলেন। বললেন - ঠিক আছে আমি একটা পরীক্ষা নেব। সেই পরীক্ষায় তোমরা যদি পাশ করো তবেই আমি আমার বৃদ্ধ মন্ত্রীকে অবসর দিয়ে তোমাদের কাউকে আমার প্রধান মন্ত্রী করবো।
রাজার সম্মুখে পরীক্ষা দিতে সভাসদরা সবাই তখুনি প্রস্তুত। রাজা তাদের বললেন, তারা নিজেরাই যেন তাদের মধ্য থেকে তিনজন যোগ্য প্রার্থী বাছাই করে নেয়। সভাসদরা একটু আলোচনা করে তখুনি জ্যেষ্ঠ ও বুদ্ধিমান দেখে তিনজন প্রার্থী ঠিক করে ফেলল।
রাজা প্রার্থী তিনজনকে বললেন - আপনাদের আমি খুব সহজ একটা কাজ দিচ্ছি। আমি শুনেছি আমার প্রধান সেনাপতির পোষা মাদি কুকুরটা গতকাল কিছু বাচ্চা প্রসব করেছে। আপনারা একটু দেখে এসে আমাকে জানান যে কুকুরটা ক'টা বাচ্চা প্রসব করেছে।
এত সহজ পরীক্ষা দেখে সভাসদরা সবাই অবাক হয়ে গেল। আর প্রার্থী তিনজন ছুটলো সেনাপতির বাড়ির উদ্দেশ্যে।
কিছুক্ষন পরে তারা ফিরে আসলো। রাজা তাদের জিজ্ঞেস করলেন - এবার বলুন ক'টা ছানা দেখলেন? প্রার্থীরা তিনজন সমস্বরে বললেন - মহামান্য, কুকুরটি পাঁচটি ছানা প্রসব করেছে। রাজা বললেন - হুম, এবার বলুন তো ছানাগুলোর কোনটার গায়ের রং কি? প্রার্থীরা মাথা চুলকালো - ইয়ে, রাজামশাই ওটা তো লক্ষ্য করা হয়নি। আমরা আবার গিয়ে একটু দেখে আসি?
রাজা তাদের অনুমতি দিলেন আবার গিয়ে দেখে আসার জন্য। একটু পরে তারা দেখে এসে রাজাকে বলল - মহানুভব, ছানাগুলোর দুটোর গায়ের রং শাদা, একটা কুচকুচে কালো আর দুটো একটু লালচে রং-এর।
প্রত্যুত্তরে রাজা বললেন - হুম্ , তা ছানাগুলোর ক'টা মাদী আর ক'টা মদ্দা? প্রার্থীরা মাথা চুলকালো - ইয়ে, মহান রাজা, এটাও তো আমরা লক্ষ্য করিনি। আমরা কি আবার গিয়ে দেখে আসবো? রাজা আবারো যাবার অনুমতি দিলেন।
তারা আবার ছুটে গেল এবং ফিরে এসে বলল - মহামান্য রাজা, ছানাগুলোর তিনটা মদ্দা আর দুইটা মাদী। শুনে রাজা মুচকি হাসলেন। বললেন - তা ছানাগুলো সব সুস্থ তো? কোনটার কোন অসুখ বা সমস্যা নেই তো? প্রার্থী তিনজন আবারো মাথা চুলকালো - এটাও তারা লক্ষ্য করেনি। রাজা বললেন ঠিক আছে আপনাদের আর যেতে হবে না। আমার বৃদ্ধ প্রধান মন্ত্রীকে একটু ডাকুন এবার দেখি তিনি কি করেন।
রাজার তলবে প্রধান মন্ত্রী রাজসভায় এলেন। রাজা তাকে জিজ্ঞেস করলেন - প্রধান মন্ত্রী আপনি কি জানেন আমাদের সেনাপতির পোষা মাদী কুকুরটা কয়েকটি ছানা প্রসব করেছে গতকাল? মন্ত্রী জানালেন তার এটা জানা নেই। রাজা তখন তাকে বললেন - আপনি একটু গিয়ে দেখে আসুনতো কুকুরটা ক'টা বাচ্চা প্রসব করেছে।
প্রধান মন্ত্রী ঠুক ঠুক লাঠিতে শব্দতুলে গেলেন সেনাপতির বাড়িতে। ফিরে আসার পর রাজা জিজ্ঞেস করলেন - এবার বলুন মন্ত্রী, ক'টা বাচ্চা দেখলেন? মন্ত্রী উত্তর দিলেন - পাঁচটা জনাব।
রাজা : আপনি কি বলতে পাড়েন, ওগুলোর গায়ের রং কি?
মন্ত্রী : জি মহানুভব, ছানাগুলোর দুটো শাদা, একটি কালো আর দুটো একটু লালচে রং-এর।
রাজা : ক'টা মাদী আর ক'টা মদ্দা তা কি লক্ষ্য করেছেন?
মন্ত্রী : জি মহামান্য, ওগুলোর তিনটা মদ্দা আর দুটো মাদী।
রাজা : তা ছানাগুলো কেমন দেখলেন? কোনটার কোন অসুখ বা শারীরিক সমস্যা নেই তো?
মন্ত্রী : সবগুলোই সুস্থ। তবে একটা মাদী ছানার বাঁ পায়ে সমস্যা আছে। অন্য তিন পায়ের তুলনায় ওটা একটু খাটো।
কথা শেষে রাজা সভাসদদের দিকে হাসি মুখে তাকালেন। তাদের মাথা তখন লজ্জ্বায় নিচু হয়ে গেছে। তারা রাজার কাছে ক্ষমা চাইলো। প্রধান মন্ত্রীর কাছেও ক্ষমা চাইলো। রাজা তাদের ছোট একটা কাজ দিয়েই বুঝিয়ে দিলেন প্রধান মন্ত্রীর মতো বুদ্ধি এবং বিচক্ষনতা তাদের ভেতর অনুপস্থিত। আর এজন্যই বৃদ্ধ হয়ে গেলেও এখনো প্রধান মন্ত্রী তার স্বপদে বহাল আছেন।
-----------------------------------------------------
ছোট বেলায় খুব ভালো সময় কেটেছে আমার গ্রামে। প্রতি বার্ষিক পরীক্ষা শেষে গ্রামে যেতাম। সেখানে আমার অনেক আকর্ষনের একটা ছিল দাদার কাছে গল্প শোনা। গল্পের অফুরন্ত ভান্ডার ছিল তাঁর কাছে। সেসব গল্প থেকেই একটা তুলে দিচ্ছি এখানে। আশাকরি আপনাদের ভালো লাগবে। জানিনা এসব গল্পের উৎস কি (কে লিখেছেন বা কোথাকার কাহিনী)। যদি কেউ বলতে পাড়েন তবে উপকৃত হবো আমিও।
মন্তব্য
ভ্রাতা চালিয়ে যাও। ঠাকুরমার ঝুলির পর আর খুব একটা পড়া হচ্ছে না রূপকথা... তুমি লিখলে তবু পড়া হবে। আমার কিন্তু এখনো রূপকথা ভীষণ প্রিয়। ঠাকুরমার ঝুলির পর এবার দাদাভাইয়ের ঝোলা চাই...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
রূপকথা কোথায় পেলেন, মৃদুল? এ গল্প তো আমরা প্রতিদিন দেখছি। দেখছি, প্রতিদিনই ওই প্রধানমন্ত্রীর মত মানুষ কমছে আর অন্য অনুচরদের মত মানুষ দিয়ে শুধু দেশ না, দুনিয়া ভরে যাচ্ছে। পার্থক্য শুধু এই যে, গল্পের সভাসদরা লজ্জা পেয়ে ক্ষমা চেয়েছিল, বাস্তবেরগুলো তার ধার দিয়েও যায় না। বরং যে যত দুর্বিনীত, সে তত সফল।
.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...
.......................................................................................
Simply joking around...
ধন্যবাদ মৃদুল ভাই।
চেষ্টা করবো।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
- হুমম
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ইয়া হাবিবি।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
চমত্কার পোস্ট। আরো আসতে থাকুক।
.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...
.......................................................................................
Simply joking around...
ধন্যবাদ আনিস ভাই।
আপনার উপরের মন্তব্যে
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
দারুন লাগলো গল্পটা। আনিস ভাইয়ের সাথে পুরা একমত। সিরিজ চলুক...
দেখি কতো দূর চালাতে পাড়ি। গল্পগুলো শুনেছি সে অনেক আগে। তাই সব তো আর মনে নেই।
ধন্যবাদ আপনাকে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
দারুন লাগলো, আরো চাই ।
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
আইচ্ছা দিমুনে তাইলে
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
কীর্তিনাশা ভাই সব নাশ করে ফেলতেসেন!
আগের গল্প পড়লেও মন্তব্য করা হয়নি। সিরিজ দৌড়াবে
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
ধন্যবাদ রেনেট ভাই।
দৌড়াক তাইলে
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
সাথে আছি।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ধন্যবাদ, সাথে থাকার জন্য।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
লেখা জব্বর হইছে। চলুক সিরিজ। পরের গল্প কবে আসছে?
আসবে লেখা শেষ হলেই আসবে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
এই গল্পটি 'এশিয়ার লোককাহিনী" ৪র্থ খন্ড ( বা ৩য় খন্ডএ )আছে। সম্ভবত থাইল্যন্ড বা ভিয়েতনামের কাহিনী। শিশু একাডেমী থেকে প্রকাশিত। ছোটবেলায় পড়া, তাই সঠিক মনে নেই।
ঘটনাতে সভাসদদের বদলে ছিল রাজার বজরার মাঝি। রোদের মধ্যে বজরা চালাতে চালাতে বলেছিল- আমরা সবাই মানুষ, তবুও একজন কত আরাম করে, আর অন্যরা কষ্ট করে বজরা টানে! এটা কি সঠিক বিচার? তার উত্তর দেবার জন্ন্য রাজা একটা হৈচৈ হচ্ছে, তা দেখতে পাঠায়।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই তথ্যের জন্য।
দেখা যাক বইটা কোথাও পাওয়া যায় কিনা।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আমিও শৈশবে এই বইটা পড়েছিলাম । গল্পটা থাইল্যান্ডের । এই বইগুলো কি আর পুনঃপ্রকাশিত হয়নি ? কেউ কি বলতে পারেন ?
-----------------------------------------
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ভাল লাগলো।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
অভিজ্ঞতাই মানুষকে বড় করে তোলে, বয়স নয়।
*******************************
আমার শরীর জুড়ে বৃষ্টি নামে, অভিমানের নদীর তীরে
শুধু তোমায় বলতে ভালবাসি, আমি বারেবার আসব ফিরে
ঠিক, তবে কেবল অভিজ্ঞতা দিয়ে কাজ হয় না। সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর মতো ঘটে বুদ্ধিও থাকা চাই।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
নতুন মন্তব্য করুন