আমার একটা নদী ছিল ঠিক বলা চলে না। বলতে গেলে বলতে হয় আমার একটা নদী আছে। এপাড় থেকে ওপাড় ধোঁয়া ধোঁয়া দেখা যায় এমনই বিশাল সে নদী। নিত্য সে নদীতে জোয়ার ভাটা। আর স্রোতের টানে নিত্য পানির বাড়া কমা। তবে যখন পূর্নিমার পূর্ন চাঁদের দিন আসে তখন নদী যেন উথলে ওঠে ভরা কটালের টানে। ভাসিয়ে দেয় দু’কুলের ধান ক্ষেত, নিচু জমি। ফুলে ফেঁপে ওঠে আসেপাশের খাল বিল।
আমার যখন মন খারাপ হয়। কান্তি আর হতাশা এসে চেপে বসে বুকের ভেতর। অবসাদে ডুবে যায় দিন আর রাত। তখন আমি সে নদীর পাড়ে গিয়ে বসি। কি সকাল কি দুপুর কি রাত, কি সূর্যদয় কি সূর্যাস্ত। যখনই আমি সেই নদীর পাড়ে যাই আমার মন ভালো হয়ে যায়। নদী যেন অট্টহাসি হাসে আমাকে দেখে - আরে ব্যাটা, এত দুঃখের হাতাশার কি আছে? এই আমাকে দেখ, কেমন বিপুল স্রোত নিয়ে বয়ে যাচ্ছি। কত কিছুই তো হয় আমার বুকে, আসেপাশে। কই সে সব তো আমাকে আঁচড় কাটতে পাড়ে না। আমি দিব্যি বয়ে চলি তিব্র স্রোত বুকে নিয়ে। তুই এত অল্পতে ঘাবড়াস কেন? যা যা স্রোতে ভাসান দে গিয়ে।
আজ দুপুরেও আমি চলে এলাম আমার সে নদীর পাড়ে। তাজা সবুজ ঘাসের ওপর বসে নদীর ঘ্রান নিলাম। ফসলের মাঠে ধান পেকে সোনা রঙ ধরেছে, বুক ভরে সে ধানের ঘ্রান নিলাম। নদীর দিকে তাকিয়ে মন আমার ভরে গেল। কতগুলো জেলে নৌকা মাঝনদীতে জাল ফেলে বসে আছে মাছ ধরতে। দু’তিনটা খেয়া নৌকা যাত্রী নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে বিশাল নদীটা। নদীর এখানে ওখানে মাঝে মাঝে জলঘূর্নি জেগে উঠছে স্রোতের টানে। কতগুলো ছেলে মেয়ে আমি যেখানে বসে আছি তার একটু দূরে পানিতে ঝাপাঝাপি করে গোসল করছে। ডুব দিয়ে কে কাকে ছুঁতে পাড়ে তার প্রতিযোগীতা চলছে তাদের মাঝে। অনেক উঁচুতে আকাশে একটা চিল ডানা মেলে দিয়েছে এপাড় থেকে ওপাড়ে যাবে বলে। তার পিছু তাড়া করে একটা দাঁড়কাঁকও উড়ছে । কিন্তু দাঁড়কাঁকটা মাঝনদী বরাবর গিয়ে হাঁপিয়ে গেল বোধহয়। চিলকে তাড়া করা থামিয়ে সে কতগুলো ভাসমান কচুরিপানার ওপরে গিয়ে বসলো বিশ্রাম নিতে। সেখানে আগে থেকেই একটা শাদা বক এক পা তুলে বসে আছে ধ্যান মগ্ন।
এসব যত দেখছি তত আমার মন ভরে যাচ্ছে। প্রান জুড়িয়ে যাচ্ছে। দূরে শাদা পাল উড়িয়ে যে পানসী নৌকাটা যাচ্ছে সেটাকে দেখে খুব আফসোস হচ্ছে - আহা ঐ নৌকায় করে আমিও যদি ভেসে যেতে পাড়তাম !!
হঠাৎ যেন কানের কাছে বাজ পড়লো - কি ব্যাপার? চেয়ারে বসে বসে এরকম ঝিমাচ্ছেন কেন? সেই সকাল থেকে বলছি রিপোর্টটা তৈরী করে আমার টেবিলে পাঠান। তা না করে এখন ঝিমাচ্ছেন। রাতে বাসায় কি ঘুমান না নাকি?
ধমক খেয়ে চোখ মেলে তাকালাম। মুহুর্তে আমার নদীটা হারিয়ে গিয়ে সেখানে আমার কর্মস্থল ভেসে উঠলো। আমার বস আমার টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন চোখ মুখ কুঁচকে। মনে মনে বললাম - জাহান্নামে যান! কিন্তু মুখে আর সে কথা বলতে পাড়লাম না। তেল মারা হাসি ফুটিয়ে বললাম - স্যার পনের মিনিটে রিপোর্ট আপনার টেবিলে পৌঁছে যাবে।
আপাতত নদীটাকে দূরে সরিয়ে কাজে মন দিলাম। তবে নদী আমার সাথেই আছে। চোখ বন্ধ করলেই হলো। অমনি নদীটা তার বিপুল সৌন্দর্য আর সম্পদ নিয়ে আমার সামনে হাজির হয়ে যাবে।
মন্তব্য
আপনার বস কে মনে হচ্ছে মাইর দেই, আর একটু পরে এলে কি হত? মাত্র পানসী নৌকা পর্যন্ত গেলাম, না জানি পরে আর কি কি ছিল। দোয়া করি অফিসে যেনো আরো বেশি বেশি ঘুম আসে।
...........................
Every Picture Tells a Story
মুস্তাফিজ ভাই কি আমাকে বদ্দোয়া দিলেন নাকি?
অফিসে ঘুমাইলে তো চাকরি নট করে দিবে।
তবে আমার বসটা আসলেই বেরসিক।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আহারে বেচারা কীর্তিনাশা দা!!!
যাউক পান্থ, অন্তত আপনে আমার দুঃখটা বুঝছেন
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
হাহাহাহাহাহাহাহা হায় আপনি বেচারা
পড়তে পড়তে ভাবছিলাম আবার কেউ ডুবে মরে নাকি মজার টুইস্ট,
পথিক নবীর গানটা মনে পরে গেল,
"নদীর জল ছিলনা , কুল ছিলনা, ছিল শুধু ঢেউ
আমার একটা নদী ছিল জানল নাতো কেউ
এইখানে এক নদী ছিল জানল নাতো কেউ"
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
অন্যের দুঃখ দেইখা এত বেশি গড়াগড়ি দিয়েন না মুমু।
শেষে কিন্তু নিজেই ফাইসা যাবেন।
পথিক নবীর গানটা আমারো প্রিয়।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
সোনারগাঁ'র ওদিক থেকে ঘুরে আসুন। নদী ভাল লাগবে...
....................................................................................
অতঃপর ফুটে যাবার ঠিক আগে হীরক খন্ডটা বুঝলো, সে আসলে ছিল একটা মামুলি বুদবুদ!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ভালো বুদ্ধি দিছেন। দেখি সময় করে গিয়ে মেঘনা পাড়ে দাঁড়ামুনে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ময়ুরাক্ষী - নামটা মনে পড়ে গেলো।
আপনার নদীটার মিষ্টি একটা নাম দিয়ে দেন।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
খুব প্রিয় হুমায়ুন আহমেদের এই গানটা মনে পরে গেল,
"নদীর নাম ময়ুরাক্ষী কাক কালো তার জল
কেউ কোনোদিন সেই নদীটির পায়নি খুঁজে তল
তুমি যাবে কি সেই ময়ুরাক্ষী তে, হাতে হাত রেখে জলে নাওয়া,
যেই ভালবাসার রং চলে গেছে, সেই রং টুকু খুঁজে পাওয়া।।
সখি ভালবাসা কারে কয়,
নদীর জলে ভালবাসা খোঁজার কোন অর্থ কি হয়।।
কন্যা আমার কথা শোন
বনে জংগলে, নদী প্রান্তরে, ভালবাসা নেই কোন,
ভালবাসা থাকে চোখের মাঝে, চোখে চোখে শুধু চাওয়া
সেই চোখের জলে তোমার আমার ভালবাসা খুঁজে পাওয়া।।"
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
@ মুমু
গানটা শোনা হয়নি শুনতে হবে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
এখানে শুনেন নেট সমস্যা নাহলে
http://au.youtube.com/watch?v=rdxkWpUbKMY
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
ধন্যবাদ মুমু লিঙ্কের জন্য।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
@ শিমুল
মিষ্টি নাম দেবো না, আমার নদীটা আসলে অনেক তীব্র, অনেক সচকিত, মানে যাকে বলে বোল্ড আর কি।
তাই আমার নামও কীর্তিনাশা, আমার নদীর নামও কীর্তিনাশা।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
গ্রেইট !
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
থ্যাঙ্কু।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ময়ুরাক্ষী - নামটা মনে পড়ে গেলো।
আমারও তাই! বড় অদ্ভূত হয় এইসব নদ-নদী!
ঠিক, বড় অদ্ভুত এইসব নদ-নদী। এদের আকর্ষণ এড়ানো অসম্ভব।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
এ'নদী সারাজীবনের নদী, সর্বক্ষনই থাকবে। নইলে বাঁচবেন কি করে?
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ঠিক তীরুদা, জীবন থেকে মাঝে মধ্যে পালাতে চাইলে এরকম কিছু অবলম্বন তো লাগবে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
চমৎকার লাগল।
ধন্যবাদ অনিকেত দা!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
খুব সম্ভব, চন্দনা নামে একটা নদী আছে পাংশায়। নামটা শুনে আমার এক পরিচিত ব্যক্তি বলেছিলেন, "ওই নদীর পাড়ে বসে একটা বিড়ি খেতে পারলে সুখ পাওয়া যেতো।"
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
নামটা খুব সুন্দর!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
নদী সব সময় মানুষের পাশেই থাকে।
আমি একটি নদী দেখেছিলাম। নাম 'চিকলী'। এখনো মনে পড়লে মনের মধ্যে কি যেনো বিদ্যুৎচমকের মতো উঁকি দিয়ে যায়...
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
চিকলী নামটা তো বেশ!
কোথায় এই নদীটা?
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আহারে...
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
খুবই সুন্দর লাগল। আপনি আজকাল দুর্দান্ত সব লেখা দিচ্ছেন, চলুক এমন ধারা...
ধন্যবাদ ভাই বিডিআর।
আমার লেখায় আপনার মন্তব্য মিস করছিলাম আমি। এখন পেয়ে ভালো লাগছে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
চমৎকার!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন