নিরব পার্কের একটা বেঞ্চিতে বসে ছিল চুপচাপ। কোন দিকে লক্ষ্য ছিল না। এক মনে কি যেন ভাবছিল। হঠাৎ যেন ভোজবাজির মতো লোকটা তার সামনে হাজির হলো। এসেই দাঁত কেলিয়ে হেসে নিরবের পাশে বসে পড়লো। মুখের হাসি ধরে রেখেই সে নিরবকে জিজ্ঞেস করলো - আচ্ছা আপনি তো মানুষ তাই না?
নিরব চমকে উঠলো । মনে মনে ভাবলো - পাগলের পাল্লায় পড়লাম মনে হচ্ছে!! সে বিরক্ত চোখে তাকালো লোকটার দিকে। লোকটা দেখতে বেশ মোটা হোদল কুতকুত। মাথার চুল কাঁধ ছুঁয়েছে। পড়ে আছে লাল একটা পাঞ্জাবী। চোখে কালো চশমা। তাই চোখ দেখা যাচ্ছে না। লোকটা হাসি মুখেই বলল - আপনার আকার দেখে মনে হচ্ছে আপনি মানুষই হবেন। আমার আকারটাও তো মানুষের তাই না?
নিরব এবারো কিছু বলল না। পাগলের সাথে কথা বলা মানে তাকে উৎসাহিত করা। কিন্তু লোকটা হঠাৎ হাত বাড়িয়ে নিরবের মাথার চুল ধরে টান দিল। বেশ কিছু চুল উপড়ে চলে এল সে টানে। নিরব আর্তস্বরে চিৎকার করে উঠলো - আঁউ! কি করছেন এসব?
লোকটার মুখে তখনো হাসি - হে হে হে কিছু মনে করবেন না। কিছু স্যাম্পল মানে উপাত্ত নিচ্ছি। নিরব কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোকটা আবারো হাত বাড়িয়ে নিরবের কানের লতিতে চিমটি কাটলো। আবারো ’আউ!’ বলে চিৎকার করে কান চেপে ধরলো নিরব। দেখলো লোকটা ছিঁড়ে নেয়া চুলগুলো তার পাঞ্জাবীর পকেটে ভরলো। আর যে হাত দিয়ে চিমটি কেটেছিল সেই হাতের আঙুলের ডগায় এক বিন্দু রক্ত সে কি একটা ছোট কাঁচের কৌটা বের করে তার ভেতরে পুছে রাখলো।
নিরব কান চেপে ধরে বসে আছে। চোখে তার ভয়। ভয়ে সে দৌড়ে পালাতেও ভুলে গেছে। লোকটা যেমন হঠাৎ এসেছিল তেমনি হঠাৎই উঠে দাঁড়ালো। বলল - আচ্ছা তাহলে চলি এখন। আপনাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছি মনে হচ্ছে। ভয় পাবেন না। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বলে লোকটা হাত বাড়িয়ে দিল নিরবের সাথে হাত মেলাতে।
নিরব বসা অবস্থাতেই হাত বাড়িয়ে দিল ভয়ে ভয়ে। কিন্তু হাত মিলিয়েই সে আবারো 'আউ!’ করে উঠে দাঁড়ালো। হাত মেলানোর সময় তার মনে হলো যেন ইলেকট্রিক শক খেল সে হাতের তালুতে। লোকটা তখনও দাঁত কেলিয়ে হাসছে। বলল - বাহ! দারুন রিফ্লেক্স তো। আপনাদের স্নায়ুও দেখছি বেশ টনটনে। দশ মিলি সেকেন্ডেই সাড়া দিল আঘাতের।
হতভম্ব হয়ে নিরব দাঁড়িয়ে রইলো লোকটার সামনে। কি বলবে কি করবে কিছু বুঝতে পাড়ছে না। লোকটা তখন বলল - বুঝতে পাড়ছি আপনি খুব ভয় পেয়েছেন। তবে দয়াকরে ভয় পাবেন না। আমি কোন পাগল বা হিংস্র জন্তু নই। আমি আসলে আপনাদের গ্রহেরই কেউ না। আমার বাস এই গ্যালাক্সির অন্য প্রান্তে। ওখানেও আপনাদের এই সৌরমন্ডলের মতো একটা সৌরমন্ডল আছে। সেই সৌরমন্ডলের একটি গ্রহের বসিন্দা আমি। আমাদের সভ্যতা আপনাদের থেকে কিছুটা এগিয়ে আছে। আমরা মহাকাশে ভ্রমন করতে পারি। আর সেই সুযোগেই আমি পৃথিবীতে এসেছি। আমি আসলে একজন শিক্ষানবিশ। বায়োলজির ওপর পড়াশুনা করছি। যখনই যে গ্রহে যাই, সেই গ্রহে যদি প্রান থাকে তবে আমি সে সব প্রানের বৈশিষ্ট্য জানার চেষ্টা করি। আপনার বেলায়ও তাই করেছি। কিছু চুল নিয়েছি, এক বিন্দু রক্ত নিলাম আর আপনার স্নায়ুবিক ক্ষমতা কতটুকু তা জানলাম। এর মাধ্যমে মানুষকে জানা আমার জন্য সহজ হবে।
লোকটা আবারো হাসলো। বলল - কি ভয় একটু কমেছে তো? এবার আমার পরিচয় দেই। আমার নাম হ্লাচিং। আর আমার গ্রহের নাম কিক্বক্বাত্ । আপনারা যেমন নিজেদের মানুষ বলেন, তেমনি আমরা আমাদের বলি কিংক্ব। যাই হোক আপনার সাথে কথা বলছি একটা ভাষা অনুবাদক যন্ত্রের সাহায্যে, যা মোটেই সহজ কাজ নয়। অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার। আর তাছাড়া মানুষের বেশ ধরে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে ভিষণ। যাই এখন আপনি ভালো থাকুন। পৃথিবী বাসীরা ভালো থাক। আপনাদের সভ্যতা অনেক দূর এগিয়ে যাক।
বলা শেষ করেই লোকটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। যেমন ভোজবাজির মতো এসেছিল তেমনি ভোজবাজি করে অদৃশ্য হয়ে গেল। পার্কের ঐ কোনে তখন নিরব ছাড়া কেউ ছিল না। তাই সে ছাড়া এই ঘটনার সাক্ষি কেউ রইলো না। কিন্তু নিরব কি দেখলো কি শুনলো কিছুই বুঝতে পাড়ছে না তখনো। সে তার শক খাওয়া হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো হতভম্ব হয়ে।
মন্তব্য
eta ki holo?
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
এইটা সিরিজ করেন কীর্তিনাশা ভাই ! জমব !
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
দেখি চিন্তা ভাবনা কইরা
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
হ, আমিও তাই কই।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
কইলেই হইলো! সিরিজ ক্যামনে করুম হেইডা তো কইলেন না!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
প্রাণবন্ততা ছিল যে কারনে এক নিমিষে শুরু থেকে শেষে চলে আসা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে বায়োলজি মেজর ছিল আমার। হ্লাচিং্যের জানার আগ্রহটা অনুভব করলাম নিজের ভেতরই। আমি যেসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছি সেগুলা পেয়েছি কিন্তু কিছু জানার আগ্রহ থেকে গেল " হ্লাচিং কতগুলো মানুষের চুল, রক্তের নমুনা নিয়েছে" / "পাঞ্জাবীর পকেটে সে চুল রেখেছে সেটা কি সাদামাটা নাকি বিশেষ ভাবে তৈরি "
"বোঝা যাচ্ছে শারীরিকগত পার্থক্য আছে দুগ্রহের মানুষের সাথে সেটা কেমন কিন্তু কেমন সেটাকি সে হ্লাচিং যদি বলতো ভালো হতো। আরো বেশি খুশিতে লাফাতাম আলাপটা যদি দুগ্রহের দুজন বায়োলজিস্টের হতো।
যাই হোক চমৎকার লিখেন আপনি। শুভ কামনা
নির্জর প্রজ্ঞা
আচ্ছা, একটা একটু অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করি? আপনার নামটা কি 'নির্জর প্রজ্ঞা' না কি 'নির্ঝর প্রজ্ঞা' ? আমি নির্জর শব্দটার সাথে অপরিচিত বলেই জিজ্ঞেস করছি। 'নির্জর' মানে কি?
স্নিগ্ধা,
"নির্জর' মানে হল যার জরা নাই অর্থাত্ বার্ধক্য নাই৷ "নির্জর প্রজ্ঞা' মানে যে জ্ঞান কখনও জরাগ্রস্ত হয় না৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
ঠিক এটা নিয়েই আরেকজনের সাথে কথা হচ্ছিলো, শব্দটা 'অজর' জানি - 'নির্জর'ও যে হয় সেটা জানতাম না। ধন্যবাদ !
ভাই তাড়াতাড়ি আপনার ঠিকানাটা বলেন। এরপর হ্লাচিং আইলে সরাসরি আপনার কাছে পাঠায়া দিমুনে।
ধন্যবাদ আপনাকেও
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
বেশী তাড়াতাড়ি শেষ করা হলো, ঘটনা আরেকটু বাড়ালে ভালো হতো
কিন্তু স্নিদ্ধা দিদি আমি তো আরো ছোট করতে চাচ্ছিলাম এটা।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
এবার যে কার কীর্তি নাশ হবে বুঝতে পারছি না !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আমিও বুঝতাছি না।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
=============================
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
জোস হয়েছে লেখা
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
ধন্যবাদ
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
- নাশুকীয়!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধুসরীয় মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
সবাই বলেন - ইয়া হাবিবি
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
এলিয়েন-ফেলিয়েন দেখে এক্স ফাইলসের কথা মনে পড়ল- "আই ওয়ান্ট টু বিলিভ"... ভাল লিখসেন ভাইজান
থ্যাঙ্কু
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
নতুন মন্তব্য করুন