শরিফের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরছে। কিছুতেই সে কান্না থামাতে পাড়ছে না। এত বড় দুঃখ সে এ জীবনে আর পায়নি। আজ ফুলির বিয়ে। যে ফুলির সাথে তার পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্ক। যে ফুলি দু’দিন আগেও শরিফের গলা জড়িয়ে বলেছে - তোমারে ছাড়া বাঁচবো না। সেই ফুলি দুবাই ফেরৎ পাত্র পেয়ে প্রেমের মুখে ঝাঁটা দিয়ে বিয়ে করতে বসে গেছে। এ দুঃখ শরিফ রাখবে কৈ। সে তাই ঠিক করেছে এ জীবন আর রাখবে না। আত্মহত্যা করবে।
সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে রাতের আঁধারে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে সে চলে এসেছে তাদের বাড়ির পেছনের জঙ্গলে। হাতে এক গোছা মোটা দড়ি নিয়ে উঠে বসেছে একটা লম্বা তেঁতুল গাছে। গলায় দঁড়ি দেবার জন্য একটা শক্ত দেখে ডাল বেছে তাতে দড়ি গোছা শক্ত করে বেঁধেছে। এখন গলায় ফাঁস আটকে ঝুলে পড়লেই হলো। মরার আগে শেষবারের মতো কান্নাকাটি করার জন্য বসলো সে একটু। এমন সময় কাছেই আরেক ডালে একটা কেমন খচমচ আওয়াজ হলো। চাঁদের হালকা আলোয় একটা আবছায়া মুর্তি দেখা গেল সেখানে।
মরতে আসলেও শরিফের মনটা কেমন করে উঠলো। ভূঁতের ভয় যে মরার চেয়েও বড় ভয়। ভালো করে ভয় পাওয়ার আগেই ছায়ামুর্তিটা কথা বলে উঠলো - ভয় পাইয়ো না ভাই। আমি ভূঁত হইলেও ম্যান্দামারা ভূঁত। কারোর কোন ক্ষতি করবার পারি না। আইজ থিকা বহুকাল আগে আমিও একটা গাছের লগে ঝুইলা পড়ছিলাম। তারপর থিকা এইরম ম্যান্দামারা ভূত হইয়া বনে বাদারে ঘুইরা বেড়াই। আমার কেসও তোমার মতো। যার লগে দশ বছর প্রেম করছি সে শেষকালে আমারে থুইয়া আমার বড় ভাইরে বিয়া করছিল। মনের জ্বালা জুড়ানের লাইগা তাই ঝুইলা পড়ছিলাম। কিন্তু ভাই জ্বালা কি আর জুড়ায়? দুনিয়ার রঙ্গ সব জাগায় এক রম।
মরার পর ভূঁত হইয়া কয়েকদিন খুব আরামেই আছিলাম। হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ি, যেখানে খুশি ঘুরি। কিন্তু প্যাঁচ লাগলো একদিন এক পেত্নীরে দেইখা। সে তখন এক শ্যাওড়া গাছে বইসা আরাম কইরা উঁকুন বাছতাছিল। তারে দেইখাই আমি তার প্রেমে পইড়া গেলাম। আহ্লাদ কইরা তার কাছে গিয়া দাঁড়াইতেই দিল এক ধমক - 'যাহ্ ব্যাটা ম্যান্দামারা! দূরে গিয়া মর! আমি বইসা রইছি ঠাডাপড়ার লাইগা আর কোত্থিকা আইছে একটা গলায় দড়ি দেওয়া ম্যান্দামারা!!'
বুঝলারে ভাই, ভূঁত সমাজে গলায় দড়ি দেওয়া, বিষ খাওয়াগো কোন ভাত নাই। সবাই ডাকে ম্যান্দামারা। কেউ তোমারে বাল দিয়াও পুঁছবো না। যদি মরতেই হয়, তাইলে সব চাইতে ভালো হইলো ঠাডা পইড়া মরা। ঠাডাপড়া ভূঁতেগো ইজ্জতই আলাদা। ঠাডা পইড়া মরছে বইলা এগো মেজাজটাও থাকে ঠাডার মতো কড়া। হামদো মামদো কেউ এগো কাছে পাত্তা পায় না। ভূঁত পেত্নী কাউরে এরা মুখ ফুইটা একবার কইলেই হইলো - 'উঠ্ ! চল আমার লগে!' সাথে সাথে সুর সুর কইরা তার পিছে হাটা দিব ভূঁত পেত্নীরা।
ঠাডা পইড়া মরতে না পাড়লে রেলের তলে কাটা পড়তে পারো কিনা দেখ। অথবা বাসের তলে চাপা পড়লেও কিছু মান সম্মান থাকবো। কিন্তু ভাই গলায় দড়ি, বিষ খাওয়া, পানিতে ডুবা এইগুলা করতে যাইও না। ভূঁত সমাজে কোন পাত্তা পাইবা না। আমার মতো ম্যান্দামারা নাম নিয়া পইড়া থাকবা। তখন মনে দুঃখ পাইলে আর মরতেও পারবা না। আমার মতো কাইন্দা কাইন্দা বনে বনে ঘুইরা বেড়াইবা। এই কাম কইরো না ভাই। যদি মরবারই চাও তাইলে ঝড়ের দিনে খোলা মাঠে গিয়া খাড়ায়া থাকো। দেহ ঠাডা পইড়া মরতে পারো কি না।
একটানে এত গুলো কথা বলে ভূতটা কাঁদতে লাগলো ভেউ ভেউ করে........
মন্তব্য
দারুন! খুবই মজা পেলাম!
তবে প্লীজ বলেন তো ভাই ক্যাম্নে আপনি অণুগল্পের ফ্যাক্টরী-টা দিসেন! রহস্যটা কী!
যদি না বলেন, তাহলে মনে হয় আমাকেই এইবার ভেউ ভেউ করে কাঁদতে হবে!
A question that sometimes drives me hazy: am I or are the others crazy?
আরে ভাই এসব কি এভাবে ফ্রি ফ্রি বলা যায় নাকি। একদিন কোন রেস্টুরেন্টে বসি চলেন। একটু খাওয়া দাওয়া করি। তারপর বিলটা আপনে দেন। তারপর আমি আমার রহস্য বলি আপনার কাছে।
কান্নাকাটি করে কোন লাভ হবে না, বুঝছেন ?
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
মরলে পারলো না বলে শরিফের জন্য সমবেদনা রইল। আহারে বেচারা, ছ্যাঁকার দাগ নিয়া ঘুরে বেড়াবে পৃথিবীতে। আর পাড়ার ছেলে ছোকড়ারা ডাকবে ওই যে আমগো ছ্যাঁকা খাওয়া শরিফ ভাই যায়।
কি ব্যাপার শরিফের প্রতি এত সহানুভুতি কেন? আপনেও ছ্যাঁকামাইসিন খাওয়া পাবলিক নাকি?
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
গল্পটা জমতে জমতে গিয়ে যেন জমলো না আর...
বস্ গল্প কেমনে জমাইতে হয় সেইটাই তো জানিনা। কিছু টিপস্ দেন না, প্লিজ!!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ভুতের লম্বাকথার মাঝে
একবার দুবার শরীফের কোন সংলাপ থাকলে
বোধহয় একঘেয়ে লাগতো না
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
হ ভাই আপনে কইলেন আর হইয়া গেল - বেচারা শরিফ এমনিতেই ছ্যাঁকামাইসিন খাইয়া কান্তাছিল, তার ওপর ভূত আইসা বসছে ঘাড়ের কাছে। সে বেচারা তো তাব্দা খাইয়া বসে আছে কথা বলবে কখন??
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
বহুবার বহু কারনে আত্মহত্যা করতে চেয়েছি কিন্তু খুবই ভয় লাগে বলে শেষ মূহুর্তে ক্ষ্যান্ত দিছি। আত্মহত্যা করার শখটা রয়েই গেলো।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
দোয়া করি আপনার এই শখ যেন জীবনেও পুরন না হয়।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
- বিমান ক্র্যাশ করে মরে ভূত হলে কেমন ইজ্জত পাওয়া যায় সেইটা কিন্তু বলেন নাই! কিংবা ধরেন রকেট ফাইট্টা মইরা গিয়া যারা ভূত হয়, তাগো কি অবস্থা ভূতসমাজে?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আপনার এই প্রশ্নের জবাব একমাত্র দিতে পাড়ে ম্যান্দামারা। অথবা নিজেই প্লেন ক্রাশ কইরা মইরা দেখতারেন ব্যাপারডা কি দাঁড়ায়। মনেহয় ঠাডা পড়ার চাইতেও ভালো রেজাল্ট পাইবেন
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
বেশ মজা আর ভালো লাগলো আপনার কীর্তি!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ধন্যবাদ তীরুদা!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
পবিত্র আত্মহত্যা হইতে কাউকে ফিরাইয়া দেয়া ঠিক নয়। মৌলিক অধিকার পরিপন্থি।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
হ ঠিক কইসেন রণ'দা।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ভালো লাগছে!
_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ব্যাপক মজা পাইছি।
--------------------------------------------------------
ধন্যবাদ, বাচ্চা ভূত!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
নতুন মন্তব্য করুন