এক গাঁয়ে দুই কৃষক থাকতো - সিরাজ আর মিরাজ। এক খন্ড জমি নিয়ে দু’জনের মধ্যে চরম শত্রুতা । একদিন সিরাজকে নিজের এলাকায় পেয়ে লোকজন নিয়ে তাকে প্রচন্ড মারধর করে মিরাজ। সেই দিনই সিরাজ মনে মনে সংকল্প করে মিরাজকে সে খুন করবে।
তখন বর্ষাকাল। এক সন্ধ্যায় আকাশে মেঘ জমেছে প্রচুর। বৃষ্টি নামবে যে কোন সময়। এমনি অবস্থায় মিরাজ ফিরছিল বাজার থেকে একা একা জঙ্গলের পথ ধরে। সিরাজ সেই পথের ধারেই অপেক্ষা করছিল। মিরাজ আসতেই সে তার উপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাকে কাবু করে ফেলে। তারপর তার হাত পা বেঁধে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় জঙ্গলের ভেতরে এক পরিত্যক্ত মন্দিরের উঠোনে।
মিরাজ তখন বাঁচার জন্য কাঁকুতি-মিনতি করছে। বার বার বলছে তাকে ছেড়ে দেবার জন্য। কিন্তু সিরাজের মন তাতে একটুও গলে না। প্রচন্ড ক্রোধে সে অন্ধ হয়ে গেছে। মিরাজ যখন দেখলো সিরাজ তাকে কিছুতেই ছাড়বে না তখন সে বলল - আমারে মাইরা তুই বাঁচতে পারবি না। তোরও একদিন শাস্তি হবে। এ কথা শুনে সিরাজ হা হা করে হাসে, বলে - ক্যামনে শাস্তি হবে? আমি তোরে মাইরা গুম কইরা ফালামু। কেউ এই ঘটনার সাক্ষী থাকবে না। তাইলে আমার শাস্তি ক্যামনে হবে?
আকাশ থেকে তখন বৃষ্টি পড়ছে অঝোরে। সন্ধ্যার আলো তখনো নিভে যায় নি পুরোপুরি। সেই আলোতে মন্দিরের উঠোনে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো পড়ে ছিটকে উঠছিল। সেদিকে তাকিয়ে মিরাজ বলে - ঐ বৃষ্টির ফোঁটাই আমার সাক্ষী। ও’ই একদিন আমার খুনের সাক্ষী দিবে। শুনে সিরাজ আবারো হেসে ওঠে হো হো হো করে।
একটু পরে সিরাজের হাতের ধারালো অস্ত্র ঝলসে ওঠে। মিরাজের রক্ত ধুয়ে যায় অঝোর বৃষ্টিতে। তারপর সিরাজ উঠোনের পাশের বহুদিনের অব্যবহৃত কুপের ভেতর ফেলে দেয় মিরাজের লাশ। আর কুপের মুখ ঢেকে দেয় এক খন্ড বড় পাথরের স্ল্যাব দিয়ে, যা কিনা ওটা ঢাকার কাজেই ব্যাবহার হতো আগে।
এর পর অনেক দিন চলে গেছে। মিরাজের কথা গাঁয়ের লোকজন ভুলে গেছে। যদিও সবাই সিরাজকে এ ব্যাপারে সন্দেহ করেছে, কিন্তু প্রমানের অভাবে কিছুই করতে পারেনি তারা। সিরাজ এখন বৃদ্ধ। মাঠে কাজ করতে যেতে পারে না। তার ছেলে সব কিছু দেখাশুনা করে। সিরাজের দিন কেটে যায় অলস ভাবে ঘরের দাওয়ায় বসে বসে।
একদিন গোধুলি লগ্নে বৃষ্টি নামলো। তখনো সিরাজ বসে ছিল ঘরের দাওয়ায়। উঠোনে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে ছিটকে উঠছিল। তা দেখে হঠাৎ সে হেসে উঠলো। তার ছেলের বউ একটু দূরে বসে বসে চাল ঝাড়ছিল। সে জিজ্ঞেস করলো - বাবা হাসেন ক্যান? তখন সিরাজ হেসে বলে - একজন মরার সময় এই বৃষ্টির ফোঁটারে সাক্ষী রাখছিল। তারপর আবেগের বশে সে তার ছেলেবউকে সব ঘটনা খুলে বলল।
পরের দিন নদীর ঘাটে পানি আনতে গিয়ে সে ঘটনা বউ তার সইকে বলল। সই আবার রাতে খেতে বসে ঘটনা তার স্বামীকে বলল। এভাবে এ’কান ও’কান করতে করতে ঘটনা পৌঁছালো মিরাজের ছেলেদের কানে। তারা সোজা থানায় গিয়ে মামলা ঠুকে দিল সিরাজের নামে।
দু’দিন পরে পুলিশ এসে সিরাজকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল। জেরার মুখে সে ঘটনার সত্যতা স্বিকার করলো। এরপর মামলা কোর্টে উঠলো এবং সবশেষে সিরাজের ফাঁসি হলো।
এভাবেই সামান্য বৃষ্টির ফোঁটার কাছে সিরাজকে নতি স্বিকার করতে হলো। যে বৃষ্টির ফোঁটাকে মিরাজ সাক্ষী মেনেছিল তার মৃত্যুর আগে।
------------------------------------------------------
ছোট বেলায় খুব ভালো সময় কেটেছে আমার গ্রামে। প্রতি বার্ষিক পরীক্ষা শেষে গ্রামে যেতাম। সেখানে আমার অনেক আকর্ষনের একটা ছিল দাদার কাছে গল্প শোনা। গল্পের অফুরন্ত ভান্ডার ছিল তাঁর কাছে। সেসব গল্প থেকেই একটা তুলে দিচ্ছি এখানে। আশাকরি আপনাদের ভালো লাগবে। জানিনা এসব গল্পের উৎস কি (কে লিখেছেন বা কোথাকার কাহিনী)। যদি কেউ বলতে পাড়েন তবে উপকৃত হবো আমিও।
মন্তব্য
সেটাই। কৃতকর্মের শাস্তি পেতে হয়ই। সত্য চাপা থাকে না কখনোই। সিরিজটা খুব ভাল হচ্ছে। চালায়া যান।
সহমত আপনার সাথে।
অসংখ্য ধন্যবাদ
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
বেশ ভাল লাগল ।
আপনার দাদুর মত একটা দাদু পেলে ভাল হত । আমার নিজের দাদু মারা গিয়েছিলেন আমার শৈশবেই ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ধন্যবাদ এনকিদু!
আসলেই আমি খুব ভাগ্যবান ওরকম একজন দাদু পেয়েছিলাম।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
অনেকদিন পর দাদার কথা মনে পড়লো।
আমার দাদা ছিলো একখান জিনিস !
এই গল্পটা আমার কাছে নতুন।
ভালো লাগলো।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আমার দাদাও একখানা জিনিস আছিলো
পাঁচখানা করছিল বিবাহ (সেই কাহিনী বলবো আরেকদিন)
গল্প ভালো লেগেছে শুনে আমারো ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
হুঁ, চলুক...
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আইচ্ছা চলবো .........
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
হুম...... আমিও বলি চলুক ।
*********************************************************
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
হুম .... আমিও বলি চলবে ........
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
চমৎকার গল্প
ধন্যবাদ
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আপনার গল্পগুলি সবসময়ই ভালো লাগে... এইবারেরটাও ব্যতিক্রম না... এই সিরিজের গল্পদুটা আগে পড়া ছিলনা... খুঁজে খুঁজে পড়ে ফেললাম... সিরিজটা ধরে রাখেন... আমার নানা দাদার বলা গল্পগুলা এখন আর মনে পড়েনা...
_______________
এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।
_______________
::সহজ উবুন্টু শিক্ষা::
ধন্যবাদ
দারুন উৎসাহিত হলাম।
ব্যাপার না, মনে করার চেষ্টা করুন, মনে পড়ে যাবে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
কীর্তিনাশা এইবার নীতিবাক্য ধরলেন?
হ গুরু ! সাধু, দরবেশ হওনের চেষ্টায় আছি
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
চমৎকার, ভাল লাগল ।
...........................
Every Picture Tells a Story
ধন্যবাদ, মুস্তাফিজ ভাই !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
হ্যাঁ, একদিন সবাইকেই নিজের কর্মের ফল ভোগ করতে হবে।
ক্লু পাওয়া যাবেই।
/ছোট মানুষ
তাই তো মনে হয় !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
দূর্দান্ত লাগল। চলুক।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
থ্যাঙ্কু !
ছিলেন কই এদ্দিন?
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আরে, এই কাহিনী তো ছোটবেলায় আমিও শুনেছি। শুধু শিরোনামটা ছিলো "বুদবুদ তুমি সাক্ষী থাইকো"। বুদবুদ বলতে বৃষ্টির ফোঁটা পানিতে পড়লে ক্ষণিকের জন্য যে বুদবুদ সৃষ্টি হয় সেটা।
গল্পটা সম্ভবত একটা সময়ে বেশ প্রচলিত ছিল গ্রামে গঞ্জে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
এই গল্পটা আমিও শুনেছিলাম বালকবেলায়, গ্রামবাসকালে। তবে যে কার মুখে শুনেছিলাম তা আজ আর মনে নেই।
মনে না পড়লে নাই! গল্প শুনছেন এইটাই বড় কথা
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আমিও এই গল্প শুনছিলাম ছোটবেলায়। কীর্তিনাশার কাছে!
মজাদার হইছে।
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
হা হা
ধন্যবাদ !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
নতুন মন্তব্য করুন