শাহজাহানকে ফেলে রাখা হয়েছে জঙলার ধারে। তার হাত পা শক্ত করে বাঁধা। মুখে কাপড় গুঁজে দেয়া হয়েছে এমন ভাবে যাতে গোঙানী ছাড়া আর কোন আওয়াজ না করতে পারে। গ্রামের কেউ দিনের বেলাতেই এখানে আসেনা সাধারনত। আর এখন তো প্রায় মধ্যরাত।
চারিদিকে কেমন একটা স্তব্ধতা বিরাজ করছে। আকাশে ভাঙা চাঁদ জংলাটাকে আলোকিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বড় বড় গাছের আচ্ছাদনের কারনে তাতে স্থানটা আরো রহস্যময় ও ভৌতিক হয়ে উঠছে। আর আবহ সঙ্গীতের জোগান দিচ্ছে রাতের পোকামাকড় এবং থেকে থেকে ডেকে ওঠা এক হুতোম প্যাঁচা।
শাহজাহানের মাথায় কোন চিন্তাই কাজ করছে না। একটা ঘোর আতঙ্কে সে কেবল উর্দ্ধপানে তাকিয়ে আছে শূন্য দৃষ্টিতে আর হাঁপরের মতো নিঃশ্বাস নিচ্ছে। এর মধ্যেই হঠাৎ তার কানে একটা শব্দ আসে। কেউ যেন খুক খুক করে কেশে উঠলো তারপর খাকারি দিয়ে গলা পরিস্কার করলো। শাহজাহান ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করে কে কাশছে। কিন্তু কিছুই দেখতে পায় না।
এবার সে কারো গলা শুনতে পায়, কেউ যেন তাকে ডাকছে - শাহজাহান ! ও শাহজাহান ! ডর নাইরে বাপ। আমি আইসা গেছি। তোর কোন ডর নাই। শাহজাহান আবারো দেখার চেষ্টা করে কে কথা বলছে। ভাঙা চাঁদের ধোঁয়াটে আলোয় এবার সে একটা ন্যুজ ছায়ামুর্তি দেখতে পায়। কিন্তু কে তা ঠাহর করতে পারে না।
তখন ছায়ামুর্তি আবারো কথা বলে - আমারে চিনতে পারলি না রে ব্যাটা? আরে আমি ! আমি তোর বাপ। তোর এমন বিপদ দেইখা আর দূরে থাকতে পারলাম না, চইলা আসলাম। এখন আর ডরাইস না। শাহজাহান ফুঁপিয়ে ওঠে। চোখের শুকানো অশ্রুধারা আবারও ভিজে ওঠে।
ছায়ামুর্তি বলে - দেখ দেখ, আবার কান্দে কেন্ ? কোন ডর নাই, কইলাম তো! শোন্ আইজ থিকা দশ বছর আগে এক রাত্রে যখন তুই আমার মুখে বালিশ চাইপা ধরছিলি, তখন আমিও এইরম ডরাইছিলাম। কিন্তু একটু পরেই দেখি সব ঝামেলা শেষ। শরীরের জ্বালা যন্ত্রনা সব হাওয়া। ফুরফুরা শরীর নিয়া তখন যেদিক খুশি সেদিক যাইতে পারি। আসলে মরনরে আমরা যত কঠিন ভাবি, কষ্টের ভাবি তত কঠিন না।
শাহজাহান আবারো ফুঁপিয়ে ওঠে। ছায়ামুর্তি বিরক্ত কন্ঠে বলে - দেখ দেহি, কান্দে খালি ! শোন রে গাধা, একটু পরেই দেখবি সব ঠিক হইয়া গেছে। তোর শরীলে আর মনে যে লোভ আর লালসার ময়লা জমছে সব ধুইয়া সাফ হইয়া গেছে। যে লোভে আর ক্রোধে অন্ধ হইয়া তুই আমারে মারলি, আমার বিষয় সম্পত্তি সব নিজে দখল করলি। অন্য ওয়ারিশগো, তোর ভাই বোনগো করলি দেশ ছাড়া । তোর মা এক রাত্রে পানির অভাবে মইরা থাকলো সেইদিকেও খেয়াল করলি না। তোর বড় বউটাও ছিল তোর মতো। শাশুরীর এত ডাকাডাকিতেও সে একবার গিয়া তারে পানি দিল না। পরে সেই বউরেও তুই পিটাইয়া মারলি। এই যে এত ফিরিস্তি দিলাম তোর পাপের, একটু পরেই দেখবি এই সবের জ্বালা যন্ত্রনা থিকা তুই মুক্ত।
একথায় শাহজাহান ছটফট করে ওঠে। তার কান্নার বেগ বেড়ে যায়। ছায়ামুর্তি আবারো বলে - খালি খালি কান্দিস না বাচ্চা পোলাপানের মতো! তার চাইতে নিজের পোলার কথা চিন্তা কর। নাতিডা আমার আর কত সইহ্য করবে? তুই তার মা'রে পিটাইয়া মারছস। তখন ছোট ছিল বইলা সে কিছু বলে নাই। তারপর তুই বিয়া কইরা নতুন বউ ঘরে আনলি। তখন বড় হইলেও, সে কিছু বলে নাই। এখন তুই তারে কইতাছস ত্যাজ্য করবি। তোর সহায়-সম্পত্তি সব ছোট বউরে লিখ্যা দিবি। এই সব শুইন্যা সে কেমনে চুপ কইরা বইসা থাকে ? সে তো তোরই পোলা, তোর রক্তই তো তার শরীলে, তাই না?
ছায়ামুর্তি বলে চলে একটানা - এখন এত রাত্রে সে তোরে এই জঙলার ধারে ধইরা আনছে। হাত পাও বাইন্ধা ফালাইয়া রাখছে। তোরে জবাই দিবে বইলা দেখ দূরে বইসা দা’য়ে ধার দিতাছে। আবার কোদালও নিয়া আসছে। মাটি চাপা দিয়া তোর লাশ গুম করবে বইলা। আহারে! পোলার দরদ আছে তোর লাইগা। ভোঁতা দা দিয়া জবাই দিলে তুই কষ্ট পাবি এই জইন্য কত যত্ন কইরা দা'য়ে ধার দিতাছে দেখ্ ।
শাহজাহান সর্ব শক্তিতে হাত-পায়ের বাঁধন ছিঁড়তে চায়। কিন্তু পারে না। ছায়ামুর্তি বলে - কোন লাভ নাই রে! ছিড়তারবি না। তার চাইয়া চুপ চাপ শুইয়া থাক। ঘটনা ঘইটা যাউক। কোন ডর নাই তোর। এই তো আমি আইসা পরছি। তোর মা’ও আইতে চাইছিল। কিন্তু যে পানির পিপাসা নিয়া সে মরছিল সেই পিপাসা তার এখনও মিটে নাই। নদীর পাড়ে বইসা বইসা আজলা ভইরা খালি পানি খাইতাসে সে। তয় তুই ডরাইস না বাপ! আমি তো আছি। একটু পরেই দেখবি সব ঝামেলা শেষ। তারপর দুই বাপ বেটা মিল্যা দুনিয়া ঘুইরা বেড়ামু।
হঠাৎ দূরে একটা পায়ের শব্দ পাওয়া যায়। যা কিনা এদিকেই এগিয়ে আসছে। শাহজাহানের ছেলের দা’য়ে ধার দেয়া শেষ হয়েছে বোধহয়। শাহজাহানের শবীর কেঁপে ওঠে তিব্র আতঙ্কে। সেই ছায়ামুর্তিটাকে সে তখনও দেখতে পায় আবছায়া আলোয়। সে তেমনি দাঁড়িয়ে আছে আর মুখে বলে চলেছে - কোন ডর নাই তোর। কোন ডর নাই বাপ!!
মন্তব্য
অসংখ্য ধন্যবাদ অরূপ ভাই
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ভাল লাগলো কীর্তি ভাই।
ডরাইয়েন না। আমরা আছি তো
---------------------------------
বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
হ ডর কিসের আপনারা তো আছেনই
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
"পাপে ছাড়ে না বাপেরে"
হক কথা !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
দারুন!!
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
ধন্যবাদ
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
সর্বনাশা গল্প হয়েছে, কীর্তিনাশা ভাই !
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
হে হে
আপনাকেও ধন্যবাদ একরাশ !!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
খুব ভালো গল্প! উত্তেজনাকর!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ধন্যবাদ তীরু'দা
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
জিনিসখান মন্দ হয় নাই !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
থ্যাঙ্কু রণ'দা
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ফ্যাক্টরী আবার পূর্ণ উদ্যমে চালু হোক। শুভকামান
হ যা অবস্থা তাতে কামান দাগান লাগবো পুরোদমে
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
বেশ পছন্দ হইছে।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
ধন্যবাদ শীল ভাই ।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
গল্প ভয়াবহ ভাল হইসে! স্যালুট!
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
আপনারেও স্যালুট !
অনেক দিন লেখা পোস্টান না ব্যাপারটা কি ?
'কহিলে কহিবা'র মতো আরেকখান ছাড়েন না !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
সিরাম হইছে...
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
ধন্যবাদ সর্বজ্ঞ ভাই ।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ভাল লাগল নাশুদা
*********************************************************
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
আপনার মন্তব্য পেয়ে আমারো খুব ভালো লাগলো নিবিড়
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
টান টান গল্প।
ভাল লাগল।
ধন্যবাদ
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ভয়াবহ জিনিস লিখসেন ভাই!
এরকম গল্প লেখার জন্য ঢাকা শহরের সবচাইতে উৎকৃষ্ট চা-টা আপনার পাওনা রইল। দেখা হলে পাওনা মিটিয়ে দিবো।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
অসংখ্য ধন্যবাদ গৌতম দা! আপনার মন্তব্য খুব ভালো লাগলো আবার লজ্জাও পেলাম
তবে পাওনার কথা টুকে নিলাম। না পাওয়া পর্যন্ত ভুলুম না
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
গল্পটা দারুন লাগলো।
কাহিনী, লেখার ধরণ, সব।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
ধন্যবাদ অনেক ধন্যবাদ !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
খাইসে! খালি খুনাখুনি!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
হ
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
হ, ভালো হইছে, কোন ডর নাই, চালাইয়া যান, পড়ার জন্য আমরা আছিনা?
...........................
Every Picture Tells a Story
হ ডর কিসের আপনারা থাকতে ?!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ডিয়ার লেখক, আপনার লেখাটা অসম্ভব ভালো হইছে। ভালো লেগেছে।
একুশে বইমেলা ২০০৯-এ একটা হররপত্রিকা প্রকাশ হচ্ছে। আপিন এই মেইলে একটা হররগল্প পাঠালে খুব খুশি হবো। আপনার এবং সচলায়তন কতৃপক্ষের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে এই লেখাটাও চলবে।
প্রিয় অতিথি, সচলায়তন কর্তৃপক্ষের আপত্তি না থাকলে আমারো আপত্তি নেই। তবে লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ তো বললেন না। জানাবেন আশাকরি। সাথে আপনার পরিচয় জানতে পারলে আরো ভালো লাগবে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
সিরাম একটা জিনিস হৈসে!!
ধন্যবাদ ইশতি ভাই।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ও সে ডেইঞ্জারম্যান... ও সে ডেইঞ্জারম্যান!!
--------------------------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।
দৃশা
আপনাকে অন্য কোথাও মন্তব্যে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই ডেইঞ্জারম্যান... গানটা কই পাই? শোনার আগ্রহ হয়।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
সংগ্রহ করিয়া প্রেরন করা হইবে। স্মরণেয়াছে।
মমতাজ আফার এইসব ইউনিক ক্লাসিক পিস নেটে পাওয়া যায় না।
পাহিবা মাত্র পাঠানো হইবেক। সবুর, সবুর... সবুরে বলে বিরিয়ানীর প্রধান উপাদান ফলে।
---------------------------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।
দৃশা
শুক্রিয়া মেহেরবান
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
ধন্যবাদ দৃশা আফা!
তা এই ডেইঞ্জারম্যানডা ক্যাঠা ?
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
পোলাটা একটা জিনিয়াস।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
আহেম.....
কার কথা কইলেন, তাতাপু ?
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
শশশশশশশশশশশশশ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
নতুন মন্তব্য করুন