মফিজ প্রতিদিন লালদীঘির পাড়ে বসে থাকে আর উদাস চোখে দেখে কত কত লোক এসে দীঘিতে বর্শি ফেলে বড় বড় মাছ ধরে খুশিতে দাঁত কেলিয়ে বাড়ির দিকে ছুটে যায়। কত ধরণের মাছ যে তারা ধরে - রুই, কাতলা, বোয়াল, মৃগেল, চিতল, কোরাল, পাঙ্গাস, শোল - নামের আর শেষ নেই।
মফিজ উদাস হয়ে দুঃখি দুঃখি চোখ করে কেবল দেখেই যায়। কারণ তার বর্শি নেই, তাই মাছ ধরার মুরোদও নেই। তবে হঠাৎ করেই একদিন মফিজ একটা বর্শি পেয়ে যায়।
আসলে হয়েছে কী, মফিজদের পাড়ার বৃদ্ধ চেটু চৌধুরীর ছিল বিশাল এক বর্শি। সে সেই বর্শি দিয়ে নিয়মিত মাছও ধরতো। হঠাৎ একদিন নিজের বাড়ির উঠোনে নিজের গরুর কাঁচা গোবরে পা পিছলে আছাড় খেল সে। আর সেই রাম-আছাড়েই সে পটল ক্ষেতে পটল তুলতে নেমে গেল।
চেটু চৌধুরীর তিন কুলে কেউ ছিল না এক বোন ছাড়া। মফিজ সেই বোনের হাতে পায়ে ধরে, অনেক কান্নাকাটি করে সেই বর্শি বাগিয়ে নিল। তবে শর্ত একটাই - যত মাছ ধরবে তার তিন ভাগের দুই ভাগ চেটু চৌধুরীর বোনকে দিতে হবে। মফিজ তাতেই রাজি। বর্শি পাওয়া গেছে এই খুশিতেই সে আত্মহারা। মাছের হিসাব কিংবা হিস্যা তখন তার কাছে মূল্যহীন।
তো প্রথম দিন মফিজ অনেক আয়োজন করে মাছ ধরতে গেল। তবে ঐ পর্যন্তই। সারাদিন বসে থেকেও একটা মাছ ধরতে পারলো না। ওদিকে তার আসেপাশে কত লোক যে টপাটপ বর্শি ফেলে ধপাধপ মাছ ধরে হাসি মুখে বাড়ি চলে গেল, তার কোন গোনা গুনতি নেই। মফিজ তো অবাক ব্যাপার কী তার বর্শিতে মাছ ওঠে না ক্যান?!!
দ্বিতীয় দিনেও একই ঘটনা - মফিজের বর্শির ফাঁতনা ভাসতেই থাকে ডোবে না। আর অন্য লোকে পানিতে বর্শি ফেলা মাত্র টুপ করে ফাঁতনা ডুবে যায় আর টান দিলে মাছ উঠে আসে ধুপ করে। মফিজ দীঘির পাড়ে বসে বসে বিষণ্ন মনে ভাবতে থাকে কাহিনী কী? মাছ উঠে না ক্যান?
ভাবতে ভাবতে কখন সন্ধ্যা ঘনায় মফিজ খেয়াল করে না। তার হুঁশ হয় কার ডাক শুনে। কে যেন তার নাম ধরে ডাকছে - মফিজ, ও মফিজ, ঐ মফিজ্জা !
সন্ধ্যার ঘনায়মান আঁধারে মফিজ কাউকে দেখতে পায় না। সবাই তখন যার যার বাড়ি চলে গেছে। মফিজের গা ছম-ছম করে ওঠে, ঘাড়ের রোম খাড়া হয়ে যায় - তবে কী এই নির্জনতায় অশরীরি কেউ ডাকছে তাকে?!!
তখন দীঘির পানিতে একটা খল খল শব্দ হয়। মফিজ তাকিয়ে দেখে সেখানে একটা মাছের আভাস দেখা যাচ্ছে। সেখান থেকেই আবারো কন্ঠ ভেসে আসে - হ রে মফিজ, আমি এক কাৎলা মাছ কতা কইতাসি ডরাইস না। আমি তরে কিছু কথা কইতে আইছি। কথাগুলা তোর কামে লাগবো।
মফিজ সাহস ফিরে পেয়ে প্রশ্ন করে - কী কথা?
কাৎলা বলে - শুন তুই যেরম বর্শি বাইতাসোস তাতে জীবনেও মাছ পাবি না। কুনো মাছ তো বর্শিতে উডবো না।
মফিজ জিজ্ঞেস করে - ক্যান ? আমার বর্শি কি খারাপ? নাকি বর্শিতে যে আদার দেই তা মাছেগো পছন্দ না?
কাৎলা বলে - না তোর সবই ঠিক আছে। খালি তোর কফালে কুনো সিল নাই। আগে কফালে একটা সিল লাগা দেখবি বর্শিতে লাফায়া লাফায়া মাছ উডবো।
মফিজ বলে - তোর এই কথার কোন মানে বুজলাম না। সিল আবার কী জিনিস?
কাৎলা হাসে, বলে - আরে পাগল! ভালো কইরা খেয়াল কইরা দেক, এই দীঘিতে যারা মাছ দরতে আসে তাগো পোত্তেকের কফালে একটা সিল আছে। যার সিলের জোর যত বেশি তার বর্শিতে তত বড় মাছ উডে। কেউর কেউর সিলে এতো জোর যে হেরা শুকনা খটখইট্টা দীঘিতে বর্শি ফালাইলেও আৎকা মাছা উইঠা আইবো।
মফিজ মাথা চুলকায়। কাৎলা ধমকে ওঠে - কিরে পাগলা, অহনও বুজতারোস নাই?!
মফিজ বলে - হ, বুজছি। এই লাইগাইতো কই - যারা মাছ ধরতে আসে হেগো কপালে এমন ইংরাজি অক্ষর লেখা কেন! কেউর কপালে 'A', কেউর কপালে 'B' আবার কেউর কপালে 'J'। আরো নানা অক্ষরও দেখি। কিন্তু সেইগুলা সংখ্যায় কম।
কাৎলা বলে - এই তো ধরতারসোস ব্যাফারডা। এইসব সিলের আবার সিজন আছে। হেই লাইগা সিজন বুইঝা একটা সিল লাগা কফালে দেকবি মাছের আর অভাব থাকবো না।
মফিজ প্রশ্ন করে - কিন্তু এইসব সিলের অর্থ কী ?
কাৎলা হেসে বলে - আরে গাধা তাও জানোস না ? A মানে আম্লিক, B মানে বিম্পি, J মানে জা'মুতি। বুজলিরে পাগলা এইসব সিল ছাড়া এইহানে কারো কুনো খাওন নাই।
মফিজ বলে - হ বুঝছি এইবার। যাই তাইলে আগে কপালে একটা সিল মাইরা আসি।
কাৎলা মাথা নাড়ে - হ, যা । জলদি গিয়া কফালে সিলের ব্যাবস্থা কর।
মন্তব্য
কপালে সিলের বিষয়টা বলে খুব সুন্দর 'সিম্বলিক' প্রকাশ এনেছেন আপনার লেখায়। তবে,
বিষয়টা আরেকটু বুঝিয়ে বলবেন? আমি বুঝতে পারিনি।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আম্লিক - আওয়ামী লীগ
বিম্পি - বিএনপি
জা'মুতি - জামাত
এতোক্ষণে বুঝলাম। তবে আরো সহজেই বোঝা উচিত ছিল আমার!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ব্যাপর্না
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ধন্যবাদ তীরু'দা। এবার বুঝেছেন তো ?
প্রহরী ভাইকেও ধন্যবাদ
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ঘটনা কিছুই বুঝতে পারি নাই।
নিবন্ধন নাম - মেঘলা জীবন
ইমেইল-
আরেকবার পড়েন
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
হে হে হে। এইবার বুঝতে পারছি। চমইতকার লেখা।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ফ্যাক্টরি চালু হইল নাকি? শুভকামান
আপনার কপালে কোন সিল?
ফ্যাক্টরি তো চালুই আছে। খালি উৎপাদন কম
আমার বর্শিও নাই, সিলও নাই।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
সিল না থাকলে মাছও বড়শিতে উঠে না! যামু কই!!
সূর্যবন্দী মেঘ...
হ
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আপনি দেখি জাতীয় পার্টিকে দাম দেন না! অ্যাঁ? তোমাদের কাছে এসে বিপদের সাথী হতে আজকের চেষ্টা তেনার ... ভুলে গেলেন লম্পটটাকে?
সেই গানটা কোথাও পাওয়া যায় না এখন? এইটা সংগ্রহে রাখা দরকার...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কেন পাওয়া যাবে না নজরুল ভাই? জাতিয় পার্টির কোন হোমড়ারে গিয়া ধরেন, খুশি মনে দিয়া দিবে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
এই রে ! ভুল হয়া গেছেগা হিমু ভাই।
খাড়ান এই গল্পের পরবর্তি ভার্সনে তেনারে একটা পাট দিমুনে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আমি কোনো সিল মারতে চাই না!
..................................................................
ঐ যে হাঁটছি মুদ্রা দোষে নাকটা ঘষে
আড্ডা মানেই সেকেণ্ড হাফে খেলছি সোলো
গুজবো না শার্ট আমার পাড়া স্মার্ট পেরিয়ে
সে রোদ্দুরের স্মরণ সভাও লিখতে হল
তাইলে আফনের কফালে মাছও নাই ।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ভাইসব, গত সোম, ২০০৯-০৮-১০ ১৬:২৬ হতে ফ্যাক্টরীর লে-অফ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন থেকে উৎপাদন নিয়মিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রাথমিক উৎপাদন বাজারজাত করার পর কাস্টমারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এই ব্যাপারে উৎপাদনকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনি পারেনও দাদা !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ঝাপা কৈ? এরশাদাদু দেখলে কানবো কিন্তু।
গল্প ফাটাইন্যা হৈছে।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ঝাপা কেমনে মিস হইলো সেইটা আমিও চিন্তাইতাসি
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
এইবারত বা-প রাও কিছু কিছু মাছ পাচ্ছে!
ভাল লাগছে!
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
হ, কপালে সিল থাকলে সিজন বুঝে কিছু না কিছু মাছ ঠিকই জোটে ........
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
গফের ক্যাটেগরীতে স্যাটায়ার নাই কেনু? কেনু? কেনু? কেনু?
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
হ- সিল'ই বেবাক-
পানলিক'রা ব্যাবাক...
কড়িকাঠুরে
নতুন মন্তব্য করুন