--------
দেখলাম - এক বিশাল জঙ্গল। সে জঙ্গলে অগুনতি পশু-পাখি। আর তাদের রাজা হলো এক ডোরাকাটা বাঘু। তার নাম 'পুটুর পুট'। বনের পশু-পাখিরা তার নাম অনেক সমিহ করে উচ্চারণ করে। রাজার নামের আগে অন্তত পাঁচবার মহামান্য বলা সেখানে আইন করে বাধ্যতামুলক।
সেই জঙ্গলের এক কোনে এক গাধা তার পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে। পরিবার বলতে গাধার বউ আর তার দুই আন্ডাবাচ্চা। তো সেদিন গাধা ঘাস খেতে গিয়ে আনমেন এক ঝার বুনো বোম্বাই মরিচ খেয়ে ফেলেছে। আর ফলাফল স্বরূপ কিছুক্ষণ পর থেকেই শুরু হয়েছে তার দারুন পেটে ব্যাথা আর থেকে থেকে পাতলা হাগু। যতক্ষণ হাগু করে সে ততক্ষণ কোঁকায়। আর হাগু থামলে পেটের ব্যাথায় আর পুটুর জ্বলুনিতে মাটিতে গড়াগড়ি খায়।
একটু পরে গাধার আবার হাগু পায়। সে একটা বড় গাছের গোড়ায় গিয়ে শরীর মোচরাতে মোচরাতে হাগু করতে থাকে। হঠাৎ গাছের উপরে একটা ঘন্টাধ্বনি শোনা যায় - টুন টুন টুন টুন ! সেখানে একটা বড় হুতোম প্যাঁচা বসে বসে ঝিমাচ্ছিল। তার গলায় একটা ঘন্টি বাঁধা। গাধার হাগুর শব্দে সে মহা বিরক্ত হয়ে ঘন্টা বাজিয়ে চিৎকার করে ওঠে - এই কে কোথায় আছিস ? ঠোলাকুলশিরোমনিকে খবর দে! জঙ্গলটা আমাদের উচ্ছন্নে চলে গেল !
মুহুর্তে বিভিন্ন গাছে বসে থাকা কিছু পাখি উড়ে গেল এদিক ওদিক। আর তার কিছুক্ষণ পরেই এক মিশমিশে কালো শিয়ালের আবির্ভাব হলো সেখানে। তার মুখে রাজ্যের বিরক্তি। কাঁচা ঘুম থেকে তুলে আনা হয়েছে তাকে। এসেই সে হুতোম প্যাঁচাকে উদ্দেশ্য করে বলল - ''বলেন ধার্মবতার হঠাৎ এমন জরুরি তলব কেন ?'' হুতোম বলে - ''দিনে এমন ঘুমালে চলবে ? রাজ্য যে এদিকে গোল্লায় যাচ্ছে সে খেয়াল আছে ?'' এ কথায় শিয়ালের টনক নড়ে - ''বলেন কী ?'' হুতোম ধমকের সুরে বলে - ''তবে আর বলছি কী ! এই গাধার বিরুদ্ধে কেন রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হবে না, আপনি তার কারন দর্শান।''
শিয়াল উত্তেজিত হয়ে বলে - ''কেন সে কী করছে ?'' হুতোম উত্তর দেয় - ''সে আমাদের মহামান্য রাজার নাম নিয়ে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করেছে।'' শিয়াল গর্জে ওঠে - ''কী, এতো বড় সাহস রাজার নাম নিয়া ছিনিমিনি ! ঐ আমার ঠোলারা কে কোথায় আছস ? এক্ষণ আইসা এই গাধাটারে বান। এইডারে যদি আটচল্লিশ ঘন্টার মইধ্যে ফাঁসিতে না লটকাইছি তাইলে আমার নাম ঠোলাকুলশিরোমনি 'সহেনা যাতুন' না !''
মুহুর্তে চারিদিকে একটা মহা হুটোপুটি শুরু হয়ে যায়। এক দঙ্গল শিয়াল এসে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। কিছু শিয়াল হুক্কাহুয়া রব তুলে গাধাটাকে বেঁধে ফেলে। গাধার বাচ্চাদুটো ভয়ে কেঁদে ওঠে। কিছু শিয়াল ওদের দিকে এগিয়ে যায়। তারপর আজব কান্ড, বাচ্চাদুটো হাওয়া হয়ে যায়। মানে তাদের আর কোন চিন্হই থাকে না সেখানে। যাকে বলে এক্কেবারে গুম। এই দেখে এবার গাধার বউ কেঁদে ওঠে। অমনি কিছু শিয়াল গিয়ে বউটাকে মাটিতে ফেলে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে চুমু খাওয়া আরাম্ভ করে। ওদের কান্ড দেখে ঠোলাকুলশিরোমনি 'সহেনা যাতুন' ধমকে ওঠে - ''আহ্, তোরা কী করতাছোস ! তোরা আগের থিকা ভালো হইছোস ঠিকই, কিন্তু এখনো কেউ কেউ খারাপ আছোস। ছাইড়া দে গাধীটারে !''
চারিদিকে তখন শোরগোল পড়ে গেছে। বনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পশু-পাখিরা এসেছে ঘটনা কী দেখার জন্যে। তার মধ্যেি এক দঙ্গল সজারু এসেছে। চোখে তাদের চশমা, গলায় ঝোলানো নোটবুক আর পেন্সিল। এসেই তারা নানা হম্বিতম্বি শুরু করে - ''এই কী হইছে এখানে? মূল ঘটনা কী ?'' তবে তাদের হম্বিতম্বি বেশিক্ষণ টেকে না। সজারুগুলোকে দেখে শিয়ালগুলোর শরীর চনমন করে ওঠে - আহারে কতদিন মনের সুখে সজারু পিটাই না ! এক নিমেশে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে সজারুগুলোর ওপর। তারপর এলোপাতারি মাইর। সহেনা যাতুন হাজার চেষ্টা করেও তাদের থামাতে পারে না।
বেশ কিছুক্ষণ পর যখন মারামারি শেষ। তখন সহেনা যাতুন বলে - ''এইবার থাম তোরা। এখন গাধার বিচার হবে।'' কিন্তু সজারুরা তার কথায় বাগড়া দেয়। তারা ব্যাথায় কোঁকাতে কোঁকাতে বলে - ''না, আগে আমাদের উপরে যে বর্বর হামলা হইলো, তার বিচার করা লাগবে। করতে হবে ! করতে হবে !'' সমস্বরে তারা চেঁচাতে থাকে। সহেনা যাতুন তাদের সান্তনা দিয়ে বলে - ''সজারু ভাই, বইনেরা আপনারা শান্ত হন। আপনাদের উপর যারা হামলা করছে আটচল্লিশ ঘন্টার মইধ্যে তাগো খুঁজে বাইর করে আমি তাগো শাস্তির ব্যাবস্থা করবো। এইটা আমার প্রমিস। তবে আপনাগোও কই, ঠোলাগুলার কাছথিকা সব সময় দূরত্ব বজায় রাইখা কাজ করবেন। তাইলে আপনাগোও শান্তি, তাগোও শান্তি।''
তারপর গাধার বিচার কাজ শুরু হয়। হুতোম প্যাঁচা গাছের মগডালে বসে আবার তার ঘাড়ের ঘন্টি নাড়ায়। সেই শব্দে সবাই চুপচাপ হয়ে যায়। শুধু গাধার বউটা তখনো কাঁদে ইনিয়ে বিনিয়ে। সহেনা যাতুন ধমকে ওঠে - ''ঐ তুই থাম !'' তাতে গাধার বউ আরো জোরে কেঁদে উঠে বলে - ''আগে আমার বাচ্চা দুইটারে ফেরৎ দেন।'' সহেনা যাতুন তাকেও সান্তনা দেয় - ''কান্দিস না রে বিন্দিয়া ! আটচল্লিশ ঘন্টার মইধ্যা তোর বাচ্চাগো খুঁইজা বাইর করার নির্দেশ দিতাছি আমি।''
এরপর আবার বিচার কাজ শুরু হয়। সহেনা যাতুন গাধার দিকে তাকিয়ে ধমকে ওঠে - ''ঐ ক' তুই রাজার নামে কী কইছোস ?'' গাধা সেই প্রথম থেকেই ভয়ে কাঁপছে থর থর করে আর বিড়বিড় করে বলছে - ''আঁই কিচ্ছি ! আঁই কিচ্ছি !'' হুতোম প্যাঁচা উপর থেকে বলে - ''এই গাধা আমি উপর থেকে নিজ কানে শুনছি, নিজ চোখে দেখছি। ভালোয় ভালোয় স্বিকার কর তুই কী করছিস!''
গাধা কাঁপতে কাঁপতে বলে - ''আমি ভুলে বোম্বাই মরিচ খাইয়া পাতলা হাগু করছি। মুখ তো আমার বন্ধই ছিল। রাজার নাম তো দূরে থাক, কোন কথাই তো কই নাই।''
হুতোম আর নিজেকে সামলাতে পারে না। রেগে চিৎকার করে বলে - ''আরে গাধার বাচ্চা গাধা, আমরা যেই রাজার নাম মুখে উচ্চারণ করার আগে পাঁচ/দশবার মহামান্য উচ্চারণ করি, তুই কিনা সেই রাজার নাম হাগতে হাগতে 'পুটুর পুট' 'পুটুর পুট' করে পোঁদ দিয়া উচ্চারণ করছিস ! তাও আবার যেন তেন হাগু না, পাতলা গান্ধা হাগু ! তোর রক্ষা নাই। তোকে ফাঁসিতে লটকাবোই।'' সহেনা যাতুনও হই হই করে ওঠে - ''হ ফাঁসি হইবো, আটচল্লিশ ঘন্টার মইধ্যে ফাঁসি হইবো !''
----------
এমন সময় বউ-এর ধাক্কায় আমার ঘুম ভেঙে গেলো। হাতে তার বাজারের ব্যাগ, মুখে ধমক - ''অফিসে যখন যাও নাই তখন বাজারে যাও। মটকা চিংড়ির মতো পড়ে থেকো না।'' কী আর করবো, তাড়াতাড়ি উঠে হাতমুখ ধুয়ে বাজারে রওনা হলাম। হাজার হোক বউ-এর হুকুম।
আর পাঠক, যেহেতু এটা একটা নিছক স্বপ্নের কাহিনী তাই কেউ দয়া করে বাস্তব কোন চরিত্র বা ঘটনার সাথে এর মিল খুঁজতে যাবেন না। একান্তই যদি কেউ মিল খুঁজে পান তবে একটা কাকের সাথে একটা তাল যোগ করে নেবেন নিজগুনে।
মন্তব্য
হে হে হে -----
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
এই লেখার সব ঘটনাই কাল্পনিক ও মনগড়া
যাতুন হাজারবার চেষ্টা না কইরা শতবার চেষ্টা করলেই পারত- হাজার হলেও কবি বলে গেছেন-
লেখা- ভালৈছে...
কড়িকাঠুরে
হ ঠিক কইছেন
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
বাস্তবের সাথে কুনু মিল পাইলাম না
..................................................................
#Banshibir.
না পাওনেরই কথা
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ব্যাপক মজা পাইলাম । একটু হেসে নেই
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
কী যে বলবো , কোন কথার কী মানে হবে কে জানে ! হাসতেও ডর করে। বুড়া আঙ্গুল তুলে দিয়ে যাইগা
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আবুল মক্সুদের ছাগল পুটুর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে আপনাকে।
দয়া করিয়া ডর দেখাইবেন না !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
এই স্বপ্ন কথার সাথে বাংলাদেশের কোন ঘটনার অমিল, ধুত্তরি মিল পাইলাম না।
হ, মিল তো না পাওয়ারই কথা
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
হা হা হা হা হু হু হু হু
মনের রাজা টারজান,
হে হে হে হি হি হি
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ভাল্লাগসে!
ধন্যবাদ
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
কাকের সাথে তাল!
facebook
আপনের লাইনের সাথে ছড়া মিলাইতে গেলে কইতে হয় - কী যে কন ধুরু......
থাউক ছড়া মিলাইলাম না
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
জবরদস্ত বিনির্মাণ!
ভীষণ মজা পাইছি।
ডাকঘর | ছবিঘর
আপনারা মজা পেলেই আমি সার্থক ।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
জব্বর হইছে মামু---------
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
থ্যাঙ্কু বেরিমাছ ভাইগনা
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আহ, ম্যালদিন পর আপনে 'বাচ্চা'তোষ লেখা লিখলেন বইলা মজা পাইলাম
আমিও আপনের মজা দেখে মজা পাইলাম
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
পেঁচা কিন্তু এইখানেও আছে! দেশদ্রোহীতার মামলা খাইতে কোন সমস্যা হবে না।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
দেশদ্রোহীতার মামলা ইতা আবার কিতা ?
ইতা আবার কেমতে খায় ??
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ভাই, এটা যেন দিবাস্বপ্নের প্রথম পর্ব হয়। আর দ্বিতীয় পর্ব তাড়াতাড়ি বাজারে ছাড়েন।
আইচ্ছা চেষ্টা করুমনে ।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
এমন বিষয়ে তালের সাথে যুক্ত হতে কোন কাকই আমার অনুরোধে সাড়া দিল না। বরং তীব্র প্রতিবাদে কা-কা রবে উড়ে গেল। শেষে নিরুপায় হয়ে হাতের তালের শাঁসটা আমি খেয়েই ফেললাম। কাকের সাথে তাল আর যোগ করা হল না।
যাইহোক, লেখা ফাটাফাটি হইছে!
****************************************
যাক এই উছিলায় একটা তালশাঁস তো খাইতে পারলেন, এইটাই বা কম কী
অশেষ ধইন্যাপাতা
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
নতুন মন্তব্য করুন