একটি ভৌতিক গল্প : কানাউলার খপ্পরে

কীর্তিনাশা এর ছবি
লিখেছেন কীর্তিনাশা (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৪/০৫/২০২৩ - ২:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গাঁয়ের অদূরে এক গভীর জঙ্গল। তার পাশেই এই গাঁয়ের কবরস্থান। মাঝরাত। পশ্চিম আকাশে এক ফালি ফ্যাকাসে চাঁদ জেগে আছে। আর আছে আকাশ জোরা অগুনতি তারা। কবরস্থানটি বেশ বড় আর খোলামেলা হওয়ায় বাঁকা এক ফালি চাঁদের অল্প আলোতেও ছায়া ছায়া আঁধারে অনেক কিছু দেখা যাচ্ছে। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। দূরের কোন গাছে বসে একটা হুতোম প্যাঁচা ডাকছে – ভূত, ভূত, ভূতুম !

এমন নিঝুম রাতে কবরস্থানের মাঝখানে দু’জনকে দেখা যাচ্ছে। প্রথম জন দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাচ্ছে আর বিড়বিড় করে কি বলছে। দ্বিতীয় জন বসে আছে হতভম্ব হয়ে।

১ম জন : দেখছ কারবারটা ! আমি যাইতাছিলাম কই আর আইসা পড়ছি কই ! নিশ্চয় আইজকাও কানাউলায় ধরছিল। ও ভাই তোমারেও কি কানাউলায় ধরছিল ?

২য় জন ভয়ার্ত গলায় শুধু তোতলায় : কা-কা-ক্বানাউলা !?

১ম জন : হ, হ । কানাউলা। বাজারে আসা-যাওয়ার পথে যে বিলের মাঝ দিয়া রাস্তা গেছে ঐখানে থাকে ওরা। আর সন্ধ্যার পরে কাউরে একা পাইলে তারে পথ ভুলায়া এদিক ওদিক ঘুরাইতে থাকে। তয় তুমি ডরাইছো না কি ? ডরাইয়ো না। কানাউলায় ধরলে কোন ক্ষতি করে না। খালি এদিক ওদিক ঘুরায়। এই দেখ না আমাগো দুইজনরে নিয়া আসছে গোরস্থানে। - এই বলে ১ম জন ২য় জনের দিকে একটু এগিয়ে আসে।

২য় জনের আতঙ্কে তখন কণ্ঠ রুদ্ধ হওয়ার জোগাড়, তার মধ্যেই চিকন গলায় সে বলে – না না না ! কা-ক-ক্বানাউলা, ও বাবা !

১ম জন : ও ভাই, তুমি তো মনে হয় সত্যি সত্যি অনেক ডরাইছো। ডরাইয়ো না। পুরুষ মানুষের এতো ডরাইলে হইবো ? লও আমি তোমারে বাড়ি দিয়া আসুম।

আতঙ্কে ২য় জনের তখন হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেছে। সে শুয়ে পড়েছে কবরস্থানের মাটিতে। কণ্ঠ থেকে হালাকা গো গো আওয়াজ শোনা যাচ্ছে কি যাচ্ছে না এমন অবস্থা।

১ম জন : ও ভাই, তুমি কি মইরা-টইরা যাইতাছো না কি ? হায় হায় এই নির্জন জাগায় আমি এখন কারে ডাকুম ? পানিও তো নাই আশেপাশে যে পানি ছিটামু। ও ভাই মইরো না। সাহস রাখো। কিছু হয় নাই তোমার।

২য় জন তখন পুরোপুরি স্থির হয়ে গেছে। মাটিতে পড়ে আছে তার প্রাণহীন দেহ।

১ম জনের কণ্ঠে তখন প্রচণ্ড ক্রোধ : ধুত্তরি ! এই কানাউলাগুলা দুই দিন পর পর নিরীহ লোক গুলারে পথ ভুলায়া আনবো এই গোরস্থানে। আর তারা ডরাইয়া মইরা যাইবো। হারামিগুলার একটারে যদি ধরতে পারতাম তাইলে আচ্ছা কইরা শিক্ষা দিয়া দিতাম।

এই বলে ১ম জন তার শালগাছের মতো বিশাল কালো লম্বা লম্বা পা ফেলে এদিক ওদিক ঘুরতে থাকে। অন্ধকারে জ্বলতে থাকা আগুনের ভাটার মতো চোখ দিয়ে সে কী যেন খোঁজে। তালগাছের মতো বিশাল লম্বা শরীর দুলিয়ে সে রাগে গর্জন করে। কারণ সে কাউকে খুঁজে পায় না।

পাবে কী করে ? কানাউলারা মামদো ভূতকেও পথ ভুলিয়ে মাঝে মাঝে মজা করে ঠিক। তবে মামদো ক্ষেপে গেছে বুঝতে পেরে এ তল্লাট ছেড়ে তারা হাওয়া হয়ে গেছে। আর লোকটা যে কানাউলার ভয়ে নয় মামদোর অমন ভয়ঙ্কর রূপ দেখে আতঙ্কে প্রাণ হারিয়েছে তাই বা তারা মামদোকে কিভাবে বোঝাবে? তাই আপাতত কিছুদিন কানাউলারা আর এদিকে পা বাড়াবে না। কারণ ক্ষ্যাপা মামদোর সামনে পড়লে যে কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার হতে পারে তা শুধু কানাউলা কেন, ভূত সমাজের সবাই জানে।


মন্তব্য

সোহেল ইমাম এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

কল্যাণ এর ছবি

শয়তানী হাসি

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।