বাংলাদেশ হচ্ছে এমন একটি দেশ যে দেশটি ইতিহাস নিয়ে সবচেয়ে বেশি গর্ব করে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি সব বিষয় নিয়েই দেশ এবং দেশের মানুষের চরম অহঙ্কার। সংগ্রামী জাতি হিসেবে সুনাম আছে। সবকিছুর সাথে ইতিহাসকে টেনে আনা আমাদের বাতিক। আমাদের প্রধান আবেগ আমাদের জাতিয় ইতিহাসকে ঘিরে, আমাদের আন্দোলন সংগ্রামকে ঘিরে। আমাদের সাংসদরা সংসদে একটা রাস্তার বিল পাশ করার প্রস্তাবের জন্য মিনিট কয়েক সময় পান সেই সময়ের অধিকাংশই তারা ব্যায় করেন তাদের নেতার ঐতিহাসিক আখ্যান নির্মাণে। রাস্তা নির্মাণ না হলেও ইতিহাসের কিছু ভুল নির্মাণ সংসদে বসে করে ফেলেন তিনিও। তাই নিয়ে মফস্বলে চায়ের কাপে ওঠে বিতর্কের ঝড়... সেখানেও সকলেই চরম ইতিহাসবোদ্ধা... প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধারণাতে উচ্চকণ্ঠ। আমাদের গোটা জাতি আসলে এখনো ইতিহাস নিয়েই ঘুরপাক খাচ্ছে । এর থেকে বের হওয়ার কোনও জো নেই।
অথচ এত যে মাতামাতি ইতিহাস নিয়ে সেই ইতিহাসই এই দেশে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে যত বিতর্ক আছে বোধহয় আর কোনও জাতির ইতিহাস নিয়ে এত বেশি বিতর্ক নেই। একটা কথা আমি প্রায়ই বলি দুঃখ করে যে- ইতিহাস সবসময় হয় বিজয়ীর ইতিহাস, অথচ আমরাই বোধহয় একমাত্র জাতি পৃথিবীতে যার বিজয়ীরাই ইতিহাস রচনা করতে পারেনি, উল্টো আছে অস্তিত্ব সংকটে, পরাজিতরাই এখানে জোরকণ্ঠ। যা হোক, আমাদের দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য খুব সমৃদ্ধ এই নিয়ে আমরা বছরের পর বছর ধরে অনেক হাল্লাগোল্লা করেছি, কিন্তু প্রয়োজনীয় কাজটা কখনও করা হয়নি। আমরাই সবচেয়ে বেশি পরিমানে ইতিহাসকে মারিয়ে গেছি, ইতিহাসকে ধ্বংস করেছি। ইতিহাস রচনার জন্য যে ডকুমেন্টগুলো প্রয়োজন তার অধিকাংশ আমরা ইতোমধ্যে নষ্ট করে ফেলেছি, তার কিছু অংশ নিজেদের অযত্নে আর অবহেলায় আর সিংহভাগ প্রশাসনে আর দপ্তরে লুকিয়ে থাকা স্বাধীনতাবিরোধীদের কল্যানে। এই দেশে আর্কাইভ বা লাইব্রেরি ওয়ার্ককে সবসময়ই অবহেলা করা হয়েছে। মূল্যবান দলিল কেটেছে উইপোকা আর ইন্দুরে। ফলে আমাদের অনেক প্রয়োজনীয় কিছুই আমরা সংগ্রহ করতে চেষ্টা করিনি বা পারিনি, এখনও যা আছে তা নিয়েও যথেস্ট চেষ্টা নেই কোনও।
আমাদের ইতিহাস রচনার পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা আমাদের আবেগ। আমরা সবকিছু বিচার বিশ্লেষন করি আমাদের আবেগ দিয়ে। এবং তার ফলাফল নির্ধারণ করি নিজস্ব ধ্যাণ ধারণা থেকে। অথচ ইতিহাস কোনও আবেগ বা ধারণার জিনিস না। এটা আমরা মোটেও মনে রাখার চেষ্টা করি না।
আমাদের ইতিহাসের ধারাটা মূলত হিস্ট্রি ফ্রম দ্য টপ... আমাদের জাতীয় বীর বা কথিত বীরদের থেকে আমাদের ইতিহাস শুরু হয়। অথচ সারা বিশ্বে ইতিহাস চর্চার মূল যে ধারাটা এখন প্রচলিত তা মূলত শুরুই হয় বিলো লেভেল থেকে। প্রান্তিক মানুষ সেখানে মূখ্য... শ্রেণী সেখানে বিবেচ্য। আমরা সে পথে হাঁটার চেষ্টাই করিনি কখনো। তন্মধ্যে জাতীয় বীরদের দ্বিধা-ত্রিধা-বহুধাবিভক্তি বিষয়টাকে আরো বেশি জটিল করে তুলেছে। এবং ইতিহাসের স্বর্ণ বোয়াল হওয়ার তাগিদে নিজ নিজ দায়িত্বেই ইতিহাস সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তা নিজেই কলুষিত করেছেন। সেটা এখন এতটাই বিতর্কিত যে সেই পথে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না ইতিহাসকে। সার্ব অলটার্ন স্টাডি বলে ইতিহাস চর্চার যে ধারাটি তৈরি হয়েছে সেই পথেই আমাদের এগুনো ভালো বোধহয়। কিন্তু এর জন্য মূলত সামাজিক ইতিহাস এবং নন এলিটদের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে বিবেচনায় আনতে হবে। এই চর্চাটিকে বাংলাদেশের ইতিহাস রচনার ধারায় আনাটা কঠিন বটে। সাব অল্টার্ন স্টাডির দ্বিতীয় পর্ব যা মূলত উত্তর আধুনিকতার দিকে ধাবিত হয়েছে সেটিও এদেশে পাত্তা পায়নি। আমাদের ইতিহাস কেবলই জাতীয়তাবাদী ইতিহাস রচনার দিকে গেছে।
আমাদের ইতিহাস রচনার আরো একটা বড় ঝামেলা বোধহয় শুরুতেই করে ফেলেছি। আমরা ধরে নেই মুঘল বা পারস্যবাহিত শাষকদের হাত পর্যন্ত আমরা স্বাধীন ছিলাম... ইংরেজরাই আমাদেরকে প্রথম পরাধীন করেছে। এইটার একটা সুরাহা হওয়া জরুরী। আর এর ফলে আমরা স্বাধীন হওয়া বলতে আমরা কেবল ক্ষমতায় যাওয়াকেই বুঝেছি। স্বাধীনতা মানে যে আমাদের সম্পদের ওপর আমাদের নিজেদের কর্তৃত্ব তৈরি হওয়া তা আমরা বিবেচনায় আনিনি। ফলে আমাদের ইতিহাস কেবলই ক্ষমতাকেন্দ্রিক থেকে গেছে। গোটা সাফল্যকে আমরা নিজেদের ধারনাতেই নিতে পারিনি।
আর এখান থেকেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে আমাদের জাতীয় ইতিহাস আসলে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে রচিত হতে পারে। বাঙ্গালি বাঙ্লাদেশী প্রশ্নটা এই ঝামেলায় ঘি দিয়েছে। ভৌগলিক সীমারেখা আর হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ইতিহাস বিষয়ে আমরা দ্বিধাদ্বন্দে ভুগি। আমাদের ইতিহাসে পাহাড়ি আদিবাসীদের জায়গা দিবো কি দিবো না সেই সংকীর্ণতায় ভুগি। আমরা আমাদের ইতিহাস রচনায় খুব বেশি কনজার্ভেটিভ... এটা একটা বড় সমস্যা।
বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ইতিহাস নিয়ে হাজার হাজার পুস্তক নাজেল হয়েছে। অনেক কাজ হয়েছে... অনেক গবেষণাও হয়েছে... কিন্তু তার সকলই বিচ্ছিন্নভাবে। এবং এর অধিকাংশই আসলে বিভ্রান্তিই তৈরি করেছে। পাঠ্যপুস্তকের ইতিহাস তো বছরে বছরে বদলায়। সব মিলিয়ে আমাদের জাতীয় ইতিহাস এক ভয়ঙকর জায়গায় দাঁড়িয়ে।
আমরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হাপিত্যেশ করি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে পথে ঘাটে কান্নার মাতম উঠাই... কিন্তু আমাদের একটি সঠিক জাতীয় ইতিহাস বিণে যে এর সকলই বিফল এই কথাটা জোর দিয়ে উচ্চারণ করি না। এবং ইতিহাস রচনার বিলম্বে ও তথ্য উপাত্তের সঙ্কটে ইতিহাস রচনার ঝুকিঁ যে দিন দিন বাড়ছে, তা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা হয়না। মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়ন বা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবী বা পাকিস্তানাবস্থিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবী সব কিছুই অসম্ভব আমাদের একটি জাতীয় ইতিহাসের অভাবে।
আর এই একই অভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্জাতিক পরিচিতি হয় ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ। মানেকশর মৃত্যুতে বলা হয় তিনিই একটি জাতির (বাঙলাদেশের) জন্ম দিয়েছেন। আর বলিউডে ফিল্ম হয় ১৯৭১ নামে। আমরা সবখানে হাকুল্যা।
আমাদের আসলে আবেগের অবস্থান থেকে সরে এসে পদ্ধতিগত উপায়ে ইতিহাস রচনার সময় এসেছে। আর অন্য সব দাবীর আগে একটি সঠিক ইতিহাস পাওয়ার দাবীকে মাথায় তুলে নাচার সময় এসেছে।
..................................................................................................................
এটা আসলে একটা বড় চিন্তার প্রাথমিক এবং ক্ষুদ্র প্রকাশ। বড় করে এই বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। বাঙলাদেশের ইতিহাস রচনার ধারা নিয়ে কাজ করবো। আমাদের মতো দেশগুলোর ইতিহাস রচনার ক্রমপ্রক্রিয়া খেয়াল করবো। ইতিহাসের বিভিন্ন ধারা নিয়ে কাজ করবো। সবকিছু মিলিয়ে হয়তো এবছরের মধ্যে একটা কিছু দাঁড়াবে। শুরুটা এখানেই করলাম। এগুতে পারলে এখানে ছাপ রাখবো। কথা দিলাম। আর অন্য অন্যদের মতামত তো পথ দেখাবে ধরেই নিয়েছি।
মন্তব্য
ধাঁরালো, ভাবানো লেখা।
সংরক্ষনেই পারদর্শীতা নেই, রচণা করবো কিভাবে? জরুরী একটি বিষয় তুলে ধরার জন্যে অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
এই চোরের দেশে কিভাবে নিরাপদে চুরি করা যায় সেইটা শিখাইতে পারেন। উপকার হবে। ইতিহাসের মত একটা বাজে বিষয় নিয়া কারো মাথা ঘামানের সময় নাই।
বীরপ্রতিক তারামন পাবলিক দেইখ্যা বিনা চিকিৎসায় মরতে বসে। কোনো সামরিক বীরপ্রতিক বা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিসে এমন সদস্য খাওয়ার কষ্ট পাইতে শুনসেন? ইতিহাস ক্যামনে রচিত হবে? যেই দেশে প্রকৃত সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা রিক্সা চালাইয়া, ফেরি কইরা, রাজাকারের মামলার আসামী হইয়া দিন পার করতে হয়- সেই দেশে আর যাই হোক আমি ভাবতে পারি না বা বিশ্বাসও করতে পারি না যে সঠিক ইতহাস রচিত হবে কিংবা সংরক্ষণ করা হবে।
তো নজরুল আপনের চিন্তা ভাবনাটারেই স্যালুট করতে ইচ্ছা হইতাসে। আমার এক কলম বন্ধু ফারুক আহমেদ পিজু একবার চিঠিতে লেখসিলো "এই চোখ রাঙানির দেশে এমন সোনার ছেলে টিকবে তো?"
এখন আমি ভাবতেসি আপনেরে নিয়া। সাবধানে থাইকেন।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
বেশ ভাল লাগল আপনার এই উদ্যোগের কথা শুনে । পড়ার অপেক্ষায় রইলাম ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
খুব ভালো লাগল।
সবকিছুর বিস্তারিত পড়ার অপেক্ষায় আছি।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
গুড জব নজরুল। কাজটা এগিয়ে নেন।
আমি যতদূর বুঝি রাষ্ট্র ইতিহাসের রেগুলেটর। সেই ইতিহাসই সে প্রচার করবে যে ইতিহাস স্থিতাবস্থা টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। আর সমাজের স্মৃতিতে যে ইতিহাস আছে, তাকে যদি রাষ্ট্র লিপিবদ্ধ না করে, তাহলে সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলোকেই তা করতে হবে। সামজ ও রাষ্ট্রের এই বিরোধ আমি ইতিহাসের আলোচনায় দেখতে পাই।
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্র তো বিমূর্ত কিছু না, সেটা চালায় একটা শ্রেণী এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন গোষ্টী। তারা ইতিহাসের উন্মোচনে ভয় পায়। ইতিহাসের কেন্দ্রীয় প্রত্যয় ও ধারণাগুলো কব্জা করে রাখতে পারলে বর্তমানের ওপরও তাদের আধিপত্য নিশ্চিত থাকে। তাই নয়া ইতিহাস রচনা মানে বর্তমানের নতুন ব্যাখ্যা দেয়া ও তাকে পাল্টানোর দাওয়াত দেয়া। নতুন রাজনীতি সামনে না এলে নুতন ইতিহাস প্রতিষ্ঠিত হবে না।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
কোনো ইতিহাসই কি আসলে স্থিতাবস্থা টিকিয়ে রাখতে পারে? সমাজের স্মৃতিতে যে ইতিহাস আছে তাই সংরক্ষন করতে চাই। আমি বছর খানেক আগে শুরু করছিলাম ৭১এর ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহকে একটা লাইনে সাজাতে। সাহায্যপ্রার্থী হয়েছিলাম দিনপঞ্জিগুলোর। সেসময় বিখ্যাত অবিখ্যাত যোদ্ধা আমলা অনেকের লেখাই সংগ্রহ করেছিলাম... আর আমজনতার সাক্ষাৎকার ছিলো বেশ অনেক। দেখা গেছে তথ্যে প্রচুর গিয়ানজাম রয়ে গেছে। আর প্রকাশিত দিনপঞ্জিগুলোর সবগুলোই পরে নিজের সুবিধামতো সম্পাদনা করা। তথ্য বিভ্রাট প্রচুর।
আমাদের মূল সমস্যা হলো রাষ্ট্র একা না... আমাদের আমজনতাও ইতিহাস উন্মোচনরে ডরায়... এর পরিণতির ধাক্কা সামলানো অযোগ্য মনে করে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
যতদিন না চশমাহীন লোকেরা এই কাজ করবে, ততদিন এই ভার আরো ভারী হবে।
নজরুলকে ধন্যবাদ।
---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
প্রথমত সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
দ্বিতীয়ত একটা বিষয় পরিষ্কার করি... এই বিষয়টা অনেক বড় একটা কাহিনী... হয়তো এটা সারাজীবনব্যাপী চলবে। তবে শুরুটা জোরে শোরে এখনই হউক। আমরা বাংলাদেশের ইতিহাস রচনায় নামতেছি না। আপাতত আমরা যে কাজটা করতেছি তা হলো
১. বাংলাদেশের ইতিহাস রচনায় সীমাবদ্ধতাগুলো চিহ্নিত করা।
২.এযাবৎ যা যা কাজ হয়েছে সেগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে অপূর্ণতাগুলো খুঁজে বের করা।
৩. আমাদের মতো অন্য অন্য দেশ যা আছে তাদের ইতিহাস নির্মাণের প্রক্রিয়াগুলো বিবেচনায় আনা।
৪. ইতিহাস রচনার বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে কাজ করা।
৫. শ্রেণী ও সমাজ ভিত্তিক ভার্বাল সাক্ষাৎকার নেওয়া ব্যাপক পরিসরে।
আরো অনেক কিছুই আছে... এইখানে সংক্ষেপে বললাম... আমরা নিজেরা আরেকটু গুছিয়ে আনতে পারলে হয়তো আরো বিস্তারে যাবো।
আমরা প্রথমত বাংলাদেশের ইতিহাস কি উপায়ে সঠিক রচিত হতে পারে সেই দিকটা খুঁজে বের করবো। তারপরে অন্যকিছু। বাংলাদেশের ইতিহাস রচনার দায় এখনি কাঁধে নিচ্ছি না।
তবে এই করতে করতে আমরা হয়তো ইতিহাসের অনেক পথেই হাঁটবো... সেইসব অভিজ্ঞতা মিলিয়ে সিদ্ধান্ত এগুবে।
এই কাজটায় উদ্যোগ নিয়েছি আপাতত আমি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জনাব দেবাশীষ কাকন। আর কিছু উদ্যোমী তরুণ স্বেচ্ছায় সেবা দিতে রাজী হয়েছে।
এখানে খসড়াটা তুলে দেওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য বাহ্বা পাওয়া নয়। উদ্দেশ্য আমার চিন্তার ভুলগুলো যা আছে তা কেউ ধরিয়ে দিক... দিক কিছু পরামর্শ... আর এই বিষয়ে যারা যারা যা কিছু জানে তা জানাক... এই চাওয়া...
ভালো থাকবেন সকলে... আর সবাইকে আবারো ধন্যবাদ।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অভিনন্দন অভিনন্দন অভিনন্দন
৮৭ সালে একবার কথা বলতে বলতে সৈয়দ হক বলেছিলেন তিনি বাংলাদেশের ইতিহাস লিখছেন
তারপর থেকে তার সাথে দেখা হলেই আমি খোঁচাই। আমার জানামতে কেউ তার সাক্ষাতকার নিতে গেলে তাদেরকেও সেই প্রশ্নটা করতে বলি
কিন্তু তিনি বোধহয় লিখছেন না
এখন থেকে আপনার পেছনে আছি
না লিখলে খবর আছে
খাইছে... এইবার তো মহাসংকটে পতিত হইলাম... আমরা বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা করতে নামি নাই... সেই সাধ্য আমাদের নাই... আমরা কেবল ইতিহাস রচনার সীমাবদ্ধতাগুলা চিহ্নিত কইরা একটা কাঠামো দাঁড় করার চেষ্টা করবো... বলতে চেষ্টা করবো যে এই পথে আগাইলে সম্ভব হইতে পারে...
রাজনীতিবিদদের পছন্দ মাফিক না হইলে ইতিহাস সঠিক হয় না... এই বৃত্ত থেকে বের হওনের কায়দাটা খুঁজি...
আমাদের কাজ হইলো আপনদের সকলের পরামর্শগুলারে একতাবদ্ধ করা... দেন এইবার পরামর্শ দেন।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ইতিহাসের গোলকধাঁধায় আমরা কেন আটকে আছি, এ থেকে উত্তরণের উপায় কি - এসব নিয়ে নিরপেক্ষ পর্যালোচনা আমাদের সঠিক ইতিহাস উদ্ধারের পথে একটা বড় ধাপ।
আপনার প্রচেষ্টা সফল হোক।
ধন্যবাদ ফেরদৌস...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজরুল ইসলাম - খুবই খুবই ভালো একটা উদ্যোগ! ইতিহাস 'রচনা'র চাইতে তার সীমাবদ্ধতা সনাক্তকরণ অনেক বেশী জরুরী, আর আমাদের দেশের জন্য তো কথাই নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনার তিন ও চার নাম্বার পয়েন্টের ব্যাপারে বিশেষভাবে কৌতূহলী, যখন আপনারা কাজটা শুরু করবেন আশা করি আমাদের জানাবেন, তাহলে 'পদ্ধতি'র ব্যাপারে কিভাবে আগাচ্ছেন জানতে পারবো
ধন্যবাদ স্নিগ্ধা।
আমাদের মনে হয়েছে যে গত ৩৭ বছর যে চেষ্টা চলেছে সেই পথে হাঁটলে আমাদের ইতিহাস জীবনেও রচিত হবে না... আমাদের জন্য দরকার ভিন্ন তরিকা... সেই তরিকার সুলুক সন্ধানেই নামলাম। দেখা যাক... আর এইখানে তা বয়ানের উদ্দেশ্যও সকলেই যাতে অংশ নেয়... পরামর্শ আর জ্ঞানসহায়তা দিলে উপকৃত হবো।
আবারো ধন্যবাদ।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজরুল ভাই, ভালো উদ্যোগ। চালিয়ে যান বস্
------------------------------------
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ধন্যবাদ কীর্তিনাশা... আপনাকে সচল প্রাপ্তির অভিনন্দন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলি। ক্লাসে যাচ্ছি ওইদিন, আর্থ সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের সামনের নোটিশ বোর্ডটায় দেখি কেউ একজন মার্শাল মানেকশর মৃত্যুসংবাদের ওয়েব কাস্টের প্রিন্ট আউট লাগিয়েছে। বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, এই জন্যেই হয়তো থমকে যাই, কাছে গিয়ে খবরটা পড়ার চেষ্টা করি। কাছে যেতেই মেজাজটা খিঁচড়ে যায়। কেউ একজন পেন্সিল দিয়ে নোটিশটার উপর লিখে রেখেছে, REAL FATHER OF BANGLADESH. শ্রদ্ধাবশত নোটিশটা ছিড়িঁ না, বোর্ডপিনটা খুলে, নোটিশটা ভাঁজ করি এমনভাবে যেন খবরটা দেখা গেলেও পেন্সিলের লেখাটা দেখা না যায়, আবার আটকে দেই বোর্ডে। মার্শাল মানেকশকে মনে মনে সালাম জানিয়ে আবার পা বাড়াই ক্লাসের দিকে।
---লাইঠেল
ঠিকাছে
দরকার হৈলে আওয়াজ দিয়েন
আওয়াজ তো দিবোই... প্রস্তুত থাইকেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বাংলাদেশের কোন ইতিহাস নিম্নবর্গের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে লেখার চেষ্টা করা হয়নি। অথচ তারাই এই ভূখন্ডের ইতিহাসের মূল উপাদান। ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে যে নির্মোক দৃষ্টিভঙ্গী থাকা দরকার তা এখানকার অধিকাংশ ঐতিহাসিকের নেই। উত্তর আফ্রিকার ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে ইবনে খালদুন যে সব সমস্যা চিহ্নিত করেছিলেন সেগুলো লক্ষ্য করার চেষ্টা করুন, তাতে অবশ্যই প্রকৃত সত্যের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবেন। (দ্রষ্টব্যঃ ইবনে খালদুনের আল মুকাদ্দিমা)
================================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন