আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দেশব্যাপী বিশাল এক ইভেন্টের দায়িত্ব আমাদের কাঁধে। রাত দিন চব্বিশ ঘন্টা আমরা খেটে মরছি। নাওয়া নাই খাওয়া নাই অবস্থা। নারী নিয়া আমার অনেক মাথা ব্যাথা থাকলেও নারী দিবস নিয়া কোনো মাথাব্যাথা নাই। কিন্তু এইখানে অর্থকরীর ব্যাপার আছে, তাই এই খাটাখাটনি।
আমাদের এক বন্ধু আছেন। বড় ভাইয়ের মতো। তোজো ভাই। আমরা ডাকি মুশকিল আছান নামে। এই দেশে তার জন্য অসম্ভব কিছু নাই। কোনো সমস্যায় পড়লেই আমরা তার কান্ধে ঝামেলা চাপায়া নিশ্চিন্তে বইসা থাকতাম।
তো তোজো ভাইয়ের সাথে তার এক বন্ধু আসলো আমাদের অফিসে বেড়াইতে। মনিরুল হাসান তার নাম। একটু এদিক ওদিক আলাপচারিতাতেই জানা গেলো আসলে আমরা পূর্ব পরিচিত। তিনি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রথম ব্যাচ। সেই সুবাদে একবার দুইবার দেখাও হইছে আগে। বেশ ভালো কথা।
কিন্তু তারপর থেকেই শুরু হইলো উত্পাত। আমরা ঘাম ছুটায়া কাম করি, তিনি আইসা এইটা এমনে করলে ভালো হইতো, ওমনে কইরা দেখতে পারেন টাইপ কথা কয়। আর সবকিছুতেই তার খুবই জ্ঞানী যুক্তি। তত্ত্ব তার ঠোঁটের আগায়। নিজেকে বিপন্ন মানুষ হিসেবে দাবী তার। মার্ক্সবাদ নিয়া তোলপাড়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাইঙ্গা যাওনে যে তার জীবনটাই আসলে ভাইঙ্গা গেছে সেইটা বলেন অহরহ। চার্টার্ড একাউন্টেন্ট পাশ দিয়া, কোরিয়ান জুতার কোম্পানিতে কামলা দিয়া এখন নাটক বানান। প্যাকেজ নাটকরে বলেন ঠোঙ্গা নাটক। জীবিকার তাগিদে বানান, কিন্তু ভক্তি নাই। আসলে তো বানাইতে হবে ফিল্ম।
মহা উত্পাত। কিন্তু তোজো ভাইয়ের বন্ধু, কিছু কইতেও পারি না। সইতেও পারি না। আর এমন সব কথা কয়, খুব ডরে থাকি কখন না গাইল দিয়া বসি। তবু মুখ বুজে সহ্য করি। এই প্রজেক্টটা শেষ হউক, তারপর এইডারে সাইজ করতে হইবো।
নারী দিবসের ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কুত্তা দৌড়। সর্বশেষ প্রোগ্রামটা পাবলিক লাইব্রেরিতে। সেইটা যখন শেষ হইলো তখন মনে হইলো এইখানেই শুয়া পড়ি। এইমত যখন ক্লান্ত, তখন মনির ভাই আইসা পাশে দাঁড়ায়
"চলেন, রাস্তার পাশে খাড়ায়া মুইতা আহি"
"ক্যান, টয়লেট আছে তো পাবলিক লাইব্রেরিতে"
"আপনে যে পরিমান কামলা দিছেন, টয়লেটে পোশাইবো না। নির্ভার হওনের জন্য রাস্তায় করার চেয়ে আনন্দের কিছু নাই"
এই কথাটা শুইনা আমি হা কইরা তার দিকে তাকাইলাম। এবং তার পিছু পিছু গেলাম। এবং সেখান থেকে তার সাথে আমার ব্যাপক একটা বন্ধুত্ব তৈরি হইলো। অল্প কয়দিনেই দেখা গেলো আমরা হরিহর আত্মা। এই বিরক্তিকর লোকটার অদ্ভূত অদ্ভূত কথা শুইনা হাসি, গালাগালি করি, ঝগড়া করি, তর্ক করি। দেখলাম এই একটা মাত্র লোক আমার, যারে যা খুশি আমি কইতে পারি। আনন্দটুকু, ভালোবাসাটুকু, কষ্টটুকু, একাকীত্বটুকু।
আমি, মনির ভাই আর মিমি আপা তখন ব্যাপক বন্ধু হয়া গেলাম। ঘুমের সময়টুকু ছাড়া বাকী পুরাটা সময় আমরা একসাথে থাকি। আড্ডা মারি। কোথাও কেউ ঘুরতে গেলেও তিনজনে।
আমার তখন একটা রোগ ছিলো। বছরে অন্তত একবার বিরিশিরিতে যাইতাম একা একা। মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে নিজের মধ্যে ডুব দিতে। এই প্রথম আমি একলা গেলাম না, সঙ্গী হইলো মনির ভাই আর মিমি আপা।
তারপর এইভাবে এইভাবে অহোরাত্র। একটা পাহাড় কেনার আমার ছোটবেলা থেকে শখ। বিরিশিরিতে গিয়া সেইটা আবার মাথাচাড়া দিলো। মনির ভাই কইলো আপনেরা মিয়া খালি স্বপ্ন দেখেন, এইজন্যই আমি আপনেদেররে দেখতে পারি না। চলেন এইবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি। প্ল্যান হইলো একটা দুইটা ১৩ পর্বের নাটক আমি আর মনির ভাই মিইলা লেখুম আর পরিচালনা করুম। মিমি আপা প্রডিউসার। এই দুইটার টাকায় আমরা একটা পাহাড় লিজ নিমু। সেই মতো "চিলেকোঠা" একটা ৭ পর্বের নাটক দুজনে মিলে লিখে পরিচালনা করে এনটিভিতে প্রচারও করে ফেললাম। পরের প্রজেক্ট হাতে নিলাম ১৩ পর্বের। শুটিং হবে গারো পাহাড়ে। স্ক্রিপ্ট আধাআধি রেডি। এর মধ্যে আমরা পরিষ্কার বুঝলাম যে আমাদের দুইজনের কাজের তরিকা আলাদা। মিল নাই। এইভাবে যৌথ কাজ হয় না। তাই আমরা আর আগাইলাম না। নির্বিবাদে সিদ্ধান্ত নিলাম জীবনে কখনো একসাথে কাজ করবো না। বন্ধুত্ব আর কাজ একসাথে না। তো চলুক বন্ধুত্ব।
দেখা গেলো আমরা মনির ভাইরে ছাড়া অচল। আমাদের আড্ডায় মনির ভাই না থাকলে আমাদের উসখুস লাগে। মদের আড্ডায় মদ না থাকলেও এতোটা খালি খালি লাগে না যতোটা লাগে মনির ভাই না থাকলে। আড্ডার পর আড্ডা জুড়ে চলে তারে পঁচানি। তিনি পঁচতে পঁচতে আমাদের বিনোদন দিতে থাকেন।
মনির ভাই সবসময় বিরোধী। উনি শবেবরাতের চাউলের আটার রুটিতে ময়েশ্চার তত্ব আবিষ্কার করেন। বন্ধুর বউয়ের বাচ্চা প্রথম হাসলে সবাই উত্ফুল্ল হইলে তিনি বলেন বাচ্চারা আসলে হাসে না, এইটা এক ধরনের মুখের জড়তা কাটানোর ব্যায়াম... এইসব কথা বইলা তিনি সবার প্রায় মাইর খান। সবাই মিলে সুন্দরবন বেড়াতে গিয়ে শীতের ভোরে কুয়াশায় লঞ্চ আটকে যায়। দেখা যায় এক অপরূপ দৃশ্য। একদল ডলফিন বা শুশুক আমাদের লঞ্চ ঘিরে খেলায় মেতে ওঠে। কখনো এপাশে কখনো ওপাশে। তাদের দেখতে আমরাও পেন্ডুলামের মতো লঞ্চের এপাশ ওপাশ ঘুরি পেন্ডুলামের মতো। মনির ভাই বিরক্ত হয়ে বলেন "আরে এই কুয়াশার মধ্যে এইসব দেইখা লাভ কী? এইসব দেখার জন্য তো ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল আছে। বাড়িত বইসা কফি খাইতে খাইতে দেখুম।"
আমি তখন উত্তরাতে একটা বাড়ি নিয়া একা থাকি। মনির ভাইয়ের বাড়ি নাখালপাড়া। মনির ভাই প্রায় রাতেই আমার বাড়িতেই থেকে যান। আমরা রাত গুজরান করে আড্ডা মারি। তর্ক করি। এর মধ্যে মনির ভাইয়ের লেখা আর পরিচালনায় একটা নাটক হিট হয় খুব। ঝুট ঝামেলা।
মনির ভাই এমন একটা জায়গায় পৌঁছে যান, যে আমি আমার আশেপাশের সবাইরে বলে রাখি, যদি আমার কখনো কোনো বিপদ হয়, তাইলে আমার বাড়িতে না, আগে খবর দিয়েন মনির ভাইরে।
মনির ভাই আমার বাপের মতো বন্ধু হয়া উঠেন, আমার গাইড, ফিলোসফার, বন্ধু... সবকিছু। তার তোড়ে উইড়া যায় আমার বাল্যবন্ধুর দল...
এর মধ্যে আমার প্রেম বিয়া হয়। বিয়ার খবর শুইনা মনির ভাইয়ের প্রথম কথা- আমি তো এইবার আবাসন সঙ্কটে পড়লাম। থাকুম কই?
কিন্তু কোনো অসুবিধা হয় না। দেখা গেলো মনির ভাই নূপুরেরও ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়া উঠছে। এক বিছানায় তিনজন ঘুমাইছি... বিয়ার রাইতেই রাইত তিনটার সময় আমি আর নূপুর মিইলা মনির ভাইরে এসএমএস পাঠাই- ফ্যানের পাখা নড়েচড়ে, মনির ভাইকে মনে পড়ে।
আমি সেই বাড়ি ছেড়ে নতুন বাড়িতে উঠি বউ নিয়ে। সেই বাড়িটা দিয়ে আসি মনির ভাইরে। তিনি সেখানে অফিস করেন। নতুন সিরিয়াল বানাবেন। আমাদের প্রতিদিনের সান্ধ্য আড্ডাটায় ঘাটতি পড়ে।
মনির ভাইয়ের চাহিদা খুব সামান্য। ভোগ বিলাস নাই। দুটো তিনটার বেশি শার্ট কখনোই পরেন না।, একটাই জুতো... বললে বলে ভাইরে, যাদের জুতা আর গাল সমান চকচক করে, তাদের তো ঘৃণাই করছি সারাজীবন। আমার জুতোটা কম চকচকেই থাকুক। নিজের জন্য কখনোই কোনোকিছু কিনে না। নিজের জন্য কোনো সময় নাই। চিন্তা হইলো আশেপাশের মানুষদের নিয়া। সবার সুখটুকু বিলিয়ে দিতেই শান্তি। বিয়ে করেন না। এই নিয়ে আমরা ব্যাপক হাসাহাসি করি। তিনি উপেক্ষা করেন। ছোটভাইটার একটা গতি না হলে বিয়ের কথা ভাবতে পারেন না। পেশায় নিজের জন্য যতটুকু না দৌড়ান, তারচেয়ে বেশি দৌড়ান সহকর্মীদের জন্য। আমাদের ছোটখাটো সাফল্যে নিজ খরচায় পার্টি দেন। নিজের অসুখ হলে "আরে ব্যাঙের আবার সর্দি" বলে পাশ কাটান। অন্যের অসুখ হলে সেবা করতে করতে জিহ্বা বের করে ফেলেন।
মনির ভাইয়ের নতুন সিরিয়ালের শুটিং শুরু হয়। এই নাটকটা নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন। নিজেই প্রডিউস করছেন। তার প্রতিষ্ঠানের লোগো ডিজাইন করে দেই আমি। সেই লোগো সবাইকে দেখায়া বেড়ান। আমি তার ভিজিটিং কার্ড করে দিবো দিচ্ছি করে ফাঁকি দিতে থাকি।
জলপানে আমাদের কোনো উপলক্ষ্য লাগে না। আর নতুন সিরিয়ালের শুটিং, এ তো বড় উপলক্ষ্য। অতএব পার্টি। সেদিন কী একটা খেলাও ছিলো। সারারাত পার্টি আর খেলা দেখা। বড় না, ছোট সার্কেল। কিন্তু আমার যাওয়া হয় না। নতুন বিয়ে বলে কথা। আমি একটু থেকে চলে আসি।
পরদিন শুটিং হয়। বিকেলে গিয়ে ব্যাপক গুলতানি মেরে আসি। নায়িকার সাথে টাঙ্কিবাজী। মনির ভাই একটু পর পর কাশছে। বলি ডাক্তার দেখান মিয়া। "আরে কিসের ডাক্তার। সারারাইত মাল খাইছি, ঘুমাই নাই, এইজন্য একটু এরম লাগতেছে। একটা ঘুম দিলেই সব ঠিক। চিন্তা কইরেন না।" আমি চিন্তা না করে বাড়ি ফিরি।
পরদিন ২৩ মার্চ। শুক্রবার। একটু দেরি করে অফিসে আসি। এসে দেখি মনির ভাইয়ের প্রডাকশন বয় রতন আমাদের অফিসে বসে ক্যারম খেলছে। জিজ্ঞেস করে জানা গেলো মনির ভাইয়ের শরীর খারাপ তাই শুটিং ক্যানসেল। ফোন করি, তার এসিস্ট্যান্ট শান ধরে জানায় সকাল থেকে শরীরটা একটু খারাপ করছে। তাই রেস্ট নিতেছে। আমি ভাবলাম মেইলটা একটু চেক করি। তারপর যাই দেখতে। মেইল চেক করতে করতেই দেবাশীষ কাকনের ফোন। "আশেপাশে ডাক্তার পরিচিত আছে?"
"ক্যান"
"মনির ভাইয়ের মনে হয় শরীর বেশি খারাপ। চোখে ঝাপসা দেখতেছে"
শুনেই মাথা চক্কর দিলো। কয় কী? সাথে সাথেই প্রডাকশন বয়টাকে নিয়ে মনির ভাইয়ের বাড়িতে হাজির। একপলক দেখেই বুঝলাম অবস্থা সুবিধার না। তুলে নিলাম রিক্সায়। মনির ভাইকে প্রায় কোলে করে নিয়ে গেলাম উত্তরা মহিলা মেডিক্যাল হাসপাতালে। যাবার পথেও অনেক কথা হলো। স্বপ্নের কথা। সম্ভাবনার কথা। হসপিটালে পরিচিত ডাক্তার ছিলো। দেখেই বললো ইসিজি করতে হবে। আর ইসিজি করতে করতেই বললো সম্ভবত সময় কম, এই হসপিটাল না, নিয়া যান সোহরাওয়ার্দীতে। আমি কাকনরে ট্যাক্সি ঠিক করতে বলে দৌড়ে গেলাম এটিএম থেকে টাকা তুলতে। টাকা তোলার লাইনে দাঁড়িয়েই ফোন। ইসিজির রিপোর্ট খারাপ, এখুনি নিতে হবে। আমি বললাম তুই ট্যাক্সি নিয়ে চলে যা। আমি ৫ মিনিট পরে আসতেছি টাকা নিয়া। আমার কাছে তখন ৫ মিনিটও অনেক সময়।
সোহরাওয়ার্দীতে যেতে যেতেই চেনা পরিচিত সবাইকে ফোন। ডাক্তার বললো অনেক দেরি হয়ে গেছে। তবু চেষ্টা চলবে। ঘন্টাখানেকের মধ্যে হসপিটাল ভরে গেলো। মনির ভাইকে আমজনতা চেনে না। কিন্তু নাটকের লোকেরা আর লিটল ম্যাগের এককালের লোকেরা খুব বন্ধু মানে। সেদিন বেশিরভাগ শুটিং প্যাকআপ হলো। দলে দলে তারকার ভীড় দেখে হসপিটাল কর্তৃপক্ষ অবাক। এই সামান্য লোকটাই যে কতোটা অসামান্য তা বুঝে তাদের চেষ্টার মাত্রা আরো বেড়ে গেলো। সময় যায়, মূহুর্ত যায় জীবনের মতো... সারাটাদিন যুদ্ধ। আমি মনির ভাইয়ের হাত ধরে বসে থাকি। সেদিন ছিলো বাবার মৃত্যুবার্ষিকী। পারিবারিক আয়োজন। যাই না। আমার বাবার মতো বন্ধুটা যে মৃত্যুর মুখোমুখি।
সেদিন বিকেলে আমি যেরকম অঝোর ধারায় কেঁদেছিলাম। এখনো কাঁদছি ঠিক তেমনি। মাঝে মাঝেই এই কান্নাটা আমাকে খুব অবশ করে দেয়।
আজ বন্ধু দিবস। আমি এই ধরনের কোনো দিবসেই বিশ্বাস রাখি না। ফালতু লাগে। তবু সেলফোন আর ফেসবুকের ইনবক্স ভর্তি বন্ধুত্ব। ফেসবুক অনুযায়ী আমার ৬৭২ জন বন্ধু। তাদের ভালোবাসার জোয়াড়ে আমার ইনবক্স উপচে পড়ছে। কিন্তু আমি জানি। আমার এখন কোনো বন্ধু নাই।
মন্তব্য
খুব ভালো লেখা। মন খারাপ করা লেখা।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
আপনি সম্ভবত মনির ভাইকে চিনতে পারেন। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সবচেয়ে প্রাচীন আড্ডাবাজ গ্রুপটার অংশ মনির ভাই।
সাজ্জাদ শরীফ ভাই, পারভেজ হোসেন ভাই, সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ ভাই, মাজহার ভাই, আমিরুল ভাই, ফরিদা আপা, লিয়াকত ভাই, চয়নদা... সবাই মিলে একটা ব্যাপক বন্ধুতা ছিলো... মনির ভাইয়ের কল্যানেই আমিও সেই দলে মিশে গিয়েছিলাম।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
তাকে চিনতাম। আর সে কারণেই একটু বেশি মাত্রায় ছুঁয়ে গেলো লেখাটা।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
ছুঁয়ে গেল লেখাটা।
এইভাবে লেখা দিয়ে কাঁদালেন? উচিত হলো?
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আমিও সম্ভবত চিনতাম তাকে একটু দূর থেকে
খুব মন খারাপ হয়ে গেলো লেখাটা পড়ে... কিছু মানুষ কী যে চমৎকার!! আমার জীবনেও আমি এমন কিছু মানুষের সংস্পর্শে এসেছি। এনারা অন্যরকম, ঠিক বর্ণনাযোগ্য না।
আপনারা এমন করে লিখতে পারেন! লেখা পড়ে চোখে পানি চলে এলো।
নজরুল ভাই,
সবসময়ে হাসির ফোয়ারা আপনার মুখে দেখে অনেকেই হয়ত ভেবে নিতে পারে পৃথিবীতে আপনিই একমাত্র লোক---যার জীবনে কোন দুঃখ নেই।
তাদের যদি বলা হয়----যে কোন কারোর মন ভালো করে দেবার সোনার কাঠি আপনি পকেটে নিয়ে ঘোরেন---আমার মনে হয়, বিনা বাক্য ব্যয়ে তারা সেইটাও মেনে নেবে।
যারা এত প্রাণ-স্ফুর্ত্তিতে থাকেন--সাধারণত তাদের মনে কোন গভীর দুঃখ থাকে। এই কথাটা জগজিৎ সিং বলার আগেই আমি টের পেয়েছিলাম।আপনার সাথে পরিচিত হয়ে আমার মনে সেই ভয়টা ফিরে আসে । আমি প্রাণপনে ভাবতে চাইতাম---আপনি আসলেই এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম, কোন গভীরতর দুঃখ চাপা দিতে আপনাকে হাসতে হয় না। আপনি হাসেন--ঠিক উলটো কারণে---দুঃখ না থাকার কারণে।
আজকের লেখায় যে গাঢ় বিষাদ উচ্চকিত হয়েছে, তা সকলের মনে দুঃখের নিষাদ স্পর্শ করেছে। লেখাটা পড়ে চোখ মুছতে মুছতে আবিষ্কার করলাম---আমার, আমাদের সকলের, প্রিয় নজু ভাই আর সবার মতই একজন রক্ত-মাংসের মানুষ। আর সকলের মতই রক্তাক্ত হয়েছেন দুঃখের কষাঘাতে। অন্য সবার মতই সফেদ জামার নীচে লুকিয়ে রাখেন বিষাদ-ক্ষত।
আপনার দুঃখে সমব্যথী আমরা সবাই। আপনাকে সান্ত্বনা দেবার কোন মানে হয় না। আপনার সান্ত্বনার প্রয়োজন নেই। শুধু এইটুকু বলি----আপনি কত ভাগ্যবান একজন লোক যিনি এইরকম এক বন্ধু জীবনে পেয়েছিলেন। হিংসা হানাহানির এই পৃথিবীতে এইরকম একজন মানুষ পাওয়া যে সকল কিছু ছেড়ে,নিঃস্বার্থ চিত্তে আপনার পাশে দাঁড়াতে পারে----আর আপনার মাঝে এই একই অনুভূতি জাগাতে পারে--এক কথায় অলোকসামান্য। আর ঠিক এই জায়গায় এসে আপনি আর সকলের চেয়ে আলাদা।
আপনার বন্ধুভাগ্য ঈর্ষনীয়--আর প্রার্থনা করি আপনার এই সৌভাগ্য অক্ষয় হয়ে থাকুক চিরটা জীবন।
বন্ধু-দিবসে নিখাদ শুভকামনা মনির ভাই ও আপনি--- এই দুইজনের জন্যেই।
ভাল থাকবেন, সব সময়।
আমার দুঃখগুলোও আমি খুব করে উপভোগ করি। দুঃখ যার নাই, সে কি মানুষ?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজমুল আলবাব আর নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের দুইটা লোক রে ভাই! সব ওকেশনেই তাগো একটা ল্যাজে-গোবরে দুঃখের গল্প থাকে, আর সেইটা দিয়া সবার নাকের পানি চোখের পানি এক কইরা দেয়!
ধুর!
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
প্রথমে পড়তে পড়তে হাসছিলাম। শেষে এত কাঁদলাম যে মনে হচ্ছে আর কিছুই পড়তে পারব না। অনেক ভাল লাগা
জানায়ে গেলাম।ভাল থাকবেন নজরুল ভাই।
নৈশী।
খুব মন খারাপ করা লেখা , ভালোও লাগলো সেকারনেই। বন্ধুত্বের আবেদন কে সমুন্নত করেছে আপনার লেখাটা
বন্ধু-বন্ধুত্ব নিয়ে পড়া আমার জীবনের সেরা লেখা এইটা!
আপনি!!!!
জীবনানন্দের ভাষায় বললে বলতে হয়- এতদিন কোথায় ছিলেন?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
সবাইকে খুব ধন্যবাদ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
কী বলি...
কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি...
ছুঁয়ে গেল লেখাটা।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আপনার বাসায় সেইদিনের সেই আড্ডা'র কথা মনে পড়ে গ্যালো লেখাটা পড়ে।
নজরুল ভাই, মন্তব্যের প্রয়োজন আসলে এইসব লেখায় নেই।
তবু বলি, আপনার এই বন্ধু নিশ্চয় আপনাকে ভাবছেন এখনো- আপনি তাঁকে যেমন করে ভাবছেন...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
এমন লেখা পড়ে বেশি কিছু বলার থাকে না। শুধু বলি, ভালো থাকুন।
আপনি এমন লেখাও লিখতে পারেন?
কী অসাধারণ!
সারা জীবনে এরকম একজন বন্ধু পেলেও মনে হয় জীবন স্বার্থক।
আপনি সেই সৌভাগ্যবান।
আমি পড়ি নাই, আমি পড়িনা এইসব-পেরেকের মতো গেঁথে যাওয়া বিষাদ এলিজি...
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
এভাবে কি লিখতে হয়!!
........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা
........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা
...............
----------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
প্রথমদিকে হেসেছিলাম
এখন খারাপ লাগছে
...........................
Every Picture Tells a Story
যেখানেই যান, ভালো থাকুন মনির ভাই।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
লেখাটা মন ছুয়ে গেল!
বুকের খুব গহীনে নাড়া দিলো লেখাটা। অসাধারণ !
যারা বেশি হাসে, তাদের মনেই বেশি ব্যথা..., এটা এখনো বিশ্বাস করি আমি। ব্যথাহীন মানুষ আর যন্ত্রে কোন তফাৎ থাকে না।
শুভকামনা, নজু ভাই।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ভালবাসা, মনির ভাইয়ের জন্য। আপনি ভাগ্যবান।
--------------------------------
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
নজরুল ...... কিছু বলার নাই ......
হাত বাড়ালেই বন্ধু পাওয়া যায় না
বাড়ালে হাত বন্ধু সবাই হয় না
---বিশেষত এমন বন্ধু।
মন খারাপ করা লেখা। গভীরভাবে ছুঁয়ে গেল।
........................................
......সবটুকু বুঝতে কে চায়!
----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand
ধাক্কা লাগে বুকে।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
হৃদয়ছোঁয়া লেখা। এলোমেলো করে দেয়া লেখা।
এরকম বন্ধু আপনার ছিলো আর বন্ধুর দরকার কি?
"বন্ধু হারালে দুনিয়াটা খাঁ খাঁ করে, ভেঙে যায় মাঠ.. নদীও শুকনো ধূ ধূ/
খেলার বয়স পেরুলেও একা ঘরে, বার বার দেখি বন্ধুর'ই মুখ শুধু!"
দূর ছাই, কেন যে লেখাটা পড়তে গেলাম...
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
মাস্টার পিস ।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।
ভাই শেষটুকু ঠিক করে পড়তে আমার ৫ বার সময় লাগল...খালি চোখ ঝাপছা হয়ে আসছিল...লেখাটা ভালো লাগার অনুভূতি আর বিষয়টার গভীরতায় বুকে চাপা কষ্টের তীব্রতা.........এক মিশ্র অনুভূতি...।
আবার পড়লাম।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
চোখ ভরে আসলো
নতুন মন্তব্য করুন